দূরদেশের লোকগল্প – উত্তর আমেরিকা
(কানাডা-র নেটিভ আমেরিকান গোষ্ঠীর গল্প)
মোড়ল মশাইর মেয়ের বর
চিন্ময় দাশ
তিনটি ছেলেকে নিয়ে সংসার এক বুড়ির। বুড়ো মারা গেছে অনেক দিন আগে। সমুদ্রের গায়ে এসে বন শেষ হয়েছে যেখানে, বুড়ির কুঁড়েঘরটা সেখানেই। এই ঘরটুকু ছাড়া, বউ-ছেলেকে কিছুই আর দিয়ে যেতে পারেনি বুড়ো।
বনের এই শেষ মাথায় শিকার-টিকার তেমন জোটে না। সেজন্য মাঝে মাঝেই বনের অনেক ভেতর দিকে যেতে হয় তাদের। ভারি কষ্টেই দিন কাটে অভাবী সংসারটার।
তিন ছেলের মধ্যে ছোট ছেলেটা যেমন চেহারায় ছোট, তেমনি রোগাপটকাও। বড় ছেলে দুটো এক দম পছন্দ করে না ছোটটাকে। শিকারে গেলে, সাথে নিতে চায় না তাকে। এমনকি জেদ ধরলেও, তাকে ফেলেই চলে যায় তারা।
অগত্যা ঘরেই থাকতে হয় ছোট ছেলেটাকে। গেরস্থালি কাজে বুড়ি মাকে টুকটাক সাহায্য করাই তার কাজ। কখনও বনের শুকনো ডালপালা কুড়িয়ে আনে। কখনও বা জল বয়ে নিয়ে আসে পাহাড়ি নদী থেকে। এরকমই কাজ সব।
বসন্তকাল এলে, বনের গভীরে যায় তার দাদারা। ম্যাপল গাছের আঠা সংগ্রহ করে আনে। তখনও ভাইকে সাথে নেয় না তারা। সে নাকি একটা কাজও ঠিকঠাক করে করতে পারে না। পদে পদেই ভুল তার।
দুজনেরই এক কথা—মাথা-মোটা ছেলে! কোনও একটা কাজও কি পারে ও? সবেতেই তো তার ভুল!
দাদারা তাকে মাথা-মোটা বলে। তাই গোটা গ্রামও আজকাল একই নামে ডাকে তাকে। সে নাকি বোকাসোকা। অদ্ভুত সব কাণ্ডকারখানা তার।
একমাত্র ছেলেটার বুড়ি-মা কোন দিন কিছু বলে না তাকে। বরং সান্তনা দেয়—সবাই তোকে বোকা বলে। হাসাহাসি করে তোকে নিয়ে। ওসব নিয়ে কিছু ভাবিস না, বাবা। আমি তো জানি, একদিন তুই নিজেই প্রমাণ করে দিবি, তুই-ই সবার সেরা। সবার চেয়ে তোর মাথাতেই বেশি বুদ্ধি। তোর জন্মের সময় এক পরী বলে গিয়েছিল একথা। ঠিক মনে আছে আমার।
এই গ্রামের মোড়লের ছেলে নাই। একটি মাত্র মেয়ে। দেখতেও বেশ সুন্দর। ছেলেদের ভীড় লেগেই থাকে মোড়লের বাড়িতে। সবাই মেয়েটিকে বিয়ে করতে চায়। কিন্তু তার বাবার একটাই কথা—বললেই হোল? এখনও বছর খানেক বাকি আছে তার বিয়ের বয়স হতে। তাছাড়া, সবার সেরা শিকারী ছাড়া, কারও সাথেই বিয়ে হবে না আমার মেয়ের।
এদিকে বুড়ির দুই ছেলের ভারি জেদ, তাদের মধ্যেই যে কেউ একজন মোড়লের মেয়েকে জিতে আনবে।
তখন হেমন্তকাল। পূর্ণিমা তিথিও এসে গেছে। শিকারে যাওয়ার প্রশস্ত সময়। দুজনে শিকারে যাবে বলে তৈরি হোল। ছোট ভাই বায়না ধরে বসল, সেও যাবে শিকারে। কোনদিন ঘরের বাইরে যায়নি সে। এবার যাবেই।
মা-বুড়িও সায় দিল ছোট ছেলের বায়নায়। বড়রা বলল—হ্যাঁ, যাবে বৈকি! কত কাজেই না লাগবে মাথা-মোটাটা। তুমি যে ওর কথায় সায় দিচ্ছো, ও কোন কাজে লাগবে, মা? শিকারের জানে কিছু ও? আগুনের পাশে পাথরের মূর্তির মত বসে থাকা ছাড়া, আর কী করবে?
কিন্তু মায়ের জেদাজেদিতে রাজি হতেই হোল। কী আর করা যায়? তিন জনেই রওণা হোল শিকারে।
অনেক অনেক শিকার করল বড় দুজনে। হরিণ-খরগোশ, জলবিড়াল( উদ)-বিবর। প্রচুর শুকনো মাংস আর চামড়া নিয়ে বাড়ি ফিরে এল তারা।
দুজনেই ভাবতে লাগলো, পরের বছর হেমন্তকাল আসুক। শিকারের চাঁদ উঠলেই শিকারে যাবে দুজনে। মোড়লকে দেখিয়ে দেবে, কতো বড় শিকারী তারা। তাদের একজনই সেরা হবে। বিয়েও করবে মোড়লের মেয়েকে।
ছোট ছেলেও ঘরে ফিরে এলো শিকার থেকে। তার ঝুলিতে একটি মাত্র কেঁচো। কেঁচো হলে কী হবে, আকারে বেশ বড়সড়। তার নিজের একটা আঙ্গুলের মতই মোটা, আর হাতের মতই লম্বা।
দুই দাদা তো হেসেই আকুল। -- মা, তোমাকে বলেছিলাম না, মাথা-মোটাটা কতো বড় শিকারী! নিজেই দ্যাখো এখন। একটা কেঁচো শিকার করে এনেছে।
নিজেরাই কেবল হাসাহাসি করলো কেবল, তা কিন্তু নয়। গোটা গ্রামে রটিয়ে বেড়ালো খবরটা। গ্রামশুদ্ধ লোক হাসতে লাগলো ছোটকে নিয়ে। একটা প্রবাদই তৈরি হয়ে গেল মুখে মুখে—“মাথা-মোটার শিকার”।
গ্রামশুদ্ধ লোক এক দিকে গেলে কী হবে, মা কিন্তু একটুও বিরূপ হোল না ছেলের উপর। বরং একই কথা বলে গেল—দেখবি, একদিন এই ছেলেই সবাইকে টেক্কা দিয়ে বেরিয়ে যাবে।
ছেলেটার কিন্তু কারও কথায় কান দেবার সময় নাই। একটা ছোট গামলায় ভরে রেখে দিয়েছে কেঁচোটাকে। তাকে নিয়েই দিন কেটে যায় তার।
একদিন একটা নাদুস-নুদুস হাঁস এসে হাজির। গামলায় কেঁচো চোখে পড়তে, তাকে আর পায় কে? কপাকপ গলায় পুরে দিল কেঁচোটাকে।
ছেলেটার মাথায় তো যাকে বলে একেবারে বজ্রাঘাত! এক দৌড়ে হাঁসের মালিকের কাছে গিয়ে হাজির—তোমার হাঁস আমার পোষা কেঁচো খেয়ে নিয়েছে। আমার কেঁচো ফেরত দাও।
মালিক তো পড়ল ফ্যাসাদে। বলল—কেঁচো এখন কোথা থেকে দেব আমি? কত দাম চাও, বলো।
--ওসব দাম-টাম আমার চাই না। কেঁচোটাই চাই আমি।
--আরে ভাই, এটা কী একটা কাজের কথা হোল। হাঁস খেয়ে নিয়েছে মানে, ওটা চিরকালের মত চলে গেছে। সে কি আর ফেরত আনা যায়?
--আমার সাথে চালাকি কোর না। কোথাও যায়নি। তোমার হাঁসের পেটেই আছে আমার পোষা কেঁচোটা। কেঁচো না পারলে, তোমার হাঁসটাই দিতে হবে আমাকে। ছেলেটা একেবারে নাছোড়বান্দা।
কী আর করে? তাছাড়া, মাথামোটা একজন ছেলের সাথে বকবক করে লাভই বা কী? মালিক হাঁসটা দিয়েই দিল ছেলেটাকে।
ছেলেটার তো আনন্দ ধরে না। হাঁস নিয়ে ঘর এলো। হাঁসের পায়ে দড়ি বেঁধে, একটা পাথর চাপা দিয়ে দিল দড়িতে। যাতে পালাতে না পারে হাঁসটা। নীচু করে একটা বেড়াও ঘিরে দিল হাঁসের চার দিকে।
বেড়া ঘিরছে, আর ছড়া কাটছে—কেঁচো রইলোই, হাঁসও পেলাম। আমি কিন্তু জিতে গেলাম।।
দিন কয়েক গেল। আবার এক বিপত্তি। একদিন ভোর বেলা এক খেঁকশেয়ালের চোখে পড়ে গেল হাঁসটা। আহারে, কেমন নাদুস-নুদুস চেহারা! সাতসকালে এমন ভোজ জুটে যাবে, ভাবতেও পারেনি সে।
ঐটুকু উঁচু বেড়ায় শেয়ালকে কি আর আটকানো যায়! ঝাঁপ দিয়ে হাঁসটার উপর এসে পড়ল শেয়াল। দু-চার বার কোয়াক-কোয়াক আর্তনাদ আর একটুখানি ছটফট করে, স্থির হয়ে গেল হাঁসটা।
ছোট ছেলেটা ছিল ঘরের ভেতর। হাঁসের গলা কানে গিয়েছিল তার। প্রথমে তেমন গা করেনি। পরে ভাবল, খিদে লেগেছে বুঝি বেচারার। যাই দেখি গিয়ে।
বাইরে এসে তার তো মাথায় হাত। কোথায় তার হাঁস? পালকগুলো উড়ছে এদিক ওদিক। রক্ত ছিটিয়ে আছে আশপাশে। একটা শেয়াল খাওয়া শেষ করে, আয়েস করে ঠোঁটের রক্ত চাটছে তখন।
মাথায় রক্ত চড়ে গেল ছেলেটার। হাতের কাছেই একটা মুগুর পড়েছিল। সেটাই ছুঁড়ে মারল তাক করে।
ভারি মুগুর। বাতাসে উড়ে, ধাঁই করে এসে পড়ল সোজা শেয়ালের মাথায়। এক ঘায়েই শেয়াল সেই যে পড়ে গেল মাটিতে, আর উঠল না।
মন খারাপ হবে কী, আনন্দই হোল ছেলেটার। বিড়বিড় করে বলত লাগল—কেঁচো ছিল, হাঁসও ছিল, এবার আবার শেয়াল পেলাম। ভালোই হোল, ভালোই হোল, আবারও আমি জিতে গেলাম।
সেদিনেরই ঘটনা। রাত না নামতেই, একটা নেকড়ে বেরিয়েছে বন থেকে। এদিক ওদিক ঘুরতে ঘুরতে, গাঁয়ের দিকে চলে এসেছে নেকড়েটা।
চাঁদ উঠেছে আকাশে। তার আলোয় ঝলমল করছে চারদিক। বেড়ার পাশে পড়ে থাকা শেয়ালটা চোখে পড়ে গেল তার। আর যায় কোথা? খিদেয় পেট চুঁইচুঁই করছিল নেকড়ের। আস্ত একটা শেয়াল পেয়ে গেছে সামনে। আর দেরি করা যায়? মহানন্দে ভোজ খেতে বসে গেল সে।
কিন্তু কপাল মন্দ বেচারার। ভোজ শেষ করেছে। ছেলেটা দেখতে পেয়ে গেল নেকড়ের কীর্তি। পা টিপে টিপে এসে, কুড়ুলের এক কোপ। দফা রফা হয়ে গেল নেকড়ের। সেখানেই লুটিয়ে পড়ল নেকড়েটা।
আনন্দ ধরে না ছেলেটার। ছড়া কাটতে লাগল—শিকারে গিয়ে কেঁচো পেলাম, হাঁস পেয়েছি পরে। তার পরেতে শেয়াল জুটল, নেকড়ে পেলাম ঘরে।
দুই দাদা তার ছড়া শুনে আর মরা নেকড়েটা দেখে, হেসেই বাঁচে না। বলতে লাগল—সত্যিই তোর কপাল বটে। একটা মরা নেকড়ে! কত কাজেই না লাগবে তোর! দুদিন না যেতে, পচে দুর্গন্ধ হবে। ঘরে টেকাই দায় হয়ে উঠবে। সবাই মিলে গর্ত খুঁড়ে পুঁততে হবে তখন।
--কত বড় মাপের একটা বুদ্ধু তুই, সেটা বুঝতে পেরেছিস তো এবার?
ছেলেটা বুঝতে পারল, দাদারা ঠিক কথাই বলেছে। মরা জন্তু বেশি সময় টিকবে না। একটা বুদ্ধি এসে গেল তার মাথায়। নেকড়ের চামড়াটা ছাড়িয়ে নিয়ে, রোদে শুকোতে দিল।
কানাডা এলাকায় সেসময় আদিম আমেরিকান (নেটিভ আমেরিকান)রা বাস করত। নাচ-গান করার সময়, ঢোল বাজানো তাদের অভ্যেস। ছেলেটা যত্ন করে একটা ঢোল বানাল নেকড়ের চামড়া দিয়ে।
ঢোল যখন গড়া হোল, সে কী আনন্দ ছেলেটার মনে। নিজের হাতে নতুন একটা কিছু বানাতে পেরেছে, কম কথা না কি এটা? তাছাড়া, তাদের গোটা গ্রামে কারও কাছেই ঢোল নাই। এখন আস্ত একটা ঢোল আছে তার নিজের। তার নিজের হাতে বানানো। সে নিজেই মালিক এমন সুন্দর ঢোলটার।
প্রতিদিন সন্ধ্যা হলেই উঠোনে বসে নিজের মনে ঢোল বাজায় ছেলেটা। ডিম ডিম শব্দ ছড়িয়ে পড়ে গোটা গ্রামে।
একদিন মোড়লের বাড়িতে ডাক পড়ল ছেলেটার। মোড়ল বলল—মেয়েটার বিয়ে দেব ঠিক করেছি। আগামিকাল অনেক লোকের জমায়েত হবে বাড়িতে। একটা ভোজসভাও আছে। কিন্তু গোটা গ্রামে তো কারও ঢোল নাই। একটু বাজনা-বাদ্যি না হলে কি আর আসর জমে? তোমার ঢোলটা এক দিনের জন্য ধার দাও আমাকে।
ছেলেটা দোনা-মনা করতে লাগল। তার কত সাধের জিনিষ! নষ্ট করে ফেলে যদি।
মোড়ল বলল—ভয় পেয়ো না। আমি নিজের হাতেই বাজাবো। অন্য কারও হাতে দেব না।
কী আর করে? মোড়ল বলে কথা। তার কথায় কি আর না বলা যায়? বাড়ি থেকে ঢোলকটা এনে মোড়লের হাতে তুলে দিল। বলল—খুব সাবধানে কিন্তু। চামড়া ফেটে গেলে কিন্তু আমি শুনব না। অনেক মেহনত করে এটা তৈরি হয়েছে। কেঁচো, রাজহাঁস, শেয়াল আর নেকড়ে—চার চারজনের জীবন আছে এই বাজনাটাতে। এমনি এমনি হয়নি।
মোড়ল হাসি মুখ করে বলল—আরে অতো ভয় পাওয়ার কিছু নাই। নিশ্চিন্তে বাড়ি যাও। পরশু এসে তোমার ঢোল ফেরত নিয়ে যেও।
কোন রকমে একটা দিন কাটল। পরদিন মোড়লের বাড়িতে এসে ছেলেটার তো মাথায় হাত! যা ভয় পেয়েছিল, সেটাই হয়েছে। ফুর্তিতে বাজাতে গিয়ে, ঢোলের চামড়া ফাটিয়ে ফেলেছে মোড়ল। উঠোনের এক কোণে পড়ে আছে জিনিষটা।
মোড়ল বলল— ফেঁসে যখন গেছে, ঢোল তো আর দিতে পারব না তোমাকে। কত দাম চাও, বলো। যেমন দাম চাইবে, তাই দেব আমি।
অনেকেই ডাক পেয়েছিল গতকালের ভোজসভায়। ছেলেটার দুই দাদাও এসেছিল। কিন্তু তাকে কেউ ডাকেনি। তার ঢোল নিলেও, মোড়ল মুখের কথাটাও বলেনি তাকে। মেজাজ এমনিতেই বিগড়ে ছিল। তার উপর এখন তো ঢোলটাই ফাটিয়ে রেখেছে।
তিরিক্ষি মেজাজে ছেলেটা বলল—দাম দিয়ে আমি কী করব? ঢোল পাবো কোথায়? আমি তো বলেই ছিলাম। শুধু তো একটা ঢোল নয় এটা। কেঁচো, রাজহাঁস, শেয়াল আর নেকড়ে—চারজনের কারণে ঢোল হয়েছিল আমার। দাম-টামের কথা ছাড়ো। আমার ঢোলই চাই।
অনেক লোকজন জড়ো হয়ে গেল দেখতে দেখতে। ছেলেটার সেই এক কথা। গোঁ ধরে বসে আছে—যেখান থেকে পারো, যেমন করে প্রো, ঢোলই এনে দিতে হবে আমাকে। দাম আমি চাই না।
একেবারে নাস্তানাবুদ অবস্থা মোড়লের। এবার বলল—বুঝে দেখো, ঢোল তো আর কোন মতেই ফেরত দেওয়া যাবে না। ঠিক আছে, দাম যখন তুমি নেবে না, অন্য কোন জিনিষ পছন্দ করো। যা চাইবে, তাই পাবে তুমি।
শুনে চিড়িক করে উঠল ছেলেটার মাথায়। বলে কী লোকটা? যা চাইব, তাই দেবে? এমন মওকা জীবনে দু’বার আসে না কারও। গম্ভীর হয়ে বলল—যা চাইবো, তাই দেবে? পরে আবার মাথা নেড়ে দেবে না তো?
এবার মোড়লও একটু আশার আলো দেখল। বুক চিতিয়ে বলল—এই সবার সামনে বলছি, মুখ ফুটে যা চাইবে, তাই পেয়ে যাবে হাতে নাতে। কথার খেলাপ আমি করি না। যেটা তোমার মন চায়, বেছে নাও।
ছেলেটা তো আনন্দে ডগমগ। শুধু নিজের দুই দাদা নয়, গোটা গ্রামকে দেখানো যাবে, মাথা-মোটা ছেলের কত বুদ্ধি, কেমন কপাল!
ছেলেটা মুখ গম্ভীর করে বলল—ঢোল যখন দিতেই পারবে না, কী আর করা যাবে। ঢোলের বদলে, তোমার মেয়েকে বউ করে নিয়ে যাব আমি। তোমার আপত্তি নাই নিশ্চয়ই।
মোড়ল জড়িয়ে গিয়েছে নিজের কথার জালে। আপত্তি করবার রাস্তা নাই তার। মাথা নড়তেই হোল ছেলের কথায়।
তার পর? ধুমধাম করে বিয়ে হয়ে গেল মোড়লের মেয়ের। বড়সড় সুন্দর একটা বাড়ি বানিয়ে দিয়েছে মোড়ল। তার আদরের মেয়ে তো আর ভাঙ্গা কুঁড়েঘরে থাকতে পারবে না। প্রচুর গয়নাগাঁটি, জিনিষপত্তর সাজিয়ে নিয়ে, বউ এলো ছেলেটার সাথে। গোটা গ্রাম দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখল সেই দৃশ্য।
বুড়ি-মার সে কী আনন্দ। পা পড়ে না যেন মাটিতে। জোর গলায় বলতে লাগল—সবাই তোরা মাথা-মোটা বলিস তাকে। আজ সে দেখিয়ে দিয়েছে কত বুদ্ধি ধরে সে। আমি তো চিরকাল বলে এসেছি, তোদের অনেকের থেকে এ বেশি বুদ্ধিমান। একদিন সবাইকে দেখিয়েও দেবে নিজের কেরামতি। জন্মের সময়েই এক পরী আমাকে বলে গিয়েছিল এই কথাটা। আমি কিন্তু ভুলে যাইনি।
আরও পড়ুন
জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇
0 Comments