জ্বলদর্চি

জঙ্গলমহল ছিল চৈতন্যদেবের বৃন্দাবন /সূর্যকান্ত মাহাতো

জঙ্গলমহলের জীবন ও প্রকৃতি

পর্ব - ৩০

জঙ্গলমহল ছিল চৈতন্যদেবের বৃন্দাবন

সূর্যকান্ত মাহাতো


 বাড়িতে একটা ক্যালেন্ডার ছিল। শ্রীচৈতন্যদেব দুই বাহু তুলে হেঁটে চলেছেন। তার দুপাশে বাঘ ও হাতির মতো হিংস্র প্রাণীগুলো মহাপ্রভুর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে। ক্যালেন্ডার দেখিয়ে ছোটবেলায় বাবাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, বাঘ, ও  হাতিগুলো চৈতন্যদেবকে আক্রমণ করছে না কেন?

বাবা বলেছিলেন, "ওরা সবাই চৈতন্যদেবের প্রেম গান শুনছে। সেই গান শুনে ওরা মুগ্ধ হয়ে পড়েছে। তাই আক্রমণ করতে ভুলে গেছে।

তখন ভাবতাম, তিনি কোথায় যাচ্ছিলেন! কেনই বা এমন হিংস্র পশুদের মধ্যিখান দিয়ে যাত্রা করেছিলেন! তবে সে সব আর জিজ্ঞাসা করিনি। কিন্তু মনে মনে এই ছবির আসল কাহিনী জানার একটা সুপ্ত কৌতূহল মনের মধ্যে ছিলই। এখন সেই কৌতুহল একেবারে মিটে গেছে। জেনে গেছি চৈতন্যদেবের সেই বিপদসংকুল যাত্রাপথ ছিল আমাদেরই জঙ্গলমহল। হিংস্র জন্তুদের মধ্যে বাঘ, ভালুক এখন আর যদিও নেই। তবে বুনো হাতি এখনও আছে।

মনে একটা প্রশ্ন জেগেছিল, এত জায়গা থাকতে মহাপ্রভু হঠাৎ "ঝারিখন্ড" বা ঝাড়খণ্ড বা জঙ্গলমহলেই কেন এসেছিলেন? শুধুই কি প্রেমগান প্রচার?

উত্তর তো প্রায় সকলেরই জানা। চৈতন্যদেব মথুরায় বৃন্দাবনে যাওয়ার উদ্দেশ্য নিয়েই বেরিয়েছিলেন। পথিমধ্যে জঙ্গলমহল এসে পড়েছিল। অর্থাৎ "ঝাড়খণ্ড" বা জঙ্গলমহলের উপর দিয়েই তিনি বৃন্দাবন যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তাই তার জঙ্গলমহলে পদার্পন।

মূল উদ্দেশ্য এটা হলেও অতটা সরলীকরন ছিল না। চৈতন্যদেবের জঙ্গলমহলে আগমন অনেকটা তাঁর জন্মের পূর্ব হতেই সুনিশ্চিত ছিল বলা যেতে পারে। সেরকমই একটা ইঙ্গিত চুড়ামণি দাসের "গৌরাঙ্গবিজয়" কাব্যে পাই। তবে তার লৌকিক ও অলৌকিকতা নিয়ে একটা বিতর্ক থেকেই যায়। অন্তত আজকের দিনে দাঁড়িয়ে।

চুড়ামণি দাস বলেছেন, চৈতন্যদেবের জন্মের অনেক আগেই নাকি পরমগুরু মাধবেন্দ্র পুরী ঝাড়খণ্ড তথা জঙ্গলমহলে এসেছিলেন। এখানে কৃষ্ণনাম কীর্তনের একটা বড় অভাব তখন তিনি অনুভব করেছিলেন। কৃষ্ণনাম কীর্তনের এই অভাব মাধবেন্দ্র পুরীকে কিছুটা হতাশ করেছিল। তাই ঝাড়খণ্ডেও কৃষ্ণনাম কীর্তনের প্রয়োজন অনুভব করেন। কিন্তু কীভাবে? এর সমাধান স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণই করবেন। তাই শ্রীকৃষ্ণ যাতে অবতীর্ণ হয়ে এখানে এসে সেই অভাব পূরণ করেন তার জন্য তিনি তপস্যায় নিমগ্ন হয়েছিলেন। ঝাড়খন্ডেরই কোন এক হ্রদের তীরে তিনি সেই তপস্যায় নিমগ্ন হয়েছিলেন।

"এত বলি মাধবেন্দ্র করিল গমন
নারে গোড়াইতে পাছে ধায়ে সর্বজন।।
এমন গমনে পুরী প্রবেসিল (বনে)
... ... ... ... ...এসব জনে।।
কতদিন গিয়া পুরী ঝারিখন্ড পাএ
কোনখানে রব সব দেখিয়া বেড়াএ।।"
           (গৌরাঙ্গবিজয়)

জঙ্গলমহলের সৌন্দর্যময় প্রাকৃতিক পরিবেশ দেখার পর সেই সৌন্দর্যে মাধবেন্দ্র পুরী ভীষণ রকমের মুগ্ধ হয়েছিলেন। এ জায়গা বিলাস ব্যসনের জন্য বৃন্দাবনের থেকেও যেন কোনও অংশে  কম ছিল না।

হ্রদের পশ্চিম ভিতে দেব তরুবর।
চৌকাছে শিয়াড় মাঝে অকল্পিত ঘর।।
নীলপীত শুভ্রসিত হ্রদে পুষ্প ফুটে
মকরন্দে পূর্ণ সেই সুগন্ধি সংপুটে।।
... ডাক এ মাধবেন্দ্র পুরী।
রাতদিন নাচো গিয়া এই হ্রদ ফিরি।।
জপ ভঙ্গ করে পুরী মনস্থির করে।
তবে না জন্মিব কৃষ্ণ নদীয়া নগরে।।
       (গৌরাঙ্গবিজয়/চুড়ামণি দাস)

এমন মনোরম পরিবেশ দেখেই মাধবেন্দ্র পুরী অত্যন্ত আনন্দিত হয়ে বলে উঠেছিলেন---

শ্রীকৃষ্ণ বিলাস যোগ্য এই স্থান বটে
দেখিয়া আনন্দে ভাসে মাধবেন্দ্র পুরী।
          (গৌরাঙ্গবিজয়)

মাধবেন্দ্র এই স্থানের সৌন্দর্যে অভিভূত হয়ে কৃষ্ণ প্রেমচর্চায় ডুবে গিয়ে এই স্থানকে 'বৃন্দাবন' বলে অভিহিতও করেছেন।

মাধবেন্দ্র প্রেমে কহে এই বৃন্দাবনে
বিনোদ মন্দিরকেলি করে রাধা সনে।।
         (গৌরাঙ্গবিজয়)

এরপর নিমাইয়ের জন্ম হয়। মাধবেন্দ্র পুরী নিমাইয়ের জন্ম উপলক্ষ্যে নদীয়ায় আসেন। ভাবলেন, তার তপস্যা সার্থক হয়েছে বোধহয়।

এত বলি মাধবেন্দ্র দীক্ষা শিক্ষা দিয়া।
তোমা জন্মাইতে জপে ঝারিখন্ডে গিয়া।।
তার জপবলে প্রভু তোর জন্ম হইল।
পুরীর প্রসাদে রাঙ্গা চরণ দেখিল।।
           (গৌরাঙ্গবিজয়)

চৈতন্যদেবের জন্ম এবং পরবর্তীকালে তার 'ঝারিখন্ড' তথা ঝাড়খণ্ডে আসা তবে কি মাধবেন্দ্রপুরীর তপস্যারই ফল! এ যুক্তি এখন অনেকের কাছেই অলৌকিক বলে মনে হবে। তবে তপস্যা না হলেও কৃষ্ণনাম প্রচারে জঙ্গলমহল যে একটি আদর্শ স্থান সেটা মাধবেন্দ্রপুরীর আগমন এবং পরবর্তীকালে চৈতন্যদেবের আগমনই প্রমাণ করে।

অলৌকিকতা সরিয়ে বরং যুক্তি খোঁজা যাক। উপজাতি অধ্যুষিত 'ঝারিখন্ড' বা জঙ্গলমহল সর্বদায় সবুজ অরণ্যে ঘেরা। ঘন ও নিবিড় জঙ্গলে ঘেরা প্রকৃতির বুকেই মাথা তুলে আছে ইতিউতি ছোট বড় পর্বতমালা। তারই পাদদেশ দিয়ে জঙ্গলের বুক চিরে বয়ে চলেছে ঝরনার ধারাগুলো। আর তাদেরই কোলে অবস্থান করছে তথাকথিত অপাঙক্তেয় আদিবাসী মানুষগুলো। এই ভৌগোলিক পরিবেশ ও "ভিল্লপ্রায়" মানুষগুলোর মধ্যে কৃষ্ণপ্রেম জাগরণের প্রচেষ্টা শ্রীচৈতন্যের জন্মের পূর্বকাল থেকেই ছিল। চুড়ামণি দাসের "গৌরাঙ্গবিজয়" এ সে কথা জানা যায়।

 জেনে আশ্চর্য হলাম, এই "গৌরাঙ্গবিজয়" গ্রন্থের পুঁথি নাকি একশ বছর এশিয়াটিক সোসাইটিতে জমা ছিল। যা এতদিন পর্যন্ত লোক চক্ষুর আড়ালেই ছিল। পরে আচার্য সুকুমার সেনের সম্পাদনায় পুঁথিটি গ্রন্থাকারে মুদ্রিত হয়। পাঠক অন্যান্য চৈতন্য জীবনীর মতো এই  কাব্য পড়ে চৈতন্যদেব সম্পর্কে আরও অনেক অজানা, নতুন কিছু জানতে পারলেন।

চৈতন্যদেবের ঝাড়খন্ডে আসার পিছনে মূলত দুটি জোরালো যুক্তি খুঁজে পাই। একটি প্রকট। অন্যটি প্রচ্ছন্ন। প্রথমটি হল চৈতন্যদেব সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন পুরি থেকে মথুরায় বৃন্দাবনে যাবেন। সেই মতো তিনি বৃন্দাবনে যাত্রার উদ্দেশ্যেই বেরিয়ে পড়েছিলেন। এবং সেই যাত্রাপথেই জঙ্গলমহল বা ঝারিখণ্ড পড়েছিল। সে কারণেই তার জঙ্গলমহলে আসা। এটা তো একরকম সত্যই।

কিন্তু অন্য মতটি আবার এই যুক্তিকে কিছুটা খণ্ডনও করে দিয়েছে। তাও আবার একটি মাত্র 'শব্দ' দিয়ে।
 "মথুরা যাবার ছলে আসি ঝারিখন্ড।" 
এই "ছলে" শব্দটি তবে কি অন্য কিছু বোঝাতে চাইছে? উদ্দেশ্য তবে কি মথুরা নয়? ঝাড়খণ্ডে আসাই কি তাহলে তাঁর একমাত্র লক্ষ্য ছিল? সহচর ও অনুগামীদের ছাড়পত্র পেতেই কি তিনি মথুরা যাওয়ার প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছিলেন? না হলে কেন তিনি এ কথা বলেছিলেন! 

রাত্র্যে উঠি বনপথে পলাইয়া যাব।
একাকী যাইবো কাঁহো সঙ্গে না লইব।।
কেহ যদি সঙ্গ লৈতে পাছে উঠি ধায়।
সবারে রাখিবে যেন কেহ নাহি যায়।।
       (শ্রী চৈতন্যচরিতামৃত)

 তা ছাড়া এটা তো সত্য যে, মহাপ্রভু দাক্ষিণাত্যে তাঁর প্রেমধর্ম প্রচারে সেরকমভাবে সাফল্য পাননি। ব্যর্থই হয়েছিলেন বলা যেতে পারে। তাই কি ঝাড়খণ্ডের দিকে পা বাড়িয়েছিলেন?

যাইহোক বৃন্দাবন যাওয়ার পথেই হোক আর ঝাড়খণ্ডে আসার উদ্দেশ্য নিয়েই হোক তিনি যে এসেছিলেন এটাই বড় কথা। এখানকার আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে বৈষ্ণব ধর্মের যে বীজ বুনে দিয়ে গিয়েছিলেন। সেটাই এখন মহীরুহে পরিণত হয়েছে।

মহাপ্রভুর জঙ্গলমহল তথা ঝাড়খণ্ডে আসার সেই যাত্রাপথ প্রসঙ্গে "শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত" গ্রন্থে বিশদভাবে কিছু বলা নেই। যতটা দাক্ষিণাত্য ভ্রমণ প্রসঙ্গে বলা আছে। গ্রন্থের সপ্তদশ পরিচ্ছেদে কেবল কয়েকটা লাইনেই সে বর্ণনা সীমাবদ্ধ রয়েছে।

"প্রসিদ্ধ পথ ছাড়ি প্রভু উপপথে চলিলা।
কটক ডাহিনে করি বনে প্রবেশিলা।।
নির্জন বনে চলে প্রভু কৃষ্ণ নাম লইয়া
হস্তি ব্যাঘ্র পথ ছাড়ে প্রভুরে দেখিয়া।।"

পরবর্তীকালে সুহৃদ কুমার ভৌমিক মহাশয় জঙ্গলমহলের একাধিক স্থানে ঘুরে ঘুরে সেই তথ্য সংগ্রহ করেছেন। জঙ্গলমহল তথা ঝাড়খণ্ডের বিভিন্ন স্থানে বৈষ্ণব ভাবধারার প্রভাব অনুযায়ী শ্রীচৈতন্যদেবের যাত্রা পথের একটি মানচিত্রও তৈরি করেছেন। সেই মানচিত্রে চৈতন্যদেবের যাত্রাপথের একটা পরিষ্কার ধারণাও পাওয়া যায়।

সম্ভবত শ্রীচৈতন্যদেব পুরি থেকে আসার সময় কটককে ডান হাতে রেখে যাত্রা শুরু করেছিলেন। তারপর ঢেঙ্কানল, পাল্লাহার, কেওনঝর হয়ে যুয়াং জাতি অধ্যুষিত ঝাড়খণ্ডে প্রবেশ করেছিলেন। সেখান থেকে আসেন ময়ূরভঞ্জের বারিপদায়। এখানে বেশ কিছুদিন তিনি বিশ্রাম নিয়েছিলেন। বারিপদার কাছেই আছে চৈতন্য সরোবর। সেখানেও বেশ কিছু সময তিনি কাটিয়েছিলেন। এরপর সুবর্ণরেখা নদী পার হয়ে গোপীবল্লভপুর, বহড়াগড়া প্রভৃতিকে ডান দিকে রেখে তিনি ঘাটশিলায় প্রবেশ করেন। ঘাটশিলা থেকে তিনি তামাড় পরগনায় আসেন। তামাড়ের পর বুন্ডুতে আসেন। বুন্ডুতে এখনও বহু চৈতন্য স্মৃতি বিজড়িত স্থান রয়েছে। যেমন "রাধারানিতলা" এবং অতি প্রাচীন চৈতন্য মন্দির। এই অঞ্চলটির নাম 'পাঁচ পরগনিয়া'। তামাড়, বুন্ডু, রাহে, আতু, বুরুন্ডা এই পাঁচটি পরগণা নিয়েই 'পাঁচ পরগনিয়া' গঠিত। এখানকার ভাষাকে 'পাঁচ পরগনিয়া'(পরগণ‍্যা) ভাষা বলে। শ্রী চৈতন্যদেব সব থেকে বেশি সময় এখানেই কাটিয়ে ছিলেন। পরে অবশ্য তিনি আরও কিছুটা উত্তরে এগিয়েছিলেন। রাঁচি ও মোরাবাদী অঞ্চলকে বামদিকে রেখে তিনি সিলি ও মুরির কোনও এক স্থান দিয়ে হাজারীবাগের কাছে গঞ্জগোলা অঞ্চলে গিয়েছিলেন। এরপর রাজারাপ্পা ও গোলা হয়ে তিনি গৌড় দেশে ফিরে যান।

জঙ্গলমহলে প্রবেশ করে মাধবেন্দ্রের মতো চৈতন্যদেবও এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে একেবারেই মোহিত হয়ে পড়েন। বৃন্দাবন দেখার যে উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি বেরিয়েছিলেন, বৃন্দাবনের সেই অপার সৌন্দর্য তিনি জঙ্গলমহলের ভূপ্রকৃতির মধ্যেই যেন পেয়ে গেছিলেন। নদী পাহাড় ও জঙ্গলের তিন সৌন্দর্য মহাপ্রভুকে খুবই মুগ্ধ করেছিল।
শাল সেগুনের এমন ঘন বনের সৌন্দর্য দেখে চৈতন্যদেব প্রথমে জঙ্গলমহলকেই বৃন্দাবন ভেবে ভুল করেছিলেন।

বন দেখি ভ্রম হয় এই বৃন্দাবন।
শৈল দেখি মানে প্রভু এই গোবর্দ্ধন।।
যাহা নদী দেখে তাহা মানয়ে কালিন্দী
তাহা নাচে গায় প্রেমাবেশে পড়ে কান্দি।

ঝাড়খন্ড তথা জঙ্গলমহলের ভূ-প্রকৃতি বৈশিষ্ট্য বৃন্দাবনের মতোই সৌন্দর্যময়। সে দৃশ্য মাধবেন্দ্র পুরী চৈতন্যদেবের পূর্বেই প্রত্যক্ষ করেছেন। তার তপস্যার স্থানকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেছেন, হ্রদের পশ্চিম তীরে সুবৃহৎ দেবদারু গাছ। পূর্ব দুয়ারে সুললিত উদ্যান ভূমি। 'নীল পীত সিত' কত বিচিত্র পুষ্পের সমাহার। পদ্মের গন্ধে আমোদিত সেই স্থান। হংসচক্রবাক আদি বিহার করছে। ভ্রমরের গুঞ্জন, কোকিলের কুহু কুহু ডাক সর্বদাই শোনা যাচ্ছে।(ঝাড়খণ্ডে মহাপ্রভু/ সুহৃদ কুমার ভৌমিক)

শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নয়, মুগ্ধ করেছিল এখানকার সহজ সরল সাদা মনের মানুষের ব্যবহারও। এখানকার সমস্ত জাতি সম্প্রদায় ও উপজাতির মানুষকে তিনি সাম্যের ঐক্যে বেঁধেছিলেন তাঁর নামগান দিয়ে। এখানে প্রেমধর্ম প্রচার করে তিনি খুবই পরিতৃপ্ত ও খুশি হয়েছিলেন। যেন এটাই ছিল তাঁর আকাঙ্ক্ষিত সেই বৃন্দাবন। বৃন্দাবনই তো! না হলে কেন তিনি সিদ্ধান্ত পাল্টে বলেছিলেন, "আমি এখন আর বৃন্দাবন যাইব না।"

এ প্রসঙ্গে কৃষ্ণদাস কবিরাজ বলছেন,

সবে কৃষ্ণ হরি বুলি নাচে কান্দে হাসে
পরম্পরা সম্বন্ধে ভক্ত হৈলা সর্বদেশে।।
পূর্ব্বে বৃন্দাবন যাইতে করিল বিচার।
মাতা গঙ্গা অবশ্য দেখিব একবার।।

বলভদ্র ভট্টাচার্যকে সঙ্গে নিয়ে তিনি যাত্রা শুরু করেছিলেন। এই বন ও এখানকার মানুষের ব্যবহার  দেখে চৈতন্যদেব প্রচণ্ড খুশি হয়েছিলেন। নিজেকে তার সব থেকে বড় সুখী ব্যক্তি বলে মনে হয়েছিল। তাই সঙ্গী বলভদ্রকে খুশি হয়ে বলেছেন,

সুখ অনুভবি প্রভু কহেন বচন।।
শুন ভট্টাচার্য আমি ভ্রমিনু বহু দেশ।
বনপথের সুখের সম নাহি লব লেশ।
কৃষ্ণ কৃপালু আমায় বহু কৃপা কৈল।
বনপথে আনি মোরে এত সুখ দিল।।

এখান থেকেই অবশেষে ফিরে গিয়েছিলেন গৌড় ধামে। নতুন করে আর বৃন্দাবন যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেননি। কারণ বৃন্দাবনের সুখ ও সৌন্দর্য তিনি এই জঙ্গলমহলেই লাভ করেছিলেন। এখানকার গাছপালা পশুপাখি ও মানুষজনকে কৃষ্ণ নামে পবিত্র করে তুলেছিলেন। সেই "হরিবোল" ধ্বনি এখন কান পাতলেই জঙ্গলমহলের ঘরে ঘরে শোনা যায়।

তথ্যসূত্র: ঝাড়খণ্ডে মহাপ্রভু/ সুহৃদ কুমার ভৌমিক
ঋণ স্বীকার: মহাপ্রভুর যাত্রাপথের মানচিত্র "ঝাড়খণ্ডে মহাপ্রভু" বই থেকে নেওয়া হয়েছে।

 পেজে লাইক দিন👇


Post a Comment

0 Comments