জ্বলদর্চি

পদ্মপাতায় শিমুল-৩২ /সীমা ব্যানার্জ্জী-রায়

পদ্মপাতায় শিমুল-৩২

সীমা ব্যানার্জ্জী-রায়


কতদিন আর ছলনা দিয়ে ঢেকে রাখা যায় সত্যকে। সেই মানুষটার মুখেই শুনেছিলাম তার দুই ছেলে আছে। তারা আসত না। কিসের এক চাপা অভিমানে তারা বেড়ে উঠেছে। পরে তাদের মুখে শুনেছি তাদের মা আসতে দিতে চাইত না, যদি তাদের খাবারে বিষ মিশিয়ে দি। ছোটজন রায়ান সব বলেছে আমাকে। হাজার হোক শিশু মন তো। তাই প্রথম প্রথম ওরা আসলে আমরা ওদের বাইরে খাওয়াতে নিয়ে যেতাম। পড়ে তারা বুঝতে পেরে নিজেরাই আসা যাওয়া শুরু করেছে। এখন তো প্রায়ই আসে।

সুযোগমত ছেলেদের আরো কথা শুনতে চাইলাম, যদিও জানতাম তার মনের আঙ্গিনা আজও খাঁ খাঁ করে গরমকালের দুপুরবেলার মতন। তাও ভাবলাম সব বললে হয়ত তার মনের অনেক দুঃখ বেদনা জল হয়ে বেড়িয়ে আসবে।

বিয়ের পরেই এখানে এসেই তাদের দেখতে চাইলাম। তারা এলো। কিন্তু কেমন যেন 'জিজ্ঞাসার চিহ্ন' তাদের মুখে প্রকাশ পাচ্ছে।

আমার ক্ষুদ্র বুদ্ধি দিয়ে বোঝালাম তাদের নানারকম ভাবে। তখন তো ছোট তারা। সব বোঝার ক্ষমতা তাদের ছিল না। বললাম, “এই বাড়ি, এই ঘর সব তোমাদের জন্য আমি নিঁখুত করে সাজিয়ে রেখেছি।” শুনে খুব খুশি দুই ভাই। আলোময় ঝকঝকে নতুন বাড়ি দেখে তারা আনন্দে মাতোয়ারা। আমি যখন ঢুকেছিলাম সেজদাদা-বৌদি, দিদিয়া আর ভাইপো-ভাইঝিদের সাথে তখন চারিদিক ছত্রাকার আর কেমন যেন গুমোট অন্ধকারে ভরা এক বাসা।

তারা তাদের ক্ষোভের কথা আজও বলে আমাকে। “বন্ধুরা নাকি কথায় কথায় অপমান করে এদিক থেকে ওদিক কথা বললেই। ওদের খারাপ লাগে তাই।”

এই ডিভোর্সে পথ হারিয়ে ফেলে সন্তানরা আরো একবার জানলাম। তারা জানি না, কেন আমাকে খুব ভালবেসে ফেলল। আমি ফোনে কথা না বললে, ওদের অভিমান হয়। এসে আমাকে বকাবকি করে--হাসিও পায়। ওরা যে অদ্ভুত।

বছর দশ এগারো আগের কথা। সাল তারিখ অত মনে নেই।

বড় জন ব্রায়ান স্কুল থেকেই গার্ল ফ্রেন্ড করেছে। তাকেই বিয়ে করবে...নিজের ড্যাডের আড়ালে বলল আমাকে। ড্যাড শুনতে পেয়ে বলল, “ তোমার মাম কিছু বলে নি এই বয়সে গার্ল ফ্রেন্ড করেছ?”

শুনে আমার দিকে তাকিয়ে চোখ মটকে উত্তর দিলঃ “মাম? হোয়াট শী উইল সেড?-দেয়ার ইজ নো কোয়েসচেন এবাউট দ্যাট, ড্যা্ড?”

কিন্তু এদেশের যা নিয়ম আসতে আসতে তারা তাদের পথ বেছে নিয়ে এগিয়ে গেল সামনের দিকে। আমি ভাবি তাদের মা কি শিখিয়েছে ওই দুই ছেলেকে? বাবার প্রতি কর্তব্য বা ভালবাসা যে হয়, তা বোধহয় তাদের জ্ঞানে নেই।

বড় ছেলে ব্রায়ান ওরফে সমু মাত্র চব্বিশ বছর বয়সেই এক পাঞ্জাবী মেয়েকে বিয়ে করে বসে। এখন বত্রিশ বছর বয়সেই সে তিন কন্যা সন্তানের জনক। সমাজ-এর চোখে তারা খারাপ মা-এর ছেলে। মহাভারতে পড়েছিলাম, “কুপুত্র যদি বা হয়, কুমাতা কদাচ নয়।” এখানে হল তার উল্টো।

সে সফটওয়্যার ইঞ্জিনীয়ার। যখন এই বিচ্ছেদ হয় তখন দুই ভাই খুবই ছোট ছিল। কাজেই মা-এর কাছেই থাকার রায় দেয় কোর্ট। আর মা-এর কাছে থাকা মানে তাদের ভরণ-পোষণের দায়ীত্ব শুধুই ড্যাডের। কাজেই ড্যাড ডিউটি করেই গেছে। ধৈর্য্য কাকে বলে শিখতে হয় তাদের ড্যাডের কাছে। বড় ছেলে তার প্রিয় ড্যাডের কাছে থাকতে চাইলেও ছোট ভাই-এর জন্য পারে নি। আমাকে বলেছে ছোটজন যে, “মা্ম বলেছিল কোর্টে বলতে যে, আমি বিগ ব্রাদারকে ছেড়ে থাকতে পারব না।”

-ওকে, বেবিস। এইবার নিজেদের পায়ে নিজেরা দাঁড়াও-সাথে আমি আছি সব সময়।

দুই ছেলে ফোন করলে কথা বলে। মা-এর কাছে তারা আর থাকে না। তারা থাকে নিজেদের এপার্টমেন্টে। কারণ বাড়ী থেকে যাতায়াত করা বেশ মুশকিল। শিমুলরা ফোন করবে তবে তাদের খবর পাবে। “ড্যাড” যে তাদের আছে, তারা বোধহয় ভুলে গেছিল।

পিতা-পুত্রের যে একটা অঙ্গীকার থাকে, ভালবাসার টান থাকে তাদের ছিল না। অবশ্য এখন সব যায়গায় একই ফর্মূলা। শিমুল বহু চেষ্টা করেছে দুই ছেলেকে তাদের ড্যাডের কাছে ফিরিয়ে আনতে, সম্পূর্ণ পারে নি। কত বুঝিয়েছে। কিন্তু শিমুল হাল ছাড়ার পাত্রী নয়। সে ফোন, ই-মেল করে করে তাদের বিরক্ত করেছে।

উদাহরণ দিয়েছে... তার নিজের ছোট ভাই -এর আমেরিকান বৌ প্যাম এর। সেও সেই সন্তান... যার মা বাবা ডিভোর্স। তখন সে মাত্র তিন বছরের ছিল। তাই বিয়ের পরেই আমাকে বলেছিল, “আমাকে যেন অসীম কোনদিন ডিভোর্স না করে।” শুনে চোখে জল এসে গেছিল।

কিন্তু সে তার বায়োলজিক্যাল মা বাবা এবং সৎ মা কে সমান সম্মান করে। আজ তারা দুই উপযুক্ত ইঞ্জিনীয়ার মেয়ে আর ডাক্তার ছেলের গর্বিত মা-বাবা। এখানে কিন্তু সব কিছু নির্ভর করেছে মা-এর উপর। দুটো বাসনের ঠকাঠকির মত রাগারাগি হয় কিন্তু তাই বলে একেবারে ছাড়াছাড়ি? মন মানে না।

ওরা এখন অন্য শহরে চলে গেছে চাকরি নিয়ে। মাঝে মাঝে আসে লং উইকেন্ডে। হৈ চৈ করে। সত্যি তো যতই বিদেশে জন্মাক না, মানুষের মনের পরিধি কি বদলে যায়? চারিপাশ দেখে মনে হয় না। আমেরিকানদের সাথেও সেরকম মেশে নি, তাই ওদের মতও হয় নি। ওই না ঘরকা , না ঘাটকা এর মতো।

অনেক বুঝিয়েছি তাদের, কিন্তু তারা যদি সেই বোধশক্তিটাকে আস্কারা না দেয়, তাহলে তো আর কিছু করা যায় না। কিছু কিছু পাওয়ার ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তের প্রশ্ন ওঠে না। কারণ, সেখানে বাছাবাছির কোন সুযোগ নেই। আমি মনে করি এক্ষেত্রেই আমার জীবনের সবচেয়ে হার।

এখানে এসে একটা ইচ্ছের গাছ পুঁতেছিলাম। সেটা ক্রমশঃ অচেনা হয়ে উঠল। সেই গাছ এত প্রকান্ড হয়ে উঠেছে যে, হাত বাড়িয়ে তাকে আর ধরা যাচ্ছে না।

এদিকে একাকীত্বের তাড়নায় পলাশের আগের স্ত্রী বিদিশা নদনদী-ছলছলিয়ে খলবলিয়ে ছুটে গেছে আর একজন অবিবাহিত সুসিম-এর দিকে। মাঝে ঘটে গেছে অনেক ঘটনা। লজ্জা শুধু নয়, এক ধরণের ঈর্ষায় মনের মানুষটিকে হারানোর শঙ্কায় সেই ভদ্রলোক তখন একেবারে চুপ। নিজের মা, আত্মীয়স্বজন, শ্বশুর শাশুড়ির উদ্বেগ এবং ভাবনার কথা অজানা ছিল তার। তাই গভীর সাগরের জোয়ারের মতো ভেতরে ভেতরে প্রচন্ড আলোড়িত হয়েও বাইরে ছিল প্রশান্ত সুস্মিত। অদ্ভুত এক মানুষের চরিত্র, যে চরিত্রের কথা লেখা আমার সাধ্যে নেই।

বিদিশা আর সুসিমকে নিয়ে যে রস-রটনা, গুজব এবং অনেকটাই সত্যি ঘটনার কখনও মৃদু, কখনও বা ঝড়ো হাওয়া চারিধারে, তখনও তিনি চুপচাপ। লোকেরাও মন্দের ভালো হিসেবেই দেখছে ব্যাপারটা।

এটা যে বাঙালি সমাজ। এই নিয়েই মেতে থাকে মানুষ আজকাল। কারুর ভালো তারা করতে পারে না, নিন্দা বা কঠিন সমস্যার সমাধানও করতে পারে না। ভালো করা তো দূর অস্ত। দুঃখ লাগে, মন খারাপ লাগে এইসব দেখে শুনে। কিন্তু আমার একার পক্ষে এসব করা দুরূহ ব্যাপার।

নিউ ইয়র্ক থেকে ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সের জন্য চারজন রিটায়ার্ড মহিলা একটি অসাধারণ কাজ করতেন। সব স্টেটের থেকে দু চারজন মহিলাকে ওনারা নিযুক্ত করেন। লুইজিয়ানা থেকে আমি আর মেধা প্যাটেল নিযুক্ত হয়েছিলাম। ভারতীয় বিবাহিত -অবিবাহিতদের পরিবারের মধ্যে কোন সমস্যার সমাধানের জন্য এই গ্রুপ তৈরী করা হয়েছিল। চেষ্টা করেছিলাম একটু ভাল কাজ করার। কিন্তু ব্যটনরুজ ভারতীয়দের বসবাসের জন্য বিখ্যাত নয়। বাঙালি তো নিমিত্ত মাত্র ছিল। তাই বেশী অসুবিধার কথা জানা যায় নি। যদিও আমি আর মেধা দুজনে সপ্তাহান্তে যেতাম যাদের কাছ থেকে না হলেও একটু হিন্টস পাওয়া যেত। সমাধান খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যেত।

ওপরে ওঠার সিঁড়ি সবার নাকি একরকম হয় না। এভিল নিউজ রানস ফার্স্ট। আবার কানাঘুষো প্রমাণ করল সেই ভাল মানুষের আগের স্ত্রী বিদিশা এবারও ডিভোর্স। সে যে বিদিশা। দিশাহীণতার যাত্রী সে। কিসে তার ঘাটতি বুঝতে পারে না সমাজ। প্রবৃত্তি মানুষের নিয়তি। এই প্রবৃত্তির হাত থেকে মানুষের নিস্তার নেই। অমোঘ নিয়তির অনিবার্য পরিণামকে এড়িয়ে যাবার কোন শক্তি নেই তার। প্রবৃত্তিরুপিণী নিয়তির কাছে মানুষের অসহায়তাবোধ এক জটিল অংকের কাজ করে।।

অথচ তার কোনো হেরফের নেই। কত বিচিত্র মানুষের চরিত্র। আবার অন্য পথে বাঁক নিচ্ছে সে। ফায়দা তুলছে সমাজের কিছু সারমেয় মানুষ।

বয়স বাড়ার সাথে সাথে বিদিশা যে নিজেকে হারাচ্ছে, যে সৌন্দর্য জড়িয়ে ছিল তার সত্তার সঙ্গে সেটাকে যে হারিয়ে ফেলছে সেই ভয় কি সে চেষ্টা করছে গোপন করতে? কিন্তু মনে হয় সে পালাতেও চায় নিজের থেকে। রাস্তার কালো পিচের ওপর তার ঝরা দুঃখ হয়ত বৃষ্টির জলে মুছে যায়। সবই অবশ্যই আমার অবচেতন মনের ভাবনা।

আমার কাছে একটা সংসার হয় একটা বটগাছ। আর সেই বটগাছ কে সুস্থ রাখতে লাগে মাটি, আবহাওয়া, জল। তবেই সে ছায়া দেয়। বড় ঝড় আসলেও সেই বটগাছ কিন্তু সোজা দাঁড়িয়ে থাকে।

ঘরের ভেতরও আজকাল সূক্ষ্ম একটা কাতরতার বোধ টের পাই। হয়ত তার ছেলেরা আর কখনই অসময়ে আসবে না। যদিও বর্তমানে সব সংসারের একই চলচ্চিত্র। আমার কাতরতা কি এ জন্য? এই বোধটার কী নাম? নস্টালজিয়া তো অতীতের জন্য নয়, এটা কী ভবিষ্যতের জন্য নস্টালজিয়া?

এখানে সেদিন আমার জানাশোনা মিল্টি বলছিল তার আট বছরের মেয়ে মাহি নাকি তাকে জিজ্ঞেস করেছে, “ডিভোর্স” কি? মেয়ে অনেক বড় প্রশ্ন করে ফেলেছে মিল্টির কাছে।

- “ডিভোর্স” মানে হল-যখন দুই বেস্ট ফ্রেন্ড সেপারেট হয়। মিল্টির উত্তর ছিল।

- কেন দুই বেস্ট ফ্রেন্ড সেপারেট হয়, মাম? মিল্টি বুঝিয়ে দিয়েছে মানুষেরা এরকম হয় কেউ কেউ।

কারণ, আলাপ আলোচনা যখন বড়রা করে তখন তারা চারিপাশ দেখে করে না। নিজের বাড়িতে ডিভোর্স না হলেও বাচ্চাদের কিউরিওসিটি কিন্তু আজও প্রশ্ন রাখে মা বাবার কাছে।

কেবল গৃহকেই 'গৃহ' বলা যায় না। গৃহিণীকেই গৃহ বলে। যেহেতু গৃহিণী পুরুষের সাথে একত্র হয়েই একটা সুখনিবাস তৈরী করে, সেখানের বাগানে চারা ফেলে, তার থেকে সুন্দর ফুল-ফল হয়। সেই ফসলকে আগলে রাখাই তো সুন্দর গৃহিণীদের কাজ।

সুসিম পেয়ে গেছে আর এক মেয়ের মা সুপ্রীতিকে। সেও তার ত্রয়োদশী কন্যা, স্বামী, সংসার ছেড়ে হাত ধরে ফেলেছে সুসিমের। সুসিম মায়া জানে, ম্যাজিক জানে, বশ করতে জানে। সব থেকে বেশি ঘর ভাঙতে জানে। আর হাতের পুতুল এইসব মা-এরা জানে অতল সমুদ্রে ডুব দিতে। থাক পড়ে সন্তান, স্বামী, সংসার। চাই উদ্দাম ভালবাসা, চাই উতল হাওয়ায় ভাসতে। সমুদ্রের জোয়ারে ভয় পায় না তারা। ঐ যে কথায় আছে না, “নদীর এ পাড় কহে ছাড়িয়া নিঃশ্বাস , ও পাড়েতে সর্বসুখ আমার বিশ্বাস।”

না না, সুপ্রীতির বর তমালও নাকি ভালো না। সব-ই অবশ্য কানাঘুষো। ভেতরের খবর আর কে রাখে? এক ঘেয়েমি লেগেছিল পুরনো বিয়ে। নতুন স্পর্শ চায় সে, কাজেই সুপ্রীতি ধরে ফেলেছে হাতের কাছের মানুষ সুসিমের হাত। সংসার গড়তে যত সময় লাগে ভাঙতে লাগে চোখ বন্ধ করলেই। এটা যে কতবড় সত্য তা এ জীবনেই দেখে গেলাম। এখন ভাবি বিয়ে না করে যদি এইরকম সংসার না ভাঙার জন্য কিছু কাজ করতাম, তাহলে হয়ত বেশি শান্তি পেতাম। ঠাকুর আমাকে এ জীবনে সব কিছু প্রত্যক্ষ করার জন্য চোখ আর মন দিয়েছেন। তাই আমার ইষ্টগুরুকে  আভূমি লুন্ঠিত প্রণাম জানাই।

দেশে গেলে ছোট জা রমা বলেছিলঃ “ আমরা কিন্তু ব্রাহ্মণ না।”

কিসের ব্রাহ্মণ যা আমার মাথায় আজও ঢোকে না। বাড়িতেও এ নিয়ে বড়দের সাথে একটু তর্ক হত না, তা বলব না।

“কিসের জাত? কোথায় লেখা আছে জাত? আমি ভালবাসি মানুষকে। জাত কে না”... বলেছিলাম রমাকে।

শুনেছিলে তো। আমি জাত, রং, উচ্চ-নীচ ভেদাভেদ দেখি না কখনও। হয়ত বুঝি কম। অফিসে কৃষ্ণাঙ্গীদের সাথে মিশলে শ্বেতাঙ্গীরা ভালো চোখে দেখত না। যদিও আমি সেসবে মন দিতাম না। ভালবাসা কি মনে চেপে রাখা যায়। আমি যে ভালবাসার কাঙাল। তাই তো ফেসবুক এ কিছু ভালো মানুষের সন্ধান পেয়েছি, তবে ২০১৯ এ দেশে গিয়ে তাদের চাক্ষুষ দেখার পর কিছুতেই তাদের চিনতে পারলাম না। তারা কি চায় বুঝে উঠতে আজও হিমশিম খাই। সবই আমার ঝিরঝিরে স্রোতের মধ্যে বাদামের খোসা।

সত্যি কথা বলতে আমি আজও বাঙালি জাতটাকে চিনতে পারলাম না, এটাও আমার জীবনের একটা নেগেটিভ দিক। বিশ্বাস করো। তাই ছোট ভাই আর বাঙালি মেয়ে বিয়ে করে নি। শ্বেতাঙ্গী প্যাম-কে বিয়ে করে সেও আজ দুই ছেলে মেয়ে নিয়ে খুব সুখি। আমাকেও বলেছিল, “বাঙালি বিয়ে করিস না আর।”

কিন্তু বাঙ্গালিপনা যে আমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে। আমি তো তা অস্বীকার করতে পারি না। বিয়েতেই যার তিক্ত অভিজ্ঞতা, সেখানে কাউকেই বিয়ে করার কথাই ভাবে নি শিমুল, বুঝলে?

বেশি বেলা হয়নি। আর একটু বলে নি। সব বলে ফেললে কেমন যেন নিজেকে হালকা লাগে। এইবার তো শুনলে...আমার জীবনের ছন্দ, গতি, লয় অনেকটা পরিযায়ী পাখিদের সাথে কেমন মিলে যাচ্ছে। ওরা যেমন বসন্ত, গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত, এখান ওখান করে। ঠিক তেমনি আমার জীবনও। প্রথম জীবনটাই শুধু এ গাছ থেকে ও গাছ করে কেটে গেছিল। দিনযাপনের সিঁড়ি বেয়ে নিরবচ্ছিন্ন শব্দের গহিনে তলিয়ে যাওয়ার স্বপ্নটা আজকাল ফিরে আসে বারবার। বার বার আনমনা করে দেয়।

(চলবে)

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇

Post a Comment

0 Comments