জ্বলদর্চি

শ্রীমতীর গল্প /শ্রীজিৎ জানা

শ্রীমতীর গল্প

শ্রীজিৎ জানা



তারপর শ্রীমতী উমুকের চরিত্র নিয়ে ঢি-ঢি রব পড়ে গেল পাড়ায়। আষাঢ়ে ব্যাঙের মতো লাফাতে লাফাতে খবর এগোতে থাকল। পাড়া ছেড়ে গ্রাম।গ্রাম পেরিয়ে সামনের গঞ্জ। তাকে উজিয়ে আরো দু'চরটে গ্রাম। হাট-বাজার-চায়ের ঠেক সর্বত্র।মেয়ের খবর মানেই একটু স্পাইসি। অথবা সামান্য সুইট এন্ড সাওয়ার। খবর যত কান থেকে কানান্তরে যাবে তত টেস্ট অ্যাড হবে তাতে। পেটের টানের কথা কানের অরুচি। কিন্তু শাড়ীর ভাঁজ ছাপিয়ে মহিলাটির ফর্সা পেটে কেন দৃশ্যমান তার  চর্চা ভীষণ মুখরোচক। তারপর শুধু কী পেট! মহিলাটি ক্যামন শাড়ী পরে! কীভাবে পরে! ব্লাউজ ক্যামন পরে! তার অন্দরে আদৌ ব্রা পরে কিনা! পরলে তা  ক্যামন স্টাইলের!শাড়ী -পেটিকোটের ভিতরে প্যান্টি পরে কিনা! এরকম নানা অনুসন্ধান সেরে এবার চোখ শরীরের প্রতিটি ভাঁজের দৈর্ঘ্য প্রস্থ উচ্চতা মাপতে আলোচনা সরগরম। শ্রীমতীকে নিয়ে অবশেষে বেরোবে কত অজানা গল্প। আর সমস্ত গল্পের মধ্যে ফোয়ারার মতো ছড়াবে রগরগে যৌনতা। প্রত্যেক যৌনতায় শ্রীমতীই হবে কেন্দ্রীয় চরিত্র। এমন যৌন যাপন আলোচকদের বিচারে ঘোরতর অপরাধ বলে গণ্য হবে। শ্রীমতী দোষী সাব্যস্ত হবে। দুশ্চরিত্রার লেবেল সেঁটে দেওয়া হবে।অন্যদিকে পুরুষের মাথায় উঠবে  বিজেতার মুকুট। যুক্তি হোলো পুরুষের পুংযোনী খুল্লাম খুল্লা সম্ভোগ করতে পারে। কিন্তু স্ত্রী জাতি মুখ থেকে বুক থেকে পাছা থেকে পায়ের পাতা একচুল স্ব-ইচ্ছায় নড়ানো যাবে না। তাহলেই তো সমাজ যাবে রসাতলে। ঠেকে এরই মাঝে  একজন ফেমিনিস্ট ছোকরা থাকবে। সে হয়তো বলে ফেলবে,
---আরে মেয়েটাকে নিয়ে আমরা যতটা ভাবছি হয়তো সে অমন নয়। অথবা এসবের আড়ালে কোন যন্ত্রণার গল্প আছে। জেহাদও থাকতে পারে।
---যতই যন্ত্রণা থাকুক তা বলে শরীর বেচবে? মানে মেয়েদের কী এটা মানায়?
---মেয়েটি যদি শরীর বেচে তবে খদ্দের তো আমাদের মতো কোন পুরুষই। বিক্রেতা যদি সমালোচিত হয়,তবে ক্রেতা কেন নয়?
---দ্যাখো ফেমিচাঁদ ষাঁড় ঘুরে বেড়াবেই কিন্তু সংযত থাকতে হবে  সবসময় গাইকে।
---মানে তোমার খিদে নৈতিক আর আমার খিদে অন্যাহ্য? নিন্দার। এটা তো তাহলে পুরুষতান্ত্রের ডিক্টেটরশিপ।
----আচ্ছা  এতো মহিলাটির প্রতি দরদ কেন তোমার ব্রাদার?
----অসহায়ের উপর দরদ হওয়াটা তো অমনুষ্যত্বের লক্ষণ বলেই  জানি। আর কারো সম্পর্কে সবটা না জেনে হুট করে একটা জাজমেন্ট দেওয়া ঠিক নয় বোধ হয়।
ঠেকে এবার একটা ঘোর উত্তাপ আন্দাজ করবে সবাই। তাকে প্রশমিত করতে আরেক জন কেউ কিছুটা মিছরিরছুরির মতো করে বলবেন,
---তাহলে ব্রাদার শ্রীমতী সম্পর্কে খোঁজ খবর জোগাড়ের দায়িত্বটা তুমিই নাও। আমাদের ভুল প্রমাণিত করো।
ফেমিনিস্ট দমবার পাত্র নয়। চ্যালেঞ্জটা নিয়েই নেয় জেদে।তাহলে বারবার শ্রীমতী না বলে শ্রীমতী ডলি বলাটাই শ্রেয়। যেহেতু সে বিবাহিতা। আর পূর্বে সে কিছুটা  পুরানো পন্থী গোছের ছিল। সেক্ষেত্রে  বাপের পদবী দেওয়া হোক ছেঁটে। মানে তার নাম দাঁড়াল শ্রীমতী ডলি বেরা। ইত্যবসরে নারীবাদী ছোকরাটিরও একটা নাম হলে মন্দ হয় না। তবে সুমন নামটা রাখাই স্থির হোলো। সুমন এবার সব কাজ ফেলে নেমে পড়ল তার মিশনে।
 কয়েক বছরেই ক্যামন ঘিঞ্জি হয়ে উঠেছে পাড়াটা। গাযে গা ঠেকিয়ে তরতর করে উঠছে ঘরবাড়ি। কারো কারো বাড়বাড়ন্ত দেখলে মনে হয় পারলে যেন সে আকাশটা তার চৌকো মাথা দিয়ে খানিকটা গুঁতিযে দ্যায়। পা ছড়িয়ে বসবার এক প্রস্থ জমি পাওযা দুষ্কর। আজ দেখো একটু সবুজে খালি জমি তো কাল সেখানে বুর্জ খলিফা তৈরীর তোড়জোড় শুরু। এক শ্রেণীর পকেট এত ভারী যে সুমন ভাবে দেশের এমন অর্থনৈতিক কাৎ খাওয়া রোগ বেড়ে বেড়ে একদিন জটিল স্পন্ডেলাইটিসের রূপ নেবে। অন্য এক শ্রেণী টিকে থাকতে  যদি ভিন্ন পথ নেয় তার মধ্যে দোষ দেখে না সুমন। কিন্তু এমুহূর্তে তার দেখা ও জানার আগ্রহ শ্রীমতী ডলি বেরাকে নিয়ে। এদিক ওদিক পেঁচিয়ে কয়েকটা বাড়িকে ডাঁয়েবাঁয়ে ফেলে অবশেষে দোতলা একটা বাড়ির সামনে দাঁড়ায় সুমন। এদিকটায় সে আসেনি এর আগে। আসার প্রয়োজন পড়েনি তার। পড়াশুনো চুকিয়ে বুকিয়ে এখন সে কাজ খোঁজার কলম্বাস। তার বিশ্বাস খুব জলদি একটা কিছু কাজ জুটিয়ে নেবে। কিন্তু তখনো বোধহয় এমন একটা চোখ জুড়ানো বাড়ি করতে পারবে কিনা সন্দেহ। ব্যাস্, এইটুকুই আপাতত ভেবে, ময়না করে ইউটার্ন নেয় সে।
পরের ভাবনা হল শ্রীমতী ডলি বেরাকে কাকিমা বলবে নাকি আন্টি! কিছু একটা সম্বোধন করে তো তাকে কথা বলতে হবে। মানে ভাব জমাতে হবে। মানে এমন একটা সম্পর্ক গড়তে হবে, যাতে করে সে তার অতীত -বর্তমান সব উগরে দেয় সুমনের কাছে নিঃশঙ্কোচে। কাকিমা শব্দের শেষে মা শব্দটা জুড়ে থাকায়  সুমনের বড্ড অস্বস্তি ঠেকছে এক্ষেত্রে। শব্টার ভিতর ক্যামন একটা পুজো পুজো গন্ধ আছে। যেন নমো করতে ইচ্ছে জাগে ভেতর থেকে। বন্ধুত্বের সেই অন্তরঙ্গতার গাঢ়তা সহজে আসে না। ফলে কাকিমা ডাকে ব্যাপারখানা জমবে না।তাহলে সুমন ঠিক করে আন্টি ডাকটাই অ্যাপ্রোপিয়েট হবে।
কিন্তু ক্যামন করে যে শুরুটা হবে ভেবে কুল পায় না সুমন। রাতে শুযে শুয়ে অন্য এক ভাবনা তার মাথায় দুষ্টুমি শুরু করে। ডলি আন্টি যদি সবার কথা মতো দেহপোজীবী হয়,তবে সে নিজেই উপভোক্তা হযে তার কাছে যেতেই পারে। তারপর ব্যাপারখানা  জানিয়েই  তার জীবনের অপঠিত কথাগুলো পড়ে ফেলা যাবে।শুধু মোবাইল নম্বরটা যোগাড় করে নিলেই হল। আবার পরক্ষণেই সুমন ভাবনাটাকে বেশি পশ্রয় না দিয়ে ঝেড়ে ফেলে দ্যায়।
পরদিন সকালে সুমনের মাথায় যেন বাজ আছড়ে পড়ে। ফোনের ওপ্রান্ত থেকে অভির জিজ্ঞাসা কানে হুল ফোটায়,
---কী ব্রো কাল কার ঘরের সামনে ছোঁকছোঁক করছিলে?এম্নিতে তো এমন ভাব দেখাস যেন লেধুস মাছ। হয়েছে কিছু নাকি খালি হাতে ফিরেছিস। ওর হেবি ডিমান্ড! রেটও শুনি হাই।
রাগে মুখ দিয়ে কোন কথা বেরোয় না সুমনের। ফোনটা কেটে দ্যায মুখের উপর। ঘরের বাইরে বেরিয়ে আসতেই মা তাকে চেপে ধরে। কাঁদতে শুরু করে দ্যায় হাউমাউ করে।
---একি সব্বনাশ হোলো আমার! ওই মেয়েটার বাড়িতে তুই কেন গিয়েছিলি? বাবা-আমি মুখ দেখাতে পারবো পাড়ায়?
হতভম্বের মতো তাকিয়ে থাকে মায়ের দিকে কিছুক্ষণ। মাথায় যেন দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে তার। ছিটকে বেরিয়ে যায় ঘর থেকে।
এবার সুমনের মাথায় একটা জেদ চেপে বসে। সে জানে ডলি আন্টির মেয়ে কৌশানি কলেজে পড়ে। সেদিন কলেজ গেটে অপেক্ষা করতে থাকে সুমন। কৌশানি বেরিয়ে এলে সে এগিয়ে যায়। কৌশানি পাড়ায় কয়েকবার দেখেছে সুমনকে। এম্নিতে অপরিচিত হলেও কথা বলতে এগিয়ে এলে অন্য মেয়েদের মতো সে ভয়ে কিম্বা লজ্জায় সিঁটিযে যায় না। তার আত্মবিশ্বাস প্রচন্ড। সুমন আমতা আমতা করে বলে,
---আমাকে আপনি নিশ্চই পাড়ায় দেখেছেন। মানে চোখে পড়েছে নিশ্চই?
---কেন বলুন তো?
---না, মানে আপনার সাথে একটু কথা বলতে চাই।
---আমার সাথে আপনার কী এমন কথা থাকতে পারে শুনি?
---আসলে এখানে দাঁড়িয়ে সবটা বলা যাবে না। যদি আপত্তি না থাকে কোথাও একটা বসা যায়?
আপত্তি করেনি কৌশানি। সুমনের মুখের উপর ভেসে ওঠা ভীতুর ছায়া তার চোখে স্পষ্ট ধরা পড়ছিল। হাবিজাবি কথা চলতে থাকে একটা ক্যাফেতে বসে। সুমন সেদিন আসল প্রসঙ্গে ঢুকতেই পারেনা। মনও চাইছিল না তার। ডলি আন্টিকে নিয়ে তার শোনা হাজারটা কথা ,আর কৌশানিকে সামনে থেকে দেখা দুটোকে মেলাতে পারে না। চোখে আটকে থাকার মতো চেহারা কৌশানির। অসম্ভব মার্জিত তার সাজগোজ। মারাত্মক সপ্রতিভ। কথায় যেমন যুক্তি তেমন শ্রুতিমধুর। সুমন মাঝেমধ্যেই স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল কৌশানির দিকে। কৌশানির ধারালো চাহুনির সাথে ঠোকাঠুকি হযেছে বেশ কয়েকবার। জলবাহী মেঘের মতো মৃদু লজ্জায় আনত হয়েছে দুজনের চোখের পাতা।
সেদিনের পর থেকে কফি কাপের দু'প্রান্তে বসেছে দুজন।শুধু ক্যাফের ঠিকানা বদলে গ্যাছে বারবার।উদ্দেশ্য  অজান্তেই বাঁক নিয়েছে অন্য এক সম্পর্কের গলিতে। সুমন ক্রমে অনুভব করে। কোন ভাবেই এড়িয়েও যেতে পারেনা কৌশানিকে। তবু কথার মাঝে সেদিন হুট করেই সুমন কথাটা পেড়ে বসে,
---আচ্ছা রেড লাইট এরিয়ার মেয়েদের নিয়। তোমার কী মত? কল গার্লদের নিয়ে?
---সাডেনলি এই সাবজেক্টটা তোমার মাথায় কেন এল?
---আরে বাবা তুমি সব বিষয়েই দারুণ একটা কমেন্ট করে। সো, ভাবলাম এটা নিয়ে তেমার ওপিনিয়ন ক্যামন হয় জানবো।
--ও কে।আমি ওদের রেসপেক্ট করি। ডেফিনিটলি এদের প্রফেশনকেও।
---কিন্তু সোসাইটির কাছে ওরা তো ভীষণ হেটট্রেট।
---আমার কাছে সোসাইটি শব্দটাই  একটা অ্যাবস্ট্রাক ফ্রেম। যেখানে আমাদের মতো মানুষের মানসিকতা,চিন্তাভাবনা নিয়ন্ত্রণ করে সবটাই। ঘৃণা করতে হলে শুধু ওরা কেন অনেকেই ঘৃণার যোগ্য। শরীর সবাই বেচে। পাড়ার মেয়ে বৌ বেচলে সে প্রস্টিটিউট।আর রুপোলী পর্দায় যারা কায়দা মেরে আর্টের দোহাই দিয়ে পণ্য করছে শরীর তার স্টার। এমন একপেশে জাজমেন্ট কোন যুক্তিবাদী সোসাইটির হতে পারে না।
সুমন বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে কৌশানি দিকে। এমুহূর্তে তাকে অন্য এক রূপে দেখছে সে। চোখ মুখ থেকে কথার তীর যেন রোদের মতো ঝলসে উঠছে। কৌশানি থামেনা,
---ও ইয়েস আজকে তোমার এই জিজ্ঞাসার পেছনে যে কৌতুহল তার কথা তোমাকে আগেই জানাতে চেয়েছিলাম। বাট্ বলা হয়নি। পাড়ায় আমার মাকে নিয়ে ইনফ্যাক্ট আমাদের নিয়ে নানা কুকথা চলে। মা নাকি দেহব্যবসার সাথে যুক্ত। এমনকি আমিও।আমাদের বাড়ি,লাইফস্টাইল সবের যোগান আসে ওখান থেকেই। ডেফিনিট তেমাকে এসব নিয়ে কথা শুনতে হয়েছে।
কথার মাঝে মস্ত বড় একটা পূর্ণছেদ বসাতে চায় সুমন। থামাতে চায় কৌশানিকে একপ্রকার জোর করেই। কিন্তু কৌশানি তখনো প্রভলভ,
---জানো আমার জন্য নয়,কষ্ট হয় মায়ের জন্য। যখন মাকে নিয়ে আজেবাজে কথা শুনি ক্ষেপে উঠি ভেতরে ভেতরে।কিন্তু ওই সোসাইটির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে যে জোর লাগে তা তো আমাদের নেই। আর এত কথা উঠে কেন জানো? কারণ মা ডিভোর্সি। একটা কাপড়ের দোকানে সেলসের কাজ করে। মামা দাদুর রেখে যাওয়া টাকায় ঘর বানিয়েছে। আমাকে পড়াচ্ছে।  বিন্দাস থাকি মা মেয়েতে।এটা তোমাদের সো কলড্ সভ্য সোসাইটির গায়ে ছ্যাঁকা লাগে। আফটার অল একলা মেয়েমানুষ তো। 
---আমি কিন্তু এতসব মিন করতে চাইনি কৌশানি।
---কী জানি!তবে আমার জানানো দরকার ছিল তোমাকে। এবার সবকিছু ভেবে পরের বার ক্যাফেতে এসো। জানো তো আজও অনেক মেয়েরাই নিজের শরীরটাকে ঠাকুর ঘরের মতো আগলে রাখতে চায়। নিজের থেকে কেউ নর্দমা ঘাঁটতে চায় না।
শেষের কথাগুলোর সাথে মিশে থাকে আর্দ্রতার স্বর।কৌশানি ঝটিতে চেয়ার ছেড়ে উঠে বেরিয়ে যায়।সুমন উদভ্রান্তের মতো বসে থাকে ক্যাফের চেয়ারে দীর্ঘক্ষণ। 

অমন খবরের গতি বিন্ধ্য পর্বতেরও অসাধ্য আগলে রাখা। সাইক্লোনের বেগে  ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত। ডলি বেরার মেয়ের সাথে সুমনকে  আকছার দেখা যাচ্ছে। এই রসালো খবর ইতিমধ্যে পাড়ার সবারই জানা। সুমনের মা-বাবা থেকে আত্মীয়স্বজন কারো জানতে বাকি নেই। পাড়ায় একটা চাপা গুঞ্জন ঘুরপাক খাচ্ছে। শেষে কিনা মাইতি বাবুর ছেলেটাও ওই মেয়ের চক্করে পড়ে গেল। শুধু তারো সাহসে কুলোচ্ছে না সজোরে প্রকাশ্যে বলার। অসীমা কেঁদে কুল পায় না। অপরেশ মাইতির মুখ রাগত এবং গম্ভীর।সুমন দেখে বাড়িতে তার মামা হাজির। ছেলেকে সংসারে ইমিডিয়েট বেঁধে ফেলতে হবে। তারই তোড়জোড় শুরু জোরকদমে। যুদ্ধের সেনাপতি সুমনের একরোখা মন্মথ মামা। তার মুখের উপর কথা বলা দুঃসাহস দেখানোর মতো। কিন্তু তাকে সাহস দেখাতেই হবে। সে মাকে আলাদা করে জানায় কৌশানির সঙ্গে তার সম্পর্কের কথা। তাদের পরিবারের কথা। কিন্তু কোন কথাই সেভাবে বাড়ির কাউকে প্রভাবিত করতে পারে না। এমনকি বন্ধুমহলকেও না। 
কৌশানির সাথে তিনদিন কোন যোগাযোগ হয়নি সুমনের। অনেকবার ফোন ট্রাই করেও পাইনি তাকে। কলেজ থেকেও ফিরে এসেছে সুমন একাই।শুধু বাড়িতে যেতে পারেনি পাড়ার অনেক চোখ ডিঙিয়ে। তারপর হঠাৎ মোবাইলে একটা মেসেজ আসে কৌশানির। দীর্ঘ মেসেজ। সুমন বিশ্বাস করতে পারেনা। মুখোমুখি হতে চায় কৌশানির। এদিকে তার মন্মথ মামার কড়া হুঁশিয়ারি। সেইসব ছাপিয়ে কৌশানির কথাগুলো মাথায় দৌড়ঝাঁপ দ্যায়। রাগে মন্মথ মামার প্রস্তাবে রাজি হয় সুমন। পয়সাওয়ালা বাড়ির একমাত্র মেয়ে। তাদেরই দৌলতে একটা কোম্পানীর বড় পোস্টে জয়েনও করবে সে শিগগির।

দিনক্ষণ স্থির হয়ে গ্যাছে। উভয় বাড়িতে এখন খুশির আবহ। মেয়েটির সাথে মাঝে দেখাও করে সুমন। কৌশানিকে যত দ্রুত সম্ভব মন থেকে মুছে ফেলতে হবে। একবার ঠেকে যেতে হবে তাকে। আসলে সবাই শ্রীমতী ডলি বেরা ও তার মেয়েকে  নিয়ে যেসব ভাবে তা সবই সত্যি। নিজের দেহের সাথে অন্যের ইমোশানকেও তারা পণ্য ভাবে। শুধু শরীর নয় প্রয়োজনে মনও বেচে দিতে পারে। গত রাতে এই কথাগুলো কৌশানিকে হোয়াটস্ অ্যাপে টেক্সট করতে চেয়েছিল সুমন। কিন্তু সেদিন পর্যন্ত কৌশানির মোবাইল সুইচড অফ দেখাচ্ছিল।  সামান্য খোঁজ খবর নিতে মন টানছিল না তার। সামনে একটা নতুন উজ্জ্বল জীবন এখন হাতছানি দিচ্ছে। পিছনের দিনগুলোকে কর্দামাক্ত মনে হচ্ছে তার। 
এরই মাঝে সুমনের বিয়ের দিন আসন্ন। পাড়ার তাদের বাড়ির দিকটা আলোয় আলোকিত। অপরেশ মাইতির মুখে চওড়া হাসি। আসীমার চোখে আজও জল তবে তা আনন্দের। মন্মথ মামা একাহাতে সামালাচ্ছেন সেনাপতির মতোই। সকলের বাহবা পেয়ে তাঁকে বেশ গর্বিত লাগছে। বন্ধুরা সুমনের কানের কাছে এসে মৃদু স্বরে বলে উঠে,
--মালটার হাত থেকে ভারী বেঁচে গেছিস। পুরো চুষে ছিবড়ে করে ফেলে দিত। 
---কিরে বলেছিলাম না ওরা কেমন বাজারি  জিনিস। বুঝলি তো।
সুমন নিরুত্তর থাকে। বরের সাজে তার অন্যরকম লাগছে নিজেকে। আলাদা একটা অনুভূতি। লগ্ন মেনে বরের গাড়ি ছাড়বে এক্ষুনি। মাইকে সানাইয়ের সুর। আলোয় আলোকিত চারপাশ। সুগন্ধে ম ম করছে চতুর্দিক। 

শুধু কয়েকটা ঘর আর গলির বাঁক-মোড় পেঁচিয়ে যে বাড়িগুলো নির্বাক দাঁড়িয়ে সেখানে চাপ চাপ অন্ধকার। সেই অন্ধকার যেন চিৎকার করে অনেক কথা বলতে চায়। বলতে চায় অপরেশ মাইতির আত্মহত্যার দি্ব্যি দেওয়ার কথা। মন্মথমামার শাসানির কথা তাদের মা-মেয়েকে। কাপড়ের দেকানের মালিককে দিয়ে চাকরি থেকে তাড়িয়ে দেবার কথা। মা ও মেয়ে মিলে পাড়ায় দেহ ব্যবসা করছে এই মর্মে পুলিশের কাছে পাড়া থেকেঅভিযোগ দায়ের করার কথা। কিন্তু কীভাবে বলবে অন্ধকার! অন্ধকারের কাছে আসতে চায় না যে কেউ।
 
পেজে লাইক দিন👇

Post a Comment

0 Comments