গুচ্ছ কবিতা-৯
শুভশ্রী রায়
নিজস্ব
কমরেডের নিজস্ব একমাত্র নারী হো'ক,
নিকটতম রমণীর অভাবে তিনি শুকিয়ে যাচ্ছেন,
কঠিন হয়ে যাচ্ছে তাঁর রাত,
ক্ষর দিন তেতো তেতো; স্লোগানসর্বস্ব জীবন।
একেক সময় বহিরঙ্গ সচেতন তিনিও
উৎকট ভুল করে ফেলছেন,
এই যেমন ক' দিন আগে ক্যাটক্যাটে গোলাপী জামা পরে মিছিলে হাঁটছিলেন।
এক নারী আসুক তাঁর জীবনে
না হলে তিনি স্বভাবত হাসবেন কিন্তু
সেই হাসি ক্রমে আরো আনন্দবিহীন হবে।
হে ব্রহ্মান্ড, কমরেড সুপুরুষ ও বুূদ্ধিমান
কিন্তু নারীবিহীন হয়ে অসম্পূর্ণ।
সবাই মনে করে, সঙ্গিনীবিহীন তো কী?
তাঁর তো আর সবই আছে
কিন্তু কমরেড নিজে মনে করেন
তাঁর জীবন শ্রী থেকে দূরে।
মনের মানবী কমরেডের অস্তিত্বে মিশে যাক
তাঁর শুভ হোক।
শহরী
সবার আত্মা যে শহরে বিক্রি হয়ে গেছে
বাড়ী সেই শহরে আমার,
প্রত্যেকে পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী যে মহাগহ্বরে
ভেতরে তার আমার আবাস, এখানেই
যে নরকে সবাই উঠে গেছে সে নরক নিজের
নাম বদলে গালভারী চন্দ্রপৃষ্ঠ দগদগে আবাসন;
প্রহরীকে মাস মাস টাকা দিয়ে থাকি আমি।
তস্কর শাসিত, বিবেকবর্জিত যে পুরসভা
আমাকে ঠিকানা দিয়েছে,
তার এলাকায় আমার চিতা জ্বলে রোজ
তবু মরি না, ওঠে না শোকতাপের বাষ্প;
যাদের আত্মা বিক্রি হয়ে গেছে
তাদের কাছে মৃত্যু প্রলম্বিত হাসি ছাড়া কিছু নয়।
এত কিছুর পরেও কেনাকাটায় অবিশ্বাসী
কোনও এক ভুবনে ছড়িয়ে আছে আমার অস্তিত্ব।
ধর্ষণের দিনরাত্রি
সেই রাতে চাঁদ ছিল দুর্বোধ্য , ঘোলাটে
তৎপর ও কৌশলে মধুর
এসে বসে গিয়েছিল পাঠ্য বইয়ের মলাটে।
মেয়েটি গ্রামীণ পথ ধরে ফিরছিল বাড়ী
পথ প্রশাসন নির্মিত নয়
লোকের বানানো, মেয়ের ছিল তাড়াতাড়ি।
মা ও বাবা, পেঁয়াজভাজা, ভাত অপেক্ষা
গোলা ভর্তি হচ্ছিল দুশ্চিন্তায়;
কতটুকু প্রয়োজন গেঁয়ো মেয়েদের শিক্ষা?
দিনটাও ছিল অস্বস্তিকর ও রোদের রোখে,
ধর্ষণের দায় নয় দিনরাতের,
সমস্ত পাপ ছিল মানুষের দৃষ্টিতে, চোখে।
অন্তরবাসী
কে সে বাস করে আমার অন্তরে,
সে কী নিজেকে ভাবে আরেকটা আকাশ?
নদীর মতো সহজ অথচ পরাক্রমী
কল্পনা করে নিজেকে? আগুনের তুল্য উষ্ণতা
আছে তার মধ্যে? এই সব সাতপাঁচ ভাবি;
নিজের মাটিতে আরো ঢুকতে ঢুকতে
হাওয়ার প্রশ্নের ধাক্কায় কাঁপতে থাকি
আর এই সব জিজ্ঞাসার মেলার মধ্যে
আমার লুটনো অন্তর্বাস সাদা পাখী হয়ে
আকাশ খুঁজতে উড়ে যায়।
0 Comments