জ্বলদর্চি

বৌদ্ধ দর্শন - ৪/বিশ্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়

বৌদ্ধ দর্শন  - ৪

বিশ্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়


" Buddha never bowed down to anything. --neither
Veda , nor cast , nor priest, nor custom.
He fearlessly reasoned so far as reason could
take him . Such a fearless search for truth and
such love for living thing the world has never
seen .
Buddha was the Washington of the religious 
world ; he conqured a throne only to give it to
the world, as Washington did to the American
people. He sought nothing for himsrlf .

                                  --- Swami Vivekananda
এখন আমরা দেখি কিংবা বুঝতে চেষ্টা করি কে এই 
বুদ্ধ ? এর উত্তর হলো তিনিই বুদ্ধ যিনি :

(১) অপরের নিকট হতে কিচুই না নিয়ে শুধুমাত্র নিজের
      প্ৰচেষ্টায় পরিপূর্ণ ভাবে এমন এক ধর্ম আবিস্কার
      করেছেন  যে ধর্ম প্রাণীকে বার্ধক্য, রোগ ও মৃত্যুর
      দুঃখ হতে মুক্ত করতে পারে ।
(২) তাঁর আবিষ্কৃত ধর্ম অনুসারে অনুশীলন করে ব্যক্তিগত
       ভাবে এমন এক চরম জন্মে উপনীত হয়েছেন যার
        পরে তাঁকে আর নবতন জন্ম পরিগ্রহ করতে হবে না ।
(৩)  ব্রহ্মা, দেবতা ও মানুষ কে তাঁর আবিষ্কৃত ধর্ম এমন
       সহজ ও সরল ভাবে  শিক্ষা দিতে পারেন যে
       তাঁরা অতি সহজেই ধর্মের তাৎপর্য  নিজেরাই  বুঝে
       নিতে পারেন
 বুদ্ধ জন্ম
দুহাজার পাঁচশত বছরেরও কিছু বেশী আগে ভারতবর্ষের 
শাক্য অঞ্চলে কপিলাবস্তু রাজ্যে রাজা শুদ্ধোদন রাজত্ব করতেন । তাঁর প্রধানা মহিষী ছিলেন মহামায়া ।তিনি একদিন
এক অদ্ভুত স্বপ্ন দেখলেন । চার জন দেবরাজ যেন তাঁকে
'চতুর্মহারাজিক' নামে আধ্যাত্মিক বিমানে করে হিমালয়
পর্বতমালার অনবতপ্ত হ্রদের কাছেই একটি রজত পাহাড়ের ভিতরে একটি স্বর্ণ মন্দিরে নিয়ে গেলেন ।  যখন তিনি সেই
সুবর্ণ গৃহে নিদ্রিত ছিলেন তখন একটি শ্বেতহস্তী উত্তর দিক
হতে এসে দক্ষিণাবর্তে তাঁকে প্রদক্ষিণ করলো । এর পর সেটি
তাঁর দক্ষিণ উদরে আঘাত করে তাঁর গর্ভে প্রবেশ করলো ।এই
স্বপ্ন দেখার কিছুদিন পরেই রানি গর্ভবতী হলেন । যখন
প্রসব কাল আসন্ন হয়ে উঠলো তখন রানির প্রবলন ইচ্ছা 
হলো তিমি তাঁর পিতৃ গৃহ দেবদহে  যাবেন । তিনি যখন কপিলাবস্তু ও দেরদহের মাঝা মাঝি  স্থানে পৌঁছলেন
তখন লুম্বিনীর শাল কুঞ্জে তিনি এক পুত্র প্রসব করলেন ।
ঐ দিন ছিলো শুক্রবার ও পূর্ণিমা তিথি । বৈশাখ মাস
(ইংরেজি মে) আধুনিক কাল গণনার হিসাবে  ৬২৩ 
খ্রীষ্টপূর্বাব্দ । পুত্রের নাম রাখা হলো সিদ্ধত্থ (সিদ্ধার্থ) পালি ভাষায় সিদ্ধ শব্দের অর্থ পূর্ণ এব‌ং অত্থ শব্দের অর্থ উপকার
বা সুযোগ । তাই এই নামকরণের মধ্য দিয়ে এটাই বোঝানো
হলো এই রাজকুমার জীবনের সমস্ত সুযোগকেই পূর্নতা
দিতে পারবেন । রাজকুমার সিদ্ধার্থের জন্মের অল্প দিন পরেই
রাজা শুদ্ধোদনের গুরু 'অসিত' নামে পরিচিত মহান ঋষি
কালদেবল রাজধানীতে উপস্থিত হলেন । রাজা ও রাজ্যের
সকল প্রজার কাছেই তিনি খুবই সম্মানিত ছিলেন । তাঁর
মধ্যে প্রচুর আধ্যাত্মিক শক্তি ছিলো । রাজকুমারের লাবণ্য 
ও অশেষ সৌন্দর্য দেখে  অসিত অভিভুত ও মুগ্ধ হলেন ।
শুধু তাই নয় সেই নবজাত শিশুটিকে তিনি শ্রদ্ধাভরে
প্রণতিও জানালেন । সর্বজনমান্য ঋষির  এই রূপ কার্য
দেখে রানি ও রাজপ্রাসাদে উপস্থিত সকলেই বিস্ময়াভিভুত
হয়ে পড়লেন । এমন কি স্বয়ং রাজাও নিজ পুত্রকে প্রণতি
অভিবাদন জানালেন ।
রাজা শুদ্ধোদন তাঁর পুত্রের ভবিষ্যৎ জানবার জন্য খুবই
ব্যগ্র হয়ে পড়ে ছিলেন । তাই তিনি একশত আট(১০৮)
জন জ্যোতিষীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তাঁর রাজ্যে।
তাঁরা কুমারের দেহ চিহ্ন গুলি  দেখে বিশ্লেষণ করে দেখবেন
তাঁর পুত্রের ভবিষ্যত  । তাঁদের মধ্যে আট জন প্রধান জ্যোতিষী এই দায়িত্বভার নিলেন । তাঁরা পরীক্ষা করে
কুমারের দেহে এমন কতকগুলি অপূর্ব লক্ষণ দেখলেন যে
সব লক্ষণ ইতিপূর্বে কোনও মানব দেহে তাঁরা আগে দেখেন
নি । তাঁরা বত্রিশটি প্রধান দৈহিক চিহ্ন ,আশিটি অপ্রধান এবং
একশত আটটি তাৎপর্যপূর্ণ পদচিহ্ন দেখতে পেলেন ।এই সব
জ্যোতিষীর মধ্যে একজন বাদে অন্য সকলে দুটি আঙুল
তুলে দ্বিবিধ ভবিষ্যৎ বাণী করলেন । এই কুমার হয় বুদ্ধ
হবেন নয় চতুরদ্বীপ-সমন্বিত বিশাল বিশ্বের অধীশ্বর সম্রাট
হবেন । কেবল কৌণ্ডিল‍্য বং‌শীয় সুদত্ত নামক ব্রাহ্মণ জ্যোতিষী একটি মাত্র আঙুল তুললেন । তিনি বললেন,
"এই বালক অবশ্যই বুদ্ধ হবেন । এ বিষয়ে আমি নিশ্চিতরূপে ঘোষণা করতে পারি কারণ আমার এতে কোনও রূপ সন্দেহ নাই" । রাজা শুদ্ধোদনের এই ভবিষ্যৎ বাণী কিন্তু ভালো লাগলো  না ।তিনি চাইছিলেন তাঁর পুত্র সসাগরা পৃথিবীর
সম্রাট হোন । পুত্র যাতে বুদ্ধ না হয় তিনি সেদিকে সচেষ্ট হলেন।
এ উদ্দেশ্যে তিনি নানা কৌশল অবলম্বনের চেষ্টা করতে লাগলেন । তিনি কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করলেন যাতে 
রাজ্যের কোথাও তিন মাইলের মধ্যে কোনো বৃদ্ধ, রুগ্ন,
মৃত বা পরিব্রাজক সন্ন্যাসী আসতে না পারে । কারণ তিনি
ভাবছিলেন এই সব দৃশ্য যদি রাজকুমারের চোখে পড়ে
তবে রাজকুমার গৃহ ত্যাগ করে সন্ন্যাসী হতে ইচ্ছা করবেন ।
এই ব্যবস্থা ছাড়া ও সিদ্ধার্থের চারিপাশের পরিবেশে
সীমাহীন ভোগ সুখের ব্যবস্থা করা হলো । রাজ কুমারের
মনোরঞ্জনের  জন্য পঞ্চপদ্ম শোভিত মনোহর হ্রদের প্রতিষ্ঠা
করা হলো ।  বিচিত্র পত্র পুষ্পে শোভিত প্ৰমোদ্যান  করা
 হলো । রাজকুমার সিদ্ধার্থ ষোলো বছরে পদার্পণ করলে
তাঁর মনোরঞ্জনের জন্য  সুউচ্চ জাঁক জমক পূর্ণ গম্বুজ শোভিত এমন তিনটি  সুবিশাল প্রাসাদ নির্মাণ করা হলো 
যা সে অঞ্চলে আগে কেউ কোনও দিন দেখেই নি ।
প্রাসাদ গুলি র নামকরণ করা হয়েছিলো 'রমাপ্রসাদ',
'সুরমো' এবং 'শুভপ্রসাদ' । রমাপ্রসাদ ছিলো পাঁচ তলা,
সুরমো  ছিলো সাত তলা এবং শুভপ্রসাদ ছিলো নয় তলা ।
শুদ্ধোদনের লক্ষ্য চিলো যেন রাজকুমারের জাগতিক 
সুখ ভোগের কোনও ঘাটতি না থাকে । এর পরে শুদ্ধোদন দেবদহের পরমা সুন্দরী রাজ কন্যা যশোধরার সঙ্গে পুত্রের 
বিবাহ দিলেন । তার কিছু দিন পরে তিনি পুত্রের হাতে সিংহাসন ছেড়ে দিলেন । সিদ্ধার্থ হলেন কপিলাবস্তুর
রাজা । শুদ্ধোদন ভাবলেন এই সুখভোগ ছেড়ে সিদ্ধার্থ
আর বাইরে পা বাড়াবেন না। কিন্তূ তাঁর এই সাধ ও আশা পূরণ হলো না।

 
পেজে লাইক দিন👇

Post a Comment

0 Comments