জ্বলদর্চি

মেদিনীপুরে আই ভি এফ পদ্ধতিতে সন্তানলাভে অগ্রণী সিমবায়োসিস-এর দশম বর্ষ পূর্তি অনুষ্ঠান, সচেতনতা সৃষ্টি ও আধুনিক চিকিৎসায় সফলতার এক যাত্রাপথ

মেদিনীপুরে আই ভি এফ পদ্ধতিতে সন্তানলাভে  অগ্রণী সিমবায়োসিস-এর দশম বর্ষ পূর্তি অনুষ্ঠান, সচেতনতা সৃষ্টি ও আধুনিক চিকিৎসায় সফলতার এক যাত্রাপথ

শুভশ্রী রায় 

       
মেদিনীপুর জেলায় নি:সন্তান দম্পতিদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য আইভিএফ চিকিৎসায় অগ্রদূত সিমবায়োসিস-এর দশম বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান  সম্প্রতি পালিত হয়ে গেল। সংস্থার গত দশ বছরের গৌরবোজ্জ্বল যাত্রাপথটিকে স্মরণীয় করে রাখতে বাইশে ডিসেম্বর, বুধবার মেদিনীপুর শহরের পালিত হল প্রতিষ্ঠানের দশ বছর পূর্তি উৎসব। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংস্থার দুই কর্ণধার ডা. কাঞ্চন ধাড়া ও ডা. সন্ধ্যা মন্ডল ধাড়া-সহ বহু বিশিষ্ট মানুষ। সংস্থায় এসে যারা সন্তানলাভ করেছেন তেমন বেশ কয়েকজন দম্পতি ও তাঁদের সন্তানেরাও উপস্থিত ছিলেন। 


ইনফার্টিলিটি স্পেশালিষ্ট ডা. কাঞ্চন ধাড়া সিমবায়োসিসে আই ভি এফ ব্যাপারটি পরিচালনা করেন। তিনি জানান সিমবায়োসিস-এর সূচনার দিনগুলি সোজা ছিল না। আই ভি এফ সম্পর্কে মানুষের স্পষ্ট ধারণা না থাকায় অনেক সন্তানহীন দম্পতি এই পদ্ধতির আশ্রয় নিতে দ্বিধা বোধ করতেন। অনেক সময় নিয়ে মানুষকে বোঝাতে হয়েছে। তাঁদের পুরো টিমের অক্লান্ত পরিশ্রম ও কর্মীদের নিষ্ঠার ফলে শত শত নিঃসন্তান দম্পতি সেখানে এসে সন্তানের মুখ দেখতে পাচ্ছেন। 

সেই সঙ্গে তিনি বলেন, আই ভি এফ অস্বাভাবিক ব্যয়সাপেক্ষ এমন ধারণা ঠিক নয়। এটা ঠিক যে এক সময়ে শুধু ধনীরাই এই পদ্ধতির সুফল নিতে পারতেন। কিন্তু বর্তমানে আই ভি এফ মধ্যবিত্ত শ্রেণীর নাগালে চলে এসেছে। আগে এই পদ্ধতিতে সন্তানলাভ করার জন্য যত খরচ হত এখন তার চেয়ে অনেক কম খরচ হয়। তার কারণ, এই পদ্ধতিতে যে সব ওষুধ ও সরঞ্জাম দরকার হয় সেগুলোর দাম কমে গেছে এবং সেগুলির অধিকাংশ এখন দেশেই তৈরি হ'চ্ছে। আগে এসব ওষুধপত্র সবগুলিই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হত যার ফলে দামও বেশি ছিল। 
এখনো আইভিএফ করাতে সামান্য কিছু ওষুধ ও সরঞ্জাম আমদানি করতে হয় ঠিকই তবে সেগুলোর দামও কমে গেছে। অন্য দিকে আজকাল হার্টের সমস্যা সমাধানে অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি, হাঁটু বদল, মেরুদণ্ডের সর্বাধুনিক চিকিৎসা ইত্যাদিও যথেষ্ট ব্যয়সাধ্য যদিও বিষয়টি সেভাবে তুলে ধরা হয় না। আজকাল এই সব চিকিৎসায় যত খরচ আইভিএফ-এর জন্য খরচ তার প্রায় অর্ধেক। সবাই যেন এই ব্যাপারটিও মনে রাখেন।
 এই প্রতিষ্ঠানে প্রথম সন্তানলাভ করেন সাঁকরাইল গ্রামের এক স্বল্পবিত্ত কৃষক। চিকিৎসা করানোর জন্য কলকাতা বা দক্ষিণ ভারতে যাওয়ার সাধ্য তাঁর পরিবারের ছিল না। বিয়ের সাত বছর পরেও সন্তান না পেয়ে ওই কৃষক ও তাঁর স্ত্রী সিমবায়োসিসে আসেন এবং আইভিএফ এর মাধ্যমে সন্তানলাভ করেন।

এমব্রায়োলজিস্ট, নিও নাটালোজসিস্ট তথা পেডিট্রেসিয়ান ডা. সন্ধ্যা মন্ডল ধাড়া জানালেন, সমস্ত মেয়েই মা হতে চায়। সন্তানের জন্ম দেওয়ার পরে নারীর মধ্যে এক জন মায়ের জন্ম হয়। স্বাভাবিক উপায়ে সন্তান না এলে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাহায্য নিতে হবে। সিমবায়োসিসে প্রজনন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক টিমের হাত ধরে ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (আই ভি এফ) পদ্ধতির সাহায্যে জন্মানো শিশুরা সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন যাপন করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। আই ভি এফ-এর মাধ্যমে জন্মানো শিশুদের সঙ্গে আর পাঁচটা শিশুর কোনো পার্থক্য থাকে না।
সিমবায়োসিসে এসে সন্তান পেয়েছেন এমন অনেক দম্পতি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তেমনই এক দম্পতি মেদিনীপুর শহরের অশোকনগর এলাকার বাসিন্দা দত্ত দম্পতি মেয়ে সৃষ্টিকে নিয়ে এসেছিলেন। সন্তান পেয়ে সুখী বাবা-মা আশিস ও টুম্পা দত্ত জানালেন, ডা. কাঞ্চন ও ডা. সন্ধ্যা মন্ডল ধাড়া না থাকলে তাঁদের সন্তানলাভ হ'তই না। এখানে আই ভি এফ -এর মাধ্যমে প্রথম প্রচেষ্টায় তাঁরা সন্তান না পেলেও দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় সাফল্য এসেছে। ডাক্তার কাঞ্চন ধাড়াকে ভগবানের স্বরূপ বলে মানেন তাঁরা। সন্তানহীন দম্পতিদের উদ্দেশ্যে তাঁদের বার্তা- "হতাশ হওয়ার কিছু নেই। বাচ্চার মুখ দেখতে চাইলে সিমবায়োসিসে আসুন। এখানে চিকিৎসা করালে সন্তান লাভে সাফল্য আসবেই।" এই প্রতিষ্ঠানের ওপর তাঁদের এতটাই বিশ্বাস যে অনেক নিঃসন্তান দম্পতিকে এখানে পাঠিয়েছেন তাঁরা।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন  মেদিনীপুর হোমিওপ্যাথি মেডিকেল কলেজের ডাঃ শ্রীমন্ত সাহা, বিশিষ্ট শিশু বিশেষজ্ঞ ডাঃ গৌর মন্ডল প্রমুখ। তাঁরা সিমবায়োসিসের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান।

Post a Comment

0 Comments