জ্বলদর্চি

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা ১১২

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা  ১১২

সম্পাদকীয়,
পত্তর এসেছে জয়াবতীর। জমিদারমশাইয়ের মায়ের লেখা পত্তর। পত্তর কি? আরে চিঠি পত্র গো। তৃষ্ণা আন্টি তোমাদের জন্য লেখা উপন্যাসে সে সময়ের ব্যবহৃত ভাষা ব্যবহার করে যুগ টাকে তুলে আনছেন। কি মিষ্টি সেসব শব্দ। যুগের কথায় মনে পড়ে গেল, তোমাদের বন্ধু ছড়াকার শৌর্য ছড়ার ভাষা চাপিয়ে আমাদের নিয়ে চলে গেছে মেসোপটেমিয়ায়। সে কি এখনকার কথা? এখনকার কথা, আজকের কথাও অবশ্য বলা হয়েছে এই সংখ্যায়। আজ আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস। সেই নিয়ে লিখেছে রাইলী দিদি। আর পুপুনের গল্প বলেছেন তপন জেঠু। পুপুন কে? ঐ যে গো সেই পুপুন যে  নিজের খাবার খাবে না, এদিকে জিজিমাছ খাবে, ডিম খাবে.....  এখন অবশ্য পুপুন বড়ো হয়ে গেছে। আর হবে নাই বা কেন। সময় কি আর থেকে থাকে? এই তো শারদোৎসব গেল। দেখতে দেখতে শরৎ পেরিয়ে হেমন্ত চলে এল। হেমন্তের কবিতা লিখেছেন শ্রীছন্দা পিসি। আর হেমন্ত মানেই গ্রামে গ্রামে নবান্ন উৎসব। কবিতায় শুধু নয়, এবারের প্রচ্ছদেও গ্রামের একটি দৃশ্য।  সুদীপ আঙ্কেলের তোলা ছবিতে গ্রামের রঙীন বাড়ির ছবি দেখে মনটা হু হু করে সেথায় ছুটে চলেছে.... তবে যেতে যেতে দেখে নাও অনুভব, শুভশ্রী আর তুহিনের আঁকাগুলো। এবার এসো নবান্ন করি। ---- মৌসুমী ঘোষ।

ধারাবাহিক উপন্যাস
জয়াবতীর জয়যাত্রা

৩৭ পর্ব

৪১
 
জয়াবতী লাফিয়ে উঠে মার কাছে ছুটল। মা তখন তুলসীমঞ্চে প্রণাম করছিল। ‘মা, উমাশশীকে দেখেচ? ও মা? বিছানায় দেকচি না তো’
‘সে তো আমি যখন উটেছি, তখন থেকেই নেই, ভাবলাম পুণ্যিদের বাড়িতে শুয়েছে বুজি’
মা যখন উটেচে মানে! হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেল জয়াবতীর। মা তো ওটে যখন তখনো অন্দকার থাকে। সে তো অনেক ভোরে। এতক্ষণ ধরে উমাশশী ঘরে নেই! সে কি মনের দুঃখে নিরুদ্দেশ হল নাকি আবার ডাকাতরা এসে তাকে ধরে নিয়ে গেল? কে যেন বলেছিল ডাকাতরা যাকে একবার ধরে, আর ছাড়ে না। একেবারে কচ্ছপের কামড়। ওরা ওদের হাতের নাগাল থেকে কাউকে বেরোতে দেয় না, কেউ পালিয়ে গেলেও তাকে ঠিক ধরে আনে। তার ওপর সারাক্ষণ নজর রাখে। উমাশশীর ওপর কি তাহলে নজরদারি ছিল ওদের? সেই তর্পণের দিন থেকে, সোনাটিকরিতে থাকার দিনগুলো, তারপর এখানে আসার পথে অবদি? কিন্তু উমাশশীর চোখে মুখে তো কোন ভয় দেখেনি, যেমন দেখা যায় পেরজাপতির চোখেমুখে। পেরজাপতি যেন সারা দিনমান ভয়ে ভয়ে থাকে, এই বুঝি কেউ এসে ওকে ধরে নিয়ে গেল। এই বুঝি ওকে আবার ছুঁড়ে ফেলল চিতের আগুনে। 
আসলে এ ভয় একেবারে মিথ্যে নয়। সেনমশাই বলেছেন, আসলে সোয়ামী মারা যাবার পর সম্পত্তি  তার ইস্তিরির পাওনা হয়। সোয়ামীর বাড়ির লোকেরা মেনে নিতে পারে না, কোত্থেকে একটা বাইরের মেয়ে এসে এত সম্পত্তি দখল করবে। তাই তারা মিথযে মিথ্যে নিয়ম বানিয়ে ইস্তিরিকে পুড়িয়ে মেরে ভাবে যাক আপদ গেল। এখন যেহেতু পেরজাপ তিকে নিয়ে ওরা পালিয়ে এসেছে, ওরা চারদিকে মঝেমাঝেই হাঁচা করে বেড়ায়। প্রথম প্রথম ওরা খোঁজেনি, ভেবেছে বর্গী নিয়ে গেছে, কিন্তু পরে সে কথায় নিজেদেরই বিশ্বাস হয়নি।তাই এ কথাটা মাথায় এখন থেকে রাখতে হবে যে পেরজাপতির ওপর চোখ আছে ওদের, ওকে কোথাও একা ছাড়া যাবে না।কিন্তু উমাশশীকে কেউ যদি নজর রাখত, তবে কি ও বুঝতে পারত না? না, না ডাকাতরা কিছুতেই চারপাশে ঘুরছে না ওদের। কিন্তু তাহলে উমাশশী গেল কোথায়? মনের দুঃখে কিছু করে বসল না তো? কাল দুপুরে বাড়ি পৌঁছে স্নান করতে গেছিল সবাই খিড়কিপুকুরে।উমাশশী জলে নামেনি স্পষ্ট মনে পড়ল ওর। ঘাটে বসে ঘটিতে জল তুলে তুলে স্নান করছিল সে, তখন কিন্তু  মনে কোন কু ডাকেনি। ভেবেছিল এত বেলায় জলে নেমে নাইলে হয়তো ওর সহ্য হবে না। একেকজনের ঠান্ডার ধাত থাকে।তাই নিজেরা জল তোলপাড় করে উঠে এসেছিল। গাঁয়ের ছেলেমেয়েরা জন্মেই সাঁতার শিখে যায়। কুঁকড়োহাটি তো গাঁ-ই। এখন হঠাৎ তার মনে হল উমাশশী সাঁতার জানে কি আদৌ? মনে হওয়া মাত্রই তার বুক ধক করে উঠল আর অমনি সে তীরের বেগে  খিড়কির দিকে ছুটল।সেই সময়ই পুণ্যির বাড়ি থেকে ঘুমভাঙ্গা চোখে পুণ্যি আর পেরজাপতিও এ বাড়ির উঠোনের দিকে আসছিল। জয়াবতীকে অমন পড়িমরি করে ছুটতে দেখে তারাও পেছন পেছন ছুটল। এতক্ষণ  জয়াবতীর মা কিছু বুঝতেই পারছিলেন না এতক্ষণ, কী ঘটেছে। আচমকা মন্দ কিছুর সম্ভাবনা আঁচ করে তিনি পুজোর বাসন ফেলে ওদের পেছন পেছন ছুটলেন। এসে দেখলেন এক আশ্চর্য দৃশ্য। উমাশশী বসে আছে খিড়কিপুকুরের ঘাটে। আর ওকে জড়িয়ে ধরেছে ওরা তিনজন। তাঁর মেয়ে বলছে ‘আচ্ছা ভয় পাইয়ে দিয়েছিলি রে সাগরজল। এমন করে কাউকে না বলে কি আসতে হয়?’
উমাশশী একটু লজ্জা পেয়ে গেছে সবার চিন্তা দেখে। তবু সে রিনরিনে গলায় বলল ‘বাহ তুমিই তো বলো, এত আতুপুতু করে রেখেছে বলেই বাঙালি জাতটার এই অবস্থা। মাত্তর পুকুরঘাটে এসে বসেছি, তাতেই এত ভয়?’
জয়াবতীর মা হেসে বললেন ‘নে নে যা, তাড়াতাড়ি মুখ ধুয়ে আয় দিকি। জলপান খা আগে’
অমনি বাইরের দরজায় কে হেঁকে বলল ‘জমিদারমশাইয়ের মা নেমন্তন্ন করেছেন বদ্যিঠাকরুন আর তাঁর সইদের। আজ দুপুরে ওঁরা যেন পায়ের ধুলো দেন। কই গো, কাউকে দেখছি না কেন? নিঝুম পুরী নাকি?’
সেই শুনে জয়াবতীর মা আবার উঠোনের দিকে গেলেন দ্রুত পায়ে। ওরাও কী ব্যাপার দেখার জন্যে পেছন পেছন এল।এসে দেখল একটি  বৌমানুষ, মাজা মাজা গায়ের রঙ, দিব্যি মুখখানি, পানের রসে রাঙ্গা ঠোঁট আর মস্ত খোঁপা নিয়ে উঠোনে দাঁড়িয়ে হালুকচালুক তাকাচ্ছে।তার কাঁখালে আবার ধামা। ধামার ওপরে একটা বাহারি খুঞ্চিপোশ চাপা যদিও, তবু  খুঞ্চিপোশের সাধ্য কি, গাওয়া  ঘিয়ের গন্ধ চেপে রাখতে পারে?
জয়াবতীর মাকে আসতে দেখে বউমানুষটি যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল, ‘এই যে মাঠান, বাঁচালে, ছিস্টি কাজ ফেলে এয়েচি, একন কি দেঁইড়ে থাকলে আমাদের চলে? ঠাকমার কাণ্ড দেকো। সেই রাত থাকতে রাধী রান্নিকে ঘুম থেকে তুলে তাকে দিয়ে একরাশ লুচি ভাজিয়েচে, তারপর মিঠাই আর পান সুপুরি নিজের হাতে সাজিয়ে নেমন্তন্ন করতে পাটিয়েচে আমাকে। এইগুলো তোমরা জলপানে খেয়ে ফেলো। জুড়িয়ে গেলে কি আর ভাল লাগবে? আর বেলায় পালকি এলে বদ্যি ঠাকরুনরা যেন যায় অবিশ্যি অবিশ্যি। নইলে আর আমার ঘাড়ে মাথা থাকবে না’
এত সকালে আসা অতিথিকে কী দেবেন ভেবে একটু আতান্তরে পড়েছিলেন জয়াবতীর মা, হঠাৎ তাঁর ধাঁ করে মনে পড়ল সোনাটিকরি থেকে তো অনেক মিঠাই এসেছে কাল, তাই থেকে কিছু একে দিয়ে দিই না কেন? শুধু মুখে ঘরের দরজা থেকে কাউকেই ফেরত পাঠাতে নেই যে। যেমন ভাবা, অমনি ধামাটা জয়াবতীর হাতে দিয়ে মা ছুটে গিয়ে ঘরের শিকে থেকে মিঠাইয়ের ঝুড়ি পেড়ে কিছু মণ্ডা একটা ছোট টুকরিতে নিয়ে বউমানুষটির হাতে দিয়ে বলেন ‘ও মেয়ে ঘরে নিয়ে গিয়ে খেও সবাই। কী নাম তোমার? কে কে আছে বাড়িতে?’
মণ্ডার টুকরি পেয়ে মহা খুশি হয়ে ঢিপ করে জয়াবতীর মাকে পেন্নাম ঠোকে সে। বলে ‘আমার নাম শংকরী গো মাঠান, ঘরে আছে বুড়ি শাশুড়ি, সোয়ামি আর দুটো ছেলেমেয়ে। আহ্লাদ করেই খাব সবাই মিলে, বিশেষ করে আমার ছেলেমেয়ে দুটো। কত বাড়িতেই তো যাই, আমাদের দোর থেকে সবাই দূরদূর করে তাড়ায় গরিব, দাসীবৃত্তি করি বলে। আপনি মাঠান কত যত্ন করে খেতে দিলেন, হাতে ফেলে না দিয়ে টুকরিতে সাজিয়ে দিলেন, এ কথা আমি জন্মে ভুলব না’
 
বলতে বলতে চোখে যেন একটু জল এল তার, আঁচলে মুছে সে বেরিয়ে গেল তাড়াতাড়ি। তার এখন দাঁড়ালে চলবে না। মেলা কাজ পড়ে। যেতে যেতে সে বলে গেল, ধামার এক পাশে একটা কাঠের বাক্সে পত্তর আছে বদ্যিঠাকরুনকে ঠাকমার লেখা
পত্তর! জয়াবতী তাড়াতাড়ি দাওয়ায় ধামা নামিয়ে খুঞ্চিপোষ টি সরিয়ে দেখে, কী সুন্দর করে সাজানো থরে থরে। কলাপাতার ওপর রাশি রাশি লুচি, ছোট ছোট টুকরিতে কত রকম মণ্ডা মিঠাই, পান সুপুরি আর কত কী, কিন্তু সেসবে জয়াবতীর কোন আগ্রহ নেই। তার নামে এই প্রথম কোন পত্তর এল। তাও আবার জমিদারমশাইয়ের মার লেখা।
সে দেখল একটা ছোট্ট কাঠের বাক্স, তার ওপর কি সুন্দর চিত্র করা কাঠ কুঁদে। সেই বাক্সের ডালা খুলতেই দেখা গেল একটা পাকানো তুলোট কাগজ। তাতে মুক্তোর মত হাতের লেখায় পত্তর লেখা।
কিন্তু পত্তর কি আর একা পড়তে পারবে জয়াবতী? সে টের পেল পুণ্যি, পেরজাপতি, এমনকি উমাশশীও তার ঘাড়ের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়েছে কাগজে লেখা নিজেদের নাম  নিজেদের চোখে দেখবে বলে। পত্তরে তাদের নামও লেখা আছে যে! ( ক্রমশ)

তুহিন সরকার
ষষ্ঠ শ্রেণী, সুখচর কে সি বিদ্যায়তন, উত্তর ২৪ পরগণা


পুপুনের সঙ্গে কিছুক্ষণ
তপন রায় চৌধুরী

সাড়ে তিনবছর বয়স হলে কি হবে, পুপুন এর মধ্যে অনেক কাণ্ড করে ফেলেছে। আর, করে চলেছে বেশ কিছুদিন ধরেই। ওর বাবা-মা দুজনেই চাকরি করে। মা ব্যাঙ্কে কাজ করে। বাবা একটা আই টি ফার্মে। একটা গোটা দিনের মধ্যে পুপুনের বেশিরভাগ সময় কাটে ওর দাদা (মানে ঠাকুরদা) আর দাদির (মানে ঠাকুরমা) সঙ্গে। অবশ্য বেশিরভাগটা সামলায় পুপুনের দাদি। সকাল আটটায় মা বেরিয়ে যায়, দশটায় বাবা। রাত আটটায় মা ফেরে বাড়িতে, আর, রাত দশটায় বাবা। অর্থাৎ সকাল আটটা থেকে রাত আটটা, এই সুদীর্ঘ পরিসরে পুপুনের ভার পুরোটাই ওর দাদির ওপর। এর মধ্যে পুপুন ঘণ্টা তিনেকের জন্য স্কুলে যাচ্ছে প্রায় চার মাস ধরে। পুপুনের ভাষায় ‘বড়ো স্কুল’। জিজ্ঞ্যেস করলেই বলে, ‘জানো তো, আমাদের স্কুল না খুব বড়ো’। তার আগে পুপুন একবছর কাটিয়েছে ওর ‘ছোটো স্কুলে’। 
পুপুনের দাদা আমার বন্ধু। রাজর্ষি। সন্ধেবেলা মাঝেমধ্যে যাই ওর বাড়ি। তখন দেখা হয় পুপুনের সঙ্গে। ওর সঙ্গে আমার বেশ জমে। বেশ মনে আছে, পুপুনের তখন আড়াই বছর। আমি যাওয়া মাত্রই পুপুন আমাকে একটা ঘরে হাত ধরে নিয়ে যেত। তারপর বলত,
“ফুয়ে ফুয়ে গানটা করো।”
মানে , ‘ফুলে ফুলে ...’। আমি গানটা করতাম, আর, ও নাচতো খাটের ওপর। গান থামলেই অভিযোগ,
“থামলে কেন? আবার ...।“

খাওয়াদাওয়াতেই পুপুনের যত আপত্তি। কিচ্ছু খাবে না। একটু ভুল হল। মানে, ওর জন্য যেসব খাবার ঠিক করা আছে, সেসব খাবে না। দুধ খাবে না, ভাত খাবে না। ভাতের গ্রাস মুখে তুলে দেয় ওর দাদি, সেটা টোপলা হয়ে মুখে আছে তো আছেই। চলল বকাঝকা। কখনও বা কান্নাকাটি। এক-দেড় ঘণ্টা তো হেসে খেলে চলে যেত। তবে ডিম দাও, খাবে, মাছ (ওর ভাষায় জিজিমাছ, এটার কী অর্থ জানা নেই) ভালোবাসে, মাংস চলবে। এগরোলের কিছু অংশ শুধু চলবে না, দৌড়বে। বিড়িয়ানি? চকচক করে খাবে। মানে, যেসব জিনিস ওর পক্ষে নিষিদ্ধ, সেসবেই ওর তীব্র আকর্ষণ। পুপুন ‘পোগো’ দেখতে ভালোবাসে। অনেক সময় সেসব দেখিয়ে মুখে খাবার গুঁজে দেওয়া হয়। ছুটিছাটার দিনে ওর মা ওকে খাইয়ে দেয়, ওর হাতে একটা মোবাইল দিয়ে। সেটা নিয়ে পুপুন তখন নানারকম গেমস খেলতে মত্ত থাকে।, আর, সেই অবসরে ওর মা তখন খাওয়ানোর কাজটা নিঃশব্দে হাসিল করে। মায়ের কাছে ও মোটামুটি জব্দ, কিন্তু ওর দাদির কাছেই ওর যত আবদার, যত দুষ্টুমি।

এত সবের মধ্যেও পুপুনের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভারী মধুর। তার একটা কারণ বোধহয়, আমার সঙ্গে ওর খাদ্যসংক্রান্ত কোনো সম্পর্ক নেই। আমাকে ও ‘বুই’ বলে ডাকে, কারণ, আমি ওকে ওই নামেই ডাকি। আদরের ডাক। বেশ মনে আছে, ও তখন আরও ছোটো, কথা বলতে শিখেছে, আমাকে হয়তো কিছু একটা করতে বলছে, আর আমি সেটা করতে পারছি না, বারবার ব্যর্থ হচ্ছি কাজটা করতে, আর, ও ক্রমাগত বলেই চলেছে আমাকে – বুই পারো, বুই পারো। মানে, বুই করে দাও কাজটা, এই আর কি! তো পুপুনের প্রসঙ্গে এতটা বলার একমাত্র কারণই হচ্ছে, ওকে চিনিয়ে দেওয়া। এবার আসল গল্পে আসি। 

গতকাল পুপুন সন্ধেবেলা হঠাৎই আমাকে বলল,
“আচ্ছা বুই, তোমার বাড়িটা ঠিক কোথায়?”
এরকম প্রশ্ন কেন করল, সেটাতেই মজা লাগল আমার। ওকে বাড়ির পথ সঠিক বললেও কোনো মানে হবে না। তবু কেন করল? নিশ্চয়ই কিছু একটা ভেবে প্রশ্ন করেছে। আমি উত্তর দিলাম সেরকমই,
“ওই তো, তোমাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে তারপর ডানদিকে, তারপর ডানদিকে, তারপর সোজা, তারপর একটা গলি পড়বে, তারপর ডানদিকে। ব্যস, চলে আসবে আমার বাড়ি।“

আমি জানি, ও একটা স্বপ্নের জগত থেকে কথাটা বলেছে। আমি সেই জগতের ভাষাতেই কথা বললাম। পুপুন শুনল, তারপর যেন সব বুঝতে পেরেছে এরকম ভাব দেখিয়ে বলল,
“একদিন তোমার বাড়িতে যাবো আমি। তোমার সঙ্গে গল্প করবো, তারপর কম্পিউটার করব, তারপর খাব। তুমি আমায় খাইয়ে দেবে তো।“
বললাম, হ্যাঁ।
“ঘুম পাড়িয়ে দেবে তো?”
বললাম, হ্যাঁ।
“চান করিয়ে দেবে তো?”
বললাম, হ্যাঁ।
পুপুন মজা করে বলে উঠল,
“খুব মজা হবে, না?”
আমি বললাম, “হ্যাঁ, হবেই তো। খুব মজা হবে। তাহলে কালই চলে এসো আমাদের বাড়িতে।“
পুপুন শুনল আমার কথা, কী যেন একটু ভাবল। তারপর চুপ করে রইল।
আমি বলে উঠলাম,
“কী হল, চুপ করে গেলে যে?”
পুপুন বলল,
“কে আমাকে তোমার বাড়িতে নিয়ে যাবে?”
আমি বললাম, “তোমার বাবা নিয়ে যাবে, বাবাকে বলবে।“
পুপুন কিছু বলল না। চুপ করে রইল। হয়তো ভাবল, তাহলে বাবাকে বললেই কাজ হবে। ভাবলাম, ও তো ছেলেমানুষ, সবে সাড়ে-তিনে পা দিয়েছে। একটা স্বপ্নের জগতে কিংবা ওর একেবারে নিজস্ব জগতে বাস করে। যে কথাটা এখন বলল, তার কোনো বাস্তব রূপায়ণ হয় নাকি!  
পরদিন সকাল ন’টা তখন। হঠাৎ ডোরবেলের আওয়াজে সচকিত হয়ে উঠলাম। দরজা খুলে দেখি, মূর্তিমান পুপুন দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। মাথায় একটা লাল রঙের টুপি। ওর বাবাকে সঙ্গে নিয়ে হাজির। রাজর্ষির ছেলে। দিনটা শণিবার ছিল। সঞ্জিতের ছুটি।
উচ্ছ্বাসে বলে উঠলাম,
“কীরে বুই? তুই এসে গেছিস?”
পুপুনকে আমি কখনও তুই বা তুমি বলে সম্বোধন করি। ওটা ঠিক থাকে না। যখন যেমন মনে আসে বলি। 
পুপুন হৈ হৈ করে বলে উঠল,
“এইটা তোমার বাড়ি?”
বললাম, হ্যাঁ তো।
সঞ্জিত পাশ থেকে বলল,
“আর বোলো না জেঠু। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই বলতে শুরু করেছে, আমি বুই’র বাড়িতে যাবো, আমাকে বুই’র বাড়িতে নিয়ে চল। হঠাৎ কী যে হল ওর!”

সঞ্জিতের ঘোর বিস্ময়! আমি তখন অংক মেলাচ্ছি। তাহলে পুপুন ঠিক মনে রেখেছে! গতকাল কথা হল, আর, আজই চলে এসেছে! সঞ্জিত বেচারা তো অবাক হবেই। ও তো জানে না, আমার আর পুপুনের মধ্যে গতকাল একটা চুক্তি হয়েছিল, ও একদিন আসবে আমাদের বাড়িতে। আমি মুখে একবার আজই আসার কথা বলেছিলাম। সেটা যে এভাবে আজই সত্যি হয়ে যাবে ভাবিনি। 
আমি বললাম সঞ্জিতকে,
“তাই বুঝি। যাক গিয়ে, তুই রেখে যা ওকে। আমি পরে গিয়ে দিয়ে আসবো।“

কথাটা বলামাত্র সঞ্জিত সম্মতি জানিয়ে চলে যাচ্ছিল। হঠাৎ মনে হল, পুপুনকে খাইয়ে এনেছে তো, আমি তো রেখে যেতে বললাম! 
পুপুনকে বললাম,
“কীরে, খেয়ে এসেছিস তো?”
সঞ্জিত তখন সিঁড়ির কয়েক ধাপ নেমে গেছে। পুপুনকে বলা কথাটা শুনতে পেয়ে ওই সিঁড়ির ধাপে দাঁড়িয়েই বলে উঠল,
“না, ও খেয়ে আসেনি।“
সঞ্জিত একটু সহজ সরল মানুষ। অতশত বুঝে উঠতে পারে না। বোধহয় মেয়ের সঙ্গে পেরেও ওঠে না সবসময়।  
আমি সঙ্গে সঙ্গে বললাম,
“সেকি! তাহলে ওকে রেখে যাচ্ছিস কেন? খিদে পেয়ে যাবে তো ওর।“
আমার কথার উত্তরে সঞ্জিত সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে বলল,
“তাহলে আমি একটু বসে নিই, তারপর ওকে নিয়ে যাবো।“
আমি প্রায় বলতে যাচ্ছিলাম, ঠিক আছে, কিন্তু অবাক করে দিয়ে পুপুন বলে উঠল,
“না, না, আমি যাবো না। আমার খিদে পাবে না। আমি এখন বুই’র কাছে থাকবো। তুমি যাও।“
সে বাবাকে একরকম ঠেলে নীচে নামিয়ে দেয় আর কি! মেয়ের তাড়নায় সঞ্জিতের তখন অসহায় অবস্থা। 
সে বলে উঠল, “আচ্ছা, আচ্ছা, ঠিক আছে। তুমি থাকবে।“
কিন্তু পুপুন তো নিশ্চিন্ত নয়, যতক্ষণ ওর বাবা আছে এখানে। শেষমেষ বাবাকে তাড়িয়ে ছাড়লো। সঞ্জিত বলতে বাধ্য হল,
“ঠিক আছে। ও থাক জেঠু, আমি যাচ্ছি।“
আমি আশ্বাস দিয়ে সঞ্জিতকে বললাম,
“আমি পরে নিয়ে যাবো ওকে। তুই যা।“
দরজা বন্ধ করে আমি ডাইনিং টেবিলের সামনে রাখা একটা চেয়ারে বসলাম। পুপুন আমার কোলে বেশ আরাম করে বসে বলল,
“এবার আমাকে একটা বিস্কুট দাও।“
আমি তো অবাক! যে-পুপুন খেতে চায় না, যে এখনই বলল আমার খিদে পাবে না, সে কোলে বসেই বিস্কুট চাইছে! তার মানে, খিদে পেয়েছে এবং বিস্কুট খেয়ে খিদে মেটাবে। এ তো একেবারে পূর্বপরিকল্পিত! 

একটা বিস্কুট দিলাম পুপুনকে। নিমেষে খেয়ে নিল বিস্কুটটা, যা ওর স্বভাববিরুদ্ধ। না-খেতে বললে পুপুনের মতন খুশি আর কেউ হয় না। আমি আরেকটা বিস্কুট খাওয়ার কথা বললাম। পুপুন খেতে চাইল না আর। বোধহয় প্রাথমিকভাবে খিদের জ্বালা মিটেছে। তার পরেই পুপুন খুশিতে আমার গলা জড়িয়ে ধরে একটা চুমু দিল। বুঝলাম, বেশ মুডে আছে। এবার বলল,
“তোমার মাম্মা কোথায়?”
পুপুন জানে, আমার মায়ের কথা। মাঝে মাঝে ওকে কোলে বসিয়ে মজা করে বলি, জানো তো, তোমার যেমন একটা মাম্মা আছে, আমারও তেমন একটা মাম্মা আছে। সেটা ঠিক মনে রেখেছে ও। আশপাশে দেখতে না পেয়ে খোঁজ করছে।
আমি বললাম,
“মাম্মা ঘুমোচ্ছে।“
পুপুন উৎসুক হয়ে বলল, “কোথায়?”
আমি বললাম, ঘরে। 
কথাটা বলেই ঘরের দিকে আঙুল দেখালাম। পুপুন চটজলদি কোল থেকে নেমে মায়ের ঘরে ঢুকে গেল। আমি ওর পেছন পেছন গেলাম। মা তখন ব্রেকফাস্ট সেরে ঘুম দিচ্ছেন। মা এরকম তিন-চার বার ঘুমোন দিনে।
 
গিয়ে দেখি, পুপুন মায়ের খাটের একপাশে দাঁড়িয়ে। মাকে দেখছে চুপটি করে। মা তখন ঘুমোচ্ছেন অঘোরে। আমি পুপুনকে চলে আসার জন্য ইশারা করলাম। পুপুন নিঃশব্দে বেরিয়ে এল আমার হাত ধরে। এসে বলল,
“তোমার মাম্মা এখন কেন ঘুমোচ্ছে?”
পুপুন জানে, ঘুমোবার সময় দুপুর আর রাতে।
উত্তরে বললাম,
“মাম্মা তো অনেক বড়ো আমাদের থেকে, তাই।“
পুপুন কী বুঝল, কে জানে! তবে চুপ করে থেকে কিছুক্ষণ কীসব ভাবল। তারপর একছুটে আমার ঘরে ঢুকে খাটের ওপরে উঠে খোলা জানালার কাছে দাঁড়িয়ে বলে উঠল,
“এটা সরিয়ে দাও। আমি দেখতে পাচ্ছি না।“
মশার উপদ্রবের কারণে জানালাগুলোতে মশা-জাল লাগানো থাকে। ওগুলো লাগানো থাকলে বাইরেটা স্পষ্ট দেখা যায় না। পুপুনের আপত্তি সেই কারণে। আমি জালের একপাশটা টেনে খুলে দিলাম। পুপুন এবার মুখটা জানালার গ্রিলের ফাঁকে চেপে ধরল, তারপর বাইরেটা দেখতে লাগল প্রাণভরে। সামনে রয়েছে একটা পুকুর, একটা আবাসন, তার ভেতরে একপাশ দিয়ে চলে গিয়েছে আবাসনের ভেতরে ঢোকার রাস্তা। অন্য পাশে কিছু ফুলগাছ লাগানো, আর একটা দোলনা। বেশ সাজানো গোছানো ভেতরটা। দোলনাটা দেখে পুপুনের মনে হল, এটা বুঝি একটা পার্ক, যে-পার্কে ও বিকেলবেলায় রোজ যায় ওর দাদির সঙ্গে।
পুপুন বলে উঠল,
“আচ্ছা, ওই পাশটায় স্লিপ নেই কেন? আর ঢেকি? সেটাও তো দেখছি না।“
আমি বললাম, “ওটা ঠিক পার্ক নয়। ওসব তো পার্কে থাকে।“
পুপুন বলে উঠল, “তাহলে ওটা কি? ওই দোলনায় কে চড়ে?”
বললাম, “ওই বাড়িতে ছোটো একটা ভাই আছে, বনু আছে, ওরা চড়ে।“
“ওদেরকে কে চড়ায়?”
“ওদের মাম্মা।“
“কেন, ওদের দাদি নেই?”
আমি বললাম, “বোধহয় নেই। তাই মাম্মা চড়ায়।“
সেই মুহূর্তে আবাসন থেকে একটা গাড়ি বেরোচ্ছিল। পুপুন প্রায় চমকে বলে উঠল,
“ওই দ্যাখো, একটা গাড়ি বেরোচ্ছে।“
বললাম, “দেখলে তো, ওটা পার্ক নয়। পার্কের ভেতর থেকে কি গাড়ি বেরোয়?”
আল্হাদে আর খুশিতে খলখল করে হেসে উঠল পুপুন। তারপর আমার গলা জড়িয়ে গালে একটা চুমু খেল। আমি বললাম,
“এক গালে চুমু খেতে নেই।“
পুপুন দেরি না করে চকাস করে আমার অন্য গালে আরেকটা চুমু দিল। 
তারপর হঠাৎই অবাক করে দিয়ে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে পুপুন বলে উঠল,
“আচ্ছা, বুই, তোমার আইবলটা ইয়োলো কেন গো?”
পুপুন একদৃষ্টে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে তখন।  বললাম,
“তাই বুঝি। ইয়োলো কেন হবে, ব্ল্যাক তো।“
আমি জানি, আমার আইবল সামান্য ইয়োলিশ। কী অসাধারণ পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা ওইটুকু বাচ্চার! 
পুপুনের প্রতিবাদ জোরালো,
“না, না, তোমার ইয়োলো।“
আমি বললাম, “তাহলে তোরটাও ইয়োলো।“
পুপুন বলল, “না, না, আমারটা ব্ল্যাক।“
“কী করে জানলি?”
“ম্যাম বলেছে।“
“তাই বুঝি। তোদের ম্যাম কি সকলের চোখ দেখেছে?”
“হ্যাঁ গো। আমাদের পড়ানো হচ্ছিল, আর, তারপর ম্যাম আমাদের সকলের আইবল দেখল।“
“তা তোদের সকলেরই ব্ল্যাক নাকি?”
পুপুন থেমে গেল একটু। তারপর বোধহয় ভাবতে শুরু করল, কার ব্ল্যাক, কার ইয়োলো, এইসব। বোধহয় তেমন মনে করতে পারল না। তাই বলল,
“বেশিরভাগেরই ব্ল্যাক। আমার ব্ল্যাক, অদ্রিজার ব্ল্যাক, দেবস্মার ইয়োলো।“
“দেবস্মা কে?”
“আমার ফ্রেন্ড।“
“তো আর কার ইয়োলো?”
“মনে নেই।“
এমন সময় আমার মোবাইল বেজে উঠল। দেখলাম, রাজর্ষি ফোন করেছে। 
“ও কী করছে?”
বললাম, “ও অনেক কিছু করছে। এখন কী করবে জানি না।“
রাজর্ষি হেসে বলল,
“খুব জ্বালাচ্ছে বুঝি তোকে?”
বললাম, “জ্বালাবে কেন? ও ওর কাজ করে যাচ্ছে। আমি এনজয় করছি।“
পুপুন হঠাৎ বলে উঠল,
“কে ফোন করেছে বুবুই?”
বললাম, “তোর দাদা।“
পুপুন বেশ বিজ্ঞের মতন বলল,
“দাও তো।“
বলে আমার হাত থেকে মোবাইলটা নিয়ে বলে উঠল,
“হ্যালো, কে দাদা?”
ওপ্রান্ত থেকে কিছু একটা বলল রাজর্ষি। পুপুন বলল,
“না, না। আমি যাবো না। আমি এখন বুই’র কাছে থাকব। তুমি কাটো ফোনটা।“
আমি বললাম, “আরে, দে দে আমাকে ফোনটা।“
পুপুন বাধা দিল না। ফোনটা ফেরত দিল আমায়। শুধু বলল,
“আমি এখন যাবো না বুই। তোমার কাছে থাকব।“
আমি বললাম, “ঠিক আছে। আগে তোর দাদার সঙ্গে কথা বলে নিই।“
আমি রাজর্ষির সঙ্গে কথা বলতে শুরু করলাম। ও বলল,
“শোন্। সঞ্জিত ডাক্তারের কাছে গেছে। ফেরার পথে ও পুপুনকে নিয়ে আসবে ওখান থেকে।“
আমি ‘আচ্ছা’ বলে ফোন রেখে দিলাম।
পুপুন একটা কিছু আন্দাজ করেছিল। ফোন রাখার সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠল,
“আমি কিন্তু যাবো না বুবুই। আমি দুপুরে তোমার কাছে খাবো। তুমি আমার খাইয়ে দেবে তো?”
“হ্যাঁ দেবো।“
“তারপর তোমার কাছে ঘুমোবো। তুমি আমার ঘুম পাড়িয়ে দেবে তো?”
“হ্যাঁ দেবো।“
“তারপর আমরা অনেক গল্প করব। আমি যাব না কিন্তু।“
কথা বলতে বলতে পুপুন গলা জড়িয়ে ধরল আমার। তারপর শক্ত করে আমাকে জড়িয়ে ধরে ‘আমি যাব না কিন্তু’ ‘আমি যাব না কিন্তু’ বলতে থাকল ক্রমাগত। পুপুনকে বললাম,
“ঠিক আছে, ঠিক আছে, তুই যাবি না। এখন কী করবি বল?”
পুপুন বলল,
“এখন তোমার চুল আঁচড়ে দেব। ক্লিপ লাগিয়ে দেব। তোমার ফিতে আছে?”
আমি বললাম,
“ফিতে? ফিতে কী করে থাকবে? আমার ছোটো চুলে কী করে ক্লিপ আটকে দিবি?”
পুপুন সত্যিই একটু সমস্যায় পড়ে গেল। তারপর বলল,
“চল, ওই চেয়ারে বসি এখন।“
ডাইনিং টেবিলের চেয়ারের দিকে আঙুল দেখালো পুপুন। বললাম, “তাই চল্।“
পুপুন ছুটে গিয়ে চেয়ারে বসল। তারপর বলল, 
“বিস্কুট দাও।“
বুঝলাম, খিদে পেয়েছে। আমি বিস্কুটের কৌটোটা বাড়িয়ে দিলাম পুপুনের দিকে। পুপুন বিস্কুটের কৌটোটা খুলে চারটে বিস্কুট নিয়ে একটা প্লেটে রাখল। ভাবলাম, নিশ্চয়ই খাবে এবার। 
আমি বললাম, “কীরে, খাবি তো?”
পুপুন বলল, “একটা চামচ দাও।“
চামচ! বেশ একটু অবাক হলাম। চামচ দিয়ে কী করে বিস্কুট খাবে, কে জানে! যাই হোক, দিলাম চামচ। পুপুন এবার চামচ দিয়ে বিস্কুটগুলোকে ভাঙতে লাগল। একটু একটু করে বিস্কুটগুলোকে টুকরো টুকরো করে প্লেটে ছড়িয়ে রাখল। আমি একটা টুকরো পুপুনের মুখের কাছে ধরলাম। ও বাবা! খেলো তো না-ই, মুখটা ঘুরিয়ে নিল। অর্থাৎ বিস্কুট ভাঙার খেলায় পুপুন মেতে উঠেছে তখন। আমি দেখতে থাকলাম ওকে। 
 
হঠাৎ ডোরবেল বেজে উঠল। পুপুন বলে উঠল, 
“ওই যে, বাবা এসেছে।“
ভাবলাম, সঞ্জিত হতে পারে হয়তো। আমি চেয়ার ছেড়ে উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেখলাম, সত্যিই তো! সঞ্জিত হাসিমুখে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে। 
আমি বললাম সঞ্জিতকে,
“ভেতরে আয়।“
পুপুন ওর বাবাকে দেখে একগাল হাসি। তারপর চামচটা প্লেটে রেখে চেয়ার থেকে নেমে একছুটে দৌড়ে গিয়ে ‘বাবা’ ‘বাবা’ বলে জড়িয়ে ধরল সঞ্জিতকে।
সঞ্জিত বলে উঠল,
“খুব জ্বালিয়েছে তো, জেঠু?“
বললাম, “না, না, একদম না। খুব মিষ্টি মেয়ে হয়েছে তোর।“
সঞ্জিত একটু হাসল। তারপর পুপুনকে বলল, “চল, এবার বাড়ি যাই। খাবি তো?”
পুপুন বলল, “হ্যাঁ চল।“
আমি বলে উঠলাম,
“কীরে, তুই বললি, আমার কাছে দুপুরে থাকবি, খাবি, ঘুমোবি।“
পুপুন তাকালো না আমার দিকে। ওর বাবার হাত ধরে চুপটি করে দাঁড়িয়ে রইল মাথা নিচু করে। মুখে কিছু বলল না। সঞ্জিত বলে উঠল,
“বুই কী বলছে, শোনো। তুমি থাকবে এখানে?”
পুপুন বলল, “আমি বাড়ি যাবো এখন, নিয়ে চল।“

একটু অবাক হলাম। একটু কষ্টও হল! যে-মেয়েটা এতক্ষণ ধরে সবকিছু ভুলে ছিল এখানে, যে বলছিল সারা দুপুর আমার সঙ্গে থাকবে, খাবে, ঘুমোবে, সে কী করে এত তাড়াতাড়ি সবকিছু ভুলে গেল! 
আমি তখন পুপুনের কাছে গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বললাম,
“তুমি তো থাকবে আমার কাছে। থাকবে না?”

আর কোনো সাড়াশব্দ নেই পুপুনের। সে চুপটি করে সঞ্জিতের হাত ধরে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল। যেন চেনে না আমাকে! তারপর আস্তে করে বলে উঠল সঞ্জিতকে,
“চল না, বাড়ি যাই।“
সঞ্জিত একটু হেসে মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
“হ্যাঁ, চল। টা টা করে দাও বুইকে।“

‘জেঠু যাচ্ছি’ বলে দরজার দিকে এগোতে থাকল সঞ্জিত। পুপুন তখন তার বাহাত দিয়ে বাবার একটা হাত ধরে আছে শক্ত করে। মাথা নিচুতে। টা টা করার ভঙ্গিতে হাত নাড়লো আমাকে উদ্দেশ্য করে। কিন্তু তাকালো না পেছন ফিরে। যেন কোনোদিন দেখেনি আমাকে, আজ দেখল, এই প্রথম। তারপর চলে গেল গুটি গুটি পায়ে। পুপুনের সেই চলে যাওয়ার দিকে আমি তাকিয়ে রইলাম একভাবে। আমার ভেতরটা কেমন যেন মুচড়ে উঠল। আমি আর তাকাতে পারলাম না ওদিকে। দরজা বন্ধ করে দিলাম নিঃশব্দে।

শুভশ্রী সরকার
সপ্তম শ্রেণীসুখচর শতদল শতাব্দী বালিকা বিদ্যায়তন, উত্তর ২৪ পরগণা

হেমন্তের গান
শ্রীছন্দা বোস

শরৎ কালের পরে আসে
ষড় ঋতুর চতুর্থ মাস,
কার্তিক অগ্রহায়ণে
শীতের হয় পূর্বাভাষ।

শরৎ শেষে প্রকৃতি
শূন্যতাতে ওঠে ভরে
শিশির ভেজা তৃণদলে
ব্যর্থতা কান্না তোলে।

লক্ষ্মী দেবীর শুভাশীষে
হেমন্ত তাই আসে নিয়ে,
কনক আভায় ভরে মাঠে
রাশি রাশির  পাকা ধানে।

রৌদ্রে পুড়ে জলে ভিজে,
উপেক্ষা করে   সে সকল
কৃষকের পরিশ্রমে
মাঠে আজি সোনার
                     ফসল।

হিম- সমীরণ শিহরণে,
শীতের আজি বার্তা আসে
ধান কাটার সময় বলে
আলের ধারে চাষী হাসে,
নবান্নের উৎসবেতে
আনন্দেতে উঠবে মেতে।।


হিস্ট্রিতে মিস্ট্রি 
 শৌর্য পাল 
ষষ্ঠ শ্রেণি,নর্থ পয়েন্ট ইংলিশ একাডেমি


একদিন রাত্তিরে
মেসোপটেমিয়া গিয়ে
              দেখি

লোক থাকে জঙ্গলে  
ঘরে যত পশু পাখি  
             এ কি

বিছানায় শুয়ে থাকে
ঘোড়া বাঘ পাখি আর
               হাতি

ডাইনিং টেবিলেই 
খেতে বসে শেয়ালের
               নাতি

বড় বড় থালা সব
চিকেন ও মাটন দিয়ে 
               ঢাকা

জামবাটি ভরা দৈ
নিমেষেই বিলকুল 
              ফাঁকা

জিরাফের ছেলেমেয়ে
বাড়িতেই কত বই
               পড়ে

পাখিদের স্কুলে গিয়ে
ম্যাকাওটা উঠ বস 
              করে

স্কুল যেই মনে পড়ে
 আচমকা চোখ যায় 
              খুলে

হিস্ট্রি পড়তে গিয়ে
কখন পড়েছি ঘুমে
              ঢুলে

বামপাশে ইতিহাস
ডানপাশে আজগুবি
              ছড়া

স্বপ্নটা বই খোলে   
হিস্ট্রিতো মিস্ট্রিতে
             ভরা !




|| আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস ||
    রাইলী সেনগুপ্ত 

 "যেখানে জ্বলিছে সূর্য, উঠিছে সহস্র তারা,/ প্রজ্বলিত ধূমকেতু বেড়াইছে ছুটিয়া.."
- এই কথা গুলোর সাথেই একটা ছবি ভেসে ওঠে। সমস্ত কুয়াশার আড়াল আবডাল সরিয়ে সূর্যালোকে স্নাত হয়েছে কাঞ্চনজঙ্ঘা! মায়াবী আলোকধারায় অভিসিঞ্চিত হয়েছে হৃদয়। সাধারণত বেশিরভাগ বাঙালির পাহাড় পর্বতের সাথে ছোটখাটো পরিচয় হয় 'দীপুদা'র দার্জিলিং এর হাত ধরে। আজ International Mountain Day তে যোগ দেওয়া যাক পাহাড় পর্বতের বৈঠকী আড্ডায়.. 
    সালটা ২০০৩,  'International Mountain Day'  হিসাবে স্বীকৃত হয় ১১ ই ডিসেম্বর দিনটি। সাধারণত পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের নিরাপত্তা, পাহাড়ের নৈসর্গিক মুগ্ধতা, প্রাকৃতিক পরিবেশ কে কেন্দ্র করে পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন এবং সর্বোপরি ভ্রমণ পিপাসু মন কে আরেকটু উস্কে দিতে এই দিনটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিটি বছর নতুন থিমকে কেন্দ্র করে পালিত হয় এই দিনটি, যেমন- ২০০৩ সালে থিম হয়েছিল 'Mountains: Source of Freshwater',২০০৬ সালে ' Managing Mountain Biodiversity for Better Lives', ২০০৯ সালে 'disaster risk management in mountain areas', ২০১০ সালে 'Mountain Minorities and Indigenous People',  ২০১১ সালে 'Conserve, Construct and Celebrate', ২০১২ সালে 'Sustainable Mountain Development',২০১৩ সালে 'Mountains – Key to a Sustainable Future', ২০১৪ সালে 'Mountain Farming', ২০১৫ সালে 'Promoting Mountain Products', ২০১৬ সালে 'Mountain Cultures: celebrating diversity and strengthening identity', ২০১৭ সালে 'Mountains under Pressure: climate, hunger, migration', ২০১৮ সালে '#MountainsMatter', ২০১৯ সালে 'Mountains matter for Youth',২০২০ সালে 'protecting mountain biodiversity', ২০২১ সালে 'sustainable mountain tourism' এবং এইবছর অর্থাৎ ২০২২ সালে 'Women move mountains'  থিমের আয়োজন করা হয়েছে।

      ২০০২ সালকে রাষ্ট্রসংঘ প্রথম 'আন্তর্জাতিক পর্বত বছর' হিসাবে ঘোষণা করে এবং তারপরে প্রতি বছর ১১ ডিসেম্বর এটি পালিত হয়।২০১১ সালে তিনটি কালো রঙের সমবাহু ত্রিভুজ সহযোগেএই দিনটির প্রতীক তৈরি করা হয়েছে। বাঁদিকের ত্রিভুজে নীল ডায়মন্ড(তুষার), মাঝখানের ত্রিভুজ কমলা বৃত্ত (খনিজ সম্পদ) এবং পরবর্তী ত্রিভুজের নীচে একটি সবুজ ত্রিভুজ (উৎপাদিত শস্য) রয়েছে। জীব বৈচিত্র্যের ৫০ শতাংশ হটস্পট এলাকা পর্বতের অন্তর্ভুক্ত। বিশ্ব উষ্ণায়ন এবং দূষণের কারণে এখানকার পরিবেশ আজ বিপন্ন। তাই এর সুরক্ষার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ইত্যাদির বিভিন্ন কলেজ যেমন মাউন্ট হোলিইয়োক(১৮৩৮), স্মিথ(১৮৭৭),এলমিরা ইত্যাদি  নিজেদের উদ্যোগে পর্বত দিবস পালন করা শুরু করেছিল।পর্বতের সাথে মানুষের পরিচিতি ও তা থেকে জীবিকা নির্বাহকারী সুবিধার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাতে ২০১৪ তে জাপানে পর্বত দিবস কে সাধারণ ছুটির দিবস হিসাবে পালন করা হয়। আসলে এই দিনটির মাধ্যমে পর্বতের সুরক্ষা, পরিচর্যা, দূষণরোধী ব্যবস্থা ইত্যাদির উপর নজর দেওয়া হয়।
   সর্বোপরি,পাহাড়ের সাথে মনের এক নিবিড় যোগাযোগ আছে। পাহাড়ের কোন এক জিয়নকাঠির যাদুস্পর্শে জমাট বাঁধা সব অনুভূতি গুলো এক লহমায় বুদবুদ হয়ে যায় ঐ অসীম নির্জনতায়। সবুজ পাহাড়ের গাম্ভীর্যে সাদা মেঘ অথবা রবির নতুন আলোর আলতো পরশ  তাকে করে তোলে অপরূপা। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের বারিধারায় স্নাত হয় মন, ঝরনার স্নিগ্ধতায় আবার আসে প্রাণের হিল্লোল। তাই কবির মনেও প্রকাশ পেয়েছিল এক প্রবল ইচ্ছা -
      "অনেকদিন থেকেই আমার একটা পাহাড় কেনার শখ।/কিন্তু পাহাড় কে বিক্রি করে তা জানি না।.."


অনুভব বোস
অষ্টম শ্রেণী, প্রফুল্ল নগর বিদ্যামন্দির, উত্তর ২৪ পরগণা


পাঠ প্রতিক্রিয়া
( ছোটোবেলা ১১২ পড়ে মলয় সরকার যা লিখলেন)


জ্বলদর্চির ছোটোবেলা পত্রিকার সঙ্গে আমার পরিচয় বেশি দিনের নয়। মৌসুমীর সঙ্গে পরিচয় তার থেকেও কম দিনের। তবু পত্রিকাকে প্রথম থেকেই ভীষণ ভালো লেগে গেছে,  এবং তার কারণ অবশ্যই মৌসুমী। 

পত্রিকার পাতায় চোখ পড়লেই বয়স ভুলে চলে যাই ছোটবেলায়।এই কথা আগেও অনেকবার বলেছি।

আজ অনেকদিন পর বলতে এসেছি এবারের পত্রিকা কেমন লাগলো।
পত্রিকার প্রথমেই তৃষ্ণা বসাকের জয়াবতীর জয়যাত্রার গল্প। ধারাবাহিকতা বজায় রেখে উনি দক্ষতার সঙ্গে এঁকে চলেছেন সেই যুগের ছবি, যে যুগের কথা এখনকার ছেলেমেয়েরা আদৌ দেখেনি, হয়তো শুনেছে  বা কোথাও পড়েছে।সেই সঙ্গে চলছে এক শিশু বীরাঙ্গনার কথা।এই গল্পের অনেক বাস্তব কথাই এখনকার ছেলেমেয়েরা ধারণাই করতে পারবে না। তাদের চোখে আঁকা হচ্ছে এক রূপকথার জগত।
হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এঁকেছেন হেমন্তের এক সোনা রাঙানো ছবি।নবান্নের কথা শুনলেই দুটি 'নবান্নে'র কথা মনে ভীষণ দোলা দিয়ে যায়।একটি হল, ছেলেবেলার মা-ঠাকুমাদের আয়োজনে সেই সুগন্ধে ঘরমাতানো নতুন ধানের চালের দুধ বাতাসা ফল সহযোগে নবান্ন উৎসব।তখন সত্যিই নবান্ন ছিল গ্রামে ঘরে এক প্রাণের আনন্দের উৎসব।জানি না এখন, সারাবছরই যখন নানা রকম ধানের চাষ হয়, সেই সুগন্ধি চালও অমিল, নতুন প্রজন্মের মায়েরাও অনেকেই নবান্নের নিয়মকানুন বিস্মৃত, তখন, এই প্রজন্মের শিশুদের কাছে, নবান্নের ছবি কেমন ধারণা তৈরী করে।
আর একটি হল, প্রখ্যাত নাট্য জগতের প্রবাদপ্রতিম শম্ভু মিত্রের নাটক 'নবান্ন'।ভারতীয় গণনাট্য সংস্থার প্রযোজনায় ১৯৪৩ সালের বাংলার দুর্ভিক্ষের যে ছবি তিনি এঁকেছিলেন, তা তো 'মিথ'।যাক, সেসব আলোচনার জায়গা এটা নয়।
তবে কবিতাটা ছেলেবেলার স্মৃতিকে উসকে দেয় এটা বলাই বাহুল্য।
রোবটের বজ্জাতি খুবই মজাদার গল্প।তবে আমি ঠিক বুঝতে পারি নি, হয়ত আমারই দোষ, যে বিজ্ঞানীরা তাকে বানালেন, তাঁরা তাকে কথা শেখাতে পারলেন না যেটা পারল সাধারণ মানুষ অথচ তার কথা বলার প্রোগ্রাম 'ডিলিট' করতে সাধারণ মানুষ পারল না,তখন দরকার পড়ল সেই বিজ্ঞানীদের। এটা কি করে হল।আরও ছোটখাট দু একটা জিনিস গরমিল লেগেছে। তবে এসব বাদ দিলে গল্পের 'থিম'টা সুন্দর।আমার বুড়ো চোখে হয়ত ভুল লাগে, শিশুরা নিশ্চয়ই এভাবে দেখে না।সেটাই আসল উদ্দেশ্য, ওদের আনন্দ দেওয়া।
 বরাবরের মতই প্রবাহনীল অতুলনীয়। ওর লেখা দেখে কেউ বলবে না, এটা এতটুকু ছেলের লেখা। মেঘের খেলার ক্রমশঃ পরিবর্তনের ফলে পরিবর্তিত ছবি সৃষ্টি ওর কবিত্বে ভীষণ সুন্দর ফুটে উঠেছে।ও যদি আগামী দিনে বড় কবি না হয়ে ওঠে দুঃখ পাব।
দোলনচাঁপা নৌদিবসের কথা, ভারতীয় নৌবাহিনীর কথা সুন্দরভাবে বলেছেন।
আর ক্ষুদে শিল্পীরা যা আঁকছে, যে কোন মানুষের মন ভাল করে দিতে বাধ্য।খুব সুন্দর।
শুরুতে পাঁপড়ভাজার গল্পটা এবার শেষে বলছি।দেখেই আবার ছেলেবেলার রথের মেলা, চড়ক মেলার কথা মনে পড়ে গেল।

এইজন্যই শুরুতে বলেছিলাম, এই ছোটোবেলা সংখ্যা আমার ছোটবেলাটাকে ফিরিয়ে দেয়।নিজেকে ভুলতে পারি।
এর কৃতিত্ব সবটাই মৌসুমীর এটা বলাই বাহুল্য।আমার মত অনেক বুড়োই হয়ত তাঁদের হারানো ছেলেবেলাকে ফিরে পান এর মধ্যে।
সমস্ত কিছু সাজানো এবং সেই সঙ্গে আকর্ষণীয় সম্পাদকীয়ও এই পত্রিকার বড় সম্পদ।
 
পেজে লাইক দিন👇

Post a Comment

1 Comments

  1. শৌর্যের ছড়াটির অভিনবত্ব লক্ষ্য করার মতো।

    ReplyDelete