সম্পাদকীয়,
খেলতে কে না ভালোবাসে? আর খেলা দেখতেও সকলেই ভালোবাসে। তবে কথায় আছে সব খেলার সেরা ফুটবল। সেই ফুটবল জ্বরে গত কয়েকদিন গোটা বিশ্বের মানুষ থর থর করে কাঁপছে। সবিতা পিসি লিখেছে, আজ আঠারো তারিখ এই ফুটবল নিয়ে শতেক প্রশ্নের উত্তর মিলে যাবে। যাবেই তো। কারণ আজ কাতারে বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল খেলা। কার সঙ্গে কার তা নিশ্চয়ই বলে দিতে হবে না। ফুটবল খেলতে অনেকেই ভালোবাসো মানছি, অনেকে আবার বেড়াতেও ভালোবাসো প্রণিধির মতো। তারা বেড়ানোর গল্প লিখে পাঠাও ছোটোবেলার দপ্তরে। তবে খেলা আর বেড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে কিন্তু পড়া করা চাই। বাঘুর মতো। বাঘু কে, সেটা জানতে পড়ে নাও নীতা পিসির গল্প। পড়াশুনা করলে তবেই না বিদ্বান হতে পারবে। এমন একজন বিদ্বান ছিলেন শ্রীনিবাস রামানুজন। তাঁর জন্মদিন ২২ শে ডিসেম্বর জাতীয় গণিত দিবস হিসেবে পালন করা হয়, তা আমাদের বলেছে দোলনচাঁপা আন্টি। জয়াবতীর গল্পে এবার তৃষ্ণা আন্টি খাবারের গল্প করেছেন। সেই গল্প শুনে আমার ভীষণ খিদে পেয়ে গেছে। কিন্তু এখনো অনেক কথা বলা বাকি যে। বিশেষত, দুই খুদে বন্ধুর কথা যারা বিকেলে খেলতে বেরিয়ে দুটো গাছবন্ধুকে জড়িয়ে ধরে আদর করছে। হ্যাঁ গো, গাছ তো আমাদের সকলেরই প্রিয় বন্ধু। এসো তিন খুদে বন্ধুর আঁকা দেখে নিই। তাইতো, জয়দীপের আঁকা দেখে ২৫ শে ডিসেম্বরের কথা মনে পড়ে গেল যে। ছোটোবন্ধুরা, এসো বড়োদিনের আনন্দে মেতে উঠি। -- মৌসুমী ঘোষ।
ধারাবাহিক উপন্যাস
জয়াবতীর জয়যাত্রা
পর্ব ৩৮
তৃষ্ণা বসাক
৪২
বাটি আসছে তো আসছেই। দেখে চোখ গোল্লা গোল্লা হয়ে গেল পেরজাপতির। এমন না যে সে কিংবা তার সইরা সব হাঘরে ঘরের মেয়ে।পেরজাপতিকে যখন তারা চিতের আগুন থেকে তুলে এনেছিল, তখন তার হাতে কানে গলায় মোটা মোটা সোনার গহনা তো ছিলই, এমনকি কোমরে চন্দ্রহার আর মাথায় সিঁথিমউর অব্দি ছিল, পায়ে রুপোর মল আর আঙ্গুলে রুপোর চুটকি। সেই গহনা দেখে খুড়িমা ঠাকমাকে ফিসফিস করে বলেছিল, ‘দেখেছেন মা, একদম নিরেট সোনা, একটুও খাদ নেই কো, দেখেই বোঝা যাচ্ছে খুব বড় ঘরের মেয়ে।বাপ মা ভালই দিয়েচে থুয়েচে, সেই মেয়ের এই পরিণতি, দেকে কষ্ট হয়! এত দিয়ে থুয়ে কেউ এমন ঘাটের মড়ার সঙ্গে বে দেয়!’
পেরজাপতি পরে বলেছিল, চিতেয় ওঠানোর আগে এই গয়নাগুলো সব খুলেই নিত তার জা আর ননদরা। ওখানে একটা চালাঘর আছে ভাঙ্গাচোরা, সেখানে নিয়ে গিয়ে ওরা গহনা খুলে নেবে এমন কথা আলোচনা করছিল নিজেদের মধ্যে, সে শুনে ফেলেছে।
জয়াবতী বলল ‘তোর সামনে আলোচনা করছিল? অবাক করলি। তুই জেনে যাবি, এটুকু চক্ষুলজ্জাও ছিল না?’
‘আহা, ওরা তো ভেবেছিল আমার হুঁশ নেই, কড়া আপিম খাইয়েছিল যে!’
‘তাই তো, তোকে দেকে তো আমরাও ভেবেচিলাম তুই আপিম খেয়ে আচিস। তবে?’
‘ও জয়াদিদি, আমি তো একটু ঢং করচিলাম গো।ওই যে কালীয় দমন পালা কি সীতার বনবাস পালা হয় না পুজোর সময়? রাম চোখ বুজে হা সীতে হা সীতে বলে কেঁদে ধুলোয় গড়াগড়ি যায়, সত্যি কি আর কাঁদে? তেমনি আমি আপিম খাওয়ার ভান করেচিলাম। ওরা আপিম মেশানো দুদের বাটি আমার হাতে দিয়ে যকন আমার গয়নার বাক্স নে চুলোচুলি করছিল, আমি সেই ফাঁকে দুদ জানলা দিয়ে ছাইগাদায় ফেলে দিচলুম। হিহি!’
জ্যাবতী তো তাজ্জব! এ যে ধুকড়ির মধ্যে খাসা চাল। এত বুদ্ধি পেরজাপতির মাতায়। ওকে যে বোকা বলে সে-ই বোকা। ওর বুদ্ধির কোন অভাব নেই। অভাব হচ্ছে শিক্ষা আর সাহসের। আসলে সাহস নেই সেটাও বলা ভুল।যুগ যুগ ধরে ভয় পাওয়াতে পাওয়াতে সেই ভয়েই সবার অব্যেস হয়ে গেছে। সেনমশাই একবার বলেছিলেন, শরীরের কোন অঙ্গ যদি কোনদিন ব্যবহার না করা হয়, তবে তা অকেজো হয়ে যায়। এও সেইরকম, সাহস না করতে করতে সাহসটাই অকেজো হয়ে গেছে। আর জয়াবতী দেখেছে ভগবানের নামে, ধর্মের নামে মানুষকে ভয় দেখানো খুব সহজ। যেটা বলতে চাও, সেটা শাস্তরের নাম করে বলে দাও। বলে দাও শাস্তরে লেকা আছে, নারী নরকের দ্বার। সব মানুষ নিজের বুদ্ধি না খাটিয়ে সেইটাই বিশ্বেস করবে। সতীকে আপিম খাওয়ানোর মত। এই আপিম খাইয়ে মানুষকে দিয়ে যা খুশি করানো যায়, প্রাণে মেরে ফেলাও যায়।
দূর, তার মন কোতায় চলে গেছে।ভাবছিল যে পেরজাপতি, উমাশশী সবাই বড় ঘরের মেয়ে। ওরা অব্দি খাবার দেখে তাজ্জব হয়ে গেছে। পুণ্যিদের অবস্থাও খুব ভাল। সেই হিসেবে, তার পিতাঠাকুর হয়তো ধনী নন। কিন্তু বাড়িতে কোনদিন খাবারের অভাব দেখেনি, আর মা সবসময়ই আদর করে খাইয়েছেন। কিন্তু এত রকম রান্না কোনদিন তাদের বাড়িতে হয় না। পিতাঠাকুর ছিমছাম খাবার পছন্দ করেন, মাও তাই। পিতাঠাকুর যেমন বলেন ‘খাওয়ার জন্যে বাঁচা নয়। বাঁচার জন্যে খাওয়া’ তেমনি মা বলেন ‘খেয়েই লোকে মরে, না খেয়ে কেউ মরে না’ এর মানে হল বেশি খেলেই লোকের ব্যামো হয়। আজ এত থরে থরে খাবারের সামনে বসে মনে হল সে যেন ব্যামোর ঘরে বসে আছে। এত খাবার খায় কে? রাঁধেই বা কে? এ তো সাংঘাতিক সময় নষ্ট। চারটে পুঁটে মেয়ের জন্য এত খাবার! এর মধ্যে একটু দেখানেপনাও আছে মনে হল তার। অবিশ্যি পুণ্যির আলাদা ব্যবস্থা হ্যেছে।সেখানে উঁকি মেরে দেখে এসেছে জয়াবতী নিরামিষের এলাহি ভোজ। শুক্তো, লাল শাক, দুধ দিয়ে লাউ, মুগ ডাল, মানকচু ভাজা, নারিকেল ভাজা, ডালের বড়া, বক ফুলের বড়া, থোড়, মোচা, বড়ার ঝাল, ছানার ডালনা, কাঁচাকলার বড়ার ডালনা, আরো কত কি অচেনা পদ। এছাড়া পিঠে পায়েস তো আছেই।ঠাকমা স্বয়ং তাকে পাখা দিয়ে বাতাস করছেন দেখে জয়াবতী ফোড়ন কাটল ‘বেশ ঠাকমা, এদিকে যা এলাহি আয়োজন দেকচি, ইচ্ছে করছে একানেই বসে যাই, ও ঘরে আর যাই থাক, এই বকফুলের বড়াটি কিন্তু চাইই চাই’
ঠাকমা একগাল হেসে বললেন ‘সব আচে। আগে তো তুমি গিয়ে বসো। ভাত যে জুড়িয়ে জল হয়ে গেল’
জয়াবতী দেখল তাদের জন্যে সত্যিই নিরামিষ হেঁসেলের সব কিছুই আছে, তার সঙ্গে যোগ হয়েছে পাকা রুই, বড় চিংড়ি এমনকি পাঁঠার মাংস পর্যন্ত। কিন্তু সেসব সে দেখল না। সে দেখল মোট ছটি আসন পাতা হয়েছে। তারা তিনজন আর জমিদারমশাইয়ের তিন নাতনির জন্যে। এদেরি পিতাঠাকুর পড়াতে আসেন। এরা তাদের সঙ্গে খাবে, তা ভাল কথা। কিন্তু তবু তার ভুরু কুঁচকে গেল। এই তিনটে মেয়ে আছে, কিন্তু সব্বো নেই। কেন? সেও তো কচি মেয়ে, সে কেন তাদের সঙ্গে বসবে না? জয়াবতী দেখতে পেল সব্বো হাতপাখা নিয়ে এককোণে দাঁড়িয়ে আছে ঘোমটা টেনে। মুখখানি ফুটে আছে পদ্ম ফুলের মত। সে ইশারা করল ওকে খেতে বসতে, অমনি সব্বোর মুখখানি মলিন হয়ে গেল।
সংসারের অমঙ্গল হয়, এ তো বরাবর জেনে এসেছেন, তিনি এর থেকেও কম বয়সে এ বাড়ি এসেছিলেন, তাঁর সামনেও তো আগে ছেলেরা, তারপর তাঁর ননদরা খেয়ে গেলে শাশুড়ির সঙ্গে তিনি খেতে পেতেন, কেউ তো বলেনি এটা অন্যায়। এদিকে অতিথি অভুক্ত হয়ে চলে গেলেও অমঙ্গল। তিনি কী যে করেন!
হঠাৎ ঠাকমার গলা পাওয়া গেল চৌকাঠের ওপার থেকে।
‘ও বউমা, এত ভাবার কী আছে? বদ্যিঠাকরুন তো আর বাজে পরামর্শ দেবে না। যে আমার মত মানুষকে মরণের মুখ থেকে ফিরিয়ে আনতে পারে, তার কথা বেদবাক্যি। আর সত্যি তো, ওইটুকু কচি মেয়ে না খেয়ে থাকলে কি সংসারের মঙ্গল হয়? ও কি এবাড়ির মেয়েদের থেকে আলাদা? কাল আমার কি যত্নটাই করলে। ওরে, কে আছিস, সব্বোর জন্যে একটা আসন পেতে দে’ ব্যস।
এর ওপর আর কথা চলে না। মহানন্দে সাতজন খেতে বসে গেল। শুধু পাশের ঘরে পুণ্যিটা ঘাসপাতা খাচ্ছে, এইটা জয়াবতীর বুকে কাঁটা হয়ে বিঁধতে লাগল। তবে খেতে খেতে একটা কথা সে বেশ বুঝতে পারল। আজ যে তার কথা সবাই মেনে নিতে বাধ্য হল, তার কারণ সে বদ্যিগিরি করে তাই। সমাজে মেয়েমানুষের সংসারের বাইরে একটা আলাদা পরিচয় চাই, তবেই তার কথা লোকে মান্যি করবে। ( ক্রমশ)
ফুটবল জ্বর
সবিতা বিশ্বাস
ফুটবল জ্বরে কাঁপে আজ সারা বিশ্ব
রাত জেগে সব্বাই দেখে সেই দৃশ্য
মাঠ জুড়ে উজ্জ্বল নীল সাদা জার্সি
একটুকু ভুল হলে নেই কোনো মার্সি
চোখে জল নেইমার হেরে গেল সাম্বা
রুখে দিল অলিভর বিলেতের হাম্বা
আরো কত অঘটন মরুদেশ কাতারে
উল্লাসে ক্রোয়েশিয়া বাতাসের সাঁতারে
শেষ চারে মরক্কো ইয়াসিন ভেলকি
দেখাবেন এইবার লিয়োনেল খেল কি?
ফুটবল গুডবল দেখে লাগে ঝটকা
প্রিয় দল জিতলেই দুমদাম পটকা
কিলিয়ন এমবাপে সোনা বুট পাবে কি?
মেসি জিরু এদেরকে আটকানো যাবে কি?
মিলে যাবে উত্তর ফাইনাল আঠারো
জিতবেই ফুটবল সন্দেহ নেই কারো |
----
কারখানা
নীতা রায়
বাঘু বেশ মনোযোগ দিয়েই পড়াশোনা করছিল। খুব ভালো ছেলে সে। অতি বড় শত্রুও তাকে দুষ্টু বলতে পারে না। তাদের গুহাবাড়ির বসার ঘর, তার পাওয়া প্রাইজে প্রাইজে ছয়লাপ। স্কুলের পরীক্ষার প্রাইজ। এ্যাটেনডেন্সের প্রাইজ। দৌড়ের প্রাইজ। এমন কি সাঁতারেও সে ফার্স্ট। তারও দু’দুটো শীল্ড পেয়েছে বাঘু।
হঠাৎ একটা মন কেমন করা সুগন্ধ পেল বাঘু। এমন সুগন্ধের সাথে বাঘুর পরিচয় হয়েছে বলে, তার মনে পড়ল না। বড় রাস্তার পাশের ঝোপে আড্ডা দেওয়ার বয়স তার হয় নি। মায়ের কড়া শাসনে বনের অল্প অংশই দেখা হয়েছে এখনও পর্যন্ত।
মেধাবী ছাত্র বাঘু। এই সুগন্ধের কারণ জানার খুব আগ্রহ হ’ল তার। পড়ার বই থেকে চোখ তুলতেই সে অবাক। জানালার সোজাসুজি, মাত্র কয়েকটা গাছের পরেই বেশ কিছু মাথা দেখা যাচ্ছে।
সাহস করে বাইরে এসে একটু এগোল বাঘু। মাথাগুলোকে দেখতে ঠিক মানুষের মত। কিন্তু, এতদিন পর্যন্ত দেখা মানুষদের থেকে এই মাথাগুলো বেশি কালো। তার উপরে ফুল, পাথর আটকে দেওয়া। গায়েও রংবেরং এর কাপড় ঢাকা।
এর আগে মানুষ দেখেছে বাঘু। ছোট কাপড় বাঁধা থাকে তাদের কোমরে। কাঁধে থাকে কুঠার। কাঁধের ঐ অস্ত্রটিকে ভয়ের কারণ হিসাবেই জেনেছে সে মায়ের কাছে। এই মানুষদের দেখে একটুও ভয় পেল না বাঘু। সুগন্ধের টানে আর রঙের মোহে, হামাগুড়ি দিয়ে দিয়ে এগিয়ে গেল সে।
ছ্যাঁকছোঁক আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। বড় বড় সাদা সাদা পাত্রে কত কি রাখা। তার পাশে একটা কাপড় পেতে বসে আছে বেশ কয়েকটি বাচ্চা। বাঘু ভয় না পেয়ে এগিয়ে গেল তাদের কাছে। সব বাচ্চা ই তার মতো। চুপচাপ বসে বসে লেখাপড়া করছে। বাঘু মন দিয়ে দেখতে লাগল, মানুষের বাচ্চার লেখাপড়া।
বাঘুর মা বাঘুকে খুঁজতে খুঁজতে পিকনিক স্পটে এসে সেও অবাক। মানুষ মায়েরাও তার মতোই। পিকনিকে এসেও বাচ্চাদের পড়া থেকে ছুটি দেয় না। নিজেদের বাচ্চাদের সাথে সাথে বাঘুকেও বসিয়ে দিয়েছে বইখাতা দিয়ে।
খুশি মনে মা – বাঘ ফিরে গেল তার গুহায়। আর চিন্তা নেই। বাঘু বড় হয়ে সত্যিই মানুষ হবে।
ভ্রমণ
প্রণিধি সাহা
নবম শ্রেণী, কালনা হিন্দু বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়
কালনা, পূর্ব বর্ধমান
আমি যখন ক্লাস ফোরে পড়ি তখন আমি, আমার মা - বাবা, দিদি ও বোন এবং আমার এক বন্ধু ,তার মা- বাবা, দিদি ও ভাই মিলে একসাথে দারজিলিং ও গ্যাং টক গিয়েছিলাম। দুর্গাপুজোর পর আমাদের যাওয়ার কথা ছিল ।তার কদিন আগে জানা গেল যে উত্তরবঙ্গের কিছু অংশে বন্যা হয় তাই বেশ কিছু ট্রেন বাতিল হয়ে গিয়েছে । আমরা ভাবলাম যে আমরা বোধহয় আর যেতে পারব না। তখন আমার বাবা গিয়ে বাসের টিকিট কেটে আনল। সঠিকদিনে আমরা ট্রেনে করে নবদ্বীপ গেলাম। তার নবদ্বীপ বাসট্যান্ড থেকে আমাদের বাস ছাড়ল। নবদ্বীপ থেকে আমাদের বাস শিলিগুড়ি পরযন্ত যাবে । সেদিন বাসে বসে আমি ও আমার বন্ধু অঙ্কিতা খুব মজা করেছিলাম। আমরা সারারাত জেগে অনেক গল্প করলাম। ভোরবেলা সূযোদয় দেখেছিলাম।
পরেরদিন সকালে আমরা শিলিগুড়ি পৌঁছালাম । সেখান থেকে গাড়ি করে আমরা গ্যাংটক গিয়ে পৌঁছালাম ,তখন প্রায় দুপুর হয়ে গিয়েছিল । আমরা হাতমুখ ধুয়ে খাওয়া- দাওয়া সেরে নিয়ে একটু বিশ্রাম করে নিয়ে বিকেলবেলা ম্যালে ঘুরতে গেলাম । সেখানে গিয়ে আমরা পনির মোমো,ফ্রায়েড মোমো ও রোল খেয়েছিলাম। পরেরদিন সকালে আমরা গাড়ি করে " ছাঙ্গুলেক, নাথুলা পাস ও বাবা মন্দির " গেলাম। ছাঙ্গুলেকে আমি প্রথম বার চমড়িগাই দেখেছিলাম। এই চমড়িগাই এর লোম থেকেই চামড় তৈরি হয় । এরপর নাথুলা পাসে আমি ভারত ও চীনের বডার দেখেছিলাম। এরপর বাবা মন্দিরে হরভজন সিংয়ের মূরতি ও তার ব্যাবহৃত খাট ও জুতো দেখেছিলাম । ওইখানে দাড়িয়ে অনেক ছবি তুলেছিলাম। পরেরদিন আমরা "ঝরনা, হনুমান মন্দির, গণেশ মন্দির ও বৌদ্ধ মন্দির " দেখেছিলাম। এই হমস্ত সৌন্দর্য্যের স্মৃতি আজ ও আমার মনে গেথে আছে। এরপরের দিন আমরা দার্জিলিং চলে এলাম।সেখানে পৌঁছে খাওয়া সেরে আমরা বেরিয়ে পড়লাম রক গার্ডে ন, চা বাগান ও একটি বৌদ্ধ মন্দির দেখতে। সন্ধ্যা বেলায় আমরা ম্যালে ঘুরতে গেলাম। পরেরদিন সকাল হওয়ার আগেই আমরা গেলাম সানরাইজ দেখতে। সেখানে গিয়ে আমরা গরম গরম কফি খেলাম ঘুম কাটানোর জন্য তারপর সূর্য ওঠা শুরু হল তখন কাঞ্চনজঙ্ঘা পাহাড়টাও ধীরে ধীরে আড়াল থেকে বেরিয়ে পড়ে সূর্যের মতো নানান রং ধারণ করতে লাগল, কখনো লাল, কখনো কমলা আবার কখনো হলুদ রঙ । এই সূর্যোদয়ের দৃশ্যটা আমি কখনো ভুলতে পারব না। সেইদিনই আমরা চিড়িয়াখানায় গিয়েছিলাম । সেখানে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার , স্নো টাইগার, ভালুক,রেড পান্ডা ওৎআরো অনেকরকমের পশু- পাখি দেখেছিলাম । সেদিন আমরা আরো একটা ঝরনা ও দেখেছিলাম । তারপর সারা সন্ধ্যা আমরা ম্যালে ঘুরলাম অনেক কিছু কিনলাম । পরেরদিন আমাদের ফেরার পালা । ফেরার সময় আমরা একটা কমলালেবু বাগান দেখেছিলাম । এরপর আমরা পশুপতি মার্কেট দেখে মিরিক ঘুরে বাড়ি ফিরলাম। বাড়ি ফিরে মনটা খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিল।মনে হচ্ছিল ওখানে থেকে গেলেই ভালো হতো।
স্মরণীয় দিবস
জাতীয় গণিত দিবস
কলমে - দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে
বাইশে ডিসেম্বর দিনটি ভারতে জাতীয় গণিত দিবস হিসেবে পালন করা হয়। গণিত বিষয়ে বিশ্বে ভারতের অবদান অনস্বীকার্য।
ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ডঃ মনমোহন সিং২০১২ খ্রিস্টাব্দে ২৬ শে ফেব্রুয়ারি মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারতের প্রতিভাবান গণিতজ্ঞ শ্রীনিবাস রামানুজনের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উদযাপনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাঁর জন্মদিন ২২ শে ডিসেম্বর দিনটিকে জাতীয় গণিত দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। সেই বছর থেকেই ভারতে বাইশে ডিসেম্বর গণিত দিবস হিসেবে পালিত হয়।
১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দের বাইশে ডিসেম্বর ব্রিটিশ ভারতের মাদ্রাজের প্রদেশের তাঞ্জোর জেলার ইরেভন শহরে এক আয়েঙ্গার ব্রাহ্মণ পরিবারে বিশ্ব বিখ্যাত গণিতবিদ শ্রীনিবাস রামানুজন জন্মগ্রহণ করেন। প্রথাগত শিক্ষা না থাকলেও সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায় রামানুজন গণিতের বিভিন্ন দিক আবিষ্কার করেছিলেন, যেমন সংখ্যাতত্ত্ব, আবৃত্ত ভগ্নাংশ ইত্যাদি। তিনি ম্যাজিক স্কোয়ার গঠনের পদ্ধতিও উদ্ভাবন করেছিলে। জ্যামিতির বিভিন্ন বিষয়ের উপরেও তিনি কাজ শুরু করেন। শুধু তাই নয় বৃত্তের বর্গ সম্পর্কীয় তাঁর গবেষণা পৃথিবীর বিষুব রৈখিক পরিধীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। জ্যামিতির সীমাবদ্ধতা বিবেচনা করে তিনি বীজগণিতের দিকে দৃষ্টিপাত করেন। গণিতে গবেষণার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য।
১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে লন্ডনের ম্যাথমেটিক্যাল সোসাইটির সদস্য নির্বাচিত হওয়ার ঠিক পরেই রামানুজন রয়েল সোসাইটির ফেলো নির্বাচিত হন। তিনিই এই সময় সর্বকনিষ্ঠ সদস্য ছিলেন।
২০১৯ খ্রিস্টাব্দে রয়েল সোসাইটি রামানুজনকে বিশেষ সম্মান জানান টুইটারের মাধ্যমে।
রামানুজন তাঁর গবেষণালব্ধ সব ফলাফল তিনি ডায়েরীতে লেখে রাখতেন। তাঁর ডায়েরীর লেখা গাণিতীক বিভিন্ন সূত্রও গণিতের বিভিন্ন শাখার জন্ম দিয়েছে।
ভারতে গণিত দিবস হিসেবে তাঁর জন্মদিন টিকে বেছে নেওয়া হয়েছে। সারাদেশের স্কুল কলেজে নানা ধরনের শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ২২শে ডিসেম্বর দিনটিকে জাতীয় গণিতদিবস হিসেবে পলন করা হয়।
পাঠপ্রতিক্রিয়া
(জ্বলদর্চি ছোটবেলা ১১২ পড়ে গল্পকার কুহেলী দাশগুপ্ত, কোন্নগর, হুগলি, থেকে যা লিখলেন)
১১২ তম সংখ্যা সাথে নিয়ে এগিয়ে চলেছে জ্বলদর্চি ছোটবেলা।
সম্পাদক মৌসুমী ঘোষ এই সংখ্যার বিন্যাস সুচারু ভাবে সম্পন্ন করেছেন। অনবদ্য সম্পাদকীয়। চিত্রগ্রাহক সুদীপ পাত্রের ক্যামেরা বন্দি ছবিটি কোন শিল্প গ্রামের মাটির দাওয়ায় অবসর যাপনের চিত্র। "জয়াবতীর জয়যাত্রা" সাঁইত্রিশ পর্ব পার করল। সাহিত্যিক তৃষ্ণা বসাক কি সুন্দর ভাবে অনেককাল আগে ফিরে এক সমাজ চিত্র পট তুলে ধরেছেন! উমাশশীকে নিয়ে সকলের কত চিন্তা! ডাকাতের কবল থেকে উদ্ধার পাওয়া মেয়েটিকে সকলে আগলে চলতে চায়। সেই সময়কার অকাল বৈধব্য, সম্পত্তির দখলদারির জন্য বিধবাদের কোণঠাসা করে রাখা -এমন অনেক ছবিই উঠে আসে। তবে আনন্দ সংবাদ ও অপেক্ষা করে থাকে। জমিদার মশাইয়ের মায়ের চিঠিখানা জয়াবতী আর সইদের মনে সতেজ হাওয়া বইয়ে দেয়।
তুহিন সরকারের আঁকা ব্যাটম্যান এর ছবিটি খুব সুন্দর। তপন রায় চৌধুরীর "পুপুনের সঙ্গে কিছুক্ষণ " পড়ে বুঝলাম শিশু মনের খেয়ালী আচরণ। খাওয়ার অনীহা যার, সেই শিশুটিও মনের খেয়ালে প্রিয় সান্নিধ্য পেয়ে বিস্কিট খেয়ে ক্ষিদে মেটায়। শুভশ্রী সরকারের পেন্সিল স্কেচ খুকীটি খুব মিষ্টি। শ্রীছন্দা বোস কি সুন্দর হেমন্তের আহ্বানে ছড়া লিখেছেন!শৌর্য পালের মজার ছড়া পড়ে ঘুরলাম মেসোপটেমিয়ায় অবাক বিস্ময় নিয়ে। রাইলী সেনগুপ্তের সাথে পর্বত দিবস উদযাপন করতে গিয়ে কত কি জানলাম! প্রতিটি বছর নতুন এক একটি থিমকে কেন্দ্র করে International Mountain Day পালিত হয়। এসব তথ্য অজানা ছিল। আমরা কেবল ভ্রমণের নেশায় পাহাড়ে ছুটে যাই। অনুভব বোসের আঁকা জল রঙের প্রকৃতি দৃষ্টি নন্দন।
মলয় সরকারের লেখা পাঠপ্রতিক্রিয়াটি অসাধারণ। এটি বোধহয় ১১১ পর্বের পাঠ প্রতিক্রিয়া। ছোটদের সাথে "জ্বলদর্চি ছোটবেলা " সংখ্যা পড়ে বড়রাও উপকৃত হবে। এই পত্রিকার সম্পাদক ও সকল কলাকুশলীদের শুভেচ্ছা জানাই। "জ্বলদর্চি ছোটবেলার " পথ চলা দীর্ঘ হোক।
0 Comments