জ্বলদর্চি

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা ১১৪

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা ১১৪


সম্পাদকীয়,
আজ বড়োদিন। আজ চড়ুইভাতির দিন। তোমাদের বন্ধু শতভিষা বলেছে ডিসেম্বর বনভোজনের মাস। ঠিকই তো, যাহাই চড়ুইভাতি, আর এক অর্থে তাহাই বনভোজন। শুধু কি তুমি আমি ঐদেখ গাছে বসে পাখিটাও আমাদের মতো তার বাসায় বসে ছানাদের সঙ্গে খাওয়া দাওয়া করছে। সেই ছবি উপহার দিয়েছে নীলাব্জ আঙ্কেল। বড়োদিন শুধু চড়ুইভাতির দিন নয়, বড়োদিনের সকাল হতেই তোমরা নিশ্চয়ই সান্টাক্লজের দেওয়া উপহার নিয়েও মেতে উঠেছো? বড়োদিন মানে আরো আরো আরো মজার দিন। রূপা আন্টির ছড়ায় তোমরা আজকের দিনের মজা পড়ে নাও। উপহারের কথায় মনে পড়ে গেল, মিনুর কথা। মিনুর চাই রঙীন ছাতা। মিনু কে? জানতে হলে পড়ে নাও জয়ন্তী পিসির গল্প। জয়াবতীর খবরাখবর নিতে হলে ধারাবাহিক উপন্যাসটি পড়তে হবেই। বড়োদিনের উপহার স্বরূপ তিন খুদে বন্ধুর আঁকা রইল। বড়োদিনের কথাবড়ো সুন্দর করে বলেছে বানীয়া দিদি। আর তোমাদের পাঠ প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায় রইলাম।   - মৌসুমী ঘোষ।

ধারাবাহিক উপন্যাস
জয়াবতীর জয়যাত্রা
পর্ব ৩৯
তৃষ্ণা বসাক

৪৩
পুজোর দিনগুলো স্বপ্নের মতো কেটে যাচ্ছিল। মায়েরও খুব ফুরফুরে লাগছিল নিশ্চয়। কারণ সপ্তমী থেকে দশমী- সারা গাঁয়েরই জমিদারমশাইয়ের বাড়িতে নেমন্তন্ন।  প্রতিবছর  রামগতিকে আলাদা করে বলেন জমিদারমশাই, মাকে নিয়ে যেতে পালকি আসে।  এ বছর তা তো হচ্ছেই, আবার পুণ্যির মা আর খুড়িমার জন্যেও পালকি আসছে। চারদিন কারো বাড়িতেই রান্নার পাট নেই। বৈকালী প্রসাদের এত লুচি মিঠাই আসছে যে তাই খেয়েই রাত কেটে যাচ্ছে। মা খুড়িমা তো বটেই, রান্নির মেজাজও খুব ভাল। সে নতুন কাপড় পরে দুর্গাগতিকে কোলে নিয়ে চণ্ডীমণ্ডপে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মা এই অবসরে অনেক দিনের ফেলে রাখা একটা আসন সেলাই নিয়ে বসেছে, পু্ণ্যির মা কড়ি দিয়ে ফুলদানি বানাচ্ছে কেমন সুন্দর। দেখেশুনে জয়াবতীর মনে হল প্রতিদিন বাধ্যতামূলক ভাবে রান্নাঘরের এই ধোঁয়ার মধ্যে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে নানা পদ বানাতে বানাতে মেয়েদের অন্য সব গুণ  নষ্ট হয়ে যায়।
এই যে বলা হয়, মেয়েরা অন্নপূর্ণা, অন্যদের খাইয়্যেই তাদের সুখ, তাদের যেন খিদে তেষ্টা কিছুই থাকতে নেই- কী ভয়ানক মিথ্যে কথা এসব,  জয়াবতীর তো ভাল খাবার পেলেই খেতে ইচ্ছে করে, সে বেশ খেতেও পারে। তবে ভাত খুব কম খায়। সেনমশাই যেদিন থেকে বলেছেন, ভাত কম খেলে অনেক বেশি কাজ করা যায়, সেদিন থেকে সে ভাত খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে।
রান্না করে যে মেয়েদের অন্য গুণ নষ্ট হয়, তাই নয়, তাদের শরীরেরও খুব ক্ষতি হয়। উনুনের সামনে পিঁড়েতে বসে বসে রান্না করে কোমরের কিছু থাকে না। সে দেখেছে যারা ওই শংকরীর মত ছুটে ছুটে কাজ করে, তাদের শরীর অনেক সুস্থ থাকে। তাছাড়া বাড়ির সবচেয়ে খারাপ ঘর দুটিই হচ্ছে রান্নাঘর আর আঁতুড় ঘর। জয়াবতীর মনে পড়ল পেরজাপতির কান্নাভেজা মুখ। নোংরা আঁতুড়ঘরে ভাইয়ের জন্ম দিতে গিয়ে ওর মা মরে গেছিল। নাহ, পুজোর চারটে দিন গেলে এই দুটো নিয়ে ভাবতে হবে। শুধু মানুষের ওষুধে কি হবে, এই সমাজের ওষুধ চাই।

তবে যতই আনন্দ করুক, সেই তো বাড়ি থেকে জমিদারমশাইয়ের বাড়ি আর সেখান থেকে আবার বাড়ি- এতে হাঁপিয়ে উঠছিল জয়াবতী। সোনাটিকরিতে যেমন পড়া তয়ের করা থাকে, ওষুধ তয়ের করা থাকে, এখানে এসব কিছুই ছিল না।শুধু ছুটি, শুধু খেলাও যে একঘেয়ে হয়ে যেতে পারে, তা দু একদিনের মধ্যেই বুঝতে পারল সে। কিছু একটা করার জন্যে প্রাণ ছটফট করছিল। কী করা যায় ভাবতে ভাবতে তার মনে পড়ে গেল সেই অন্ধকারে উঠে বুড়শিবতলার জঙ্গলে যাওয়ার কথা, সেখান থেকে মধুলতা খুঁজে পিতাঠাকুর, মা আর রান্নিকে বাঁচানোর কথা। ভাবতেই তার রক্তে নাচন লাগল, শরীর যেন কদিনের ঝিমুনি ভেঙে জেগে উঠল নতুন উদ্যমে। পালকিতে চড়ে অষ্টমীর অঞ্জলি দিতে  যাবার সময় সে ঠিক করল ওখান থেকে  সে বুড়োশিবতলার জঙ্গলে যাবে। কিন্তু মা যে পরিয়ে দিয়েছে একরাশ গয়না আর রেশমি শাড়ি, এইসব পরে কি জঙ্গলে যাওয়া যায়? ভারি জ্বালা তো।
সে এক বুদ্ধি করল।

অঞ্জলির পর সেই শংকরীকে খুঁজে বার করল , বলল ‘তোমার ধোয়া শাড়ি দেবে গা আমায় একটা?’
সব্বো শুনে বলল ‘কী হবে গা? শঙ্করীর শাড়ি চাইছ কেন?’
ব্যস ওকেও বলতে হল কী করতে চাইছে তারা । শুনে সে নেচে উঠল ‘আমিও যাব আমিও যাব’ বলে। কবে সেই বাপেরবাড়ি থেকে এসেছে, আর কোথাও যাওয়া হয়নি। এই পুজোতেও গেল না প্রথম বারের পুজো বলে। একেবারে কালীপূজায় যাবে । ভ্রাতৃদ্বিতীয়া করে তিন মাস থেকে আসবে।
সব্বো জানতে সুবিধেই হল। ওর ভাগে দুখানা ঘর। একটা শোবার, আরেকটা ঘরে ও পড়ে খেলা করে, সাথীদের ডাকে। সেই ঘরে ওরা সবাই রেশমি কাপড় ছেড়ে গয়লানীদের মতো ডুরে শাড়ি পরে নিল, গায়ে জড়াল গামছা। বাড়ির সবাই যখন পুজো নিয়ে ব্যস্ত, ওরা চুপিচুপি বেরিয়ে গেল খিড়কির দরজা দিয়ে। সবাই ভাবল গয়লানি রা যাচ্ছে। পুজোয় অনেক দুধ দই, মণ্ডা ছানা লাগে কিনা। এই রাস্তাতেই ওদের হরবখত যাতায়াত চলছে। তাই পাঁচ জন গয়লানি ডুরে শাড়ি পরে দুধের খালি কটোরা নিয়ে খিড়কি রাস্তা দিয়ে বেরিয়ে কোথায় গেল, কেউ দেখেও মাথা ঘামাল না।  
এদিক দিয়ে গয়লাপাড়ায় যাবার একটা রাস্তা আছে, আসলে গয়লাপাড়া জংগলের ধারেই, মাঝখানে মস্ত মাঠ, সে মাঠে সবুজ কচি ঘাস আছে, সেখানেই গরু চরতে দিয়ে রাখাল ছেলেরা বসে বসে বাঁশি বাজায়, কিংবা গাছতলায় পড়ে পড়ে ঘুমোয়। আজ অবিশ্যি তাদের কাউকে দেখা গেল না। মনে হয় খুব ভোরেই গরু চরিয়ে গেছে। এখন  মণ্ডপে অষ্টমীর প্রসাদ খেতে ব্যস্ত।
জঙ্গলে ঢোকার আগে পুণ্যি বলল ‘বাব্বা, এই কটোরা খালি হলেও বেশ ভারি আছে। বইতে বইতে কাঁখালে ব্যথা হয়ে গেল’ বলে ও কটোরা নামিয়ে রাখল একটা গাছের তলায়। ওর দেখাদেখি পেরজাপতিও নামিয়ে রাখল ওর কটোরা। একদম জংগলের শুরুতেই মস্ত অশবত্থ গাছটা, চিনতে অসুবিধে হবে না। উমাশশী, সব্বো আর  জয়াবতীও নামাল কটোরা, কিন্তু তাদের মধ্যে থেকে আবার কটা জিনিস বার করে গামছায় পুঁটলি করে বাঁধল। উমাশশী আর পুণ্যির চোখ গোলগোল হয়ে গেল দেখে। পুণ্যি গালে হাত দিয়ে বলল ‘মাগো। তোদের পেটে পেটে এত? আমাদের কাছে নুকিয়েছিস? এসব কেন লা? আমরা কি যুদ্ধে যাচ্ছি?’
জয়াবতী ঠঁটে আঙ্গুল দিয়ে বলল ‘কতরকম বিপদ আসতে পারে পথেঘাটে। চুপ। গোল করিস না। লোকের বাড়ি গিয়ে কি তুই এত চেঁচিয়ে কথা বলিস?’
পুণ্যি তো পুণ্যি, বাকি সবাইও হাঁ হয়ে গেল ওর কথা শুনে।
পুণ্যি রেগে গিয়ে বলল ‘একেনে কার বাড়ি এসেচি শুনি?’
‘গাছপালাদের বাড়ি রে বোকা। নে কথা না বাড়িয়ে চল তো এবার। দুপুরের মধ্যে না ফিরলে খোঁজ খোঁজ পড়ে যাবে যে’। ( ক্রমশ)

জয়দীপ সাহা
ষষ্ঠ শ্রেণী, সোদপুর হাই স্কুল, উত্তর ২৪ পরগণা


মিনুর ছাতা
জয়ন্তী মন্ডল

মিনুর একটু রাগ ই হয়েছে।
হবে নাই বা কেন বলো? তুমি হলে তোমারও রাগ হ’ত।
বাবা  মেজদির জন্যে ছাতা আনলেন। মিনুর কথা মনে পড়ল না! কি আশ্চর্য!
আহা! দিদির কি সুন্দর লাল রঙের টিপ টিপ ফুল ছাতা।
মায়ের কাছে কেঁদে পড়ল মিনু।
 মা বলল, এতটুকু মেয়ে তুমি ছাতা নিয়ে কি করবে?
মিনু বিনুনি দুলিয়ে বলল, তবে যে দিদির জন্যে এল।
মিনুর মা সুচেতা বলল, তুমি যখন দিদির মতো বড়ো হবে, একা একা যেতে পারবে তখন তোমার জন্যেও তোমার বাবা ছাতা এনে দেবেন।
মিনু খানিক ভেবে নিয়ে মাকে বলল, মা কবে আমি দিদির মত বড় হবো?
সুচেতা মুচকি হেসে বলল, 
 বেশি দিন নয়। তা আট কি ন'বছর পর। 
মিনু আঙ্গুলের কর গুনে গুনে হিসেব করে বলল, মা, তখন কিন্তু আমি দিদির মত লাল ছাতা মাথায় দিয়ে একা একাই বাইরে যাবো। তুমি আবার বোলো না যেন,
' মিনু একা যেও না। হারু কাকাকে সঙ্গে নাও। '
সুচেতা একগাল হেসে বলল,  বেশ আমি বলব না। এখন যাও পড়তে বসো গিয়ে। এক্ষুনি ভানু মাস্টার এসে পড়বেন। 
দিদিকে যে একবার ছাতাটা চাইবে সে ভরসাও পায় না মিনু। মেজদিকে যে বড্ড ভয় ভয় করে মিনু্র।

বৈশাখ মাসে সেবার বেজায় গরম পড়েছে। গ্রামের পুকুর ডোবা সব শুকিয়ে কাঠ।
দিদির পরীক্ষা চলছে।
দিদি প্রতিদিন লাল ছাতাটি মাথায় দিয়ে কলেজে যাবার জন্য বাস ধরতে যায়। মিনু দাওয়ায় পড়তে বসে ঠিকই। তবে দিদি কলেজে বের হওয়ার সময় সেদিকেই মন থাকে তার।
আজ সকাল বেলায় তপু ছুটতে ছুটতে এসে খবর দিল আজ সব বাস বন্ধ। কারা জানি কামারপুকুর এ ধর্মঘট ডেকেছে।
শুনে মিনুর মায়ের মাথায় হাত।
অনু পরীক্ষা দিতে যাবে কি করে?
অগত্যা বামার গাড়ি।
সুচেতা একটু সকাল সকাল বেরিয়ে পড়ল। পরীক্ষা। বলা যায় না। পথ অবরোধ, গাড়ির চাকা পাংচার বা সেরকম কত কি ঘটতে পারে। আগে পৌঁছলে কিছু ক্ষতি তো নেই।
মা আর দিদি বেরিয়ে গেলে মিনু গোটা বাড়িটা দুবার চক্কর দিয়ে উপরে দিদির ঘরে গেল।
তারপর দিদির পড়ার টেবিলের সামনে চেয়ারটায় পা ছড়িয়ে বসল। 
খানিকক্ষণ এরকম বসে থাকার পর শেলফ থেকে দিদির লাল টুকটুকে ছাতাটা  নিয়ে নিচে নেমে এল মিনু। 
ঘরে ঢুকে কুলুঙ্গিতে রাখা জন্মদিনে ছোটমামার দেওয়া ছোট্ট হাতব্যাগটা নিল। তারপর দরোজায় দোর দিয়ে বেরিয়ে পড়ল মিনু।
লাল ছাতা মাথায় দিয়ে প্রথমে দিঘির পাড় তারপর বুড়ো শিবতলা পেরিয়ে বাঁক  নিতেই দেখে শিবু কাকা জমিতে কাজ করছে।
শিবুকাকাকে দেখে চট করে ছাতাটা মাথায় আড়াল দিয়ে না দেখার ভান করে দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেল মিনু।
একটু গিয়েই ভাবল কি জানি বাবা শিবু কাকা কি আমায় দেখছে না তো?
ছাতা মাথায় পিছন ফিরে আড়চোখে একবার শিবু কাকাকে দেখে নিল। 
শিবু কাকা মিনুর দিকে একবার তাকাল ঠিকই তারপর নিজের কাজে মন দিল।
ছাতার হাতলটা শক্ত করে ধরে ছোট্ট ব্যাগটা বাগিয়ে এগিয়ে চলল মিনু। হঠাৎ একটা জোর বাতাসে ছাতাটা প্রায় উড়েই যাচ্ছিল।
আনমনেই হাঁটছিল মিনু। হঠাৎ হুঁশ ফিরল লালুর ঘেউ ঘেউ ডাকে।
পিছন ফিরে মিনু অবাক!
লালু সঙ্গে আসছে?
লালুকে দেখে দাঁড়াতেই সোঁ-সোঁ  শব্দে একটা ছেলে সাইকেল চালিয়ে চলে গেল।
আর একটু হলেই মিনুর পায়ের উপর দিয়ে চলে যেত সাইকেলের চাকা।
মিনু লালুর দিকে তাকিয়ে বলল, ভাগ্যিস তুই ডাকলি। নইলে তো এক্ষুনি পায়ের উপর দিয়েই চালিয়ে চলে যেত সাইকেলটা।
মিনুর কথায় লালু কেবল লেজ নেড়ে নেড়ে সম্মতি জানাল।
তবে লালুকে সঙ্গ পেয়ে মনে মনে একটু সাহসই পেল মিনু।
বুড়ো শিবতলা পেরিয়ে লাল কাঁকুরে পথ। ছোট ছোট পায়ে সোজা রাস্তায় বেশ কিচ্ছুক্ষণ হাঁটার পর কটা বাড়ি দেখতে পেয়ে মিনু ভাবল এটা নিশ্চয় বাজার হবে।
হ্যাঁ ঠিক! বাজারই তো। সেবার জ্বর হতে হারু কাকা সাইকেলে চাপিয়ে এখানেই ডাক্তার খানা এনেছিল মিনুকে।
ডাক্তার খানার পাশেই গোবিন্দ দাদুর দোকান না!
ঠিক চিনেছে মিনু।
মিনু ঝুপ করে গোবিন্দ দাদুর দোকানে ঢুকে  জিজ্ঞেস করল,
দাদু পুতুলের জামা আছে।
গোবিন্দ দাদু মিনুকে দেখে একবার কপাল কুঁচকে  বলল, আছে।
 মিনু আড় চোখে গোবিন্দ দাদুর কপাল কোচকানো লক্ষ্য করে, তাড়াতাড়ি গোবিন্দ দাদুর হাত থেকে পুতুলের জামাটা নিয়ে ব্যাগ থেকে পয়সা বের করে দাদুকে দিল। তারপর ছাতাটা খুলে মাথায় দিয়ে টুক করে পথে নেমে পড়ল সে। 
মিনু যখন বুড়ো শিবতলা পৌঁছল তখন রোদের ঝাঁজ খানিক  কমে গেছে। 
ছাতার আড়াল থেকেই দেখতে পেল  শিব মন্দিরে নবা কাকা বসে আছে ।
নবা কাকা জিজ্ঞেস করল ছাতা মাথায় কোথায় চললি মিনু?
 মিনু বলল, বাড়ি।
 ঘরের দরজা খুলে এক ছুটে দোতলার ঘরে গিয়ে দিদির শেলফে ছাতাটা রেখে দিল মিনু। 
এবার একছুটে দোতলা থেকে নেমে তিন্নি পুতুলের জামাটা রাখল নিজের বইয়ের কুলুঙ্গিটায়।
তারপর দোরে হাতল দেওয়া চেয়ারটায় ঝুপ করে বসে ক্লান্তিতে কখন যে দু চোখের পাতা বুজে গেছে। ঘুম ভাঙলো মায়ের ডাকে।
সুচেতা দোরে পা দিয়েই  ঘুমন্ত মিনুকে দেখে বলল, এত গরমে ঘরের ভেতরে শোওনি  কেন মিনু?
মিনু তাড়াতাড়ি চেয়ারটায় সোজা হয়ে বসে বলল, এমনি।
মা বলল ঘেমে নেয়ে একশা হয়ে গেছো। যাও ঘর দিকে শোও গে। রোদ পড়লে তবে খেলতে যেও।

রাজদীপ দাস
অষ্টম শ্রেণি, দরাপপুর হাইস্কুল, চাকদা


হাসি ছড়াও 
রূপা চক্রবর্ত্তী    

 ঘুমিয়ে পোড়ো তাড়াতাড়ি 
 চব্বিশ তারিখ রাতে ,
 ডিসেম্বরের পঁচিশ এলে 
 নাচবে খুশির সাথে। 
 
 বারান্দাতে ঝুলিয়ে মোজা 
 উপহারের আশে ---
 ঘুমিয়ে থাকো সান্তা মনে 
 চুপটি মায়ের পাশে। 

 সকাল হলেই দৌড়ে গিয়ে 
 খুলবে মোজা যখন ---
 চোখে মুখে হাসি তোমার 
 ঝরবে জানি তখন। 

 মনের কথা কেমন করে 
 সান্তা নিলো জেনে ?
 পছন্দসই সবক'টি সে 
 দিলো যে ঠিক এনে !

 সান্তা জেনো রোজই তোমার 
 চারপাশেতেই থাকে ,
 ভালোবেসে সবসময়ে 
 আগলে তোমায় রাখে। 

 বড় হয়ে তুমিও চাই 
 সবার খুশি হয়ে ---
 সবার মুখে হাসি ছড়াও 
 সবার মনে রয়ে। 


স্নেহা দাস
অষ্টম শ্রেণী, জওহর নবোদয় বিদ্যালয়, পশ্চিম মেদিনীপুর


ডিসেম্বরের শীত
শতভিষা মিশ্র
নবম শ্রেণী, জ্ঞানদীপ বিদ্যাপীঠ


ভোরের আকাশ শ্বেত চাদরে
 শিশির ভেজা ঘাস
ডিসেম্বরের শীতের আমেজ
বনভোজনের মাস।। 
হাড় হিম শীত দিয়েছে হানা
কম্বলে জুবুথুবু। 
যতই চাপাও কোট - সোয়েটার
শীতে সবাই কাবু।। 
সোনা রোদের পরশ মাখা 
শীতের দুপুরবেলা
কুমির - ডাঙা, সীতাহরণ
হরেক রকম খেলা।। 
উঠোন জুড়ে মাদুর পেতে
রোদ পোহানোর দিন
মুদিত নয়ন ছুঁয়ে যায় 
কত স্বপ্ন রঙিন।। 
দুপুরগুলো ডুবে থাকি
ফেলুদা ব্যোমকেশে-
কাকাবাবু- টেনি- ঘনাদা
আর হোমস্ সবার শেষে।। 
বাগান ঢাকা হলুদ গাঁদা য়
ডালিয়া, সূর্যমুখী
ঝিলের ধারে গান গেয়ে যায় 
কত পরিযায়ী পাখি।। 
শীত মানেই কবজি ডুবিয়ে
জমিয়ে চড়ুইভাতি
ভাত-মাংস চেটেপুটে
খায় দাদু - নাতি।। 
টাঙিয়ে মোজা আনন্দেতে
আশায় থাকে শিশু
সান্তা কখন ঝুলি থেকে তার
দিয়ে যাবে ঠিক কিছু।। 
শেষ বেলাতে চোখের জলে
ভেসে স্মৃতির ভেলায় 
নববর্ষের আগমনী
ডিসেম্বরের বিদায়।।

বড়োদিনের কথা
বানীয়া সাহা

এমন শীতের মরশুমে কেমন আছো ছোট্ট বন্ধুরা? শীত তো চলেই এলো। আর এই ঋতুতেই তো অনেকখানি আনন্দ জড়িয়ে থাকে ঘুরতে যাওয়া, পিকনিক এইসবকে ঘিরে। এই ডিসেম্বর মাসটা এলেই সবার আগে আমার যে দিনটার কথা মনে আসে তা হলো "বড়োদিন"। আর বড়োদিন মানেই Christmas. 
কেক, চকলেট কিংবা বাড়িতে বিভিন্ন লাইট, সোনালি ঘন্টা, রঙিন রঙিন বল আর ঝিকমিক তারা দিয়ে সাজানো Christmas Tree. কেউ কেউ তো আবার জানালাতে মোজা ঝুলিয়ে রেখে অপেক্ষা করে কখন সান্টাদাদু পছন্দের উপহারটা দিয়ে যাবে! সব মিলিয়ে আমার কাছে দারুন একটা আনন্দের দিন পঁচিশে ডিসেম্বর। সত্যি কথা বলতে আমি যখন ছোট্ট ছিলাম তখন আমিও বিশ্বাস করতাম যে সান্টাদাদু এসে আমার বালিশের পাশে উপহার রেখে যাবে। জানো বন্ধুরা সেদিন যেই আমি সকালবেলা ঘুম থেকে উঠতাম তখন দেখতাম বালিশের পাশে কিছু না কিছু একটা উপহার রাখা থাকত। আমার আনন্দ তখন দেখে কে! পরে বুঝেছিলাম আমি যেই লাল কোট পড়া, মাথায় লাল টুপি দেওয়া, সাদা পাকা লম্বা লম্বা দাড়িওয়ালা গলুমলু সান্টাদাদুর কথা ভাবতাম এ তিনি নন এই সান্টা তো লম্বা, দাড়ি কামানো, গায়ে একটা সাদামাটা শার্ট পড়া, মানুষ। হ্যাঁ, এই মানুষটা ছিল আমার বাবা।
বাবার কাছে পরে অবশ্য লাল কোট পড়া গলুমলু সান্টাদাদুর গল্প শুনেছিলাম। আচ্ছা বন্ধুরা, তোমরা কি জানো এই সান্টাক্লজ আসলে কে ছিলেন? কেন এই দিনটি এলেই আমরা অনেকেই প্রিয় মানুষদের উপহার দিয়ে থাকি কিংবা কেনই বা এই ২৫ শে ডিসেম্বর দিনটিকে বড়োদিন বলা হয়?
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী এশিয়া মাইনরের একটি স্থান Myra তে খুব ধনী একজন ব্যাক্তি ছিলেন। তার নাম ছিল সেন্ট নিকোলাস। তিনি জন্ম গ্রহন করেছিলেন ১৫ই মার্চ, ২৭০ খ্রিস্টাব্দে এবং মারা গেছিলেন ৬ই ডিসেম্বর, ৩৪৩ খ্রিস্টাব্দে। তাঁর বাবা ছিলেন থিওফেনিস( Theophanes) এবং মা ছিলেন নোন্না(Nonna). কিন্তু ছোটোতেই নিকোলাস তাঁর বাবা মা কে হারিয়েছেন, তারপর থেকে তিনি তাঁর কাকার কাছেই থাকতেন। তাঁর কাকা ছিলেন Myra শহরের গ্রিক অর্থোডক্স চার্চের বিশপ। ছোটো থেকেই নিকোলাসের, প্রভু যীশুর প্রতি ছিল এক গভীর ভালোবাসা। 
শোনা যায়, নিকোলাস অত্যন্ত দয়ালু মানুষ ছিলেন। একবার তিনি জানতে পারেন যে, একজন গরীব মানুষের তিন মেয়ে রয়েছে কিন্তু তাদের বিয়ের জন্য কোনো টাকাপয়সা তার কাছে ছিল না। তখন নিকোলাস সেই ব্যক্তিটিকে সাহায্য করার জন্য একদিন রাতে লোকটির বাড়ির ছাদে লাগানো চিমনির কাছে যান এবং সেখান থেকে টাকাপয়সা ও সোনাদানা পূর্ণ একটা ব্যাগ ব্যক্তিটির বাড়ির মধ্যে ফেলে দেন। এইসময় ব্যক্তিটি তার মোজা শুকোনোর জন্য সেটাকে চিমনির কাছে রেখেছিলেন এবং নিকোলাসের দেওয়া সেই সোনাদানা মোজার ভিতরে চলে আসে। ব্যক্তিটি সেগুলো পেয়ে অনেক খুশি হন। প্রায় দুই তিনবার এই একই ঘটনা ঘটে। শেষবারে ব্যক্তিটি  সাহায্যকারী মানুষটিকে দেখার জন্য রাতে জেগে থাকেন এবং জানতে পারেন যে এই সাহায্যকারী মানুষটি হলো সেন্ট নিকোলাস। নিকোলাস ব্যক্তিটিকে এই বিষয়টি কাউকে জানাতে বারণ করেন। কিন্তু খবরটি চাপা থাকে না। নিকোলাসের এই দানের খবর ক্রমশ জনপ্রিয় হতে থাকে। 
রেনেসাঁ পর্যন্ত ইউরোপে দারুণ জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলেন সেন্ট নিকোলাস। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আঠেরেশো শতকের শেষ দিকে তিনি বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করতে থাকেন। 
ডাচ ভাষায় সেন্ট নিকোলাসকে "সিন্টার ক্লাস" নামে ডাকা হত। এটি ছিল সেন্ট নিকোলাসের সংক্ষিপ্ত রূপ। মনে করা হয় এই "সিন্টার ক্লজ" থেকেই "সান্টাক্লজ" নামটির উৎপত্তি হয়েছে।
জানো তো বন্ধুরা, আমি যেই গলুমলু, লাল কোট গায়ে, চশমা চোখে, লম্বা দাড়িওয়ালা সান্টার কথা ভাবতাম সেই গলুমলু সান্টার এই রূপটা কিন্তু এসেছে একটা কবিতা থেকে। বিখ্যাত কবি ক্লেমেট ক্লার্ক মুর (Clement Clarke Moore) ১৮২৩ সালে "A visit from St.Nicholas" নামে একটি কবিতা লিখেছিলেন। 
কবিতাটার কিছু কিছু লাইন তোমাদের জন্য তুলে দিলাম-
".......When out on the lawn there arose such a clatter,
I sprang from the bed to see what was the matter.
.......But a miniature sleigh, and eight tiny rein-deer,
With a little old driver, so lively and quick,
I knew in a moment it must be St.Nick.
More rapid than eagles his coursers they came,
And he whistled, and shouted, and called them by name;
........When they meet with an obstacle, mount to the sky;
So up the house-top the coursers they few,
With the sleigh full of Toys and St. Nicholas too.
.....He was dressed all in fur, from his head to his foot,
And his clothes were all tarnished with ashes and soot,
A bundle of Toys he had flung on his back,
And he looked like a pedlar just opening his pack,
His eyes- how they twinkled! his dimples how merry!
His cheeks were like roses, his nose like a cherry!
His droll little mouth was drawn up like a bow,
And the beard of his chin was as white as the snow;
.......He had a broad face and a little round belly,
That shook when he laughed like a bowlfull of jelly........."
পরবর্তীতে ১৮৬২ সালে আমেরিকার বিখ্যাত কার্টুনিস্ট থমাস নাস্ট এই কবিতাটিকে অবলম্বন করে সেন্ট নিকোলাসের একটা মজাদার ছবি এঁকেছিলেন। সেই ছবিতে সেন্ট নিকোলাস মুখে ছিল হাসি, পরনে ছিল লাল রঙের রাতের পোশাক। কোলে ছিল এক ছোট্ট শিশু আর প্রচুর উপহার আর পিঠে ছিল উপহারের থলি।
এই ছবি থেকেই  দয়ালু বিশপ, শিশুদের বন্ধু "সেন্ট নিকোলাস" হয়ে উঠেছিল আমাদের "সান্টাক্লজ"।
আমরা সকলেই জানি "বড়দিন" একটি খ্রিস্টীয় ধর্মানুষ্ঠান। ইংরেজি "Christmas" শব্দটির ব্যুৎপত্তি ঘটে "Christemasse" অথবা "Cristes masse" থেকে। যার অর্থ হল "খ্রিস্টের মিস(উৎসব)"। "Cristes" শব্দটি আবার "Christos"এবং "Masse" শব্দটি লাতিন শব্দ "Missa" থেকে এসেছে, যার অর্থ হল 'পবিত্র উৎসব'। প্রাচীন গ্রিক ভাষায় "X" হল "Christ" বা "খ্রিস্ট" শব্দের প্রথম অক্ষর। ষোড়শ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে এই অক্ষরটি খ্রিস্ট শব্দের সংক্ষিপ্ত নাম হিসেবে ব্যবহৃত হতে শুরু করে। এইজন্যই খ্রিস্টমাস কে সংক্ষেপে "এক্সমাস" বলা হয়ে থাকে।
যীশু খ্রিস্টের জন্মদিন উপলক্ষে ২৫ শে ডিসেম্বর এই উৎসব পালন করা হয়। কিন্তু এই তারিখটাতেই যিশু জন্মেছিলেন কিনা এই নিয়ে অনেক দ্বিধা রয়েছে। খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী মানুষরা মনে করেন যে আদি বাইবেলে মেরির গর্ভে তাঁদের মসিহা বা ত্রাণকর্তার জন্ম হবে এমনটাই ভবিষ্যৎবাণী করা আছে, এবং দেখা যায় স্বামী জোসেফের সাহচর্যে  মেরি বেথেলহেম শহরে যিশুর জন্ম দেন। কিন্তু এই তারিখটা ডিসেম্বরের ২৫ ই ছিল কিনা তা নিয়ে মতভেদে রয়ে গেছে। মনে করা হয় যে ৩৩৬ খ্রিস্টাব্দে খ্রিস্টান রোমান সম্রাট কনস্টেন্টাইনের আমলে ২৫ শে ডিসেম্বর দিনটিতে প্রথম যিশুর জন্মদিন পালন শুরু হয়। এর কয়েক বছর পর পোপ প্রথম জুলিয়াস এই দিনটাকেই সরকারিভাবে যিশুর জন্মদিন হিসেবে ঘোষণা করেন। খ্রিস্টানরা বিশ্বাস করেন যে এই তারিখের নয় মাস পূর্বে মেরির গর্ভে যিশু প্রবেশ করেন এবং সেই অনুযায়ী এই তারিখটিকে যিশুর জন্মতারিখ হিসেবে মনে করা হয়। এই দিনটিকে "বড়োদিন" বলার পিছনেও নানান ব্যাখ্যা রয়েছে। কিছু ধারণা অনুযায়ী ২৩ শে ডিসেম্বর থেকে দিন ক্রমশ বড়ো ও রাত ছোটো হতে থাকে, তাই যিশুর জন্মতারিখ অনুযায়ী ২৫ তারিখটাকেই "বড়োদিন" বলে মনে করা হয়। আবার কিছু ধারণা অনুযায়ী যিশু যেহেতু বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য এত বড়ো ধর্ম ও দর্শন দিয়ে গেছেন তাই এই দিনটিকে মর্যাদার দিক থেকে খ্রিষ্টানরা 'বড়োদিন' বলে মনে করেন।
যদিও সব দেশেই প্রায় ২৫ শে ডিসেম্বর ই বড়োদিন পালন করা হয় তবে রাশিয়া, মিশর, ইউক্রেনের মতো কয়েকটি ইস্টার্ন ন্যাশানাল চার্চ ৭ ই জানুয়ারী বড়োদিন পালন করে থাকে। কারণ এই সকল চার্চ জুলিয়ান ক্যালেন্ডার ব্যবহার করে থাকে। এই ক্যালেন্ডারের ২৫ শে ডিসেম্বর প্রামাণ্য জর্জিয়ান ক্যালেন্ডারের ৭ ই জানুয়ারি তারিখে পড়ে।
বড়োদিন পালনের প্রসঙ্গে উঠে আসে "ক্রিসমাস ট্রি" এর কথাও। কিছু ধারণা অনুযায়ী "ক্রিসমাস ট্রি" র শুরুটা হয় উত্তর ইউরোপে হাজার হাজার বছর আগে "ফির" নামক একটি গাছের সাজসজ্জা থেকে। আবার কিছু ধারণা অনুযায়ী উত্তর ইউরোপে মাতৃকাদেবীর মন্দিরে যে সারি সারি হয়ে পাইন গাছ থাকতো সেখান থেকেই নাকি "ক্রিসমাস ট্রি" র ধারনা জন্মেছিল।
মনে করা হয় যে, ক্রিসমাস ট্রি সৌভাগ্য ও সমৃদ্ধির প্রতীক। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী এই ট্রি ঘরে রাখলে নাকি নেগেটিভ এনার্জি দূর হয়ে যায়।
আর এই ক্রিসমাস ট্রি সাজানো হয়ে থাকে বিভিন্ন জিনিস দিয়ে। তারমধ্যে একটি হলো "ক্রিসমাস বেল"। খ্রিষ্টানরা বিশ্বাস করেন যে এই বেলের মিষ্টি আওয়াজও নাকি সমস্ত নেগেটিভ এনার্জিকে দূর করে দেয়।  আর বড়োদিনের কেক! সেটা ছাড়া তো ক্রিসমাস ই অসম্পূর্ণ। মনে করা হয় যে, কেকের মিষ্টি স্বাদ একে অন্যের সাথে ভাগ করে নিলে নাকি মনের যাবতীয় দুঃখ বেদনা দূর হয়ে যায়।
আর এইদিনে উপহার দেওয়ার প্রবণতাও সেন্ট নিকোলাসের সেই গল্প অনুসারে চলেই আসছে।
বেশির ভাগ দেশেই শীতকালে ক্রিসমাস পালন করা হয়ে থাকে। কিন্তু ছোট্ট বন্ধুরা তোমরা কি জানো এমন কিছু জায়গা আছে যেখানে গ্রীষ্মকালে ক্রিসমাস পালন করা হয়!
সাধারণত উত্তরগোলার্ধে শীতকাল হলে দক্ষিণগোলার্ধে গ্রীষ্মকাল হয় আবার দক্ষিণগোলার্ধে যখন শীতকাল হয় তখন উত্তরগোলার্ধে হয় গ্রীষ্মকাল। আর এই পার্থক্যের কারণেই কিছু কিছু দেশে গ্রীষ্মকালে ক্রিসমাস পালন করা হয়। উত্তরগোলার্ধে ডিসেম্বর মাসে শীতকাল চলে আর অপরদিকে দক্ষিণগোলার্ধে ডিসেম্বরে চলে তীব্র গরমকাল। এই ভৌগোলিক পরিবর্তনের কারণেই পৃথিবীর একপ্রান্তে গ্রীষ্মকাল ও অন্যপ্রান্তে শীতকাল। আর এই কারণেই কোনো কোনো দেশে শীতকাল ও কোনো কোনো দেশে গরমকালে ক্রিসমাস পালন করা হয়। গ্রীষ্মকালে যে সব দেশে ক্রিসমাস পালন করা হয় তার মধ্যে আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
জানো বন্ধুরা শুনলে অবাক হবে, এমন কিছু দেশও আছে যেখানে ক্রিসমাস পালনই করা হয় না।
যেমন- সোমালিয়া, এখানে শুধু বড়োদিন নয় নতুন বছর উপলক্ষেও কোনো অনুষ্ঠান পালন করা হয় না। সৌদি আরবেও ইসলাম বহির্ভুত সব রকম উৎসব উদযাপনের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তাই ২৫ শে ডিসেম্বরও সেখানে কোনো অনুষ্ঠান হয়না।
আবার উত্তর কোরিয়াতেও যিশুর জন্মদিন উপলক্ষে কোনও ছুটি দেওয়া হয় না। তারা শুধু রাষ্ট্রনায়কের জন্মদিন উপলক্ষেই ছুটি পান। সেখানে বড়োদিন পালন করা যায়না।
ভুটানের বেশিরভাগ মানুষই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী।এখানে খ্রিস্টান ধর্মের মানুষ এক শতাংশেরও কম। তাই এখানেও বড়োদিন পালন করা হয় না।
তাজিকিস্তানেও এখন আর বড়দিন পালন করা হয় না। বড়দিন উপলক্ষে উপহার বিনিময় কিংবা ক্রিসমাস ট্রি সাজানো নিষিদ্ধ। ২০১৪ সাল থেকে নিষিদ্ধ হয়েছে সান্টাক্লজও।
এছাড়াও যেসমস্ত দেশে ক্রিসমাস পালন করা হয় না তার মধ্যে উজবেকিস্তান, লিবিয়া, কম্বোডিয়া, ইজরায়েল, ইরান প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
আচ্ছা ছোট্ট সোনারা, বড়োদিন নিয়ে আলোচনা তো হলো, এবার বলো তো এই দিনটা তোমরা সেলিব্রেশন করছো তো? কেমনভাবে উদযাপন করবে দিনটাকে আমাকে জানিও কিন্তু। তোমাদের জন্য রইলো ক্রিসমাসের অসংখ্য শুভেচ্ছা। পরেরবার নতুন কোনো বিষয় নিয়ে হাজির হবো তোমাদের কাছে। বড়োদিনের এই সংক্ষিপ্ত আলোচনা তোমাদের কেমন লাগল জানাতে ভুলে যেও না কিন্তু !


ছোটবেলা বিশেষ সংখ্যা ১১২: পাঠ প্রতিক্রিয়া
 
বন্দনা সেনগুপ্ত

ছোটবেলার সঙ্গে আমার অনেক দিনের পরিচয়। প্রত্যেকটি না হলেও অনেক সংখ্যাই পড়েছি আর সবগুলিই ভালো লেগেছে। তবুও তার মধ্যে এই সংখ্যাটি বেশি করে মন ছুঁয়ে গেছে। কেন? বলি।

প্রথমেই বলি তপন রায় চৌধুরীর লেখা "পুপুনের সঙ্গে কিছুক্ষন" লেখাটি পড়ে কেন জানি না চোখটা ঝাপসা হয়ে এল। বেশ তো পড়ছিলাম ওর নানান কান্ড কারখানার কথা আর মনে পড়ে যাচ্ছিল আমার ছেলে আর তার বন্ধুদের ছোটবেলার নানান দুস্টু মিষ্টি গল্প। তার নাচ, বিশেষ ভালোবাসার গান, টিভি দেখিয়ে খাওয়ানো ইত্যাদি সব বাস্তব বিবরণ যেন আমাকে আমার জীবনের ফেলে আসা দিনগুলির কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিল। পুপুনের বিস্কুট ভাঙার কথায় মনে পড়ল একটি বাচ্চার কথা সে একটি মিষ্টিকে কুচি কুচি করে কেটে তারপর বলেছিল জুড়ে দাও। সেটা ফেলতেও রাজি না, অন্য গোটা মিষ্টিও চাই না, ওইটাই জুড়ে দিতে হবে। সে যাক, কিন্তু যখন পুপুন তার বাবার হাত ধরে রওনা হল, তখন তার সাথে সাথে আমারও মন খারাপ হয়ে গেল। জেঠু হয়তো আশা করেছিলেন পুপুন আরো কিছুক্ষন ওঁর সাথে থাকবে। কিন্তু, শেষবেলায় তো পুপুন ওঁর দিকে তাকাতেও চাইল না। আর, চাইবেই বা কি করে বলো?  ও কি আর নিজেকে বোঝে? স্বপ্ন জগতে থেকে ওর মনে হয়েছিল যে বুইয়ের সাথে থাকতে ওর খুব ভাল লাগবে। কিন্তু, নিজের চেনা ঘর, মা, বাবা, সবাইকে ছেড়ে কি আর থাকা যায়?

তৃষ্ণা বসাকের লেখা ধারাবাহিক আমাদের এক অন্য সময়ে নিয়ে যায়। এই লেখায় উঠে আসছে সেই সময়ের সমাজচিত্র এবং ভাষা, যখন মেয়েরা অবহেলিত, পড়াশুনা করা বারণ, সতীদাহ প্রথা তখনও পূর্ণ মাত্রায় চলছে। তখনের সেই সময়ে জয়াবতী বদ্যি হয়েছে। সে চিকিৎসা করতে শিখেছে। পালকি করে সে চলেছে। রাস্তায় বিভিন্ন গ্রাম পড়ছে। প্রয়োজনে সে চিকিৎসা করেছে। বাঁচিয়ে আনা হয়েছে পেরজাপতিকে। কত ভালোবাসা তার আর তার সইদের মধ্যে।

ছোট্ট শৌর্য আমার মন কেড়ে নিয়েছে। কি মিষ্টি একটা ছড়া লিখেছে। একদম অন্যরকম।

রাইলী সেনগুপ্তর 'আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস' অত্যন্ত তথ্যপূর্ণ একটি রচনা। আমি নিজেই এত কথা জানতাম না। মলয় সরকারের পাঠ প্রতিক্রিয়া এক স্বচ্ছন্দ আলোচনা। 

আর, এই পত্রিকা বরাবর সেজে ওঠে নানা জনের আঁকায়। তাদের কেউ বড়, তো কেউ আবার খুবই ছোট। কিন্তু, তাদের আঁকা তাদের জাত চিনিয়ে দেয়। সুদীপ্তার আঁকার তো কথাই নেই, তবে তুহিন, আদিত্য আর অনুভবের আঁকাও কিন্তু আমার খুব ভালো লেগেছে।

মৌসুমী ঘোষের লেখা সম্পাদকীয় এই পত্রিকাটিকে বরাবরই এক অন্য মাত্রা দেয়। এই পত্রিকায় কোন সূচিপত্র থাকে না। মৌসুমী সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয় প্রত্যেকটি লেখা, প্রচ্ছদ চিত্র, সেই মাসের বা ঋতুর বৈশিষ্ট্য ইত্যাদির সম্বন্ধে। যেমন এবারে এসেছে হেমন্ত ঋতু ও নবান্নের কথা। এই সম্পাদকীয় একটি গল্পের মতোই পড়ে ফেলা যায়।
 
পেজে লাইক দিন👇

Post a Comment

1 Comments

  1. পুরোটাই একবারে পড়ে ফেললাম

    ReplyDelete