জ্বলদর্চি

রম্য কবিতা, পর্ব-১৩ /তথাগত বন্দ্যোপাধ্যায়

রম্য কবিতা, পর্ব-১৩ 
তথাগত বন্দ্যোপাধ্যায়


বিমান-দুর্ঘটনা

সমুদ্রতট থেকে তিন কিমি ওপরে,
কিউমুলোনিম্বাস মেঘেদের টোপরে।
এ মেঘের নিয়ে কবিতাদের জন্ম হয়,
নিংরালে জল দেবে কিনা ভেবে তন্ময়!
কি ভালো যে হতো যদি ঠেলে-ঠুলে গোটাছয়
যেখানে গরম বেশি সে আকাশে দেওয়া হয়।
ছোটোখাটো ছুটি পেলে বাইপ্লেন উড়িয়ে,
আকাশেতে এভাবেই বেলা যায় ফুরিয়ে।
ঘুরে-টুরে, ভেবে-টেবে পেট করে চুঁইচুঁই
ট্যাকোমিটারের কাঁটা তিনহাজার ছুঁইছুঁই।
তাড়াতাড়ি নেমে ভাবি যেই খাব লাচ্ছা,
প্রপেলারে পা গলায় শকুনির বাচ্চা।
আ মরণ! কোত্থেকে? বলা নেই কওয়া নেই!
আত্মহত্যা পাপ, তা কি তোর জানা নেই?
ওরে ক্ষ্যাপা, সরে যারে মরবি না মারবি?
যম এলে ও পোড়ামুখ লুকোতে কি পারবি?
গতি হ্রাস পেয়ে ‘স্টল-গতি’ থেকে এত কম!
সাধের বিমানে বুঝি আর নেই সংযম।
বাপ্‌ আমার, ঝাঁপ্‌ মার, প্যারাশ্যুট খুলে নে,
বেঁচে ভাবি এ কথা কি শ্রোতারা নেবে মেনে?



পেসমেকার বিভ্রাট

বুকে বসা কৃত্রিম-ছন্দ-নিয়ামকের -
কৃপায় বেঁচে আগামী বিপদ পাইনি টের।
পাঠাতো দ্রুত হৃদয়ে তা তড়িৎস্পন্দন,
যদি হতো হৃদগতি শূন্য বা মন্দন ।
তালে তাল মিলছিলো, টলমল হইনি,
যদিও পাহাড় কোনও কাঁধে রেখে বইনি।
হঠাৎই আবার শুরু হল যেন গোলমাল,
মাথা ঘুরে প্রায়শই হয়ে পড়ি বেসামাল।
রক্ত, পিত্ত, ঘিলু, পেট, মল, মূত্র -
পরীক্ষা করে কিছু মিললোনা সূত্র।
ফিরেছে অনিয়মিত-স্পন্দন দুর্দিন,
মাথা ঘোরে, জ্ঞান ওড়ে, বুক করে চিন্‌চিন্‌ -
বুঝে, খুঁজে আনি নিশ্চায়ক সু-পত্র,
ছন্দ-নিয়ামকের নাড়ি-নক্ষত্র।
বুকে ঢুকে ডাক্তারে ঘটেছে যা বললো -
তা শুনে না হয় ফের হৃদবৈকল্য।
তড়িৎকোষটা তা’র বোঝা গেলো রুগ্ন,
তাইতো কেমন যেন হয়ে গেছি শুকনো।
হেসেখেলে চোদ্দটা বছর যে নিয়ামক –
চলবে বলেছিলেন হৃদয়-চিকিৎসক!
পাঁচ বছরেই তার কার্যকারিতা শেষ!
চাইছি কৈফিয়ৎ, বর্ণনা সবিশেষ।
তড়িৎ-ধারক কোষে ভেঙে-ফুটে যাচ্ছে,
নাকি বিক্রেতা কমা ব্যাটারি লাগাচ্ছে!
নাকি কারো ব্যবহৃত পুরনো তড়িৎকোষ,
ঘষে-মেজে গছিয়ে সে গুছিয়েছে সন্তোষ!
অতো তত্ত্ব আমরা রুগীরা কি বুঝবো?
বোঝার আগেই মরে গেলে কাকে খুঁজবো?
বিপদসীমায় পৌঁছানোর আগেই ক্ষয়,
সতর্কবাণী পাওয়া গেলে খুব ভালো হয় ।
অকালিক-ক্ষয়িত-তড়িৎকোষ পাল্টে,
দেশী বিক্রেতা এলো রাগে মধু ঢালতে।
যে বিদেশী নির্মাতা বানায় তড়িৎকোষ,
প্রশ্ন করাতে তাকে ফেরৎ পাঠায় দোষ -
“তড়িৎকোষের আয়ু চিকিৎসা বিভাগে,
যাচাই করেনি কেনো ভারতেই তা আগে?
নির্দেশিকা ও তথ্যপঞ্জি কি ওভাবে,
পশ্চিমা দেশেরা চামচে করে খাওয়াবে!”
নির্মাতা, বিক্রেতা, দালাল না ডাক্তার,
এমন ঘৃণ্য দুষ্কর্মের দোষ কার?
সেবকে রুগীর যদি না করে তোয়াক্কা,
যেকোনো মুহূর্তেই পেয়ে যাবো অক্কা।
“এখন দিয়েছো যেটা নতুনই না জালি ফের!”
শুধিয়ে ভাবি কতোনা লোকেই শিকার এর!



কষ্ট কোথায় রাখি

অন্যকে দোষারোপ করেও তো কমেনি,
বিষণ্ণতারা যতো এখনো যে দমেনি!
গত বছরেতে পাওয়া ব্যথা আজো স্পষ্ট,
জমে তায় প্রতিদিন নব নব কষ্ট।
স্মৃতিভাণ্ডারে ঢুকে কেউ কি বেরোয়না?
কোনও সুখস্মৃতিই কি তাড়স পেরোয়না!
সারা ঘর জুড়ে দেখো অপমান, অভিমান,
চোখে, মুখে, তলপেটে কষ্ট অধীয়মান।
মনে ব্যথা, দেহে ব্যথা, গৃহে ব্যথা ভর্তি,
কোথায় রাখবো ব্যথা এর পরবর্তী?
জানিও তোমার কাছে ফাঁকা স্থান থাকলে,
আমৃত্যু কিছু ব্যথা তুমি জমা রাখলে-
অনেক হালকা হবো, উড়ে তবু যাব না,
খানিক সুখের ঘোরে বেশি চিল্লাব না।
‘ব্যথা না কমার ব্যথা’- চিন্তার খুবই এ,
সুখ অথৈ, এলো কই? সবকিছু ডুবিয়ে।
 
পেজে লাইক দিন👇


Post a Comment

0 Comments