জ্বলদর্চি

গুচ্ছ কবিতা / বাসুদেব গুপ্ত

গুচ্ছ কবিতা 
বাসুদেব গুপ্ত


শীত

কমলালেবুরা ফুটপাথে বসে সারসার শিশু
যেন পিকনিক করতে এল কমলা রঙের জামা পরে।
নেড়িদের গায়ে নেই জামা, সারারাত কাঁদে, 
ফ্ল্যটের নিবিড়ে নাচে নীল, উষ্ণতা বদল করে 
সফল শরীর, গ্লাসে দোলে গন্ডোলায় আইরিশ ক্রীম
কুকুর ও কিছু কিছু ভিখিরীর হাজার বিএচকে ফুটপাথে…
শীত।
টিকটক বেড়ালের মত গুঁড়ি মেরে আসে রোদ, কখন পালায়
কথা ঝরে টিভি থেকে, রাস্তায় হেঁটে যায়
অন্যমনস্ক যুবাযুবী বালক বালিকা ঘাড় নীচু মোবাইল ধরে।
শীত এসে ঝিমোয়  সিটি সেন্টারে নেশাখোর গ্রিজলির মত। 

যারা ধর্নায় বসে তারা জানে -
শীত গ্রীষ্ম বসন্ত বর্ষা শরতের সেই এক মানে।
মমি মানুষেরা তাড়াতাড়ি ঘরে ঢুকে যায় 
ঘটনার হাতছানি নিশিডাক সভয়ে এড়িয়ে 
এগরোল উপহার পেয়ে যায় নেতার প্রসাদে।
বুড়ো বুড়ো লোক কিছু কান চুলকোয় 
কোথাও কি ভেসে আসে মাঝরাতে লতার আলাপ 
আ যা রে…
রাতভোর পদ্য লেখে কবি বুড়ী চাঁদ শোনে ..
শীত।
সব দেখে রাখে, হিমযুগে হিসাব মেটাবে। 


ফেসবুকে এক তারার মত

একদিন অনেক সুদূরে চলে যাবো
জানি তুমি মাঝে মাঝে আনমনে ভাবো
যেমনটি রোজ এসে রোদ পড়ে 
যেমন রোদের গায়ে সারাবেলা হেলে থাকে ছায়া
তেমনিই যাবে দিন ?
দিন পাল্টাবে ।
তোমার থেকে অনেক অনেক দূরে ঠিক চলে যাব। 

জল তুলতে চোখের পাড়ে 
আসবে স্মৃতি মিছিল করে , 
বাতাস কিছু আগুন বয়ে 
ভোলাবে তার অভিনয়ে,
যেমন আসে ছৌএর মুখোঁশ 
রাজা রাণী ভূত রাক্ষস,
তেমনি তোমার রোদের গায়ে লতিয়ে উঠে ভয়
সন্ধে হলে বাড়িয়ে দেবে জিরাফ অবাক গলা 
বলবে তোমার দিন ফুরোল এখানে আর নয়। 
সেই কথাটাই আজকে তোমায় বলা। 

যেদিন যাবো অনেক দূরে ঘুড়ির মত ভেসে
হাতটি নেড়ে বিদায় দিও মিষ্টিমধুর হেসে। 
লগইন করো ইন্সট্রাগ্রামে অথবা ফেসবুকে
দেখবে আমি দিব্যি আছি খোশমেজাজে সুখে। 
মেসেজ করো ইচ্ছে মত লাগসই ইমোজি
লাগবে দেখো সুদুরে নয় তোমার সাথেই আছি। 


জ্বলদর্চি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন। 👇


জ্বলদর্চি তিরিশ পেরিয়ে... 
গ্যালারিতে নারীর শরীর

শরীর দেখেই কাব্য আসে  রসের ধারা কবির জিভে
মেকি লহর আঁকা ভুরু আবছায়া বদ্বীপে 
তাতেই তোমার চোখে ঝলক দুই পা টলোমলো 
অনেক তো দিন হল। 

পাইনা খুঁজে কাব্য ঘেঁটে ম্যাগনিফাইং গ্লাসে 
লম্পটরাজ শিল্পীবাবুর নয়নসোভন কাজে 
লোকের মাঝে বুক হাট করা নগ্ন অসহায়
বিক্রি করা শিল্পহাটে সেই নারীটির নাম।
প্রেম কেনা যায় ব্যলকনিতে মেলে না সম্মান। 

দিন বদলায় নুতন সাজে পুরনো মদ ঢেলে 
একই ফেরেব একই পীড়ন উন্নত বোতলে ,
এখনও সেই এনাটমি প্রতি বিজ্ঞাপনে 
সমঝিয়ে দেয় শরীর ছাড়া নেই তোমাদের মানে। 

অনেক তো দিন হলো। 
এবার যারা ইজেল জুড়ে সজল অপমানে
বেরিয়ে এসো দুহাত তুলে গ্যালারি কাঁপিয়ে 
ঘোমটা ফেলে বোরখা ছিঁড়ে প্রসাধনের কয়েদ খুলে
নাও ছিনিয়ে সব মানুষের প্রাপ্য অভিজ্ঞান
সব মানুষের জন্মাধিকার আত্ম সম্মান। 

নারী, ছাড়ো আর্ট গ্যালারি
খোঁজো তোমার বাড়ি। 


এইভাবে যায় ঘুঁটি

কিছুটা হাঁটা ক্ষুব্ধ পায়ে একা 
কিছুটা চলা  ভক্তিভীত মাছ
সময় করে সাগরবেলায় দেখা 
তলিয়ে যায় রম্য অভিলাষ। 

একটি আলোর বিন্দু যাচ্ছে ভেসে
একটি দীপ কে জ্বালিয়ে কবে
খুঁজতে তাকে একটি জীবন শেষে
জীবনটা শেষ খোঁজার গৌরবে। 

সকাল হলেই জ্বালিয়ে আকাাশ তাওয়া
কে সেঁকে ওই অসীম আলোর রুটি
কে নেড়ে যায় ক্লান্ত পাখায় হাওয়া 
ঘুরছে গ্রহ তার মেলেনা ছুটি। 

আমরা সবাই ইচ্ছে জাহাজ চড়ে
দূরবীনে চাই কমলে কামিনী 
কে টানে হাল কার হাত বাঁধা দাঁড়ে 
নীচের তলায় কে আছে দেখিনি। 

এইভাবে যায় নড়ে দাবায় ঘুঁটি
সবাই শেষে রাজাই হতে চাই
বড়ের দখল ভোটবাজারে লুটি
বুদ্ধিজীবি রাজার জামাই। 



সেদিন শীতের বেলা 

সেদিন ছিল আলোয় আকুল শীতের দুপুর বেলা
শিশির ভেজা চোখের পাতায় জলছবিতার মায়া 
আন্গুলে তার জটিল ভাষায় রঙীন মাছের খেলা 
আইন ভেঙে স্পর্শকাতর হৃদয় বেহায়া 

হঠাৎ কোন রহস্যময় পাখীর নিমেষ ডানায় 
ভাসিয়ে দিল সীমান্ত সব, ভাঙল খাঁচার শিক 
সেই কথাটা বলার ছিলো, বলাই হল না
রইলো ফাঁকা হাতের তালু, একাকী প্রান্তিক। 

কিছু কথা বলে নিলে হতো 
কিছু কথা বাকী থেকে যায়
ভেঙে গেলে কাঁচ সংসার
জোড়া যায় না পুরানো ছবি।

 এখন বাজে  স্বপ্ন ভেঙে রাতের টেলিফোন
এখন আমার ভয় করে না আর
যখন ছিলো, কেবলই ভয়, জড়িয়ে প্রাণপণ
এখন তারার চূর্ণ ঝরে রাতভরে  আমার। 

ঘুম নেই, চেয়ে দেখি অনন্ত আকাশে
না বলা কথার স্বরলিপি
নীহারিকা ছায়াপথে  সুর হয়ে ভাসে
চোখের পাতার মত তারা
হাসে আর কাঁপে মিটিমিটি।

Post a Comment

0 Comments