জ্বলদর্চি

বিস্মৃতপ্রায় কবি বিমলচন্দ্র ঘোষ /নির্মল বর্মন

বিস্মৃতপ্রায় কবি বিমলচন্দ্র ঘোষ

নির্মল বর্মন

কবি বিমলচন্দ্র ঘোষ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমি ও পরবর্তীকালে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির শোষণে দুঃখিত , কবি তাঁর কবিতায় সেই রূপকে  স্থান দিয়েছেন। তৎকালীন সময় ও সমাজের অবক্ষয়িত সভ্যতা সংস্কৃতির অবস্থাকে সুস্থতার সঙ্গে নক্শা চিত্র করেছেন। গীতিকার ও কবি বিমলচন্দ্র ঘোষ সাধারণ নির্যাতিত ও নিপীড়িত অত্যাচারিত মানুষের সুখ দুঃখের কাহিনী, কবিতায় লিপিবদ্ধ করেছেন।
'মেঘনা' , 'পটভূমি', 'মনীষা' ও "এষা' ইত্যাদি পত্রিকার সম্পাদকও ছিলেন।
১৯১০ সালে ১২ই ডিসেম্বর হাওড়া জেলার 'বালি'তে কবি বিমলচন্দ্র ঘোষ জন্মগ্রহণ করেন ও ২২অক্টোবর ১৯৮১শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। পিতার মৃত্যু ও স্বদেশ মন্ত্রে উজ্জীবিত হওয়ার ফলে বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ে ভালো করে পড়াশোনার সুযোগ পান না। গীতিকার হিসাবে বেশ কয়েকটি গান এখনো পর্যন্ত মানুষের কন্ঠে ঘুরে ফিরে আসে।
যেমন --"ঝড় উঠেছে বাউল বাতাস", "শোনো বন্ধু শোনো প্রাণহীন এক শহরের ইতিকথা" ও "উজ্জ্বল এক ঝাঁক পায়র" ইত্যাদি‌ ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ , মন্বন্তর ,দুর্ভিক্ষ ,জার্মানির ফ্যাসিবাদ , হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা ও দেশ বিভাগ প্রভৃতি ঘটনাবলী কবির হৃদয়কে নাড়া দিয়েছিল, তাঁর কাব্য গুলির মধ্যে ঘুরেফিরে এমনি এক ভাবনা প্রতিফলিত। কবি বিমলচন্দ্র ঘোষ প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ গুলি হল--' জীবন ও রাত্রি'(১৯৩৩), 'দক্ষিণায়ন' (১৯৪৩) 'উলুখড়'(১৯৪৩), 'ফতেয়া'(১৯৪৫), 'দ্বিপ্রাহর ও অন্যান্য কবিতা'(১৯৪৫), 'নানকিং'(১৯৪৮), 'ভুখা ভারত' (১৯৫১), 'বিশ্ব শান্তি'(১৯৫১),' 'সাবিত্রী'(১৯৫১),'সপ্তকান্ড রামায়ণ'(১৯৫১), 'কবিতা সংকলন', 'উদাত্ত ভারত' (১৯৫৬), 'রক্ত গোলাপ'(১৯৫৮), কবিতা সংকলন--' উত্তর আকাশে তারা' , কবিতা সংকলন 'গাঙ্গেয় সৈকত'(১৯৭০), ও 'চতুর্দশ ভুবন'(১৯৮২)।

জ্বলদর্চি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন। 👇


জ্বলদর্চি তিরিশ পেরিয়ে... 

কবি বিমলচন্দ্র ঘোষ নগর জীবনের সংকীর্ণতার বেড়াজালের মধ্যে থেকেও উজ্জ্বল ও উদার স্বপ্নময় জীবনের জল ছবি এঁকেছেন  এক 'ঝাঁক পায়রা' নামক কবিতায়--
"কালজয়ী পাখনার চঞ্চল প্রকাশে---
চৈতালি সূর্যের - থমথমে রৌদ্রে
জীবন্ত উল্লাসে উড়ছে 
পাঁচরঙা এক ঝাঁক পায়রা"
উদার আকাশে এক ঝাঁক পায়রা লীলায়িত ভঙ্গিতে প্রাণের স্পন্দনকে মেলে ধরেছে,ঠিক তেমনি তা বৈপরীত্যের মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন কবি এভাবে---
"সোনার প্রহর কাঁপে চঞ্চল পাখনায়
ছোট্টকালের ঘোরে প্রাণ তবু তন্ময়।
লীলায়িত বিষয়!
সৃষ্টির স্বাক্ষর এক ঝাঁক পায়রা"।
কবি বিমলচন্দ্র ঘোষের রোমান্টিক মন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে বিভোর হয়ে স্বপ্নময় ও মায়া-ময় পরিবেশ সৃষ্টি করে অসাধারণ নৈসর্গিক চরিত্রের উপস্থাপনে সুরম্য হয়ে উঠেছে "দুপুরবেলার চম্পূ " কবিতায়---
"আশেপাশে কত গাছপালা
কত ফল - ফুল কত লতা-পাতা,
বর্ষা তখন শেষ হয়েছে
মেঘরা হারিয়ে গেছে নিরুদ্দেশের পথে"!
কিংবা---
"লুটিয়ে পড়েছে দুপুরবেলার সূর্য,
পতির অনুপস্থিতিতে গোপনচারী উপপতির মতো
ভয়ে-- ভয়ে , সন্তর্পণে,
দুপুরবেলার বিজন আকাশ"।


কবি ঘোষের   - প্রেমের কবিতায়  স্বাতন্ত্র্য রূপ ধরা পড়ে। যখন প্রেম  মরীচিকা, সেই স্বীকারোক্তিতে প্রেমের কবিতার অনুষদে কবি বিষ্ণু দে র স্পষ্ট ভাবনা ফুটে ওঠে।
উদাহরণস্বরূপ ---
"অচেনার পালা শেষ হয়ে গেছে তুমি
আমার জীবনে এনেছো অঙ্গীকার,
পরিচিত ঝড়ে স্বপ্নের বনভূমি
সুচির নিয়মে ভেঙেছে বারংবার।
--++++----------------- ---+++------
তুমিই শেখালে প্রেম নয় মরীচিকা"

হিন্দু মুসলিম সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দ্বন্দ্ব যে দেশের উন্নতির প্রধান অন্তরায় সে কথা তিনি দ্বিধাহীন কণ্ঠে বারংবার উচ্চারণ করেছেন ‌। উচ্চারণ করেছেন সাম্রাজ্যবাদী সভ্যতার মুনাফালোভীর প্রতি ব্যঙ্গাস্ত্র।
ফ্যাসিবাদ বারবার ঘুরেফিরে সমাজকে কলুষিত করেছে , এইসব দিক থেকে  বিমলচন্দ্র ঘোষ ছিলেন দেশ , কাল , সময়  ও সমাজ সচেতন কবি।

ড.নির্মল বর্মন
জন্ম -০৩-০১-১৯৭৪, পেশা -অধ্যাপক।
প্রকাশিত বই
১. বাংলা লিপি ২.বাংলা কথা সাহিত্যের পরিপ্রেক্ষিত ৩.সুচিত্রা ভট্টাচার্যের উপন্যাসে সময় ও সমাজ ৪.বাংলা প্রবন্ধ সাহিত্যের প্রেক্ষিত ৫. সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের উপন্যাসে মানুষ ও জীবন ৬.প্রবন্ধের  তীর্থ- সঙ্গম ৭.এসেছি,অসময়ে ( কাব্যগ্ৰন্থ) ৮.একক নির্মল  ৯.অস্ফুট ব্যথা (কাব্য গ্ৰন্থ)যন্ত্রস্থ

Post a Comment

0 Comments