জ্বলদর্চি

দূরদেশের লোকগল্প – কানাডা (উত্তর আমেরিকা)খরগোশের খাবার-দাবার / চিন্ময় দাশ

দূরদেশের লোকগল্প – কানাডা (উত্তর আমেরিকা)
খরগোশের খাবার-দাবার

চিন্ময় দাশ
 
অনেক অনেক কাল আগের কথা। এক গ্রামে একবার ভারি উপদ্রব শুরু হল। এমনিতেই গ্রামে খাবার-দাবারের কোন অভাব নাই। বেশ শান্তিতেই বাস করে মানুষজন। ভারি সদ্ভাব সকলের মধ্যে।
হঠাৎই এক রাক্ষসের উদয় হোল। একা রাক্ষসে রক্ষা নাই। সাথে তার বুড়ি এক ডাইনি বউ। তাদের উৎপাতে বেঁচে থাকাই দায় হয়ে উঠল। 
দিনমানে তাদের ছায়াটুকুও দেখা যায় না। উদয় হয় রাত্তিরে। গোটা গ্রাম তখন ঘুমিয়ে কাদা। রাত নিঝুম। এর ওর ঘরে হানা দেয়। খাবার-দাবার যা কিছু মজুদ করা থাকে,মূহুর্তে সব সাবাড় করে, বা কেড়ে-কুড়ে নিয়ে, উধাও হয়ে যায়। 
বিপদ বাড়ল, মাঝে মাঝে ছোট ছোট বাচ্চারা উধাও হয়ে যেতে লাগল। লোকজনেরা এসে ধরে পড়ল গ্রামের মোড়লকে। কিছু একটা বিহিত করো তুমি।
কয়েকজন লেঠেল ছিল মোড়লের। তাদেরকে নামালো হোল। কিন্তু সন্ধানই পাওয়া গেল না রাক্ষসটার। পাওয়া যাবে কী করে? বনের একেবারে গভীর এলাকায়, পাহাড়। সে পাহাড়ের লুকানো এক গুহায় ডেরা করেছে রাক্ষস। দিনের বেলা ডেরা থেকে বেরোয়ই না তারা। তাছাড়া, রাক্ষসের বউটা আসলে ডাইনি। অনেক বিদ্যা জানে বুড়িটা। অদৃশ্য হয়ে চলাফেরা করতে পারে তারা। তাই বেরুলেও, চোখে দেখা যায় না তাদের। লেঠেলরা রাতে পাহারা দিচ্ছে। কিন্তু টের পাচ্ছে না কিছুতেই। 
একদিন রাতের বেলা। বন পাহাড় ভেসে যাচ্ছে ফিনফিনে জ্যোৎস্নায়। একটা খরগোশ বেরিয়েছে গর্ত থেকে। ঘুরতে ঘুরতে একটা পাহাড়ের কাছাকাছি এসে, হঠাৎই রাক্ষস আর তার বুড়িকে দেখতে পেয়ে গেল সে।
চোখে পড়ামাত্রই, সাঁত করে একটু আড়ালে সরে গেল খরগোশ। উঁকি দিয়ে নজর রাখতে লাগল দুজনের উপর। খানিক বাদে, রাক্ষস গুহার ভেতর ঢুকে পড়তেই, খরগোশকে আর পায় কে?
ভারি মজা হোল খরগোশের মনে। ভাবল, মোড়লের লেঠেলরা তো কাজের কাজ কিছুই করতে পারেনি। এবার নিজের কেরামতি দেখাতে পারব আমি। আর, যদি মাথা খাটিয়ে, কোন রকমে  নিকেশ করতে পারি দুটোকে, ভারি সুনাম হবে আমার। ধন্য ধন্য করবে সবাই।
সোজা মোড়লের বাড়ি গিয়ে হাজির হোল খরগোশ—তোমার লাঠিয়ালরা তো সব ঘোল খেয়ে গেল। আমি মারব রাক্ষস দুটোকে। হদিশ পেয়ে গেছি তাদের।
খানিকক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে খরগোশের দিকে চেয়ে রইল মোড়ল। তারপর এক হাসি। আর, হাসি বলে হসি। সে হাসিতে মোড়লের হলঘরটাই যেন ফেটে যায় আর কী! 
হাসির দমক থামলে, মোড়ল বলল—শোন হে সবাই। অতি বড় এক বীরপুরুষ এসেছেন। দৈত্য দুটোকে উনিই সাবাড় করে দেবেন। রাক্ষসটার আস্তানাও না কি উনি আবিষ্কার করে ফেলেছেন। আর আমাদের গাঁয়ের কোনরকম আপদ-বিপদের দুর্ভাবনা রইল না। 
এবার গোটা হলঘরটা ফেটে পড়ল হাসিতে। অপমানে কুঁকড়ে গেল খরগোশ। মোড়ল বলল—একটা ইঁদুর মারবার হিম্মত নাই পুঁচকে ব্যাটার। সে বড়াই করতে এসেছে, রাক্ষস মারবার বাহাদুরি দেখাতে। ভাগ এখান থেকে।

জ্বলদর্চি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন। 👇


জ্বলদর্চি তিরিশ পেরিয়ে... 
কোন জবাব না দিয়ে, বেরিয়ে এলো খরগোশ। এক বুড়ির কাছে গিয়ে হাজির হোল সে। বুড়ির কাছ থেকে তার পুরাণো কিছু পোষাক আর বাঁকাচোরা একটা লাঠি নিয়ে, সোজা রাক্ষসের গুহার কাছে গিয়ে হাজির হোল। 
রাত নামলে, এক ফালি চাঁদ উঠেছে আকাশে। রাক্ষসের ডাইনি বুড়ি বউ বেরিয়েই দেখতে পেয়ে গেল, একটা থুত্থুরে বুড়ি দঁডিয়ে আছে। ডাইনি বলল—আরে, কে তুমি? এখানে কেন?
আর যায় কোথায়? খরগোশ গলা কাঁপিয়ে বলে উঠল—চিনতে পারছিস না? আমি তোর সেই বুড়ি পিসি রে। আজ কত দিন খুঁজে খুঁজে, এখন তোকে পেলাম। 
এভাবে ইনিয়ে বিনিয়ে নানান কথা বলে, বেমালুম পটিয়ে ফেলল ডাইনিকে। চোখে দেখি না, চলাফেরাও করতে পারি না ভালো করে। এই লাঠিটুকুই যা ভরসা। এই সব বলে যেতে লাগল। 
ডাইনি বলল—থাক, থাক। অত কথা বলতে হবে না। ভেতরে চলো তুমি। বুড়িকে ভেতরে নিয়ে গিয়ে, একটা বিছানা দেখিয়ে শুইয়ে দিল। খরগোশ বলল—ভারি খিদে পেয়েছে রে। একটু কিছু মুখে দিতে পারলে, ভালো হয়। 
বড়সড় একটা শুকনো মাংস এনে দিল ডাইনি। খরগোশ বলল—আমার কি আর দাঁত আছে রে, মা? তুই একটা কুড়ুল দে বরং। কুটকুট করে একটু একটু করে কেটে খাবো।
রাক্ষস বলল—আমাদের কাজ আছে বাইরে। তবে,মাঝ রাত নাগাদ ফিরে আসবো। তুমি নিশ্চিন্তে ঘুমোও।
কুড়ুলটা বিছানায় রেখে, খরগোশ বলল—আমি কিন্তু ঘুমিয়ে থাকব তখন। ডাকাডাকির দরকার নাই।
রাক্ষস আর ডাইনি বেরিয়ে গেল। খরগোশের চোখ ঘুম নাই। মাঝরাতে ফিরে এলো দুটিতে। ঘুমের ভান করে পড়ে আছে খরগোশ, নড়াচড়া নাই তার।
খানিক বাদে শুরু হোল দুজনের নাকের ডাক। গর্জনে গুহাটা ভেঙে পড়বার জোগাড়। এবার জোরে জোরে কাশতে লাগল খরগোশ। আসলে, রাক্ষস দটোর ঘুম ভেঙে যায় কি না, পরখ করে নিচ্ছে। 
কোন সাড়া নাই দুটির। অমনি ঝটফট উঠে পড়ল খরগোশ। কুঠারের এক এক কোপে মুণ্ডু কেটে ফেলল রাক্ষস দুটোর।
সকাল হলে মোড়লের বাড়ি এসে হাজির খরগোশ। মোড়ল তো হেসে অস্থির—তুই? তুই মেরেছিস দু’-দুটো রাক্ষসকে? বাহাদুর বলতে হয় তোকে? 
অনেক কথার পর, মোড়লকে নিজের চোখে দেখা সেই গুহায় এনে হাজির করল খরগোশ। বাহবা দেওয়ার কথা মনেই রইল না মোড়লের। রাক্ষেসের গুহায় খাবার-দাবার, লুটপাটের টাকাকড়ি যা কিছু ছিল, লোকদের লাগিয়ে সব কিছু তুলে নিয়ে চলে এল বাড়িতে। 
রাক্ষস দুটোর হাত থেকে রেহাই পাওয়া গেছে। মোড়ল, তার লাঠিয়ালরা দারুণ খুশি। কিন্তু খরগোশকে ধন্যবাদ দেওয়া চলেই না। তাতে মান যাবে মোড়ল আর তার লাঠিয়ালদের। 
এর দিন কয়েক বাদে, যত পশু আর পাখি—সকলের একটা জমায়েত ডাকল মোড়ল। বলল—রাক্ষস দুটো নিকেশ হয়েছে। আর ভয়ের কোন কারণ নাই আমাদের। খাবার-দাবারেরও কোন সমস্যা হবে না আর। সেজন্য প্রত্যেকের খাবারের একটা নিদান দিয়ে দিচ্ছি। আজ থেকে সবাই সেটাই মেনে চলবে। তাতে কারও কোন দিন খাবারের অসুবিধা হবে না।  
সবাই খুব খুশি। মোড়ল বলল— কে কী খেতে চাও, নিজেরা পছন্দ করে নাও। 
পাখিরা বলল—আমরা দানা শস্য আর পোকা-মাকড় খেতে চাই। কাঠবেড়ালিরা বলল—আমাদের পছন্দ ফল-পাকুড়। শেয়াল বলল—মুরগির বাচ্চা হলেই চলে যাবে আমাদের। বেড়াল বলল—দুধ চাই আমাদের। কুকুর বলল—আমাদের পছন্দ হাড়-মাংস। নেকড়ে বলল—ভেড়ার বাচ্চা। ভালুক বলল—বরফ গলা জলের মাছ। 
এইভাবে এক এক করে সকলের পছন্দ জেনে নেওয়া হোল। কিন্তু ইচ্ছে করেই খরগোশকে ডাকল না মোড়ল। তার খাবারের কথাটা জানতেই চাওয়া হোল না সেদিনের জমায়েতে।
ব্যাপারটা ভারি আঁতে লাগল খরগোশের। ভারি রাগ হোল তার। মনে মনে ফন্দি আঁটতে লাগল, যেভাবেই হোক, শিক্ষা দিতে হবে মোড়লকে। এই অবমাননা মেনে নেওয়া যাবে না। 
তখন শীতকাল। জমে বরফ হয়ে গেছে নদীর জল। বরফের ওপর বসে মাছ ধরছে খরগোশ। ভালুক এসে হাজির সেখানে। মোড়লের পোষা ভালুক। ভারি প্রিয় তার। নেচে নেচে আসর জমিয়ে রাখে। মোড়ল আর তার অনুচরের দল ভারি মজা পায় ভালুকটার নাচ দেখে।
খরগোশ ভাবল, এই বুড়ো ভালুকটাকে দিয়েই শুরু করা যাক। নিবিষ্ট মনে মাছ ধরছে খরগোশ। ভালুক তো দেখে অবাক—আরে, ভায়া! ভারি অবাক কাণ্ড তো! গোটা নদী বরফে ঢাকা। তাহলে, এত মাছ পেলে কোথায় তুমি? 
খরগোশ তো মওকা পেয়ে গেল। তখনকার দিনে সুন্দর ফুলো ফুলো লম্বা লেজ ছিল ভালুকদের। খরগোশ বলল— এখন শীতের দিন। সহজে কি আর মাছ পাওয়া যায় গো? অনেক দিন তক্কে তক্কে থেকে, এই গর্তটার খোঁজ পেয়েছি, বুঝলে। যত মাছ, সব এই গর্ত থেকেই ধরেছি।
শুনে তো লালা গড়াতে লাগল ভালুকের মুখ থেকে। খরগোশ বলল—ভারি সহজ কাজ। নিজের লেজটা গর্তে ঢুকিয়ে, চুপটি করে বসে থাকো। তার পর দ্যাখো, কেমন মজা। 
ভালুক তো ভারি পুলকিত। গর্তে লেজ ঢুকিয়ে বসে রইল। খরগোশ বলল—ব্যস্ত হয়ো না। চুপটি করে বসে থাকো। অনেক মাছ পেয়ে যাবে এক সাথে। বড় বড় সব মাছ এখানে। 
এদিকে লেজখানাই যে জমে বরফ হয়ে যাচ্ছে, সেদিকে খেয়াল নাই ভালুকের। লেজটা যখন জমে গিয়ে বরফের সাথে একেবারে সেঁটে গেছে, তখন মুখ খুলল খরগোশ—শোনগো, অনেক মাছ কামড়ে ধরেছে। সহজে উঠে আসবে, এটা ভেবো না। জোরসে টান লাগাও। হেঁচকা টান। তার পর দ্যাখো, কপালের লেখা। 
ভালুক সেই মত লাগালো জোর এক টান। যা হবার তাই হোল তাতে। মনে মনে যেটা চেয়েছিল খরগোশ। একেবারে গোড়া থেকেই ছিঁড়ে গেল লেজটা। ভালুকটা গড়িয়ে পড়ে গেল ধপাস করে। তখন হা-হা হেসে, লম্বা  দৌড় লাগিয়ে সরে পড়লো খরগোশ।
যন্ত্রনায় চিৎকার করতে করতে মোড়লের বাড়ির পথ ধরল ভালুক। সব দেখে আর শুনে, বিষম রেগে গেল মোড়ল। তার সাধের নাচিয়ে ভালুকের এই দশা করেছে হতচ্ছাড়া!
দিন কয়েক মোড়ল আর তার লাঠিয়ালদের চোখের আড়াল হয়ে রইল খরগোশ। মনে মনে নতুন ফন্দি আঁটতে লাগল। পেয়েও গেল একটা নতুন ফন্দি। 
মোড়লের একটা ভোঁদড়ও ছিল। কাঠুরিয়ার কাজ করে বুড়ো ভোঁদড়টা। ভালুকের লেজ কাটা গেছে। সে ব্যাটা লজ্জায় আর নাচ দেখায় না আসরে। নাচের ভারও পড়েছে ভোঁদড়ের ওপর। 
খরগোশ ভাবল, এবার ভোঁদড়টাকে সাবাড় করতে হবে। কাঠুরিয়া না থাকলে, ভালোই নাজেহাল করা যাবে মোড়লকে। 
নদীর ধারে নলখাগড়ার বন। সেটার ভিতরে ছোট্ট একটা ঘর বানিয়ে থাকে ভোঁদড়। বসন্তকাল আসছে। ঘরবাড়ি মেরামত করে নেবার সময় এখন। সবাই কাঠকুটো জোগাড়ে ব্যস্ত। 
একদিন সকাল হতেই, ভোঁদড়ের বাড়িতে হাজির হোল খরগোশ —শোন, ভায়া। মোড়লমশাই বলে পাঠালো, বড় দেখে একটা গাছ কেটে নিয়ে যাও এখুনি। জরুরী কাজ আছে। 
ভোঁদড় চলল গাছ কাটতে। খরগোশ চলেছে পিছন পিছন। 
গাছ কাটছে ভোঁদড়। একটা শুকনো ডাল তুলে, পিছন থেকে তার মাথায় এক ঘা লাগিয়ে দিল খরগোশ। ধুপ করে গভড়িয়ে পড়ে গেল বেচারা। খরগোশ দৌড়ে পালিয়ে গেল সেখান থেকে।
আসলে মারা পড়েনি ভোঁদড়। অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল মাত্র। চেতনা ফিরল যখন, ভারি যন্ত্রণা মাথায়। ককাতে ককাতে ঘরে ফিরে গেল সে। 
খানিক বাদে খরগোশ ফিরে এলো ভোঁদড়ের দুর্দশা দেখবে বলে। কিন্তু কোথায় ভোঁদড়? তার মরা শরীর তো অনেক দূরের কথা। একটা লোমের চিহ্নটুকুও নাই সেখানে। দেখে খরগোশ তো অবাক। এমনটা হোল কী করে? নিশ্চয় মারা পড়েনি ব্যাটা। তার মানে, ঘরে পালিয়েছে। 
এবার পুরাণো রূপ ধরল খরগোশ। সেই যে বুড়ির কাছ থেকে কাপড়-চোপড় নিয়ে রাক্ষসের বাড়ি গিয়েছিল ছদ্মবেশ ধরে। মনে পড়ে গেল তার। উলুঝুলু পোষাক-আসাক। মাথায় পালক গোঁজা টুপি। হাতে বাঁকা লাঠি। থুরথুরিয়ে সোজা ভোঁদড়ের ডেরায় গিয়ে হাজির। 
গিয়েই খনখনে গলায় এক ধমক—সে কী হে? ঘরে বসে আছো এখনও? তোমাকে না জরুরী খবর পাঠিয়েছিল মোড়ল? বড় মাপের গাছ দরকার তার। গাছ না কেটে, ঘরে বসে আছো কোন আক্কেলে?
কী আর করে? মোড়লের তাগাদা বলে কথা! ধড়ফড় করে উঠে পড়ল ভোঁদড়। আবার বনের দিকে চলল। 
যেতে যেতে বলল—গাছ কাটতেই তো গিয়েছিলাম।
--গিয়েছিলে, তো ঘরে ফিরে এসেছ কেন?
--সে আর বোল না গো। খরগোশের হাতে মার খেয়ে, প্রাণটাই যাবার জোগাড় হয়েছিল। আর একটু হলে, দফা রফা হয়ে যেত আমার। 
--সে কী? খরগোশের পাল্লায় পড়তে গেলে কেন? অতি ধুরন্ধর জীব। তুমি এলে মোড়লের গাছ কাটতে। এর মধ্যে খরগোশ এলো কোথা থেকে? 
যা যা ঘটেছিল, ভোঁদড় তাকে বলে গেল। খরগোশ জানতে চাইল—তা খরগোশ তোমাকে মারল, কিন্তু তুমি তো মরোনি দেখছি। ব্যাপারটা কী, বলো তো। 
ভোঁদড় বলল—মরবো কেন? খরগোশ তো আমার মাথায় মেরেছে। সে তো আর জানে না, আমার দুর্বল জায়গা হোল আমার পিছন দিকে। ঘাড়ের ঠিক নীচটাতে। ওখানে মারলে আর দেখতে হোত না। এক ঘায়েই অক্কা হয়ে যেত আমার। 
খরগোশ তো এটাই জানতে চাইছিল। সেই লাঠিটা তুলে, কষে এক ঘা লাগিয়ে দিল জায়গা মতো। মাটিতে লুটিয়ে পড়ে গেল ভোঁদড়। সেই যে পড়ল, আর উঠল না। অক্কাই পেয়ে গেল বেচারা।   
চলে যেতে যেতে থমকে গেল খরগোশ। একটা চিহ্ন থাকা দরকার মোড়লের জন্য। কুচ করে ভোঁদড়ের লেজটা কেটে নিল সে। 
ভোঁদড় মারা পড়েছে, এটা এমন কিছু বিরাট বা চমকে যাওয়ার ব্যাপার নয়। কিন্তু যেই দেখা গেল, তার লেজটা কেউ কেটে নিয়েছে, বুঝতে কিছু বাকি রইল না মোড়লের। এও নিশ্চয় সেই খরগোশের কাজ। রাগে ফুঁসতে লাগল সে। 
দিন যায়। প্রতিশোধ নিতে পেরে ভারি খুশি খরগোশের মনে। কিন্তু খুশিতে তো আর পেট ভরে না। সব পশু আর পাখিদের খাবারের বন্দোবস্ত করে দিয়েছে মোড়ল। কেবল খরগোশ বাদ গিয়েছে। 
সাহসে ভর করে, একদিন মোড়লের বাড়িতেই হাজির হয়ে গেল খরগোশ—এটা তোমার কেমন বিচার, মোড়ল? সকলের ব্যবস্থা করে দিয়েছ। কেবল আমিই বাদ? এটা কেন করলে? আমি কী খাবো? আমারও তো পেট আছে একটা। 
--সত্যিরে, ভারি ভুল হয়ে গিয়েছে। মনেই ছিল না তোর কথাটা। মোড়লের গলায় আফশোষের সুর। বলল—যাকগে, যা হবার হয়ে গেছে। এখনই তোর খাবারের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। এক জায়গায় পৌঁছে দিচ্ছি। সেখানে আশেপাশে যে ক্ষেত পাবি, সেটাই তোর খাবারের বরাদ্দ। তবে হ্যাঁ, অনেক বদমায়েসি করেছিস আমার সাথে। তার ফল তোকে ভুগতে হবে। আমার কুকুর থেকে সাবধান থাকবি। দেখতে পেলেই, ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলবে তোকে। 
বলেই, খপ করে একটা ঠ্যাং ধরে ফেলল খরগোশের। মাথার উপর তুলে ঘোরাতে লাগল প্রাণীটাকে। তিন-চার প্যাঁচ পাক খাওয়াবার পর, দিল ছেড়ে। বাতাসে ভাসতে ভাসতে খরগোশটা গিয়ে পড়ল এক শুশনি  শাকের খেতে।
সামনে একটা জলাজমি। মোড়ল ভেবেছিল, জলাজমিটাতে গিয়ে পড়বে খরগোশ। হাবুডুবু খেয়ে মারা পড়বে শয়তানটা। কিন্তু সেটা তো হোলই না। হাল্কা শরীর খরগোশের। জলাটা পেরিয়ে, খানিক দূরের শাকের খেতে আছড়ে পড়েছে সে। 
আঘাত সামলে, উঠে দাঁড়াল যখন, আনন্দ যেন ধরে না। সামনেই লেটুস আর বাঁধাকপির বাগান। আহা, দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। মনের আনন্দে বাঁধাকপির বাগানটাতে ঢুকে পড়ল খরগোশ। মোড়লের অনুমতিতে পেট ভরাবার একটা পাকাপাকি বন্দোবস্ত হয়ে গেছে খরগোশের। আর কোন ভাবনা রইল না তার।
তবে, কুকুরের বিপদের কথাটা ভুলে যায়নি। চিরকাল কুকুর থেকে দূরেই থাকে খরগোশ।

Post a Comment

1 Comments