জ্বলদর্চি

গুচ্ছ কবিতা-২/গুরুপদ মুখোপাধ্যায়

গুচ্ছ কবিতা-২
গুরুপদ মুখোপাধ্যায় 


অমলতাস

জীবন -মৃত্যুর হাইফেন বসানো বারান্দায় বসে 
চায়ে চুমুক দিচ্ছি বেশ, বোহেমিয়ান স্তবগান 
শিকড় ছুঁয়ে নেমে আসছে আরো গভীরে 
ঝুরিগুলি দোল খায়, তমসায় ঢাকা নিরন্নরাতে।

রোদ ছুটি নিয়ে পেরিয়ে যাচ্ছে আকাশগঙ্গা
শুক-সারির আখড়ায় মহুলের ঢল
ছুঁয়ে বনসাই শরীর, সোনাঝুরি ক্লান্তি মাখে, 
হারিয়ে যাওয়া পথের মার্গসংগীত। 

স্তনের চরে শুয়ে শিশু কাঁদে,কাঁদে শালফুল
সরে যাচ্ছে কথার সরণী,মুখ ঢাকছে শালুক 
বৃন্তমুখ খুলে খুলে রাখে, ছুঁয়ে দয়িতা শরীর 
নেমে আসে লাঙলের ডাক,অলকানন্দা। 

শুক সঙ্কেত খোঁজে, সুখের সন্ধানী
ছায়াপথ সরে সরে যায়, রামধনুদ্বারে
বসে থাকে ধূমকেতু, শূন্য গহ্বর 
অমলতাস তুমি কি গেছো পাতাঝরা চন্দনের বনে।


ভূগোল 

কবি ভূগোলে বসে আছেন
আসলে কবি একটা আস্ত ভূগোল 
গ্লোবের ডানাগুলি খুলে খুলে শুক,
পেড়ে নেয়, পড়ে নেয় সমুদ্রমুখ।

ভূমধ্যে কোটি কোটি মানুষের স্বর, 
ভূগোল স্বর,বাঁধা গ্লোবাল ঢেউয়ে 
ছুঁয়ে ছুঁয়ে বাড়ে তুলসীতলার সুখ, 
কন্ঠ ভাঙতে ভাঙতে জোট, মেহনতী মুখ।

কবি মেহনতী নন,দোসর তাদের, তাই........ 
ভূগোল ঘুরতে ঘুরতে অক্ষর অসুখ, 
 ছুঁয়ে থাকে উপবাস, নির্জন ঝিঁ ঝিঁ শ্বাস 
ঝিনুক দাগ,দিনান্তে ঘরে ফেরার আশ।

কবির ঘর ভাঙে প্রতিদিন, নদীজলে ভেসে যায় 
কবির শব,কবি জেগে ওঠেন,সাঁতার দেন..........  
উঠে আসেন পাড়ে, জলে তিলক নাল,
ভূগোলের বিন্দু বিন্দু ঘাম মেখে কবির সকাল। 

কবি নগ্ন পরিযায়ী, আস্তাবলে ছায়াতল
পায়ে শিকল,বুকের মধ্যে আস্ত ভূগোল।


গাছ

কিসমৎ দেওয়ান চকের যে চারাগুলো 
হাওয়া খেয়ে খেয়ে বেড়ে উঠছে দিন দিন
ওদের শিকড়ে জল দিও হররোজ। 
নাদের আলি তুমি কি আসবে এখানে?  
এখানে শিলাই-এর মাথায় সাপ আর ভ্রমর খেলা করে। 

বোষ্টম বোষ্টমীরা আসেন কখনো সখনো 
হরিসভা,হরিনদী কি ভেঙে গেছে তাহলে?  
সারণী বেয়ে চলে গেছে যে চোখ 
তার হিসাব কে রাখে?চারাগাছ! 

সব্বাই বেড়ে উঠছে রোজ, কিনার ছুঁয়ে বিশ্বদর্শন 
গঙ্গাপ্রসাদ,সান্ধ্যে বাঁশের বাঁশি, 
ছুঁয়ে আছে কমন্ডলু, গাছ,চৈতিবাসর
জটার শিরাগুচ্ছ নেমে আসে 
চারদিকে শুধু গাছ দেখি, গাছ! 

ও গাছ!তুমি ছুঁয়ে থেকো ডাঁটায় ডাঁটায়।

জ্বলদর্চি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন। 👇


জ্বলদর্চি তিরিশ পেরিয়ে... 
বাবা

দীর্ঘ দু'দশক বাবা আমাদের মাঝে নেই
তবুও তিনি রয়েছেন 
যখন শিলাই-এর পাড়ে গিয়ে দাঁড়াই
ঐতো বাবা শিলাই-এর জলে 
মুখ লুকিয়ে হাসছেন, দেখছেন অপার মিলন।

ছুঁয়ে যাচ্ছেন গোয়ালঘর,অমৃত মৈথুন 
শিরা উপশিরা ভেদ করে উঠে আসছে 
নম্র বাতাস, ভেঙে যাচ্ছে জলের বুদ্বুদ
কেশরের দানাগুলি পালো হয়ে যায় 
আঙুল ছুঁয়ে থাক বিভোর সকাল। 

সন্ধ্যার দিগন্ত ছুঁয়ে থাকে যে 
শষ্যফালি চাঁদ, কিনার ছুঁয়ে চলে যায় 
চিকুরের পাকা ধান,উথলে ওঠা ঢেউ 
ছুঁয়ে আছি নক্ষত্রপুঞ্জ,সংসার,লাঙল জোয়াল
আমাদের পোষা লালু কালু,নশ্বর ঐহিক। 

আঁচল ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাপনকাল
শষ্যদানা পুষ্ট হতে থাকে, আদিগন্ত শৈশব 
মা আজও শিলাই-এর পাড়ে বসে কথা বলেন 
আপনমনে কাঁথায় সুতো বুনতে বুনতে 
তুলে আনেন রঙিন নক্সা, পৌষের মাঠের শূন্যতা।

বাবা এখন শিলাই-এর চর,দিগন্ত মোছা আকাশ।



কবি,তুমি রোদ্দুর হও 

সত্তরের ঢল আশি ছুঁয়ে নব্বই 
এরপর শূন্যতা,অক্ষরে স্যাঁতা পড়া দাগ
পরিযায়ী বিন্যাসগুলি ভেঙে যাচ্ছে 
পরম্পরায়, নিকুম্ভিলা যজ্ঞগার,মেঘস্বর।

যে আলোগুলি ছুঁয়েছিল পৌষের মাঠ,
সেখানেও কি শুধুই শূন্যতা,নাকি আলো
খেয়ে নিয়েছিল অন্ধকার, ছড়িয়েছিল বীজ,
শ্বেতচন্দন, রোপনতো থেমে থাকেনা কখনো। 

অবসর গিলে গিলে খায় অন্ধ কবি
কোজাগর রাত ছুঁয়েছিল জোনাক সন্ন্যাসী,
আস্তাবলে ভগ্ন অশ্ব প্রায় আট-নয় ভরি,
থামেনা ঝর্ণা, চিত্রগুপ্তের হামানদিস্তা। 

কবি,তুমি নগপতি হও,স্বাদের খন্ড রূপগুলি
শুষে নিও আকন্ঠনীল,গন্ডবেয়ে
নেমে আসে নদী,রাত জাগে অভিশপ্ত কবি
কবি, তুমি নদী হও,তুমি রোদ্দুর হও।


Post a Comment

0 Comments