জ্বলদর্চি

অলক জানা /গুচ্ছ কবিতা

অলক জানা  
গুচ্ছ কবিতা 

সভ্যতা 

সমস্ত ছায়া একত্র হলে আলো বড়ো অভিমানী,  
আড়ালে চলে য়ায়। অন্ধকারের সমূহ নেগেটিভ 
ভেদ করে চুইয়ে পড়ে বৃষ্টি, খুঁজে নেয় স্রোত, আশ্রয়
মহাশূন্যেই বিলীন উপেক্ষিত সহযাত্রী তারাদের ডাক
নালন্দা অতীত থাকলোই বা, পোশাক ও রুচি পালটে গেলে তোমার আমার দূরত্ব বাড়ে, মেধাবী মাটির আলপথে জেগে ওঠে ঢালাই বর্মের নির্মমতা। 
রাস্তা বাঁকে রাস্তা ভাগ হয়ে যায়, মঠ মসজিদ 
থেকে ভেসে আসা কাঁসর ও আজানের সুর একাকারে
যে বার্তা দিতে চায় তাকে পেছনে ফেলে দেয়াল ওঠে
ভাগ হয়ে যায় হাঁড়ির চাল, আশ্চর্য একেও 
সভ্যতা বলে গোগ্রাসে আমরা কেমন গিলি ? 


খুনি 

একটা দেশকে আমি চিনি 

অনেক কিছুর মধ্যে কবি থাকেন,
প্রেমিক থাকবে না সে কেমন হয় ? 

যাকে প্রেমিক বলে জানি 
সে কখনো খুন করতে জানে না। 

কাটিকুটির খেলায় হাত পাকিয়ে দুর্মুখ শব্দ ছেঁটে কবি যে কাব্য আওড়ে চলেন 
সে সমাজ কে দেখেছে ? 

বারকয় ব্যবহার করে প্রেমিকার গলার নলি কাটতে পারে, সে আবার কিসের প্রেমিক ? 

বহু অসুন্দর খুনের ময়নাতদন্ত গচ্ছিত রাখে পাণ্ডুলিপি, যে দেশ চেনাতে চাই, 
খুনিরা কেবল বেকসুর উচ্চশির ঘুরে বেড়ায়, 

প্রেমিক নয় সর্বাধিক অস্ফুট শব্দ 
খুন করে একজন কবি। 


লক্ষ্যভেদ 

কোমলতার চেয়ে রোষ দীর্খ হলে অসহিষ্ণু ধৃতরাষ্ট্রের মতো সজোরে সবাই গুঁড়িয়ে দিতে পারে বজ্র-ধাতব ভীমের জৌলুস। ভাগাভাগির দ্রৌপদীকে নিয়ে মাতৃ আদেশ পালন করে পাণ্ডব পাঁচ, এখন সমাজ পালটে গ্যাছে
বছর শেষে ভুল ভেঙে যায়, একান্ন মাস পর একটা সম্পর্কও বীজের নিয়মে অঙ্কুরিত, 
যা কিছু ললাট লিখন, যা কিছু বরাদ্দ সময়োচিত ফল ভারে টইটুম্বুর। বিষয়ী ধৃতরাষ্ট্ররা অপরিবর্তিত বলে কৃষ্ণের চরণ কেবল পাণ্ডবরাই পায়। 


জ্বলদর্চি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন। 👇


জ্বলদর্চি তিরিশ পেরিয়ে... 
কর্মযোগ 

প্রেমিকার সযত্ন ঠোঁটের মতো জনপ্রিয় 
কোন গোধূলি, দিগন্ত রেখা থেকে, সর্বাধিক আমার মনোযোগ খুঁটে খায়---তার নিঝুম নীরবতায় এক পসলা হৃদয় না হয়, 
ঠুকে দেওয়া যাক, অনভ্যস্ত প্রথম কোন সঙ্গমের চূড়ান্ত ব্যর্থতার মতো বাঁশের 
কঞ্চিতে জড়িয়েছে চাঁদের অস্বস্তি, সংক্ষিপ্ত জোছনা রসায়নে ভিজতে থাকে চক্ষু নদী, 

তারো অধিক সংগোপন প্রতীক্ষায় প্রবল 
হয়ে ওঠে জেদ। সব চুক্তি ভেঙে যাওয়ার 
পর, জন্ম নেয় অন্য কোন অচেনা জাতক, 
জয়-পরাজয় করেছে যারা পায়ের নূপুর, 
তাদের মতো হতে চেয়ে সকর্মক হাতের 
তালুতে রেখেছি শব্দ কুড়ানো কর্মযোগ। 


আঘাত বিষয়ক 

কত বড়ো হয়ে গেছো তুমি, 
গাছ। পাহাড়। সমুদ্র। যতখানি বড়ো হলে 
স্পর্শ ও দৃষ্টির নাগাল ছাড়িয়ে বুনোহাঁস
কিংবা চতুর কোন মহাভারত চরিৎ---
চোখের গভীরে গচ্ছিত দিনলিপি, রাস্তায় জড়ানো ছায়ালাবণ্য উদাস, প্রতিটি ছায়া মায়ের জাত কত মায়া নিয়ে সঙ্গী বারোমাস। 
চোখের বাইরে পরাজিত, মৃতবৎ ভাবাবেগ অসার সংখ্যালঘু, কিছু সেন্টিমেন্ট পাওনা তারও, বড়ো হয়েছো সুখের কথা, একটা মানুষ থেকে আর একটা মানুষের মাঝখানে নীরবতা, 
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আঘাত কে না জানে ? 


প্রার্থনা 

রোজ তুমি সেভাবেই হাঁটো যেভাবে চায় পা-পথ
অথবা তোমার মতো সেই পথে হেঁটে গেছে কেউ
পদচিহ্ন ধুলোঘ্রাণ অতল-অগভীর শপথ,
নিভৃত অফুরান চোখে মুখে স্বপ্নের মতো ঢেউ।  
ভাঙে, ভেঙে যায় দেশ-ঘর আর মানুষের মন
দুধভাত টাকাকড়ি অবান্তর একপেশে থাকে
পথ ঘাট বাজারে সাম্যবাদের বুলি অকারণ 
যে যার মতো খায়দায় সযত্নে ছালমাংস রাখে। 

তুমি কবি তাই নিদারুণ কষ্টে মরো অন্তর্জ্বলি
সবকিছু ঠিকঠাক কবিতার মতো তবে হোক
দূরে যাক বিভাজন বিভীষিকা শতেক কৌশলী
একাকার দেশ-আবাস অনিবার্য আনন্দলোক। 

তুমি রোজ মানবিক টুকে দাও আক্ষরিক ছবি
আস্ত একটা কবিতাই তবে হোক এই পৃথিবী। 


সাঁকোপাঠ 

কফিহাউস নেই, বাঁশপাতা গ্রামে 
চায়ের দোকান আছে। 
পাতাবাহারী বিন্যাসের মতো 
ছড়ানো খালবিল কেলেঘাই। 

দীর্ঘ বিষাদের মুখে একটা সিগারেট 
সন্ধ্যার তারাজরুল আবছায়াকে 
আরো বেশি মোহময় করে। 
আমি বিষণ্নতা কাটিয়ে
আরোগ্যের রাস্তায় হাঁটতে শুরু করি। 

এ পোড়ার দেশের সময় 
পুড়ে দিচ্ছে ভবিষ্যৎ ! 
বাঁশের সাঁকোর ললাটে বাঁধা নাগরিক জীবন। 


নিঃস্বতার ডায়েরি 

সন্ধ্যা হাতে করে একটা ফোন আসত প্রতিদিন
সারাদিনের লেখচিত্র শব্দ-সেতারে বেজে উঠলে শরীরের পঞ্চইন্দ্রিয় শান্ত এক নদীর ধারা,
তখন গৌণ, ব্যস্ততার শেকড়বাকড় প্রিয় সিগারেট অথবা এক দু-পেগ মদ। মনে বাসা বাঁধে সন্ধ্যার আবছায়া বিনীত দহন নেশা। কিছু অসুখ এভাবেই প্রিয় হয় তাই----কী ভীষণ নির্জনতা দিয়ে সেলাই করা অথচ প্রতিটি গতিপথ কত চনমনে। এখন সন্ধ্যাকে অহেতুক মনে হয়, ফোনের প্রান্তবিন্দুর কাছে এভাবেই সম্পর্করা বাতিল রচনা হয়ে যায়। 


সংগোপন সূত্র 

গোপনীয়তার স্বভাবই এমন, প্রিয় কোন সাক্ষাতের মুখোমুখি যে প্রকৃত শান্তি ও শুদ্ধিকরণ চায়। যত রাত বাড়ে নিঃসঙ্গতার অক্টোপাস জড়িয়ে ধরে নিজস্ব কক্ষপথ, সবটাই ললাট লিখন ভেবে ডুব দেয়া যাক রোজনামচায়, চাকার মতোই ঘুরছে , দিন থেকে রাত্রি, শোক থেকে সুখ। আলম্বহীন চাকার কোন ঘর থাকতে নেই বলে খুব সহজেই পূর্ণচ্ছেদ এসে মাথায় রাখে হাত !

Post a Comment

0 Comments