জ্বলদর্চি

গুচ্ছ কবিতা/ অমিতাভ সরকার

গুচ্ছ কবিতা 

অমিতাভ সরকার 

কবি ও জেলে

কবিকে জিজ্ঞেস করেছিলাম এখন আর লেখেন না কেন।

কবির উত্তর ছিল, প্রচারের আঁধারী বেনোজলে অক্ষরের মাছ চাষ কোনোদিন ভালো হয়?


মেঘের দাবি

আরেকটু উপরে যেতে হবে। 

জীবনটা শুধুই ওপরে ওঠার চিন্তা। 
বেশি উঠলে 
আবার নামতেও কষ্ট।

বাকিটা শুধু আসা আর যাওয়ার।
মাঝে আর কিছু নেই...শুধুই দায়িত্ব। 

এখান থেকে কিছু পাওয়ারও নেই, দেওয়ারও নেই।


রিপু

ওদের ছোটোবেলা থেকেই চিনতাম।

সিঁড়িতে উঠতে নামতে আগে প্রায়ই দেখা হতো।

সিনেমায় নামার পর মেয়েগুলো খুব মিষ্টি হয়ে গেল।

এখন দেখা হলে আমরা শুধুই পরস্পরের দিকে অপলক চেয়ে থাকি।

কথা আর এগোয় না।


চৈতন্য 


ইচ্ছের ওপর আমার খুব রাগ হয়, জানেন!

মেঘের আড়ালে মন কুয়াশায় কখন যে 
ভালোবাসা পথ ভুলে কার হাত ধরে সেটা সে জানে!

যার নাম যত ভালোই হোক না, 
মৃত্যুর পর পরিচিতিটা সেই এক হিসাবেই।


বিবেকের অন্তর্জালে কবি


বাইরেটা আর পাঁচজনের মতো হলেও 
অন্তরটা খুবই পরিষ্কার। ওনার প্রবৃত্তিগুলো চেতনার অধীন থাকে, সর্বদাই। 

জীবন অনেক কিছু দেখে, পড়াশোনা করে, সময়ে সেটা মনে রাখার চেষ্টাও করে। কখনো পারে, আবার কার্যক্ষেত্রে কখনো সেটা ভুলেও যায়। কিন্তু হাতে-কলমে শেখা জ্ঞান কোনোদিনই ভুল হয় না।


সময় গান লিখে চলে । অরূপের স্বরূপ সন্ধানে নিবিষ্ট ধ্যানমগ্ন ঋষি, সুরাসুরের চিরস্থায়ী যুদ্ধে আশ্লিষ্ট হন, ঝরে পড়ে যাপনার অশ্রুসিক্ত রামপ্রসাদী সুর। 


আমরা সেই সুরেই গান গাই। রাত যত বাড়ে, শহরও তত নগ্ন হয়। নম্বরের মুদ্রাস্ফীতিতে দাম কমে  না-পাওয়া আর জোর করে লাভ করার মানসিকতা, দুটোরই।


জ্বলদর্চি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন। 👇


জ্বলদর্চি তিরিশ পেরিয়ে... 

স্বাস্থ্যহানির কারণ 

আজ বিজ্ঞানের দিন।
সকাল থেকেই মেঘেরা সব মিমের মেদবহুল আকাশে স্বার্থের ব্যাগ-প্যাঁটরা নিয়ে হাজির। এক্ষুনি কসরত শুরু হবে।

সময় পরীক্ষা দিচ্ছে।
ঈশ্বর পরীক্ষা নেবেন।

পাওনাদারির বাজারি ঝাণ্ডা হাতে একই মঞ্চে শিক্ষা-ভিক্ষা, জন্তু-কিন্তু, যোগী ভোগী, নেশারু-দাবাড়ু - সবাই হাজির।

প্রমোদ বিক্রির প্রচার আয়োজন শীতের মরসুমে বেশ অনেকটাই তুঙ্গে।


প্রি-বুকিংয়ের খুশি অফারে মন ডুবালেই ব্যস। অতলে হারিয়ে যাবেন।
আসলে কে কোন ভূমিকায় কখন যে ঠিক কীই করছেন, তা বোঝার উপায় একমাত্র প্রকৃতি ছাড়া কারোর নেই।

অথচ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সুবিপুল অগ্রগতিতেও বাস্তবের কৃষি মেধা তালিকায় মানুষ প্রকৃতিকে আজও ভার্চুয়াল জগতেই সীমাবদ্ধ রেখে দিয়ে গেল।


খাদ

সভ্যতার শহরে মনের সাথে ধুলোর রোজকার দেখা। ধুলো মনকে জিজ্ঞেস করে, 'কেমন আছেন?'
ম্লানমুখে মন জবাব দেয়, 'ওই চলছে।'

আলোর কালোবাজারি গায়ে পেশাদারিত্বের উষ্ণ পোশাক জড়িয়ে  ধুলো উড়ে যায়, দিনের বাতাস বাওয়ায় কাজে। 

মন বলতে চায়, কিন্তু পারে না। আদৌ কতটা কী হয়েছে? এটা নিছক এড়িয়ে যাওয়া, না অভ্যাসগত প্রাপ্তি চাহিদার সুদূরপ্রসারী প্রভাব! 


কমবেশি আমাদের মধ্যেও অনেকেই এই উত্তর। 

এইভাবে চলতে চলতে ধূলিকণাগুলোও বুঝে যায়, আসলে আমাদেরই চলার মধ্যে 
কোথাও খাদ আছে। অনেকটাই গভীর সেটা...

Post a Comment

0 Comments