মেদিনীপুরের মানুষ রতন, পর্ব -- ৩৫
মালীবুড়ো (লেখক, প্রত্ন সংগ্রাহক, পত্রিকা সম্পাদক - বরগোদা, নন্দকুমার)
ভাস্করব্রত পতি
'মালীবুড়ো' নামটাই লোকমুখে ফেরে। আসল নাম যুধিষ্ঠির জানা। নন্দকুমারের বরগোদা গ্রামে ১৩৪০ বঙ্গাব্দের ২৮ শে শ্রাবণ জন্মগ্রহণ করেন তিনি। অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার এক অন্যতম কবি তথা সাহিত্যিক, ইতিহাসপ্রেমী মানুষ হিসেবে তাঁর পরিচিতি। এহেন মানুষটির জীবন বৈচিত্র্য আজ সংস্কৃতিমনা মানুষজনের কাছে অন্যতম আগ্রহের বিষয়।
অত্যন্ত দরিদ্র এবং দিনমজুর পরিবারের সন্তান ছিলেন তিনি। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় বাড়ি থেকে পালিয়ে প্রথমে স্বদেশীয় ক্যাম্পে আশ্রয় গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে বিপ্লবী ব্যারিষ্টার শ্রীধর সামন্তের সহায়তায় শান্তিনিকেতনে গিয়ে লেখাপড়ায় রত হন। বিশ্বভারতীর লোকশিক্ষা পরিষদ থেকে ১৯৫৩ তে প্রবেশিকা পাশ করেন এবং ‘সাহিত্য বিনোদ' উপাধি লাভ করেন বঙ্গীয় পুরাণ পরিষদ থেকে এবং ‘কাব্যভারতী' পান যশোর সাহিত্য পরিষদ থেকে। ১৮৭৪ শকাব্দে নদীয়ার শান্তিপুরে বঙ্গীয় পুরাণ পরিষদ থেকে ‘পুরাণশাস্ত্র’ পরীক্ষায় প্রথম স্থান পান। দেওয়া হয় মণিকা সুন্দরী স্বর্ণপদক। এর দু বছর বাদে এখান থেকেই পান ‘পুরাণরত্ন' উপাধি। ১৯৫৩ থেকে ১৯৫৫ পর্যন্ত কিছু সময়ের জন্য শ্রীরামপুর উত্তমাসুন্দরী বালিকা বিদ্যালয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। ১৯৫৬ তে বিশ্বভারতী থেকে 'মধ্যভারতী' পাশ করার পরে বি.এ. ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫৮ সালে কল্যাণচক গ্রামের বিপ্লবী নলিনীরঞ্জন হোতার ‘পল্লীজীবন' পত্রিকায় শিশুদের ‘গোলাপবাগ' বিভাগের দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথমবার 'মালীবুড়ো' ছদ্মনামে লিখতে শুরু করেন। ঠিক দু বছর বাদে তাঁর প্রথম গ্রন্থ 'যে শিশু আনিল মুক্তি' প্রকাশিত হয়। এভাবেই এগিয়ে চলে তাঁর সাহিত্য সেবা। ১৯৬৩ তে পাঁশকুড়ায় বিপ্লবী হরেকৃষ্ণ পট্টনায়কের 'প্রলাপ' পত্রিকায় ‘কচি সংসদ' বিভাগের দায়িত্ব নেওয়ার পাশাপাশি ১৯৬৬ তে তমলুকে কবি সত্যেন্দ্রনাথ জানার সঙ্গে ‘বেদুইন' পত্রিকা প্রকাশনা শুরু করেন সম্পাদক হিসেবে। অবশেষে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। একবছর পরেই ১৯৬৭ থেকে নিজেই শুরু করেন ‘সূর্যদেশ' পত্রিকার প্রকাশনা। যা আজও প্রকাশিত হয়ে চলেছে সমানভাবে।
দুই মেদিনীপুরের মানুষজনের কাছে মালীবুড়োর সংগ্রহ করা পুঁথি এবং অন্যান্য সামগ্রী আজ রীতিমতো গবেষণার বস্তু। যেখানে পুঁথি আর প্রাচীন বইয়ের মাঝে হাতছানি দেয় লুকিয়ে থাকা ইতিহাস। ২০০০ এর ৩ অক্টোবর মহাষষ্ঠীর দিন প্রয়াত হন মেদিনীপুরের এই 'মানুষ রতন'টি। পরের বছর মালীবুড়োর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁরই উত্তরসুরী ড. সুস্নাত জানার উদ্যোগে গঠিত হয় 'মালীবুড়োর সংগ্রহশালা ও গবেষণাগার'। বরগোদা গ্রামের বাড়িতেই মালীবুড়োর মূর্তির আবরণ উন্মোচন করেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ড. নিমাইসাধন বসু এবং সংগ্রহশালার দ্বারোদঘাটন করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন সচিব ড. সুভাষ বন্দ্যোপাধ্যায়। কি বিপুল সংখ্যক সংগ্রহ তিনি করেছেন, তা ভাবলেই চমকে উঠতে হয়। আজ তাই দেশবিদেশের বহু মানুষ ছুটে আসেন এখানে -- মালীবুড়োর সংগ্রহ করা সামগ্রীগুলো দেখে ইতিহাসের জীবন্ত স্বাদগ্রহণ করতে।
‘শীতলামঙ্গল'-এর একটি পুঁথি উদ্ধারের জন্য এই মালীবুড়ো একবার সন্ন্যাসীর বেশ নিয়েছিলেন। এক বিধবাকে ভুলিয়ে তিনি তা উদ্ধার করেছিলেন। এরকম ভাবেই সারা জীবন ধরে তিল তিল করে সংগ্রহ করে রাখা অজস্র উপাদান সংরক্ষণ করে উজ্জ্বল করেছেন মেদিনীপুরের ইতিহাস। আলোকিত করেছেন মেদিনীপুরের প্রাচীন সংস্কৃতি। কাশীরাম দাশের 'মহাভারত'-এর আদিপর্বের সমগ্র পুঁথিই তিনি সংগ্রহ করেছিলেন। যদিও সেসব বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ গোরুর গাড়িতে করে নিয়ে চলে গিয়েছে। প্রায় ১৫০ টির বেশি মহা মূল্যবান দুষ্প্রাপ্য পুঁথি এবং বইয়ের সন্ধান মিলবে মালীবুড়োর আস্তানায়। নিত্যানন্দ চক্রবর্তীর 'কালুরায়ের কেরামতি', মনোহর ফাঁসুড়ার পালা, শীতলামঙ্গল কাব্য, কৃত্তিবাসের রামায়ণের লঙ্কাকান্ডের পুঁথি, শ্রীকৃষ্ণকিঙ্করের পঞ্চানন্দের ক্রোধ, কুঞ্জবিহারী দাসের 'বিদ্যাপতি', দ্বিজ জগন্নাথের পুঁথি, দ্বিজ আত্মারামের 'ঘোষঠাকুর', রামেশ্বর ভট্টাচার্যের 'শিবায়ন', দ্বিজ ভগীরথের 'তুলসী চরিত', বৃহৎ নারদীয় পুরাণ সহ দুটি তালপাতার ওড়িয়া পুঁথি' তিনি রেখেছেন পরম যত্নে। এসব আজ এই মিউজিয়ামের সম্পদ।
মালীবুড়োর সংগৃহীত আরো কিছু পুঁথি হল - গুরু চিন্তামনি - পরমানন্দ দাস, লক্ষ্মী চরিত্র (বিনন্দ রাখালের পালা) - দয়ারাম দাস, সারদা মঙ্গল - দয়ারাম দাস, মৎসধরা পালা - দ্বিজ রামেশ্বর, চৈতন্যভাগবত (মধ্যখণ্ড) - দ্বিজ রামেশ্বর, ভাগবতামৃত - দ্বিজ কবিচন্দ্র, দ্রৌপদির বস্ত্র হরণের পালা - দ্বিজ কবিচন্দ্র, সাবিত্রী উপাখ্যান - কাশীরাম দাস, আখেটিক পালা - কবি জগন্নাথ, আনন্দমঞ্জরী - নরোত্তম দাস, ভজনতত্ত্ব - লালমোহন দাস, গুরুদক্ষিণা - শ্যাম দাস, রাগরত্নাবলী - কৃষ্ণ দাস, উত্তরাকাণ্ড - কৃত্তিবাস, অশ্বমেধ পর্ব - কাশীরাম দাস, শ্রীচৈতন্য অন্তলীলার বর্ণনা - কৃষ্ণ দাস, জাগরণ - ধনঞ্জয়, মনসামঙ্গল - ভারতচন্দ্র রায়, বিদ্যাসুন্দর - রামেশ্বর, সত্যনারায়ণ ফ্যাসারার পালা - রসময় এবং পঞ্চানন্দের পালা - একাদশী গায়েন। এরকমই অসংখ্য পুঁথি তিনি রক্ষা করেছেন নিজের জীবন যৌবনের মূল্যবান সময় অতিবাহিত করে। এই পুঁথিগুলির সবই অন্তত ২০০ থেকে ৫০০ বছরের প্রাচীন। অনেক পুঁথির রচয়িতার নামও উদ্ধার হয়নি।
১৭৮৩ র সেপ্টেম্বর কলকাতা থেকে প্রকাশিত আবুল ফজলের 'আইন ই আকবরী' গ্রন্থের সংস্করণটিও তাঁর হেফাজতে। তেমনি ১৯০২ তে ত্রৈলোক্যনাথ রক্ষিতের ‘তমলুকের ইতিহাস' বইয়ের প্রথম সংস্করণ মিলবে আজ মালীবুড়োর সংগ্রহশালায়। এই মুহূর্তে রয়েছে ২৫০ বছরের বেশি প্রাচীন ৪৭ টি দুষ্প্রাপ্য মুদ্রা। সব তিনি খুঁজে পেতে এনেছেন বিভিন্ন এলাকা থেকে। মোঘল আমলের উর্দুতে লেখা সেইসব মুদ্রা আজ গবেষণার বস্তু বৈকি। দাঁতন থেকে পাওয়া ধ্যানরত বৌদ্ধমূর্তি, যা কিনা প্রাচীন তাম্রলিপ্তের ইতিহাস জানাতে পারে, তা রয়েছে। এছাড়া সম্রাট অশোকের পরবর্তী সময়কালের বুদ্ধর তারা মূর্তি দেখতে পাওয়া যাবে। বৌদ্ধযুগের নিদর্শন স্বরূপ অসংখ্য মাটির কৌলাক বা মৃৎপাত্র সংগ্রহ আছে।
এছাড়াও যেসব দুষ্প্রাপ্য বইয়ের সন্ধান মিলবে এখানে সেগুলি হল - সেবানন্দ ভারতীর ‘তমলুকের ইতিহাস', সিদ্ধেশ্বর চক্রবর্তীর 'বঙ্গীয় গৌড় ব্ৰাহ্মণ পরিচয়', নগেন্দ্রনাথ বসুর 'বঙ্গের জাতীয় ইতিহাস', বিধুভূষণ ভট্টাচার্যের ‘রায়বাঘিনী ও ভুরিশ্রেষ্ঠ রাজকাহিনী', মহেন্দ্রনাথ করনের 'হিজলীর মসনদ ই আলা', বিনয়তোষ ভট্টাচার্যের ‘বৌদ্ধদের দেবদেবী', পন্ডিত অমূল্যচরণ বিদ্যাভূষণের 'প্রাচীন ভারতের সংস্কৃতি ও সাহিত্য' এবং 'ভারতবর্ষ ও বৃহত্তর ভারতের পুরাবৃত্ত'।
জ্বলদর্চি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন। 👇
হাওড়ার দাশনগরের প্রতিষ্ঠাতা আলামোহন দাশের সহায়তায় 'শ্রীজীবন প্রেস' গড়লেন বই ও পত্রিকা ছাপাবার জন্য। ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে রাজা বীরেন্দ্রনারায়ণ রায়, কান্তি প্রসন্ন সেনগুপ্ত ও বাসুদেব দেবের সঙ্গে তমলুকে নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের আয়োজনে তাঁর আগ্রহ এবং ভূমিকা অনস্বীকার্য। এই সম্মেলনে সভাপতি হয়েছিলেন ড. বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়।
টানা কুড়ি বছরের গবেষণায় ১৯৮৫ তে ‘শ্রীচৈতন্যের অন্তর্ধান রহস্য' গ্রন্থটি আলোর মুখ দেখেছিল। কলকাতার বাইরে এই বইটি বেস্টসেলার তকমা পায় কয়েক সপ্তাহ ধরে। এই বইটি লেখার জন্য পুরীর মন্দিরে গিয়েছিলেন ছদ্মবেশে। কিন্তু সেখানকার পাণ্ডারা তা জানতে পেরে খুন করার চক্রান্ত করলেও তিনি বরাতজোরে বেঁচে যান। ১৯৯২ সালে সারা বাংলা দলিত সাহিত্য সম্মেলনে 'ঠাকুর পঞ্চানন বর্মা স্মৃতি পুরস্কার' দেওয়া হয় তাঁকে।
২২ টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে তাঁর লেখনীর ছোঁয়ায়। এর বাইরে ২০ টি স্কুল পাঠ্যগ্রন্থ এবং ১০ টি সম্পাদিত গ্রন্থ পৃথিবীর মুখ দেখেছে তাঁরই কলমের ডোগায়। অপ্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যাও ৭ টিরও বেশি। মালীবুড়োর প্রকাশিত গ্রন্থগুলি হল -- যে শিশু আনিল মুক্তি (জীবনীকাব্য), ১৩৬০ ২ ছড়ায় আলাদিন, ১৩৬০, ৩. বাংলা সহিত্যের পরিচয়, ১৯৬২, ৪. বঙ্গসাহিত্যে অজানা কাহিনী, ১৩৬৯, ৫. বৃহত্তর তাম্রলিপ্তের ইতিহাস, ১৩৭১, ৬. চলো যাই কাশ্মীর, ১৯৬৫, ৭. লগ্ন (উপন্যাস), ১৩৭৩, ৮. লস্কর দীঘির মালা (উপন্যাস), ১৩৭৬, ৯. সত্যদ্রষ্টা সত্যানন্দ (জীবনীগ্রন্থ), ১৩৭৫, ১০. তাম্রলিপ্তের ময়ূর রাজবংশ, ১৯৭৪, ১১. কচ্যা বউ (উপন্যাস), ১৯৮০, ১২. মেদিনীপুর গাইড, ১৯৮০, ১৩. অন্তর্গত সত্তায় (কাব্য), ১৪. শ্রীচৈতন্যের অন্তর্ধান রহস্য, ১৯৮৫, ১৫. চৈতন্য আবির্ভাবের পটভূমি, ১৩৯২, ১৬. উপেক্ষিতা বিষ্ণুপ্রিয়া, ১৩৯০, ১৭. গৌড়ে যাচ্ছি সুহ্ম থেকে, ১৩৯৫, ১৮. গল্পে বিদ্যাসাগর, ১৯৯২, ১৯. ইতিহাস কথা কয়, ১৯৮৯, ২০. সরস্বতীরর রহস্য সন্ধানে, ১৩৯৭, ২১. নিমকি মালের দিনরাত/মলঙ্গী বিদ্রোহের ইতিহাস, ১৯৯৭, ২২. জন্ম নিল কপালকুণ্ডলা (নাটক) এবং ২৩. প্রসঙ্গ মেদিনীপুর, ২০০১।
এছাড়া স্কুলপাঠ্য গ্রন্থ হিসেবে লিখেছেন ১. চাঁদ থেকে বলছি, ২. ছোটদের লালবাহাদুর, ৩. মহাভারতের শিশু, ৪. জীবনের ধ্রুবতারা, ৫. গল্প ও ছড়ায় পঞ্চতন্ত্র, ৬. গল্প শুধু গল্প নয়, ৭. স্ফুটনিকে চেপে দেখেছি, ৮. দেখব এবার জগৎটাকে, ৯. অমৃত কাহিনী, ১০. মাতৃভাষা বীথিকা, ১১. ভাষা মঞ্জুষা, ১২. ব্যাকরণের অ আ ক খ, ১৩. ব্যাকরণ কৌমুদি, ১৪. ভোরের কাকলী, ১৫. ব্যাকরণ মঞ্জরী, ১৬. সরল বাংলা ব্যাকরণ ও রচনা, ১৭. সংস্কৃত ভাষাবীথি (সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে), ১৮. মঞ্জুবোধক, ১৯. ভাষা বিচিত্রা, ২০. চাচা নেহেরুর ছেলেবেলা এবং ২১. A Picture Word Book।
মালীর কাজ বাগান পরিচর্যা করা। সেই বাগানে বেড়ে ওঠে গাছ। আর গাছে ফুল ফোটে, ফল ধরে। কিন্তু তখন প্রসংশিত হয় গাছ। আড়ালেই থাকে মালী ও তাঁর যত্নআত্তির কথা। তেমনি সাহিত্যিক যুধিষ্ঠীর জানা হয়েছিলেন 'মালীবুড়ো'। লোকসংস্কৃতি, প্রত্নতত্ত্ব, আঞ্চলিক ইতিহাস এবং সাহিত্যের লালন পালন করা এক গেঁয়েলী মালী। তাঁর পরম প্রচেষ্টায় ফুল পল্লবিত হয়েছে মেদিনীপুরের ইতিহাস ও সংস্কৃতি। কিন্তু কালের কপোলতলে কি অনালোচিত, অনালোকিত এবং অনুচ্চারিত হয়েই থাকবে মেদিনীপুরের এই মালী?
জ্বলদর্চি তিরিশ পেরিয়ে 👇
2 Comments
খুব ভালো লাগল।লেখাটি পড়ে সমৃদ্ধ হলাম।
ReplyDeleteধন্যবাদ 🙏🏻🙏🏻🙏🏻
Delete