জ্বলদর্চি

রম্য কবিতা, পর্ব-১৪ /তথাগত বন্দ্যোপাধ্যায়

রম্য কবিতা, পর্ব-১৪
তথাগত বন্দ্যোপাধ্যায়

মনমিটার

মন থাকে মস্তিষ্কে না হৃৎপিণ্ডে!
সেই নিয়ে মারামারি কতো অসপিণ্ডে ।
প্রচলিত ধারণায় নেই ব্যুৎপত্তি –
‘পানপাতা আকারের মন’ -ভাবে সত্যি।

মনে থাকে চেতনা ও কল্পনা, বুদ্ধি,
ইচ্ছে-অনিচ্ছের শুদ্ধি-অশুদ্ধি ।
আবেগ, চিন্তা, স্মৃতি, সহজপ্রবৃত্তি,
উদার হয় বা কারো নীচ মনোবৃত্তি ।
বিচার, অঙ্গীকার, ভাষা, উপলব্ধি -
মনোগত অনুষদে নির্ণেয় লব্ধি ।

‘এমিগডালা’য় জমে ভয়, রাগ, প্রেমরোগ,
বাড়াবাড়ি হলে যার জোটে শুধু দুর্ভোগ ।
‘আবেগে’রা অশোধিত, অবাধ্য, স্বাভাবিক,
তাদের প্রতিক্রিয়া শরীরে তাৎক্ষণিক ।
‘নিওকর্টেক্স’ থেকে ‘অনুভূতি’ পরে হয়,
অভিজ্ঞতা ও স্মৃতি, বিশ্বাসে বাঁধা রয়।
দেহে মনে সংযোগ ছিঁড়লে নৃশংস,
‘হিপোক্যাম্পাস’ নড়ে গেলে স্মৃতিভ্রংশ ।
‘পিটুইটারি’র ভুল হলে নেই রক্ষে,
ঘুম নেই! কেন নেই? ত্রুটি ‘অবকক্ষে’ ।
বাগ্-বিতণ্ডা করে ভাষাহীন, বাকরোধ,
‘ব্রোকার অঞ্চলে’ই গিয়ে হবে শোধ-বোধ ।
‘পার্শ্বকরোটি’ আর ‘ললাটীয় খণ্ড’ –
ক্ষতি হলে ঘট ফাঁকা হয়ে অপোগণ্ড ।


ঠেকাতে এসবই এক ‘মনমানযন্ত্র’ -
বানিয়েছি, শোনো তবে কি এর স্বাতন্ত্র্য ।
বেদনার স্মৃতিভারে খুব ভেঙে পড়লে,
খুঁজে দেবে কোন স্নায়ু এমনটি করলে ।
ভরাতে চাইলে মন সুখ-রূপকল্পে,
আরোগ্য – ‘স্মৃতি-প্রতিস্থাপন’ বিকল্পে ।
কোন রিপু উপচেছে, বিরহ কি গলছে?
কোন্‌ আবেগ কতো গতিবেগে বেড়ে চলছে?
কল্পনা কতোখানি উদ্ভট হয়েছে?
জানার উপায় সব যন্ত্রেই রয়েছে ।
‘বনিবনা-মান’ কতো উঠছে বা নাবছে -
জানাবে তোমায় নিয়ে, কে কেমন ভাবছে ।
জেদ, খেদ, ভেদাভেদ, দ্বিধা বা নির্দ্বিধাও,
‘ইন্দ্রিয় ছাড়া মন জানবার’ - সুবিধাও।
কতো বুদ্ধ্যঙ্ক বা মানসিক ক্ষমতা,
ডেঁপোমি কতোটা, কতো স্নেহ-মায়া-মমতা!
‘মনমানযন্ত্র’-ই রেখেছি যদিও নাম,
পরিষেবা তারও বেশি, পূরবে মনস্কাম,
চৌকস, কেতাবান মনের প্রতিপোষক,
বলতেই পারো একে- ‘মননবিশ্লেষক’।

মগজেতে সেঁটে দাও ফুটো করে খুলিতে;
পর্দায় ফুটে ওঠা বিকল্পগুলিতে -
চেয়ে দেখো কতখানি হয়েছে উন্মাদন;
পছন্দসই স্থানে করলে সম্পাদন - 
ছুঁচলো সংজ্ঞাবহ, সূক্ষ্ম তড়িদ্দ্বার -
যত নিয়োজিত ঘিলু-ভাঁজে, দেবে বারবার -
সাংবাদিকের মতো হাঁড়ির খবর ঘি’র -
স্নায়ুপ্রেরকের থেকে ও স্নায়ুবর্তনীর ।
মেজাজ তিরিক্ষি বা সদাই বিমর্ষ?
নিজেকে গুছিয়ে নিতে নাও পরামর্শ ।
ব্যস্ত জীবনে মন ঠিক রাখা কাম্য,
মনমাপকের গুণে থাকে ভারসাম্য ।

‘জগা’দার মেয়ে কালই পরীক্ষা করলো,
বুঝিনিকো দেখে তা’র গলা কেনো চড়লো!
মনমাপকের নাকি সব রায়ই ভুলভাল,
ভালো সব গুণ তার করেছে অন্তরাল।
যন্ত্রে বলেছে - তার চেতনাই হয়নি,
মাতৃভাষাতে নাকি পুরো কথা কয়নি।
কল্পনা উদ্ভট, বুদ্ধি গাধার ন্যায়,
স্বভাবে বেয়াড়া তাকে দেখানোটা অন্যায়।
আজকাল ভুলে নাকি যাচ্ছে সে বেমালুম!
রিপু সব বেশি বেশি, কুম্ভকর্ণ-ঘুম।
‘টেলিপ্যাথি’ পারেনা সে, ছোঁড়ে অপ্রেম হায়!
ব্যামোর সূত্রপাত আসলে ‘এমিগডালা’য়।
বদমেজাজের চোটে জীবন অন্ধকার,
বনিবনা হয়নাকো অন্যের সাথে তার।
এ মনঃসমীক্ষণে, বিচারে - আপত্তি,
যদিও এসব তারই অপ্রিয় সত্যি।
বলেছি, “আসলে এটি একাকীর আয়না,
নিজেকে অস্বীকার করা যেথা যায়না।”

পেজে লাইক দিন👇


জ্বলদর্চি তিরিশ পেরিয়ে... 

Post a Comment

0 Comments