জ্বলদর্চি

বিস্মৃতপ্রায় কবি কামাক্ষীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় /নির্মল বর্মন



বিস্মৃতপ্রায় কবি কামাক্ষীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়

নির্মল বর্মন 

"রংমশাল" পত্রিকার সম্পাদক ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক পরীক্ষায় প্রথম স্থানাধিকারী হিসেবে 'বঙ্কিম পদক' প্রাপ্ত সাহিত্যিক ও কবি কামাক্ষী প্রসাদ চট্টোপাধ্যায় 'কৃত্তিবাস ওঝা' ছদ্মনামে কবিতা লিখে সুনাম অর্জন করেছিলেন। ২৭-০৩-১৯১৭ পৃথিবী মায়ের কোল আলো করে এসেছিলেন।আর বিশ্ববাসীর আশা আকাঙ্খাকে ধূলিসাৎ করে দিয়ে ৩০-০৫-১৯৭৬ এ সাত সাগরের পারে চলে গিয়েছেন । বস্তুতঃ ছোটগল্প, শিশু সাহিত্যিক ও কবি  রূপে যথেষ্ট জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। স্বনামধন্য কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্তের সহকারি হিসেবে দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশনের প্রচার বিভাগে কিছুদিন কর্মরত ছিলেন । কবি কামাক্ষীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় রাশিয়ান বই বাংলা অনুবাদ করেছেন, উচ্চ শ্রেণীর ফটোগ্রাফারও ছিলেন। স্বাধীন ভারতবর্ষের প্রথম অডিটর জেনারেল ছিলেন কবিবর।

কবি কামাক্ষীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ গুলি হল "শবরী", ১৯৩৭," মৈনাক" ১৯৪০, "সোনার কপাট" ১৯৪১ ,"শিবির " ১৯৪২ , "রাজধানীর তন্দ্রা" ১৯৪৩ , "একা" ১৯৪৮, "মায়াবী সিঁড়ি" ১৯৬৫ , "ছায়ামূর্তি", "শ্বেতচক্র","শ্মশানে ছোটগল্প" প্রভৃতি। ছোটগল্পেও সাবলীল ছিলেন,যেমন -" দ্বিতীয়া"- "১৯৪৩,পারুলদি"-১৯৫০ । ছোটদের জন্য "ছাতু বাবুর ছাতা" ও" ঘনশ্যামের ঘোড়া " জগৎ বিখ্যাত।
১৯৬২ সালে প্রকাশিত "মহুয়ার রাত" কবিতায় আশা ভঙ্গের যন্ত্রণা কবি যত্ন সহকারে প্রকাশ করেছেন, দৃষ্টান্ত স্বরূপ---
"আশাভঙ্গের রঙ ভাদ্র -- শেষ পশ্চিমের আকাশে
সব শুন্য একাকার।
বুদ্বুদের মতো শুধু ভাসে
নানান চোখের স্মৃতি‌‌।
জল-ভরা টলটলে
বৈশাখের বুক খাঁ খাঁ"।

কবি জীবনের আশা ভঙ্গের শূন্যতাকে গ্রীষ্মের খাঁ খাঁ বুকের সঙ্গে তুলনা করে কবিতাটিকে রহস্যময় জায়গায় এনেছেন। "এই গাছ " কবিতায় স্মৃতিমেদুর নস্টালজিয়া ক্লাসিক ভাবনা প্রকাশ করেছেন ! -- যেমন--
"এই গাছ শুধু দেখছে ;
নদীর ওপারের বন ছুঁয়ে চাঁদ উঠে এলো,
নটীর মতো নিটোল, চোখের নিচে কালি,
প্রথমে লাল, পরে শাদা , হাসপাতালের নার্সের মতো"!

জ্বলদর্চি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন। 👇


জ্বলদর্চি তিরিশ পেরিয়ে... 
কবি কামাক্ষী ্প্রসাদ চট্টোপাধ্যায় বর্তমান স্বাধীন ভারত বর্ষ যে সুখের স্বর্গ রাষ্ট্র নয়, সেখানেও ধনী গরীবের বৈষম্যে ভরপুর তা মনে প্রানে অনুধাবন করে গান্ধীজিকে উদ্দেশ্য করে "একা " কবিতায় প্রস্ফূতি করেছেন ---
"গান্ধীজী কি ম্যাজিক জানেন?
স্বাধীন হয়েও কি পাচ্ছো, রণেন?
মরা দেশ, মরা মানুষ ফেলে পালালো ইংরেজ।
গান্ধী টুপি আর মুসলমানি পেজ"!
কবি সচেতনভাবে সমকালীন বুদ্ধিজীবীদের আঁতেল পনাকে আঘাত করেছেন এভাবে---
"বিকেলের রোমান্টিক আড্ডার পিঠে বুদ্ধিজীবী সহিস
চিঁড়ে - ভাজা চাষ সহযোগী পিকাসো-- মাতিস
কিংবা ফিফত সিম্ফনি 
মৃদু টিপ্পনী"।

অথবা

"আলমারিতে ফরাসি বই।
ইন্টেলেকচুয়াল মই
মাঝে --মাঝে চেরি ব্র্যান্ডির ফাঁকে
কয়েকবার বিপ্লবের কথা হাঁকে
কিছুতেই কিছু হয় না
বাঁধাবুলির ময়না"।
কবি কামাক্ষীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় মহানগরের মধ্যবিত্ত জীবনের হালচাল উপলব্ধি করে একাকী রাত দশটার খালি ট্রামে বাড়ি ফিরতে চেয়েছিলেন। কবি বুদ্ধিজীবীদের ও রাজনৈতিক নেতাদের মেকি ভন্ডামিকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে, কবিতাতেই সেই বিষণ্ণতাবোধকে ফুটিয়ে তোলা তোলার চেষ্টা করেছেন।

Post a Comment

0 Comments