গুচ্ছ কবিতা
অমিত কুমার রায়
আলোকবর্ষ
বলি ও বড়বৌদি শুনছো গো?
---- ও করবী তুই চিল্লাস কেনো সাত সকালে?
--- তোমাদের টিভি আর আমাদের রেডিও ভরসা!
--- তো রেডিও এখন চলে?
--- চলে বলে চলে! আকাশবাণী কি গঙ্গার জলে ভেসে গেছে?
--- কি বলবি তাড়াতাড়ি বল।
---- নতুন একটা গ্রহের সন্ধান মিলেছে গো।
--- তুই সেখানে চলে যা
----- আমি যাই কি আমার নাতি নাতনি যায় দেখা যাক!
--- তোর বিয়েই হলো না তো আবার
--- হবে তো। মাত্র একত্রিশ কোটি আলোকবর্ষ দূরে চলে যাব দূষণ মুক্তি নিয়ে!
--- কে তোকে নিয়ে যাবে? কে তোর বৈজ্ঞানিক বর রে শুনি।
--- প্রচার হবে কে যাবে গো নতুন গ্রহে।
----- তা সেই গ্রহ কেমন দেখতে?
----- গোলাপী! এই গ্রহের সমান ভর বলছিল। বোকারা চাঁদে জায়গা কিনেছে,আমি গোলাপী গ্রহেই জায়গা কিনব!!
---- কুঁজোর চিৎ হয়ে শোবার সখ!
---- সুযোগ পেলে যাবই তো। যতো প্লাস্টিক, ড্রেনের জল, কলকারখানার বর্জ্য সমুদ্রে পড়ে জল বিষাক্ত হচ্ছে। সে খবর কজন মাথায় নেয় বরং অন্যায় করে চলেছে।
---- এতো জানলি কি করে?
---- রেডিও কেনো। বিজ্ঞান কথা শোনো সব জানতে পারবে।
--- আর কি বলেছে?
----- হ্যাঁ। লাল গোলাপি সবুজ বিষাক্ত শেওলার জন্ম হয়েছে। কয়েক কোটি বর্গফুট জায়গা জুড়ে সমুদ্রের গভীরে। জল বিষাক্ত,শেওলা বিষাক্ত,মাছ মরছে, যে কোনো প্রাণীর প্রাণ হানি হবেই। তাই সাবধান!
---- আজকাল কে কার কথা শোনে। রাজার কাপড় রাজা নিজেই দেখতে পায়নি।
--- এই কথা হক কথা বলেছো বড়বৌদি।
---- অতো দূরেই যাবে কেন? এই তোমাদের পুকুর। পাড়ের তিন দিকে অন্যদের বসবাস। থার্মোকল প্লাস্টিক পলিথিনে ঠেসে ফেলছে পাড়ে। সেখান থেকে জলে। আগে জল ছিল কাকচক্ষু আর এখন নীল। নীলকণ্ঠও হজম করতে পারবে না। এতো রোগ বাড়ছে নোংরামির জন্যে।
দিনে মশা রেতে মাছি তোমাদের কে কুমুদ কবি বলেছিল না। এখন
সকাল দুপুর সন্ধে
মশা মাছি নিয়ে বাসকরি আনন্দে
---- তুই ছড়াও কাটিস করবী!
---- বড়বৌদি। দুঃখ ক্ষোভে কাব্যি আসে গো। ডিক্রি আর ডিকশনারি লাগে না গো। আর আলোকবর্ষ দূরেও যেতে হয় না।
কোরাস
কিছু দেখা কবিতার জন্ম দেয়
সব দেখা কবিতা নয়
কিছু উড়ে আসা ব্যথা
ছবি হয়ে যায়।
কিছু ব্যথা কবিতার জন্ম দেয়।
কিছু ভালোবাসা বাসা বাঁধতে পারে না।
চিলের মতো ছোঁ মারে
অন্য কোথাও চলে যায়
কোনো লাশ বনে কাঁটা হয়ে ফোটে ক্যাকটাস।
নেশা তৃষ্ণার রূপও বদলে যাবে
উভয়ের মন যখন কোরাস গাবে।
সবার ক্ষুধা তো সমান মাপের নয়
পিরামিডে তুমি ক্ষুধার আকাঙ্ক্ষায় চড়ো
শঙ্কু তোমার শঙ্কা হবে একদিন
নিচে নামার পথ নয় মসৃণ।
বুকে জ্বলে নেভে
চৈত্রের তৃতীয় বিষন্ন বিকেলে
ঝিমোনো বৃষ্টির লালা মেখে
বিষন্ন পালখ ঝাপটে যখন
পাখিরা পাখির মালা সাজায়
কুলায় ফেরার সে কি আকুলতা
তখন আমার কেন কি জানি
ঘর ছেড়ে যেতে চায় মন
পিছনের সবকিছু ছেড়ে
অদৃশ্য অদ্ভুত আঘাত বেদনায়।
পাখিরা কেমন সারি বাঁধে
নিমেষেই পলক হারা হয়
আমি কেনো কিজানি হইনি।
ডাহুকেরা ডেকে ওঠে কচুবনে
সঙ্গী খোঁজে তাদের মন
হাত থেকে কেন যে হাত খুলে যায়
সম্পর্কের সূক্ষ টানাপোড়েনে
ভাবের মাফকাঠি কিভাবে বদলায়
বিকেলের বাঁকে সাঁঝতারা জ্বলে
অভিমান অশ্রুর মালা গেঁথে ফেলে।
কতো ট্রেন হেঁটে চলে যায়
ট্রামরাও ক্লান্ত একঘরে
স্মৃতি টুকু লিখে রাখে কেউ
ইতিহাস ঘাস হয়ে ছায়।
মন কাঁদনে বৃষ্টি রক্ত ঝরে বুকে
চোখ কাঁদলে সবাই তা দেখে।
জোনাকিরা বুকে জ্বলে নেভে
কষ্টে জীবনানন্দ মনে ঝুঁকে।
জ্বলদর্চি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন। 👇
0 Comments