জ্বলদর্চি

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা ১২৪

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা  ১২৪
সম্পাদক -মৌসুমী ঘোষ 
চিত্রগ্রাহক মৃণাল ঘোষ

সম্পাদকীয়,
 মা আর সন্তানের মাঝে অজানা একটা বাঁধন থাকে। যে বাঁধনের কারণে মা তাঁর ছেলের কথা কোনো মাধ্যম ছাড়াই শুনতে পায়। প্রচ্ছদের ছবিটিতে মৃণাল আঙ্কেল এমনই এক বন্ধনের ছবি তুলে পাঠিয়েছেন। মায়ের সঙ্গে সন্তানের এই অমোঘ বন্ধন ছাড়াও আরো কিছু বন্ধন আছে যা চোখে দেখা না গেলেও অনুভব করা যায়। যেমন শ্রীজাত তার আঁকায় এঁকেছে। ছোটোবেলার বন্ধুরাও একে অপরের এমন এক বন্ধনের সাথী হয়। শুভঙ্কর রাধাকৃষ্ণের ছবি পাঠিয়েছে। রাধা আর কৃষ্ণও দুই সখা সখী। এদের প্রেমের বন্ধনের কথাও  কে না জানে! তাই তো কৃষ্ণ বললেই রাধার নাম আর রাধা বললেই কৃষ্ণের নাম চলে আসে। ঠিক যেমন শীতকাল মানেই খেজুর গুড়ের কথা চলে আসে। আর সেইটির ছবি এঁকে পাঠিয়েছে মানালী। ঠিক যেমন বসন্ত মানেই দোল আর রাঙা পলাশের মাতামাতি। সেই নিয়ে ছড়া লিখেছেন রূপা আন্টি। ঠিক যেমন ছোটোবেলা মানে প্রিয় পাঠকদের পাঠপ্রতিক্রিয়া। শ্রীছন্দা আন্টি বহুদিন পর এমনই এক পাঠ প্রতিক্রিয়া পাঠিয়েছেন। ঠিক যেমন মলয় জেঠু মানে ভ্রমণের গল্প আর ছবি। এবারে মলয় জেঠু সাদা বালির দেশের গল্প বলেছেন। আর সদ্য চলে যাওয়া নারী দিবস নিয়ে কবিতা লিখেছে সমাদৃতা। কিন্তু গত দুবছর আমরা কোভিডের কারণে বেড়ানো দোল খেলা প্রিয় জনেদের সঙ্গে গল্প করা সবই প্রায় বন্ধ রেখেছিলাম।  টিকাকরণ হয়ে যাবার পর আমরা আবার কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছি তাইনা? জাতীয় টিকাকরণ দিবস ১৬ মার্চ,  সেই নিয়ে দোলনচাঁপা আন্টি প্রতিবারের মতোই লিখেছে। আমার মনেহয়, পোলিও টিকার মতোই কোভিড টিকাও ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়বে সারা পৃথিবীতে। এবারে বলি লাচুঙের নেকড়ের গল্প পড়ছো তো? কি? নেকড়ে এখনো আসেনি গল্পে। আরে আসবে আসবে। এবারে শ্রীকান্ত আঙ্কেল তাঁর উপন্যাসে  তোমাদের প্রিয় কার্টুন চরিত্র পোকেমনের গল্প বলেছেন। কি খুশি তো? আমিও ভীষণ খুশিইইইই। - মৌসুমী ঘোষ।

ধারাবাহিক উপন্যাস
লাচুঙের নেকড়ে
পর্ব ৩

শ্রীকান্ত অধিকারী


শিঙির মনটা আজ ভীষণ খারাপ। প্রথমে বাগডোগরা, পরে ভাজরা ট্যাক্সি স্ট্যান্ড থেকে বেরোবার পর পরই মনমরা হয়ে বসে ছিল। অনেক ক্ষণ এভাবে চলার পর এক বড় রকমের বাঁক নিতেই রামসির গায়ে প্রায় উলটে যেতেই হেসে ওঠে রামসি। গাড়ির সবাই এ ওর গায়ে হুড় মুড় করে গড়িয়ে পড়ে। আর গাড়ির সকলেই আরও একবার হেসে ওঠে। কিন্তু শিঙি যেন মন মরা। মুখে হাসি নেই। উদাস হয়ে তাকিয়ে থাকে ঘন মেঘ কুয়াশার ঢেকে যাওয়া সিকিম উপত্যকা। রামসি সেই গ্যাংটক থেকে বেরোবার পর থেকেই নানা গল্প, বলে নানা আকার ইঙ্গিত করেও শিঙির মন ভালো করতে পারে না।তখন শিঙির মা বরঞ্চ রামসিকে থামতে বলে।--ছেড়ে দেনা ওকে। জানিসই তো বিনি ছাড়া ও থাকতে পারে না। 
তখনই বলেছিলাম বিনিকে সঙ্গে নিয়ে চল। রামসি বলে।  
বিনি ওদের বছর দুয়েকের পাপ্পি।গায়ে সোনালি লোমে ঢাকা এক ইন্ডিয়ান স্পিটজ। শিঙির কাছে সব সময় কোল ঘেঁষে থাকে। পড়া, টিভি দেখা এমন কি কার্টুনও দেখে পিটপিট করে। বিনির নামটাও শিঙিরই দেওয়া। ও যখন আরও ছোটো ছিল,টিভিতে দেখতো এক শান্ত ধীর স্থির নিয়মনিষ্ঠ ব্লু অক্টোপাস অসওয়াল্ড আর তার পোষ্য কুকুর বিনির কান্ড কারখানা। কি মজায় না পেত। সারাদিন বিনি আর অসওয়াল্ড। আর অত্যন্ত উচ্ছল এক বন্ধু ডেইসি। শিঙির সব থেকে ভালো লাগত বিনিকে। সেখান থেকে শিঙিও ওর পাপ্পির নাম রাখে বিনি। প্রথমে ভেবেছিল সঙ্গে নিয়ে আসবে কিন্তু ফ্লাইটে এবং পরে পাহাড়ি রাস্তায় কারের ঝক্কি নিতে পারবেনা ভেবে বিনিকে আর নিয়ে আসা হয় নি। তবে শেষমেষ পাশের বাড়ির নমিতা আন্টি এগিয়ে এসে পুরো ব্যাপারটা সামলে নিয়েছিল।–ওদের পাপ্পির সঙ্গে বিনির বড় ভাব। ওকে চেনে। আর নমিতা আন্টি শিঙিকে বুঝিয়ে বলে ,যে তাদের সঙ্গেই বিনি থাকবে অসুবিধা হবে না। কিন্তু সে না হয় হল, বাগডোগরায় ল্যান্ড করার পর এক সহযাত্রীর কোলে একটা পাগ দেখে রামসি চিৎকার করে বলে, দেখ বুনি কি সুন্দর না! 
তারপর থেকেই শিঙি চুপ। 
গ্যাংটক শহর ছাড়িয়ে পাহাড়ি রাস্তার গা ঘেঁষে চলছিল ওদের গাড়ি। জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে দেখছিল নানা রকমের লতা ছোট বড় সব সরল গাছ। কোনটা পাইন কিংবা ঝোঁপালো নাম জানা গাছ। কোথাও কোথাও চিরিচিরি পাতার ফার্ণ জাতীয় গুল্ম। বেশ চারিদিক ঘন সবুজ, মাঝে মাঝে ধুসর বা খয়েরি ছোট ছোট পাহাড়।
লাচুঙ যেতে কতক্ষণ লাগতে পারে গ্যাটসো? রামসির বাবা বলে। আসলে হোটেল থেকে গাড়ি ট্যুরের প্যাকেজ গাড়ি হোটেল ইত্যাদি সব করেছে রামসির বাবা সোমেশ্বর।প্রয়োজনীয় কাগজপত্র টাকাপয়সার লেনদেন সব কিছু গ্যাংটকের হোটেল থেকেই ব্যবস্থা করে নিয়েছে। ড্রাইভারের সঙ্গে আলাপও সেরে নিয়েছে। তাই সে নাম ধরেই জিজ্ঞাসা করে। 
গ্যাটসো হাসি মুখে উত্তর দেয়,-- সাত ঘন্টা সাব। 
এখনো পর্যন্ত গ্যাটসো শান্ত হয়েই গাড়ি চালাচ্ছে। 
গাড়িতে ড্রাইভার গান চালিয়ে দিয়েছে। 
বড়মামা এক মনে রাস্তার দিকে তাকিয়ে নতুন নতুন গাড়ি দেখছিল। আর তাদের মডেলগুলো দেখেই পাশে ড্রাইভারকে শোনাচ্ছিল।--মহিন্দ্রা এক্স ইউ ভি ফাইভ হান্ড্রেড! সিউর !  ওটা ক্রেটা নিশ্চয়! কিন্তু প্রাইভেট কার কেন? 
পিছনের সিটে কে কী বলছে সেদিকে বড় মামার ধ্যান ছিল না। অবশ্য বড় মামা কথা বললে ছোট মামার কোনো চান্স নেই কিছু বলার। ছোট মামা বড় মামার ধারে কাছেও থাকে না। থাকে মামিমার পাশে পাশেই। তবে এবার বড়মামার তোয়াক্কা না করেই ছোটমামা হঠাৎ শিঙির উদ্দেশে বলে , খুব তো গান করিস। বল দেখি এটা কার গলা? 
শিঙি কোনো উত্তর দেয় না। তবে রামসি বলে, অরিজিৎ সিং। তাই না শাদুলমামা। 
শাদুলমামা হো হো করে হেসে ওঠে। ছোটমামাও দিব্বি ওই নামেই সারা দিতে বেশি আগ্রহ দেখায়। বলে নারে এই গলা এক সময় বলিউড টলিউড মানে বাংলা হিন্দি জগতে মাতিয়ে রেখেছিল। এ হল গিয়ে বাংলার গর্ব। আমাদের কেদারনাথ ভট্টাচার্য। 
--সে আবার কে শাদুলমামা? রামসি বলে। 
--তা জানবি কেন হাঁদা। বাঙালির ঐতিহ্য মনে রাখবি না। এক্ষুনি বল জাপানি কার্টুনের নাম দিব্বি বলে দিবি—কি যেন নাম সব পোকেমন ফোকেমন সব।  
--না গো মামা এখন টপ জাপানিজ কার্তুনের মধ্যে এওট, নারুটো, ওয়ান পাঞ্চ ম্যান, ব্লিচ, জুজুৎসু কাইজেন কত আছে। 
--দেখ দেখ কেমন গড়গড়িয়ে সব বলে দিচ্ছে। অথচ আমাদের কেদারনাথ যে সারা ভারতবর্ষের মন ভরিয়ে দিয়েছে তার কথা বললেই  ঠ্যাঙা উল্টে কাৎ। --আমি জানি না। 
ওরে ও হল আমাদের কুমার শানু। আমাদের পাড়ার ছেলে। ঘরের ছেলে। এখনো পর্যন্ত তিন বাঙালিই সারা ভারতবর্ষের মান রেখেছে বুঝলি। আমাদের তিন দাদা-মিঠুন, সৌরভ আর কুমার শানু। 
-- শানু আবার কু-মা---র! বড় মামা হঠাৎ হালুম করে গর্জন করে ওঠে। ও আবার কবে গান শিখলোরে। হোটেলেমোটেলে ফাঁকা রাস্তায় ভেড়ার মত ভেঁভাত।
--কী বলছ দাদা? পদ্মশ্রী পুরস্কার পেয়েছে। 
--রাখ তো তোর পদ্মশ্রী। আমাদের বঙ্গে কত শ্রী দেখলাম। ও কোনোদিন গান করেছে? গান বলেছে। আহা গান হল গিয়ে, বলতে বলতে বড়মামা বাচ্চা ছেলের মত গেয়ে ওঠে–লকড়ি কি লাঠি লাঠি পে ঘোড়া /ঘোড়ে কি দুম পে জো মারা হাথোরা। ওহে ছোকরা এ গানা লোড হ্যায় কি? বড় মামা ড্রাইভার গ্যাটসোকে বলে। 
--দোড়া দোড়া দোড়া ঘোড়া দুম উঠা কে দৌড়া।--মিঠে গলায় শিঙি গেয়ে ওঠে। সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির সকলে হো হো হেসে ওঠে। বড় মামা বেশ সোৎসাহে বলে, ব্রাভো বেটা। ইউ আর গ্রেট। 
(ক্রমশ)

চিত্র-  শুভঙ্কর সেন। ক্লাস সিক্স সোদপুর হাই স্কুল



জ্বলদর্চি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন। 👇



মাতাল পলাশ  
রূপা চক্রবর্ত্তী 

এলো এলো ওই এলো দোল 
ফাগুন দিনের ডাকে ---
ডালে ডালে ডাকছে কোকিল 
সবুজ গাছের ফাঁকে। 

আকাশ ঘিরে আবির ছড়ায় 
দিকে দিকে বাতাস ---
ডাক দিয়ে যায় দোরে দোরে 
ঝিম মাতালে পলাশ। 

মাদল বাজে তালে তালে 
অঙ্গ ওঠে দুলে ---
খোঁপার গাঁদা পরে ঝরে 
নাচন তালে ভুলে। 

ভুতের মতন রং মেখে সব  
চিনতে না তো পারি ,
ভুলটি করে অচেনাতে 
দিও না কেউ আড়ি। 

ভ্রমণ

সাদা বালির খপ্পরে

মলয় সরকার

নামটা শুনেই আশ্চর্য লাগছে তো? না কি মনে হচ্ছে, বালি তো সাদাই হয়, এ আর নতুন কথা কি! 
না, সত্যি করে আমরা চার পাশে যে বালি দেখে থাকি, বল তো,সেগুলো কি ঠিক সাদা, মানে চুণের মত বা নুনের মত সাদা? নিশ্চয়ই তা নয়?

হ্যাঁ, শুনতে যত আশ্চর্যই হোক, আমি কিন্তু যে বালির কথা বলছি, তা ধবধবে নুনের মত সাদা বালি। তাও একটু আধটু নয়,  বিশাল মরুভূমির মত জায়গায়।তাতে পাহাড়ের মত উঁচু উঁচু জায়গাও রয়েছে।একেবারে উঁচু নীচু নিছক সাদা বালির মরুভূমি।

কি এবার একটু আশ্চর্য লাগছে তো? মনে হচ্ছে, সত্যি এরকম হয় না কি?

হ্যাঁ, সত্যি সত্যিই সেরকম এক জায়গার কথা বলছি।আর গল্পকথা নয়, একেবারে নিজের চোখে দেখে এসে তোমাদের সেই গল্প শোনাচ্ছি। শোন তবে-
বস্ক ডেল এপাচে তে পাখীর ঝাঁক


আমেরিকা মহাদেশের ম্যাপের একেবারে তলার দিকে যদি কেউ দেখ, অর্থাৎ একেবারে দক্ষিণ দিকে একটি প্রদেশ রয়েছে, যার একপাশে রয়েছে আরিজোনা আর একপাশে রয়েছে টেক্সাস।তার নাম নিউ মেক্সিকো।
এই প্রদেশটা সম্বন্ধে খুব বিস্তারিতভাবে কিছু বলছি না।পরে তোমরা বই পড়ে নিশ্চয়ই জেনে নেবে। তবু দু চার কথা না বললেই নয়।
আমেরিকার যে মোট পঞ্চাশটি প্রদেশ আছে, তার মধ্যে এটি আয়তনে পঞ্চমস্থান দখল করেছে।কিন্তু এর লোকসংখ্যা খুবই কম, সেই হিসাবে এটি ৩৬ তম জায়গা নিয়েছে। কাজেই এখানে সব কিছুই বেশ ফাঁকা ফাঁকা। মাইলের পর মাইল শুধু ফাঁকা জায়গা। এটি মেক্সিকোরই অংশ ছিল ১৮৪৮ সালের আগে পর্যন্ত। তার পর এটি সেখান থেকে বেরিয়ে এসে আমেরিকার সাথে যুক্ত হয়। আমেরিকা এটিকে ৪৭ তম প্রদেশ হিসাবে মান্যতা দেয় ১৯১২ খীষ্টাব্দে।

এরকম একটা জায়গায় বেড়াতে যাওয়া ঠিক হল।আর বেড়াতে যখন যাওয়া হচ্ছে ,তখন তার বিশেষত্ব কিছু তো নিশ্চয়ই আছে, যা চট করে অন্য কোথাও পাব না।তাই দেখতেই প্রধানতঃ যাওয়া।সেটা কি, পরে আসছি সে কথায়।

রাত প্রায় ১০ টা নাগাদ পৌঁছালাম নিউ মেক্সিকোর El Paso এয়ার পোর্টে। গাড়ি আগে থেকে 'বুক' করাই ছিল।সঙ্গেও ছিল খাবার। গাড়ী ছুটল অন্ধকারের বুক চিরে ধূ ধূ মাঠকে দু টুকরো করে দুপাশে ফেলে তার অভীষ্ট লক্ষ্যে। আপাতঃ লক্ষ্য রাতের আস্তানা হোটেলের নরম কোমল নিশ্চিন্ত এক শয্যার আরাম। কারণ,আগামী কালই রয়েছে সূর্য ওঠার আগের ভোরের এক পরিকল্পনা।

হোটেলে পৌঁছালাম যখন, প্রথম রাতের পাখীরাও তখন ক্লান্ত হয়ে পড়েছে।রাতও তখন চলতে চলতে মধ্যপথে। ঘড়ি বলছে দেড়টা।শুতে শুতে দুটো বাজল।

পরদিন ভোর পাঁচটায় ছাড়তে হল বিছানা। ৫.৩০ টার মধ্যে মোটামুটি তৈরী হয়ে বেরোলাম - উদ্দেশ্য এক পাখীর আস্তানায় জলাভূমিতে পাখী দেখা।চোখে তখন ঘুম ভাল করে ছাড়ে নি। বাইরে তাকিয়ে দেখলাম, দিনের ঘুমও তখন ছাড়ে নি। কুয়াসা তাকে জড়িয়ে রেখেছে।আমাদের উদ্দিষ্ট জায়গার নাম Bosque  del apache wildlife refuge।এখানে প্রায় ৫৭০০০ একর এক জলাভূমিতে হাজার হাজার Sandhill cranes, Snow geese, Ross geese, Ducks  এবং বহু জলচর পাখী দেখা যায়।এছাড়া hawk, eagle ইত্যাদি নানা পাখীও যায়।জন্তুর মধ্যেও Coyote, Mule deer, Jack rabbits ইত্যাদি দেখা যায়।Rio Grande র কাছে এই বিশাল জলাভূমিতে শত্রুর হাত থেকে বাঁচতে আশ্রয় নেয় হাজার হাজার পাখী।Chupadera এবং San Pascual পর্বতের মাঝে Chihuahuan মরুভূমির উত্তর দিকে এই পার্ক।এটি ছড়িয়ে রয়েছে আমেরিকার New Mexico প্রদেশের San Antonioতে এবং Socorro Countyতে।১৯৩৯ সালে এই পার্কটি মানুষের দর্শনীয় হিসাবে খুলে দেওয়া হয়। এখানে মানুষ জড়ো হয় সূর্য ওঠার আগে থেকে। কারণ সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে পাখীরা সাধারণতঃ তাদের এই রাত্রি আবাস ছেড়ে রওনা হয় আরও দূর পথে।সেই ওড়ার সময় এই হাজার হাজার পাখীর ডানার শব্দে এবং তাদের সাদা পাখায় প্রথম ঊষার অরুণালোকের বিচ্ছুরণে যে অদ্ভুত দৃশ্যের সৃষ্টি হয় তাই এখানকার প্রধান দর্শনীয়।তবে সব সময়েই যে পাওয়া যায় তা নয়।

গিয়েই দেখি বহু মানুষ ভীষণ লম্বালম্বা টেলিলেন্স লাগানো ক্যামেরা নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছেন জায়গা খুঁজে। অপেক্ষা করছেন বিশেষ মূল্যবান মুহুর্তের,যা ধরে রাখবেন তাঁদের যন্ত্রের স্মৃতিতে। চারিদিকে ছড়িয়ে রয়েছে বিশাল ঘাস আর ছোট ছোট ঝোপ গাছ আচ্ছাদিত জলাভূমি।কোথাও অল্প জলা, কোথাও শুধু কাদা, কোথাও বা শুষ্ক।দূরে দূরে কিছু পাহাড়ও দেখা যাচ্ছে।এখানে ওখানে বেশ কিছু পাখী দেখলাম।
বিভিন্ন জায়গায় তৈরী করা রয়েছে ফ্লাইট ডেক। ফ্লাইট ডেক হল স্থলভূমি থেকে কাঠের পাটাতন দেওয়া একটা মঞ্চ, যা জলাভূমিতেও কিছুটা বিস্তৃত হয়েছে।এখান থেকে পাখী দেখার প্রশস্ত সুযোগ ও ব্যবস্থা আছে। এক জায়গায় দেখলাম Sandhill cranes এর এক বিশাল ঝাঁক, ঘুরে বেড়াচ্ছে খাবারের খোঁজে। কিন্তু দেখার ইচ্ছা ছিল উড়ন্ত পাখীর ঝাঁক।সেটা যদি সামনে দিয়ে মাঠ ছেড়ে উঠে যায় বড় সুন্দর সে দৃশ্য।কিন্তু সেটা আর হল না।আকাশ এখনও মেঘলা মেঘলা। ফলে শীতের ভাব রয়েছেই। এতক্ষণে ভোর হচ্ছে।সূর্যদেব আপ্রাণ চেষ্টা করছেন কুয়াশার জাল ছিঁড়ে বেরিয়ে আসতে।কিন্তু কুয়াশা বা মেঘও কম শক্তিশালী নয়।লড়াইয়ে জমি তারাও ছাড়তে রাজী নয়।

সেই লড়াইয়ের মধ্যেই আমরা ঘুরে নিলাম পুরো 'রিম'।রিম হল, এই বিশাল ক্ষেত্রটি ঘুরে দেখার জন্য এর চারধার ঘিরে যে হাঁটা, বাইকিং বা গাড়ি চলার মত রাস্তা করা আছে সেটি। উদ্দেশ্য, যদি বিরাট কিছু পাখীর ঝাঁক কোথাও চোখে পড়ে–।তবে আমাদের কপাল তত সুপ্রসন্ন নয়। পাখী যদিও অনেক দেখলাম, কিছু কিছু উড়ন্তও দেখলাম তবে ঝাঁক বেঁধে ওড়ার যে সৌন্দর্য তা দেখতে পেলাম না।চোখে পড়ল কিছু উড়ন্ত ঈগল, আর র‍্যাভেন্স বা দাঁড়কাকের মত বড় কাক।অনেকে বলল, আসলে এই মেঘলা দিনে পাখী কম আসে।জানি না এর সত্যি মিথ্যে।তবে আমাদের কপালে যে মেঘের ছায়া, সেটা ভালই বুঝলাম।
যাই হোক, এতবড় একটা জলাভূমি ও পাখীদের স্বর্গরাজ্যের বিচরণক্ষেত্র দেখলাম,এত  রকম পাখীও দেখলাম, তাই বা কম কি!
( চলবে)
শ্রীজাত মিদ্যা
প্রথম শ্রেণি, বিদ্যাসাগর শিশু নিকেতন, মেদিনীপুর

নারী
সমাদৃতা রায়
একাদশ শ্রেণী
উত্তরপাড়া গার্লস হাই স্কুল
হুগলি

নারী তুমি সকাল থেকে
কাজকে ফাঁকি দিও,
নারী তুমি কাজের মাঝে
নিজেকে সময় দিও।।

নারী তুমি শরীরটাকে
একটু ভালোবেসো,
নারী তুমি একান্তে
মনের আবেগে ভেসো।।

নারী তুমি ফুলের মত
সাজিয়ে তুলেছ জীবনের  মুহূর্ত ।
নারী তুমি যতন করে আজ ,
সেজেছো মনের সাজ।।

নারী তুমি স্বাধীন হয়ো
আজকের এই দিনে,
নারী তুমি বুঝিয়ে দিও
মা শব্দের মনে।।

স্মরণীয় দিবস
(জাতীয় টিকাকরণ দিবস)  
কলমে - দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে

জনসমাজে টিকার গুরুত্ব এবং জন স্বাস্থ্যে এর ভূমিকা তুলে ধরার জন্য প্রতি বছর ১৬ই মার্চ জাতীয় টিকা করণ দিবস পালিত হয়।পোলিও ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ দেশে ১৬ই মার্চ ১৯৯৫সালে দেওয়া হয়। সেই থেকে ১৬ই মার্চ দিনটি জাতীয় টিকাকরণ দিবস হিসেবে পালিত হয়।টিকা করণ দিবসের মূল লক্ষ্য হলো জনমানসে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া এবং দেশকে রোগ মুক্ত রাখা।
প্রতিবছরের মতোই এবছরও জাতীয় টিকাকরণ দিবস (১৬ই মার্চ ২০২৩) পালিত হবে। জাতীয় টিকাকরণ দিবস (রাষ্ট্রীয় টিকাকরণ) মূলত সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি অত্যন্ত সংক্রামক রোগ প্রতিরোধের জন্য টিকাকরণ কিভাবে সবচেয়ে কার্যকর উপায় সেই বার্তাটি পৌঁছে দেয় জনমানসে।
অন্যদিকে আমরা বলতে পারি ২০২০ সালের ২৩ মার্চের সময় থেকে যে লকডাউন শুরু হয় করোনাভাইরাসের কারণে। সেই বিভীষিকাময় দিনগুলিতে একমাত্র ভ্যাকসিন বা টিকাই ছিল করোনাভাইরাসের থেকে প্রতিরোধের উপায়। সেই সময় থেকে আজ পর্যন্ত ভ্যাকসিনেশনের কারণেই আমরা করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে অনেকাংশে রক্ষা পেয়েছি।
শুধু করোনাভাইরাসই বলবো কেন এর আগে অনেক সংক্রামক লোকের হাত থেকে টিকা বা ভ্যাকসিনের জন্যই মানুষ রক্ষা পেয়েছে, আর এজন্যই আমাদের দেশে 'জাতীয় টিকাকরণ দিবস' পালিত হয়।
জাতীয় টিকাকরণ দিবস অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এই কারণে বলবো ভারতবর্ষ তার সর্বকালের সর্ববৃহৎ কোভিড ১৯ টিকা যে দান কর্মসূচি চালু করেছে ইতিমধ্যে তা ৩০ মিলিয়ন সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে। ভারত সরকার ভারতের প্রতিটি শিশুর টিকাকরণ নিশ্চিত করতে 16 ই মার্চকে জাতীয় টিকা করণ দিবস হিসেবে পালন করে এবং এর মাধ্যমে জনসাস্থ্য কর্মীদেরও সম্মান জানানো হয়। কোভিডের টিকা আবিষ্কারের পর টিকা করণ আরো দ্রুত হারে বাড়তে থাকে। বলা যায় ২০১৭ থেকে ২০২০ এর মধ্যে এম আর টিকা প্রচারের মাধ্যমে ৩২৪ মিলিয়নেরও বেশি শিশুদের টিকাকরণ হয়েছে। এরপরে হাম ও রুবেলের মতো রোগগুলি অনেক রাজ পেয়েছে।
টিকাকরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো, বিভিন্ন মারাত্মক রোগের হাত থেকে রক্ষা করে। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে আমেরিকায় পোলিও রোগটি একসময় বিভীষিকার আকার ধারণ করেছিল কিন্তু এই টিকাকরণের মাধ্যমে তা আজ একেবারে নির্মূল হয়ে গেছে।
টিকাকরণে আমাদের জীবন যাত্রার মানকেও প্রভাবিত করে। টিকাকরণ হয়ে থাকলে আমাদের জীবন,খরচ ও সময় বাঁচে। গত কয়েক দশক ধরে সারা বিশ্বে লালন সখের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য টিকা বা ভ্যাকসিনেশন একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হয়ে উঠেছে।
মানালী সরকার 
বেথুয়াডহরি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, বেথুয়াডহরি, নদিয়া, সপ্তম শ্রেণি
.
পাঠপ্রতিক্রিয়া
(ছোটোবেলা ১২৩ পড়ে শ্রীছন্দা বোস যা লিখলেন)

জ্বলদর্চি পত্রিকায় ঋপণ  আর্যের  ছাগল ছানার ছবিটি খুব মিষ্টি। মনে হলো কোলে তুলে নিই।
এখানে এবার গল্প, কবিতা ও অঙ্কন  গুলি দারুণ আকর্ষণীয়।
শ্রীকান্ত অধিকারীর লেখা          
"লাচুঙের নেকড়ে " ভালো লাগলো "। আমি কয়েকটা অভয়ারণ্য ভ্রমণ করেছি তাতে যা অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার অরণ্যের প্রতি দারুণ আকর্ষণ বেড়ে গেছে।
এই গল্পটাতে একটা বেশ  রোমাঞ্চকর পরিবেশ ফুটে উঠেছে। শেষ লাইন টা চমকপ্রদ। পরের অধ্যায়টি জানার আকর্ষণ বেড়ে গেল।

সব্যসাচী  ধরের " উৎসার " গল্পটি  মনোস্তাত্ত্বিক বিষয়ের বিশ্লেষণের ওপর  ভিত্তি করে লেখা। ভাই বোনের ভালোবাসা মনকে ছুঁয়ে গেল।
 দাদা সৌপ্তিক আর বোন লোপামুদ্রা এরা যতদিন কাছে ছিলোনা দুঃখের শেষ ছিলোনা।
যখন বোন দাদাকে ফিরে পেলো আনন্দে তার মন ভরে উঠলো।
বোঝাপড়ার অভাবে কতইনা ভুলবোঝাবুঝি হয়ে থাকে। তনুভা দিদিমনি উচ্চশিক্ষিত, উনি শিশু শিক্ষা নিয়ে গবেষণা করেছেন, এই অবস্থায় তনুভা দিদিমনি একজন স্কুলের উচ্চ পদে অধিষ্টিত তা সত্বেও সুভদ্রা  দিদিমনি তাঁকে " আশকারা দিচ্ছেন বলে স্পর্ধা দেখাতে পারলো।কিন্তু সময় মতন দারুণ একটা গল্প দিয়ে সুভদ্রা কে  আগে নিজেকে শোধরাবার উপায় বলে লজ্জিত করালেন।
গল্পটি মনকে নাড়া দিলো।
এরপর আসি দোলনচাঁপা তেওয়ারী দের লেখা "স্মরণীয়  দিবস " বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস  উপলক্ষে খুব গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছেন। আস্তে আস্তে  বৃক্ষ  এবং বন্য প্রাণীরসংখ্যা কমে যাচ্ছে। পরিবেশগত  ভারসাম্য রক্ষার জন্য  উদ্ভিদ ও বন্যপ্রাণীদের দিকে দৃষ্টির  গণসচেতনতার অত্যন্ত প্রয়োজন। তাই প্রতি বছর এই
বন্যপ্রাণী দিবস উদযাপনের
সার্থকতা আছে।
সুন্দর  আলোচনা।

তারাপ্রসাদ সাঁতরার লেখা" বোঝা  নয় এতো সহজ" কবিতা টি ছন্দ ও ভাষার মেলবন্ধনে সুন্দর প্রকাশ।
এই লাইন দুটো মন কাড়লো
" কে রাজা কে প্রজা "
আর " জ্ঞান হলো ঠিক পথ "
সমাদৃতা রায়ের  কবিতা "তুমিই হলে বিজ্ঞান "--- অভিনব লাগলো।
কদিন আগেই বিজ্ঞান দিবস গেল। তাই এটা সময়োপযোগী কবিতা l
বিজ্ঞান দিবসে নোবেল  জয়ী  সি ভি রমনের " রমন এফেক্ট " আবিষ্কারের  ঘোষণা  করা হয়
দিনটি ছিল ১৯২৮ সালের ২৮ শে ফেব্রুয়ারি। বিষয়টি আলোর ব্যাপারে। যাহোক  অনেক কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে সাজানো এই কবিতা।
কুসংস্কার কে সরিয়ে বিজ্ঞান কে আহ্বান করে  সমাদৃতা  আমাদের আনন্দিত  করলো।
অঙ্কনে শ্রেয়ার  আঁকা নর্তকীর
ছবিটি খুবই সুন্দর।
ঈশিকা দাসের আঁকা ব্ল্যাক পেন্সিলে স্কেচ মন ছুঁয়ে গেল।
আর ওদিকে রুহানা খাতুনের
আঁকা পেচার ছবিটা বেশ মজারই  হয়েছে। আমার দিকে বড় বড়  চোখ করে তাকিয়ে আছে।
মৌসুমিদির সম্পাদনার তো তুলনা নেই ছোটদের জন্য হাসি আর আনন্দ দিয়ে পত্রিকাটি আলোকিত করে রেখেছেন,তাই অনেক অনেক শুভেচ্ছা, ভালোবাসা আর শুভকামনা রইলো।।





Post a Comment

0 Comments