জ্বলদর্চি

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা ১২৩

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা  ১২৩

সম্পাদকীয়,
ছাগল গৃহপালিত পশু। আমরা গরু, ছাগল গৃহতেই পালন করি। শীতলগ্রামের ছোট্ট ছাগলছানাটাকে ছোট্ট এক বন্ধু আদর করছে তা তোমরা ঋপণ আঙ্কেলের তোলা ছবিতে দেখতে পাচ্ছো জানি। এতো গেল গৃহপালিত পশুদের কথা। কিন্তু তোমরা কি জানো, বন্য প্রাণীরা দিন দিন সংখ্যায় কমে আসছে। কারণ বন কমে আসছে। কমে আসছে বন্য প্রাণীদের খাদ্য। তাই  প্রতি বছর ৩ রা মার্চ দিনটি বন্য প্রাণী দিবস হিসেবে সারা বিশ্ব্র মানুষ পালন করে। এই নিয়ে এবারের সংখ্যায় লিখেছে দোলনচাঁপা আন্টি। আমার কথা রুহানার আঁকা পেঁচাটা কেমন চোখ বড়ো বড়ো করে শুনছে দেখেছো? তবে মন খারাপ কোর না। অভয়ারণ্যে বন্য প্রাণীরা ভালই থাকে। আচ্ছা বলতো ভেড়া তো মানুষ তুলোর জন্য পোষে, আবস্র পাহাড়ি জঙ্গলেও ভেড়া দেখা যায়। তাহলে ভেড়া গৃহপালিত না বন্য প্রাণী? এবার ধারাবাহিক উপন্যাসে শ্রীকান্ত আঙ্কেল পাহাড়ি ভেড়ার কথা বলেছেন। রাতেরবেলা ভেড়া পাহাড়ের জঙ্গলে ভেড়া খোঁজা বেশ সমস্যার।  আর পোষা ভেড়া হারিয়ে গেলে তো খুবই মনখারাপের ব্যাপার। ঠিক বলেছো, মন খারাপের কি আর শেষ আছে?  কার যে কখন মন খারাপ হবে কেউ জানে না। ঠিক যেমন তনুভা ম্যাডামও জানতেই পারেননি তার মেয়ের কেন মন খারাপ। তনুভা ম্যাডাম কে? জানতে হলে পড়তে হবে সব্যসাচী আঙ্কেলের গল্প। তবে আমি মনে করি বিজ্ঞানের যুগে সব সমস্যার সমাধান সম্ভব। শুধু আমি না সমাদৃতাও তাই মনে করে। তাই তো সমাদৃতা? তবে বিজ্ঞানের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে তুমি যে যা ইচ্ছে তা করবে এমন কথা ভেব না। চালাকি করে কোনো কিছুই করা সম্ভব নয়। যেমন তারাপ্রসাদ জেঠু বলেছেন,, জ্ঞানই সঠিক পথ। এবারের সংখ্যায় শ্রেয়া আর ঈশিকা দারুণ দুটো ছবি এঁকে পাঠিয়েছে। আর মিষ্টি পাঠ প্রতিক্রিতা লিখে পাঠিয়েছে বহ্নি আন্টি। না আর নয়, এবার আমি ছোট্ট ছাগলছানাটাকে কোলে নিয়ে আদর করব। আরে হ্যাঁ হ্যাঁ তোমাদের কোলেও দেব, তবে মা ছাগলটা রেগে তোমাদের গুঁতিয়ে দিলে আমি কিন্তু কিছু জানি না। -- মৌসুমী ঘোষ।

লাচুঙের নেকড়ে -২

শ্রীকান্ত অধিকারী

আর কিছু দেখতে না পেলেও হঠাৎ পাহাড়ের পূর্ব দিকে আরো একটু উঁচুতে হলদে পাইন গাছের আড়ালে যেখানে কোনো আপেল গাছের বাগান বা এলাচ গাছের বন কিছুই ছিল না, সরু সরু পাতার ফাঁক দিয়ে কেমন যেন লুকিয়ে তার চোখে এলো একটা তীক্ষ্ণ আগুনের হলকা। প্রথমে সে চমকে উঠল। তারপর হঠাৎ বুকটা ছ্যাঁক করে এলো। এই জঙ্গলে আগুন লাগালো কে? না কি এমনি এমনি দাবানল জ্বলে উঠল। তাহলে তো সারা বন জুড়ে লকলকে আগুন হি হি করে ছড়িয়ে পড়বে। সে কি এই আগুন থেকে বাঁচতে পারবে? অনেকগুলো দুর্ভাবনা ওকে জাপ্টে ধরতে  থাকল। সেই দুপুর পেরিয়ে যখন সুর্যটা সবে মাত্র হেলেছে সঙ্গে সঙ্গে লুকিয়ে বেড়িয়ে পড়েছিল মামা ভাগ্নে দু জন। তখন কি ভেবেছিল এমনটা হবে। 
সেবার যখন কাশ্মীর বেড়াতে গেছিল, পহেলগাঁও থেকে জিপে করে বেতাব ভ্যালি হয়ে চন্দনওয়াড়িতে পোঁছেছে তখন রাত হয়ে গাছে। আঁকাবাঁকা রাস্তায় ওপরের দিকে উঠতে উঠেতে আরো রাত গভীর।  তবু শেষ অবধি চন্দনওয়ারি পৌঁছেছিল, মা আর আন্টি ওই রাতেই পাথুরে মাটি চেঁছে এনেছিল। এখানেই নাকি শেষ গাড়ি পথ। তারপর কাগজপত্র চেক করে হাঁটা পথ অমরনাথের। শুরু অমরনাথ যাত্রা। মা’রা যখন ঈশ্বরীয় ভাবে গদগদ সে তখন আশপাশের জমাট পাথুরে অন্ধকার দেখে মায়ের খুব কাছেই সিঁটিয়ে ছিল, এমনিতে সে ভীতু নয়। না হলে সে গাড়ি থেকে নেমেই সামনে পুল পেরিয়ে একটা অজানা আনন্দ উপভোগ করার জন্য হাঁটা লাগায়! অবশ্য তখনো পাথুরে রাস্তার দু পাশে ছোট বড় দোকান খোলা ছিল। তাদের ভেতর থেকে টিম টিম করে লম্ফ জাতীয় আলো জ্বলছিল। হঠাৎ সে নজর করে সামনের ঘন চাপ অন্ধকার থেকে তীক্ষ্ণ আলো বেরিয়ে আসছে। অবাক হয়ে এই আলোর উৎস খুঁজতে গিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল অনেকক্ষণ। কিছুক্ষণেই দেখে এই আলো একটা নয় অনেকগুলো । কিছু দূর অন্তর অন্তর। এও দেখে, মাঝে মাঝে আলোগুলো দিপদিপ করে জ্বলছে নিবছে। আবার সরে সরে যাচ্ছে। ততক্ষণে সে বুঝে ফেলেছে এই অন্ধকারের পেছনে আরো জমাট অন্ধকার রয়েছে। স্থির। ঘন। সেই অন্ধকারের জগৎ  থেকে বেরিয়ে আসছে তীক্ষ্ণ আলো অথবা আগুনের ফুলকি। একবার মনে হয় খুব কাছে আবার অনেক দূরে। অনেক অনেক। সবাই চলমান।
সে যখন এই অদ্ভুত দৃশ্যগুলোকে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না কিংবা স্থবিরের মত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বুকের ভেতর বা মাথার ভেতর ঢুকিয়ে নিচ্ছে আর ভয় পাচ্ছে এবং রন্ধ্রে রন্ধ্রে তার প্রভাব পড়ছে তখনই পেছন থেকে ওর বাবা ওর  হাতটা চেপে ধরে।  না হলে হয়তো ওই ভাবেই সেই অমোঘ টানে ঐ অদ্ভুত দৃশ্যের দিকে চেয়েই থাকত। আর ভেবে ভেবে কুল কিনারা করতে পারত না। 
গাড়িটা যখন সেই দুইদিক পাথরে চাপা অন্ধকারে জোরালো হেড লাইট জ্বালিয়ে সামনের দিকে সরীসৃপের মত দ্রুত গতিতে রাস্তা কেটে নিচে নেমে যাচ্ছে আর মাঝে মাঝে এপাশে ওপাশে হেলে হেলে পড়ছে ঠিক তখনই ড্রাইভারের পাশে থেকে বলে, কাকু ওই যে ওই ঘুরঘুটে অন্ধকারের মাঝে ছোট ছোট আলোগুলো নড়ে বেড়াচ্ছে ওগুলো কী? 
--‘চুপ হো যাও বাবু। মত চিল্লাও। মাইজি ইসকো রোকো।’ --এক অজানা ভয়ঙ্কর কিছু একটা বুঝিয়ে ড্রাইভার কাকু সাপের মত হিসহিসিয়ে বলে,  ‘উ সব শিব আছে। শিব।’ তারপর যা বলল সে বুঝতে না পারলেও বাবা বলে দেয়,তার সারমর্ম এই যে,মাথায় সামনের দিকে লাইট লাগান হেলমেটের মত কিছু একটা পরে ওরা ভেড়া খোঁজে। সারা রাত।পাহাড়ের আনাচে কানাচে। ওর মনে পড়ে গেল ওরা যখন চন্দনওয়াড়ির রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিল ঠিক একই রকম কিছু মাথায় পড়ে গোটা তিনেক লোক ফিরে যাচ্ছিল নিচের দিকে। 
অদ্ভুত একটা শিহরণ খেলে যায় রামশিঙের শরীরে। পাশেই শাদুলমামা একটা পাইন গাছের আড়ালে ছিল। খুব আস্তে আস্তে বলে, কী হলরে। এর মধ্যেই ভয় পেয়ে গেলি। দূর বোকা ওগুলো হলো আলেয়া! --মিথেনের আগুন। কখনো কখনো গাছের পাতা এক জায়গায় বহুদিন গাদ হয়ে থাকলে তারপর পচে গিয়ে এক সময় মিথেন তৈরি হয় আর হঠাৎ এমনি এমনি এক সময় আগুন ধরে যায়। ভূতের আগুন! কি বলিস! 
ছোট মামা ওই দেখো। 
দেখতে দেখতে আগুনের পিণ্ডগুলো ধীরে ধীরে ওদের সামনের দিকে আসতে থাকে। কাছে আরো কাছে। জোড়া জোড়া। রামসি ছোটমামার হাতটা পিছন দিকে বাড়াতেই দেখে পিছনে  ছোটমামা নেই। --ছোট মামা? শাদুল মা-মা ? রামসি চাপা গলায় ডাকে।  
--ভয় পাস না। আমি এখানে। 
এত অন্ধকার যে পাশের লোককেও দেখতে পাওয়া যায় না। শুধু অনুভবে কথার উৎস ধরে বুঝতে পারে ওর মামা পাশেই একটা পাইন গাছের ওপরে। ওখান থেকেই চাপা স্বরে বলে, হাঁধা কোথাকার! চট পট গাছে উঠে পর। দেখছিস না ওগুলো সব হয় ব্যাঘ্র কিংবা ভল্লুক। মানুষের গন্ধ  পেয়েছে, তাই দল বেঁধে আমাদের শিকার করতে আসছে। একটা বাঘের পাঞ্জার ওজন কত জানিস?–বাইশ থেকে পঁচিশ কেজি। একবার পেটে চালাতে পারলে নাড়িভুঁড়িগুলো লম্বা হয়ে তোর মায়ের তৈরি ম্যাগিস্যুপের মত ঝুলবে। এই বেলা উঠে পর।  
মায়ের কথা মনে হলেও তাৎক্ষণিক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে বুকের মধ্যে চাপা দম আটকানো কষ্টকে পাত্তা না দিয়ে ছোটমামার মত সামনের পাইন গাছে উঠতে গিয়ে আর উঠতে পারে না। তার আগেই সেই আগুনের গোলা গুলো ওর একেবারে কাছে এসে পড়ে প্রায়।  আর সে উঠতে পারে না। বরঞ্চ ক্ষণিকের জন্য ভেবে নেয় এবার পালা সাঙ্গ। পায়ের কাছে খণ্ড খণ্ড  পাথরে ওর পায়ের জায়গা সরে যায়। রামসি নিমেষে দেখার চেষ্টা করে কারা এরা? বাঘ! হায়না! মানুষ ! বনমানুষ! যারা মানুষের মাংস খায়! কিন্তু বড়মামা বলেছিল এখানের এই লাচুঙে মানুষ খেকো কোনো প্রাণী নেই।শুধুমাত্র এক ধরণের পাহাড়ি নেকড়ে আছে যারা একবার পেলে ছিঁড়ে নেবে। এই চলমান আগুনের ভাটিগুলো কি সেই নেকড়ের! নাকি অন্য কিছু। একবার মায়ের মুখটা মনে পড়ে রামসির। হাতে পায়ে শরীর রক্ত শূন্য মনে হচ্ছে। ঠিক তখনই কারা যেন পেছন থেকে টুপ করে ওদের দুজনকে তুলে নেয়।  
(ক্রমশ)

শ্রেয়া ব্রজবাসী
সপ্তম শ্রেণী, কালনা হিন্দু বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়,কালনা, পূর্ব বর্ধমান



জ্বলদর্চি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন। 👇



উৎসার
সব্যসাচী ধর
            
ক্লাসের মনিটর চিরাগ হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে তনুভা দিদিমনিকে বললো,  দিদিমনি, দিদিমনি, লোপামুদ্রা কাঁদছে ।
 --  কি হয়েছে লোপামুদ্রা? বলো কি হয়েছে? দিদিমনি জিজ্ঞাসা করলেন। 
 বেশ খানিকটা সময় চুপ করে থেকে লোপামুদ্রা বলল -- আমার মন ভালো নেই।
-- কেন? কি হয়েছে ? ক্লাস ফোরের মেয়ের আবার মনখারাপ কি? প্রায় একমাস পুজোর ছুটি গেল।  কত মজা করলে, কত ঠাকুর দেখলে ; এত নতুন নতুন  পোষাক পরলে, তারপরে আবার মন খারাপ কেন? বলো কি হয়েছে , শুনি।
 --- পরশু থেকে আমার মন খারাপ।
--  কেন? বন্ধুদের সঙ্গে ঝগড়া হয়েছে? 
--- না। 
-- তাহলে কেউ বকেছে? 
 --  না,  কেউ কিছু বলেনি। পরশু ভাইফোঁটার শাঁখ বাজল আমাদের  পাশের আবাসনের দু'তিনটে ঘরে। তারপর থেকেই আমার মন খারাপ।
 --আচ্ছা বসো। আগে পড়ে নিই আজকের পড়া। তারপর শোনা যাবে তোমার কথা। 
  দিদিমনি লোপামুদ্রার গল্প আর বাড়তে দিলেন না। ক্লাসে পড়াতে শুরু করলেন। 
    লোপামুদ্রার প্রিয় বন্ধু বৈশাখী ফিসফিস করে বলল, --আমাকে বলিস কিন্তু কেন তোর মন খারাপ কেন।
 -- ক্লাসের পর বলবো।
 -- বলবি কিন্তু! 

   তনুভা দিদিমনি ক্লাস শেষ করে বললেন, তোমার মনখারাপের কথা শোনা হয়নি লোপামুদ্রা, কিন্তু তার মানে এই নয় যে, আমি শুনতে চাই না। আবার আমার ক্লাস আছে এরপরেই ।  তুমি টিফিনের সময় আমার কাছে আসবে। ততক্ষণ কাঁদবে না কিন্তু। 
--- আচ্ছা। 
   
        প্রাইমারী স্কুলের হেড দিদিমনি না হয়ে  অনেক বড় জায়গায় আরো বড় চাকরি  করতে পারতেন তনুভা।  তনুভা শান্তিনিকেতনে পড়া শেষ করে যখন 'শিশুশিক্ষাতে শিশুদের পারিবারিক জীবন' বিষয়ে  গবেষণা শেষ করলেন তখন থেকেই ঠিক করেছিলেন একটা স্কুল তৈরি করবেন নিজে। আর 
সেই নিজের স্কুলে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে যাবেন  শিক্ষার্থীদেরকে নিয়ে। তাই তনুভার স্কুলে ছেলেমেয়েরা মন খুলে কথা বলতে পারে। যা মনে আসছে তা বলার ক্ষেত্রে কোন বিধিনিষেধ নেই। 
     এর জন্য মাঝে মাঝে  তনুভার কলিগরা বিরক্ত হন। কিছুদিন আগেই ঘটনাটা ঘটেছিল। সুভদ্রা দিদিমনি অফিসে এসে তনুভাকে বলেছিলেন, বড়দি,  ক্লাস ফাইভের  কাজল নোংরা গালমন্দ করেছে ফিরোজকে! ওই টুকু ছেলের মুখের ভাষা শুনলে আপনি হতবাক হয়ে যাবেন। এভাবে তো স্কুলের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বড়দি।  একটু শাসন করুন প্লিজ। অন্যরা কী শিখবে বলুন তো? আপনার আশকারাতে ওরা দিন দিন মাথায় উঠছে।
  --আচ্ছা, দেখছি । তুমি শান্ত হয়ে  স্টাফরুমে  একটু বসো , তারপর ক্লাসে যেও। 
       কী অবলীলায় সুভদ্রা 'আশকারা' কথাটা বলে রাগ দেখিয়ে চলে গেল, সেটা অনেকক্ষণ ধরে ভেবেছিলেন তনুভা।
    বেশ কিছুক্ষণ পর নিজের  রুমে ডেকে আনিয়েছিলেন কাজল আর ফিরোজকে। তারপর জানতে চেয়েছিলেন ওইসব  গালাগাল  তারা শিখলো কোথায়? 
    ফিরোজ বলেছিল-- আব্বু তো শুধু মারে না ম্যাডাম, মারের সঙ্গে খিস্তিও মারে। কথাটা বলে ফিক করে হেসেছিল। 
  --মারে কেন?  দোষ করিস নিশ্চয়ই! 
  --- আগে মারতো না দিমনি। আব্বুতো বাড়িতে  থাকতোই না। বাইরে কাজ করতো। তারপর যখন পরবের সময় নতুন জামাকাপড় নিয়ে বাড়ি আসতো তখন কতো আদর করতো । ছুটি শেষ হবার পর যখন ট্রেন ধরতে স্টেশনের দিকে যেত তখন তো চোখে পানি আসতো আব্বুর। সেই আব্বু এখন পুরো  
পাল্টে গেছে দিমনি। কিছু হলেই রাগ করে এখন।
  -- কিন্তু রাগ করে কেন? 
   -- ওই যে দিদিমনি, করোনার পরে আবার দুদিন ধরে ট্রেনে জার্নি করে  সেই ওখানে কাজ করতে গেল আব্বু । মালিক বললে, কারখানায় কাজ কমে গেছে। পরে ডেকে পাঠাবে।
ফিরে আসার পর আব্বু অপেক্ষা করে, কখন মালিক ডেকে পাঠাবে।তারপর আব্বু একদিন ফোন করলে কারখানার মালিক বললে, আর আসতে হবেনা। তারপর থেকেই আব্বু  কিছু হলেই গালমন্দ আর মারধর করে দিদিমনি। 

     কাজল বলেছিল,  আমার বাবা এমনিতে চুপ থাকে দিদিমনি, কিন্তু পেটে মদ পড়লে মুখ দিয়ে 
কাঁচা কাঁচা কথা বের হয়।
     তার পরেরদিন তনুভা হাজির হয়েছিলেন কাজল আর ফিরোজের বাড়িতে। দুই পরিবারের দুই অভিভাবককে বলেছিলেন, ফিরোজ আর কাজল ক্লাসে গালমন্দ দিলে স্কুলে কেমন সমস্যা হয়। আর তারা যে তাদের বাবাদের কাছেই এসব  শিখছে তাও বলে এসেছিলেন। তারপর বসেছিলেন ওই দুই ছাত্রের সঙ্গে। তাদেরকে বলেছিলেন,  যা খারাপ তাকেই নেব কেন বলতো? তোমাদের বাবারা তো সবসময় গালমন্দ করেন না, কখনো হয়তো রেগে যান , আর তখনি বাজে কথা বলেন। কিন্তু অন্য সময় তো ভালো কথা বলেন, সেগুলোকে মনে রাখবে। 
    কাজল বলেছিল,  আমি রেগে গেলে গাল দিয়ে ফেলি ম্যাডাম। 
   -- আমিও তাই ম্যাডাম, রেগে গেলে গাল দিই, মারতেও শুরু করি।  ফিরোজ বলেছিল। 
  -- আচ্ছা শোন, এবার যখন এমন পরিস্থিতি হবে আমার কথা ভাববি। ভাববি ম্যাডাম বারণ করেছেন। 
   এরপর ওদের পরিবারের বাবারা ভালো হয়ে উঠেছিলেন তা নয়, তবে কাজল আর ফিরোজের মধ্যে  কেমন  যেন বদল  এসেছিল। 
    তনুভা দেখতেন, ছোট ছেলেমেয়েদের ক্ষেত্রে ওনার কথা বেশ প্রভাব ফেলছে। তারা মনে রাখতে পারছে।  কিন্তু খুব সামান্য ঘটনাতে কলিগরা রেগে যাচ্ছেন। তনুভার মনে হতো , বয়সের সঙ্গে সঙ্গে  শিক্ষার ফলিত দিকটা বেশ হেরফের করে! 
       
     তারপর একদিন তনুভা   টিফিনের সময় সুভদ্রা ম্যাডামকে ডেকে সেই পুরোনো গল্পটা শুনিয়েছিলেন,  একজন মহাপুরুষের কাছে  এক মা এসেছেন তার ছেলেকে  নিয়ে।  ছেলে মিষ্টি জিনিসে চরম আসক্ত। কোন ভাবেই তাকে মিষ্টি খাবার থেকে দূরে রাখা যায় না। অথচ দিনদিন সে শীর্ণ হয়ে পড়ছে। কিছুতেই সে কারো নিষেধ শোনে না।  কবিরাজ বলেছেন, যেমন করেই হোক মিষ্টি খাওয়া কমাতেই হবে। বাড়ির লোক পেরে ওঠেনা অবাধ্য ছেলেটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে। তবে মহাপুরুষের এমন ক্ষমতা আর নির্দেশ দেবার কৌশল, তাঁর কথা অমান্য করে কে! 
চিন্তিত মা মহাপুরুষের দরবারে এসে তাঁকে প্রণাম করে ছেলের ব্যাপারে সব কথা বললেন। তারপর বললেন, আমার ছেলেকে খুব করে বকে দিন আপনি। মহাপুরুষ স্মিত হেসে বললেন, তুমি সাতদিন পরে আবার এসো মা। আমি তখন ওকে বুঝিয়ে বলবো যাতে মিষ্টি না খায়। 
   তারপর আবার সেই মহিলা  দরবারে এলেন। সেই মহাপুরুষ ছেলেটিকে কাছে ডেকে  বুঝিয়ে দিলেন, মিষ্টি  খেলে কি কি সমস্যা হয়। বললেন,  আর  খাবে না কেমন? ছেলেটি বাধ্য শিশুর মতো কথা দিল আর সে কোনদিন এমন করবে না। 
   দরবার ছাড়ার আগে চিন্তিত মা সেই মহাজনকে  বললেন, প্রভু, এই কয়েকটি  কথা বলতে, আপনি এতদিন সময় নিলেন কেন? 
    মহাপুরুষ বললেন, আমিও  এতদিন খুব মিষ্টি খেতাম মা । এই কয়দিনে আমি মিষ্টি খাওয়া নিয়ন্ত্রণ করেছি । আমি যদি আপনার আচার ঠিক না করি তাহলে কে আমার কথা শুনবে? তাই এই  সময় নিয়েছিলাম।
    সুভদ্রা অবাক হয়ে গল্প শুনেছিল। তারপর মাথা নত করে বের হয়ে গেছিল বড়দির ঘর থেকে। 
     
      এই স্কুল গড়তে গিয়ে তনুভার বড় সমস্যা হয়েছিল। ও আর ওর বর অনির্বাণ একসঙ্গে বিদেশে গেছিল গবেষণার সুযোগ পেয়ে । এদেশের সরকার ওদের দুজনকে পাঠিয়েছিল স্কলারশিপ দিয়ে। গবেষণার পর ওরা দুজনেই সেখানে ভালো চাকরি পেয়ে গেল। 
     -- আচ্ছা আমাদের কি দেশকে কিছুই দেবার নেই? আমরা আমাদের দেশের শিক্ষায় বড় হয়ে এবং সরকারের বৃত্তিতে এখানে এলাম আর এখানে এসে দেশকে ভুলে যাব? আমি কিন্তু দেশে ফিরবোই। অনির্বাণকে বলেছিল তনুভা। 
  অনির্বাণ স্মিত হেসে বলেছিল, আমাদের সন্তানাদি হোক, কিছুটা সঞ্চয় বাড়ুক । তারপর না হয় নিজের দেশকে এখানের অর্থে বড়লোক করবে।
      তারপর তনুভা মা হলো। ছেলে সৌপ্তিক একটু বড় হলো। একসময় বুঝতে পারলো অনির্বাণ তাকে আর দেশে ফিরে যেতে দিতে চায় না।  তনুভা আবার বলেছিল, আমি কিন্তু দেশে ফিরবোই। ওখানে একটা স্কুল গড়বো, অনেক কাজ বাকি আছে। 
    --এখানেই তোমার জন্য স্কুল গড়ে দিচ্ছি। এখানেও তো তোমার পড়ানো আর তা নিয়ে গবেষণা চলতেই পারে। অনির্বাণ আবার বাধা দিয়েছিল। 
   --- না, আমি ওখানকার গ্রামে থেকে কাজ করতে চাই। 
    খুব বাদানুবাদ হয়েছিল দু'জনের মধ্যে । শেষে অনির্বাণ বলেছিল, বেশ, তাই হোক। দেশে ফিরে যাও। তবে সৌপ্তিক কিন্তু আমার কাছে থাকবে। ওর সিটিজেনশিপ এখানকার। আমাদের মাঝে মাঝে দেখা হবে। 
     তনুভা  এদেশে  আসার  মাস কয়েক পরেই জয়ী জন্মালো। প্রথম দিকে অনির্বাণ দু'একবার এসেছিল মেয়ে আর তনুভার কাছে। একদিন বিমানপথের দূরত্ব  মনের জগতে ঠাঁই নিল। অদ্ভুত এক বিচ্ছিন্নতা  তৈরি হয়ে গেল দু'জনের মধ্যে। তনুভা খুব চেষ্টা করেছিল সম্পর্কটাকে টেনে নিয়ে যেতে। ছেলে সৌপ্তিকও বারবার মাকে ডেকেছে তাদের কাছে ফিরে যাবার জন্য। 
     জয়ী বড় হবার সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে শিখেছে, তার বাবা আছে, দাদা আছে কিন্তু তারা  বাস করে  অনেক দূরে । মাকে বারবার বলে,  দাদার কাছে যাবো, বাবার কাছে যাবো। আমাকে নিয়ে যাবে? 
                           

    তনুভা অফিসে বসে বসে ভাবছিল তাহলে কি ওই ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের মধ্যেই আবেগ আর কাছে থাকার আকর্ষণ বেশি কাজ করে? বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কি হৃদয় আর অনুভূতির কোষ গুলোও ক্রমে ক্রমে ক্ষীণ হয়ে পড়ে?
  লোপামুদ্রা হঠাৎ এসে ঢোকে তনুভার রুমে। ওকে বসতে বলতে হয় না। নিজে থেকেই বসে যায় সামনের বসার জায়গায়। 
--  বলো, তোমার মনখারাপ কেন? তোমার ক্লাসের মনিটর চিরাগ কি সত্যিই জানে তোমার মনখারাপ?
--হ্যাঁ। সত্যিই মন খারাপ পরশু থেকে। 
-- কেন?
--- ওই যে সামনের আবাসনে কত শাঁখ বাজলো। সবাই ভাইফোঁটা দিল যে। 
-- সবাই কি সব কিছু করতে পারে, নাকি সবাই সবকিছু পায়? 
-- আমি তো দাদার ছবিতে ফোঁটা দিলাম। কিন্তু দাদাতো আমাদের বাড়ি এসে ফোঁটা নিতে পারতো!
-- তোমার দাদা যে অনেক অনেক  দূরে থাকে লোপামুদ্রা! 
--- তার জন্য কি আমি কাঁদবো? 
--- মোটেই না।
-- তাহলে তার জন্য আমি কষ্ট পাবো কেন?
    
     তনুভার কাছে বাচ্চা মেয়ের এ প্রশ্নের উত্তর  ছিল না। চুপ করে থাকতে হলো। তারপর বললেন, তুমি ক্লাসে যাও আমি দেখছি কী করা যায়।
   
      অনেকটা  রাত্রে তনুভা অনির্বাণকে ফোন করে। অনেক অনেক দিন পর তনুভার  ফোন পেয়ে অনির্বাণ অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো, কি ব্যাপার, কেমন আছো? সব ভালো তো? তোমার সাধের আদর্শ বিদ্যালয় কেমন চলছে ? 
---  ভালো। তবে একটা মেয়ের একটা প্রশ্নের উত্তর আটকে গেছে সেটার জন্য তোমার সাহায্য লাগবে। আমাদের দুজনের সাবজেক্ট তো একই ছিল। তোমার সাজেশন কাজে লাগতে পারে।
  - বলো, কি করতে পারি?
  -- জানতে চাইছি বাবা- মায়েদের নিজস্ব সমস্যা কিংবা ইগো প্রবলেমের জন্য ছেলেমেয়েদের সমস্যা তৈরি হলে কি করা যাবে?
  --এক্ষেত্রে বাবা-মায়েদের বুঝতেই হবে নিজেদের ভুল হচ্ছে এবং তার থেকে  দ্রুত বের হয়ে আসতে হবে। আমাদের জন্য ওরা সাফার করবে কেন? 
 ফোনের ওপার থেকে অনির্বাণ উত্তর দেয়। 
  --জয়ীর তাই হচ্ছে।
  --- শুধু জয়ী কেন, বিভানেরও একই সমস্যা।  শোন, আমি খুব ব্যস্ত আছি। একটু পরে কল করছি।  আমাকে একটা কাজে বেশ কয়েকঘন্টা প্লেন জার্নি
করতে হয়েছে। লাউঞ্জের চেকিং পয়েন্টে ব্যস্ত আছি। সারপ্রাইজ ভিজিট করতে হলো একটা। 
    তনুভার মনে হলো, অনির্বাণও  কত পাল্টে গেছে। কত সুন্দর করে কথাগুলো বললো আজ। 
            
    রাত্রে শোবার পর অনির্বাণের কথা আজ খুব মনে পড়ছিল তনুভার।  এত গভীর রাতে কে আবার কলিংবেল বাজায়? তনুভা বিছানা থেকে নেমে এসে ফ্ল্যাটের দরজা খোলে। অবাক হয়ে দেখে অনির্বাণ আর বিভান ওরফে সৌপ্তিক সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কত বড় হয়ে গেছে ছেলেটা! তনুভার মনে পড়ে 'সারপ্রাইজ' কথাটা। 

     জয়ী ওরফে লোপামুদ্রার ঘুম ভেঙে গেছে। খুব ভালো করে দাদা আর বাবাকে দেখে সে। সকাল হতে বেশি দেরি নেই। মনে মনে ভাবে,  সকাল বেলায় স্নান সেরে মায়ের নতুন একটা শাড়ি পরে দাদার কপালে চন্দনের ফোঁটা দিতেই হবে। বাজিয়ে দিতে হবে শাঁখ। দুটো দিন দেরি হয়েছে তার বেশি তো নয়!

ঈশিকা দাস
নবম শ্রেণী, বাণী মন্দির স্কুল, হুগলি


বোঝা নয় এত সোজা
 তারাপ্রসাদ সাঁতরা

বোঝা নয় এত সোজা 
কে বা রাজা কে বা প্রজা।

কোকিলের রঙ কালো
কাকেদের তাই তো
দুজনেই সমান সমান
এটা বলা ঠিক তো?

হিসাব কি এতো সোজা
মেলে না তো অঙ্কে
সেই ভুলে কত লোক
পড়ে আছে পঙ্কে ।

বিড়ালের ধূর্তমী
বোঝা এত সোজা নয়
যদিও সবাই জানো
একে একে দুই হয়।

ধূর্তের মাপ কাঠি
মাপা চলে চার যুগ
বিজ্ঞানী নেয়ে ঘেমে
একদম আছে চুপ ।

খালি চোখে দেখ যা
সব দেখা ঠিক নয়
দেখার বাইরে থাকে 
ধূর্তের পরিচয় ।

জ্ঞান হল ঠিক পথ
বেছে নিতে সঙ্গী 
হাত ধরো তাহারই
করে নাও সন্ধি।
রুহানা খাতুন
তৃতীয় শ্রেণী,কিশলয় মডেল স্কুল, দক্ষিণ ২৪ পরগনা


তুমিই হলে বিজ্ঞান

সমাদৃতা রায়
একাদশ শ্রেণী,উত্তরপাড়া গার্লস হাই স্কুল,হুগলি


তুমি আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ
তোমার জন্য আমার কল্যাণ
তুমি হলে বিজ্ঞান।।

পৃথিবীতে রয়েছে এখনও কুসংস্কার।
দাও তাদের সরিয়ে
তুমিই মহান
তুমিই হলে বিজ্ঞান।।

তোমার জন্যে সি ভি রমন 
আনলো ডেকে রমন ক্রিয়া
তোমার জন্যে যোগু বাবু
বললো গাছের প্রাণ আছে
তুমি হলে বিজ্ঞান।।

এসি টিভি টুথপেস্ট সব তোমারই দান
তুমি হলে বিজ্ঞান।।


স্মরণীয় দিবস
বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস (৩রা মার্চ)

দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে

২০১৩ সালের ২০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৬৮ তম অধিবেশনে থাইল্যান্ড আন্তর্জাতিক বিলুপ্তপ্রায় বন্যপ্রাণী এবং উদ্ভিদের বাণিজ্য সম্মেলনে ৩রা মার্চকে 'বিশ্ব বন্যপ্রাণী' দিবস হিসেবে ঘোষণা করার আহ্বান জানাই।
বিশ্বের বন্যপ্রাণী ও উদ্ভিদ কুলের প্রতি গণসচেতনতা বৃদ্ধি করা এই দিবসের মূল লক্ষ্য।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে উত্থাপিত বিবরণীতে বন্যপ্রাণীদের অপরিহার্য মূল্য এবং বিভিন্ন অবদানের কথা পুনর্ব্যক্ত করা হয়। যেমন পরিবেশগত, জিনতাত্ত্বিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, বৈজ্ঞানিক, শিক্ষা বিষয়ক সংস্কৃতিক বিনোদনমূলক এবং নান্দনিক বিষয়ের সাথে যুগসয় উন্নয়ন এবং মানবকল্যাণের দিকেও গুরুত্ব আরোপ করা হয়।
গবেষণায় দেখা গিয়েছে প্রায় আট হাজার প্রজাতির বন্যপ্রাণী ও উদ্ভিদ বিপন্ন হয়ে গিয়েছে। মনে করা হয় যে, এক মিলিয়নেরও বেশি বন্য প্রাণী ও উদ্ভিদ বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে, বর্তমানে যে সকল বন্যপ্রাণী ও উদ্ভিদ আছে সেগুলোকে বাঁচানোর জন্যই 'বিশ্ব বন্যপ্রাণী' দিবস টি পালন করা হয়।
প্রতিবছরই বন্যপ্রাণী দিবসের একটি করে থিম থাকে, এরও কারণ আছে। যেমন গত বছরের (২০২২) 'বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার' থিম নির্ধারণ করা হয়েছে। এই থিম গুলি বাছাই করার পেছনে বড় কারণ হলো, বিপন্ন কিছু বন্যপ্রাণী ও উদ্ভিদ সংরক্ষণের ওপর আলোকপাত করা।
যাতে এই বন্যপ্রাণী দিবসটি যথাযথভাবে উদযাপিত হয়, সেই দিকেই ও দৃষ্টি দেওয়া হয়ে থাকে। বিশ্ব বন্যপ্রাণী ও উদ্ভিদ কুলের প্রতি গণসচেতনতা গড়ে তোলা এবং সি আই টি ই এস এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা কে স্বীকার করা, যেখানে বলা হয়েছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য যাতে বণ্য প্রজাতিদের টিকে থাকতে বাঁধা হয়ে না দাঁড়ায় তা নিশ্চিত করতে হবে। সাধারণ পরিষদ থেকে সি আই টি ই এস এর সচিবালয়ে অনুরোধ করা হয় যে,জাতিসংঘের প্রাসঙ্গিক সংস্থাসমূহের সাহায্যে যাতে বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস সহজতর করা যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
আসল কথা পৃথিবীতে অসংখ্য প্রজাতির বন্যপ্রাণী ও উদ্ভিদ আছে এবং এদের প্রত্যেকটি পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সেজন্য আমাদের সকলকে মনে রাখতে হবে বন্যপ্রাণী এবং উদ্ভিদকুল কে আমাদের প্রয়োজনেই বাঁচিয়ে রাখতে হবে।


পাঠ প্রতিক্রিয়া
( ছোটোবেলা ১২২ তম সংখ্যাটি পড়ে শ্রীরামপুরের বহ্নিশিখা ঘটক যা লিখলেন)

কিছু কিছু ব্যাপারে আমার একটু গয়ম্ গচ্ছ ভাব থাকে।  কিন্তু জ্বলদর্চি ছোটদের ডিজিটাল  পত্রিকার (১২২) সংখ্যার প্রচ্ছদটি (কল্যাণ সাহা) দেখামাত্র আমার সমস্ত মনোযোগ  কেড়ে নিল। এমন চমৎকার একটি ছবি দেখে মুগ্ধ  হলাম।  পলাশ ফুল ঠিক টিয়ার ঠোঁটের মত বলে কি তার প্রতি টিয়ার এত ভালোবাসা? 
 যাহোক, ধন্যবাদ মৌসুমীকে এমন একটি পত্রিকার ১২২টি সংখ্যায় নিয়ে যাওয়ার জন্য।  একাগ্র চিত্তে সে যে শুধু  এ কাজই  করে তা নয়।  তার অনেক বড়দের জন্য লেখা থাকে।  তবু এত সুন্দর তার সম্পাদকীয় যে প্রত্যেকটির জন্যই  একই ভাললাগা থাকে।

আরো বেশি ভালো লাগলো এই সংখ্যার শীর্ণতার জন্য। একদমে সবটুকু  পড়েফেলা যায়।  দম ফেলার সুযোগ দিয়েছেন নতুন ধারাবাহিক উপন্যাস লেখক শ্রীকান্ত অধিকারী।  ১ম পর্ব লাচুঙের নেকড়ে পড়তে শুরু করে  দম ফেলে ভাবছি নেকড়ের দেখা কখন পাব।  আর সেই ফাঁকে কত অজানা কথা জানা হয়ে যাচ্ছে আমার মত অজ্ঞ পাঠকের।  

চরক তলার ম্যাজিক দাদু এই সংখ্যার সবচেয়ে সুখপাঠ্য গল্প।  শুদ্ধেন্দু চক্রবর্তীকে ধন্যবাদ এমন একটি   মানবিক উদাহরণ গল্পের মাধ্যমে পেশ করার জন্য।  লেখাটি একটি আদর্শকে তুলে ধরলেও সাহিত্য গুণ ভরপুর। ছোট বড় সবার মন ভালো করবে। 

 ২৮ শে ফেব্রুয়ারি বিজ্ঞান দিবস এর সম্পর্কে তথ্য বিজ্ঞানমনস্কতার দিকে এগিয়ে  যেতে সহায়ক হবে  আশা করি।  
ছোটদের পত্রিকায় ছোটদের লেখা কিন্তু কম যায়না।  গল্প  ভূতুড়ে ডাক্তার পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র শ্রেয়ান ভট্টাচার্য খুব সুন্দর লিখেছে।  
 ছুটির দিনে  চড়ুইভাতির ছড়াছড়ি।   মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় দাসের লেখায় তারই স্মৃতি।  
 
আগামী  সংখ্যার জন্য  অপেক্ষা  থাকবে শুধু  ধারাবাহিকের জন্য  নয় আরও  সুন্দর  সুন্দর  গল্প  ও ছড়া কবিতার  জন্য। 

 ও,  বলার  আরও  আছে।  ছোটদের  আঁকা ছবির  আমি  খুব  ভক্ত।  সেও থাকবে যথারীতি।  

আরও  এগিয়ে  চলুক  জ্বলদর্চি।

Post a Comment

0 Comments