দেশান্তরী -৯
হিল্লোল রায়
শরীর মাদ্যং খলু ধর্ম-সাধনম
ভেবেছিলাম পাসপোর্ট সংক্রান্ত ঝামেলা ১৯ জুলাই ১৯৭৪ মিটিয়ে ফেলতে পারব। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, ফটো ও পঁচিশ টাকা (পাসপোর্ট এ্যাপ্লিকেশন ফি) নিয়ে হাজির হলাম ট্র্যাভেল এজেন্ট মিঃ সিনহার আয়োনা ট্র্যাভেলস-এ ১৯ জুলাই ১৯৭৪ শুক্রবার। -ইউ ক্যান থ্রো এ্যাওয়ে দিজ ফোটোজ। দে ওনট ওয়ার্ক। দে স্যুড বি সাইন্ড বাই মিঃ পি.সি.ব্যানার্জ্জী। মিঃ সিনহা ঝড়ের বেগে কথাগুলো বলে গেলেন। আমিও নীরব দর্শক হয়ে রইলাম ফটোগুলোর ভবিষ্যৎ কল্পনা করে। মনটা 'খারাপ হয়ে গেল এত পয়সা, এত কষ্ট বিফল হয়েছে জেনে। ডঃ সামন্তকে দিয়ে বৃথাই এ্যাটেস্ট করালাম। ভদ্রলোককে কাজের মধ্যে বাধা দিয়েছিলাম ভেবে খারাপ লাগছিল। ফটোগুলোকে ফেলে দিতে মায়া লাগছিল। সযত্নে খামের মধ্যে ঘুম পাড়িয়ে দিলাম ভবিষ্যতে আবার কোথাও এ্যাপ্লাই করার আগে না হয় ওদের ঘুম ভাঙিয়ে দেব!
ভাগ্যিস, ফটোর নেগেটিভখানা সংগে ছিল। ওটাকে নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে ছুটলাম সেই হ্যারিসন রোডের চৌধুরী স্টুডিওতে। ঝোড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি হচ্ছিল আমি যখন আয়োনা ট্র্যাভেলস, ৪৫ বৌ্বাজার স্ট্রীট, কলকাতা-১২ থেকে বেরুচ্ছি। তবুও “শরীর নাদ্যং খলু ধর্মসাধনম”-পণ নিয়ে ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে বাসে চাপলাম প্রায় ১১-৩০ টায়। জামা-কাপড় ও হাতের ব্যাগটার অংশবিশেষ অবশ্য বরুণদেবের করুণাধারায় সিক্ত হয়েছিল। নেগেটিভ থেকে কুড়ি কপি ফটো ডেভেলপ করতে বল্লাম। পাঁচ টাকা এ্যাডভান্স দিয়ে আগামী কাল ফটো ডেলিভারী নিতে আসব বলে চৌধুরী স্টুডিও থেকে বেরিয়ে পড়লাম।
পাসপোর্ট -ভিসা সংক্রান্ত ব্যাপারে আমাকে এত বেশী দৌড়্ধাঁপ করতে হচ্ছে। নতুন চাকরীতে জয়েন করে সেখানে নিয়মিত এমনকি সময়মত হাজিরা দিতে ভীষণ অসুবিধা হচ্ছিল। নিজেরই লজ্জা লাগত মাস গেলে মাইনে নিতে। অবশ্য আমি “প্ল্যাকন” কোম্পানীতে ১লা জুলাই ১৯৭৪ জয়েন করি। এসব ঘটনা ঘটছে ১৯শে জুলাই অর্থাৎ এক মাসও শেষ হয় নি তখনও। তার উপর এইসব ব্যাপারে এত বেশী চিন্তা করতে হচ্ছে যে অফিসের কাজে ভালভাবেই মন দিতে পারছিলাম না। তবুও অফিস টেলিফোনের সহায়তায় অনেক কাজকে সংক্ষিপ্ত করে নিতে পেরেছিলাম।
কাজের চাপ থাকায় ২০শে জুলাই ১৯৭৪ আর্গোসি থেকে বেরুলাম সকাল সকাল, ৫-৫৮ মিনিটের ট্রেন ধরে। আমার মেজভাই কল্লোল যাদবপুর ইনস্টিটিউট অব টেকনলিজিতে বি.ই. ইভনিং কোর্সে এ্যাডমিশান টেস্ট দিতে এসেছে আজ। শারীরিক অসুস্থতার দরুণ ওকে সংগে নিয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলে পৌঁছে দিয়ে এলাম। ওখানে ওর এক বন্ধু থাকায় একটু সুবিধা হয়েছিল। প্রায় ৯-২০ মিঃ (সকাল) নাগাদ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেল ছেড়ে রওনা হলাম বাসে চেপে। ১ ঘন্টা ১০ মিনিটের মধ্যেই হ্যারিসন রোডের চৌধুরী স্টুডিওতে পৌঁছলাম। আজ একটু কর্মব্যস্ততা রয়েছে। তাই এক মুহূর্ত্তও সময় নষ্ট না করে ২০ কপি ফটো ডেলিভারী নিয়ে সি.এম.পি.ও., পোদ্দার কোর্ট, কলকাতা-১ এ এসে হাজির হলাম পায়ে হেঁটে প্রায় ১১-০৫ নাগাদ। কিন্তু ডেপুটি সেক্রেটারি মিঃ পি.সি. ব্যানার্জ্জীর সাক্ষাৎ পেলাম না। মনটা একটু খারাপ হয়ে গেল। আমার অফিস পৌঁছালাম বেলা একটা।
পাসপোর্টের ফটো এ্যাটেস্ট করবার জন্য পোদ্দার কোর্টে গিয়েছিলাম ২০ জুলাই ১৯৭৪ শনিবার কিন্তু পি.সি. মিঃ ব্যানার্জ্জীর অনুপস্থিতিতে কাজটা হোল না। অফিসের কাজ সেরে বাড়ী ফিরলাম। সোমবার ২২শে জুলাই ১৯৭৪ । ওটা কম্পলিট করে জমা দেবই ঠিক করলাম। দ্বিতীয় ফর্ম 7-50A সংক্রান্ত ব্যাপারে “বার্থ সার্টিফিকেট (Birth certificate) প্রয়োজন হবে অদূর ভবিষ্যতেই অর্থাৎ তৃ্তীয় ফর্ম DSL 869 পেলেই।
আর্গোসি থেকে বেরুবার সময় আমার সদাসংগী কলমটাকে নিয়ে যেতে ভুলে গিয়েছিলাম। ফলে একটু ঝামেলায়ও পড়লাম। অবশেষে রেশনকার্ডের এ্যাপ্লিকেশণ জমা দিতে আসা অপেক্ষমানা জনৈকা অষ্টাদশী তরুণীর কাছ থেকে পেন নিতে হল আমাকে। তার হাবভাব দেখে মনে হচ্ছিল, আমার উপর উৎসুক্ দৃষ্টি নিয়ে ঘোরাফেরা করছে । পেনটা চাইতেই যেন গায়ে পড়ে এসে অত্যুৎসাহে এগিয়ে দিল। আমিও ব্যাপারটাকে যেন ভ্রুক্ষেপ করি নি ভান করে কলমটা নিয়ে খসখস করে বার্থ সার্টিফিকেট সংক্রান্ত কাগজপত্র-এ সাইন করলাম। 'থ্যাংক্স' জানিয়ে পেনটা ফেরৎ দিলাম মেয়েটাকে। নাম জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন না থাকায় নামটা অজ্ঞাত রইল এক্ষেত্রে।
মেয়েটার সবিশেষ কৌ্তূহল ও দু'একটা টুকরো কথা বলবার ইচ্ছা আমার সংগে, বেশ বুঝতে পারছিলাম পেনটা ফেরৎ দিতে গিয়ে। মেয়েটা জিগ্যেস করলঃ “ আপনার কাজ হয়েছে? কলমটা আর লাগবে না?” বেশ ভালই লাগছিল। কিন্তু সময় স্বল্পতার জন্য ওদিকে মনোনিবেশ করবার কোন ইচ্ছাই হল না। ঘটনাটা হল রবিবারের ২১জুলাই, ১৯৭৪। সময় খুবই কম তখন। ক্ষিদেও পেয়েছে খুব। তবুও ছুটলাম বন্ধু সুকুমার চট্টোপাধ্যায়ের কাছে।
বিশদ জোছনা পেতে, হয়রাণি ওঠে মেতে
শিল্পী বন্ধু সুকুমারের দর্শন মিলল তাঁর বাড়ীতেই। নিজের শিল্প কর্মে মগ্ন তখন গভীরভাবে। আমি ওর ঘরে ঢুকে মিনিট পাঁচেক দাঁড়িয়ে রয়েছি তবুও ওঁর হুঁশ নেই- আমি ঢুকেছি বলে। এক হাতে রং-তুলি, পরণে সাদা ধুতি, মুখে চাপদাড়ি। চোখ -মুখে ক্লান্তির ছাপ। আমাকে দেখেই আনন্দে জড়িয়ে বল্ল, “বলো হিরে, কী ব্যাপার? হঠাৎ এত বেলায়? তোমার হাতের কাগজগুলো কি?”
আমি অ আমার উদ্দেশ্যটা বল্লাম। বেলা প্রায় বারোটা বেজে গিয়েছে। "তোমার হেল্প চাইছি।" সুকুদাও (সুকুমার চ্যাটার্জ্জী কে দাদা বলেই সম্বোধন করতাম বয়োজ্যেষ্ঠ হওয়ায়) তৎক্ষণাৎ ওদের পাশের বাড়ীতে ছুটলো টাইপ মেশিনটায় কাজটা করতে দেবে কিনা। আমি ওর ঘরে বসে আছি। সুকুদা যে বাড়ীতে খোঁজ নিতে গিয়েছিল সেটা আমার স্কুলের সহপাঠী বন্ধু অনুপ বিশ্বাসের (বর্তমানে মেরিন ইনজিনিয়ার)। কর্মসূত্রে ওকে বাইরে থাকতে হয়। সুকুদা অগত্যা অনুপের বাবার কাছে (শ্রীযুক্ত হরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, এ্যাডভোকেট, বারাসাত কোর্ট, বারাসাত, চব্বিশ পরগনা) আমার পরিচয় দিতেই উনি সোৎসাহে রাজী হয়ে গেলেন। এমন কি নিজেই টাইপ করে দিতে চাইলেন। আমিও বিন্দুমাত্র দ্বি্ধা না করে দুকপি টাইপ করতে দিলাম। আমার প্রয়োজন তিন কপি। কিন্তু কার্বন পেপার ভাল না থাকায় এক কপির জন্য আবার আমাকে ছুটতে হল আমার স্কুলজীবনের 'মুখচেনা' বন্ধু শ্রীমান স্বপন (ওরফে গোপাল) ঘোষের কাছে। বেলা প্রায় ২-৩০টের মত। ক্ষিদে পেয়েছে খুব। যাই হোক প্যাডের পাতায় তিন কপি টাইপ করে নিয়ে আর্গোসী যখন ফিরলাম ঘড়ির কাঁটায় তখন বেলা ২-৫০ মিনিট।
হাবড়া অঞ্চল প্রধান প্রভাত রায় এর বাড়ীতে আমার যাওয়ার কথা বেলা তিনটের মধ্যে। হাতে সময় নেই। নাকে মুখে কিছু গুঁজে ছুটলাম। প্রভাত বাবু বেরুবার জন্য তৈ্রী। শেষ মুহূর্তে পৌঁছে তাঁর সই করে আমার বার্থ সার্টিফিকেট রেডি করলাম। আসবার আগে যথারীতি ভণিতা করে প্রভাত বাবুকে 'লাইনে' রাখলাম। অতএব আমার বার্থ সার্টিফিকেট জোগাড় হল জুলাই ২৯, ১৯৭৪, রবিবার।
এর পরের দিনটা অর্থাৎ ৩০ জুলাই ১৯৭৪ সোমবার খুবই কর্ম-ব্যস্ততার মধ্যে অতিবাহিত হয়। আর্গোসি থেকে সকাল ৮-৩৬ মিঃ এর হাবড়া লোকালে শিয়ালদা স্টেশনে এসে পৌঁছোলাম বেলা ১০টায়। আমেরিকান কনস্যুলেট পৌঁছাই প্রায় ১০-৪৫ মিঃ শিয়ালদা থেকে। ওখানে Form 7-50A এর সংগে প্রয়োজনীয় সার্টিফিকেটসঃ
১)প্রভিশনাল বি.ই. ডিগ্রী সার্টিফিকেট ফ্রম ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটি,
২)হায়ার সেকেন্ডারী সার্টিফিকেট ফর এজ(age) ভেরিফিকেশন
৩) সার্টিফিকেশন ফ্রম দি প্রেজেন্ট এম্প্লয়্যার(employer), এবং
4)মার্কসীটস অব বি.ই.ফাইন্যাল সেকসন 'এ' এ্যান্ড 'বি'-জমা দিলাম ৩০ জুলাই। কনস্যুলেট থেকে বেরুতে প্রায় ১২-৪৫। রৌদ্রের তীব্রতা তখন বেশ অনুভব করছি। তারপর নিজের অফিসে একবার দর্শন দেওয়ার জন্য গেলাম ১-৩০ দুপুরে। আমার অফিস থেকে ডেপুটী সেক্রেটারী মিঃ পি সি ব্যানার্জ্জীকে এ্যাপয়েন্টমেন্ট করলাম পাসপোর্টের ফটো এ্যাটেস্ট করার জন্য। উনি রাজী হলেন এবং তক্ষুনী পোদ্দার কোর্টের অফিসে আসতে বলেন। আমার অফিস থেকে বেরুলাম বেলা ২-৪৫ পায়ে হেঁটে ১৮, রবীন্দ্র সরণীর পোদ্দার কোর্ট বিল্ডিংয়ে।
মিঃ ব্যানার্জ্জী আমার পাসপোর্ট ফর্ম-টায় একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে ফটো(চারখানা) এ্যাটেস্ট করে দিলেন নির্বিবাদে। আমিও খুব খুশী হয়ে ভদ্রতা করে বেরিয়ে এলাম ওঁর চেম্বার থেকে। এবার আমার গন্তব্যস্থল সঞ্চয় ঘোষের অফিস। ওর সংগে এইসব সংক্রান্ত আলোচনা সেরে পায়ে হেঁটেই রওনা হলাম আয়োনা ট্রাভেলস, ৪৫ বিপিনবিহারী গাঙ্গুলী স্ট্রীট, কলকাতা-১২ এ মিঃ সিনহার সংগে দেখা করতে। মিঃ সিনহা খুবই খুশী। আমার পাসপোর্ট এ্যাপ্লিকেশন ফর্ম, ৪ কপি ফটো, ২৫ টাকা ওর কাছে দিয়ে দিলাম। তখন মনে হচ্ছিল, কাঁধের উপর কে যেন একটা বোঝা চাপিয়ে দিয়েছিল। আমি অবশ্য সুখ করেই বোঝাটা নিয়েছিলাম। ফর্ম 7-50A এবং পাস্পোর্ট ফর্ম জমা দিয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম ৩১ জুলাই ১৯৭৪ মংগলবার। এবার অন্ততঃ মাস তিনেকের মত নিশ্চিন্ত।
কিন্তু নিশ্চিন্ত হওয়াটা কি অতই সহজ? মনে কতকগুলো সন্দেহ আসছিল বার্থ সার্টিফিকেটের ব্যাপারে। চঞ্চলদা বলেছিল কলকাতা কর্পোরেশন থেকে নাকি বার্থ সার্টিফিকেট জোগাড় করতে হবে। আমি ও পড়লাম মহা ঝামেলায়। ২৫শে জুলাই,'৭৪ বুধবার ছুটলাম শান্তিমামার আয়কর ভবন অফিসে। ওখান থেকে ওঁকে ও ওঁর বন্ধু রথীন ভট্টাচার্য্যকে নিয়ে গেলাম কলকাতা কর্পোরেশনের সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জ্জী রোডের অফিসে। ঘুষ না দিলে সার্টিফিকেট দেবেই না। কিন্তু ঘুষ নেওয়ার কথাটাও স্পষ্টভাবে বলছেন না- জনৈক ক্ল্যারিক্যাল স্টাফ। সে একটা বেশ মজার ঘটনা। সেটাই সংক্ষেপে বলছি।
শান্তিমামা, রথীন ভট্টাচার্য ও আমি, কলকাতা কর্পোরেশন অফিসে ঘুরছি আমাদের সার্টিফিকেটের ব্যাপারে। অনেক ঘুরে এলাম শেষে রেকর্ডস সেকশনে। আমাদের একটা এই ধরনের সার্টিফিকেট চাই যে, Mr. Hillol Ray was born at Habra, 24 Parganas; the Calcutta Corporation has got no record of his birth.”
-এখানে কি ? যান যান মশাই-বাইরে দাঁড়ান। বক্তব্য কাগজে লিখে দিন।
এ কথা শুনে রথীন ভট্টাচার্য্য ভীষণ ক্ষেপে যান. উনিও ছাড়বার পাত্র নন। ক্ল্যারিক্যাল স্টাফের এই ধরণের উক্তি উনি সহ্য করতে না পেরে ভীষণ রেগে যান।
-বক্তব্য কাগজে লিখে দিচ্ছি, আপত্তি নেই। ভদ্রভাবে কথা বলবেন। এটা অফিস-মনে রাখবেন।
রথীন ভট্টাচার্য্য গলা সপ্তমে চড়িয়ে দিলেন। আমিও শান্তিমামা দুজনে মজা দেখছি।
-এ ধরণের কোন সার্টিফিকেট দেওয়া হয় না, দিতে পারব না।
-ঠিক আছে । আপনার অসুবিধা হলে লিখে দিন বার্থ সার্টিফিকেট দিতে পারব না। আমি (অজিত পাঁজা তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী) ফোন করছি।
-না , না, ঠিক আছে, আপনার ফোন টোন করার দরকার নেই। আপনি দিন সাতেক বাদে আসুন।
আমি ও শান্তিমামা এ ধরণের কথোপকথন বেশ উপভোগ করছিলাম। মেজাজ দেখিয়ে আমরা তিনজনে আবার আয়কর ভবনে ফিরে এলাম। ক্যান্টিনে বসে আমি ও শান্তিমামা রসগোল্লার শ্রাদ্ধ করে পারস্পরিক বিদায় জানিয়ে আমার অফিস রওনা হলাম।
এক সপ্তাহ বাদে কর্পোরেশনে আবার যাবার প্রোগ্রাম রইল। ইতিমধ্যে খোঁজখবর নিয়ে জানলাম, কলকাতা কর্পোরেশনের বার্থ সার্টিফিকেটের কোনই প্রয়োজন নেই। হাবড়া অঞ্চল পঞ্চায়েত থেকে নিলেই চলবে। কাজেই দিন সাতেক বাদে ওটার আর সন্ধানী হলাম না। মিঃ সিনহার পরামর্শমত চুপচাপ রইলাম। মেজমামাকে (প্রদ্যোৎ নিয়োগী) চিঠি দিলাম আর্গোসি থেকে, স্পন্সরশিপ সার্টিফিকেট পাঠাতে শিগগিরই। আমার ইচ্ছা, সমস্ত ডকুমেন্টস রেডি রাখতে পারলে কন্সাল অফিস ওগুলি চাওয়ার সংগে সংগেই জমা দিতে পারব।
ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি , স্যাক্রামেণ্টো থেকে এক বছরের ছুটি নিয়ে ইউনাইটেড ইইঞ্জিনিয়ার্স, ১৮০১ আর্চ স্ট্রীট, ফিলাডেলফিয়া অফিসে সবে অর্থাৎ ১৯ আগষ্ট ১৯৭৪ জয়েন করেছেন মেজমামা। নতুন অফিসে জয়েন করতে না করতেই স্পন্সরশিপ সার্টিফিকেট পাঠানো সত্যিই ঝামেলার ব্যাপার। মেজমামাকে ডিটেলস জানিয়ে চিঠি দিয়ে রাখলাম আগে থাকতেই। এমনিভাবে দিন কেটে যাচ্ছে। অফিস যাওয়া ছাড়া আপাততঃ তখন কিছু করণীয় নেই। রোজই অফিস থেকে ফিরে এসে আমার চিঠির সন্ধান নিই। নিরুত্তর পাই। মনটা খারাপ হয়ে যায়। কোন একটা কাজ ও বিশেষ করে ক্রিয়েটিভ(creative) কিছু না পেলে আমার হাত দুটো নিসপিস করে। আমার দিনগুলো কেমন যেন গতানুগতিক হয়ে গেল ৩১শে জুলাই ১৯৭৪ এর পর থেকে । এখন ও তিনমাস অপেক্ষা করতে হবে কন্সাল অফিসের উত্তর পাবার জন্য। সত্যিই বেশ ধৈর্য্যের পরীক্ষা।
(ক্রমশ)
0 Comments