জ্বলদর্চি

আমি আমার মতো /পর্ব -১৪/সুকন্যা সাহা

আমি আমার মতো 
পর্ব -১৪
সুকন্যা সাহা

বাজার সরকার 
আজকাল মাঝে মাঝে বাজারে যাই ... মানে যেতে হয় আর কি ! বাজারে যেদিন যাব খুব ভোর ভোর উঠে বেড়িয়ে পরাই আমার পসন্দ ... কাছেই বেশ বড়সড় একটা বাজার আছে ;বাড়ি থেকে মোটে মিনিট দশেকের হাঁটাপথ । চক্র রেলে টাটকা শাক সব্জি চলে আসে ভেন্ডারে চেপে । লকলকে লাউ ডগা , কচি চালকুমড়ো, যুবতী বেগুন , বারো মাস পাওয়া যায় ... দেখলেই লোভ হয় , শীতকালে ডাঁসা ফুলকপি ... নিয়ে যান দিদি খাস মদনপুরের জিনিস ... এত কম দামে কোত্থাও পাবেন না। বোধহয় সারের জিনিস ... ইউরিয়া দেয় গাছের গোড়ায় । তরমুজে সিরিঞ্জ করে লাল রঙ ঢোকায় , সবুজ রঙের জলে চোবায় ভেন্ডি ... কি যে খাচ্ছি! সব বিষ! এই বর্ষা কালে সবে নতুন আনারস উঠেছে , পাকা ফল ; মৌমাছি ভন ভন করছে । মিষ্টি গন্ধ । আর আছে লেবু ... পাতা সুদ্দু গন্ধরাজ বা সবুজ কাগজী ... দুটোরই স্বর্গীয় গন্ধ । পাতলা মুসুর ডাল কি ঘন মুগের ডাল, গন্ধ লেবুর জুড়ি মেলা ভার । সারা বছরই পাওয়া যায় হাইব্রিড ধনেপাতা , গন্ধ বাতাস কম । বাজার ঘুরে ঘুরে মোটা মোটা ঝাল ঝাল লংকা কিনি । আমার আবার কাঁচা লংকার রান্না খাওয়া অভ্যাস। বাস আসে রান্নায় ।গাঢ় হলুদ রঙের পাকা কুমড়ো, সরু সরু ঝিঙ্গে , একটু মোটা সুরেশ্বরী ডাঁটা ... থরে থরে সাজানো সব্জি ; মোচা থোড় , কাটার লোকের অভাব বলে কেটেই বিক্রি হয় আজকাল।গোটা মোচার  অর্ধেক পাওয়া যায়  কাটলে ... তবু কাটার ভয়ে তাই সই !বাঙ্গাল বাড়ি। নানা রকম সব্জি আর রান্নার বাহার! রান্না  ঘরেই  কেটে যায় দিনের অর্ধেক  সময় ... এখন কাজের লোকের ওপরেই ভরসা।তাও মা ঠাকুমার রান্নার সেই  স্বাদ আসে কই ?শীতের দিনে সিম, বেগুন , বড়ি দিয়ে ঝোল ঝোল লাউ শাক, চালের গুঁড়ো বা পিঠালি দিয়ে একটু গাঢ়  করা হত ...টমেটো আলু ফুলকপি দিয়ে ঝাল ঝাল কই মাছ ... দর্শনেন অর্ধং ভোজনম! গরমের দিনে শুক্তো , চিংড়ি মাছ  দিয়ে ঝিরিঝিরি  করে কাটা লাউঘণ্ট... এসব  ছিল ঠাকুমার স্পেশাল রান্না। 


জ্বলদর্চি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন। 👇



সব্জি বাজার শেষ হলে মাছের বাজার ... গরমকালে মাছ বেশি ওঠে না ... কি দাম!মানুষ কি খাবে ? সাতশ আটশ টাকা কেজি , এক পিস মাছ গড়পড়তা ষাট সত্তর টাকা পড়ে । কটা মানুষ খেতে পারে ? খাসির মাংস পাঁচশো ছাড়িয়েছে অনেকদিন, আগে মাংস বলতে মাটনই বুঝত লোকে ... রবিবারের দুপুর মানেই মাংসের ঝোল ভাত , এখন কম খরচায় পুষ্টিকর চিকেনই সম্বল ... দুধের স্বাদ ঘোলে মিটছে ; চিকেনের নানা আইটেম, তন্দুরি চিকেন , তবে খাসির মাংসের সেই ফ্লেভার কই ? মনে আছে কড়াইতে কষাতে কষাতেই অর্ধেক মাংস শেষ ... টেস্ট করতে হবে তো! রবিবারের দুপুরে ভাই-বোনদের মধ্যে তখন রীতিমত কম্পিটিশান ।বাঙালি বাড়িতে চিরদিনই মাছের রকমারি রান্না ।বোয়াল , আড় , পাবদা,পুঁটি, লইট্যা, ফ্যাসা , কাজলি... বিচিত্র তাদের নাম ,বিচিত্র স্বাদ । হলফ করে বলতে পারি ঘটিরা এত রকম মাছের নাম বা রান্না কোনোটাই জানে না । আমার দাদু বলতেন বাজার করাটা একটা আর্ট ; শুধু মুঠো মুঠো পয়সা ছড়ালেই বাজার হয় না ... সঠিক জিনিস চিনতেও হয় ... কম পয়সায় কি করে সেরা জিনিস ঘরে তুলতে হয় সেটা শেখার বিষয় বৈকি ! কোন মাছের সঙ্গে কি উপকরণ লাগবে কি আনাজ লাগবে সেটাও জানতে হবে ... দরকারে মাছের পেট টিপে টিপে বা কানকো সরিয়ে দেখে জ্যান্ত মাছ কিনতে হবে ... বাজেটের বেশি বাজার হয়ে যায় প্রায়দিনই... মানিব্যাগের টাকা শেষ , এবার ফেরার পালা ... দুই থলি বাজার নিয়ে বাড়ি ফেরার সময় রিক্সাই ভরসা । আগেকার দিনে ধুতি পরিহিত বাঙালি বাবুরা বাজার নিয়ে ফিরতেন চাকর ভজুয়ার হাতে থাকত বাজারের ব্যাগ। এখন সে রামও নেই ... সেই অযোধ্যাই বা কোথা ?

(ক্রমশঃ)

Post a Comment

0 Comments