শিশুকিশোরদের জন্য সুমিত্রা ঘোষের 'ভূতের ছড়া' সত্যিই অসাধারণ
মায়া দে
হাঁউ মাঁউ খাঁউ, যাঁরে পাঁই তাঁরে খাঁউ—। ওরে বাবা— ভূ —--ত।
ভূত মানেই গা ছমছমে হাড় হীম করা রুদ্ধশ্বাস ব্যাপার। আবার ভূত মানে হাজার মনের কৌতুহল। হাজার চোখের আবিষ্কার। অতি গম্ভীর ব্যাখ্যা। ভূত নিয়ে নানান ভাবনা। নানান গল্প, ছড়া ,নাটিকা ,ভূত বিষয়ক নানা সাহিত্য ভূত রসনায় পরিতৃপ্তি আনে।
আজকের ইঁদুর দৌড়ের যুগে শিশু কিশোরদের অবস্থা ভারী শোচনীয়। না আছে খেলার জন্য উপযুক্ত সুযোগ সুবিধা, না আছে শিশু বিনোদনের জন্য ভালো কিছু বই, সিনেমা কিংবা ভালো নাটক। অথচ পিঠেতে বইয়ের মস্ত বোঝা। তারা হাসতেও ভুলে গেছে যেন। তারা ভুলে গেছে টুনটুনির গল্প। তারা ভুলে গেছে ঠাকুরমার ঝুলি, পাগলা দাশু ,অবন ঠাকুরের অমৃতময় শিশু-কিশোরদের রচনা। অবসরে হাতে পাচ্ছে মোবাইল, টিভি । তাতে করে শিশু কিশোর বয়সে কল্পনা প্রবণতা একদম বিলীন হচ্ছে। তাদের কচি মনের ইচ্ছা -ক্ষুধা বড়রা উপেক্ষা করে চলেছি। তাতে আর যাই হোক বড় মনের উত্তরসূরী তৈরি করা যেতে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি।
কোনো এক বর্ষা ঘন সন্ধ্যা। কচিকাঁচা সব এক জোট দাদু ঠাকুমাকে ঘিরে। ঘাড় উঁচু,বড়ো বড়ো চোখ ,দুরুদুরু বক্ষ। শুনে চলেছে লম্বা হাত, লম্বা পা, লম্বা ঘাড়ওয়ালা ভূতেদের কেচ্ছাকাহিনী । কত রকমারি ভূতেদের গল্প। -মেছো ভূত,গেছো ভূত, মামদো ভূত ,শাকচুন্নি, পেত্নী, ভূতের রকমারি সব নাম। রকমারি ভূতের রকমারি ঘটনা।
এখন আলোচ্য "ভূতের ছড়া" বইয়ের ছড়াকার সুমিত্রা ঘোষের এই বই খানি বেশ চমকপ্রদ। ভূতেদের নিয়ে লেখা ছড়াগুলোর ভাষা ভাবনা মাত্রা মিল ছন্দ বিষয়বস্তুর বিচিত্রতা বিভিন্নতা সুচারু চিত্রকল্প সৃষ্টির দক্ষতা বইটিকে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। এখানেই দক্ষ ছড়াকারের মহত্ব । শিশু-কিশোর পূর্ণবয়স্ক বৃদ্ধ সকলের চাহিদা মেটাবে সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই।প্রতিটি ছড়ার সঙ্গে চিত্রকার তারক পাইনের আঁকা ছবিগুলি ছড়াকে উচ্চমাত্রা দিয়েছে । এবার আসি ছড়া গুলোর দিকে । বইয়ের প্রথম ছড়া "রকমারি ভূত "
" হামদো ভূত মামদো ভূত
নেইকো ভুতের শেষ।
সবখানেতে ভুতের মেলা
দুর্ভোগের এক শেষ
ঘরে ভূত ভাইরে ভুত
খোকা খুকুর বইয়ে ভূত
সবাই তারা আজব ভূত
ভূত নয় তারা ভূতের পুত।"
দারুণ দারণ।
দ্বিতীয় ছড়া —--"ভূতের মাসি মেসো।"
"মামদোভুতের মাসি গেল
মেসো ভূতের বাড়ি,
সঙ্গে ছিল কর্তাটি তার
দই মিষ্টি হাঁড়ি।"
ভূত মানেই ভয়, তা শুধু নয়। ছড়াকার তার রসবধে ভূতের ছড়াকে মজার খোরাক এনেছেন। এই ছড়ায় কেবল ভীতি প্রদর্শিত হয়নি, ছড়াকারের কলমের জাদুতে ছড়া মজার খোরাক পেয়েছে। এবার পড়ে নেব"ভূতের মাসি, ভূতের পিসি"ছড়াখানি–
"ভূতের নামে ভিরমি খায়
যত কচি কাঁচার দল
কত দুষ্টু ওঝা ছুটে আসে
কেবল ভূত তাড়াবার দল
ভূত ভূত ভূতের নামে
যতই কাটুক বুক।
সবই কেবল গল্প কথা
নেই তো কোন ভূত"।
কিম্ভূত কিমাকার ভূতেদেরও কান্না পায়, মুখেভাত হয়, হাসি পায়, ব্যামোও হয় ,বমি ও পায় ,বিয়েও হয়।
আমড়াতলা, শ্যাওড়া গাছ ,শ্মশানতলা ,তেতুল গাছ ভূতেদের বসবাস স্থান। রাত্রিবেলায় দেখায় তাদের স্বরূপ।ওই ভূতেদের জন্যই বুকের ভেতর ধুকপুক।
মানুষের জীবন আর ভূতেদের জীবনে কোন তফাৎ নেই।হুতুমপুরের হুতুম রাজা দু এক লাইন পরে দেখতে পারি—-
"হুতুমপুরের হুতুম রাজা করলে জারি আইন
বেআইনি গ্যাস নিলে হবে
হাজার টাকা ফাইন। "
হুবহু মানুষের জীবন চিত্র যেন।
" ভূতের বিয়ে" ছড়াটি শিশু মনে এক অদ্ভুত ভালোলাগা জড়িয়ে থাকবে। পড়ে মজা পাবে ,পাবেআনন্দ ।পড়লে বোঝা যাবে ছড়াটি—
অমাবস্যার রাতে হচ্ছে ভূতের বিয়ে।
দত্যি জানো জমলো সব
শেওড়া তলায় গিয়ে
পেত্নী হল কণে
মামদো হলো বর
শাকচুন্নি নিত কনে
মেছো ভুত নিতবর।"
অথবা
"ডাইনি ভূত" ছড়াটি পড়ে চোখ বড়ো ,মুখ হাঁ করা , দুরু দুরু ছোট্ট বুকে রক্ত চলকে ওঠে। কেঁপে ওঠে ছোট্ট শরীর । রক্তচোষা মানুষ খেকো ভূতেরা যেন চুপি চুপি কাছাকাছি ঘোরাঘুরি করছে।
ছড়াটি অবশ্যই পড়ে নেব—
"রক্তচোষা মানুষ খেকো ডাইনি ভূত ওরা রাতবিরেতে ঘুরে বেড়ায়
খানাখন্দ ডোবায়
সূচালো ঠোঁটে চুক চুকিয়ে রক্ত খায় যারা জানবে ওরা ডাইনি ভূত
পাহারা দেয় পাড়া।"
ভূতেদের নিয়ে আর এক মজার ছড়া–"শাঁকচুন্নি ভূত"
শাঁকচুন্নি ভূতের পুত
বেজায় খুশি সেদিন
হাঁউ মাঁউ খাঁউ
আস্ত মানুষ খেললো যেদিন
দিনের বেলায় ভুতেরা সব
গা ঢাকা দেয় দিয়ে থাকে
রাতের বেলায় চলাফেরা
হট্ট গোল আর বেলাল্লাপনায় মাতে।"
পরিশেষে বলতেই পারি, সুমিত্রা ঘোষের শিশু কিশোর উপযোগী এই ভূতের ছড়াসমগ্র সত্যিই অসাধারণ সৃষ্টি ।হাল্কা মেজাজ ও মজায় ভরপুর অশরীরীদের নিয়ে লেখা এই ভূতের ছড়া বই কচি কাঁচাদের মধ্যে নিশ্চয়ই বিপুল সাড়া মিলবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের হাতে ভূতের ছড়া বইটি তুলে দিয়ে সুমিত্রা ঘোষ প্রসংশা পাবেনই। পাঠক সমাদৃত হোক তাঁর ছড়ার বই "ভুতের ছড়া"।
🍁
বাড়িতে বসেই রেজি.ডাক মাধ্যমে জ্বলদর্চির বিশেষ সংখ্যাগুলো সংগ্রহ করতে পারেন। যোগাযোগ হোয়াটসঅ্যাপ - ৯৭৩২৫৩৪৪৮৪
0 Comments