জ্বলদর্চি

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা ১২৭

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা  ১২৭
সম্পাদক -মৌসুমী ঘোষ 

চিত্রগ্রাহক ঋপণ আর্য


সম্পাদকীয়,
আমরা যারা সুস্থ বলে নিজেদের দাবী করি, তারা কি সকলে জানি আজ বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস?তোমরা যারা ছোটো খেলতে গিয়ে বা স্কুলে তোমাদের বন্ধুদের মধ্যে কাউকে কাউকে একটু অন্যরকম লাগে কি? তবে শোনো লাগলে তাকে নিয়ে মজা বা হাসি তামাশা না করে জেনে নাও সে অটিস্টিক কিনা! কারণ ভারতে ১১৩ জন শিশুর মধ্যে একজন অটিস্টিক। এই সংখ্যা সারা বিশ্বেই বেড়ে চলেছে।  সুতরাং ছোটো থেকে বড়ো আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে এই বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন বন্ধুদের স্বার্থে। দোলনচাঁপা আন্টি সে কথাই লিখেছে। শুধু আন্টি কেন আমি বলছি, পৃথিবীটা আরো সুন্দর করতে এসো আমরাই সচেতন হই ছোটো থেকে। এই যেমন এবারের পত্রিকা সুন্দর করতে ঋপণ আঙ্কেল প্রচ্ছদের ছবিটা পাঠিয়েছে। আর অমনি আমার মনে পড়ে গেল, ছোটোবেলায় ট্রেনে করে বেড়াতে যাবার কথা, ট্রেনের জানলায় বসে গাছ বাড়ি মাঠ পুকুর সব পিছনে ছুটছে সেই মজার দৃশ্যের কথা। আর সুব্রত আঙ্কেল তার ছড়ায় সেদিনের একটা দৃশ্যের কথা লিখে পাঠিয়েছে। কোন দৃশ্য? সেই যে সেদিন সন্ধেবেলা চাঁদের একদম নিচে শুক্রগ্রহ এসে গেল না? আমি তো ভাবলাম এই বুঝি দুজনের ধাক্কা লাগলো। কি অবস্থা! আজকাল মহাকাশেও ধাক্কাধাক্কি লাগছে, মানে সেখানেও ভিড় বেড়ে গেল নাকি! কোনো বিশ্বাস নেই, বাবা। পাহাড়ে গিয়েও তো দেখি কী ভিড় কী ভিড়। পাহাড়ের কথা যখন উঠলই লাচুঙের কথা বলতেই হয়। তবে এবার শ্রীকান্ত আঙ্কেল অনেক ইতিহাসের কথা শুনিয়েছে। না না লাচুঙের ইতিহাস নয়, বুদ্ধধর্মের কথা।  যা তোমরা গুগুল খুললেই জেনে যাবে সহজেই। তবে গুগুল কিন্তু অত সহজ ব্যাপার নয় তা তোমরা তপশ্রী আন্টির গল্পের শেষাংশ পড়লেই বুঝতে পারবে। এবারের সংখ্যায় দুই ছোট্ট বন্ধু আয়ুস্মিতা আর বর্ষানি ছবি এঁকে পাঠিয়েছে। আর আফরিন তার সুন্দর স্কুল জীবনের গল্প লিখে পাঠিয়েছে। প্রতি সপ্তাহে তোমাদের জন্য এত সব আয়োজন সুন্দরভাবে ফুল হয়ে ফোটে যখন কেউ পড়ে পাঠপ্রতিক্রিয়া পাঠায়। এবারের সেই ফুলের তোড়া গেঁথে পাঠালেন অসীম আঙ্কেল। পরেরবার এই তোড়া গাঁথার দায়িত্ব নিতে হবে তোমাদের। কেমন?     - মৌসুমী ঘোষ।

ধারাবাহিক উপন্যাস
লাচুঙের নেকড়ে
পর্ব ৬

শ্রীকান্ত অধিকারী

ছয়  
বড়োমামি পান চিবোতে চিবোতে আসছে। ঠোটের দুই ধারে লাল কস। সে দিকে খেয়াল নেই। ছোটমামা অবাক,--পান! এখানে! এই পাহাড়ে জঙ্গলের ভেতরে! মামিমা এক মুখ পানের সঙ্গে এক ফুট হাসি মিশিয়ে বলে, ‘যে খায় চিনিফিনি তাকে যোগায় চিন্তামনি’। বিহারী ভাইয়া দোকান দিয়েছে। তুই খাবি একটা? সিউড়ির মত না, তবে খারাপও বলব না। চলে যাবে। 
রামসি বলে, মামা ব্যাপারটা ঠিক হজম হল না। বিহারের লোক এখানে! 
-পাকস্থলী শক্ত কর। আরও অনেক কিছু আসবে, হজম করতে হবে। মগধের নাম শুনেছিস? এই পানওলা সেই মগধের অধিবাসী। ওরা এখন ভারতের সব জায়গায় ছড়িয়ে গেছে। 
--এই মগধই তো মহাবীর আর বুদ্ধের মত দুই মহামানবের পীঠস্থান। 
--এখন পাটনা গয়া আর বাংলার কিছু অংশ। ছোটমামা বলে।  
-মানে এখন বিহার ঝাড়খণ্ড ! 
-ঝাল মুড়িও দিচ্ছে। চাইলে বারো ভাজাও পাবি। বড়োমামি পান চিবোতে চিবোতে বলে। 
-ওদেরই একচেটিয়া হয়ে গেছে। ছোটমামা বলে, কোথা নেই ওরা -কাশ্মীরের ফুটপাতে কিংবা ডাল লেকের ধারে মোঘল গার্ডেনের মুখেও ওরা এন্ট্রি নিয়েছে। 
-সেবার আমরা খুব অবাকই হয়ে ছিলাম। রামসি বলে। 
-না, অবাক হওয়ার তো কথা নয়,বিবিধের মাঝে মিলনের ভারতবর্ষ। যে যেখানে পারবে যাবে। থাকবে। ভারতবর্ষে জনজাতির ধারাটা জানা আছে? 
রামসি ভাবে এই ভুলটা কী করে করল? ছোটমামাকে লিঙ্ক দিয়ে দিল। কলেজে ইতিহাস পড়িয়ে পড়িয়ে সুযোগ পেলেই ঘরের লোককেও ছাড়েনা। সকলে যখন ক্ষেপে যায় ছোটমামার কথা শুনে  তখন ছোটমামা বলে, ইতিহাস না জানলে ভবিষ্যৎটাও অন্ধকারে থাকবে। ওরে অতীতকে মনে রেখে বর্তমানকে বিচার করে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করাই তো ইতিহাস। 
তবে রামসিও ছোটমামার কাছে থাকতে থাকতে চ্যালেঞ্জ নিতে শিখে গেছে। তাই বেশ সপ্রতিভ হয়েই বলে,মানে প্রাচীন ভারতবর্ষের জনগোষ্ঠী তো? সিন্ধুসভ্যতার মানুষেরা ছিল অস্ট্রালয়েড গোষ্ঠী ভুক্ত। অর্থাৎ আর্য, দ্রাবিড় জনজাতি সঙ্গে মঙ্গোল এবং সুমেরীয়দের মিশ্রিত সভ্যতা হল সিন্ধু সভ্যতা।
-কিন্তু মনে রাখিস মেহেরগড় সভ্যতার কথা। হরপ্পা সংস্কৃতির পর বৈদিক যুগ ষোড়শ মহাজনপদ এবং মগধ সাম্রাজের কথাও ভুললে চলবে না। 
-আলেকজাণ্ডার আক্রমণের পরে মৌর্য চোল সাতবাহন কুষান গুপ্ত পাল রাষ্ট্রকূট করে করে বাইরের শ্ত্রু শক হুণ মোঘল ইংরেজ হয়ে আমাদের বর্তমান ভারতবাসী। তবে জাতিভেদ এবং বর্ণাশ্রম ব্যাপারটাও এক সময় ঢুকে গেছে আমাদের সমাজে। তাই না মামা? 
-তবে সমাজ যখন বললি তখন কিন্তু ভারতবর্ষের অঞ্চল ভেদে মানুষের আচার আচরণ সংস্কৃতি সব পালটে যায়। এই যেমন ধর দক্ষিণে যা দেখবি খাওয়া দাওয়া থেকে পোশাক আসাক কথাবার্তা এমন কি ব্যবহার মন-মানসিকতাও আলাদা। আবার উত্তরে কিংবা পশ্চিমে কিংবা মধ্য ভারতে সব এক এক রকম। আবার তুই ভারতের বাইরে যা সেখানেও প্রতিবেশী দেশগুলোতে বেশির ভাগ মানুষের সঙ্গে মিল পাবি।
--যেমন বৌদ্ধরা । 
--না জৈন খ্রীষ্টান শিখও আছে।
এখানে নেপাল থেকে শুরু হলেও তিব্বত চীন ভুটান সিকিম মায়ানমার ইন্দোনেশিয়া সব দেশে বৌদ্ধধর্মের মানুষেরা বাস করে এবং তারা তাদের ধর্মকে বাঁচিয়ে রাখে।
--তার মানে বুদ্ধের সঙ্গে সঙ্গে তার অনুগামীরাও মগধের বাইরে তো বটেই ভারতবর্ষের বাইরেও ছড়িয়ে গেছিল। 
ওরা যখন গল্পে মশগুল। তখন ‘দাদা ইংরেজ ! দ্যাখ !’বলেই ছুটতে ছুটতে শিঙি এসে রামসিকে ধরে। এতক্ষণ খেয়াল করে নি, ছোটমামার কথা শুনছিল। এবার যেদিকে জলপ্রপাত রয়েছে তার উলটো দিকে বেশ কয়েকজন পুরুষ মহিলা বিদেশি হাতে ক্যমেরা নিয়ে ছবি তুলছে। 
বড়মামা আর বাবার সঙ্গে ওরা কথা বলছে। গ্যাটসো পাশে দাঁড়িয়ে ঘাড় নাড়াচ্ছে। 
--তুই কী করে বুঝলি ওরা ইংরেজ ? ফরাসী কিংবা ডাচ হতে পারে। রামসি ওকে শুধোয়। 
--বা-রে,  ভালো করে দ্যাখ, কত ঢ্যাঙা। লিকলিকে বডি।ওদের লাল চুল, মাথায় হ্যাট, আর নাকটা কেমন কার্টুনের মত লম্বা। 
ছোটমামা শিঙির কথা শুনে হাসছিল। 
রামসি বলে,তাই দিয়ে তুই একটা লোককে বুঝে নিলি ও আর কিছু নয় ইংরেজ।  
--তা কেন হবে ওরা ইংরেজিতে কথা বলছিল তো। 
-এটা কিন্তু দারুন পয়েন্ট। ছোটমামা শিঙির গালটা টিপে আদর করে দেয়। 
-তুমিও আচ্ছা তো। একজন ইংরেজিতে কথা বলল আর একটু ফর্সা দেখেই হয়ে গেল ইংরেজ। ইংরেজিতে তো পশ্চিমবঙ্গেই কথা বলে প্রায় কুড়ি হাজারের ওপর মানুষ যাদের মাতৃভাষা বাংলা নয়। আর এখানে এই গ্যাংটকের ধারে তো ইংরেজি বলে অধিকাংশ লোক। 
--ও মামু , আমাদের ডন বস্কো স্কুলে ইংরেজ এসেছিল তো।  
কিছু বলার আগেই রামসি বলে, ছোটমামা,মাঝের সবচেয়ে লম্বা লোকটা ? 
-পাদ্রী। 
--মানে ধর্মযাজক! 
এখানে প্রায় সত্তর হাজার লোক খ্রীষ্টান। সেই ইংরেজ আমল থেকে এদের বৃদ্ধি।
--কিন্তু আমি জানতাম এরা সবাই বৌদ্ধ। রামসি বলে। 
-সেখানেও গল্প আছেরে। শোনাব এক সময়। চল এখন সিকিমের গান শুনি। 
ওরা তিনজনে সামনে রাস্তার ধারে যায়,যেখানে হেলান দিয়ে টুপি মাথায় লোক বড়ো পাথরের গায়ে বাজনা বাজাচ্ছে। পাশে উঁচু হয়ে বসে একটা কুকুর। কুকুরটা সাধারণ কুকুর নয়। কেমন যেন ভালুকের মত। সারা শরীরে বড়ো লোমে ঢাকা। চোখগুলো কোটরে ঢোকা। দেখতে পাওয়া যায় না একেবারেই। 
 এই অদ্ভুত কুকুরটার দিকে চেয়ে শিঙি বলে,-লোকটা কী বাজাচ্ছে মামু? শিঙি যন্ত্রটা দেখে যতটা  না অবাক হয়েছে, তার চেয়ে কুকুরটাকে দেখে ভয় পেয়েছে মনে হল। 
- টুংবুক। গ্যাটসো কখন এসেছে খেয়াল করে নি কেউ। ওটা আমাদের নিজস্ব যন্ত্র। 
-ম্যান্ডোলিনের মত, রামসির বাবা বলে। লোকটার কাছে রামসির বাবা মাও এসে গেছে।-কিন্তু আমি যতদূর জানি, এই যন্ত্র তো সিকিমিজদের! 
--নো, টুংবুক শুধু আমাদেরই আছে। লেপচাদের। গ্যাটসো বেশ জোরেই কথাটা বলে। 
হঠাৎ গ্যাটসো গান শুরু করে,--
‘রোঙ কপ সা ফেন-আলোক  
বান পয়োক বু লক দিঙ মো।’ 
অমনি সেই বাজনাওয়ালা লোকটা সেই ম্যন্ডোলিন জাতীয় বাজনাটা বাজাতে থাকল। কখনো মিহি আবার কখনো উত্তেজিত হয়ে এক সুর বের করতে লাগল। ওরা হতবাক। এত সুন্দর! 
ধীরে ধীরে পেঁজা তুলো মেঘ পাইন শাল গাছের মাথায় জমতে শুরু করল। এক লহমায় অদৃশ্য রহস্যে নীল আকাশ আড়াল করে দিল কালো মেঘে। 
তখনো সেই লোকটা দিব্যি টুংবুকে মূর্ছনা তুলে চলল। 
গ্যাটসোর চোখে জল। 
গাড়িতে সবাই চুপ। পাহাড়ি নিস্তব্ধতায় শুধু গাড়ি আর প্রপাতের এক টানা শব্দ সাধারণ মানুষকে গুটিয়ে থাকতে বাধ্য করে। সেই অবাঞ্ছিত পরিবেশকে কেটে, রামসির বাবা অদ্ভুত রকমের চোখ করে কথাটা বলে,-ওটা কি ভালুক ছিল, শাদুল? 
(ক্রমশ)

আয়ুস্মিতা সামন্ত। নার্সারী,সরস্বতী শিশু মন্দির


     অপরূপা — সুব্রত দেব

আজ রাতে আকাশের আহ্লাদ
     ধরেছিল সে বায়না
 শুকতারা আর চন্দ্রমা ভালে
      পরবে টিকলি গহনা
অপরূপ সাজে সাজাল তারে
      মোহিত নিখিল বিশ্ব
  ডেকে সবে কয় দেখবি তো আয়
          এমন বিরল দৃশ্য!

বর্ষানি নাথ
প্রথম শ্রেণী,বড়ো জাগুলিয়া প্রণবানন্দ বিদ্যামন্দির, নদিয়া

বড়ো গল্প
গুগুল ম্যাপের চক্করে
(শেষ পর্ব)

তপশ্রী পাল

সিট খুঁজে পেয়ে বসতে না বসতেই কোশ্চেন পেপার এসে গেলো। আর কোনদিকে তাকানোর বা কিছু ভাবার সময় ছিলো না। প্রথমে মাথাটা কেমন ফাঁকা হয়ে গেছিলো! কিছুই মনে পড়ছিলো না রায়ানের। শুধু সেই রাস্তাটা আর মেয়েটার চীৎকার! তারপর আস্তে আস্তে সব মনে পড়তে লাগলো। ঘন্টা দুয়েক কোথা দিয়ে কেটে গেলো! মোটের ওপর ভালোই হল পরীক্ষা এতো কান্ডের পরও। হল থেকে বেরিয়ে হঠাত আবার মেয়েটার কথা মনে পড়ে গেলো রায়ানের! যাবে আবার সেই গলিতে? গিয়ে দেখবে ব্যাপারটা কী? কেই বা অমন পালিয়ে গেলো? সাধ করে বিপদে জড়িয়ে পড়ার একটা অদ্ভুত অভ্যাস আছে রায়ানের। কিন্তু না। আর কোনভাবেই উবেরে উঠবে না রায়ান। কে জানে গুগল ম্যাপের চক্করে আবার কোথায় গিয়ে পড়ে! বড় রাস্তা থেকে বাস ধরেই বাড়ি ফিরে যাবে। বাসে উঠতে গিয়েও সেই মনটা খুঁতখুঁত করে উঠলো। আচ্ছা, আসপাশের আর কেউ শোনেনি সেই আর্তনাদ? কেউ বেরোলো না তো! আচ্ছা কী ঘটে থাকতে পারে ঐ বাড়িতে আর কেনই বা পালালো লোকটা অমন করে? পরীক্ষা হয়ে গেছে। আজকে অফিসে ছুটিও নেওয়া আছে। হাতে সময় আছে। পায়ে হেঁটেই একবার গলিটাতে গেলে হয়! বেশী দূর তো নয় এখান থেকে! যেই ভাবা সেই কাজ! বাসে না উঠে আবার রাস্তা পেরিয়ে সেই পানের দোকানের সামনে পৌছলো রায়ান। এখান থেকেই গলিটা ঢুকেছিলো। নন্দকিশোর বাই লেন! তারপর ঢুকে খানিক গিয়ে বোধহয় ডান হাতে ঘুরতে হবে! হ্যাঁ, বেরোনোর সময় লোকটার পিছু পিছু গিয়ে বাঁ দিকে ঘুরেছিলো! দেখা তো যাক ঢুকে! 
এখন ঘড়িতে বেলা একটা। আশ্চর্য! গলিটাতে ঢুকতেই বাইরের বাস ট্রামের এতো আওয়াজ আর পাওয়া যায় না! চারদিক থেকে রান্না খাওয়ার গন্ধ আসছে। একটা বাচ্চা একটানা ঘ্যানঘ্যান করছে। কোথায় একটা রেডিওতে লতার গান বাজছে। রায়ানের গা একটু ছমছম করছে। কী রকম অস্বস্তি হচ্ছে! এখনো বুঝতেই পারছে না কী করে একটা অচেনা বাড়িতে গিয়ে ঢুকবে! গলি দিয়ে ঢুকে ডান হাতে বেঁকে খানিক এগোতেই ডান হাতে পড়লো বাড়িটা। এবার ভালো করে তাকিয়ে দেখলো রায়ান। বাড়িটা দোতলা, কিন্তু অনেকদিন রঙ পড়েনি। দোতলার বারান্দার সামনের প্যারাপেট ভেঙ্গে পড়েছে খানিকটা। বারান্দায় একটা পুরোনো গামছা মেলা। দেখে মনে হয় অনেকদিন আগেই কেউ মেলেছে। তবে কি এখন এ বাড়িতে কেউ থাকে না? কিন্তু তাহলে আর্তনাদ করলো কে? 
এমন সময় রায়ান দেখে উল্টোদিকের বাড়ি থেকে এক বুড়ো ভদ্রলোক বেরোচ্ছেন। রায়ান জিজ্ঞাসা করলো “কাকু, আমি মিস্টার দেবাশিস রায়ের বাড়িটা খুঁজছি! এটা কি ওনার বাড়ি? বলে সেই বাড়িটা দেখালো।“ ভদ্রলোক চশমার ওপর দিয়ে বেশ খানিকক্ষণ তাকিয়ে বললেন “না না, এই বাড়িতে কস্মিনকালেও ঐ নামে কেউ ছিলো বলে শুনিনি। ইন ফ্যাক্ট এখানে গত সাত আট বছর কেউ থাকেই না। এটা বেচুবাবুর বাড়ি। উনি মারা যাওয়ার পর ওনার স্ত্রী কিছুদিন ছিলেন, তারপর ছেলে এসে তাঁকে নিয়ে যায়। ছেলে বিদেশে সেটলড। সেই থেকেই ফাঁকা পড়ে আছে। ও তো ভূতের বাড়ি হয়ে গেছে। ঝড়ে বৃষ্টিতে দরজা কপাট ভেঙ্গে গেছে দু এক জায়গায়! আপনি কতো নম্বর খুঁজছেন?” রায়ান তাড়াতাড়ি বলে “না না, ঠিক আছে। আমি আরেকদিন আসবো ঠিক করে অ্যাড্রেস, ডিরেকশন জেনে।“ বলে পা বাড়ালো। ভদ্রলোক সন্দিগ্ধভাবে ছাতা হাতে এগিয়ে গেলেন। গলির মোড় ঘুরতেই, রায়ান আবার ফিরে এলো সেই বাড়ির সামনে। উঁহু, এই বাড়ি থেকেই এসেছিলো চিৎকার! মোবাইল বের করে দেখলো – এই তো সেই বাইকের ছবি! সেই লোক! না, একবার ভিতরে ঢুকে দেখতেই হবে! নিশ্চই ঢোকা যায় বাড়িতে! মেন দরজায় টানা লক লাগানো! কিন্তু একটু জোরে ঠেলা দিতেই লক শুদ্ধ হুড়ুমুড় করে খুলে গেলো দরজা! ভিতরে ঘন অন্ধকারে চোখ সইয়ে নিতে একটু সময় লাগলো রায়ানের! হাতড়ে হাতড়ে দেয়ালের সুইচ বোর্ডের সুইচগুলি জ্বালাতে শুরু করলো! কারেন্টের লাইন কাটা। অন্ধকারেই এগিয়ে গেলো রায়ান। সামনের ঘর থেকে ভিতরে যেতেই পড়লো সিঁড়িকোঠা। ছাদের দিক থেকে আলো আসছে! সেই আলোয় রায়ান দেখলো মেঝেতে পুরু ধুলোর ওপর অনেক পায়ের দাগ। তার মানে এখানে লোকের যাতায়াত আছে! আশ্চর্য – বন্ধ বাড়িতে লোক আসছে যাচ্ছে? কেন? নিশ্চই কোন ভালো উদ্দেশ্যে নয়। আশেপাশে আরো দুটো ঘর তালাবন্ধ। তাহলে চিৎকারটা এলো কোথা থেকে? তবে কি শোনার ভুল? কিন্তু বাইক আর লোকটার ছবি তো মিথ্যে নয়! আস্তে আস্তে সিঁড়িকোঠা দিয়ে উঠতে শুরু করলো রায়ান। ঘুটঘুটে অন্ধকার! খানিক উঠতেই কিসে পা লেগে প্রায় পড়ে যাচ্ছিলো! একি! একটা বাচ্চা মেয়ে পড়ে রয়েছে সিঁড়িতে! এবার মোবাইল বার করে মেয়েটার দিকে টর্চ ফেললো রায়ান। বড়জোর বছর আষ্টেক বয়স। মেয়েটার জামাকাপড় এলোমেলো! কপালে রক্তের দাগ – যেন দেওয়ালে কেউ ওর মাথা ঠুকে দিয়েছে! পরণে স্কুল ড্রেস! নাকের কাছে হাত নিয়ে দেখলো খুব ধীরে নিশ্বাস বইছে! যাক – বেঁচে আছে! নিজের ব্যাকপ্যাকে একটা ছোট জলের বোতল আছে। একটু জল নিয়ে ওর মুখে ছিটিয়ে দিলো রায়ান। বেশ কয়েকবার ছেটানোর পর ছটফট করে চোখ খুললো মেয়েটি। খুলেই হঠাৎ ভয়ার্ত চিৎকার করে ওঠার চেষ্টা করলো। না পেরে আবার পড়ে গেলো। তারপর কাঁদতে কাঁদতে হাতজোড় করে বললো “ছেড়ে দাও! বাড়ি যাবো!” রায়ান বললো “আমি তো তোমায় কিছু করিনি! তুমি অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলে এখানে! কে তোমাকে এখানে নিয়ে এলো?” মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে বললো “চিনুকাকু! মা বলেছিলো আমাকে স্কুলে পৌঁছে দিতে, আজ বাস আসেনি বলে। চিনুকাকু বাইকে করে আমাকে এখানে নিয়ে এলো!” রায়ান বললো “সে কী! তারপর?” “চিনুকাকু আমাকে চকোলেট দিলো, পেপসি দিলো! বললো একটু পরেই স্কুলে পৌঁছে দেবে! আমি খেতে চাইনি। চিনুকাকু জোর করে খাইয়ে দিলো পেপসি! তারপর আমার কেমন ঘুম ঘুম পেলো! চিনুকাকু আমার হাতদুটো চেপে ধরে আমাকে শুইয়ে দিলো! আমি যন্ত্রনায় চিৎকার করে উঠলাম!  তারপর আর মনে নেই!“ বলে আবার কাঁদতে লাগলো মেয়েটা। রায়ান বুঝলো মেয়েটা হঠাৎ চিৎকার করে ওঠায় লোকটা ভয় পেয়ে পালায়, পাছে আসপাশের বাড়ি থেকে কেউ বেরিয়ে আসে! সম্ভবতঃ লোকটা বাচ্চামেয়েটার পাড়াতেই থাকে। রায়ান বললো “তোমার কোন ভয় নেই। তোমার স্কুলের আই-ডি কার্ড আছে?” স্কুল ব্যাগটা পাশেই পড়েছিলো। আই ডি কার্ড বার করে দিলো মেয়েটা। মনে হচ্ছে কাছেই থাকে। রায়ান বললো “চলো আমি তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছি!” বড় রাস্তায় সেই চায়ের দোকানে মেয়েটার আই-ডি দেখিয়ে অ্যাড্রেসটা কোনদিকে হবে জিজ্ঞাসা করলো রায়ান। পানওয়ালা অবাক হয়ে বললো “আপ উয়ো বাবু নাহি জো সুবহে ইস্কুল পুছে থে? আপ ফির কাঁহা সে আ গইল বা!” রায়ান বললো “তোমাকে সব বলবো পরে। এখন সময় নেই। বলো এই অ্যাড্রেস কোথায়।“ সেই বাচ্চা ছেলেটা আবার নিয়ে চললো ওদের। মেয়েটাকে বাড়ির দরজার সামনে নামিয়ে বেল বাজিয়ে সরে এলো রায়ান! দরজা খুলেছে, মেয়েটা ঢুকে গেছে। তাড়াতাড়ি চলে এলো রায়ান। বাড়ির লোক দেখলেই হাজার প্রশ্ন! এখন থানায় গিয়ে সব জানানো দরকার। আবার সেই পানওয়ালা ভরসা। অল্প কথায় তাকে সব বললো রায়ান। পানওয়ালা বললো “টালিগঞ্জ থানা তনিক দূর হায়! আপ গুগল মে টাইপ কর লো – উ দিখা দেগা।“ 
আবার সেই গুগল ম্যাপ! ম্যাপে টালিগঞ্জ থানা টাইপ করতেই সেই বেলুন আর ডিরেকশন চাইতেই সেই আঁকাবাঁকা লাইন! যাক বেশী দূরে নয়। কিন্তু ম্যাপের ভরসায় আর কিছুতেই যাবে না রায়ান। ঠিক! একটা রিক্সা নিয়ে নিতে হবে! রিক্সাওয়ালা এক কথায় অলিগলি দিয়ে নিয়ে চললো। দিব্যি এসে গেলো থানা। নেমে ভিতরে ঢুকে একটা এফ আই আর করলো রায়ান। জমা দিয়ে দিলো সেই লোকটা আর বাইকটার ছবিদুটো। মেয়েটার আই ডি কার্ডের একটা ছবিও তুলেছিলো। সেটাও দিয়ে দিলো। থানার ওসি খুব গুরুত্ব দিয়ে শুনলেন রায়ানের কথা। শেষে বললেন “আমার মনে হয় মেয়েটাকে কোন খারাপ উদ্দেশ্যে নিয়ে এসেছিলো লোকটা! ভেবেছিলো ঐ পড়ে থাকা বাড়িতে কেউ জানতে পারবে না, মেয়েটাকে কেউ খুঁজেও পাবে না। লোকটা পালিয়ে যেতে পারবে! ভাগ্যিস গুগল ম্যাপের চক্করে আপনি ওখানে এসে পড়েছিলেন! আপনি যে সব প্রমাণ এনেছেন তা দিয়ে আমরা অপরাধীকে খুঁজে বার করার প্রাণপণ চেষ্টা করবো। মেয়েটিকে বাঁচানোর জন্য অনেক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন!” বাড়ি ফেরার পর সব শুনে মা তো হাঁ! বললেন “তুই অমন ভাবে একটা বাড়িতে ঢুকে গেলি! ডিটেকটিভ বই পড়ে পড়ে তোর মাথাটা গেছে। কিন্তু কাজটা ভালো করেছিস। ইশ! বাচ্চা মেয়েটা - তুই না পৌছলে তো - যাক বাবা, ভালোয় ভালোয় ফিরে এসেছিস! আমি গরম গরম লুচি ভাজছি। এবার খেয়ে নে দেখি!”



জ্বলদর্চি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন। 👇



আমার স্কুলের দিনগুলো
আফরিন নিগার
মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী
কেশপুর গার্লস হাই স্কুল


আমি আফরিন। সদ্য মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছি। নিয়মিত বিদ্যালয়ে যাওয়া নেই এখন। তাই নানা কথা বিশেষতঃ বিদ্যালয়ের কথা মনে আসছে। 
       আমার প্রথম বিদ্যালয় আমার নিজের বাড়ি এবং সেখানকার শিক্ষক শিক্ষিকা আমার বাবা ও মা|  প্রথমে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সময় কেঁদেছিলাম যাতে স্কুলে যেতে না হয়| কিন্তু শেষমেষ রোজ রোজ বিদ্যালয়ে যেতেই হল| প্রথম যেদিন স্কুলে গিয়েছিলাম কাউকে চিনতাম না, কিছু জানতাম না, চুপচাপ বসে ছিলাম| তারপর আস্তে আস্তে সবার সাথে বন্ধুত্ব হল এবং স্কুলের সাথে এক মায়ায় জড়িয়ে পড়লাম| 
     দেখতে দেখতে কেটে যায় চার চারটে বছর| ক্লাস ফোর এর শেষ পরীক্ষা দিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়কে বিদায় জানাতে হয় এবং সেই স্কুল ছেড়ে আসতে হয় অন্য উচ্চ স্কুলে| আমি কেশপুর গার্লস স্কুলে ভর্তি হ‌ই। কিন্তু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকাদের পড়ানো, মজা করা, শিক্ষক শিক্ষিকাদের নানা কথা খুব মনে পড়ে আজও| 
       ভর্তি হলাম নতুন স্কুলে, সেখানকার শিক্ষিকাদেরকে ভয় লাগতো কিন্তু ওনাদের আদরে সেই ভয় কেটে যায়| আরো নতুন নতুন বান্ধবীদের সাথে সাক্ষাৎ হয়| তাদের সাথে  ঝগড়া করে আবার তাদের সাথে বন্ধুত্ব করে নেওয়া| মনে পড়ে।  নানা দুষ্টুমি যেমন, প্রার্থনা লাইনে দাঁড়িয়ে প্রার্থনা না করে এমনি মুখ নাড়ানোর অভিনয়| কখনও শিক্ষিকাদের স্বভাব হাঁটাচলা বা পড়ানো নিয়ে নিজেদের মধ্যে নকল করে মজার মজার কথা বলা| কে প্রথম ক্লাসে যেতে পারে সেই নিয়ে প্রতিযোগিতা করা|
     এর সাথে অবশ্যই ছিল  শিক্ষিকাদের  পড়ানো মন দিয়ে শোনা | প্রিয় শিক্ষিকাদের সাথে কোনো কোনো দিন গল্প করা। এইভাবে কেটে যায় দুই বছর। তখন আরেকটি নতুন ক্লাস| পড়তে পড়তে আসে গরমের ছুটি কিন্তু এই গরমের ছুটি নিয়ে আসে এক মহামারী ভাইরাসকে | এই মহামারী ভাইরাসের জন্য সারা ভারতে  স্কুল , কলেজ, অফিস কাছারি স্তব্ধ হল| এই ভাইরাস আমাদের স্কুল জীবন নষ্ট করে দেয়। লকডাউনের কারণে পড়াশোনা বন্ধ, খেলা বন্ধ। বন্ধু বান্ধবীদের সাথে দেখা হয় না। পরীক্ষা না দিয়েই উঠে যাই ক্লাস টেনে| তারপর নতুন করে রোজকার স্কুল শুরু হল।
      পড়ার চাপ বেশি| কিন্তু তা সত্বেও আমরা সেই মজা করা ভুলিনি | শিক্ষিকাদের সাথে মজা করা, কিছু কিছু কথা শেয়ার করা,  ওনাদের পড়ানো মন দিয়ে শোনা এইসব উপভোগ করে দেখতে দেখতে আসে আমাদের মাধ্যমিক পরীক্ষা। খুব মন খারাপ। এই পরীক্ষাটি হলে অনেকে চলে যাবে অন্য অন্য স্কুলে পড়াশোনা করতে। অনেকে আলাদা আলাদা বিষয় নিয়ে একই স্কুলে পড়লেও অন্য ক্লাস রুমে বসবে|
    অবশেষে মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হল এবং চলে আসলো আমাদের বিদায়ের সময়। না দিদিমণিদের সাথে দেখা হয়, না বান্ধবীদের সাথে| মনে পড়ে স্কুলের বদমাইশিগুলো, নানা অনুষ্ঠানের আনন্দ, মনে পড়ে দিদিমণিদের আদর, মনে পড়ে দিদিমণিদের কাছে বকুনি খাওয়া, মনে পড়ে স্কুলের আরও কতো মজা ।
       এই দিনগুলো তো আর ফিরে আসবে না। শুধু সারাজীবন থেকে যাবে আমার মনের মধ্যে। একজন দুরু দুরু বুকে অপেক্ষা মাধ্যমিকের ফলাফলের। ফলাফল বেরোলে স্কুলে রেজাল্ট আনতে গেলে দেখা হবে দিদিমণি ও পুরোনো বান্ধবীদের সঙ্গে।


স্মরণীয় দিবস
বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস
(২ রা এপ্রিল)

কলমে - দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে


আজ ২রা এপ্রিল বিশ্ব অটিজম দিবস। এটি একটি মস্তিষ্ক জনিত রোগ। সারা পৃথিবীতেই এই রোগ বেড়েই চলেছে।  কিন্তু এই অটিজম স্পেকটাম ডিসঅর্ডার (এ.এস. ডি) রোগ নিয়ে জনমানসে সেভাবে কোন জ্ঞান নেই ফলে সচেতনতাও নেই। এই রোগ একেবারেই বিরল নয়। এদেশে ১১৩ জন শিশুর মধ্যে একজন শিশু অটিজম নিয়ে জন্মায়। মেয়েদের থেকে চার গুণ বেশি ছেলেরা এই রোগে আক্রান্ত হয়।এই রোগ যে অবহেলিত আজ বিশ্ব অটিজম দিবসের প্রাক্কালে চিকিৎসকেরা তা মনে করিয়ে দিচ্ছেন।
অটিজম একটি স্নায়বিক রোগ। বয়স বাড়ার  সঙ্গে সঙ্গে মানুষের সামাজিক এবং মানসিক আচরণ যেভাবে পরিণত হয় এই রোগে আক্রান্ত মানুষদের আচরণ সেভাবে পরিণত হয় না এটি একটি মস্তিষ্ক জনিত স্নায়ুবিক রোগ।
যারা অটিজমে আক্রান্ত তারাও কিন্তু সমাজের একটি অংশ এটা আমাদের মত সাধারণ সুস্থ মানুষদের বুঝতে হবে এবং তাদের সুস্থভাবে বাঁচার ও থাকার ব্যবস্থা করে দিতে হবে, তাহলে সকলেরই মঙ্গল।
অটিজম সম্পর্কে অনেকেরই স্বচ্ছ ধারণা নেই আর এই কারণে বাবা মায়েরা অটিজম হয়েছে শুনলে  মনের দুঃখে ভেঙে পড়েন।এটি একটি নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার। এই রোগ শুরুতে ধরা পড়লে এবং যথাযথ চিকিৎসা করালে অনেক সময় নিরাময় হয়ে যায় এবং শিশু স্বাভাবিকভাবে জীবন যাপন করতে পারে, শুধু তাই নয় বরং দেখা গেছে অনেক ক্ষেত্রে এদের বুদ্ধি অনেক বেশি। পড়াশোনার পাশাপাশি এদের মধ্যে বিশেষ কিছু দক্ষতা ও থাকে।
 আমাদের আশেপাশে এমন অনেকে মানুষ আছেন যারা এই ডিজঅডার নিয়েও দিব্বি সুস্থভাবে বেঁচে আছেন, কিন্তু সচেতনতার অভাবে এই নিউরো ডেভলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার টিকে অভিভাবকেরা চিনতেই পারেন না। তায় এই রোগ সম্পর্কে আরো বেশি করে প্রচার দরকার বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ভীষণভাবে প্রয়োজন এই রোগকে ছোটবেলাতেই চিহ্নিত করা।
২রা এপ্রিল world autism awareness day. এই দিনটি অটিজম সম্পর্কে সকলকে সচেতন হওয়ার ডাক দেয়। আমরা যারা living with autism তারা একটু হলেও এই রোগ সম্পর্কে জানি এবং সচেতন। কিন্তু দুঃখের বিষয় বেশিরভাগ মানুষই এই রোগ সম্পর্কে কিছুই জানেন না। তাদের জানানোর জন্য বিশ্বে ২রা এপ্রিল বিশ্ব অটিজম দিবস পালিত হয়।


পাঠ প্রতিক্রিয়া

( ছোটোবেলা ১২৬ পড়ে অসীম হালদার যা লিখলেন)

কয়েকদিন আগে হিমাদ্রীকিশোর দাশগুপ্তের একটি লেখা পড়ছিলাম। আমাজনের জঙ্গলে কয়েকজনের সাথে ভ্রমণ করেছেন কি না জঙ্গলের রাজা সিংহের সাথে! কি সাংঘাতিক অভিজ্ঞতার কথা! আবার তাদের গায়ে পিঠে হাত বোলানোর মতো ঘটনা, তাও। সেই লেখাটি পড়ার পরেই যখন এবারের জ্বলদর্চির পাতায় চোখ রাখলাম, আমি মোহিত হয়ে গেলাম। একান্তে বসে ভাবতে ইচ্ছে হলো, আমরা ওদের জন্য কতখানি ভাবি, সেই বিশ্লেষণ তো খুব দরকার। ওদের মানে অবশ্যই আমি জঙ্গলের পশু পাখিদের কথাই বলছি। কয়েকদিন আগে আমাদেরই অফিসের এক অধ্যাপক, ডঃ স্বপন সেনের লেখা পড়ছিলাম, যেখানে তিনি পাখিদের নিয়ে অনেক কথা বলেছেন। সেও এক লেখা ছিল বটে। 

লাচুঙের নেকড়ে পড়ার পরে একটাই অনুভূতি, এটা কেন বই আকারে বেরোবে না! গাড়িতে চলতে চলতে নেকড়ে, হরিণ, লোমশ খরগোস, গিরগিটির কথা জানতে পারলাম। মন কিন্তু চকে গেছে ঠিক সিকিমের সেই অঞ্চলে যেখানে যেতে যেতে পেরিয়ে যাচ্ছি মঙ্গন ফরেস্ট ব্লজ, চুংথাং ফরেস্ট ব্লক, লাচুং ফরেস্ট ব্লক ইত্যাদি। সুসাহিত্যিক শ্রীকান্ত অধিকারী আমায় বাধ্য করেছেন তাঁর গল্পের মধ্যে আমায় নিয়ে যেতে। আমি হারিয়ে গেছি লাচুংএর মায়ার জগতে। শেষ হলো না, আগামীতে হয়তো আরও কিছু কাহিনীর কথা জানবো। 

একটা মিষ্টি মুখের গণ্ডারের ছবি আর প্রচ্ছদের কথা পড়ার পর এবারের সংখ্যাটা পড়বো বলে ঠিকই করেছিলাম। কিন্তু এর ভেতরে যে মশলাদার আরো উপকরণ আছে, তা বুঝলাম শ্রীছন্দা বসুর লেখা 'রণথম্বোর অভয়ারণ্য' পড়ার পর। এবারের গন্তব্যস্থল রাজস্থানের রণথম্বোর ন্যাশনাল প‍ার্ক। অরণ্যের চারিদিকে আবার আরাবল্লী আর বিন্ধ্য পর্বত রেঞ্জ। জানতে পারলাম তিনদিন ধরে সেখানকার বাঘ দেখার কথা, নীলগাই, বুনো শুয়োর, সাম্বার, পেখম তুলে হরিণদের দৌড়ে চলার কাহিনী শোনা। শেষের দিকে হঠাৎ রোমাঞ্চকর পরিবেশ পেলাম, যখন তাঁদের গাড়িটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল এবং ঐরকম একটা জায়গায় কিছুক্ষণ কাটানো!

দু দুটো অভয়ারণ্যে গল্পের সাথে পায়ে পা মিলিয়ে চলার পর বাড়ি ফেরার পথে পড়ে ফেললাম 'গুগল ম্যাপের চক্বরে'। তপশ্রী পাল দিদির লেখা পড়ছি আর রায়ানের খুঁজে চলা পরীক্ষার কেন্দ্রে পৌঁছাতে না পারার কথা যতই পড়ছি, মনে মনে গুগল ম্যাপের ওপর বেশ রাগ হচ্ছিল। নির্ঘাৎ তোমাদেরও তাই। এ গল্পের শেষটাও জানতে সামনের সংখ্যার দিকে চেয়ে রইলাম।

আর শ্যামসুন্দরবাবুর কথা পড়ে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম; সত্যি হাস্যকর হয়েছে বটে অপ্রতিম চট্টোপাধ্যায়ের 'রাশি রাশি হাসি'। তবে এটা শিক্ষনীয়ও বটে। আমি বিস্মিত হলাম মাত্র ষষ্ঠ শ্রেণীর ছোট্ট অপ্রতিম একটি এমন গল্প আমাদের উপহার দিলো যেখানে একটি চরিত্রের মানসিক পরিবর্তনের কথা লেখা হয়েছে। হতাশা এবং গ্লানির অন্ধকারে ডুবে থাকা একটি চরিত্রের মধ্যে অরিন্দমের মতো এক সত্যিকারের বন্ধুর পরামর্শ কিভাবে মন্ত্রের মতো কাজ করলো, ভাবলে অবাক হতে হয়। একটি সার্থক সুন্দর গল্প পেলাম তার হাত থেকে। অনেক পাঠক এমন গল্প আরও পড়ার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে থাকবে। অপ্রতিম, তোমার এই গুণটার কদর কোরো, সময় ও মূল্য দিও জীবনে। 

দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে-এর লেখা বিশ্ব থিয়েটার দিবস নিয়ে একটি পোষ্ট যখন আমার এক ফেসবুক বন্ধু পোষ্ট করেছিল, তখনই জেনেছিলাম প্রথম। আমার মনে পরে সেই ফেসবুক বন্ধুটি আমাদের অফিসে একটি নাটকে অভিনয় করেছিল, মোহিত চট্টোপাধ্যায়ের 'সিদ্ধিদাতা'। আমার ব্যাকগ্রাউণ্ডে আমার একটা ভূমিকা ছিল সেই নাটকে। হ্যাঁ আমি একমত নাটকের সুন্দর শৈলী এবং নাট্যশিল্পকে সমান জানাতে বিশ্ব থিয়েটার দিবসের গুরুত্ব অনেক। এখান থেকে যাঁরা পেশাদারী দুনিয়ায় পা রেখেছেন, তাঁরা প্রত্যেকে অভিনয়ের জন্য সুপরিচিতি লাভ করেছেন। একটি মূল্যবান স্মরণীয় দিবসের লেখা পড়ে সুখস্মৃতি শেয়ার করার লোভ সামলাতে পারলাম না।

আমার গল্পটি ফুরোলেও যাদের সৌন্দর্য্যায়নের জন্য এ সংখ্যার মাহাত্ম্য বৃদ্ধি হয়েছে, এবার তাদের নাম না উল্লেখ করলে আমার বক্তব্য অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। নীলাব্জ ঘোষের প্রচ্ছদ পর্বে গণ্ডারের ছবি এবং সুদীপ্তা আদিত্যের লাচুংএর নেকড়ে গল্পের প্রচ্ছদে তো ভূমিকা আছেই; এছাড়াও মানালী এবং তরুণিমার আঁকা ছবি দুটি জ্বলদর্চির পাতাকে স্নিগ্ধতায় ভরিয়ে তুলেছে, যা একবাক্যে স্বীকার্য। আবার ঝাঁপি খুলে দেখা হবে আগামী সংখ্যায়। ঘরমুখী ছানাপোনারা ছাড়াও একনিষ্ঠ পাঠক চেয়ে থাকবে মৌসুমীদির সুব্যবস্থাপনার দিকে। সাহিত্যের জন্য তাঁর এই নিষ্ঠাকে বার বার সেলাম। জ্বলদর্চি সাহিত্য সমাজের দর্পণ হয়ে থাকুক বহু বছর ধরে, অন্তরের কামনা সেটাই।


Post a Comment

0 Comments