My Life Story-6: Malay Roy Chowdhury
খোচর না ভুয়ো মানুষ : মলয় রায়চৌধুরী
হাংরি যুগের আইন-আদালতের ঘটনা সবাই জানেন । আমার বিরুদ্ধে সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, উৎপলকুমার বসু, শৈলেশ্বর ঘোষ আর সুভাষ ঘোষ তো রাজসাক্ষী ছিলেনই । ফলে আমার দুশো টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক মাসের জেলের সাজা হয়েছিল ।
দুজন ভুয়ো সাক্ষীও ছিল যাদের আমি আগে কখনও দেখিনি । এরা দুজন আসলে খোচর। খোচরের কথা তার আগে শুনতুন বটে কিন্তু স্পষ্ট ধারণা ছিল না । যাঁরা কোনো কাজে বা মামলা-মোকদ্দমার ব্যাপারে ক্রিমিনাল কোর্টে গেছেন তাঁরা দেখে থাকবেন প্রবেশ মুখে বেশ কয়েকজন উকিল দাঁড়িয়ে থাকে আর জিগ্যেস করে. ‘সাক্ষী চাই’ ? মামলা যাই হোক তারা তাদের মক্কেলকে জেতাবার জন্য রেডিমেড সাক্ষীদের শিখিয়ে দেয় কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে জেরার সময়ে কী কী বলতে হবে ।
তারা ভুয়ো মানুষ । তাদের ভেতরের আসল মানুষটাকে তারা হয়তো ভুলে গিয়ে থাকবে। মঞ্চের নাটকে অভিনয় করতে হয় । কিন্তু এই মানুষগুলো এমন চরিত্রে অভিনয় করে যার কোনও অস্তিত্ব নেই । নাটকের অভিনেতাদের চেয়েও এদের অভিনয় খুঁতহীন ।
আমার মামলায় পুলিশ এইরকম দুজন ভুয়ো মানুষকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে আমার বিরুদ্ধে গল্প সাজিয়েছিল । এরা আসলে কফিহাউসের খোচর । কফিহাউসে লেখক বা কবি সেজে এরা তথ্য সংগ্রহ করে, বইপত্র সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট থানায় বা প্রেস সেকশনে জমা দেয় । একজন ছিল পবিত্র বল্লভ, আরেকজন সমীর বসু । তা সেই পবিত্র বল্লভ কোথা থেকে এসে আমার বিরুদ্ধে লালবাজারে এই বয়ানটা জমা দিলে:
“আমার নাম পবিত্র বল্লভ । ( বয়স ২২ বছর ) পিতা ঠাকুরদাস বল্লভ । ঠিকানা ২৮/এ পাইকপাড়া রো, কলকাতা ৩৭। ১৯৬৩ সালে আমি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পাশ করেছি । কামারহাটির সাগর দত্ত ফ্রি হাই ইংলিশ স্কুলে আমি সহশিক্ষক । প্রথমদিকে যে আইডয়া নিয়ে হাংরি জেনারেশন আরম্ভ হয়েছিল তা আমি গ্রহণ করেছিলাম কিন্তু প্রাসঙ্গিক পুস্তিকাটি প্রকশের পর আমি বুঝতে পারি যে তারা মূল ধ্যানধারণা থেকে বিচ্যুত হয়েছে এবং তাদের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করি । যতোদূর আমার মনে আছে দুই বছর পূর্বে হাংরি জেনারেশনের দ্বিতীয় বা তৃতীয় সংখ্যায় আমার নাম কেবল প্রকাশিত হয়েছিল । তাদের সঙ্গে সম্পর্ক শেষ হবার পর আমি কোনো লেখা দিইনি । কোথা থেকে রচনাগুলি প্রকাশিত হয় এবং কে ছাপার খরচ দেয় তা আমি জানি না ।আমার মতে তাদের রচনাবলী মানসিক বিকৃতিতে পূর্ণ এবং ভাষা বেশ নোংরা । আমি পুস্তিকাটির একটি কপি দেখেছি এবং মলয় রায়চৌধুরীর ‘প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার’ কবিতাটির ঘোর নিন্দা করেছি । আমি মলয় রায়চৌধুরীর হাতের লেখার সঙ্গে পরিচিত । ( ৪ সেপ্টেম্বর ১৯৬৪, স্বাক্ষর পবিত্র বল্লভ ) ।”
আমার সঙ্গে কখনও দেখা-সাক্ষাৎ হয়নি, পরিচয় হয়নি, অথচ দিব্বি আমার বিরুদ্ধে বয়ান লিখে দিলো । আবার লিখে দিলো যে আমার হাতের লেখাও চেনে । তারপর সাক্ষ্যে দেবার দিন কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে পাবলিক প্রসিকিউটারের শেখানো প্রশ্নোত্তর চালিয়ে গেল । গোপাল ভাঁড়কে যেমন কল্পনা করি, লোকটাকে দেখতে হুবহু তেমনি । সেই যে লোকটা আদালতঘর থেকে বেরিয়ে পোঁপাঁ দৌড়োলো তারপর আর দেখিনি কখনও।
2 Comments
বেশ লাগছে
ReplyDelete👍👍👍
ReplyDelete