জ্বলদর্চি

কেনাকাটা : মলয় রায়চৌধুরী


আমার জীবনের ঘটনা ( ৭ )

কেনাকাটা : মলয় রায়চৌধুরী


রিজার্ভ ব্যাঙ্কের চাকরি আমি অনেক আগেই ছেড়েছিলুম । কতোবার বলেছি । তবু সাক্ষাৎকার নিতে বসে কেন যে অনেকে বলে ওঠে, আপনি তো সরকারি চাকরি করতেন । সরকারি চাকরি করলে আমার মাইনে প্রত্যেক ফাইনান্স কমিশনের পরামর্শ অনুযায়ী বাড়তো, পেনশন বাড়তো । রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মাইনে আর পেনশান বাড়ে কিন্তু আমার বাড়ে না । ১৯৯৭ সালে রিটায়ার করার সময়ে যা ছিল তা-ই আছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কে আমার সময়ের পিওনদের পেনশনও আমার চেয়ে বেশি হয়ে গেছে । 

কবিতা লেখার দরুন গ্রেপ্তার হয়েছিলুম তা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পিওনরাও জানতো । পঁয়ত্রিশ মাস মামলা চলেছিল আর তখন কতো রকমের গালগল্প দপতরে ছড়িয়েছিল কে জানে । চাকরিটা আমি ছেড়েছিলুম পচা নোটের আবহে আমার অ্যালার্জি আরম্ভ হয়ে গিয়েছিল। তার ওপর নোট পোড়াবার ফাঁক গলিয়ে একদল কর্মী পচা টাকাগুলোকে বদলাবার নিজেদের দল গড়ে ফেলেছিল – সেসব লিখেছি “ডুবজলে যেটুকু প্রশ্বাস” উপন্যাসে। 

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের চাকরি ছাড়ার আরেকটা কারণ ছিল ভারতবর্ষের গ্রামগুলোয় ঘুরে বেড়াবার নতুন চাকরি । তার আগে চাষবাস সম্পর্কে কিছুই জানতুম না । কতো রকমের সেচ ব্যবস্হা হয়, ফসল হয়, কোন ফসলের গাছ কেমন দেখতে, কোন রাজ্যে কোন ফসল কেন বেশি হয় । পশুপালন সম্পর্কে জানতুম না, কতোরকমের পশু আছে ভারতে, বিদেশ থেকে কোন পশুদের আনা হচ্ছে– আকাট ছিলুম। তাই আমি গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ ইত্যাদি লেখা আর সেসব বই পড়া বন্ধ করে নতুন চাকরির জন্য জরুরি বই পড়া আরম্ভ করলুম । 

জ্বলদর্চি অ্যাপ ডাউনলোড করুন। 👇

বলা যেতে পারে জীবন পালটে গেল ভারতের গ্রামের মানুষদের সঙ্গে মিশে। আর গ্রামগুলোতে গিয়ে থাকার যে কষ্ট তা তো জানতুম না । শহরের জল খাওয়া পেটে গ্রামের জল সহ্য হতো না প্রথম দিকে ; পেট খারাপ হতো । পেট খারাপ হলে শহরের মতন পায়খানা পাওয়া যেতো না । আখের খেতে বা ধান খেতের আড়ালে বসে হাগার লজ্জা ছিল না, কেননা কলেজে ন্যাশানাল ক্যাডেট কোরে দল বেঁধে হাগতে যেতুম । বাবা বলেছিলেন একটা ফোলডিঙ ছাতা সঙ্গে রাখ । কতো জিনিস রাখব সঙ্গে ? নিজেকেই তো বইতে হতো । কতো নদীর ধার দিয়ে হেঁটেছি, নদী পেরিয়েছি ফুলপ্যাণ্ট ভিজিয়ে, দক্ষিণ ভারতে পাতায় তৈরি গোল নৌকোয় জলাশয় অতিক্রম করেছি । নানা যানবাহনে তো চেপেইছি, হাতি আর উটে চেপেও পার হয়েছি । 

যাকগে । রিজার্ভ ব্যাঙ্কের চাকরির প্রসঙ্গে ফিরি । কলকাতা হাইকোর্টে মামলা জিতে ফেরার পর যখন কাজে যোগ দিলুম তখন সবাই ধরে নিয়েছিল যে আমাদের দলটা লম্পটদের আর মেয়েদের নিয়ে আনন্দ করে । অমন একটা দল সত্যিই ছিল তখনকার অফিসে । সেই দলের কাজকম্মোও লিখেছি “ডুবজলে যেটুকু প্রশ্বাস” উপন্যাসে । বিয়ের জন্য তখন ঘটকরাও অফিসে আসা আরম্ভ করেছিল । কোনো-কোনো ঘটক তো পাত্রীকে সঙ্গে নিয়ে চলে আসতো আর আমার সামনের চেয়ারে বসিয়ে কেটে পড়তো।

একদিন এক অবসরপ্রাপ্ত পিওন এলো, সঙ্গের নাতনির বয়সী এক কচি মেয়েকে দেখিয়ে বলল, স্যার, আমি তো রিটায়ার করার পর এই মেয়েটাকে বিয়ে করেছি, কেননা আমার বউ অনেক কাল মারা গেছে, ছেলে-ছেলের বউ, নাতি-নাতবউরা যে যার সংসার করছে, আমাকে দেখাশোনার কেউ ছিল না, আমি গ্র্যাচুয়িটি আর প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা দিয়ে এই মেয়েটাকে কিনে বিয়ে করেছি, ওর পেটে আমার বাচ্চাও এসে গেছে। আপনি একটা সুন্দর দেখে মেয়ে কিনে নিন, ইচ্ছে হলে বিয়ে করবেন । জানেন তো আমি বৈশালী জেলার লোক, সেই বৈশালী জেলা যেখানকার সুন্দরী আম্রপালীর নাম সবাই জানে । আমার সঙ্গে চলুন । নিজে পছন্দ করে নেবেন । যে জাতের মেয়ে চান সেই জাতের মেয়ে কিনতে পারবেন। আপনার যা মাইনে তাতে ফর্সা সুন্দরী গায়েগতরে কাজের মেয়ে পেয়ে যাবেন ।





Post a Comment

0 Comments