জ্বলদর্চি

দূরদেশের লোকগল্প—আফ্রিকা/শেয়াল পণ্ডিতের পরিণতি /চিন্ময় দাশ


দূরদেশের লোকগল্প—আফ্রিকা

শেয়াল পণ্ডিতের পরিণতি

চিন্ময় দাশ


বনে কতো জীবজন্তুই তো আছে। তাদের ভিতর শেয়াল আর কাঁটাচুয়া (একেবারে শজারুর মতোই, তবে ছোট কাঁটাওয়ালা এক ধরণের প্রাণী)র মধ্যে ভারি বন্ধুত্ব। এতো গভীর বন্ধুত্ব, দুজনকে প্রায়ই একসাথে দেখা যায়।

একদিন বিকেলবেলা। দুজনে রাস্তায় বেরিয়েছে। শেয়াল তো কাঁটাচুয়ার থেকে মাথায় উঁচু। সে বলে উঠল—আরে বন্ধু, সামনে একটা গুদামঘর দেখছি যে। চলো, ঢুকে পড়া যাক।

--ঠিক বলেছ। চলো, যাই। বন্ধুর সায় পেয়ে, গুদামে গিয়ে ঢুকে পড়ল দুজনে। 

খাওয়া আর থামে না তাদের। একেবারে গলা পর্যন্ত হয়ে গেল যখন। তখন থামল দুজনে। পায়ে জুতো ছিল শেয়ালের। সেগুলো খুলে ফেলল। শব্দ করা চলবে না। চুপিসারে সটকে পড়তে হবে এখান থেকে।

মুখটুখ মুছে, সবে বড় রাস্তায় এসে উঠেছে, সামনে এক চিতাবাঘ। হঠাৎ দেখা তো, শেয়াল একটু ঘাবড়ে গিয়েছে। কিন্তু চিতাটা নিদারুণ শান্ত। গলা নরম করে, শেয়ালকে বলল—কিছু মনে কোর না, তোমার জুতোগুলোর প্রশংসা না করে পারছি না। তা, কে বানিয়েছে গো এগুলো? 

আর ভয় নাই মনে। জুতোর প্রশংসা শুনে, বেশ গুমোর হোল শেয়ালের। বলল—আমিও জানি, ওগুলো সুন্দর হয়েছে। হবে না? নিজেই যে বানিয়েছি যত্ন করে। 

চিতাকে আর পায় কে? সে ধরে পড়ল—পণ্ডিত, আমাকেও দু’জোড়া বানিয়ে দাও। না বললে কিন্তু শুনব না আমি। আর, যত্ন করেই বানিও কিন্তু।

--আমি যা করি, যত্ন করেই করি। শেয়ালের চটপট জবাব—কিন্তু তুমি তাহলে আগে একটা গরু শিকার করে আনো। প্রথমে সবাই মিলে ভোজ হবে। তার পরে তো চামড়া দিয়ে জুতো বানাবো তোমার। 

আর বিলম্ব নয়। চিতা চলল শিকারে। ওত পেতে পেতে, পেয়েও গেল দল থেকে পিছিয়ে পড়া বড়সড় একটা গরু। শিকার সেরে, গলা উঁচিয়ে ডাক ছাড়ল চিতা। যাতে শেয়াল আর কাঁটাচুয়া সেখানে পৌঁছে যায়।

জ্বলদর্চি অ্যাপ ডাউনলোড করে নিন।👇

প্রথমে গরুটার চামড়া ছাড়িয়ে, রোদ্দুরে মেলে দেওয়া হোল। তার পর শুরু হোল তিনজনের ভোজ। ভোজন পর্ব শেষ হলে, রাতের বিশ্রামে ঢলে পড়ল সবাই।

সকাল সকাল উঠে কাজে লেগে গেল শেয়াল। চার চারখানা জুতো। কাজের ঝক্কি তো আর কম নয়! 

শেয়াল কাজ করছে। মাথা উঁচিয়ে, চিতা বসে আছে সামনে। চোখমুখ আলো। মনে ভারি পুলক। 

একটা একটা করে, কাজ যখন সারা হোল, সূর্য প্রায় মাথার উপরে। আড়মোড়া ভেঙে উঠে দাঁড়াল শেয়াল। চিতাকে বলল—এবার জুতোয় পা গলিয়ে দাও। দিয়ে, রোদে পা ছড়িয়ে বসে থাকো।  প্রথম পায়ে দিচ্ছ তো! ভালো করে শুকিয়ে নিতে হবে প্রথমে। নইলে, প’রে আরাম হবে না মোটেই। চলাফেরা করতে হয়রাণ হয়ে যাবে। নতুন জুতো পেয়ে, তড়িঘড়ি পায়ে গলিয়ে বেরিয়ে পড়বে—এমনটা করা চলবে না কিন্তু। যে জিনিষের যেমন রীতি।

চিতার তো আনন্দ ধরে না। গদগদ গলা করে বলল— না পণ্ডিত, সে নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না। ভালো করে শুকিয়ে, তবেই পা তুলব আমি।

শেয়াল বলল—এদিকে সূর্য তো মাথার উপরে উঠে গেছে। আর দেরি করবো না। চলি আমরা।

দুই বন্ধু সরে পড়ল সেখান থেকে। শেয়ালের চোখে মুখে মুচকি হাসি। কাঁটাচুয়া বলল-- ব্যাপার কিছু একটা আছে মনে হচ্ছে। হাসছো কেন? বলোই না আমাকে।

শেয়াল চলা থামাল না। ছোট্ট করে বলল— ছোট্ট একটু শিক্ষা দিয়ে এসেছি শয়তানটাকে। দৌড়ানো লাফানো চুলোয় গেছে। হাঁটাচলাটাও ঘুচিয়ে দিয়ে এসেছি ওর। 

কাঁটাচুয়া বলল—বলো কী হে? চিতার সাথে চালাকি করলে? পরে ভুগতে হবে না তো?

--আরে, ভায়া! এ জন্যই তো বেশি কথা না বাড়িয়ে, তাড়াতাড়ি সরে পড়লাম। শেয়াল হাসিমুখেই বলল—পণ্ডিতকে দিয়ে জুতো বানানো? ফল বুঝতে পারবে বাছাধন। কথা বাড়িও না, আগে ভালোয় ভালোয় কেটে পড়ি এই এলাকা থেকে। 

এদিকে রোদে চারটে পা-ই মেলে দিয়ে, টান টান হয়ে শুয়ে আছে চিতা। সময় গড়াচ্ছে। মালুমও হচ্ছে, জুতোগুলো পায়ে চেপে বসছে। 

চিতা ভারি ঝুশি। পেটের জন্য লাফঝাঁপ করতে হয় তাকে। দৌড়বীর বলে দুনিয়া জোড়া নাম তার। এত লম্বা লাফ আর কোন প্রাণীর নাই। জুতো জুতসই ভাবে পায়ে বসে না গেলে, লাফানোর অসুবিধা হোত। 

সূর্য যখন অস্ত গেল বন-পাহাড়ের আড়ালে, উঠে দাঁড়াল চিতা। সামনের পা-টা এগিয়ে দিয়ে, চেয়ে চেয়ে দেখল পায়ের নতুন সজ্জাকে। চোখেমুখে আলো চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে। মনের ভাব, সকালটা হয়ে যাক। কাল আর শিকার নয়। সারাটা বনে হেলেদুলে বেড়িয়ে বেড়াব, সব্বাইকে দেখাব এই নতুন জিনিষ। হিংসায় জ্বলে পুড়ে মরবে সবাই। এমনকি, বনের রাজা সিংহমশাইয়ের ডেরার সামনে দিয়েও এক চক্কর মেরে আসতে হবে।

স্বুপ্ন দেখতে দেখতে, পিছনের পা তুলে ফেলতে যাবে, অমনি ‘আঁক’ করে উঠল চিতা। যন্রণায় ককিয়ে উঠেছে। জুতোর চামড়া যেমন শক্ত হয়েছে, আঁটোসাঁটো হয়ে পা কামড়ে ধরেছে তার চেয়েও বেশি। একটা পা এগোবে, সে সাধ্য নাই চিতার। কেউ যেন পেরেক দিয়ে গেঁথে দিয়েছে পাগুলোকে। উপড়াতে গেলেই যন্ত্রণায় শরীর বেঁকে যাচ্ছে। 

অনেক কসরতেও কিছুই লাভ হোল না। সেখানেই মাটিতে গড়িয়ে পড়ে রইল বেচারা। কান্নাকাটি করেই রাত কেটে গেল চিতার। 

সকাল হোল। খানিক বাদে, একদল পাখি বেরিয়েছে বাসা থেকে। ছোট্ট চেহারার তিতির এক ঝাঁক। খাবারের খোঁজে চলেছে লাফিয়ে লাফিয়ে। চিতার গোঙানি কানে গেল তাদের। 

সবাই মিলে চলল ব্যাপারটা কী, দেখতে। চিতার সামনে এসে তারা অবাক। এভাবে পড়ে আছে কেন এখানে? ছোট্ট পাখিগুলোর সাথে কোন শত্রুতা নাই চিতার। তারা এগিয়ে এসে শুধালো—কী হয়েছে গো? এমন কাতরাচ্ছো কেন? আমরা কোন সাহায্য করতে পারি?

শেয়াল যে তার সাথে শয়তানি করে এমনটা ঘটিয়ে গিয়েছে, খুলে বলল চিতা। পাখিদের সর্দার হায়-হায় করে উঠল—করেছ কী? ঐ ধুরন্ধরের পাল্লায় পড়তে গেলে কেন? যাকগে, চুপটি করে পড়ে থাকো, যেমনটি আছো। দেখছি আমরা, কী করা যায়। 

পুরো ঝাঁক নিয়ে উড়ে গেল সর্দার। করল কী, ছোট্ট একটা নদী ছিল কাছেই। সবাই জল তুলে আনতে লাগল ঠোঁট ডুবিয়ে ডুবিয়ে। নদীর জল তুলে এনে, তারা ঢেলে দিতে লাগল চিতার জুতোয়। 

ছোট্ট পাখি। ঠোঁট তাদের আরও ছোট। ক’বিন্দু জলই বা ওঠে তাতে। কিন্তু কাজটা চালিয়ে গেল তারা। একবার নদী, একবার চিতা। একবার চিতা, একবার নদী। পাখির ঝাঁকের ওড়াউড়ি চলতেই লাগল, যতক্ষণ না জুতোর চামড়া নরম হোল ভিজে জবজবে হয়ে।

জুতো থেকে পা বার করতে পেরে, সে কী আনন্দ চিতার! খুব করে ধন্যবাদ দিল তিতিরগুলোকে। দিয়েই ফিরে এলো নিজের মেজাজে। বড় করে হুঙ্কার ছাড়ল একটা—যাই, পণ্ডিতের দেনাটা শোধ করে আসি। 

পাখিগুলোর বুঝতে অসুবিধা হোল না, শেয়ালের কপালে অনেক দুর্দশা আছে আজ।

কিন্তু শেয়াল অনেক বুদ্ধিমান। চিতা যে ছেড়ে কথা বলবে না, ভালোই জানে। সে সোজা গিয়ে  নিজের গর্তে ঢুকে পড়েছে। 

এদিকে চিতা তো ঘুরে ঘুরে হয়রান। এমন সময় এক বুড়োর সাথে দেখা। তাকে সব কথা জানিয়ে, চিতা জিজ্ঞেস করল—শেয়াল তো অনেক উপকার করেছে আমার। কী করে তার দেনাটা শোধ করা যায়, একটা উপায় বাৎলাতে পারো?

বুড়ো বলল-- এ আর এমন কী কাজ। আবার একটা গরু মেরে আনো বড় দেখে। বনের সব শেয়ালকে নেমন্তন্ন করে ভোজ দাও। তুমি কিন্তু ভালো করে চোখ খুলে রাখবে। দেখবে, সব শেয়ালের চোখ থাকবে মাংসের দিকে। একজনই কেবল চেয়ে চেয়ে দেখবে তোমাকে। যেটার চোখ তোমার দিকে, তার কাছেই তোমার দেনা।

পরামর্শটা বেশ মনে ধরল চিতার। বড় দেখেই একটা গরু শিকার হোল। তিতিরের ঝাঁক উড়ে উড়ে নেমন্তন্ন জানিয়ে এলো শেয়ালদের সকলকে। দারুণ হৈ-হল্লা শেয়ালদের পাড়ায়। 

বাঘ-সিংহ-চিতা শিকার করে। তাদের ফেলে যাওয়া টুকরো-টাকরা মাংস জোটে বুনো কুকুর, হায়েনা বা শেয়ালদের কপালে। এমন আস্ত একটা শিকার তাদেরই জন্য— এমন সৌভাগ্য সহজে আসে না। সবাই এসেছে ভোজসভায়। সেই ধূর্তও ঢুকে পড়েছে ভিড়ের মধ্যে।

সবাই গোল হয়ে হামলে পড়েছে খাবারের উপর। একটু দূরে বসে, নজর রাখছে চিতা। ঠিক চোখে পড়ে গেল শয়তানটাকে। খাচ্ছে আর মাঝে মাঝেই চিতাকে দেখছে টেরিয়ে টেরিয়ে। 

আর যায় কোথায়। হুঙ্কার ছেড়ে, এক লাফ। শেয়ালও সতর্ক ছিল। সেও পালাতে গেল লেজ উঁচিয়ে। চিতা যখন পড়ল, শেয়ালের লেজটাতেই দাঁত বসাতে পারল কেবল। কামড় খেয়ে, শেয়ালও দিল জোর এল লাফ। তাতে হোল কী, শেয়াল সরে পড়তে পারল বটে, তার লেজখানা গেল কেটে।

চিতার সম্বিৎ ফিরল যখন, কেউ নেই আশেপাশে। পুরো দলটা হাওয়া হয়ে গিয়েছে। সে একা দাঁড়িয়ে আছে। খুঁজে পেতে, চিতা আবার সেই বুড়োমানুষের কাছে হাজির—এখন কী করা যায়, বলো তো?

বুড়ো বলল—এ আর এমন কী কাজ। নদীর ধারে, একটা তরমুজের খেত আছে। শেয়ালদের প্রিয় খাদ্য। ফসল এখন পেকে এসেছে। শেয়ালের গুষ্টিশুদ্ধ সবাই গিয়ে হাজির হবে ওখানে। ওখানে ওৎ পেতে থাকো। লেজকাটাকে চিনে নিতে অসুবিধাও হবে না তমার।

সত্যিই তাই। তরমুজ পেকেছে। শেয়ালের দল তৈরি যাওয়ার জন্য। কিন্তু লেজকাটা শেয়ালও ভালোই বুঝে গেছে, চিতাও তক্কে তক্কে আছে নিশ্চয়। মরণ নাচছে কপালে। যতোই ভিড়ের মধ্যে ঢুকে থাকুক না কেন, লেজ নাই, চিতার কোন অসুবিধা হবে না চিনে নেওয়ার। চোখে পড়লেই টুঁটি ছিঁড়ে ফেলবে।  

কিন্তু অতো সহজে মারা পড়া চলবে না। একটা উপায় বের করে ফেলল সে। ফন্দী আঁটতে জুড়ি নাই শেয়ালের। 

শেয়ালদের পাড়া শুদ্ধ সবাই এসেছে তরমুজ খেতে। ভারি মিষ্টি বসেছে পাকা ফসলে। সবাই খাওয়ায় মশগুল। লেজকাটা করল কী, চুপিচুপি এর লেজ তার লেজে, তার লেজ ওর লেজে গিঁট বেঁধে দিতে লাগল। গিঁট বাঁধা শেষ হতেই চেঁচিয়ে উঠল, সর্বনাশ। চিতা এসে গেছে।

আর যায় কোথায়! যে যেদিকে পারলো, দৌড়োতে গেল। আর হ্যাঁচকা টানে, সকলেরই লেজ গেল ছিঁড়ে। 

চিতা ভারি হতাশ। আর কোন উপায় নাই। চিনতেই পারবে না শয়তান পণ্ডিতটাকে। কী আর করে? মনের খেদ মনে পুষে, আবার চলল বুড়ো মানুষটার খোঁজে। যদি নতুন কোন উপায় বাতলে দেয়। 

গিঁট বাঁধতেই সময় কেটে গিয়েছিল। তরমুজ খাওয়া হয়ে ওঠেনি পণ্ডিতের। সে এসে হাজির হোল তার বন্ধু কাঁটাচুয়ার বাড়িতে। তাকে দেখে, বন্ধু তো অবাক—আরে, এ কী? তোমার সেই বাহারি লেজখানা গেল কোথায়?

--শুধু আমার নয় বন্ধু। আমাদের পাড়ার সবার লেজই কাটা গিয়েছে। সে অনেক কথা। পরে বলব তোমাকে। এখন পেটে ভারি খিদে। চলো, রাখাল ছেলেটার কাছে যাই। যদি একটা ভেড়া পাওয়া যায়। কাঁটাচুয়াকে নিয়ে, বের হল শেয়াল।

রাখালকে গিয়ে বলল— তোমার তো অনেকই ভেড়া। ছোটখাটো দেখেই, একটা দাও আমাদের। এমনি এমনি নেব না। ন্যায্য দাম দেব আমরা তোমাকে। 

শেয়াল আর রাখালের চিরকালের শত্রুতা। মওকা পেলেই, চুরি করে শেয়াল। বিশেষ করে, বাচ্চা ভেড়াকে শেয়ালের হাত থেকে বাঁচাতে, অনেক মেহনত করতে হয়। এখন শেয়ালকে সামনে পেয়ে, রাখাল ভারি খুশি। আজ পাওয়া গেছে ডাকাতটাকে। আজই ভবলীলা সাঙ্গ করে দেব হতভাগার। 

--কী সৌভাগ্য আমার! তুমি ভেড়া কিনতে এসেছো। দাম আমার চাই না। এই প্রথম এসেছো। মাগনাই দেব তোমাকে। রাখাল বলল—এবং ছোট্মোট নয়। সব চেয়ে বড়টাই দেব তোমাকে। কিন্তু এখন তো বিকেল হয়ে গেছে। বড়টাকে খুঁজে বের করতেই, সন্ধ্যে হয়ে যাবে। 

রাখাল রাজি হয়েছে। শেয়াল ভারি খুশি। বলল—তাহলে কখন দেবে?

রাখাল বলল—আজ রাতটা কাটিয়ে দাও কোন মতে। কাল এসো, একটু বেলা করে। পেয়ে যাবে। 

বন্ধুকে নিয়ে চলে গেল শেয়াল। রাখাল করল কী, ভেড়ার পাল থেকে সব চেয়ে বড় ভেড়াটাকে মেরে ফেলল। যত্ন করে চামড়া ছাড়িয়ে ফেলল ভেড়াটার। 

একটা করে শিকারী কুকুর থাকে সব রাখালের সাথে। ভেড়ার পাল পাহারা দেয় কুকুরগুলো। এই ছেলেটার সাথেও তাগড়াই কুকুর ছিল একটা। ভেড়ার চামড়াটা কুকুরের গায়ে চাপিয়ে সুন্দর করে সেলাই করে ফেলল রাখাল। বাইরে থেকে দেখে, ভেড়া ছাড়া এখন কুকুর বলে মালুম হওয়াই দায় এটাকে।

এদিকে কাল থেকে কিছু জোটেনি। পেট চুঁই চুঁই শেয়ালের। সকাল না হতেই, সে এসে হাজির হয়েছে রাখালের জন্য। খানিক বাদে, রাখালও পৌঁছে গেল ভেড়ার পাল নিয়ে। শেয়ালের সাথে দেখা করবার আগে, নিজের কুকুরটাকে একটা গাছের ডালে বেঁধে রেখে এসেছে ছেলেটা।

--এসে গেছো, পণ্ডিত। ঐ যে গাছের ডালে তোমার ভেড়া বেঁধে রেখে এসেছি। দড়ি খুলে নিয়ে চলে যাও। আবারও বলছি, দাম-টাম কিছু দিতে হবে না তোমাকে।  

শেয়াল তো খুশিতে ডগমগ। বন্ধুকে নিয়ে, গাছের তলায় গিয়ে হাজির হোল। এক ঝলক দেখে নিয়েই, খুশি ধরে না আর শেয়ালের। বেশ বড়সড় ভেড়াই দিয়েছে ছেলেটা। আহ্লাদে আটখানা হয়ে, কাঁটাচুয়াকে বলল—তুমিও একবার দেখে নাও, বন্ধু। খাবার পছন্দ হয় কি না।  

কাঁটাচুয়ার মনে কিন্তু ধন্দ। এতো সহজে এতো বড় একটা ভেড়া দিয়ে দেবে রাখাল? নিশ্চয় কিছু একটা ব্যাপার আছে। সে এগিয়ে গেল ভেড়াটার দিকে। চার দিক ঘুরে ঘুরে পরখ করতে লাগল প্রাণীটাকে। 

তার ঠিক চোখে পড়ে গেল ফারাকটা। ভেড়ার পায়ের খুর গেলো কোথায়? তাছাড়া, ভেড়ার পায়ে নখওয়ালা থাবা গজালো কবে থেকে? ভয়ানক ভয়ে চমকে উঠল কাঁটাচুয়া। ভাগ্যিস দড়িতে বাঁধা আছে জীবটা। তাই রক্ষে। পায়ে পায়ে সরে এল সেখান থেকে। 

শেয়ালকে বলল—না, বন্ধু। ভোজটা ভালোই জমবে আজ তোমার। তুমি শুরু করে দাও। আমি চটপট নদী থেকে একটা ডুব দিয়ে আসি। 

ভয়ানক কিছু একটা বিপদ হতে যাচ্ছে, বুঝতে দেরি হোল না কাঁটাচুয়ার। নদীতে যাওয়ার নাম করে, সে প্রাণ নিয়ে সরে পড়ল সেখান থেকে।

অনেক ক্ষণ কেটে গেল। কাঁটাচুয়ার ফেরার নাম নাই। আর দেরি সইল না শেয়ালের। শুরু করে দেওয়া যাক। এই ভেবে, এক কামড়ে দড়ি কেটে ফেলল। ভেড়াটাকে কামড় বসাতে গেল সে। 

অমনি একটা গর্জন। পিলে চমকে গেল শেয়ালের। ভাববার বা বুঝবার কোন সুযোগই জুটল না বেচারার কপালে। এক লহমার জন্যই কেবল, কুকুরের গর্জন শুনতে পেল, তাও আবার একটা ভেড়ার গলায়। 

তার পরেই একটা বিদ্যুৎ চমক। এক লাফে কুকুরটা ঝাঁপিয়ে পড়ল তার উপর। ছিঁড়ে কুটি কুটি করে ফেলল শেয়ালকে।

তার পর? তার পর আর কী—শেয়ালের খেলা ফুরলো। নটে গাছটি মুড়লো।।

🍁

বাড়িতে বসেই রেজি.ডাক মাধ্যমে জ্বলদর্চির বিশেষ সংখ্যাগুলো সংগ্রহ করতে পারেন। যোগাযোগ  হোয়াটসঅ্যাপ - ৯৭৩২৫৩৪৪৮৪



Post a Comment

0 Comments