জ্বলদর্চি

আমেরিকার আদিম মানুষের খোঁজে-৮/ মলয় সরকার

আমেরিকার আদিম মানুষের খোঁজে 

মলয় সরকার

পর্ব-৮ (অষ্টম পর্ব)


এই প্রসঙ্গে একটা কথা বলি। যদিও বলছি এই চার্চগুলো স্প্যানিশদের করা, তবু এগুলো কেন পুরো স্প্যানিশ ঢং হয়ে যায় নি তার একটা কারণ সম্ভবতঃ এই লেখাটা পড়লে কিছুটা বোঝা যাবে। যারা এটা নিজের হাতে তৈরী করেছিল, তারা কতটা আসল স্প্যানিশ ছিল, সেটাই সন্দেহের। বলা হয়-
The Genízaros are the descendants of Native American slaves. When Native Americans were captured by colonists or during warfare with other tribes in the 18th and 19th century, they were sold. Once enslaved, they were forced to convert to Catholicism and learn Spanish. Some were from tribes in northern Mexico. They had accompanied the many Spanish expeditions into the territory during the first century of colonization. Others were captives based on conflicts between tribes; mostly Comanche, Ute, Kiowa, Apache, and Navajo. They worked for the Spanish as laborers and military conscripts, becoming a critical component of frontier defense and territorial expansion.
Tomás Vélez Cachupín was the Spanish colonial governor from 1749 to 1754 and 1762 to 1767. He wanted to secure Spanish territory, strategically expanding influence and creating opportunities for economic growth. Prior to his tenure, attempts to settle the mountains between Santa Fe and Taos had failed. The nomadic raiding parties evicted settlers before crops could take root. Cachupín decided to establish Genízaro settlements on the boundaries of the frontier. Though it was hazardous, sometimes fatal, for the settlers, relocation to frontier settlements was the only way for the Genízaros to acquire land.
পাশ দিয়ে চলেছে হাইওয়ে ,এছাড়া সামনে বিশাল শুষ্ক পাহাড়। আশেপাশে গাছপালাও শুষ্ক নিষ্পত্র। চারিদিকে বিরাজ করছে অসীম শূন্যতা , সঙ্গে নিয়ে চলেছে এক অসম্ভব রুক্ষতাকেও। কিন্তু আমার যেন তার মধ্যেও সৌন্দর্যের এক মাদকতা মনকে স্পর্শ করে চলেছে। যথেষ্ট ঠাণ্ডা বাইরে।পাহাড়ের গায়ে চাদর জড়ানোর মত পড়ে আছে সাদা বরফ। রাস্তার পাশে চিরহরিৎ পাইন , জুনিপারের বনের তলায় বিছানো রয়েছে পুরু সাদা তুষার চাদর। রাস্তার বরফ, হয় কেটে সরানো হয়েছে, নয়ত গাড়ীর চাকায় তা ছিন্ন ভিন্ন হয়েছে। ঘাসের দল মাটির বাইরে নিজের মৃত শরীরকে ফেলে রেখে আত্মগোপন করে আছে মাটির তলায়। উপরের বরফ সরে গেলেই মাথা উঁচু করে সগর্বে ঘোষণা করবে তাদের অস্তিত্ব। আমরা চলেছি তার মধ্যেই এক ফেলে আসা অতীতের সন্ধানে।
জ্বলদর্চি অ্যাপ ডাউনলোড করে নিন।👇
এবার আমরা পথের ধারে আর এক চার্চের সামনে এসে হাজির হলাম, যার নাম San Francisco de Asís Mission Church।এটিও ১৯৭০ সালে National Historic Landmark বলে চিহ্নিত করা হয়েছে ।এটিও একই ভাবে ১১৭২ সালে প্রথম বানানো হয় এবং ১৮১৬ সালে দ্বিতীয়বার বানানো হয়।এটিও স্প্যানিশরাই বানায়, এদেশের রীতি নীতির সঙ্গে নিজেদের সংস্কৃতির মিশ্রণ ঘটিয়ে।
চার্চে ঢোকার সামনেই রয়েছে একটি ক্রশ মাটিতে পোঁতা। মাটির তৈরী এই চার্চটিও আগেরটির মতই । এরও মাথায় দুপাশে দুটি ঘণ্টা ঘর (Bell Tower) ও মাঝে অপেক্ষাকৃত একটু নীচু প্রধান চূড়া । তার মাথায়ও একটু ক্রশ।দরজাটি সাদা রঙের, কাঠের তৈরী। এটির যদিও অনেকবারই অনেক সংস্কার হয়েছে, কিন্তু মাটির দেওয়াল বা এইধরণের অনেক কিছুই আসলের মতই রাখা আছে।এটির বহিরঙ্গের প্লাস্টার মাটি ও খড়ের মিশ্রণে করা হয়েছে। এর দুটি ঘণ্টা ঘরের থেকে নীচের থামদুটি দুপাশে অনেকখানি এগিয়ে এসেছে ভূমির দিক থেকে।চার্চের আশপাশটি শুকনো এবং রুক্ষ।
এখানে বিখ্যাত শিল্পী Georgia o’Keefe র (যাঁর আঁকা ছবির মিউজিয়াম আমরা দেখেছি সান্তা ফে তে) আঁকা বেশ কিছু ছবি রাখা আছে।কিছু নামী ব্যাক্তির তোলা ছবিও আছে , যেমন Ansel Adams, Paul Strand, Ned Scott ইত্যাদি।O’Keefe বলেন, এই চার্চটি, প্রথম যুগের স্প্যানিশরা যা বানিয়েছিল, তার মধ্যে অন্যতম সুন্দর। এটিকে World Heritage আখ্যাও দেওয়া হয়েছে।এই চার্চটির সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ হয়ে বার বার বহু শিল্পী এসে হাজির হয়েছেন এর দরজায়।ফলে ,শুনলে আশ্চর্য হতে হয়, সারা আমেরিকার মধ্যে সব থেকে বেশি ছবি তোলা হয়েছে এই চার্চের।এই সেই এন্সেল আডামস , বিখ্যাত ফটোগ্রাফার, যাঁর নামে নামকরণ হয়েছে সিয়েরা নেভাডা অঞ্চলের একটি পর্বতের। (Mount Ansel Adams is a peak in the Sierra Nevada of California. At an elevation of 11,766 ft (3586 m). The summit is in Yosemite National Park near the park's eastern boundary.)
এই চার্চটি ,স্থানীয় যে সমস্ত কৃষিকাজে যুক্ত মানুষ রয়েছেন, সারা বছর তাঁদের নানা উৎসব ও আনন্দে মাতিয়ে রাখে।
এগিয়ে চললাম পরের রাস্তায় আমদের আসল লক্ষ্যে। আসলে কোথাও গিয়েই আমার কখনওই পছন্দ হয় না ওই টুর গ্রুপের দেখানোর মত, কিছুই না দেখে, শুধু সোজাসুজি স্পটে নিয়ে গিয়ে ফেলা এবং সেটি অল্প সময় দেখেই আবার পরের স্পটে এগিয়ে চলা।আমি যাব , সব দেখতে দেখতে, বুঝতে বুঝতে ইতিহাসকে নিজের চোখে ছুঁয়ে দেখে, মানুষের মনের খবর নিতে নিতে।
এখান থেকে বেশি দূরে নয় আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য। দিনের আলো তখনও অনেকখানিই বাকী, বেলা দুপুর বলা যায়। জায়গাটির নাম Taos Pueblo। এখানে যে অধিবাসীরা থাকেন , তাঁরা সেই প্রাচীন আদি আমেরিকান টাওস(TIwa -speaking) ভাষাভাষীদের বংশধর।তবে সাধারণতঃ এঁরা ইংরাজী ও স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলেন। এই জায়গায় বাইরের কেউ ঢুকতে গেলে তাকে পরিচয় দিয়ে টিকিট কেটে ঢুকতে হয় এবং বিকাল পাঁচটার পরে বেরিয়ে যেতে হয়। ওনারা বলেন , এখানে এই ভাবে এই সব মাটির তৈরী গ্রাম্য দ্বিতল বা ত্রিতল বাড়ীতে ওঁরা বাস করছেন প্রায় কয়েক হাজার বছর ধরে একই ভাবে। অর্থাৎ কলম্বাস এখানে আসার বহু বহু আগে থেকেই ওঁরা এই সব জায়গায় বাস করতেন।এখানে প্রথম স্প্যানিশরা আসে প্রায় ১৫৪০ খ্রীষ্টাব্দে।সেই প্রথম এঁদের সঙ্গে বহির্জগতের যোগাযোগ হয়।এই সমস্ত আদিবাসীদের ছবি তোলা সাধারণ ভাবে নিষিদ্ধ।
এনাদের মাটির বাড়ি, তবে তা প্রতি বছর মাটির প্রলেপ দেওয়া হয় এবং এই একই বাড়ি চলতে থাকে বংশ পরম্পরা হিসাবে। নিয়ম মত বাড়ির বড় ছেলেই সাধারণতঃ বাড়ির মালিক হন। বর্তমানে এনারা আমেরিকান সরকারের কাছে নানা সাহায্য লাভ করে , ঠিক মূল স্রোতের সঙ্গে না মিশলেও , অনেক খানি জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এনেছেন। ধর্মের দিক থেকে এনারা খ্রীষ্টান।
১৫ই ডিসেম্বর ১৯৭০ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নিক্সন ও তাঁর মন্ত্রীমণ্ডলী চিন্তা করলেন, অতীতে ১৯০৬ সালে বেআইনি ভাবে এনাদের বহু জমি আমেরিকান সরকার কেড়ে নিয়েছিল। তারই প্রায়শ্চিত্ত হিসাবে, প্রায় ৪৮০০০ একর জমি সরকার এনাদের ফিরিয়ে দেন। শুধু তাই নয়, এনাদের জন্য জল আলো ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ব্যবস্থা করেন।
এঁদের যে বাড়ি তৈরী হয় আজও , তা হয় মাটির সঙ্গে খড় ও জল মিশিয়ে। এ ছাড়া রোদে শুকানো ইঁটও ব্যবহার হয়। দেওয়াল গুলো সাধারণতঃ অনেক পুরু। ফলে ঘর থাকে অনেক ঠাণ্ডা।এ ছাড়া ছাদ ও অন্যান্য জায়গায় মোটা কাঠের ব্যবহারও হয়।অতীত দিনে বাড়িতে  কোন দরজা জানালার ব্যবস্থা থাকত না। ফলে ঢোকার ব্যবস্থা ছিল ছাদের উপর দিয়ে।এদের একটা পুয়াব্লো ঘরে (বা গ্রামে)এক সঙ্গে অনেক পরিবার থাকে পাশাপাশি ঘরে।তবে কোন পরিবারের ঘরের সঙ্গে অন্য ঘরের যোগাযোগ নেই অথচ সবার একই দেওয়াল। এখানে অনেক বাড়িই দ্বিতল , ত্রিতল এমনকি চার- পাঁচতলা বাড়িও রয়েছে।এই বাড়িগুলির প্রতি বছর যে সংস্কার হয়, তাও সাধারণতঃ হয় যৌথ ভাবেই । এইভাবেই একই বাড়ীকে ওরা বছরের পর বছর বাঁচিয়ে রেখেছে যুগ যুগ ধরে।
এরপর চলুন পরিচয় হবে ওদের সঙ্গে- সঙ্গে থাকুন–
ক্রমশঃ-

Post a Comment

0 Comments