জ্বলদর্চি

চারটি কবিতা/কাজরী মজুমদার

চারটি কবিতা/কাজরী মজুমদার


চালক

ভোরের কুয়াশার মাঝে রেল লাইন মিশে ধোঁয়ায় মিলিয়ে যায়। 
ট্রেন ছুটে চলে তার গতিতে,মানুষের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে।
ভিন্ন ভাষার,ভিন্ন বয়সের,ভিন্ন স্বপ্ন নিয়ে মানুষের কোলাহলে ট্রেন জমজমাট।
ট্রেনের চালকের পাঁচ বছরের কন্যা ক্যান্সারের পথে শেষ সময়ের অপেক্ষায়।
তবুও চালক দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, ট্রেনের প্রতিটা যাত্রীকে অক্ষত অবস্থায় পৌঁছে দিতে হবে গন্তব্যস্থলে।


         

আবেগে রাখিস বাঁধ

কিছু কথা মুখ বুজে কাঁদে অভিমান
কিছু প্রেম অবুঝের মতো বাঁধে মন প্রাণ।
কিছু ভুল হয়ে যায় ভালোবাসার অজুহাতে
কিছু আবেগ বাঁধন ভাঙে দিনে কখনো রাতে।

প্রতিশ্রুতি সাক্ষী ছিলো মিথ্যে ছলনার আড়ালে,
আবেগের লুটোপুটিতে জ্ঞানহীন দুটি শরীর জড়ালে।
তৃপ্তির স্বাদে তুচ্ছ হল এবার ভালোবাসার লুকোচুরি,
প্রেমের পরিণতি সমুদ্রের ধারে পড়ে থাকা ছোট্ট এক সাধারণ নুড়ি।

ঠকে যায় কিছু মন,কিছু শরীর দরজার পাপসের মতো।
হাসি মুখে কেউ এসে মুছে যায়, পায়ের ধুলো ছিলো যত।
বিচার হয় না তাদের প্রাপ্তি হয় অহেতুক বদনামের মুকুটের,
সারাজীবন বয়ে নিয়ে চলতে হয় তার জের।

অযাচিত শিশুর করে না কেউ স্বসম্মানে বরণ,
মনের কোণে সকলের কামনা এই, শিশুর হোক মরণ।
মায়ের জীবন সমাজের কটূক্তি, লাঞ্ছনায় ভরা।
মনের কষ্ট,চিৎকার করা কান্না, কারোর কাছে পড়ে  না যে ধরা।

শিশুকে নিয়ে মায়ের লড়াই,জীবন অভিশপ্ত, 
ভুলের মাশুল শুধু মা ই দেবে, ঝরবে বেহিসাবে রক্ত।
বদলেছে দিন,শিক্ষিত সমাজ,উদার মনের মানুষ,
তবে,প্রেমের জোয়ারে শুধু নারীই দোষী,হয় না দোষী পুরুষ।
বুঝলিরে মেয়ে! মনটা দিলেও আবেগে রাখিস বাঁধ, 
যতই থাকুক অগাধ প্রেম, সবারই জাগে সাধ।
সেদিন আবেগে নিজেকে ভাসাবি,
রাখবি না বাঁধ লজ্জা,
যেদিন স্ত্রীয়ের মুকুট পরবি, সাজাবে  ফুলশয‍্যা।

জ্বলদর্চি অ্যাপ ডাউনলোড করে নিন।👇

প্রেমের গল্প

রাতের জ‍্যোৎস্না ভিজিয়ে যাবে তোমার কঠিন প্রেমের গল্পকে।
যে গল্পকে তুমি ভুলে যেতে চাও মনের গভীর থেকে।
জ‍্যোৎস্না রাত তো প্রেম পেতে চায়,প্রেমের সাক্ষী হতে চায়।
লোডশেডিংয়ের আলো আঁধার চিনিয়ে যায় মুখোশের পিছনের মানুষটিকে।
কুরে কুরে খায় একটাই প্রশ্ন, কেনো তুমি!
তুমিই কেন ঠকে গেলে ভালোবাসার নামে,
সফল প্রেমের গল্প হয়ে বাঁচা কি সত্যিই খুব কঠিন!

            
         
 ভালোবাসি তোমায়

ভালোবাসি কেন,সে প্রশ্ন করোনা কখনো,
সেভাবে কোনো কারণ জানা নেই।
ভালোলাগা শুরু হয়েছিল কি দেখে প্রশ্ন করোনা,
কোন ক্ষণে ভালো লেগেছিলো, সেটাও মনে নেই।

বয়সটা কত,কি কি গুন আছে ,
এসবের জানার প্রয়োজন পরে নি কখনো।
তুমি আমায় ভালোবাসলে কিনা
সেটা জানার লোভ হয় বটে ,
তবে তাতে আমার ভালোবাসা চঞ্চল হয় না কখনো।
ভালোবাসি তোমায়,হ্যাঁ ভালোবাসি।

আমার দিন রাতের প্রতিটা মুহূর্তে ভালোবাসি তোমায়।
নাইবা পেলাম তোমায়,
নাইবা হলো সব স্বপ্ন পূরণ,
তবুও ভালোবাসার তীব্রতা কখনো আবছা হয় নি আমার।
ভালোবাসার বদলে ভালোবাসা চাই নি,
অন্তত, ভালোবাসার অধিকার টুকু দিও উদার মনে, ভালো বাসতে দিও আমায়।

নাইবা দিলে কিছু, নাইবা অনুভব করলে আমার সবটা অনুভূতি,
তবুও ভালোবাসতে দিও পাগল প্রেমিকের মতো।
পৃথিবীটা নতুন করে ভালো লাগে শুধু তোমার কারণে।
স্বপ্নের আবেশে নিজেকে ভাসিয়ে দিতে ইচ্ছা করে বারংবার।
কারণে অকারণে হেসে ফেলি তোমার মুখের হাসির কথা ভেবে।
এ যে কি সুখে ভরিয়ে দিয়েছো তুমি আমায়, আজ আমি নিজেকে ভুলে গেছি।
ভালোবাসি তোমায়, হ্যাঁ  ভালোবাসি।

আজ আমার প্রতিটি মুহূর্ত তোমায় ভেবে বাঁচি।
সারাদিনের ক্লান্তিতেও তুমি আমায় সতেজ করে রাখো।
তোমার সাথে একটু কথা হওয়ার অপেক্ষায় থাকি প্রতিটি মুহূর্ত।

কত কিছু তোমায় বলবো ভাবি,
কত কিছু জানতে মন চায় কিন্তু,
যখন কথা হয় তখন যেন সব ভুলে যাই। 
কিভাবে যে ওই সময়টুকু কেটে যায় তোমায় বলে বোঝাতে পারবো না।
ছোট ছোট প্রতিটি কথা তোমায় জানাতে ইচ্ছে করে,
কিন্তু সাহস হয় না তোমায় বার বার বিরক্ত করতে।
বিশ্বাস করো আমার সারা শরীর, সারা মনে শুধু তুমি আছো।
স্বীকার করছি তো যে তোমায় ভালোবাসি, হ্যাঁ ভালোবাসি তোমায়।



Post a Comment

0 Comments