জ্বলদর্চি

কবিতাগুচ্ছ ২ /স্বপন কুমার দে

কবিতাগুচ্ছ ২
স্বপন কুমার দে


অচেনা

তোমরা যা ভাবো,সে নয়,সে নয়, আমি।
হৃদয়ে গভীর ক্ষত, কপালে ভক্তির রসকলি,
সে নয়,সে নয়,আমি।
আমার ধর্মের 'পরে যে চৈতন্য আছে
স্বতঃসিদ্ধ প্রার্থণায় তারে আমি নমি।

আমাকে যে দেখো তোমাদের মাঝে--
কখনো ইতি,কখনো নেতির দলে,
সে নয়,সে নয়, আমি।
অবিরাম যে সদাসদ্ খেলা চলে আমার সীমায়,
আমি যে তাহার অনুগামী।

নিজেই নিজেকে চিনতে পারি না ছাই,
শুধু ঠিক-ভুল, ঠিক-ভুল করে যাই।
দিশেহারা পথে আমি যে বক্রগামী।
খণ্ড রূপে নিত্য চেনা,ক্ষুদ্র ঘটনায়
সে নয়, সে নয়,আমি।

যখন পাথর হবো,নিখাঁজ অবশেষ,
অনর্গল প্রবাহের থেকে বহুদূরে--
তখন না হয় এঁকো রসকলি।
এখনো আমার মর্মে অম্লান শব্দ, সুর
জীবনের বৃত্তপথে নিত্য পথগামী।


দুর্বোধ

হেমন্তের দীর্ঘশ্বাস পাতাঝরা গাছেদের ডালে;
ব্যথায় মলিন হয় বিবর্ণ হৃদয়।
ঘুমহীন চোখে চেয়ে দেখা-
সকালের, দুপুরের, বিকেলের আমি।
মোড়কের আড়ালে অচেনা অস্পষ্ট,
অপ্রকাশের যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যাওয়া অর্ধেক পৃথিবী।

বহুবিধ কারণের ঘেরাটোপে বন্দী।
তারও তো ছোঁয়া লাগে জাগরণের,
প্রতিদিনই অনুভব জাগে।
তবু সে স্রোতের পথে নদীবাঁধ,
বেগহারা সরসীর গভীরে অপার শান্তি!
জীবনের সঞ্চয় শুধু ক্ষয়ে যাওয়া আকাঙ্খার।

তবুও মাঝে মাঝে বিনিদ্র রাতে
স্বপ্নের আতুরতা,কামনার লোভ
সিক্ত করে মনময়ূরের পেলবতা।
এই বোধ, -জানি না হৃদয়ে কী স্নিগ্ধতা আনে,
হয়তো দিনের শেষে,ক্লান্তির অবসরে
ঘোচাবে মনের যত তাপ, অনুতাপে।


নদী,তোমাকে--

নদীকে জিজ্ঞেস করলাম, 'কী নাম তোমার?'
নদী বলল, 'যে নামে তোমরা আমাকে ডাকো।'
'তুমি থাকো কোথায়?'
'যেখানে সেখানে।
পাহাড়, জঙ্গল, সমতল
যখন যেখানে পারি থাকি।'
'তুমি যাচ্ছ কোথায়?'
'যেখানে যেতে হয়,
নিয়মের বাঁধনে আমিও যে বাঁধা।'
'তুমি কি নিয়ম ভাঙতে পারো না?'
'তেমন ক্ষমতা তোমারও নেই, আমারও নেই। '
'তুমি কার টানে চললে গো?'
'যে আমাকে ডাকে।'
'তুমি কি তার কাছে ধরা দেবে?'
'সে আমাকে বাঁধতে পারবে না জেনেই ডাকে। '
'তাহলে?'
'এই তো আমি।'
'আর সে ?'
'সেটাই তো তার চাওয়া পাওয়া।'

জ্বলদর্চি অ্যাপ ডাউনলোড করে নিন।👇
অনুবর্তী

আকণ্ঠ শব্দের ভিড়-
মূর্তিটা জলে ভাসে দূরে,
তোমারই মতের অনুগত হয়ে
পথ পায় সরণের।

পিরানটা ছিল খুব পুরানো
হয়তো গায়ের গন্ধ অবশেষ
খাঁজকাটা সিঁড়ি বেয়ে উঠে গেছে উপরে,
স্থান, কাল, পাত্র ভেবে নীচে নামা
সহবতে ঘা দেয়-অশনি সংকেত।

তবুও তো পথ জাগে,
পথের প্রান্তে রয়েছে যে ঠিকানা,
আজন্মের প্রতীক্ষার।
দিন গোনা শেষ হয়,
পথ খোলে পথেরই প্রান্তে।


অন্তরবাসিনী

দুশ্চিন্তার কালো মেঘ আকাশ ঢাকে,
ব্যর্থতার গ্লানি হতাশার পথ ধরে,
অপমানে,অবসাদে বিপর্যয় ডাকে,
দিশেহারা হই বারবার।
নিরাশার বৈকল্যে শরীর শিথিল হয়।
তখনই দেহের গোপনে স্থিত
কোনো এক নরম হাতের স্পর্শ,
এক মধুর ধ্বনি চৈতন্যে স্পষ্ট হয়।
আমাকে শান্ত করে।
অন্ধকারের মাঝেও এক উজ্জ্বল আলোকরেখা।

কে তুমি? কোথায়?
সত্তার কোন স্তরে চির জাগ্রত?
হেমন্তের হিমেল সকালে,
বসন্তের ফাল্গুনি হাওয়ায়,অথবা
শীতের সন্ধায় আকাশের আলোকমালায়-
আমাকে অদ্ভুত আদরে ঢেকে দাও।

এই যে আমি,প্রত্যহ ছিন্ন ভিন্ন হই,
প্রাত্যহিক জীবন যুদ্ধে
উঠি,পড়ি,ছুটে যাই, থমকে দাঁড়াই,
দেনা পাওনার হিসেব রাখি,
সে তখন নীরবে কৌতুকের হাসি হাসে।
পৃথিবীর শোক,তাপ দূরে রেখে
আমাকে আচ্ছন্ন করে
স্বপ্নের দরজা খুলে দেয়।

স্পর্ধা নেই, তার চোখে চোখ রাখা।
আমার সকল শক্তি,লজ্জা,ভয়
গড়াগড়ি খায় তার পায়ের তলায়।
স্বপ্ন না কি এ বজায়!
অন্তরবাসিনী সে যে অন্তরেই রয়।


Post a Comment

0 Comments