জ্বলদর্চি

জ্বলদর্চি ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা ১৩৫

জ্বলদর্চি ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা ১৩৫
সম্পাদক - মৌসুমী ঘোষ 
চিত্রগ্রাহক শেখর মন্ডল

সম্পাদকীয়,
তোমাদের যদি আমি কয়েকজন বাঙালি মনিষীর নাম জিজ্ঞেস করি, আমি জানি তোমরা প্রথমেই যার নাম বলবে তিনি হলেন রবীন্দ্রনাথ। তিনি শুধু বাঙালি মনিষীই নন, তিনি বিশ্বকবি। কেন তিনি বিশ্বকবি, তা  এখন আমি তোমাদের বলতে আসিনি। কিন্তু তাঁর লেখা 'ডাকঘর' নিয়ে একটা যুগান্তকারী গল্প বিপ্লব জেঠু বলেছেন। শৈশব ছুঁয়ে লেখা ও গল্প ছড়িয়ে দিও তোমাদের ছোটোবন্ধুদের মধ্যে। রবীন্দ্রনাথ ছাড়াও নজরুলের নাম তোমরা সকলেই জানো। সম্প্রতি তাঁরও জন্মদিন গেল। তাঁকে এঁকে পাঠিয়েছে অঙ্কুশ আর রুদ্রাংশ। এঁদের সৃষ্টি আমাদের চোখ মন হৃদয় জুড়ে আছে জন্মাবধি। এই যেমন শেখর আঙ্কেলের তোলা এবারের প্রচ্ছদের ছবিটি দেখেই যে কেউ বলবে এর নাম 'অপু-দুর্গা'। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের অপু-দুর্গার শৈশব, কাশ, পথের পাঁচালী আর সত্যজিতের কথা মনে পড়ে। ছবি মানেই তার পিছনে একটা গল্প আছে। সেই গল্প ছোটো বন্ধুরা লিখে পাঠাও জ্বলদর্চির দপ্তরে। কাশের কথায় মনে এল  নদী, শরৎকাল, পেঁজা মেঘ আরো কত কত ছবি। প্রকৃতির এই সুন্দর ছবি পেতে হলে যেটা সবার আগে দরকার সেটা হল সুস্থ পরিবেশ। ৫ ই জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস তাতো তোমরা জানো? দোলনচাঁপা আন্টি সেটা আবার মনে করিয়ে দিল। এসো ঐদিন প্রত্যেকে একটা করে চারা গাছ পুঁতি। শ্রীকান্ত আঙ্কেল লিখেছে দশ হাজার ফুট উচ্চতায় সবুজ উপত্যকা। শুনে আমি তো থ। এবার তোমরা বলো কেমন লাগছে লাচুঙ আর মহাবালেশ্বর? বাসবদত্তা আন্টি এর পরে অন্য কোথাও বেড়াতে নিয়ে যাবে বলেছে। শুনেই তো আমার দারুণ মজা হচ্ছে।   তোমাদের বন্ধু শুভশ্রী মাকে নিয়ে ছড়া লিখেছে এবারের সংখ্যায়। ছোটোবেলার পাতায় পাতায় এত ছড়া, গল্প সবই তোমাদের শৈশবের গল্প বলে। এমন শৈশব কেইবা হারাতে চায়। এই নিয়ে এবারের সংখ্যায় ঘোষ স্যার নরওয়ের এক কবির কবিতার অনুবাদ লিখেছে। সুতরাং ছোটোবেলা মানেই নতুন কিছু জানা, অচেনাকে চেনা আর আনন্দে ভেসে যাওয়া শৈশবের গল্প শোনা। এই ছোটোবেলা হেলায় না হারিয়ে এসো একে পড়ি, জানি আর সুস্মিতা পিসির মতো লিখে ফেলি পাঠ প্রতিক্রিয়া। - মৌসুমী ঘোষ।

ধারাবাহিল ভ্রমণ
মহাবালেশ্বরের পথে
বাসবদত্তা কদম

পঞ্চম পর্ব 

পেট ভরে স্যান্ডুইচ আর স্ট্রবেরি শেক খেয়ে গাড়িতে এসে বসেই চোখ জড়িয়ে আসছে। পেট ভরে খেলেই আমার ঘুম পায়। কিন্তু ট্যাক্সি দাদা শুনবে কেন? চলো এর পরের পয়েন্ট। পরের পয়েন্ট বীণা লেক।
পানীয় জলের অভাব প্রায় সব পাহাড়ি এলাকাতেই থাকে। কিন্তু বর্ষায় সেই সব পাহাড় থেকে নেমে আসে অজস্র ঝর্না। সেই সব পাহাড়ি ঝর্নার জল ধরে রাখতে পারলে সারাবছর পাহাড়ে জল থাকবে। জলকষ্ট থাকবে না। তাই এখানকার রাজা আপ্পাসাহেব তৈরি করলেন এক জলাশয়। তার নাম বীণা লেক। সেই জলাশয় থেকে জন্ম নিল বীণা নদী। 
সেখানে পৌঁছে দেখি ধারে ধারে সুন্দর সব নৌকো দাঁড়িয়ে আছে। বসার জায়গা আছে। আবার মাথায়ও ঢাকা দেওয়া। নৌকোয় উঠে বসতেই সে নৌকো তীরবেগে দৌড়ায়, পিছনের জলে সাদা দাগ ফেলে। -ও মাঝিভাই একটু আস্তে চলো না। বললেও শোনে না। পাহাড় যেখানে লেক কে ছুঁয়ে আছে তার অনেকটা দূর দিয়ে পেরিয়ে গেল সে নৌকো। ইচ্ছে থাকলেও আমার ঐ জায়গাটা ভালো করে দেখা হোল না।
এর পরদিন রাখা হয়েছিল পঞ্চগনি আর প্রতাপগড় ফোর্ট দেখার জন্য।
প্রতাপগড়ের কথা তো শুরুতেই বলে ফেলেছি তাই তা নিয়ে আর বিশেষ কিছু বলার নেই। প্রতাপগড় ফোর্টের সামনে একটি ছত্রপতি শিবাজির মূর্তি বসানো আছে। এটি উদ্বোধন করেছিলেন আমাদের দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু।
এরপর পঞ্চগনি। পাঁচটা গ্রামের মাঝের জমির কারণেই এই এলাকার এমন নাম। 
পুনে থেকে একশো কিলোমিটারের ওপরে হলেও এই জায়গাকে রিটায়ারমেন্ট এরিয়া বলা হয় সেই বৃটিশ আমল থেকেই। অবসরের পর মানুষ সাধারণত শান্ত জায়গায় থাকতে পছন্দ করেন। সেদিক থেকে এ জায়গা খুব ভালো। শান্ত। চারিদিকে প্রকৃতির সুন্দর পরিবেশ। 
জন চেসন নামে এক বৃটিশের নজরে এসেছিল পঞ্চগনির এই সমতল উপত্যকা। এক বিশাল এলাকা পাঁচটা গ্রামের মাঝখানে। আগ্নেয়গিরির লাভা উদ্গিরণের ফলেই এই বিশাল সমতল ভূমির উৎপত্তি। তিনি এক উৎসাহী পারশীকে নিয়ে শুরু করলেন এই এলাকাকে বসবাসের উপযুক্ত করে গড়ে তোলার কাজ। এর জন্য বিভিন্ন পেশার মানুষকে নিয়ে এসে জমি বিলি করা শুরু হোল। 
শুরু হয়ে গেল বসতি গড়ার কাজ। লাগানো হোল, বিভিন্ন ধরনের গাছপালা। এরপর এ অঞ্চলে বেশ কিছু ভালো আবাসিক স্কুল গড়ে উঠল। তৈরি হোল অত্যন্ত ভালো হাসপাতাল।
অজস্র ছাত্র ছাত্রীর সঙ্গে তাদের বাড়ি লোকেদের থাকার জন্য তৈরি হোল হোটেল, গেস্ট হাউস।
গড়ে উঠল পঞ্চগনি, ব্রিটিশ ভারতের মহারাষ্ট্র অঞ্চলের অবসর যাপনের নিশ্চিন্ত ভূমি।  
আগ্নয়গিরি আর লাভা পশ্চিমঘাট পর্বতের মহাবালেশ্বর এবং পঞ্চগনিকে অপূর্ব সুন্দর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দিয়েছে। আর দিয়েছে বহু গাছ এবং ওষধির জন্য জন্মভূমি। স্ট্রবেরি চাষের আদর্শ ভূমি এই অঞ্চল। অজস্র মানুষের রুজি রুটির জোগান দেয় এই স্ট্রবেরি।   
এর পরেরদিন ফিরে আসার পালা আমাদের। রাস্তা ধরে যত নামছি, দুদিকে স্টবেরি নিয়ে বসে আছেন ওখানকার স্থানীয় মানুষ। এত স্ট্রবেরি একসঙ্গে দেখলে লোভ সামলনো খুব মুশকিল।  এখান থেকে এক প্যাকেট, ওখান থেকে আরেক প্যাকেট। এরকম করতে করতেই জমে গেল বেশ কয়েক প্যাকেট। ওনারা বলে দিলেন সবুজ বোঁটা ছাড়িয়ে রাখলে ফ্রিজে অনেকদিন থাকবে এই স্ট্রবেরি। করে দিলেন সেভাবেই প্যাকেট।
পথে পড়ল ম্যাপ্রোর স্টবেরি জ্যাম, জেলি, আচারের বিরাট কারখানা। মহারাষ্ট্রের এ অঞ্চলে এখন সারা দেশের মধ্যে সব থেকে বেশি স্ট্রবেরির ফলন হয় তাই গড়ে উঠেছে এই বিরাট কারখানা। এখানে টিকিট কেটে ভেতরে ঢুকলে দেখতে পাওয়া যায়, কিভাবে তৈরি হচ্ছে স্ট্রবেরি থেকে এত কিছু। পাশে ফুড পার্ক আছে এদেরই। সেখানে বিভিন্ন ধরনের স্ট্রবেরিজাত খাবার পাওয়া যাচ্ছে। খুব ভিড়। এর পাশেই আছে একটা ছোট দোকান বা কাউন্টার। সেখানে এই কোম্পানির তৈরি বিভিন্ন জিনিস খানিকটা কম দামে। অবশ্যই এগুলো আমাদের মত ট্যুরিস্টদের আকর্ষণ করবার জন্য। লোকজন লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে কিনছে। আমরাও কিনলাম। 
এরপর রাস্তায় দু-একবার দাঁড়ালাম খুব সুন্দর দৃশ্য দেখে ক্যামেরাবন্দী করার আশায়।
তারপর একটানা পুনে পর্যন্ত। এবারে সময় লাগলো অনেক কম। পিছনে পড়ে থাকলো পশ্চিমঘাট পর্বত, মহাবালেশ্বর, পঞ্চগনি।
এবার ঘরে ফেরার পালা।   ( শেষ)

রুদ্রাংশ দাস
অষ্টম শ্রেণি, সোদপুর চন্দ্রচূড় বিদ্যাপীঠ, উত্তর ২৪ পরগণা

অনুবাদের জানলা দিয়ে

শৈশব।। মার্কাস ন্যাটেন
(Childhood/ Markus Natten)
অনুবাদ - রাজীব কুমার ঘোষ

কখন নিল বিদায় শৈশব আমার?
সেদিন - যেদিন এগারোয় দিলাম পা?
সেই মুহূর্তে - যখন বুঝলাম 'স্বর্গ-নরক'
যাবে না খুঁজে পাওয়া ভূগোল বইতে,
আচ্ছা সেই দিনটাই না!

কখন হারিয়ে গেল শৈশব আমার?
সেই মুহূর্তে, যখন বুঝেছিলাম
বড়রা নয়কো সেরকম, যেমনটা হয় মনে।
তারা বলে ভালোবাসার কথা, মুখে প্রেমের বাণী 
কিন্তু ব্যবহারে আদপেই নয় তত সদয়।
সেই দিনটাই তো!

কখন গেল চলে শৈশব আমার?
তখন - যখন নিজের মনটা সত্যিই নিজের হল,
নিজের ইচ্ছায় বাছতে পেরেছিলাম নিজের পথ,
ভাবতে পেরেছিলাম এক্কেবারে নিজের মতন করে,
ভাবনা পরের না করে ধার।
সেটাই কি সেই দিন!

কোথায় গেল শৈশব আমার?
আছে সে কোনো বিস্মৃত স্থানে,
আছে লুকিয়ে 
কোনো শিশুর মুখাবয়বে,
এইটুকুই জানি শুধু।

লেখক পরিচিতি

মার্কাস ন্যাটেন নরওয়ের কবি। এই কবিতাটা কিন্তু খুব বিখ্যাত। তবে জেনে রাখো এই কবিতাটা কিন্তু তিনি ইংরাজিতে লেখেন নি, নিজের মাতৃভাষায় লিখেছিলেন। আরো জেনে তোমরা আনন্দ পাবে এই কবিতাটা তিনি বারো বছর বয়সে লিখেছিলেন, মানে তোমাদের অনেকের এখন যে বয়েস সেই বয়সেই। ভেবে দ্যাখো! তখন তিনি তো আর বিখ্যাত কবি ছিলেন না। তিনিও কি ভাবতে পেরেছিলেন এই কবিতা কত দেশে কত ভাষায় অনুবাদ হয়ে ছড়িয়ে যাবে এমনকি অনেক স্কুলের পাঠ্যসূচিতেও রাখা হবে!! একইভাবে তোমাদের কোনো লেখাও বিখ্যাত হয়ে যেতে পারে। বিখ্যাত লেখা লেখার জন্য বয়সটা কিন্তু খুব একটা বাধা নয়। 

এই কবি সম্পর্কে সহজে তথ্য পাওয়া যায় না এমনকি ইন্টারনেটে তার ছবির জায়গায় অন্য ছবি নানা লোকে ভুল করে ব্যবহার করেছেন। অনেক লেখকই প্রচারের আলোয় থাকতে পছন্দ করেন না। অনেক লেখকই মনে করেন লেখকের পরিচিতি তার লেখাতেই। লেখক স্ত্রী না পুরুষ, কত বয়স, কী করেন এগুলো গৌন। তারা নিজেদের আড়ালে রাখেন অনেকটাই। এটা হয়ত আমরা এখন সোসাল মিডিয়ার যুগে ভাবতেও পারি না। আবার অনেক লেখক এর বিপরীত ধারণা পোষণ করেন। তাদের কাছে তাদের লেখা শুধু লেখা নয় কিছু একটা বলতে চাওয়া যার গুরত্ব অনুসারে লেখক সব জায়গায় তার লেখাকে ছড়িয়ে দিতে উদ্যোগী হয়ে ওঠেন, কখনো নিজেও পৌঁছে যান।
অঙ্কুশ দাস
অষ্টম শ্রেণি,সোদপুর হাই স্কুল, উত্তর ২৪ পরগণা


মাত্র সতের দিন আগে
বিপ্লব চক্রবর্তী

আব্রাসা, তাকিয়ে দেখছে, তাদের অনাথ আশ্রমটি ভারি বুটগুলো কীভাবে দখল নিয়ে রেখেছে। আব্রাসা ইহুদি, তার ওপরে অনাথ। এই অনাথ আশ্রমটি  প্রথম মহাযুদ্ধের পর তৈরি হয়েছিল, পোল্যান্ডের ওয়ারস শহরে।প্রটেস্টান্ট, রোমান ক্যাথলিক আর মেথডিস্টদের অনাথ শিশুদের জন্য, চার্চের অধিনে তৈরি হয়েছিল এই আশ্রম। চার্চের কর্তাব্যক্তিরা খুঁজে খুঁজে ডেকে এনে ছিলেন পোলিশের জুইশ আভিজাত্যের  জানুস কোরচখকে। তিনি ছিলেন একাধারে পেড্রিয়াকটিক, আবার গাইনো, তার ওপরে শিশু প্রেমিক। অবসর সময়ে ওয়ারস ব্রডকাস্টিং সেন্টারের অনিয়মিত ঘোষক।
ওল্ড ডক্স চ্যাটিং নামে একটি জনপ্রিয় রেডিও পোগ্রামও করতেন। এ হেন একজন মানুষকে, পোল্যান্ডের ওয়ারস শহরের এই অনাথ আশ্রমের দায়িত্বে নিয়ে এলেন, পাদ্রী রেভারেন্ড রোল্স। অন্যদিকে,
হিটলার রাইষস্ট্যাগ দখল করার পর  আঠেরো দিনের মধ্যে নাৎসি বাহিনী দখল করে নিল গোটা পোল্যান্ড। অনাথ আশ্রমের শিশু কিশোর সহ  জানুস কোরচখ বন্দি হলেন জুইসের ঘেটোতে। কোরচখ আন্দাজ করেছিলেন, এরকমটা হতে পারে।নিজের এবং শিশু কিশোরদের মনবলকে অটুট রাখতে সচেষ্ট হলেন।মনের আয়ত্তে আছে আশ্রমে শেষ অভিনিত নাটকটি।

শেষ নাটকের সংলাপে সবাই তখন তাজা এবং চনমনে হয়ে আছে। ধরলেই ওরা বলে দিতে পারছে।চিরকুমার ছিলেন কোরচখ। ইহুদি অনাথ, চোদ্দো বছরের আব্রাসা তাঁকে বাবা বলেই ডাকতেন।আসন্ন বিপদের উত্তাপ ঝলসে দেওয়ার আগে অনাথ ছেলেমেয়েদের কোরচখ  বললেন,"একজন খুনি আমাদের মারতে উদ্যত। ধরে নাও, আমরা সকলে আর মাত্র কয়েকঘণ্টা বেঁচে থাকবো। আমাদের হাতে কী আত্মরক্ষার জন্য একটি অস্ত্র থাকা উচিত নয়?
সবাই নীরব। আসন্ন বিপদটাকে বোঝার চেষ্টা করছে।
"কি অস্ত্র বাবা?"  ওদের মধ্যে শুধু আব্রাসাই জিজ্ঞেস করল!
--- আমাদের অস্ত্র থাকবে গান!
সকলে সমস্বরে বিস্ময়ে বলে উঠল, গান!
-- হ্যাঁ, খুনিতো শুধু হত্যা করতেই জানে।খুনির ধারনা মৃত্যুটাই বাস্তব। মৃত্যুটাই শেষ কথা।আমরা এই মিথটাকেই ভেঙে ফেলবো গান দিয়ে।
চুপ করে  সবাই শুনছে, মৃত্যু নির্ধারিত  অনাথ শিশু ও কিশোরেরা। কোরচখ এবার বললেন,
-- আমরা যদি ঠাস করে খুনিটার কানে একটা গানের চড় কষিয়ে গেয়ে উঠতে পারি, " আমারে বাঁধবি তোরা সেই বাঁধন কি তোদের আছে"
হৈ হৈ করে  কবিরাজ চৌকিদার, ঠাকুরদা অমল, সুধারা, এই গানটাই গেয়ে উঠলেন।
মাত্র সতেরো দিন আগে জার্মান ভাষা থেকে পোলিশ ভাষায় অনুবাদ করে ডাকঘর নাটকটির অভিনয় করিয়েছে ওদের দিয়ে।আব্রাসা করেছিল অমলের চরিত্র।তার মাত্র দু'দিন পরের ঘটনা। এবার ভবিতব্য।
সারিবদ্ধ পুরো অনাথআশ্রমটা  চলেছে জুইস ঘেটো থেকে, উমশ্লাগপ্লাৎজ  রেলষ্টেশনের দিকে। সবাই নির্ভয়ে মাথা উঁচু করে যাচ্ছে।হাতে তাদের হোমের সবুজ পতাকা। গলায় ওদের মার্চিং সঙ।দেখে মনে হচ্ছে ওরা ছুটির মেজাজে হিচ-হাইকিং এ যাচ্ছে। এতটাই মানসিক ভাবে ওদের দৃঢ় করে দিয়েছেন, জানুস কোরচখ।
ওয়ারস শহর থেকে অনেক দূরে,এই  উমশ্লাগপ্লাৎজ রেলষ্টেশন।শিশু কিশোরদের ইহুদি হবার অপরাধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে।লাঠির ঘায়ে আর হিংস্র পুলিশ কুকুর লেলিয়ে পায়ে হেঁটে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে ওদের।উমশ্লাগপ্লাৎজ রেলষ্টেশনের দিকে ওরা ক্লান্তিহীন হেঁটে চলেছে।
ষ্টেশনে তখন  মাথাঢাকা মালগাড়ি দাঁড়িয়ে। কয়েক হাজার ইহুদি মানুষের সঙ্গে অনাথ শিশু কিশোরদের নিয়ে বহুদূর হেঁটে আসা জানুস কোরচখ মালগাড়ির ওয়াগনে উঠে গেলেন, দৃঢ় পদক্ষেপে। গাদাগাদি ভিড়।চারদিক থেকে হিহুদিদের এনে জড়ো করে চ্যাংদোলা করে ছুঁড়ে দেওয়া হচ্ছে ওয়াগনের ভেতরে। শিশু বৃদ্ধ মহিলারা আতঙ্কে চিৎকার চেঁচামেচি করছে। ওয়াগনগুলো ভর্তি হতেই ট্রেব্লিঙ্কা গ্যাস-চেম্বার ষ্টেশনের দিকে ছেড়ে দিল মালগাড়ি।পুরো ছত্রিশ ঘন্টা লাগবে মালগাড়িটা  ট্রেব্লিঙ্কা পৌঁছাতে। তারপর, ওয়াগানে যারা দমবন্ধ করে মারা না যাবে, তাদের কে গ্যাস চেম্বারে ঢুকিয়ে দেওয়া হবে শুধু। জানিনা, জানুস কোরচখ আর তাঁর অনাথ শিশু কিশোররা ওয়াগনেই মরেছিল না গ্যাস চেম্বারে। শুধু একটি কথা জানি, ওরা মরণের দিকে যাত্রা করেছিল, পাঁচ, আট, উন্নিশ্যো বিয়াল্লিশ তারিখে। ডাকঘর নাটক টি ওরা অভিনয় করেছিলেন আঠেরো, সাত , উন্নিশ্যে বিয়াল্লিশ তারিখে।  গ্যাস চেম্বারে ঢোকার মাত্র সতেরো দিন আগে । আর একটা কথা জানি, ক্ষমতায় এসেই  হিটলার , জার্মানে রবীন্দ্রনাথকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন।
ধারাবাহিক উপন্যাস
লাচুঙের নেকড়ে
পর্ব ১৪

শ্রীকান্ত অধিকারী

-ক্রিপ্টোমিকা জাপানিকা। নামটা কেমন না। রামসির মা আর শাদুলমামা পাশাপাশি এক পা দু’পা করে হাঁটছে। রামসির মা ছোট মামাকে আড়চোখে মেপে নেয়। একটুখানি হাসে।  
-হুঁ। বাংলায় যাকে ধুপি গাছ বলে তো। শোনা যায় এই ধুপি গাছের জন্যই নাকি পাহাড়ে ধ্বস নামে। হয়তো তাই! ছোটমামা কথাগুলো বলে।  
-ভূবিজ্ঞানী এন জয় রাম পাহাড়ে ধ্বসের কারণ হিসেবে অত্যধিক অম্লত্বপ্রবণ এই গাছ গুলোকেই দায়ী করেছেন। কারণ এই গাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকে শুধু,অন্য কোনো গাছ হতে দেয় না। রামসির মা সামনের আপেলের বাগান পেরিয়ে ওধারে পাহাড়ের নীচে ঘন জঙ্গলের দিকে এক ভাবে তাকিয়ে কী যেন দেখছিল। হয়তো গতকালের ঘটনার কথা ভাবছিল। বড়মামি বার বার  করে বলে দিয়েছে রামসি আর শিঙিকে যেন কাছ ছাড়া না করা হয়।যদি বলে ছোটদা আছে তো, তখন বড় মামি বলে ওটাই তো মুশকিল, যে নিজের খবর ঠিক করে রাখতে পারে না, সে আবার রাখবে ওই রকম এক ছটফটে ছেলের খবর! সত্যি যদি সাপে ছোবল মারত! 
 হঠাৎ রামসির মা ফিসফিস করে কানের কাছে এসে বলে,ডারউইনের সঙ্গে এই পাহাড়ের একটা সম্পর্ক আছে জানিস? 
রামসি তখন ১০০০০ ফুট ওপরের মেঘঘেঁষা সবুজ উপত্যকার রহস্যের স্বাদ নিচ্ছিল। আর ভাবছিল এই ঘন অরণ্যানী পাহাড়ের মাঝে বহু বহু আগে বৌদ্ধসাধকেরা এই গোম্ফা তৈরি করে শুধুমাত্র নির্বান লাভের জন্য একাকী ধ্যানমগ্ন ছিলেন।তাদের কি কোনো ভয় দুশ্চিন্তা কিংবা ভোগ বিলাসের আকাঙ্ক্ষা ছিল না। নাকি ভয় ছিল না বন্য জন্তুর। একদিকে নিরেট বরফে ঢাকা সুউচ্চ দুর্গম হিমালয়ের আতঙ্কের আবর্তে কী করে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা এই শ্বাপদ সঙ্কুল অচেনা পথে সুদূর তিব্বত থেকে ভারতবর্ষে আসতেন? আবেশে রামসির মন যখন বরফের মত গলে যাচ্ছে তখনই ডারউইনের কথা শুনে একটু থতমত খেয়েছিল বটে, কিন্তু দ্রুত নিজেকে শুধরে নিয়ে বলে, চার্লস ডারউইন তো পশু পাখি জীবজন্তুদের নিয়ে কাজ করে ছিলেন তাই এখানেও আসতে পারে। তারপরেই বেশ কৌতূহলের সঙ্গে বলে, বিজ্ঞানী চার্লস ডারউইন এখানে এসেছিলেন নাকি! শুনেছি দক্ষিণ আমেরিকার গ্যালাপোগোস দ্বীপে গিয়েছিলেন। 
হ্যাঁ, গ্যালাপোগোস দ্বীপে গিয়েছিলেন কচ্ছপের ডিমের অমলেট আর ডোডো পাখির মাংসের 
কিমা খেতে। কি বলিস রামসিং? ছোট মামা ভ্রূগুলো তুলে অদ্ভুত ভঙ্গিতে হাসে। 
ইয়ার্কি না ছোটমামা, আমি দেখেছি সাইন্স সিটির একটা থ্রি-ডি সিনেমাতে। সেই 
গ্যালাপোগোস দ্বীপপুঞ্জে ব্যাপক এলাকা জুড়ে কাদার মধ্যে বিশাল বিশাল কচ্ছপদের ভয়ঙ্কর চিৎকার করতে। তবে ডোডো পাখি তো দেখি নাই। ছিল ফিঞ্চ পাখি। 
ছিল ছিল এক সময় তাও ছিল। রামসির মা বলে। ভারত মহাসাগরের দ্বীপগুলোতে যেমন 
ছিল প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপগুলোতেও ছিল। জাস্ট তিনশ বছর আগেও ছিল। কিন্তু স্পেনীয় জলদস্যুদের হাতে সব শেষ হয়ে যায়। বলা ভালো লুপ্ত হয়ে যায়। পরে যখন ডারউইন বীঈগল পর্যটনে যান তখন এই গ্যালাপোগোসে জীব বৈচিত্র দেখে বিশেষ করে স্যান্টিয়াগো আইল্যান্ডে গিয়ে গ্যালোপোগোসের অসাধারণ ওয়াইল্ড লাইফের স্পেসিমেন সংগ্রহ করলেন। তখনও ডোডো পাখির কথা উল্লেখ করেন। পরীক্ষা করেন ফিঞ্চ পাখির ওপর। 
তার ফসলই কি অন দি ওরিজিন অফ স্পেসিস!ছোট মামা উল্লেখ করে।  
আর এদিকে সারা হিমালয় ঘুরে জোশেফ ডাল্টন হুকার লিখে ফেলেছেন, বিশাল আকারের দ্য হিমালয়ন জার্নাল। 
তাতে কী? ছোট মামা বেশ আগ্রহের সঙ্গে রামসির মাকে প্রশ্ন করে। 
দাঁড়াও ব্রাদার! এতো উতলা হওয়ার কী আছে? আগে সব গল্পটা শুনতে হবে তো। হুকার 
সাহেব কলকাতা থেকে সোজা চলে এলেন হিমালয়ের পাদদেশে।ঘুরে ঘুরে দেখলেন জঙ্গরি,কাঞ্চনজঙ্ঘা নেপাল পাস,লাচেন উপত্যকা,কঙ্গরা লামা পাস,আর লাচুং। লাচুংকে দেখে হুকার সাহেব কী বলেছিল জান?– সিকিমের সবচেয়ে মনোরম গ্রাম। সত্যিই তো ছবির মত জায়গা। 
কিন্তু চার্লস ডারউইনের সঙ্গে এই লাচুঙের কী সম্পর্ক? রামসির মাথাতে কিছুতেই ঢোকে না।
এটা বুঝলি না, দুজনেই নেচারলিস্ট, দুজনেই বোটানিস্ট তাদের কাজের কথার বিনিময় 
হবে না? বড়কথা ওদের লাইফটাইম বন্ধুত্ব। ওদের মধ্যে ১৪০০ মত চিঠি আদান প্রদান হয়েছিল,ভাবতে পারিস? 
রামসিরা তখন হাঁ হয়ে শুনছে ওর মায়ের কথা, হুকার সাহবের কথা, জগৎবিখ্যাত 
ডারউইনের কথা, আর সেই গ্যালাপোগোসের গল্প। 
সব চেয়ে দুঃখজনক ঘটনা ভদ্রলোককে এই সিকিম তিব্বতের সীমান্ত থেকেই ধরে নিয়ে 
যাওয়া হয় জেলে।  
জেলে বন্দি? কেন? রামসি অবাক। 
তখন সিকিমের রাজার কাছে তার কাজ কর্ম ভালো লাগে নি। সন্দেহ হয় এইভাবে সিকিম 
তিব্বতের নানান জায়গায় বনে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াচ্ছে দেখে। মনে রাখিস তখন কিন্তু সিকিম ভারতের অন্তর্ভূক্ত হয় নি। আর ভারতেও তখন পুরো দমে ইংরেজ শাসন চলছে। 
-তার মানে ব্যাপারটা দাঁড়াল এই রকম ১৮৪৭ সালে হিমালয় ভ্রমণ, ১৮৪৮ সালে জঙরি কাঞ্চনজঙ্ঘা নেপাল আর পরের বছর লাচেন ও লাচুং। তারপর তিব্বতের চো লা ইনে গিয়ে সিকিমের রাজার হাতে বন্দি। তারপর বৃটিশ সহায়তায় জেল থেকে বেরিয়ে সোজা দার্জিলিং এবং লিখে ফেললেন দ্য হিমালয়ন জার্নাল। ডেডিকেট করলেন প্রাণের বন্ধু চার্লস রবার্ট ডারউইনকে। আর সেটা বেরোলো কলকাতা থেকে।  
-- ১৮৪৫ সাল নাগাদ গ্যালাপোগোস স্যান্টিগো আইল্যান্ডে বিচিত্র জীবজন্তু নিয়ে কাজ করছেন ডারউইন।ততদিনে বেশ জোরালো বন্ধুত্ব হয়ে গেছে।চিঠিপত্র চলাচল শুরু হয়েছে।জীব বৈচিত্রের ক্রম বিবর্তনের তত্ত্বে একদিকে পূর্ব এশিয়ার উত্তর ভারত ও তার হিমালয়ের পর্বত মালা অন্যদিকে দক্ষিণ আমেরিকার ইকুয়েডর তথা প্রশান্ত মহাসাগরীয় আগ্নেয় গিরিমালার বিভিন্ন দ্বীপ। একদিকে ডারউইন অন্য প্রান্তে জোশেফ হুকার। 
- তখন তো চিন তিব্বত আর ভারতের ইংরেজ প্রশাসক, সঙ্গে ভুটান নেপালের লোলুপ 
দৃষ্টি পড়েছিল অপূর্ব সুন্দরী এই সিকিমের ওপর! সে সব গল্প কাহিনি নয়। ছোটমামা আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু বড় মামা এসে পড়ায় চুপ করে যায়। এখনি বলে বসবে তুই সব জানিস!  
গ্যাটসো আর সাঙ্গ গোম্ফার ঠিক উত্তর দিকের ঝুলন্ত ব্যারিকেটের অপ্রশস্ত জমিতে ছিল, 
ওরা নিজেদের মধ্যে কিছু বাক্যালাপ করছিল। হঠাৎ ওরা এসে গোম্ফার ভেতরে যাওয়ার জন্যে তাগাদা দেয়। আরা কয়েক মাস পরেই উৎসব। বেশিক্ষণ থাকা যাবে না। 
কথার মাঝে কোত্থেকে টুংটুং করে মিষ্টি বাজনা ভেসে আসে।বেশ ভালোই লাগে ওদের। সামনে মেঘেরা এসে মাঝে মাঝে ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে। সঙ্গে হাড়কাঁপানো হাওয়া। শিঙি ওর বাবার হাত ধরে আছে। কাছেই রামসির বড়মামা-মামি। ভেসে আসছে লাচুং আর লাচেন নদীর হিমশীতল কলতান। 
-ডারউইন কি সত্যিই এখানে আসেন নি?
 ( ক্রমশ)


মায়ের প্রতি অনুভুতি 
শুভশ্রী সরকার
অষ্টম শ্রেণি, শতদল বালিকা বিদ্যায়তন, উত্তর ২৪ পরগণা

মায়ের কোলে 
              রাখলে মাথা,
    স্বর্গ খুঁজে পাই ।
মায়ের কোল 
         পাবেনা কোথাও,
    হারিয়ে গেলে ভাই ।
স্কুলের  পরে 
             দেরি হলে ,
    একটু বকে দিয়ে, 
মুখের সামনে 
              এসে দাঁড়ায় ,
    খাবার থালা নিয়ে ।
হঠাৎ করে
             জড়িয়ে ধরে ,
    আদর করে দিয়ে ।
বিকেলবেলায় ঘুরতে
                     যায় মা,
  আমায় সাথে নিয়ে।

বাইরে ঘরে দিনে রাতে,
    কেমন করে খাটো ?
সত্যি করে বল 
                   না গো মা,
কষ্ট হয় নাকো।

স্মরণীয় দিবস
বিশ্ব পরিবেশ দিবস 
( ৫ই জুন)
কলমে - দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে


বিশ্ব পরিবেশ দিবস প্রতিবছর ৫ই জুন পালিত হয়। বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক কর্মদ্যোগ ও জনসচেতনতার মাধ্যমে পরিবেশ সচেতনতার লক্ষ্যে এই দিবস পালিত হয়। এই দিনটিতেই জাতিসংঘের মানবিক পরিবেশ কনফারেন্স শুরু হয়েছিল। এই কনফারেন্স হয়েছিল ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের ৫ই জুন থেকে ১৬ই জুন পর্যন্ত। এই কনফারেন্স ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে বিশ্ব পরিবেশ দিবস চালু করেছিল জাতিসংঘের সাধারণ সভা থেকে। এরপর ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে প্রথম বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হয়।
এই দিন পুরো বিশ্বের সমস্ত মানুষকে সচেতন করার দিন। দিন দিন বেড়ে চলা দূষণের ফলে উষ্ণতা বাড়ছে। গাছ কাটা থেকে, জলে দূষিত পদার্থ মেশা, শহরের কলকারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়ার জন্য বায়ু এবং মাটির দূষণ। এমনকি চাষাবাদের ক্ষেত্রেও জৈব সার না মিশিয়ে বর্তমানে রাসায়নিক সার মেশানোর জন্য মাটিও দূষিত হয়ে পড়ছে। তাই বিশ্বব্যাপী পরিবেশ যাতে আর দূষিত না হয় সেজন্য রাষ্ট্রসঙ্ঘ থেকে ৫ই জুন দিনটিকে বেছে নেওয়া হয়েছে।
মূলত এই দিনটিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সেমিনার ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সাধারণ জনগণকে বোঝানো হয়, আমাদের পরিবেশ কিভাবে দূষিত হচ্ছে এবং তাকে রক্ষা করতে গেলে কি করতে হবে। এই দিনে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার লোকজন মিলে বিশ্ব পরিবেশের ক্ষতিকারক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে একসঙ্গে আওয়াজ তুলতে সমবেত হয়।
সকল মানুষের অবগতির জন্য জানানো যায় যে গত ২৮ মে ২০২৩ এ পোস্টার ও মডেল উপস্থাপন প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল। এ বছর বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো "solutions to plastic pollution".
২০২৩ সালের ৫ই জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবসের থিম হলো beat plastic pollution প্রচার অভিযানের মাধ্যমে প্লাস্টিক দুষণের হাত থেকে পরিবেশকে রক্ষা করা। প্লাস্টিক দ্বারা যেন পৃথিবী আবৃত্ত হয়ে যাচ্ছে। প্রতিবছর ৪০০ মিলিয়ন টনেরও বেশি প্লাস্টিক উৎপাদন হয়। এই প্লাস্টিক মাটি ও সমুদ্র কেও ভীষণভাবে দূষিত করছে।
যাইহোক আমাদের উচিত পরিবেশ যাতে আর দূষিত না হয় সেই জন্য লক্ষ্য রাখা এবং ছোট বয়স থেকেই এই বিষয়ে সচেতন করা।

জ্বলদর্চি অ্যাপ ডাউনলোড করে নিন।👇

পাঠ প্রতিক্রিয়া
(ছোটোবেলা ১৩৪ তম সংখ্যাটি পড়ে অধ্যাপিকা ও সুলেখিকা সুস্মিতা সাহা দিদি যা লিখলেন)

'জ্বলদর্চি ' ওয়েব ম্যাগাজিন ছোটবেলা সংখ্যা খুলতেই চোখ আটকে গেল 'ইচ্ছেধারা' গল্পে। একটা সময়ে অনেক চেষ্টা করেছি বাড়ির ছোট্ট সদস্যকে গল্পের বই হাতে তুলে দিতে। হয়তো সবসময়ে পারি নি। লেখক সব্যসাচী ধর পারলেন তাঁর গল্পের শিক্ষক চরিত্রকে দিয়ে লাইব্রেরির বইগুলোর কালো কালির অক্ষরের মুক্তি ঘটাতে। মোট কথা, ছেলে মেয়েরা একটু হলেও পড়ুক। খেলার ছলে সহজ সরল ভাষায় ঝরঝরে একটি গল্প পড়লাম। 
ধারাবাহিক উপন্যাস 'লাচুঙের নেকড়ে' ও ধারাবাহিক ভ্রমণ কাহিনী ' মহাবালেশ্বরের পথে ' - দুটিই জ্বলদর্চি পত্রিকার সম্পদ। বাসবদত্তা কদমের বেশ সরস ভঙ্গিতে লেখা বেড়ানোর গল্প পড়তে পড়তে আমিও একবার ঘুরে এলাম মহাবালেশ্বর পাহাড়ে আর মনে মনেই স্বাদ পেলাম টুকটুকে লাল স্ট্রবেরির।
এবারের সংখ্যার বিশেষত্ব কাজী নজরুল ইসলাম স্মরণে বেশ কিছু আঁকা এবং লেখা। অভিজিত্ গুপ্ত ও জয়দীপ সাহা এই দুই কিশোরের তুলিতে ফুটে উঠলেন বিদ্রোহী কবি নজরুল। নজরুলকে নিয়ে লিখলেন দোলনচাঁপা তেওয়ারি- অল্প কথায় এক সুন্দর শ্রদ্ধা নিবেদন। 
উশিকা দাসের আঁকা ছবিটিও ভারি সুন্দর। 
সব মিলিয়ে এগিয়ে চলছে 'জ্বলদর্চি' - এই আমাদের সবথেকে বড় প্রাপ্তি। 
একেবারে শেষ পাতে রাখলাম মৌসুমী ঘোষের অসাধারণ একটি সম্পাদকীয়টি।
আমক্ষীরের মতো তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করলাম সেই মিষ্টি মধুর লেখাটি। সম্পাদক তো এমনই হবেন যিনি পাঠক ও লেখকের মধ্যে সেতুবন্ধনের কাজটি করবেন।
মৌসুমী সেটি অনায়াসে অবলীলায় করে চলেছেন বেশ কিছু মাস ধরে।
অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাই সকলকে।

Post a Comment

1 Comments

  1. Sir, kobita ti bhalo legeche khubi
    Anik

    ReplyDelete