চিত্তরঞ্জন হিন্দু হোটেল
সুব্রত মাইতি
আমার ব্যক্তিগত কাজের জন্য উলবেড়িয়া কোর্টে গিয়েছিলাম।সকাল ন'টায় পৌঁছে সকালের জলযোগ সেরে সারাদিনের অফিসের যা যা কাজ সারতে শুরু করলাম। সঙ্গে ছিলেন সাষোর্দ্ধ একজন মানুষ। বেলা বাড়ার সাথে সাথে দুপুর নাগাদ ভাত খাওয়ার জন্য এদিক ওদিক হোটেল খুঁজতে খুঁজতে চোখে পড়ল চিত্তরঞ্জনহিন্দু হোটেল।
দুজনেই হোটেলের ভিতরে গেলাম। আমি তো হোটেলে ঢুকেই চমকে গেলাম। যেখানে বিজ্ঞাপনে মুখ ঢেকে যায় হোটেলের সারা দেওয়াল। কিন্তু এই হোটেলের ভেতর মহানায়কের ছবি দিয়ে সারা দেওয়াল সাজানো।দেখে তাজ্জব হলাম, এই চাটুল সভ্যতায় যেখানে রঙিন আলো আর পোশাক হীন নানা ছবির জোয়ার। সেখানে ব্যতিক্রম এই হোটেলের রুচিবোধ।
হাত মুখ ধুয়ে যথারীতি খেতে বসলাম। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন সুস্বাদু বাঙালিয়ানা খাবার তৃপ্তি ভরে খেলাম।
টাকা পয়সা দেওয়ার সময় দোকানের মালিকে জিজ্ঞাসা করলাম আপনার হোটেল জুড়ে মহানায়কের অসংখ্য ছবি, আসল রসায়নটা কি যদি বলেন। তখন তিনি বললেন আমাদের হোটেলের বয়স সামনের বৎসর শতবর্ষে পড়বে। ১৯২৪ সালে দাদু শুরু করেছিলেন।আর মহানায়ক উত্তম কুমার উনি ১৯৬৪ সালের ৪ঠা জুলাই শুক্রবার আমাদের এই হোটেলে ভাত খেয়ে গেছেন। এই হলো আসল রসায়ন। তারপর থেকে দাদু মহানায়কের প্রতি সম্মান জানাতে এভাবে সারা হোটেল সাজিয়ে রাখতেন, দাদু এখন বেঁচে নেই। আমাদের তিন পুরুষ ধরে এই হোটেল চলছে। আমি বললাম তাহলে তো শতবর্ষে পুর্তি উৎসব করতে হবে।
সত্যি কথাগুলো শুনে নস্টালজিক হয়ে পড়লাম।এটা কফি হাউজ নয় কিংবা কলিকাতার কোন বিখ্যাত বনেদিবাড়ী নয়।একটি সামান্য হোটেল কতখানি শ্রদ্ধা সম্মান আর পরম্পরাকে বুকে জড়িয়ে এভাবে চলছেন আজও। কথাগুলো শুনে সত্যিই অবাক হয়ে গেলাম।
সারাক্ষণ উত্তম সুচিত্রা জুটির রোমান্টিক গান বাজছে।
আবার মাটির ভাঁড়ের দই খেয়ে গুন গুন গানের সুর বুকে ভরে বাড়ি ফিরলাম।
0 Comments