জ্বলদর্চি

গুচ্ছ কবিতা /তাপস সাঁতরা

গুচ্ছ কবিতা

তাপস সাঁতরা 


অভিশপ্ত করমন্ডল

হয়তো তখন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা ঘনিয়েছে সবে
একটা মিষ্টি আলো এসে পড়ছে সমান্তরাল ট্রাকে
তাড়া নেই, তবুও ফিরতে হবে, ফিরতে হবে পরবাসে।
 
একাদশীর মোহিনী জোৎস্নায় ভিজেতে ভিজতে
ট্রেনটা যখন হু হিস্ হিস্ করে এগিয়ে চলছে গন্তব্যে 
গ্রাম, গ্রাম হতে শহর, শহর ছেড়ে নগরে, নগর ছেড়ে সুদূরে।

১২৬ কিমি বেগে ছুটে চলা ট্রেনটা তার মনটাকে নিয়ে যেতে পারেনি 
হয়তো তাই উইন্ডো সিটে বসে সে চোখ রেখে ছিল চাঁদের পানে
হয়তো সে চাঁদের বুকে প্রিয় মানুষটাকে দেখে ফেলেছিল
হয়তো সে অন্তরালে.........
হারিয়ে গিয়েছিলে প্ৰিয় মানুষটির দুটি চোখে, ঠোঁটে  
যে তার মনের আঙিনায় আঁচল পেতে হাতছানি দিচ্ছে ফিরে আসার।

কিন্তু সে যে স্বপ্নের বীজ গুলো রোপন করেছে অন্তরে
হয়তো সেগুলোকে তা দিয়ে নতুন করে বাঁচার স্বাদ হয়েছিল তার 
হয়তো তাই খাতার পাতা জুড়ে লিখে ফেলেছে এক টুকরো ঘর।

ট্রেনটা তখন ব্যাকুল রাধার মতো ছুটে চলেছে কৃষ্ণের পানে
তারপর একটা ঝাঁকুনি, কিছু বুঝে ওঠার আগে সব শেষ।

কবিতার খাতাটা গুঁজে দেওয়া যায়নি কোনো লাশের কফিনে
এখনো পোস্টমাটাম হয়নি সেটি কোন জাতের, কোন লিঙ্গের। 

ধ্বংসস্তুপ খুঁড়ে খুঁজে পাওয়া এক ভালোবাসা ঠাসা কবিতার খাতা
পাতা জুড়ে রক্তের দাগ আর তাতে শেষ কটা লাইন,
"কি করে ভুলবে তোকে মন, তুই তো আমার জীবন''।

একটা ভালোবাসা ঠাসা কবিতার খাতা
তাতে পাতা জুড়ে লিখে রাখা কয়েকটা লাইন, যেন 
কি সংগীত ভেসে আসে ওই মৃত্যুপুরীর ওপার থেকে।

জ্বলদর্চি অ্যাপ ডাউনলোড করে নিন।👇
সাক্ষী থাক

পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নেমে এলে তুমি..…...। 
তোমার কল্পনা গুলো বিছিয়ে বসে পড়বো নদীর নির্জনতায়
তোমার উষ্ণ স্মৃতি গুলো ঘুম ভেঙ্গে বসবে বাগিচায়।
একটু সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে কল কল ঢেউ গুলো ডাক দেবে,  
কথা হবে তাদের সাথে.…...তারাদের সাথে......
কথা হবে রাতের, কথা হবে স্নিগ্ধতার মোলিনতার 
কথা হবে পারুল বন, টগর মালতি জেগে থাক।

যে কথা হয়নি এখনও তোমাকে বলা..
যে কথা কত যুগ আছে ঘুমিয়ে মনের কবরে.....
যে কথা নীরবতার ছাঁচে, যে কথা কঠিন পরবাসে।
তুমি এসেছো, দাঁড়াও। কিশলয়ের পাতা গুলো বিছিয়ে দেই
তুমি বসো, আরও কাছে, আরও কাছাকাছি নিবিড় ভাবে
বেঁচে থাকার রসদ খুঁড়তে খুঁড়তে এসে গেছি কিনারায় 
নতুন ভাবে বাঁচতে হবে আমাকে, নতুন ভাবে জন্ম দাও আমায়।

চলো শুকনো পাতা গুলো দিয়ে ঘর বানাই
মুক্তো ছড়ানো আকাশটা দিয়ে সিলিং.. (সাজাই)  
তুমি বসো আঁচল পেতে, তোমাকে দেখি আর হারিয়ে যাই
হারিয়ে যাই তোমার চুলে-চোখের নীলে, চিঠি দাও উষ্ণ ঠোঁটে।
প্রতিটা সুখ খুঁজে পাই হারানো বিন্দুর সিন্ধু সেচে
গল্পেরা বেঁচে থাক নতুন কিশলয়ের পাতায় পাতায়  
মুক্ত বাতাস জোনাকিরা আসুক, বসুক পাতার ফাঁকে ফাঁকে।

নির্জন রাত, তুমি আমি একা সাক্ষী থাক রাতের চাঁদ 
তাকিয়ে দেখো তোমার বাম পাশে সন্ধ্যাতারা তাকিয়ে তোমায় আছে 
চাঁদের পানে রাখলে তুমি চোখ, ভীষণ দামী তুমি আমার কাছে।



ছাই চাপা মেঘ

অনেক তো দিন কাঠফাটা রোদ পুড়লো মাঠের ঘাস
অসময়ই বৃষ্টি থাকুক উষ্ণ ঠোঁটে শান্তি বারো মাস। 

ছাই চাপা মেঘ গুরু গুরু ডাক জট পাকা মেঘেদের দল  
হাতে রুনঝুন পায়ে ছনছন পাথরকুঁচি পথ হারাবি কি বল।

গুরু গুরু মেঘ হানিছে বিজলি কাঁপে থর থর বুক
সুখ পাখি হয়ে পথে বাঁকে হারিয়ে গেছে কত মুখ।

শ্রাবনের ধারা আলুথালু কেশ ছুটছে প্রাণের বল
উথালি পাথালি পড়শী নদী ভেঙেছে হালের কল।

Post a Comment

0 Comments