ন্যানো সায়েন্স ও দুর্নীতি
সৌমেন রায়
পঞ্চম পিরিয়ডের ক্লাসে গিয়েই ঘুরে এলেন ম্যাডাম।কে যেন ক্লাসের মধ্যে বমি করে দিয়েছে। গিয়ে দেখা গেল কথাটা সত্য, বেশ দুর্গন্ধ। স্কুলে স্থায়ী ঝাড়ুদার তো নেই। উপরন্তু অস্থায়ী ঝাড়ুদারও রাখা সম্ভব নয় আর্থিক কারনে।। ভরসা গণেশ, সে অসরকারি হোস্টেল সুপার। মুখে সর্বদা একটি হাসি ঝুলছে। চন্ডী পাঠ হোক বা চন্ডী সেলাই সবেতেই সে দক্ষ। তার জীবন, যৌবন সব স্কুলকে ঘিরে।এমন চরিত্র কষ্টকল্পনা নয়। প্রায় প্রতি বিদ্যালয়ে এমন এক একজন সমর্পিত লোক থাকে।তারা বিদ্যালয় চালানোর কাজকে মসৃণ করে,কিন্তু উপযুক্ত পারিশ্রমিক বা সম্মান পায়না।পরিস্থিতি সর্বদা নূতন নায়কের জন্ম দেয়। গণেশের অনুপস্থিতিতে নায়ক হয়ে উদয় হলো সেই ক্লাসের ই সানি।বালতি,মগ,ঝাঁটা নিয়ে লেগে গেল কাজে । কিছুক্ষণ পর আবার গিয়ে দেখা গেল রুম থেকে জল বেরোনোর জায়গা নেই। ফলে সানি যেটা করছে সেটা হলো বমিটাকে টুকরো টুকরো করে ছড়িয়ে দিচ্ছে ঘরময়। দেখলাম তাতেই বেশ কাজ হয়েছে।গন্ধ কমেছে,ছাত্রছাত্রীদের কোচকানো নাক খানিক সোজা হয়েছে। ক্লাস শুরু হয়ে গেল ষষ্ঠ পিরিয়ড থেকে।সুতরাং দেখা গেল যে বমিটার ছোট ছোট টুকরো হওয়ার ফলে যেন তার গুণগত পরিবর্তন ঘটে গেল। দুর্গন্ধ মিলিয়ে গেল , ফলে ঘেন্না মিলিয়ে গেল। ন্যানো সাইন্স এও খানিকটা এমনই ঘটে।খুব ক্ষুদ্র মাত্রায় পদার্থের গুণগত পরিবর্তন ঘটে।
Nano একটি পরিমাপ।এক ন্যানোমিটার মানে 1 কে 1000000000 দিয়ে ভাগ করলে যত হবে ততো মিটার। অর্থাৎ খুব ক্ষুদ্র। ন্যানো সায়েন্স হলো সেইরকম ক্ষুদ্র স্তরের বিজ্ঞান। অর্থাৎ অনু-পরমানু স্তরের বিজ্ঞান। মনে হতে পারে সব পদার্থই তো অনু - পরমানু দিয়ে গঠিত। তাই সব বিজ্ঞানই আসলে অনু-পরমাণুর বিজ্ঞান। সেটা ঠিক কিন্তু ন্যানো সাইন্স খুব ক্ষুদ্র স্তরের বিজ্ঞানকে বোঝায়। যেমন ন্যানো শিট হলো একটি একটি পরমাণু পাশাপাশি বসিয়ে তৈরি শিট। সে শিটের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ বড় হতে পারে কিন্তু উচ্চতার দিকে একটি পরমানুই থাকবে। অর্থাৎ উচ্চতা হবে ন্যানো স্কেলে। আর এমন করলে পদার্থের ধর্ম কিছুটা পাল্টে যায়। যেমন কার্বন পরমাণু দিয়ে ন্যানো টিউব বানানো হয়। সে টিউবের ব্যাস ন্যানো স্তরে , দৈর্ঘ্যে বড় হতে পারে। কার্বন এমনিতে বিভিন্নরূপে প্রকৃতিতে থাকে। এই ধর্মকে বলে বহুরূপতা। যেমন হীরে, গ্রাফাইট, কয়লা , গ্যাস কার্বন ইত্যাদি । ভাবতে অবাক লাগে মূল্যবান হীরা আর কালো কুচ্ছিত কয়লা আসলে একই জিনিষ কার্বন। তফাৎ শুধু পরমাণু গুলির বিন্যাসে । হীরা অত্যন্ত কঠিন, বস্তুত সবচেয়ে কঠিন মৌল কিন্তু গ্রাফাইট নরম। এ যেনো ঠিক একই মানুষের ভিন্ন রূপ স্থান,কাল ও পাত্রভেদে। এদের মধ্যে গ্রাফাইট আর গাসকার্বন তড়িৎ পরিবহন করে। কিন্তু ন্যানো টিউবের কার্বনের অনেক ধর্মই পরিমার্জিত হয়। ন্যানো টিউব বিদ্যুতের উত্তম পরিবাহী।তাই বৈদ্যুতিক বর্তনী তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।এটি উচ্চ ঘাতসহ অর্থাৎ আঘাত সহ্য করতে সক্ষম। তাই শক্ত কাঠামো তৈরিতে ব্যবহৃত হয়, যেমন বুলেট প্রুফ জ্যাকেট।গাড়ির কাঠামোতে ব্যবহার করলে দুর্ঘটনা জনিত ক্ষয়ক্ষতি অনেক কমানো সম্ভব হবে। ন্যানো বিজ্ঞানের প্রয়োগ করে মেডিসিন জগতে বিপুল পরিবর্তনের সম্ভাবনা আছে। যেমন ক্যান্সার আক্রান্ত কোষে যদি সরাসরি ঔষধ পৌঁছে দেওয়া যায় (ন্যানো সাইন্স এর মাধ্যমে সম্ভব) তাহলে ঔষধের ডোজও কমে যাবে। আবার সুস্থ কোষগুলোর ক্ষতি কম হবে। সি ডট বলে এক ধরনের ন্যানো পার্টিকেল ব্যবহার করা হচ্ছে বায়ো ইঞ্জিনিয়ারিংএ ও বায়ো সেন্সর হিসাবে। ন্যানো টেকনোলজি কম্পিউটারের সাইজ কমাচ্ছে ,মোবাইলের সাইজ কমাচ্ছে ক্রমাগত। ন্যানো ফিল্টার ব্যবহার করে জল এমনকি বায়ু পিউরিফাই করা সম্ভব। নতুন জেনারেশনের সোলার সেল তাও তৈরি করা সম্ভব ন্যানো স্কেলের সাইন্স ব্যবহার করে।
তবে সবটাই যে ভালো তা নয়। কারণ ন্যানো সাইন্স থেকে দূষণের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ন্যানো পার্টিকেল যেগুলি তৈরি করার সময় বাতাসে মিশবে,জলে মিশবে সেগুলি আমাদের শরীরে ঢুকে যে কি রকমের প্রতিক্রিয়া দেখাবে তা এখনই বলা খুব শক্ত। নিশ্চিত রূপে বলার সময় আসেনি বলেই বাড়তি সতর্ক থাকতেই হবে। এ এক কাল চক্র। মন্থনে লক্ষী উঠলে গরলও উঠবে।যেকোনো অগ্রগতির অবশ্যম্ভাবী উপজাতক দূষণ। পুরানকথায় শিব কণ্ঠে সে বিষ ধারণ করে নীলকন্ঠ হয়েছিলেন বলে কথিত আছে।অর্থাৎ উৎপন্ন বিষ কে ছড়িয়ে পড়তে না দিয়ে একটা সুষ্ঠু ব্যবস্থা করেছিলেন।এখানেও উপজাত বিষের একটা সুষ্ঠু ব্যবস্থা করতে হবে।বিভিন্ন দূষণ আর প্রাকৃতিক সম্পদের ক্রমবর্ধমান অপ্রতুলতার দিকে তাকালে বোঝা মুশকিল আমরা উন্নতির দিকে চলেছি না অবলুপ্তির দিকে। কিন্তু চলাটা আবার থামিয়ে দেওয়াও তো যায়না!
বিজ্ঞানের উন্নতির আগেই মানুষ বিভিন্নভাবে ন্যানো পার্টিকেল ব্যবহার করেছে না জেনেই। রোমান যুগের একটি কাপ ব্রিটিশ মিউজিয়ামে রাখা আছে। সেটি প্রতিফলিত আলোতে সবুজ এবং প্রতিশসৃত আলোতে লাল দেখায়। আধুনিক পরীক্ষার সাহায্যে দেখা গেছে কাপটিতে রুপা ও সোনার ন্যানো পার্টিকেল এর আ্যলয় আছে। মধ্যযুগের চার্চ গুলির জানালাতে, পটারি শিল্পে ন্যানো পার্টিকেলের ব্যবহার ছিল। তবে সেই সময় ন্যানো পার্টিকেল তৈরি করার কোন পদ্ধতি তারা জানতো না। বিশেষ প্রক্রিয়ায় কোনো কোনো জিনিস তৈরির সময় হয়তো কোনোভাবে ন্যানো পার্টিকেল তৈরি হয়ে যেত বলে অনুমান করা যায়। জেরুজালেমকে মুসলিমদের হাত থেকে উদ্ধার করার জন্য মুসলিম ও খ্রিস্টানদের মধ্যে ধর্মযুদ্ধ( ক্রুসেড) বাধে। একাদশ শতাব্দী থেকে ত্রয়োদশ শতাব্দী পর্যন্ত যুদ্ধ হয়েছিল পাঁচবার । জেরুজালেম সেই প্রাচীনকাল থেকেই বিতর্কিত শহর। খ্রিস্টানরা মনে করে যীশুর জন্ম ও মৃত্যু দুটোই জেরুজালেমের অদূরে। জিউসরা মনে করে যে তাদের আদি গুরু আব্রাহাম এখানেই ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে সন্তানকে নিবেদন করেছিলেন। মুসলিমরা মনে করে মোহাম্মদের শেষ সময়ে এখানে আল্লাহর সঙ্গে তার কথোপকথন হয় এবং সেই সময়ই দিনে পাঁচবার নামাজ আদায়ের বিধান দেওয়া হয়। এখনো জেরুজালেমকে নিয়ে বিবাদ অব্যাহত ইজরায়েল ও প্যালেস্টাইনের মধ্যে। যাই হোক সেই ধর্মযুদ্ধে দামাস্কাসের তরবারি মুসলিমদের বিশেষ সুবিধা করে দেয়। সে তরবারি ছিল যেমন মজবুত তেমন ধারালো। তৎকালীন সময়ে দামাস্কাসের তরবারি একটা মিথে পরিণত হয়। পরবর্তীকালে পরীক্ষা করে সে তরবারিতে কার্বন ন্যানো পর্টিকলের সন্ধান পাওয়া গেছে।দামাস্কাসের তরবারি তৈরী হতো দক্ষিণ ভারত ও শ্রীলঙ্কায় বিশেষভাবে তৈরি ভূর্জৎ নামক ইস্পাত থেকে। ছোট ছোট বিশেষ চুল্লিতে কার্বন ও লোহার আকরিক গরম করে এই ইস্পাত তৈরি হতো। হয়তো এই প্রক্রিয়ার মধ্যে কখনো কার্বন ন্যানো পাটিকেল তৈরি হয়ে যেতে পারে।নবজাগরণের পরবর্তীকালে মাইকেল ফ্যারাডে তড়িৎ বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে সোনার ন্যানো পার্টিকেল যুক্ত দ্রবণ তৈরি করেন এবং তাতে বিভিন্ন আলোর ক্রিয়ায় বিভিন্ন রঙের প্রদর্শন করেন। কিন্তু তখনও ন্যানো পার্টিকেল বলে ধারণাটা ছিল না।
ন্যানো সাইন্স এর জনক বলা হয় আমেরিকান বিজ্ঞানী রিচার্ড ফাইনম্যান কে । তার মতো বর্ণময় চরিত্র সম্পর্কে দুচার কথা বলতেই হয়।তিনিও আইনস্টাইনের মত ইহুদি ছিলেন। তবে জাতি, ধর্ম কিছু মানতেন না । ছোটো থেকেই তার ছিল অসীম কৌতুহল এবং প্রশ্ন করার অভ্যাস । সে অভ্যাস তিনি পেয়েছিলেন বাবার কাছে।আবার তিনি ছিলেন অত্যন্ত কৌতুক প্রিয়, রসবোধ ছিল প্রবল। এটি তিনি পেয়েছিলেন তার মায়ের কাছে। ছোটবেলায় রেডিও সারাতেন শখে। স্কুল লেভেলে কলেজ লেভেলের গণিত শিখে নিয়েছিলেন নিজে নিজেই।চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে ছবি আঁকা শিখে নিয়েছেন। ক্যাসিনোতে বঙ্গো বাজিয়েছেন। আবার পড়েছেন এমআইটি ,প্রিন্সটনে; পড়িয়েছেন কর্নেল ও ক্যালটেক এ। চারটি প্রতিষ্ঠানই শিক্ষা জগতে অতুলনীয় । পারমাণবিক বোমা তৈরির ম্যানহাটান প্রজেক্টে কাজ করেছেন হান্স বেথের অধীনে। সেখানে সর্বজন শ্রদ্ধেয় বিজ্ঞানী নীলস বোর গ্রুপ ডিসকাশনের আগে তার সঙ্গে কথা বলে নিতেন আলাদা করে। কারণ তিনি মনে করতেন একমাত্র এই ছোকরাযই তার মুখের উপর বলতে পারে যে দূর মশায় ভাবনাটা ভুল হচ্ছে। বাকি সব শ্রদ্ধা ভরে মাথা নামিয়ে বলবে হ্যাঁ স্যার ঠিক আছে।ফাইনম্যান নিজেই বলেছেন তিনি সোজা কথা সোজা বলতেই পছন্দ করেন, আর সেটা সহজ এবং সুখকর। তার প্রথম বিবাহ স্কুল জীবনের প্রেমিকার সঙ্গে। যখন বিয়ে করেন তিনি জানতেন যে তার হবু স্ত্রী যক্ষা রোগে আক্রান্ত। যক্ষা সেই সময় একটি দুরারোগ্য ব্যাধি ছিল, তবু পিছিয়ে আসেননি। প্রতি সপ্তাহে বন্ধু ক্লাউস ফুকস এর গাড়ি ধার করে স্ত্রীকে হাসপাতালে দেখতে যেতেন লস আলমাসের প্রজেক্ট এর স্থান থেকে।।এই ফুকশ ই পরবর্তীকালে পরমাণু বোমার ফর্মুলা পাচার করে দেন তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে।তার যুক্তিতে ভারসাম্য যুক্ত পৃথিবীর প্রয়োজনে। হানস বেথে ফাইনম্যান কে তার অসামান্য প্রতিভায় জন্য বলেছেন ম্যাজিশিয়ান। তার অনেক কিছু ভারতীয় মূল্যবোধের সঙ্গে খাপ খায় না। কিন্তু আত্মবিশ্বাস তার জীবনের ছত্রে ছত্রে। তার আত্মজীবনীমূলক লেখা 'Surely You are jocking Mr Feynman' পড়লে বিজ্ঞানী সম্পর্কে আমাদের সনাতন ধারণা চুরমার হয়ে ভেঙে যাবে। কিন্তু তারপরও গড়ে উঠবে এক নতুন নির্মাণ, এক নতুন জীবন দর্শন। কোয়ান্টাম ইলেকট্রোডিনামিক্স এর উপর কাজ করার জন্য তিনি 1965 তে নোবেল পুরস্কার পান। এই ফাইন ম্যান প্রথম American Science Society তে There ‘s plenty of Room at the bottom’ নামক বক্তৃতায় ন্যানোসায়েন্সের দুয়ার তাত্ত্বিকভাবে খুলে দেন।
তবে ন্যানো মেটেরিয়াল তৈরি করা সম্ভব হয়েছে Sanning Tunneling Microscope আবিষ্কারের পর(1981)। জুরিখ আইবিএম রিসার্চ ল্যাবে এটি তৈরি করেন বিনিগ( Binnig) ও রোহর(Rohrer)। এর জন্য 1986 সালে রুস্ক (Ernst Rusks) সঙ্গে যৌথভাবে তারা নোবেল পুরস্কার পান।এখন দুভাবে ন্যানো পার্টিকেল তৈরি হয়। Top down অর্থাৎ বড়কণা থেকে ভাঙতে ভাঙতে ছোট কণা, এটম বা মলিকুল তৈরি করা। আর একটি Bottom up অর্থাৎ অনু পরমানু সাজিয়ে সাজিয়ে বড় স্ট্রাকচার তৈরি করা।
আমাদের সমাজে দুর্নীতি তৈরি হচ্ছে মূলত bottom up পদ্ধতিতে। আমরা ন্যানো সাইজ দুর্নীতি করছি, হজম করছি, প্রশয় দিচ্ছি। একটি শিশুর জীবনই অনেক ক্ষেত্রে শুরু হয় একটি ডেট পরিবর্তন করা জাল বার্থ সার্টিফিকেট দিয়ে।বয়স কমিয়ে রাখলে খানিক সুবিধা হবে এই আশায়। এক কুঁজোর কুঁজ সারানো ভূত অন্য জনের গান পছন্দ না হলে চাপিয়ে দেয় ডবল কুঁজ( কুঁজো ও ভূত গল্প)।শিশু মাটিতে পড়ে গেলে মাটিতে লাথি মেরে তার কান্না থামানো হয়।বুঝতে পারিনা কোন ফাঁকে ঢুকে পড়ে অসহিষ্ণুতা,অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দেবার অভ্যেস। পরীক্ষা হলের কথাই ভাবা যাক।পরস্পরের দেখে লেখা, নোট দেখে লেখা এখন সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। স্টুডেন্টরা অনেক ক্ষেত্রে ভাবে এটা তার অধিকার। খুব ছোট অবস্থায় ছেলেরা যখন দেখে লেখাটা শুরু করে তখন অভিভাবক, শিক্ষকরা এটাকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখে। ভাবে খুব সামান্য ব্যাপার,একটু আধটু দেখা দেখি তো সব কালেই হয়। আমরা গ্যাস ডেলিভারি বয় কে দশ টাকা এক্সট্রা দিয়ে নতুন সিলিন্ডারটা নিয়ে নিজের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করি। অফিস কাছারিতে না চাইতেই টাকা গুঁজে দিই তাড়াতাড়ি কাজ উদ্ধারের জন্য। সামান্য কম টাকা লাগবে বলে ক্যাশ মেমো নেওয়া থেকে বিরত থাকি। এটা আসলে নিজের দেশকে ফাঁকি দেওয়া এই কথাটা ভুলে গিয়ে 15 ই আগস্ট বক্তৃতায় দেশপ্রেম বমি করি। পাড়ার অমুক চন্দ্র ব্রিজ, রাস্তা তৈরির পয়সা মেরে গাড়ি চড়ে জেনেও হে হে করে তার সঙ্গে কথা বলি, মানে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিই। টিটি টিকেট চেক না করলে ট্রেনে টিকেট না কাটলেই হতো বলে মনে করি। সমাজে এমনই সব ন্যানো স্কেলে দুর্নীতি চলে। আর আমরা নির্বিকার থাকি,এই সব খুব স্বাভাবিক মনে করি। বমি বা দুর্নীতি কোনটাই আমাদের বিচলিত করে না যতক্ষণ সেটা থাকে ন্যানো স্তরে। কিন্তু কোন একজন বা একদল, কোন একদিন এই দুর্নীতির ন্যানো টিউব দিয়ে বড় স্ট্রাকচার করে ফেললে তখন আমরা বিচলিত হই, ভীত হই, সমালোচনা করি, গেল গেল রব তুলি। কিন্তু আমাদের করার কিছু থাকে না।আবার উচ্চ স্তরের বড়ো দুর্নীতি ছোটো ছোটো দুর্নীতিকে উৎসাহিত করে।সকলে ভাবে এতো বড়ো দুর্নীতি চোখের সামনে হচ্ছে আর আমি সামান্য একটু করলে কি দোষ? এটা হলো টপ ডাউন প্রসেস।এইভাবে বটম আপ টপ ডাউনকে আর টপ ডাউন বটম আপকে ক্রমাগত চক্রাকারে বৃদ্ধি করে চলেছে।এই চক্র থেকে মুক্তি পাওয়া খুব কঠিন। ভবিষ্যতে অর্থনীতির বহর যত বাড়বে দুর্নীতিও তত বাড়বে এটা নিঃসন্দেহে বলা যায় , যদি না আমরা ন্যানো স্তরের দুর্নীতি গুলি সম্পর্কে সচেতন হই। ন্যানো স্তরের এবং উচ্চ স্তরের দুর্নীতি গুলিকে সামাজিক ভাবে নিন্দার দৃষ্টিতে দেখা শুরু করি।
🍂
2 Comments
অসাধারন ! বক্তব্যের প্রকাশ কৌশল অতুলনীয় ! ধন্যবাদ লেখককে ।
ReplyDeleteধন্যবাদ
ReplyDelete