জ্বলদর্চি

কালের অতল তলে কলোরাডো-১১/চিত্রা ভট্টাচার্য্য

কালের অতল তলে কলোরাডো-১১

চিত্রা ভট্টাচার্য্য 

  বিশ্বজুড়ে আনাচে কানাচে সর্বত্র ছড়িয়ে আছে রহস্যময়ী প্রকৃতির রূপকথা , তারই   নিত্য নতুন অসীম সৌন্দর্যের প্রবল আকর্ষণের সংস্পর্শে জাগতিক নিয়মে উদ্ভ্রান্তের মত এক অদম্য নেশার টানে কৌতূহলী মানুষ অনবরত ছুটে চলেছে। অসীমের আনন্দ ধারায় ভেসে আমার এই পলাতকা মনের ও আগ্রহের শেষ নেই।  সোনার খাঁচায় বন্দী মন সর্বক্ষণ  পাখা মেলে উড়ে যেতে চায় বিশ্বলোকের অজস্র অজানার সন্ধানে। কলোরাডোর পথে বেড়াতে বেরিয়ে এত দিন ধরে  আকাশ বাতাস  নদী নির্ঝরের ,বন পাহাড় গিরিখাতের অল্প স্বল্প গল্প বলেছি ,তারই  বিস্তর পরিচয় বারবার দিয়েছি। আজ আমার ঝুলি খুলে বসেছি অন্য এক অজানা জগতের গল্প বলতে । যে  '' জুর‍্যাসিক পার্ক '' সিনেমা কে  কেন্দ্র করে এগিয়ে চলেছে  আমার আজকের ভ্রমণ ধারাবাহিকের গল্প টি  । 
                                                                                 স্টিভেন স্পিলবার্গ পরিচালিত কল্প বিজ্ঞান কাহিনীর       সিনেমা জুর‍্যাসিক পার্ক। স্টীয়ারিং হাতে ঘুরছে ,গুগুল ম্যাপের নির্দেশনায়। হাইওয়ের রাস্তায় মনোনিবেশ করে ব্রতীন কিন্তু  স্মৃতির সরণি বেয়ে চলে গিয়েছে সুদূর অতীতে। ছোট বেলায় তখন সবে মাত্র ক্লাস সিক্স-- জ্ঞানত বয়সে প্রথম সিনেমা দেখা। এবং সেখানেই ই প্রথম দেখেছিল চলমান দানবের মত বিশাল চেহারার ডায়নোসরের পরিবার , স্টেগোসরাস ,আপাটোসরাস এবং মাংসাশী প্রাণী আলোসরাস প্রভৃতি বিশাল দেহী কিম্ভূতকিমাকার জন্তু গুলোর পৃথিবী কাঁপানো দাপুটে রণ হুঙ্কারের গর্জন। এক ভয় মিশ্রিত বিষ্ময় ও কৌতূহল জড়িয়ে ধরেছিল তার বালক মনে। মনে হয়েছিল এরা শুধু অলীক কল্পনা বা ছবি নয়। এরা বাস্তব। এখন ই তেড়ে এসে সিনেমা হল সমেত সারা পাড়া টাকেই  গিলে ফেলবে।

পারভীন বলে যখন ই এই সিনেমাটা দেখেছি আমার ও  মনে হয়েছিল ডাইনোসরের পাল্লায়  যেন তামাম পৃথিবী মুহূর্তের মধ্যে ধূলিসাৎ হয়ে যাবে। অতনু বলে  খুব ভীতু ছিলাম , রাতে ঘুমোলেই স্বপ্নে ডায়নোসরাসের দল হানা দিয়ে আমায় ঘাড় কামড়ে উঠিয়ে নিয়ে চলতো পর্বত গুহায় বা গভীর অরণ্যে জবাই করবে। কখনো দেখতাম লুকিয়ে আছি খাটের তলে। আর এই বীভৎস দানবের দল এসে  ঘর বাড়ি ভেঙে গুড়িয়ে সব  রসাতলে মিশিয়ে দিয়েছে।  ইয়ম বলে ,সাতবার এই সিনেমাটা দেখেছি। ডায়নোসোরাসের সাথে  ছুটছি যেন নির্জন সমুদ্র পাড়ের বালিয়াড়িতে।ব্রতীন বলে সেই সিনেমায় দেখা ডায়নোসরের চেহারা গুলো আজো চোখের ওপর স্পষ্ট ভেসে বেড়ায়। কিন্তু আজ ভয় দূরে থাক বেশ কৌতূহল লাগে। জুরাসিক পার্ক সিনেমা ,নিয়ে তুমুল উত্তেজনা চলছে চার জনের মধ্যে ফেলে আসা দিনের স্মৃতি চারণে। ওরা যেন আর পরিণত বয়সের নয় স্কুল ড্রেস পরা ছোট পড়ুয়ার দল। ,শেয়ার করছে সিনেমা দেখার পরে সে সময়ের মানসিক প্রতিক্রিয়া।  

আর্চেস ন্যাশানাল পার্কের অন্তহীন লাল পাথরের সারির  শৈল্পিক সৌন্দর্যর মাঝে গোধূলির অস্তগামী সূর্য হারিয়ে গেল। ঘর ছাড়া মন যেন দিশাহারা হয়ে খুঁজে বেড়ায় বিশ্ব স্রষ্টার নিপুন সৃষ্টি আরো কত  অনিন্দ্য সুন্দর বিশ্বের বিস্ময় কে।  কলোরাডোর উপকন্ঠে ইউটার পূর্বাঞ্চালে আর্চেস ন্যাশানাল পার্কের বিস্ময়ান্বিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পার হয়ে  ফ্র্রুটায় এসে পড়লে চারধারে লাল বেলে পাথরের পাহাড় গুলোর সাথে ভীষণ ভাবে চেহারার সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায় প্রাগৈতিহাসিক যুগের সেই বিশালকায় বীভৎস দানব প্রজাতির জানোয়ার গুলোর। এখানেই গড়ে উঠেছে ডাইনোসরের সুবৃহৎ মিউজিয়াম টি। এবং ওরা সবাই মরীয়া হয়ে উঠেছে এই মিউজিয়ামটি ঘুরে দেখার জন্য। ১২০ মাইল স্পীডে ফাঁকা রাস্তায় গাড়ি ঝড়ের মত ছুটছে। ব্রতীন বলে জুরাসিক পার্কের সেই গল্পটি ছিল বেশ অদ্ভুত ধরণের। জেনেটিক ক্লোন পদ্ধতি তে তৈরী করা ডাইনোসরের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা আইলা নুবলার দ্বীপে একটি বিনোদন পার্ক গড়ে তুলেছিল। আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্ভোধনের পূর্বে জন হ্যামন্ড কয়েক জন বিজ্ঞানিকে পার্ক পরিদর্শনের জন্য আমন্ত্রণ জানান। তারা দ্বীপে এসে ডাইনোসর দেখে বিস্মিত হন। কিন্তু ষড়যন্ত্রের কারণে কিছু ডাইনোসর তড়িতাহত হয়ে খাঁচা ভেদ করে বাইরে চলে  আসে। বিজ্ঞানী ও কলা কুশলীগন সাংঘাতিক ভয়ংকর সব জানোয়ার দের হাত থেকে বাঁচার জন্য দ্বীপ থেকে পালানোর চেষ্টা করেন। এমনি সব সাংঘাতিক ঘটনা নিয়েই সিনেমার গল্প টি সাজানো ছিল ।  ওদের সাথে আমিও যোগ দিয়ে বলি ১৯৯৩ সালে এই সিনেমা যখন রিলিজ হয়েছিল তার সব হলের শো গুলো দিনের পর দিন থেকে হাউজ ফুল চলতো।                                                                        অতনু হাতের ম্যাপ এবং গুগুল নেট  দেখিয়ে বলে কলোরাডো এবং উত্তর -পূর্বাঞ্চলীয় ইউটাহ ,আমেরিকা মহাদেশের সুদূর প্রসারী পাথুরে মরুভুমি অঞ্চল। ১৯১৫সালে ডাইনোসেরাসের অবশিষ্ট্যাংশের জীবাশ্ম স্থান সংরক্ষণের জন্যএই  স্থান টিকে আলাদা করা হয়েছিল। ১৯৩৮ সালে সবুজ এবং ইয়াম্পা নদী বরাবর চলে গিয়েছে যে বুনো পথ , সেদিকে এই স্মৃতি ভবন  টি তার আসল ৮০ একর থেকে ৩২৬ বর্গ মাইল পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছিল।  আজ  এই এলাকাটি  টি ৩২৯বর্গ মাইল জায়গা জুড়ে  বিস্তৃত রয়েছে। 
 অনেক ক্ষণ  ধরে ইয়মের কোনো সাড়া  শব্দ নেই কানে হেড ফোন  লাগিয়ে রাশিয়ান গানে মনোনিবেশ করে পায়ে তাল ঠুকছে। অতনু নিঃশব্দে গুগুল নেটের পাতা উল্টে চলেছিল। পারভীন ভারী ব্যস্ত হয়ে উঠেছে ,  চলার পথে সবার এতো নীরবতা  ওর মোটেই পছন্দ নয়। আমিও আমার নোটবুকে টুকটুক করে সাজিয়ে রাখছি , ''না চাহি তে যারে পাওয়া যায় ''এর মত পাথেয়র যত হিসেব নিকেশ। ব্রতীন পণ করেছে এ পথের যাত্রায়  ট্যাকোমার  স্টীয়ারিং ও  কিছুতেই ইয়াম  বা অতনুর হাতে ছাড়বেনা।  high road-- C 82এর  এর দিকে স্টীয়ারিং ঘুরিয়ে দিয়েছে। পথের দুপাশে সেই সুউচ্চ দুই রক্তিম পাহাড়ের সারির  ভিতর দিয়ে গলি পথ পার হয়ে চড়াই উৎরাই পেরিয়ে চলেছি। আশ্চর্য্য হয়ে দেখছি পাহাড়ের সারির বাঁ দিকে র গায়ে স্তূপাকৃত জমে থাকা বরফের  ওপর সূর্যের আলো পড়ে একরাশ তরল সোনা গড়িয়ে পড়ছে পাহাড় শীর্ষ থেকে শীর্ষে ।  ডান দিকে রক্তিম রকি বিরাটকায় এক জন্তুর মত দূর দিগন্ত বিস্তৃত। তার গায়ে বরফের চিহ্ন মাত্র নেই স্থবিরের মত নিঃসাড়ে পড়ে আছে। ব্রতীন  ইয়ম কে বলে   , এই যে পাহাড় গুলো দেখছো এখানে  একসময় অন্ততঃ প্রায় ষাট হাজার ডায়নোসরের ফসিল পাওয়া গিয়েছিল ভাবতে পারো ?  

ফ্রুটায় পৌঁছে ডাইনোসরের মিউজিয়ামে এলাম। যথারীতি টিকিট কেটে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছি। বিশাল দুই ডায়নোসরের শরীরের অবিকৃত কঙ্কাল সামনেই খাড়া দাঁড়িয়ে আছে। যদিও প্রাণহীন তবু  এক  অজানা ভয়ে মাথা থেকে পা পর্যন্ত শিরশিরানি স্রোতর কাঁপন বয়ে যায়।ভাবছি এতো উঁচু ?   প্রায় ১৫০ফুট উঁচুতো হবেই। ব্রতীন কে বলি ,এরা পৃথিবী সৃষ্টির সেই আদিকালের জন্মের বিবর্তনের প্রথম দিকের প্রকাশ।
🍂

  -- এই মিউজিয়ামের তত্ত্বাবধায়ক একজন অন্যতম জীবাশ্ম বিশেষজ্ঞ  মিস্টার দিয়োগোর সাথে বেশ আলাপ জমে  উঠলো।  তার কাছ থেকেই তথ্য সংগ্রহে মন দিয়েছি।    ১৯০৯ এবং ২৩ সালে   পেনসিলভানিয়ার পিটসবার্গের কার্নেগি মিউজিয়ামের আর্ল ডগলাস  এই স্থান টি খনন কার্য্যের ফলে  আবিষ্কার করে খনি থেকে ৩৫০ টন হার উদ্ধার করে ছিলেন।এই সংগ্রহে প্রায় ২৩টি  মাউন্ট যোগ্য কঙ্কাল পাওয়া গিয়েছিল। এবং ওই হাড় দিয়ে স্মৃতি সৌধের কেয়ারী ভবনের যে প্রাচীর টি প্রথমেই  দেখেছিলাম, শুনলাম সেটি গড়ে তোলা হয়েছিল। মিস্টার দিয়োগো  বলে চলেছেন ,আর আমার হাতে পেন্সিল নোটবুকের ওপর চলছিল ইংলিশ ,বাংলা ,হিন্দি অক্ষর  মিশিয়ে শর্টহ্যান্ডের মত। আজ মিউজিয়ামের গল্প লিখতে বসে সে লেখা পাঠোদ্ধার করতে গিয়ে মনে হচ্ছে আমি বোধহয় সেদিন    হীব্রু ভাষায় স্ক্রীপ্ট লিখেছিলাম। যাইহোক সেখান থেকে যত টুকু বর্ণনা উদ্ধার করতে পেরেছি  আজ লিখতে বসে মনে হচ্ছে সে এক অমূল্য রতন ।  

 প্রাগৈতিহাসিক যুগের প্রথম স্মারক সাধারণত এই বৃহদাকার  মেরুদন্ডী প্রাণী গোষ্ঠীর দল।,বহুকোটি বছর আগে সে যুগ পৃথিবীর হিসেবের খাতায় অবলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। এদের ফসিল ,কঙ্কাল হাড় কে সংগ্রহ করে একেক যুগে কেমন ছিল তারই অস্তিত্ব এখানে সংরক্ষিত হয়ে আছে। সংগ্রহালয় বাড়িটির নীচের তলায় প্রতিটা ঘরে দেখি সব প্রাণী তত্ত্ব নিয়ে স্টুডেন্ট রা কাজে ব্যস্ত। প্রাণী বিজ্ঞানীদের অহর্নিশি খোঁজ ও তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ধারণা প্রায় ১৬ কোটি বছর ধরে পৃথিবীতে একচ্ছত্র রাজত্ব করেছে এই দানবীয় জন্তুর দল।  প্রথম ডাইনোসরের বিবর্তন হয়েছিল আনুমানিক ২৩ কোটি বছর আগে।   ক্রিটেশিয়াস যুগের প্রায় সাড়ে ছয় কোটি বছরের  আগে একটি বিধ্বংসী প্রাকৃতিক বিপর্যয় ডাইনোস রদের প্রভাব কে পৃথিবী থেকে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত  করে দেয়। ইয়াম পারভীনের কাছে ঐতিহাসিক তথ্য যেন বড়ো অবিশ্বাস্য লাগছে। আমি ভুল ঠিক জানিনা মন দিয়ে এই বিশাল বিশ্বের প্রাণ সৃষ্টির গল্প শুনছি। 

   উত্তর আমেরিকার পশ্চিমের অনেক রাজ্যের মত কলোরাডো ও ডাইনোসরের জীবাশ্ম গুলোর জন্য বহু পরিচিত তার পার্শ্ববর্তী প্রতিবেশী রাজ্য ইউটা এবং ওয়াইমিং। মিউজিয়ামের প্রথম ঘরেই  ডাইনোসোরাসের এক প্রজাতি  স্টেগোসরাস দেখেছিলাম। এর মস্তিস্ক ছিল আখরোটের আকারের। কলোরাডোয় পাওয়া অন্য সব প্রাণীদের থেকে বেশ  স্বতন্ত্র ,ভয়ঙ্কর চেহারার ভিন্ন ধরণের দেখতে। স্টেগোসরাসের কঙ্কালের পাশে সাজানো রয়েছে যে চিত্র টি ,সে  ত্রিভুজাকার  এবং স্পাইক যুক্ত করাতের মত কাঁটা কাঁটা ,থাগোমিজার ছিল এর লেজের প্রান্তে।

 ইয়াম এক বিশাল উচ্চতার  ডাইনোসরের কঙ্কালের দিকে তাকিয়ে বলে এর নাম নিশ্চয়ই ডিপ্লোডোকাস হবে। এরা তৃণভোজী  মারাত্মক চেহারার হলেও  তেমন ক্ষতি কারক নয়।  জুরাসিক যুগের গল্প পড়তে গিয়ে জেনেছিলাম শেষের দিকে সবচেয়ে মারাত্মক ডাইনোসর আলোসরাসের জীবাশ্ম আবিষ্কৃত হয়েছিল যার নামকরণ করেছিলেন ওথোনিওল সি মার্শ। দেখো এখানে সেই বিবরণ নেমপ্লেটে লেখা রয়েছে। ১৯৭১ সালে ডেল্টা শহরের কাছে আবিষ্কৃত হয়েছে আলোসেরাস ,টারভোসেরাসের সাথে ঘনিষ্ট ভাবে সম্পর্কিত  আরেকটি থেরোপডের। আমার মাথায় এত কিছু ঢুকছে না। আমি শুধু ঘুরে ঘুরে দেখেই চলেছি।  ওদের ভাষার দুর্বোধ্য কঠিন নাম গুলো এবং দেওয়ালে লাগানো ছবি সমেত পোস্টার গুলো ক্যামেরায় সংগ্রহ করে চলেছি। এবং নোট বুকে টুকে যাচ্ছি। 

 মিষ্টার দিয়োগো পারভীন ও ইয়াম কে লক্ষ্য করে বলে , শুনছো  ইয়ং লেডী ,চল তোমাদের নিয়ে যাই ,এরপরের ঘর ট্রাইনোসেরাস রেক্স। তাদের দেখে তোমরা আবার অজ্ঞান হয়ে যেও না।  যার জীবাশ্ম নমুনা ওয়াইমিং এবং সাউথ ডাকোটা থেকে পাওয়া গিয়েছে। শোনা যায় ঐ নয় টন ওজন থেকে ১০৯ টনের দেহী  বিশাল জানোয়ারের দল। সেই সময় কলোরাডো রাজ্যের সমতল ভূমি কাঁপিয়ে এবং বনভূমি তে লাগাতার তান্ডব চালিয়ে  বন পাহাড় তছনছ করে বেড়াতো ,জলস্থল ও তোলপাড় করতো । 

 এবারে উপস্থিত হয়েছি  স্টেগোসরাস এবং অ্যালোসরাসের ঘরে। ব্রতীন বলেএখানে লেখা রয়েছে ১৯  শতকের শেষের দিকে কলোরাডোর ডেনভারেএই উটপাখির মত থেরোপড যা অর্নিথোমিডিড মানে পাখির নকল ডাইনোসেরাসের একটি পুরো পরিবারের কংঙ্কাল পাওয়া গিয়েছিলো। এরা সম্ভবত ৩০মাইল প্রতি ঘন্টার বেশী গতিতে ছুটতে পারে। যা এটিকে শেষ ক্রিটেসিয়াসের রোড রানার হিসেবে ধরা হয়েছে। আমার মনে হলো এই কঙ্কাল টি যেন এমু পাখির দেহের  বিশাল সংস্করণ    

এরপর মেসোজোয়িক যুগে অর্নিথোপড  ছোট থেকে মাঝারি আকারের ,ছোট মস্তিষ্কের ,উদ্ভিদ ভোজী ডাইনোসর কে দেখতে পেলাম। কলোরাডো রাজ্যে আবিষ্কৃত ডাইনোসরের বংশের মধ্যে বিখ্যাত ফ্রুইটডেন্স ক্যাম্পটসোরাস ,ড্রায়োসরাস , থিওফাইটালিয়া-   আরো কত বিভিন্ন প্রজাতির ডাইনোসোর--দেখেছিলাম   যার সবকটিই অ্যালোসরাসের মতো ভোজনপ্রিয়। আমার মনে এক প্রশ্ন ঘুরে বেড়ায় এদের এমন অদ্ভুত নামকরণ কারা করেছিল ? অবশ্যই তার সদুত্তর পাইনি।  

  এখানে এক সময় প্রচুর  সংখ্যক  সৌরপড পাওয়া গিয়েছিল। এই বিশাল  কলোরাডো  ছিল সব ডাইনোসর দের অবাধ  বিচরণের  রাজত্ব।  সর্বাপেক্ষা বড়ো আস্তানা বা  ভূসম্পত্তি , যাকে বলা যায় ওদের ঘর বাড়ি।এদের মধ্যে  অ্যাপাটোসেরাস উদ্ভিদভোজনকারী  হিসেবে বিশেষ পরিচিত ছিল। ব্রাকিওসরাস এবং ডিপ্লোডোকাস থেকে শুরু করে কম পরিচিত  হ্যাপ্লোক্যানথোসরাস এবং  অ্যামফিকোলিয়াসের দল  ছিল বিশালাকার  বড়ো  চেহারায়  এবং ভয়ানক দেখতে।  

  কত যে ঘর এবং কত যে তাদের প্রাণের অস্তিত্বের পরিচয় পেলাম তার হিসেব রাখতে আমার হিমসিম খাওয়ার জোগাড়।প্যালিওন্টোলজিষ্টরা  কলোরাডোর ফ্রুটা অঞ্চলে প্রায় সম্পূর্ণ কঙ্কাল আবিষ্কারের জন্য অন্য যে কোনো মেসোজোয়িক স্তন্যপায়ী প্রাণীর চেয়ে  ছয় ইঞ্চি লম্বা। ফ্রুটাফোসোর দের পাওয়া গিয়েছিল  এই ফ্রুটা অঞ্চল টির খনন  কার্য্যের ফলে।  খুব ভালো করে লক্ষ্য করে দেখি  এই ফ্রুটাফোসোরের কঙ্কালের হাড়ের হাতের সামনে রয়েছে ধারালো দীর্ঘ্য নখ। তবে এই  ধারালো বড়ো বড়ো নখের  সাহায্যে তারা উইপোকা মাটির ঢিবি থেকে খুঁড়ে খেয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো।  দিয়োগো বললেন  বড় থেরোপড ডাইনোসরদের নজর এড়াতে প্রয়ো -জনে এরা অনায়াসে  মাটির নীচে চাপা পড়ে থেকে আত্মগোপন করে বাঁচে।

 এরপর এলাম যে ঘরে সেখানে লেখা রয়েছে  হায়েনোডন বা  হায়নার মত দাঁত সর্বস্ব প্রাণী। একটি সাধারণ ক্রিয়োডন্ট ,মাংসাশী স্তন্যপায়ী প্রাণীদের  কঙ্কাল দিয়ে সাজানো গ্যালারী টি।   দিয়োগো বলেন  এটি  একটি অদ্ভুত জাতের প্রাণী যা ডাইনোসরের বংশ বিলুপ্ত হওয়ার প্রায় ১০ মিলিয়ন বছর পরে বিলুপ্ত হয়েছিল। পারভীন এতক্ষণে কথা বলে , এক ভূতাত্ত্বিকের আবিষ্কারে ও পড়েছে   হায়েনোডনের জীবাশ্ম সারা বিশ্বে মাটি খুঁড়ে অনেক জায়গায় আবিষ্কৃত হয়েছে, কিন্তু তাদের  দেহাবসান  বিশেষ করে কলোরাডোর  পলিতে প্রচুর পরিমানে পাওয়া গিয়েছে।  
উত্তেজিত পারভীন  অতনু কে হাত নেড়ে কত কিছু বুঝিয়ে চলেছে। ওরা আমাদের থেকে বেশ খানিকটা দূরে মিউজিয়ামের দক্ষিণ প্রান্তে। ইয়াম আমাকে নিয়ে গুটিগুটি পায়ে চলেছে ওদের দুজনের গভীর আলোচনার মাঝে। পারভীন বলে , মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে  অন্যান্য দেশের মতো, কলোরাডো সেনোজোয়িক যুগের বেশীর ভাগ  সময়ে উচ্চ, শুষ্ক এবং নাতিশীতোষ্ণ ছিল ,এটি ডাইনোসরদের  উত্তরাধিকারী  মেগাফাউনা স্তন্যপায়ীদের  জন্য একটি আদর্শ আবাস ভূমি ছিল। যদিও এই রাজ্যটি  বিশেষ করে  তার কলম্বিয়ান ম্যামথের জন্য সুপরিচিত এবং আরও বিখ্যাত উলি ম্যামথের নিকট প্রজাতি হওয়ায়। এর পূর্বপুরুষ বাইসন, ঘোড়া এবং এমনকি উটের জন্য ও  বিখ্যাত ছিল ।  বিশ্বাস কর বা নাই কর  মধ্যপ্রাচ্য এবং মধ্য এশিয়ায় ক্ষতবিক্ষত হওয়ার আগে উট উত্তর আমেরিকায় এরা উটের আকারে  বিবর্তিত হয়েএসে ছিল! 

মিউজিয়াম ঘুরে যত দেখছি বিশাল বিস্ময় মনের মাঝে শুধু প্রশ্ন তোলে। কোটি কোটি বছর আগের হারিয়ে যাওয়া নির্বাক পৃথিবী, এই ফসিল এই হাড়ের পাহাড় কঙ্কাল গুলোর মাঝে যেন বাঙময় হয়ে উঠলো। তৎকালীন পৃথিবীর রূপ কল্পনার তুলিতে এঁকে চলেছি নিজের মত করে। এই দেখার শেষ নেই। ক্রমে বেলা শেষের দিকে পাড়ি দিয়েছে মিউজিয়াম বন্ধ হবে। রাত আটটা বাজলেও এখনো অন্ধকার নামতে বেশ দেরী আছে । 

Post a Comment

0 Comments