জ্বলদর্চি

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা- ১৩৯

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা- ১৩৯
সম্পাদকীয়,
প্রচন্ড দাবদাহের পর বর্ষার আগমণের সুরে পশু পাখি মানুষ এমনকি গাছপালাও গান গাইতে গাইতে নাচ শুরু করে দিয়েছিল। হঠাৎ আকাশে দেখি পেঁজা মেঘের ভেলা, বৃষ্টির বেগ কমে এসেছে, আমি তো সেই দেখেই এবারের প্রচ্ছদে শেখর আঙ্কেলের তোলা কাশ ফুলের ছবি দিলাম। তোমাদের বন্ধু স্বর্ণদীপার আঁকাটাও দিলাম। শরৎ মানেই পুজো আর প্যজো মানেই বেড়াতে যাওয়া। তোমাদের বন্ধু স্বপ্ননীল বেড়ানোর গল্প বলেছে। শ্রীকান্ত আঙ্কেলের লাচুঙের মতো সিকিম ভ্রমণ। বাসবদত্তা আন্টির শ্যামদেশ ভ্রমণের গল্প আর ছবি কেমন লাগছে জানিও। এবারে কৃষ্ণা আন্টির গল্প দেশের বাড়ির শেষ অংশ পড়ে জানিও হাসতে হাসতে পেট ফেটে গেল কিনা। ফেটে গেলে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে সেলাই করতে। সম্প্রতি গেল জাতীয় চিকিৎসক দিবস। কেন ঐদিন পালন করা হয় জেনে নাও দোলনচাঁপা আন্টির কাছ থেকে। একি তোমরা হাসছো কেন? বুঝেছি শ্রাবণ মাসে আবার শরৎকাল হয় নাকি! তাই হাসছো? আমি কী করব বলো? আকাশ আমায় রোজ বিকেলে কানে কানে তাই বলে যাচ্ছে যে। এর থেকে রক্ষা পাবার উপায় কী, তোমরাই চিঠি লিখে জানিও। তবে আমাদের ছোটোবেলার দেড়শো সংখ্যা এল বলে, আর তার পিছু পিছু শরৎ। কী মজা...... মৌসুমী ঘোষ।
ধারাবাহিক উপন্যাস
লাচুঙের নেকড়ে
পর্ব ১৮

শ্রীকান্ত অধিকারী


-বলতো মানুষ হারিয়ে যায় কেন?  
-হারানোর আবার কারণ লাগে নাকি। পথ খুঁজে পায় না তাই!
-কেউ তুলে নিয়ে যেতে পারে কিংবা 
হয়তো বাড়ি ফিরলই না। 
-তা হতে পারে। তবে হারানোর একটা মোটিভ থাকেই। মানুষ এমনি এমনি হারিয়ে যায় না। 
রামসির সঙ্গে ছোট মামার কথাগুলো শুনছিল শিঙিও। 
আজ তার বেশ ভয় ভয়ই করছে।ওর কেবলই মনে পড়ছে ওদের সেই ছোট মেয়ে 
বিটলেকে। কাল রাতে সেই একবার দেখা হয়েছিল আর হয় নি। ভালো করে কথাও হয় নি। আজ অবশ্য সকালে ওদের রুমে গিয়েছিল কিন্তু রুমের দরজা বন্ধ ছিল। তাই কোনো কথা বা দেখাও হয় নি। কোন দিকে গেছে কে জানে। এই কথাটা অবশ্য কাউকে বলতে পারে না। সে শুধু চুপ করে থাকে। 
হঠাৎ গাড়ির সব্বাইকে চমকে দিয়ে বড় মামা বলে, সাঙ্গ তুমি ওদেরকে নিয়ে বাড়ি ফিরে
 যাও, আমি গ্যাটসোকে নিয়ে একটু পরে আসছি। গাড়ি থামতে না থামতেই গ্যাটসো আর বড় মামা 
বেশ গম্ভীর ভাবেই গাড়ি থেকে নেমে গেল। সেই প্রথম রামসি দেখল ওদের হোমের সাঙ্গকাকু 
গাড়ির স্টিয়ারং ধরল এবং আস্তে আস্তে গাড়ি সামনের দিকে এগিয়ে চলল। ক্ষণিকের মধ্যে এমন 
একটা ঘটনা ঘটে গেল যা গাড়ির মধ্যে কেউই আগে থেকেই আঁচ করতে পারে নি। ওরা 
পরস্পরের মুখের দিকে তাকিয়ে এমন ভাবে চেয়ে রইল যে সবাই যেন বলতে চায় -ব্যাপারটা কী 
হল!  
অদ্ভুত ভাবে বড় মামি কেবল বলল, ঐ আবার সেই পুরোনো রোগটা চাগিয়ে উঠল। 
-মানে?
-সারা সার্ভিস লাইফে এই ভাবে হুড়ুম-ধুডুম করে কতবার যে চলে গেছে তার ঠিক নেই। প্রথম 
প্রথম রাগ হত পরে আর হয় নি। ও তোমরা চিন্তা কর না। কোথাও যায় নি। ঠিক থানা গেল 
অফিসারদের মাথা ধরাতে। দেখলে না আসার পথে সেই সেভেন সিস্টার্সের কাছে যেখানে একটা 
বাচ্চা মেয়ে অজ্ঞান হয়ে গেছিল সেখানেই তো তোমাদের দাদা পুলিশের সঙ্গে কি সব ফিসফিস
করছিল। 
-তা বলে এই ভাবে! ছোট মামাকে বেশ রেগে যেতে দেখা গেল। -নিজে সব সময় চোরের পেছনে 
ছুটে ছুটে সব্বাইকে সন্দেহ করা বাতিক হয়ে গেছে। এই সব লোককে বাইরে নিয়ে আসায় 
বিপদ। রিটায়ার হওয়ার পরও অভ্যাস যায় না। 
-কী করবে বল চোর ছ্যাঁচড় অনেক দিন ধরে নি, তাই পুলিশই ঠিক আছে। দুটো রহস্যের গন্ধ
তো পাবে। রামসি দেখল ওর বাবা বেশ মজা করেই কথাগুলো বলল।তবে যতই মজা করুক 
ওদের মধ্যে আর সবার মুখে সেই হাসি-খুশি ভাবটা নেই।  
সাঙ্গ যতটা পারে গাড়ি ধীরে চালিয়ে নিয়ে যায়। বাইরের দিকে না তাকালেও গাড়ি বাঁক 
নিলেই রামসির নজরে পড়ে ভয়ানক খাদ। খাদের নিচে বুনো গাছ আর পাইনের সারি। হঠাৎ ছোট মামাকে বলে, আচ্ছা মামা, এই খাদের নীচে পড়ে গেলেও তো মানুষ হারিয়ে যেতে পারে।
ওদিকে রামসির মা তখন কটকট করে তাকিয়ে। রামসির ছোট মামা আর কোনো উত্তর দেয় 
না। শুধু চোখ বন্ধ করে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়।  
বড় মামি ওদিকে ড্রাইভারের ঠিক পিছন থেকে বলে, এই ছেলেটাকে একটু চুপ করা না 
নিবু। সব সময় অশুভ কথা-বার্তা! 
ওপাশে কার যেন ফিক করে হাসির শব্দ ভেসে আসে। হয়তো শিঙি। 
-বাংলাদেশী বাবু কো ফামিলি লাই জাস্টিস দিনু পারাও ঝাতাই। ও লোগ ফরেনার হুঞ্ছ। 
সাঙ্গ কথাটা শেষ করতে পারে না।ঠিক এই সময়েই গাড়িটা জোরে শব্দ করে সামনের রাস্তা থেকে সরে গিয়ে বাঁদিকের সরু রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে পড়ে। 
-ইস! মধ্য বর্ষামা হুন সকনে প্রাকৃতিক প্রকোপকো ক্ষতি কম গর্নকা লাগি সরকারলে অহিলে নৈ যোজনা বনাউন জরুরী ছ। 
সাঙ্গ আর কোনো কথা বলতে পারে না। 
পিছনের সিটে ছোট মামা হয়তো ঘুমিয়ে গিয়েছিল, এতো জোরে গাড়িটা টার্ন নিতেই সামনের দিকে ডান কাতে হেলে পড়ে। 
শিঙি প্রায় জোরে চিৎকার করে ফেলে। 
সবাই যখন ধাতস্ত হল, দেখল সামনের গাড়িটা থেঁতলে গেছে। বেশ কিছু লোকজন জড়ো হয়েছে। ছোট মামা ঘাড়ে হাত বুলাতে বুলাতে বলে, আশ্চর্য সব ব্যাপার! এই সময়ে ল্যন্ডস্লাইড! বর্ষাকালে এই সব হয় শুনেছি। ঐ সময় পাহাড়ের ধারণ ক্ষমতা কমে যায়। কিন্তু এখন এই শীত শুরুর মরশুমে!  
রামসির মা অবশ্য অবাক হয় না।বলে, সব আমাদের জন্য। অনাবশ্যক আর অবৈজ্ঞানিক ভাবে পাহাড়ের তলা থেকে মাটি সরিয়ে রাস্তা তৈরি করছি, পাথর সরিয়ে নিচ্ছি, গাছ কেটে নিচ্ছি, হাজার হাজার বছরের ঘুম ভাঙাচ্ছি! তার একটা রিঅ্যাক্সন হবেই। সে তো সময় মানবে না। 
রাস্তার পাশ দিয়ে পেরিয়ে যাওয়া লোকটা সাঙ্গকে নীচু স্বরে কিছু বলে গেল। সাঙ্গ সঙ্গে সঙ্গে আমাদের জানাল, সামনের রাস্তা বন্ধ। ঘন্টাখানেক আগে হঠাৎ ওপর থেকে দুটো বড় বড় পাথর এসে গাড়ির ওপরেই পড়ে। তখনই কিছু লোক আহত হয় আর …  
রামসির মা ওকে আর বলতে দেয় না।
-বেশ তাহলে তুমি অন্যদিক দিয়ে চল। তোমার তো রাস্তা সব চেনা। 
-ন্যারো ম্যাডাম!  
-তা হোক। স্লো স্লো করকে চল।  
-এরা দেখছি আমার বেড়ানোটাই মাটি করে দেবে। ছোট মামা বেশ অসহিষ্ণু হয়ে পড়ে এবার। 
 ঠিক তখনই রামসি ছোটমামার কানের কাছে ফিসফিস করে বলে, এভাবেও তো মানুষ হারিয়ে যেতে পারে।  (ক্রমশ)
স্বর্ণদীপা পান। অষ্টম শ্রেণী। কেশপুর গার্লস হাই স্কুল। পশ্চিম মেদিনীপুর

গল্প
দেশের বাড়ি
শেষ পর্ব

কৃষ্ণা দাস

পরদিন ভোরে দাদু ঘুম থেকে উঠে সদর দরজার তলায় একটা চিঠি পেলেন।কেউ বাইরে থেকে দরজার তলা দিয়ে গলিয়ে দিয়েছে। চিঠিখানি পড়ে তিনি এতই ঘাবড়ে গেলেন যে ‘নর’ শব্দের শব্দরূপই ভুলে গেলেন। এত দিনের অভ্যাস স্নানের সময় কুয়োতলায় লাফিয়ে লাফিয়ে শব্দরূপ বলা, তা না বলে, না লাফিয়ে, ‘গুড বয়’এর মত স্নান করে নিলেন।নেড়ি আর মেনি উঠোনে রোদে শুয়ে আড় চোখে পিটপিট করে দাদুকে দেখছিল।হয়তো এমন আশ্চর্য ঘটনা তারা জম্মেও দেখেনি। 
     স্নান সেরে দাদু সবাইকে নিজের ঘরে ডেকে বললেন, “দেখো বাপু জানিনে কালু ডাকাত কে, কিন্তু এ চিঠিখানি সে পাঠিয়েচে। তোমরা এক এক করে পড় চিঠিখানি, তারপর তোমাদের মত কী, সেটি একবার শুনি।”
     সবাই এক এক করে পড়ল। ছোটকাকুর হাতে চিঠিখানি আসতেই তিনি থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে কোনও রকমে দেওয়াল ধরে বসে পড়লেন।তার পর মিনমিন করে বললেন “জান সে মার ডালুঙ্গা।”
     বড়জেঠু ঢোল কাঁধে ছৌ নাচের কায়দায় এক চক্কর ধাঁ করে ঘুরে গেলেন। ঢোলে তাল দিয়ে বললেন, “বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচাগ্র মেদিনী, লড়াই জমবে লড়াই।তোমরা আমাকে এখনো চেনোনি”                            
     মেজোজেঠু চিঠি পড়েই খিল খিল করে হাসতে থাকলেন। হাসি আর থামেই না। তিনি হাসির মধ্যেই কোনো রকমে বললেন, “ধরবো এক একটাকে, তার পর পুট করে দেব পোঁটা গেলে। ঠ্যাং ধরে চ্যাং দোলা ঝুলিয়ে, ঝুপ করে কুয়োয় দেব ফেলে। হি হি হি!হা হা হা।”  
      হইহট্টগোলের মধ্যে কাগজটা মাটিতে পড়ে গেল।ব্যাপারটা কী জানতে মাটি থেকে তুলে আমি পড়লাম।চিঠির বয়ানটা এমন- 
  
     “মাননীয় কর্তামশাই, 
         সবিনয় নিবেদন এই যে, আগামী পরশু অমাবস্যার রাত্রে আমি আমার শিষ্যদের লইয়া আপনার গৃহে আতিথেয়তা গ্রহণ করিব। আপনি আপনার পরিবার পরিজন লইয়া গৃহ ত্যাগ করিবেন। নচেৎ আপনার ধন সম্পত্তি লইতে বাধা প্রাপ্ত হইলে গুলি-গোলা, চাকু-ছোরার ব্যবহার হইবে। সে ক্ষেত্রে প্রাণহানি ঘটিতে পারে। যাহা হউক পত্র দ্বারা ডাকাতির সন্দেশ পাঠাইতে হইল বলিয়া মার্জনা করিবেন।
                            ---ভবদীয় কালু ডাকাত
পুনশ্চঃ -পুলিশের সাহায্য লওয়ার কথা মনেও আনিবেন না। আমার শিষ্যগণ সর্বত্র ষাঁড়ের মত চষিতেছে।মনে রাখিবেন এরূপ হইলে আপনার চার গুনধর নাতিকে এক সঙ্গে গিঁট বাঁধিয়া উহারা গেন্ডুয়া খেলিবে।
----                                                           
     চিঠির ওপর লাল কালি দিয়ে মরার মাথা অর্থাৎ করোটি আর তলায় আড়াআড়ি ভাবে দুটো হাড্ডি আঁকা। তলায় আবার লাল কালিতে লেখা ডেঞ্জার।   
     শেষ পর্যন্ত সবাই মিলে যুক্তি করে ঠিক হল কেউ বাড়ি ছেড়ে কোথ্থাও পালাবে না, বরং কালু ডাকাতের সঙ্গে লড়াই করবে।শুধু বাড়ির বউরা সব সন্ধে থেকে খিল এঁটে ঘরে থাকবে। রাতে সদর দরজা বরাবর উঠোনে বালতি বালতি মোবিল তেল ঢালা হবে। সদর দরজা বন্ধই থাকবে। ডাকাতেরা দরজা ভেঙে ঢুকলে অন্ধকারে মোবিল তেলে আছাড় খেয়ে মুখ থুবড়ে পড়বে। তখন এক একটার ঠ্যাং ধরে তুলে মেজোজেঠু কুয়োর ভেতর টুপ করে ফেলে দেবে। 
     ভূত-ভুতুমদাদা সব শুনে খুব খুশি। ওরাও ফিল্ডে নামবে। পাঁচিলের ওপর ভূতের নেত্য নেচে ডাকাতদের ব্লাড প্রেসার কমিয়ে বাড়িয়ে আগে থেকেই দুর্বল করে রাখবে। তবলা-ঢোল দাদা দুজনে যুক্তি করে বলল ওরা থাকবে ছাদে, ছাদের পাশের গাছ থেকে কাঁচা কৎবেল সংগ্রহ করে রাখবে। সেখান থেকে ডাকাতদের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র হিসাবে সেগুলো ছুড়বে।  
     বড়জেঠুর কাজ হল ডাকাত এলে ঢোল বাজিয়ে গ্রামবাসিদের বাড়িতে ডাকাত পড়ার খবর দেবে, যাতে পাড়ার লোক জেগে উঠে ডাকাত ধরতে ছুটে আসে। 
       
    এদিকে পরের দিন অমাবস্যার রাতে বাড়ির সবাই রেডি।সন্ধে থেকে ডাকাতের অপেক্ষায় লম্বা ঢালা বারান্দায় বসে বসে মশার কামড় খেয়ে একসময় সবাই ঘুমিয়ে পড়ল।আমি নিজের ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়লাম।মনে মনে ভাবলাম কেউ নিশ্চই বদমাসি করে এমন চিঠি লিখেছে আর তাই নিয়ে বাড়ি শুদ্ধু লোক শোরগোল ফেলেদিয়েছে।কিন্তু কিছুতেই ঘুম এলো না। তখন কত রাত জানা নেই সদর দরজায় কে যেন ঠকঠক করল। আমি কান খাড়া করলাম।শোবার ঘরের দরজা একটু ফাঁক করে দেখি ছোট কাকু ফ্যাঁসফেঁসে গলায় “ডাকাত ডাকাত” দু’বার বলেই তিন লাফে নিজের ঘরে ঢুকে খিল এঁটে দিলেন।
    আমি শোওয়া ছেড়ে পা টিপে টিপে বারান্দায় বের হলাম।
    এমনিতেই তখন লোডসেডিং চলছিল তার ওপর অমাবস্যা, ফলে একেবারে ঘুটঘুটে অন্ধকার। দাদু কাঁপতে কাঁপতে একটা হ্যারিকেন জ্বেলে বারান্দায় সিঁড়িতে এসে দাঁড়িয়েছেন। ভূত ভুতুম রেডিই ছিল। তড়াক করে পাঁচিলে উঠে সরুসরু কাঠির মত হাতপা নেড়ে ভূতের নেত্য জুড়ে দিল। তবলা আর ঢোলদাদা পড়ি কী মরি করে ছুটল ছাদে। সেখানে আগে থেকে জমা করে রাখা কাঁচা কৎবেল অন্ধকারে আন্দাজের উপর সদর দরজার বাইরে ছুড়তে লাগল।বড়জেঠু উঠোনে নেমে ছৌ নাচের কায়দায় চড়কির মত ঘুরছেন, আর প্রাণপণ ঢোল বাজিয়ে বিড়বিড় করছেন “সচী মাতা গোওও, ডাকাত এল বাড়ি, ওগো গ্রামবাসী এস ত্বরা করি”। তাঁকে দেখে মনে হচ্ছে কিছু একটা অপদেবতা বুঝি ভর করেছে, এই বুঝি ভালোমন্দ কিছু একটা ঘটে না যায়।
      মেজোজেঠুকে অন্ধকারে ঠিক দেখতে পেলাম না, তবে তাঁর হিহি হাসির শব্দ শোনা গেল।ভালো করে ঠাহর করে দেখি উঠোনে মেজোজেঠু মোবিল তেলে শুয়ে শুয়ে নিজে নিজেই স্লিপ খাচ্ছেন আর বাচ্চাদের মত হেসে খুন হচ্ছেন। যেন খেলা পেয়েছেন।হঠাৎ বড়জেঠু ‘বাবাগো’ বলে ঢোল শুদ্ধু ছিটকে পড়লেন উঠোনে। আর অমনি মোবিলে স্লিপ খেয়ে চোঁওঁওঁওঁ করে এগিয়ে গেলেন সদর দরজার দিকে। আসলে ছাদ থেকে দিকভুল করে একটা কৎবেল এসে পড়েছিল তাঁরই কেশহীন চকচকে মাথার তালুতে।
      ঢোলের আওয়াজ থেমে যেতেই ভয়ঙ্কর এক ভর্ৎসনা শোনা গেল। “রাতদুপুরে এসব কী হচ্ছেটা কী তোমাদের? ছিঃ! ছিঃ! ছিঃ!একি সুস্থ মানুষের আস্তানা নাকি...! আমাকে তোমরা কেউ দরজাটা খুলবে? নাকি এখান থেকেই ফিরেই যাব”? 
      সর্বনাশ এ যে বাবার গলা! ভয়ে সবাই ফ্যাকাসে হয়ে গেল। নিশ্চই বাবা দিল্লীর কাজ মিটিয়ে বাড়ি চলে এলেন, আর ট্রেন নিশ্চই লেট করেছে তাই বাড়ি ফিরতেও রাত হয়ে গেল।
      দাদু সঙ্গে সঙ্গে হাতে হারিকেন নিয়ে ছুটে গেলেন সদর দরজা খুলতে।কিন্তু মোবিল তেলে গেলেন হড়কে। তবুও বুকে সাহস নিয়ে স্কেটিং করার মত ভারসাম্য রাখার ভঙ্গিতে এগিয়ে গিয়েও শেষ রক্ষা হল না।সদর দরজার সামনে গিয়ে হারিকেন শুদ্ধু মুখ থুবড়ে পড়লেন।
     বেগতিক দেখে ভূত-ভুতুম দাদা পাঁচিলের ওপর দিয়ে গিয়ে তাড়াতাড়ি সদর দরজার শিকল খুলে দিল। বাবা তো রেগে টং। কিন্তু উঠোনে পা দিতে না দিতেই তিনিও সড়াৎ করে স্লিপ খেয়ে ব্যাগ সমেত কুপোকাত।তার পর যা হল সে এক ভয়াবহ ব্যাপার। মোবিল তেল মাখা চারটে কালো কালো প্রাণী উঠোনে কেঁচোর মত কিলবিল করছে।কে কোনটা আলাদা করে বোঝা যাচ্ছে না। তারা আপ্রাণ চেষ্টা করছে উঠে বসতে বা দাঁড়াতে, কিন্তু কিছুতেই তা পারছে না, কেবলই স্লিপ খেয়ে হড়কে যাচ্ছে। বড় করুণ অবস্থা তাদের।
     দেখে আমার এত হাসি পেল যে মুখে হাত চাপা দিলাম।সবাই গুরুজন, হাসা উচিৎ নয়।কিন্তু চাপতেই পারলাম না। মুখে হাত চাপা অবস্থাতেই আমি হিহি করে হেসে ফেললাম।আমাকে হাসতে দেখে ভূত-ভুতুম আর তবলা-ঢোল দাদাও হো হো করে হাসতে লাগল।ব্যাস তার পরই উঠোন থেকে মেজো জেঠুর হাসি শুরু হলো।প্রথমে হিহি, তারপর হাহা, শেষে হোহো শব্দে রাত দুপুরে পাড়া কাঁপতে লাগল।
    হঠাৎ চোখ গেল খোলা সদর দরজায়। পাড়াপড়শিদের কয়েকটা মাথা উঁকিঝুঁকি মারছে।কিন্তু তাদের মুখগুলো সব শুকনো। হাসির হইহট্টগোলের ভেতর কানে এল “ইশ ভয় দেখানোর এমন প্ল্যানটা পুরোই ফ্লপ”।বুঝলাম কাল্পনিক কালু ডাকাতের চিঠির মাধ্যমে এ বাড়ির সদস্যদের ভয় দেখিয়ে শোধ নিতে চেয়েছিল।উল্টে দেখা গেল সবাই হেসেই অস্থির।
     এদিকে হাসির হুল্লোড় শুনে বিপদ কেটে গেছে নিশ্চিত হয়ে দরজার খিল খুলে ছোটকাকু লম্ফ দিয়ে বেরিয়ে এলেন।মুষ্ঠিবদ্ধ হাত তুলে আস্ফালন করলেন, “কালু তুঝে নেহি ছড়ুঙ্গা, মার ডালুঙ্গা, মার ডালুঙ্গা!” কিন্তু হারিকেনের অল্প আলোয় দেখলেন উঠোনে কালো কালো ভয়ঙ্কর কিছু কিলবিল করছে।মুহূর্তে চোখ উলটে “বাবা গো” বলে মূর্ছা গেলেন।
   আমি আর দেরি করলাম না। হাতের কাছে একটা কাতার দড়ি পেয়ে বারান্দার থামে একটা প্রান্ত বেঁধে অন্য প্রান্ত ছুড়ে দিলাম উঠোনে।তাই ধরে বারান্দায় একে একে উঠে এলেন সবাই।তার পর সে মোবিল থেকে উদ্ধার পাওয়া এক ভয়ঙ্কর ব্যাপার।তবে আজ থাক।পরে না হয় কোনওদিন দেশের বাড়ির বাকি কথা বলা যাবে।আজ এই পর্যন্তই।
জয়দীপ সাহা
সপ্তম শ্রেণি,সোদপুর হাই স্কুল, উত্তর ২৪ পরগণা


সিকিম ভ্রমণ
স্বপ্ননীল পাত্র
ষষ্ট শ্রেণী, রামকৃষ্ণ মিশন স্কুল, মেদিনীপুর , পশ্চিম মেদিনীপুর


ভ্রমণ প্রিয় বাঙ্গালির অন্যতম প্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হল সিকিম। বরফের রূপালি চাদর পরে সিকিম এক অসাধারণ রূপ ধারণ করে, যা দেখে প্রাণখানা জুড়িয়ে যায়। আজ আমি সিকিমের নাথুলা ও তাঁর পার্শ্ববর্তী কিছু এলাকায় ভ্রমণের অভিজ্ঞতাই ভাগ করে নেব। এই
আমরা সিকিমে পৌঁছে হোটেলে গিয়ে উঠলাম। হোটেলটা মোটামুটি হলেও তার বারান্দা থেকে যে অপরূপ দৃশ্য দেখা যাচ্ছিল, তাতেই তার সব দোষ মাফ হয়ে গেল। পরদিন আমরা গাড়িতে চেপে রওনা দিলাম রূপালি নাথুলার প্রান্তরে। নাথুলায় পৌঁছে গরম থেকে এত দূরে স্বস্তির বরফ দেখে আমি আর নিজেকে সামলাতে পারলাম না, ছুটে গিয়ে গড়িয়ে পড়লাম বরফে। বেশ কিছুক্ষণ সেখানে কাটিয়ে আমরা গেলাম নতুন বাবার মন্দির দর্শন করতে। এই নতুন বাবা আসলে কোন দেবতা নন, যুদ্ধের শহীদ। স্থানীয়দের মুখে শুনলাম, মৃত্যুর পরও তিনি আমাদের দেশকে পাহারা দিয়ে চলেছেন, এই বিশ্বাসে তাঁকে আজও পুজো করা হয়। চিন আক্রমণের আগে তিনি নাকি ভারতীয় সৈন্যদের স্বপ্নে এসে আগাম সাবধানবাণী এবং চিন সম্পর্কে কিছু তথ্যও দিয়ে যান। এই মন্দিরে তাঁর বন্দুক ও হেলমেট রাখা আছে, যা সশ্রদ্ধায় পুজো করা হয়।
পরের গন্তব্য ছাঙ্গু লেক। ছাঙ্গু লেকে পৌঁছে হঠাৎ শরীর খারাপ করাতে আমি জায়গাটা ভালো উপভোগ করতে পারিনি। ওষুধ এবং খানিক পড়ে একটু গরম ম্যাগি খেয়ে সোজা হোটেলের দিকে রওনা দিলাম আমরা। হোটেলে ফ্রেশ হয়ে আমরা বেরোলাম এম. জি. মার্কেটের পথে। এম. জি. মার্কেটে ভারত ও তার সমস্ত বন্ধু দেশগুলির পতাকা এবং একটি বিশাল রেড পাণ্ডার মূর্তি দেখে ফিরে এলাম হোটেলে। রাতের খাওয়া সেরে বিছানায় শুতেই চোখ জড়িয়ে এলো ঘুমে। যখন ঘুম ভেঙে উঠে চোখ খুললাম তখন ভোরের আলোয় সিকিমের সৌন্দর্য দেখে নিলাম শেষবারের মত, তারপর চললাম দার্জিলিঙের পথে।
শ্যাম দেশ থেকে ফিরে বাসবদত্তা কদম
(চতুর্থ পর্ব) সমুদ্রকে ডান হাতে ফেলে যে রাস্তা ধরে সোজা চলে এলাম বিগ বুদ্ধ মাউন্টেন বা ‘প্রা তমনক’ পাহাড়ে, এই পাহাড় পাটায়া শহরের একটি সীমা। এ পাহাড়ের মাথা থেকে দেখা যায় পাটায়া শহরকে। দেখা যায় অপরূপা কো-লান কোরাল দ্বীপ।  
এই পাহাড়ে যাবার আগেই রাস্তায় পড়ে এক সুন্দর সাজানো পার্ক। এই পার্কটির নাম ‘ওয়াং সাম সিয়েন।’ আমরা নামলাম। পার্কের ভেতরে অজস্র গাড়ি রয়েছে কিন্তু গেট তালাবন্ধ। শুনলাম এই পার্কটিতে সর্ব সাধারনের প্রবেশ নিষেধ।
দূর থেকে যেটুকু দেখা যায় তাতে প্রথমেই দেখা যায়, পার্কটিতে অজস্র ফুল, চোখ টানবেই। চীন দেশের উপকথা এবং চীন দেশের ইতিহাসের বেশ কিছু অংশ সেখানে সুন্দর ভাবে সাজানো। এই পার্কে চীন দেশের দেবী মাদার গোয়ানিনের এক মূর্তি আছে। মাদার গোয়ানিনকে বলা হয় ‘লেডি বুদ্ধা’। ছবি তুললাম। তবে সেও প্রায় চুরি করে বলা যায়। তবে বাইরে কোথাও ছবি তোলা মানা একথা লেখা নেই।
এরপর একটু গিয়েই নেমে পড়লাম আবার। ড্রাইভার বললেন, এসে গেছে ‘বিগ বুদ্ধ মাউন্টেন’। যেখানে নামলাম, সেখান থেকেই দেখা যাচ্ছে ধ্যানরত বুদ্ধের এক বিশাল মূর্তি, মনে হচ্ছে সোনা দিয়েই তৈরি। সিঁড়ি উঠে গেছে পাহাড়ে। সিঁড়ির দুপাশের দুই রেলিঙে, পাহারায় দুই বিশাল ড্রাগন। সিঁড়ি দিয়ে ওঠার আগেই দুপাশে দুই মন্দির। তথাগতের পুজো চলছে সেখানেও। এমনকি সিঁড়ির পিছনদিকে, এই পাহাড়কে ঘিরেও বেশ কয়েকটা ছোট ছোট মন্দির, তবে সেগুলো তালাবন্ধ।  
বুদ্ধের এই ধ্যানগম্ভীর মূর্তি আমাদের সকলের বেশ পরিচিত। কিন্তু সিঁড়ি ভেঙে এই পাহাড়ে উঠলে দেখা যায় বুদ্ধের জীবনের বিভিন্ন সময়ের বেশ কিছু মূর্তি। প্রতিটি মূর্তিই বেশ বড়। দেখলে মনে হয় যেন সোনা দিয়েই তৈরি। তবে যে মূর্তিটি পাহাড়ের নীচ থেকে দেখা যায় অন্য কোনটিই তার মত অত বড় নয়। ঐ মূর্তিটি প্রায় ষাট ফুট লম্বা। বলা যায় একটি ছ’তলা বাড়ির সমান। 
চিত্রগ্রাহক বাসবদত্তা

সিঁড়ি দিয়ে উঠতেই একটি পাত্রে জল রয়েছে, সবাই সেই জল একটি ছোট বুদ্ধ মূর্তির মাথায় ঢালছেন। তবে সেটি সোনা রঙের নয়। কালো পাথরের।
ধ্যানরত বিশাল বুদ্ধ মূর্তিটির সামনে তার দিয়ে বানানো অনেকগুলি গাছ বসানো আছে। সে গাছে অজস্র থাই নোট গাঁথা। ভক্তরা গেঁথে দিয়ে যাচ্ছেন। ভগবান আর ভক্তির সঙ্গে সব ধর্মেই দেখেছি মানুষ টাকা পয়সা জুড়ে দেন। আমার ভালো লাগে না। তবে যাঁরা দেন তাদের ভালো লাগে নিশ্চয়ই। তবে মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণেও টাকা পয়সা অনেকই লাগে, ব্যাপারটাকে এভাবেই ভাবলাম। 
মন্দিরের সিঁড়ি যেখানে শুরু হয়েছে, পাহাড়ের নীচে যেখানে দুদিকে দুটি মন্দির। পূজারি আছেন। উপরে উঠেও আরেকটি সেরকম মন্দির। উপরের মন্দিরটির সামনে একটি কাঠের বেঞ্চের উপর অজস্র মূর্তি রাখা আছে। সেখানে গণেশ, সরস্বতী, লক্ষ্মী, নারায়ন এবং অন্য অনেক অচেনা মূর্তি। ভক্তেরা অনেকেই সেই সমস্ত মূর্তি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন বা মন্দিরে নিয়ে গিয়ে পুজো দিচ্ছেন। এখানে নিয়মিত পূজা হয় এবং হচ্ছে সেটা দেখতেই পেলাম। বুদ্ধদেবের বড় মূর্তির সামনে দেখি অনেক ছোট ছোট বুদ্ধ মূর্তি। 
এখানে বুদ্ধের নির্বাণ লাভের অনেকগুলি অবস্থা মূর্তির আকারে রাখা আছে। ধ্যানরত বুদ্ধের আশেপাশে তপস্যারত গৌতম, ভিক্ষুক গৌতম, অনশনরত অবস্থায় তিনি, শেষ শয়ানে বুদ্ধদেব, এরকম অজস্র মূর্তি ছড়িয়ে, ছিটিয়ে রাখা আছে। কিন্তু অগোছালো নয়। সাজাবার ধরনটা বেশ অন্যরকম। 
(পঞ্চম পর্ব) এই সমস্ত ছড়ানো ছেটানো মূর্তির মধ্যে যে মূর্তিটি দেখা যায় পাহাড়ের নীচের সিঁড়ি থেকে পাহাড়ের মাথার সেই মূর্তিটিই সব থেকে বড়। আগেই বলেছি এটি প্রায় ষাট ফুট লম্বা। অন্য মূর্তিগুলিও বেশ বড়, তবে ঐ ষাট ফুটের সমান বা আশেপাশে নয়। 
পাহাড়ের মাথায় অত বড় মূর্তি তা খুব সহজেই বহুদূর থেকে দেখা যায়। এগুলো কংক্রিটের তৈরী। উপরে সোনার জলের রঙ করা, তাই দেখে মনে হয় সোনার।
এখানে সব মন্দিরকেই বলা হয় ভাট(Wat)। এই মন্দিরটির শ্যাম দেশীয় ভাষায় নাম ‘ভাট ফ্রা ইয়াই’ ইংরেজিতে বলা হয় দেখলাম  ‘বিগ বুদ্ধা টেম্পল’। 
থাইল্যান্ড বা শ্যামদেশে এটা আমার দেখা প্রথম মন্দির। পরে যেখানেই গেছি, প্রায় সব জায়গাতেই দেখেছি এরকম বিভিন্ন মূর্তি, তার মধ্যে সরস্বতী, লক্ষ্মী, গণেশ, নারায়ণের মূর্তি রয়েছে বুদ্ধ মূর্তির আশেপাশে। বিশেষত যেখানে বুদ্ধদেবকে পুজো করা হয়। আর এখানে সোনালি রঙের বুদ্ধ মূর্তির আধিক্য দেখলাম বেশ বেশি। 
অন্যান্য মূর্তি দেখে আমার মনে হল, হয়ত খানিকটা হিন্দু এবং বুদ্ধ ধর্মের মিলন ঘটেছে এখানে। বুদ্ধ ধর্ম, একসময় আমাদের দেশ থেকেই ছড়িয়ে পড়েছিল, সারা পৃথিবীতে।
সবগুলি মূর্তি বেশ সুন্দর ভাবে খানিক দূরে দূরে রাখা। পিছনদিকে পর্যটকদের জন্য বসার জায়গা আছে। আরেকটি জায়গা রয়েছে বসে ধ্যান করার জন্য। পাহাড়ের মাথার পুরোটাই সমতল, বেশ বড় জায়গা। দেখলেই বোঝা যায়, পাহাড়ের উপরের এই অংশকে চেঁছে, একটা টেবিলের মত আকৃতি দেওয়া হয়েছে। 
মন্দিরটি শুনলাম বেশ পুরনো। পাটায়া শহর যখন শহর হয়ে ওঠেনি, ছিল এক ছোট্ট জেলেদের গ্রাম তখন থেকেই এ মন্দির আছে। 
এই মূর্তিগুলি তখন ছিল না। ধ্যানরত বুদ্ধ মূর্তিখানা বসানো হয়েছে ১৯৭৭ সালে। 
এ দেশের নব্বই ভাগের বেশি মানুষ বৌদ্ধ। বাকি দশের মধ্যে অন্যান্য সব ধর্ম।
তারপর যে কথা বলছিলাম, আবার ফিরে যাই সেখানে। 
পাটায়া শহরের দক্ষিণে এই প্রামান্তক পাহাড়ের মাথা থেকে পাটায়া শহর, কো লান নামক প্রবাল দ্বীপ এবং সমুদ্রকে দেখায় অপূর্ব সুন্দর। সেখানে বসা ধ্যান গম্ভীর বুদ্ধ মূর্তি, সমুদ্র এবং খোলা আকাশ সব যেন একসঙ্গে মিলে গেছে। দূরের লাইট হাউসের পিছনে তখন সূর্য লাল রঙে চারদিক ভরে মিশে যাচ্ছে সমুদ্রের মধ্যে।
প্রায় সন্ধে অবধি সেখানে থেকে আমরা নীচে নেমে এলাম। মন্দির শুনলাম খোলা থাকে রাত দশটা অবধি।
যেহেতু হোটেলের দরজা পেরোলেই সমুদ্র সৈকত, সেখানে রোজই যাওয়া হোতো। 
এরপর যেদিন একটু দূরে গেলাম সে এক ভাসমান বাজার। শ্যাম দেশের এ বাজারের গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম, তাই এ বাজার দেখতে যাবার আগ্রহ ছিল খুব। একটা গোটা বাজার নাকি ভাসছে জলের ওপর। আমাদের দেশে কাশ্মীরে ডাল লেকে শিকারায় করে সব কিছু বিক্রি হয়, তোমরা অনেকেই হয়তো দেখেও থাকবে। এখানে কিন্তু নৌকায় চড়ে বাজার কোথাও যায় না। নড়ে চড়ে না। পুরো বাজারের পাশ দিয়ে পায়ে হাঁটা রাস্তা বানানো হয়েছে কাঠের, সেই রাস্তায় হেঁটে দেখে নেওয়া যায় গোটা বাজার। 
আমরা চিরকাল জানি, বাজারে ঢুকে, লোকে পয়সা খরচ করে। এ বাজারে ঢোকার আগেই খরচা করতে হয়। টিকিট না কাটলে ঢোকা যাবে না এখানে।
(ষষ্ঠ পর্ব) ফ্লোটিং মার্কেটে ঢোকার টিকিট কাটা হল। সেখানেও লাইন। মূল্যও নেহাৎ কম নয়। ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় সাড়ে তিনশো টাকা। টিকিট নিয়ে বাজারে ঢোকা গেল। প্রথমেই বিরাট এক গেট। গেটের মাথায় ততোধিক বড় এক নৌকা, যাতে লেখা ফ্লোটিং মার্কেট পাটায়া। এর বাঁদিকে জলের ওপর দিয়ে রাস্তা আর রাস্তার ধারে সারি বেঁধে সব দোকান।
দোকানে পাওয়া যাচ্ছে আলপিন টু এলিফ্যান্ট। 
কোথাও দোকান ভর্তি ব্যাগ আর টুপি। কোথাও কাঠের জিনিস। কোথাও ছবি। কোথাও মেমেন্টো। কোথাও হাতে আঁকা ছবি বা সুঁচের কাজ। এ বাজার আমাদের মত পর্যটকদের আকর্ষণ করবার জন্যেই এভাবে রাখা হয়েছে। 
সকলেই চায় কোথাও বেড়াতে গেলে বাড়ির লোকেদের জন্য, বন্ধুদের জন্য কিছু না কিছু নিয়ে যেতে, এ জায়গাকে তার স্বর্গরাজ্য বলা যায় আর কি। সেখানে গেলে যা যা কিনবে বা কিনতে পারে, তার সমস্ত কিছুই থরে বিথরে সাজানো। দোকান আর জলের মাঝে কাঠের তক্তা দিয়ে বানানো রাস্তা। সে রাস্তা ধরে একটু এগোতেই দেখি নৌকো স্টেশন। এ ধরনের অভিনবত্ব সব পর্যটকদেরই বেশ পছন্দের।
নৌকো স্টেশন থেকে নৌকো ছাড়ছে একের পর এক। এই নৌকায় চড়ে পুরো মার্কেট টা ঘুরে দেখা যায়। অবশ্যই তার জন্য আলাদা টিকিট কাটতে হবে আবার। 
থাইল্যান্ডে এ ধরণের ফ্লোটিং মার্কেট আছে অনেকগুলো। ব্যাঙ্কক এবং তার আশেপাশে, পাটায়াতে। এই মার্কেট তৈরি যখন হয়েছিল, তখন তা সম্ভবত পর্যটকদের জন্য গড়ে ওঠেনি কারণ এই মার্কেটের তৈরির ইতিহাস বেশ খানিক পুরনো। অন্ততঃ তখন এ দেশ এতখানি পর্যটন এবং পর্যটক নির্ভর ছিল না। এ দেশ পর্যটক নির্ভর হয়ে উঠেছে ভিয়েতনাম যুদ্ধের পর থেকে। সেই সময় বেশ কিছু আমেরিকান সৈন্য পাটায়ার সৈকতে এসে ঘাঁটি গেড়েছিল। সেই থেকে ধীরে ধীরে পর্যটকদের কাছে থাইল্যান্ড বা শ্যামদেশ বেশ প্রিয় জায়গা হয়ে উঠল। এখন এ দেশের রোজগারের সিংহভাগ পর্যটন নির্ভর। 
পৃথিবীর সব জায়গার মত এ দেশেও সভ্যতা গড়েই উঠতো নদীকে কেন্দ্র করে। বাজারও তাই। এ দেশে এবং আরো কিছু দেশে বিক্রেতারা নিজেদের নৌকায় করে জিনিস নিয়ে আসতেন বিক্রি করবার জন্য। সে সবজি, মাছ অথবা সাধারণ গার্হস্থ্য সামগ্রী যাই হোক না কেন। এভাবেই আমাদের দেশের কিছু জায়গায়, বাংলাদেশে, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া এবং থাইল্যান্ডেও এ ধরণের মার্কেট গড়ে উঠেছিল নদী এবং খালকে কেন্দ্র করে। 
এধরনের মার্কেট থাইল্যান্ডে আছে বেশ কয়েকটা। কোথাও কোথাও নদী বা খাঁড়িতে বেশ কয়েক কিলোমিটার জুড়ে এর অবস্থান। রাতের অন্ধকারে অনেকেই এই মার্কেট দেখতে আসেন জোনাকিদের ওড়া উড়ি দেখতে। লক্ষ লক্ষ জোনাকি তখন ঘুরে বেড়াচ্ছে নদীর ওপর দিয়ে। নৌকায় বসে পর্যটকরা তাদের পিছন পিছন ধাওয়া করেন। 
তবে এখনকার পাটায়া ফ্লোটিং মার্কেট, একেবারেই পর্যটকদের আকর্ষণ করবার জন্য তা বোঝা যায় টিকিট কেটে ঢোকার ব্যবস্থা দেখলেই। কোনো বাজারেই টিকিট কেটে ঢুকতে হয় না কখনোই। কিন্তু এখানে হয়।
যে সমস্ত জিনিস বিক্রি হচ্ছে তার মধ্যে বেশ কিছু নৌকায় বিক্রি হচ্ছে খাবার জিনিস। তাতে সে দেশীয় ফল থেকে ভাজাভুজি, নুডলস, মাছ ভাজা এবং কুমির ভাজা বিক্রি হতে দেখলাম। বাজারের সেই যে কাঠের রাস্তা, তার ধার ঘেঁষে বেশ কিছু চেয়ার পাতা আছে খরিদ্দারদের বসবার জন্য। দু একজনকে বসে কুমিরভাজা খেতেও দেখলাম সেখানে। খাওয়ার জন্যেই রাখা আছে। আমাদের যেমন মাছ ভাজা। আর আছে অজস্র স্যালাডের দোকান। এদেশে স্যালাড খুব জনপ্রিয় খাদ্য। তবে কিনা কুমির ভাজা চট করে খেতে দেখা যায় না কোথাও, এখানে যত অহরহ চোখে পড়ে।
তবে এই জায়গায় শুধু দোকান এবং দোকানদার আর নৌকা নয়, বেশ কিছু প্রদর্শনী সাজিয়ে রাখা রয়েছে। পুরনো দিনের কৃষক, তাদের ব্যবহার করা যন্ত্রপাতি, পুরনো দিনের বাজারের নৌকা, তার তৈরির পদ্ধতি, প্রাচীন রান্নাঘর, এগুলো সবই রাখা আছে, আর তার পাশে বানিয়ে রাখা আছে সেই সময়কার মানুষদের স্ট্যাচু; তারা কিভাবে কাজগুলো করতেন, সেগুলো। এ অনেকটা মিউজিয়মের মতো। 
ঘুরে দেখতে, দেখতে সকাল থেকে দুপুর গড়িয়ে এলো। কাঠের রাস্তা দুটো, তাকে জোড়া হয়েছে ব্রিজ দিয়ে। ব্রিজের নীচ দিয়ে নৌকা যাবার রাস্তা।
আমরা কিনলাম স্যালাড আর কোকোনাট স্মুদি। ডাবের শাঁস দিয়ে বানানো সেই স্মুদি বা ঘন সরবতের ভক্ত হয়ে গেছিলাম আমি এর পর। এতটাই সুস্বাদু। 
          
    (ক্রমশ)

স্মরণীয় দিবস
জাতীয় চিকিৎসক দিবস 
(১লা জুলাই)
কলমে - দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে


চিকিৎসা এমন এক পেশা, যে পেশার মানুষদের আমরা ঈশ্বরের মর্যাদা দিই, কারণ তারা না থাকলে শারীরিক ও মানসিক রোগ থেকে মানুষেরা মুক্তি পেতে পারবে না।
 চিকিৎসা সেবা এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে চিকিৎসক এবং রোগীর সম্পর্ক হচ্ছে অন্যতম প্রধান বিষয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিনটি পরিচিতি পায় ৩রা মার্চ ১৯৩০ সালে। মার্কিন দেশেই প্রথম অনুষ্ঠানের মাধ্যমে চিকিৎসক রোগীর সম্পর্কের ব্যাপারটি গভীরভাবে আলোচিত হয়।
এরপর মার্কিন রাষ্ট্রপতি জর্জ বুশ (সিনিয়র) ১৯৯০ সালের ৩০ অক্টোবর ঠিক করেন যে, ৩০শে মার্চ দিনটিকে জাতীয় চিকিৎসক দিবস হিসেবে পালন করা  হবে এবং এই জন্য আইন পাসও করেন।
ভারতে এই দিনটি ১লা জুলাই তারিখে কিংবদন্তি চিকিৎসক ও পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী ডক্টর বিধান চন্দ্র রায়ের(১লা জুলাই ১৮৮২-১লা জুলাই ১৯৬২) সম্মানার্থে পালন করা হয়।
কিউবাতে ৩রা ডিসেম্বর এবং ইরানে ২৩শে আগস্ট দিনটি চিকিৎসক দিবস হিসেবে পালিত হয়।
ডঃ বিধান চন্দ্র রায় একজন বিশিষ্ট চিকিৎসক, শিক্ষাবিদ, স্বাধীনতা সংগ্রামী ও রাজনীতিবিদ ছিলেন।
১লা জুলাই দিনটি আমাদের কাছে বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য কারণ আমাদের সুস্থতার উন্নতি ও সুরক্ষায়, চিকিৎসক আর স্বাস্থ্য সেবা পেশাদারদের অমূল্য অবদান কে স্বীকৃতি দেয়। দিনটি স্বাস্থ্য সেবা কর্মীদের কঠোর পরিশ্রমের অবদানের জন্য উদযাপন করা হয়।
চিকিৎসক দিবসের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে হলে বলতে হয় যে, দেশের চিকিৎসক এবং চিকিৎসা পেশাজীবীদের অবদান ও সেবা কে সম্মান জানানোর জন্য প্রতিবছর ভারতে পয়লা জুলাই দিনটিকে ভারতে জাতীয় চিকিৎসক দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ভারতের ইতিহাসে অন্যতম স্বনামধন্য চিকিৎসক বিধানচন্দ্র রায়ের জন্ম ও মৃত্যু বার্ষিকী স্মরণে এই দিনটি তাৎপর্যপূর্ণ।
ডঃ বিধানচন্দ্র রায় ভারতে চিকিৎসা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ডঃ বিধান চন্দ্র রায় ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৬২ সাল অর্থাৎ তার মৃত্যুর দিন পর্যন্ত এই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন।
চিকিৎসা ক্ষেত্রে ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায়ের অবদান এবং ভারতের স্বাস্থ্য সেবা উন্নত করার জন্য তাঁর প্রচেষ্টার স্বীকৃতি স্বরূপ ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন ভারতের চিকিৎসক দিবস পালনের সূচনা করে। প্রথম জাতীয় চিকিৎসক দিবস সূচনা হয়েছিল ১৯৯১ সালে তাঁর জন্ম শতবর্ষের এক বছর পরে।
এই দিনটি স্বাস্থ্যসেবা প্রচার থেকেজীবন বাঁচাতে এবং সার্বিক কল্যাণে চিকিৎসকদের নিঃস্বার্থ সেবাকে স্বীকৃতি দেওয়া ও প্রশংসা করার সুযোগ করে দেয়। বলা যেতে পারে এই দিবস পালন এক ধরনের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ডাক্তারদের চিকিৎসা ক্ষেত্রে নিঃস্বার্থভাবে অবদানের জন্য।
স্বাভাবিকভাবে বলা যেতে পারে, ভারতে জাতীয় ডাক্তার দিবস গুরুত্বপূর্ণ, কারণ চিকিৎসা পেশাকে সম্মান দেওয়া, চিকিৎসকদের সম্মানিত করা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য।
প্রত্যেক দিবসের একটি থিম থাকে এই বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের চিকিৎসক দিবসের থিম হল "Celebrating resilience and heeling hands"
আনিশা পারভীন।
অষ্টম শ্রেণী। কেশপুর গার্লস হাই স্কুল

পাঠ প্রতিক্রিয়া
( ১৩৮ তম ছোটোবেলা পড়ে শ্রীছন্দা বোস যা লিখলেন)

জ্বলদর্চির  ১৩৮ সংখ্যায় পার্থ  দাসের জগন্নাথের চিত্রটি বড়ই  সুন্দর। এই কয়েকদিন
আগে রথ যাত্রার উৎসবে সবাই আনন্দে মেতে উঠেছিল। আর সেদিন থেকেই শারদৎসবের সূচনা। শ্রীকান্ত অধিকারীর 'লাচুঙের নেকড়ে' ধারাবাহিক গল্পটি পড়তে পড়তে মনে হোল ধ্যান গম্ভীর পাহাড় তো এমনিতেই সুন্দর, তার সাথে যদি অরণ্য যোগ হয় তাহলে সেটা হয়ে ওঠে অনন্য।
বিশেষ করে কাঞ্চনজঙ্ঘার
দৃশ্য তো অপূর্ব, কাঞ্চনজঙ্ঘার  বরফের ওপর যখন সূর্যের আলো এসে পড়ে তখন দেখে মনে হয় স্বর্গীয় শোভা। এখানে উল্লেখ আছে লেপচারা কাঞ্চনজঙ্ঘাকে  দেবতা বলে মানে। যেমন আমাদের ' গোবর্ধন ' পাহাড় কে  দেবতা বলে মানা হোত। এই গল্পটির কথোপকথন এত জীবন্ত যে মনে হয় আমিও ওদের সঙ্গে যাচ্ছি। আবার মাঝে মাঝে রোমাঞ্চকর পরিবেশে কেমন জানি ভয় ভয় করে। অনন্যা দাসের ছোট্ট কবিতাটি কী সুন্দর ছন্দ ও মাত্রার মেলবন্ধনে, তার সাথে ভাষার ভাবখানাও বেশ। কৃষ্ণা  দাসের  ' দেশের বাড়ি '  শুরু হোল ধারাবাহিক ভাবে। গল্পটি এত হাসির যে ছোটরা খুবই মজা পাবে। তবলা  ও ঢোলের  কীর্তি,
আম  জাম চুরি করে বেড়ানো,
ওদিকে  ' ভূত ' ও ' ভুতুমের '
কান্ড কারখানা পড়ে  হাসতে হাসতে  দম বন্ধ  হয়ে গেল।
অনেকদিন বাদে হাসির খোরাক পাওয়া গেল। বাবা : অন্ধকারে ভূত ও ভুতুমকে কেউ দেখলে যে ভয়ে অজ্ঞান হয়ে যাবে। পীযুষ প্রতিহারের লেখা
' ভোট ' ছড়াটি বেশ মনোগ্রাহী। সত্যি তো ছোটদের মনে এই প্রশ্নটি  ওঠা স্বাভাবিক। ছোটদের মনের মতন লেখা কবিতাটি। রবীন্দ্রনাথ ছোটদের মনের ভাষা বুঝতেন বলে লিখছেলেন ----------
" রবিবার সে কেন, মা, গো
           এমন দেরী করে?
ধীরে ধীরে পৌঁছয় সে
       সকল বারের পরে। "----
বাসবদত্তা দির শ্যাম দেশ নিয়ে ধারাবাহিক ভ্রমণ কাহিনীটি  অসামান্য। এই দেশটির প্রাকৃতিক শোভা অপূর্ব। বেড়ার মধ্যে ছোট বাচ্চাদের স্নান শেখা, বা সেখানকার মানুষের সমুদ্র নির্ভর জীবিকা যাপনের কথা
পড়ে  ভালো লাগলো। যেখানে বেড়াতে যাওয়া যায়। সেখানকারই স্থানীয় খাওয়াটা
যে মজাদার শেখা গেল। এটা জানতাম না। ওখানকার খাবারের নাম গুলো বাবা কী অদ্ভুত। "বিগ বুদ্ধ মাউন্টেন" দেখার
ইচ্ছে রইলো। উল্টোরথ নিয়ে দোলনচাঁপা তেওয়ারী  দে খুব সুন্দর তথ্য
দিয়েছে। বৃষ্টি ভেজা আষাঢ়ের বাতাসে পাঁপড় ভাজার গন্ধ মনে করিয়ে দেয় রথ যাত্রার কথা। তবে এই রথ যাত্রা জগন্নাথের নয়, এই রথ মানে একালের প্রাইভেট কার  বা রিক্সার মতন নিছক এক যানবাহন। আগে রথ টানতো ঘোড়ায় আর এখন টানে ভক্তজন। বৈদিক সাহিত্য থেকে শুরু করে  মহাকাব্য, পুরাণেও রয়েছে রথকথা। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ ছিলেন অর্জুনের রথের সারথি। এখানে তথ্য গুলি খুব সুন্দর ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এই রথযাত্রার শিক্ষা  হোল আমাদের হৃদয় ও মনে বিরাজমান ভক্তদের সমাবেশ
দ্বারা ঐশ্বরি  রথ টানা মানুষের একতা, বহুত্ব ও ভ্রাতৃত্বের স্থাপন করে। এছাড়া রথযাত্রা শারদৎসবের সূচনা করে। অঙ্কনের কথা কিন্তু ভুলে যাইনি। সাথী পুইল্যার প্রাকৃতিক দৃশ্যের স্কেচ টি খুব সুন্দর। রঙের মিলটি  অসাধারণ। বাহ্  মাকসুদার ছবিটি কী সুন্দর! কিন্তু মেয়েটি কী রাগ করেছে? নাকি পাহাড় দেখছে
মুগ্ধ হয়ে। খুব সুন্দর।
রূপা চক্রবর্তীর পাঠপ্রতিক্রিয়া টি ভালো লাগলো। ছোটদের জন্য মতন করে লেখার স্টাইলটি অভিনব।
অবশেষে আসি সম্পদকীয়তে, মৌসুমী দি যা লেখেন স্বল্প পরিসরে মোটামুটি সবগুলো লেখার ছোঁয়াই দিয়ে দেন। স্টাইল অসম্ভব সুন্দর। লেখার ভাব ও ভালোবাসা ছোটদের প্রতি এক অভিনব ছন্দে ফুটে ওঠে।
অনেক শুভেচ্ছা জানাই। পত্রিকাটির জন্য শুভকামনা
জানাই দিনে দিনে পল্লবিত
হয়ে উঠুক।।

🍂





Post a Comment

0 Comments