জ্বলদর্চি

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা ১৪০

ছোটোবেলা ১৪০
সম্পাদক -মৌসুমী ঘোষ 
চিত্রগ্রাহক ঋপণ আর্য

সম্পাদকীয়,
স্কুলবেলায় আমাদের পড়াশুনার সঙ্গে সঙ্গে হাতের কাজ করতে হতো। তোমরা বলবে আমাদেরও তো প্রজেক্ট করতে হয়।  সেটা তো আমি জানি।  কিন্তু হাতের কাজের মজা হল তোমার যা ভালো লাগে বানাতে পারো। অবশ্য কোনো স্কুলে সেটাও বলে দিতো কে কি বানাবে। তবে বেশিরভাগ ছেলে মেয়েরা বানাতো, মাটির ফল, কাগজের ঘূর্ণি, মোমের পুতুল, দেশলাই বাক্সের চেয়ার-টেবিল..... ঐ যে প্রচ্ছদের ছবিতে দেখো ওরা কেমন বানিয়েছে। কি সুন্দর না! ঋপণ আঙ্কেল ছবি তুলে পাঠানো মাত্রই আমি তোমাদের জন্য ছোটোবেলার দপ্তরে ছবিটা জমা করলাম। অভিষিক্তার আঁকা ফুল গাছটা দেখেই আমার দারুণ আনন্দ হল। আয়ুস্মিতাও গাছ লাগানোর ছবি এঁকে পাঠিয়েছে। এখনই তো গাছ লাগানোর সময়। বর্ষাকালে গাছ লাগাতে হয়। বৃষ্টির ছড়া লিখতে হয়। বর্ষার ছড়া লিখে পাঠিয়েছেন চন্দ্রশেখর জেঠু। তোমাদের বন্ধু রাহুল অঙ্ক পরীক্ষার গল্প বলেছে। আর সেই গল্প শুরু হয়েছে বৃষ্টি দিয়ে। যতই বৃষ্টি হোক লাচুঙের নেকড়ের কথা আমরা ভুলি নি। দুঃখ একটাই নেকড়ে এখনো দেখা গেল না। বন্দনা পিসি পুরোনো দিনের কথা বলেছে খুব সুন্দর করে। জানা অজানা এই কথাগুলোই তোমরা ইতিহাসে পড়ো। সুতরাং আজকের ছোটোবেলা পড়লে সবেরই ক্লাস হবে, অঙ্ক, ইতিহাস, ছড়া, সাধারণ জ্ঞান, আঁকা,....  সাধারণ জ্ঞান কোনটা? ঐ যে দোলনচাঁপা আন্টি প্রতিবার স্মরণীয় দিবসের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, সেটা। এবারে কী স্মরণ করালো আমি আগে বলব না। তোমরা পড়ে নাও। তারপর নীতা পিসির মতো কাগজ কলম নিয়ে বসে যাও পাঠপ্রতিক্রিয়া লিখতে। নীতা পিসি বিধান চন্দ্র রায়ের জীবনের একটা মজার গল্প বলেছেন, সেই গল্প তোমাদের কেমন লাগলো লিখে জানিও। সত্যি কোনো ডাক্তার কাউকে যদি রোজ রসোগোল্লা খেতে বলতো কী মজাই না হতো তার। কি হতো কিনা!  - মৌসুমী ঘোষ।

ছড়ার বৃষ্টি
চন্দ্রশেখর ঘোষ

টাপুর টুপুর
বৃষ্টি দুপুর
বাজছে নূপুর
খেলছে দেখো কি খেলা
জল থৈ থৈ
ভাসছে কই
ওলো সই
জলকে চল এই বেলা
নিরবধি
ঝরে যদি
ভাসায় নদী
ভাসবে ঢেউ নদীর গায়
জমা জলে
উঠোন তলে
খেলাচ্ছলে
কুমির ডাঙা খেলবো আয়।
আয়ুস্মিতা সামন্ত। নার্সারী।
সরস্বতী শিশু মন্দির। মেদিনীপুর

পুরানো সেই দিনের কথা
বন্দনা সেনগুপ্ত


পুরোনো দিনের কথা? কত পুরোনো? কে জানে! একেবারে ঠিক ঠিক তো কেউ জানে না, তাহলেও ধরে নাও হয়ত আড়াই তিন হাজার বছর আগের কথা। ও বাবা! হ্যাঁ গো। তখন যীশু খ্রীষ্টের জন্মও হয় নি। মহেঞ্জোদাড়ো, ইন্ডাস ভ্যালি সিভিলাইজেশন হয়ত তখনও রয়েছে। মৌর্য ও তারপর গুপ্ত সাম্রাজ্য এবং সভ্যতার বিকাশ হচ্ছে। গৌতম বুদ্ধ এসেছেন বা আসবেন তাঁর জীবনের বাণী নিয়ে। কত নগর, রাজধানী, মঠ, মন্দির, স্থাপত্যের বিকাশ হচ্ছে। আবার কত রাজা ও রাজত্বের অন্তিম দিনও হয়ত এগিয়ে আসছে।

তেমনিই ঘটনা ঘটে চলেছিল পৃথিবীর অন্যান্য জায়গায়। সুমেরিয়া, মেসোপটেমিয়া, ব্যাবিলন, পারস্য, ইত্যাদি নানা জায়গায় নানান রাজবংশ আসছে। কৃষি ও শিল্পের উন্নতি করতে চাইছে। কালের কপোলতলে নিজেদের চিহ্ন চিরস্থায়ী করার জন্য তারা তৈরী করছে জনপদ, মন্দির, এবং অন্যান্য স্থাপত্য। 

সবাই জানে এক না একদিন দেহের বিনাশ হবে। তাই, বর্তমান সময়ের উন্নতির সাথে সাথেই চলছে পরকালের চর্চা। ভারতবর্ষে আমরা মন দিয়েছি আত্মার উন্নতিকল্পে। গণিত, গ্রহ-নক্ষত্রের চর্চা, বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, অধ্যাত্ম চর্চা, ইত্যাদির যে অসাধারণ উন্নতি হয়েছিল আমাদের দেশে, আমরা এখনও বোধহয় তার সম্পূর্ণ মর্মোদ্ধার করতে পারিনি। আমাদের মুনি ঋষিরা তখন যা লিখে গিয়েছেন, তার উপর নির্ভর করে ইউরোপ আমেরিকায় এখনও গবেষণা চলছে । 

আর, বিদেশে তখন চর্চা চলছে যে কিভাবে, এমনকি মৃত, দেহকেও নষ্ট না করে সংরক্ষণ করা যায়, আসছে মমিফিকেশন, পিরামিড, নেক্রোপোলিস ইত্যাদি। 

আমার গল্প এই সময়ের।

এক যে ছিল রাজা।  শ্রীমান রাজা হয়েই প্রথমে নিজেকে একজন শক্তিশালী পরাক্রান্ত সম্রাট প্রতিপন্ন করতে চাইলেন। আমাদের এখানে রাজারা এই উদ্দেশ্যেই অশ্বমেধ যজ্ঞ করতেন। কিন্তু, আমার গল্প তো এখানকার নয়, বরং এখনকার মধ্যপ্রাচ্যের। কাজেই সেখানে তিনি প্রথমে নিজের সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী করে তুললেন। তারপর আশেপাশের যে সমস্ত রাজ্য তাঁর জন্য সমস্যা তৈরী করতে পারতো, তাদের যুদ্ধ করে হারিয়ে বশ্যতা স্বীকার করালেন। কিন্তু, একটি সাম্রাজ্য তাঁর জন্যে বিশেষ অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারত, যাকে যুদ্ধে পরাজিত করা তাঁর জন্যে সহজ ছিল না। কি করা যায়! শেষে চিরকালীন যে সমাধান, তাইই ঠিক হল। কি সেই সমাধান, যাতে সাপও মরবে আর লাঠিও ভাঙবে না। অর্থাৎ কিনা, রাজার সম্মান ও রাজত্ব, দুইই বজায় থাকবে! তোমরা কেউ ধৃতরাষ্ট্র ও গান্ধারী বা যোধা আকবরের গল্প জানো কি? সেই একই ব্যবস্থা, বিয়ে দিয়ে দাও। নিজের মেয়ে থাকলে, তাকে বিয়ে দিয়ে পাঠাও। অথবা, অন্য রাজ্যে বিবাহযোগ্য রাজকন্যা থাকলে, বিয়ে করে নিয়ে এস। আমাদের শ্রীমানও  সেই পরাক্রমী রাজ্যের রাজকন্যাকে বিয়ে করার আগ্রহ প্রকাশ করে ঘটক পাঠালেন সে রাজ্যে। সেই রাজ্য শুধু সামরিক ভাবেই শক্তিশালী ছিল না, ছিল সুজলা, সুফলা, শস্য শ্যামলা এক অপূর্ব দেশ। সেই রাজা দেখলেন যে অকারণ যুদ্ধ বিগ্রহ করে নিজের এই সোনার রাজ্যের ক্ষতি না করে বরং শ্রীমানের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দেওয়াই বুদ্ধির কাজ। এই পরাক্রমশালী সম্রাটের সঙ্গে বিয়ে হলে মেয়েও সুখে থাকবে আর প্রজাবর্গ নিয়ে আমিও স্বস্তিতে থাকব!   

মহা ধুমধামে বিয়ে হয়ে গেল। শ্রীমতী স্বামীর ঘর করতে এলেন। সবই ভালো, কিন্তু তাঁর মনে সুখ নেই। তা বিয়ের পর নিজের মা, বাবা, ঘরবাড়ি, সব ছেড়ে এসে মেয়েদের মন কেমন করতেই পারে, কিন্তু এঁর মন খারাপ ছিল দীর্ঘস্থায়ী। শেষে অনেক মানভঞ্জনের পরে ধীরে ধীরে শ্রীমান জানতে পারলেন শ্রীমতীর কষ্টের কারণ! আগেই বলেছি, শ্রীমতীর দেশ এক অপূর্ব শস্য শ্যামল দেশ, চোখ খুলে তাকালেই মন ভাল হয়ে যায়। আর এখানে? প্রানধারণের উপযোগী চাষবাস হয়, খর্জুরবিথীও আছে। কিন্তু, যে শ্যামলিমায় শ্রীমতি অভ্যস্ত, তা এখানে চিন্তাও করা যায় না। আচ্ছা, এই ব্যাপার! কুছ পরওয়া নেই। আমার সম্রাজ্ঞী কষ্টে থাকবে, তাই কি আমি হতে দিতে পারি। 

অতএব, মন্ত্রী, যন্ত্রী, শিল্পী, বাস্তু শিল্পী, স্থপতি সবাই এলেন। সবচেয়ে বড় অসুবিধা শ্রীমানের দেশকে মোটেই সুজলা বলা যায় না। আর, কে না জানে, সুজলা না হলে সুফলা বা শস্য শ্যামলা দেশ গঠন করা মুশকিল। এবারে আসরে নামলেন, শ্রীমানের আরেক রানী, সুশ্রী। তিনি অসম্ভব বুদ্ধিমতি। তিনি নাকি এত বুদ্ধিমতী ছিলেন যে দেশের এক অস্থির সময়ে নিজ নাবালক পুত্রের বকলমে রাজ্য শাসন করে জনগণকে এতো সুখে শান্তিতে রেখেছিলেন, যে তারা তাঁকে প্রায় দেবীর প্রর্যায়ে উন্নীত করে ছিল। যাই হোক, তিনি তাঁর বুদ্ধিবলে এক জলপ্রবাহ ব্যবস্থার পরিকল্পনা করলেন। মাটি ও বালিপাথর দিয়ে তৈরী হল এক সুউচ্চ পাহাড়। সেই পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে সুকৌশলে প্রায় ৮০ কিলোমিটার লম্বা ভূগর্ভস্থ প্রণালী খনন করা হল। পৃথিবীতে প্রথম হাইড্রলিক সিস্টেম ব্যবহার করে জলকে প্রথমে উপরে তুলে পয়ো প্রণালীর মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত করা হল, যাতে সারা বছর সেই জল নিজে নিজেই প্রবাহিত হতে থাকে। তারপর সেখানে লাগানো হল যত রকমের সম্ভব ফল ও ফুলের গাছ। সযত্ন পরিচর্যায় কিছুদিনের মধ্যেই সেই পাহাড়টিই একটি উদ্যানে পরিণত হল। বিভিন্ন বৃক্ষরাজি সমন্বিত এই পাহাড়টিকে দেখলে তখন মনে হত গাছেরা যেন ধাপে ধাপে অনেক উপর থেকে নেমে এসেছে। সেই ধাপের মধ্যে দিয়ে ঘুরে ঘুরে সেই উদ্যানে বেড়ানোও যায়। সুশ্রীর পরিকল্পনায় শ্রীমতীর মন খুশি। নিজ শয়ন কক্ষের বাতায়নে বসেই এখন তিনি প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। 

কেউ কি বুঝতে পেরেছ আমি এতক্ষন কিসের গল্প বললাম! আমি প্রাচীন পৃথিবীর সাতটি আশ্চর্যের অন্যতম ব্যাবিলনের শূন্যোদ্যান বা  হ্যাঙ্গিং গার্ডেন অফ ব্যাবিলনের কথাই বলছি। সাতটি আশ্চর্যের মধ্যে একমাত্র এইটিকেই নিঃসন্দিগ্ধ ভাবে খুঁজে পাওয়া যায় নি। হয়ত ইউফ্রেটিস বা টাইগ্রিস বা অমনি কোন নদীর তলায় ডুবে হারিয়ে গেছে যেখানে আর্কিওলোজিক্যাল খনন চালানো এখনো পর্যন্ত সম্ভব হয় নি। পাওয়া যায় নি তখনকার সময়ের কোনো শিলালেখ বা চিত্র। সেই সময়ের বেশির ভাগ বই বা লিখিত বিবরণ এবং বর্ণনাও এখন আর পাওয়া যায় না। পরবর্তী কালের লেখায় উল্লেখ বা উদ্ধৃতি মাত্রই পাওয়া যায়। ব্রিটিশ মিউজিয়ামে (সাধারন দর্শকের জন্যে নয়) একটি অরিজিনাল প্যানেল আছে যাতে এই উদ্যানের প্রতিকৃতি আছে। তাছাড়া, ব্যাবিলনের রাজকীয় প্রাসাদে কিছু ভগ্ন স্তুপ, কূয়োর মতন জলাধার, চেন-পুলির ধরনের ব্যবস্থা দেখা গিয়েছে, যা হয়ত কখনও সেই শূন্যোদ্যানের অংশ ছিল। 

শূন্যোদ্যান সত্যিই ছিল কিনা যেমন জানা যায় নি, থেকে থাকলেও কোথায় ছিল তারও সঠিক খোঁজ পাওয়া যায় নি। কে বানিয়ে ছিলেন, তাঁর নাম নিয়েও মতদ্বৈধ রয়েছে। সেজন্যই আমি এখানে কারুরই নাম দিলাম না। 
প্রত্নতাত্ত্বিকরা বসে নেই।  কাজ চলছে। কে জানে, হয়ত তোমাদের মধ্যে থেকেই কেউ ভবিষ্যতে বিশ্বের সকলকে আসল খবরটি জানাবে।

অপেক্ষায় থাকলাম।
অভিষিক্তা দাস
 দ্বিতীয় শ্রেণী। নিবেদিতা বিদ্যাপীঠ, ব্যারাকপুর, উত্তর ২৪ পরগণা

গল্প
স্বপ্নের বিশ্বাসঘাতক
 রাহুল পাত্র 
অষ্টম শ্রেণি,মেদিনীপুর টাউন স্কুল হেরিটেজ, পশ্চিম মেদিনীপুর

গতকাল থেকেই বৃষ্টি পড়ছে। এখন ভোর পাঁচটা বাজে তাও একেবারে থেমে যায়নি। হ্যারিকেনটা জ্বালিয়ে রেখে আমি আর মা পাশাপাশি বসে আছি। অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তার শাসনে সক্কাল সক্কাল উঠে আমি অংক কসছি ; কারণ আজ আমার অংক পরীক্ষা। অংকে আমি বরাবরই কম নাম্বার পাই।
সেকারণে মা শেষ রক্ষাটুকু করতে চেয়েছিলেন।
সারাদিনের কাজ শেষে মা যখন ভীষণ ক্লান্ত আমিও আকাশ পাতাল ভাবতে শুরু করলাম। ঘোর কাটতেই দেখি ঘড়িতে ৬ টা বেজে ১০ মিনিট। চটজলদি ফ্রেশ হয়ে মায়ের আশীর্বাদ নিয়ে ভীত মনে পরীক্ষা দিতে গেলাম। স্কুল পৌঁছে গেটের সামনে দেখি তাচ্ছিল্যে ভরা মজার ভঙ্গিতে রমেশ আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ও গণিতে দুর্দান্ত হওয়ার সুবাদে ওকে মৃদু কন্ঠে বললাম -আমি তোকে ভূগোলে সাহায্য করেছি। সুতরাং তুই আজ আমায় সাহায্য করবি কিন্তু!
তৎক্ষণাৎ স্কুলের ঘন্টা বাজলো। আমরা ক্লাসে ঢোকার পরক্ষণেই স্যার এলেন। তিনি 'রোল কল' করার পর গম্ভীরভাবে আমাদের হাতে প্রশ্নপত্র ধরিয়ে দিলেন। অনেকক্ষণ ধরে প্রশ্নের এপিঠ ওপিঠ  উল্টে দেখলাম প্রায় সবই আমার অজানা ছিল। তখন খুব ভেঙ্গে পড়লাম। ইতিমধ্যে রমেশের কথা মনে পড়তেই এক শান্তির আভাস পেলাম। কিন্তু ওকে যেই না জিজ্ঞাসা করতে গেছি ও স্যার কে বলল 'রাহুল আমায় খুব বিরক্ত করছে' শুনে আমি  রীতিমত হতবুদ্ধি হয়ে গেলাম। ক্লাসের মধ্যে ভালো স্টুডেন্ট হ‌ওয়ায় স্যার,  ওর কথা বিশ্বাস করে তার হাতের ভয়ংকর কিলটা আমার পিঠে বসিয়ে দিলেন।
ঘৃণায়, লজ্জায়, ক্রোধে, ক্ষোভে আমি মাথা নীচু করে কাঁদতে শুরু করলাম।
হ‌ঠাৎই  পেছন থেকে কে এক মারল ঠেলা। সে বারংবার বলে চলেছে 'বাবু ওঠ। অনেক বেলা হয়েছে খাবিনে?' পাশ ঘুরতেই দেখি - বাড়ির ভাঙ্গা ঘুলঘুলি দিয়ে রোদ আসছে। মায়ের মুখে একগাল হাসি। আর বাবা পত্রিকায় মুখ ডুবিয়ে রেখেছেন।
সত্যিই! এর চাইতে সুমধুর দৃশ্য বোধহয় আর হয় না। ইহা আমার এক দুঃস্বপ্ন ছিল।

ধারাবাহিক উপন্যাস
লাচুঙের নেকড়ে

শ্রীকান্ত অধিকারী

ঊনিশ  

ক্যায়া বোল রাহা হ্যায় সাব? সামনে এক কনস্টেবল উত্তরের অপেক্ষায়। 
-তোমাদের অফিসার সাহেবের সঙ্গে একবার দেখা করতে চাই। বলো কলকাতা থেকে ফ্রেন্ড এসেছে। 
এখনো কনস্টেবল লোকটা দাঁড়িয়ে। 
ও কি বাংলা বুঝছে না! আরো একবার বড় মামা বলে,-বলো কোলকাত্তা সে ফ্রেন্ড নন্দী স্যার আয়া হ্যায়। 
লোকটা চলে যেতেই গ্যাটসো বেশ অবাক হয়েই বলে,-সাব, দেখিয়ে,ও বাঙালি বাবুর ওয়াইফ অর উস কি লেড়কি। 
সত্যিই তো এতক্ষণ খেয়াল করে নি।এমনিতে এখানের পুলিশ স্টেশনগুলো সমতলের মত হয় না।এরিয়ায় অনেক ছোট। কিছুটা কাঠের কিছুটা পাকা।মানে পাথর দিয়ে গোড়া বাঁধা।কোনোটা  আবার গোটাটাই চৌকো পাথর দিয়ে তৈরি। নাথুলা বা দ্রাসে বা গুলমার্গের হায়েস্ট পয়েন্টে যেমন জওয়ানরা থাক থাক করে সাজিয়ে খোপের মত করে। তাতে লাভ হয় দুভাবে।নিজেদের সেফটি। অশান্ত প্রকৃতি আর দুর্বিনীত শত্রুদের থেকে প্রাথমিক রক্ষা।আর সে রকম কিছু ঘটলে বাইনোকুলার বা শক্তিশালী দূরবীন দিয়ে দূরের বিপদ সঙ্কেত সহজেই জানতে পারে। কোনো  কোনো ক্যাম্পে অবশ্য রেডিও ট্রান্সমিশন বা রেডিও ডিটেকশন অ্যান্ড রেঞ্জিংয়ের ব্যবস্থা থাকে।  এখানে এ সব না থাকলেও রেডিও ট্রান্সমিশনের ব্যবস্থা আছে।এতে করেই হেড অফিস এবং কখনো কাছাকাছি সেনাবাহিনীর ক্যম্পে যোগাযোগ করা হয়ে থাকে। বড় মামা সে সবই ভাব ছিল। অফিসের অন্য প্রান্তে যে মা মেয়েতে বসে আছে লক্ষ্য করে নি। যখন ওদের লক্ষ্য করল এবং কিছু প্রশ্ন করার উদ্দেশে চেয়ার ছেড়ে উঠছিল তখনই ওয়েল ড্রেসড একজন পুলিশ অফিসার এসে বড় মামার সামনে উৎসাহের সঙ্গে সোল্লাসে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে,-আরে নটবর নন্দী স্যার!  ইঁহা? ইটস অ্যা গুড সারপ্রাইজ! হাত ধরে ওখানেই বসে পড়ে দুজনে। 
 -এস পি সেরগিল সাব! চলে এলাম বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে।সেই হায়দ্রাবাদের সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেল অকাডেমির মেমোরি উসকে দিতে। 
-খামোকা! বিকট এক হাসি সারা পুলিশ স্টেশন কাঁপিয়ে দেয়। 
-আরে ভাই রিটায়ার্ড পার্শন। বেড়াতে এসে এইমাত্র তোমাকে ফিরতি গাড়িতে দেখেই চিনতে পারলাম।আর তখনই তোমার কথা মনে পড়ল। তাই ভাবলাম চলে আসি। বড় মামাও কম যায় না। হাসিতে শরীর দুলে ওঠে। পরক্ষণেই বেশ গম্ভীর হয়ে বলে, তবে…! 
-তবে?  
ধোঁয়া ওঠা কফি এসে হাজির। এস পি সের গিল সাহেব ঈশারায় অন্য কিছু পানীয় আনাব কিনা জিজ্ঞাসা করে। কিন্তু তার বদলে বড়মামা কয়েকটা পেপার বের করে টেবিলের ওপর রাখে।একটা পুরোনো পেপার,বাংলা।শিলিগুড়ি এডিশন।সঙ্গে লোকাল দুটো পেপার। হাম রো প্রজাশক্তি,আর সিক্কিম এক্সপ্রেস।তবে এগুলো গতকালের। 
বিস্ফারিত চোখে এস পি সাহেব বড় মামার দিকে তাকিয়ে থাকে।–ইতনা সব? 
-আমরা এসেছি গত পরশু দিন। মানে টোয়েলফথ সেপ্টেম্বর,আজ ফরটিন্থ। আসার সময় থেকে এই পেপারগুলো সাক্ষী, চারজন লোক আর একটা কুকুর গায়েব।  
-ডগ হিডেন! স্ট্রিট ডগ!  
-নো। ইটস অ্যা পেট ডগ। অ্যান্ড জানানো দরকার, সবকটাই সিক্কিমের বাইরের।  
-আরে ছোড় দি জিয়ে না মেরে ইয়ার। ইঁহা ইস হিল এরিয়া মে অ্যায়সা হি চলতা হ্যায়। 
-লেকিন, ওই যে বসে আছে, দে আর বাংলাদেশি। এনি ওয়ান মিসিং,-কুতুব উদ্দিন!   
-ইয়েস! রাস্তা হারিয়ে ফেলেছে সিওর।    
-কিন্তু নিউজ রিপোর্ট ত অন্য কথা বলছে।   
-পাহাড়ের রিপোর্ট অল টাইমস রং থাকে। দেন উই হ্যাভ সাফার্ড ফ্রম দি গ্রেট রং। ১৯৮০ সাল। আপনাদের পাহাড়ে তখন আগুন জ্বলছে। এ ভায়োলেন্ট মুভমেন্ট চালাচ্ছে সুভাষ ঘিষিং। অলগ স্টেট, অলগ পহেচান বানানে কে লিয়ে উত্তর পূর্ব ভারতে গঠন করে জি এন এল এফ। পোভার্টি বেকারত্ব সোশিও ইকনমিক ব্যাকগ্রাওন্ডলেস পলিসির জন্য এই ভায়োলেন্ট চলেছিল এইট্টি ফাইভ- সিক্স পর্যন্ত। আপ কো ভি মালুম হোগা কত মানুষ সেই প্রটেষ্ট অ্যান্ড ভেরিয়াস স্ট্রাইকের জন্য মারা গিয়েছিল,- অ্যাবাভ ফিফটিন হান্ড্রেড! আপনারা কি ভাবেন শুধু ওয়েস্ট বেঙ্গলেই এর ইফেক্ট পড়েছিল, নো ইধার ভি--,থমকে যায় সের গিল সাহেব।তারপর ধীর স্বরে বলেন,-‘দি ইনহেরিট্যান্স অফ লস’ পড়েছেন। কিরণ দেসাই দার্জিলিয়ের সেই ছবি তুলে ধরেই বুকার পেয়ে গেলেন। এরপরেও আছে।
-হ্যাঁ। বিমল গুরুং। বড় মামা মাথা নাড়েন।  
-প্রেজেন্ট জেন হয়তো এত খবর রাখবে না লেকিন আপ তো সব জানেন বাঙ্গালিবাবু।এর পরেও আরো আছে। উ সব আপনাকে জেনে কাজ নেই। দু দিন ঘুরে নিন ব্যস!পুলিশ কাজ করছে।সের গিল সাহেব কেমন কঠোর স্বরে বলে, সিক্কিমের পুলিশ কিন্তু নীচের পুলিশের মত নয়। ডোন্ট বি টেন্সড! ইফ ইউ ডিমান্ড,আমি আপনাদের সিকিউরিটির বন্দোবস্ত করে দিতে পারি নন্দী স্যার। কুছ দিন না হয় সাবধানে ঘুরলেন। 
-আমরা লাচুঙের নেকড়ে দেখতে এসেছি তোমাদের ছেলেধরা নয়, বুঝলে।একবার পেলে শিখিয়ে দিতাম! রাগ লুকোতে পারে না বড় মামা।সের গিল সাহবের প্রস্তাবে সম্মতি না জানিয়ে জিজ্ঞেস করে, তুমি ক্রিশ্চান কবে হলে? 
হা হা করে আবার সের গিল সাহেব হেসে ওঠে,-বলে কত্ত দিন এখানে? ফির একবার আমার ড্রাইভারকে বলে দিচ্ছি সারা লাচুং আপনাদের সুন্দর ঘুরিয়ে দেবে। কোই দিক্কত হবে না। এমন কি হায়ার হিল এরিয়ায়ও নিয়ে যাবে।  
-দরকার লাগলে জানাব।  
-ওকে। ফির কোথাও না কোথাও দেখা মিলবে। আমি তো ইয়ারলি ওয়ান টাইম হায়দ্রাবাদ যাই। ইনফর্ম করব।   
বড় মামা ষ্টেশনের বাইরে এসে চারদিকে চোখ ঘুরিয়ে নেয়।এখনো কুয়াশার মত বৃষ্টি উড়ছে। গ্যাটসো পাশে। 
-এখানে কত পার্সেন্ট ক্রিশ্চান আছে গ্যাটসো?  (ক্রমশ)

স্মরণীয় দিবস
বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস 
(১১ই জুলাই)
কলমে -দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে


প্রতিবছর সারা বিশ্বে ১১ জুলাই দিনটিকে "বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস" হিসেবে পালন করা হয়। এর কারণ উদ্দেশ্য তাৎপর্য এবং সমাধান সবকিছু নিয়ে আলোচনা করলাম।
বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা এবং পরিবেশের উপর তার প্রভাব নিয়ে মানুষকে সতর্ক এবং সচেতন করাই বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস পালন করার মূল উদ্দেশ্য। বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা সে দেশের জন্য সমস্যার কারণ হয়ে উঠছে। যে কোন দেশের জনসংখ্যা মানবসম্পদ হিসেবে পরিগণিত হয়, কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত জনসংখ্যা সেই দেশের সমস্যার কারণ হয়ে উঠতে পারে। এর ফলে সেই দেশে নিরক্ষরতা,বেকারত্ব, দারিদ্রতা এবং অনাহারের মত পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। তবে এমনও নয় যে দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা মোকাবেলা করার জন্য সম্পদের ঘাটতি আছে। কোন কিছুর যদি অভাব থাকে তা হলো সচেতনতার অভাব। এই সমস্যার সমাধানের জন্য প্রতিটি সচেতন মানুষকে পরিবার পরিকল্পনা করতে হবে।
এই দিবসটি জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সম্পর্কিত চাপের সমস্যা এবং চ্যালেঞ্জ গুলি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে একটি বৈশ্বিক উদ্যোগ হিসেবে পালিত হয়।
১৯৮৯ সালে জাতিসংঘ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এই দিনটি দেশ, সংস্থা এবং ব্যক্তিদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রভাব এর উপর প্রতিফলিত করতে এবং সমাধান খোঁজার জন্য সহযোগিতা করতে উৎসাহিত করে।
বিশ্ব জনসংখ্যা দিবসের ইতিহাস জানতে গেলে একটু পেছনের দিকে তাকাতেই হয়। প্রথম বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস পালিত হয়েছিল ১৯৯০ সালের ১১ই জুলাই সারা বিশ্বের প্রায় ৯০ টি দেশে। তারপর থেকে বহু সংস্থা, প্রতিষ্ঠান ও জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল( UNFPA) দেশের অফিস, সরকার এবং সুশীল সমাজের সাথে অংশীদারিত্বে জনসংখ্যা সম্পর্কিত উদ্বেগের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য এই দিনটিকে চিহ্নিত করে আসছে।
বিশ্ব জনসংখ্যা দিবসের একটি বিশেষ তাৎপর্য আছে। জনসংখ্যা দিবস বিশ্ব জনসংখ্যা সংক্রান্ত জটিল সমস্যাগুলির প্রতি গভীর মনোযোগ আকর্ষণের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। এর লক্ষ্য লিঙ্গ বৈষম্য, অর্থনৈতিক সংকট, দারিদ্র্যের মতো বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। এই দিনটি মানুষের জীবনের উন্নতির জন্য সক্রিয়ভাবে চেষ্টা করার এবং ইতিবাচক রূপান্তর আনার জন্য একটি অনুস্মারক হিসেবে কাজ করে। জাতিসংঘ বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস উদযাপন করে এমন একটি ভবিষ্যৎ তৈরি করার লক্ষ্যে যেখানে প্রত্যেকের সমান সুযোগ এবং সীমাহীন সম্ভাবনা থাকে। তবুও এর উন্নয়নের জন্য ২০৩০ এজেন্ডায় বর্ণিত লক্ষ্য গুলির সাথে সঙ্গতি রেখে একটি উন্নততম বিশ্ব তৈরির দিকে কাজ করে।
🍂

পাঠপ্রতিক্রিয়া
( ছোটোবেলা ১৩৯ পড়ে গল্পকার নীতা রায় যা লিখলেন)

পত্রিকার মুখছবিতে ভাইবোনের মাঠের মধ্যে হাঁটার দৃশ্য তো সবার মনকে ভরিয়ে দিয়েছে। ঠিক কিনা! অপু-দুর্গা মনে পড়লেই যে ভেসে ওঠে কাশফুল, ট্রেন দেখার জন্য ছুট লাগানো। নানান রকম চাপের মধ্যে অল্প সময়ের ছুটি। আর সেই একটু ছুটি পেলেই মৌসুমী আন্টির "ছোটবেলা" ।
প্রথমেই এল লাচুঙ এর নেকড়ের গল্প। না! নেকড়ে আসেনি ঠিকই। কিন্তু লাচুঙ বলতেই তো নর্থ সিকিম। যত নদী, ঝর্ণা, বরফের পাহাড়, গাছপালা, সব কিছুর ভীড়। সেখানে কেউ হারিয়ে গেলে কি খোঁজা এতই সহজ! বড় মামা কিন্তু যথেষ্ট সিরিয়াস হয়েই খোঁজ করছেন। পাওয়া যাবে নিশ্চয়। একটু অপেক্ষা তো করতেই হবে! তাই না? চিন্তা তো হবেই। 
কিন্তু তখনই মন ভালো করতে এসে গেল স্বর্ণদীপা র আঁকা একটা মিষ্টি ছবি। কত সুন্দর সুন্দর গয়না পরে সেজেছে মেয়েটি। কোনও অনুষ্ঠান বাড়িতে যাবে হয়তো। খাওয়া দাওয়া করবে। হাসবে। আনন্দ করবে। হাসির কথা ভাবতে ভাবতেই এসে গেছে কৃষ্ণা আন্টির লেখা, দেশের বাড়ি। ও মা! কী ভয়ের বিষয়! ডাকাতেরা চিঠি দিয়েছে, অমাবস্যার রাতে ডাকাতি করবে! পড়ব কি! ভয়ে সারা হচ্ছি। পড়তে পড়তে বুঝতে পারলাম, মজা করে ভয় দেখানো হয়েছে। কিন্তু ভয়ের চোটে মোবিল তেল ঢেলে কি বিদঘুটে কাণ্ড! বাপরে বাপ!করল ডাকাতের জন্য, আর শেষ পর্যন্ত বাড়ির লোকজন উল্টে পড়ে যাচ্ছে। কালো মোবিলে গড়িয়ে কেঁচোর মত নড়ে চড়ে বেড়াচ্ছে। পড়ার পর কিন্তু খুব হাসি পাচ্ছিল। তাই বলে তোমরা কোনোদিন পরীক্ষা করতে যেও না যেন। মোবিল তেল জামাকাপড় বা আমাদের ত্বকের জন্য মোটেও ভালো নয়। সেটা অবশ্য বাড়িতে মায়েরা তোমাদের বুঝিয়ে বলে দেবেন ঠিকই। 
হাসির রেশ মিলাতে না মিলাতেই এসে গেল এক আশ্চর্য সুন্দর ছবি। এঁকেছে জয়দীপ সাহা। তিন রাজস্থানী রমণী মাথায় করে জল নিয়ে আসছে। মরুভূমির বুকে দূর থেকে দেখতে পাওয়ার জন্য উজ্জ্বল রঙের শাড়ী পরে ওরা। রোদের থেকে ত্বকের দাহ রোধ করার জন্য সাদা বালা, পিতলের জলপাত্র, সব কিছু নিখুঁত বর্ণনা করেছে এই ছবিতে। 
এই সাদা বালা, একসময়ে হাতীর দাঁত দিয়ে তৈরী করা হ'ত। এখন সবাই নানা ধরণের প্লাস্টিকের তৈরী বালা পরে। 
স্বপ্ননীল পাত্র গেছিল সিকিম বেড়াতে। স্বপ্ননীল সুন্দর বর্ণনা দিয়েছে ভ্রমণের। বাবা হরভজন সিং মন্দির দেখেছে। যেটি বাবা মন্দির নামে পরিচিত।হরভজন সিং হলেন এক ভারতীয় সেনা। চিন-ভারত যুদ্ধ চলাকালীন তিনি মৃত্যু বরণ করেন। কিন্তু নাথু লা এবং জেলেপ লা অঞ্চলে চিনের যে কোনও যুদ্ধ প্রস্তুতির খবর তিনি ভারতীয় সেনাকে জানিয়ে দেন। এমনই দেশের প্রতি কর্তব্যবোধ তাঁর, যে দৈহিক মৃত্যুও সেই কর্তব্য থেকে তাঁকে সরাতে পারে নি। তাঁর দেশপ্রেম প্রতিটি ভারতবাসীকে দেশের প্রতি কর্তব্য শিক্ষা দেয়। 
স্বপ্ননীল এম জি মার্কেটে লাল প্যান্ডার মূর্তি দেখেছে। সত্যি সত্যি লাল প্যান্ডা দেখেছে কিনা জানায় নি যদিও। 
 প্যান্ডা চিনের পাহাড়ে বেশি পাওয়া যায় ।ওখানে ওদের পরিচয় প্যান্ডা নামে। আমরা ভুল করে ওদের পান্ডা বলে থাকি। সঠিক বলাটাই ভালো। তাই তো! 
বাসবদত্তা আন্টি শ্যামদেশ ঘুরে এসে লিখছেন। সুন্দর ভাবে ছবির মত করে বর্ণনা দিয়েছেন। সঙ্গে দিয়েছেন ছবি। 
দোলনচাঁপা আন্টি লিখেছেন পশ্চিমবঙ্গের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায়ের কথা। তাঁর সম্বন্ধে অনেক কাহিনী ছড়িয়ে আছে। দুটো কথা বলি। তিনি গেছেন ইংল্যান্ডে। একটি চক্ষু হাসপাতালে। হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঢুকেই বললেন, এখানে কি পক্স এর রোগীও রাখা হয়? 
সেই হসপিটালের ডাক্তারেরা মাথা নেড়ে জানালেন, কোনোমতেই না। শুধু চোখের রোগীরা থাকেন। ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায়ের জোর দিয়ে বলা শুনে তাঁরা পরীক্ষা করতে গেলেন। সত্যি সত্যি পাওয়া গেল এক রোগী। কয়েকটি কেবিনের পর একটি কেবিনের রোগীর তখন সদ্য সদ্য পক্স এর লক্ষণ দেখা দিয়েছে। 
এমনই ছিল তাঁর ডাক্তারি জ্ঞান। 
একটা মজার ঘটনাও বলি। 
ডাক্তার রায় খুব কম ওষুধ দিতেন। এবং যথাসম্ভব কম দামের। একটি অল্পবয়সী রোগী বেশ কিছুদিন ধরে জ্বরে ভুগছে। তিনি নিজে রোগীকে দেখতে গেছেন। রোগী শুকনো মুখে করে শুয়ে আছে। ডাক্তার রায় বাড়ির লোকেদের জিজ্ঞাসা করলেন, রোগীকে কি খাবার দিচ্ছেন? রোগী নিজেই বলল, রোজ কাঁচকলার ঝোল - ভাত খেতে তার ভালো লাগে না। ডাক্তার রায় রোগীকে দেখে বললেন, এবার তুমি ভালো হয়ে যাবে। যা চাইবে, তাই খেতে দেব। কি খেতে চাও বলো? রোগী জানাল, রসগোল্লা। রোগীর সামনেই বাড়ির বড়দের বলে দিলেন, রোজ একটি করে গরম রসগোল্লা এনে দেবেন। গাড়িতে ওঠার আগে রোগীর বাবাকে বললেন, রোগী আমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। মাংস - ভাত খেতে চাইলে কি করতাম আমি! 
 আনিশা পারভীন এর আঁকা সুন্দর একটি ছবি দিয়ে পত্রিকার এই সংখ্যা শেষ করা হয়েছে। 
পত্রিকার আরও অনেক অনেক সংখ্যা আসবে। তোমরা আনন্দ নিয়ে পড়বে। ছবি আঁকবে ।গল্প লিখবে। ভ্রমণ কাহিনী লিখবে। সাজিয়ে তুলবে তোমাদের ছোটবেলা কে। মনের মত করে। 
 তোমাদের সব্বাইকে অশেষ ভালোবাসা। তার সঙ্গে বিভিন্ন লেখক, লেখিকা এবং মৌসুমীর জন্য রইল শুভেচ্ছা।


Post a Comment

1 Comments

  1. দারুণ দারুণ লেখা। লেখা পাঠাতে চাই। লেখা কি পাঠানো যাবে? ধন্যবাদ।

    ReplyDelete