জ্বলদর্চি

আমার জীবনের ঘটনা -২১/মলয় রায়চৌধুরী


আমার জীবনের ঘটনা  -২১

মলয় রায়চৌধুরী

আনন্দ ধারা বহিছে ভুবনে

চাকরি থেকে অবসরপ্রাপ্তির পর আমার পিসেমশায়ের রেসখেলা, সোনাগাছি, বাংলা মদ যাকে উনি বলতেন ধান্যেশ্বরী, সব কিছু ছেড়ে গিয়েছিল একে একে। 

আহিরিটোলার এক-ঘরের বাসা থেকে কখনো-কখনো হেঁটে চলে যেতেন হেদোয়। উদাসীন চিন্তা করতেন যে আহিরিটোলায় আর টেকা যাবে না, কেননা নতুন যে লোকগুলো মহাকরণ আর পুরসভার দখল নিয়েছে তারা বাজোরিয়া, কানোরিয়া, সরদা, জালান, জৈন, কাংকারিয়ে, পাসারিদের তেল খেয়ে, পুরসভার কর বাড়িয়ে-বাড়িয়ে, আদি নিবাসীদের কলকাতা-ছাড়া করবেই, তাড়িয়ে পাঠাবে উত্তর আর চব্বিশ পরগণায়। 

সব শরিক নিজের অংশটুকু বিল্ডারদের বেচে দিয়ে পালিয়েছে মফসসলে। সবাই সবাই সব্বাই। 

জলের কিনারায় একা বসে তাকিয়ে থাকতেন সন্তরণরত কিশোরদের দিকে, যারা কেউ জানে না যে ক্লাবঘরে যাদের যৌবনকালের ফোটো আবছা হলুদ হয়ে এসেছে, সেসব সাঁতারজয়ীদের মধ্যে তিনিও একজন। কখনও বা আহিরিটোলা ঘাটে গিয়ে বসে থাকতেন চুপচাপ। চোখে পড়ত কোনো প্রৌঢ়া, আধপাকা চুল, মোটা থলথলে সাবিপীরানি, জ্ঞানদাবালা, চারুমতী বা সুখময়ীকে, বাড়িউলি মাসিতে রূপান্তরিত, সঙ্গে ডজনখানেক নেপালি আর বাংলাদেশি বোনঝি।

অমাবস্যার এক রাতে, আহিরিটোলার ছাদে মাদুরে শুয়েছিলেন তিনকড়ি হালদার, লুঙ্গি আর ফতুয়া গায়ে।

 ঘুম ভেঙে গেল আচমকা। আকাশে তারায় তারা। 

তাঁর আশে-পাশে দূরে-কাছে পাথরের ঢিবি, সিল মাছ, শুশুক ধরণের জলপ্রাণীরা এলিয়ে পড়ে আছে।

 সমুদ্রের গর্জন ভেসে আসছে। উঠে, সমুদ্রের দিকে পা বাড়ালেন উনি।

শবের ফতুয়ার পাশপকেট থেকে একটা চিরকুট পেয়েছিল জোড়াবাগান পুলিশ।

 তাতে লেখা, ‘আনন্দধারা বহিছে ভুবনে।’
🍂

🍁
বাড়িতে বসেই রেজি.ডাক মাধ্যমে জ্বলদর্চির বিশেষ সংখ্যাগুলো সংগ্রহ করতে পারেন। যোগাযোগ  হোয়াটসঅ্যাপ - ৯৭৩২৫৩৪৪৮৪


Post a Comment

0 Comments