জ্বলদর্চি

যেতে যেতে পথে -৮১/রোশেনারা খান

যেতে যেতে পথে
রোশেনারা খান

পর্ব ৮১

আজ সাহবাজের বাবা সাহজামালের সঙ্গে অনেক কথা হল। ওরা রবিবার বিকেলে আসবে। সেইমত আমি মেজদা ও ভাবীকে আসতে বললাম। মনি আসতে পারবে না, পিসতুতো ভাই অভয়ের মেয়ের বিয়েতে গেছে। আমারও নিমন্ত্রণ ছিল, গিফট পাঠিয়ে দিয়েছি।পাপু আর ওর বৌ এসেছিল। উনি কী চুপি চুপি বলছিলেন জানিনা। এদিকে রাজনৈতিক দলগুলি ঈর্ষা বিদ্বেষকে হাতিয়ার করে সমাজ সংস্কারক রাজনীতিবিদদের  মূর্তি ভেঙ্গে নিজেদের কাপুরুষতা প্রমাণ করছে। সম্প্রতি  বিদ্যাসাগর কলেজের ভিতরে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যাসাগরের মূর্তি রাতের অন্ধকারে              কারা যেন ভেঙ্গে রেখে গেছে। এই নক্যারজনক ঘটনা বাঙ্গালির মনে আঘাত করেছে। চারিদিকে ছি ছি রব শোনা যাচ্ছে। সেই সঙ্গে চলছে রাজনৈতিক দলের চাপানউতোর। আজ দুপুরে আনন্দবাজার ও বিপ্লবী সব্যসাচী থেকে ফোন করে এবিষয়ে আমার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইল। আগামিকাল হয়ত কাগজে থাকবে।

           মুর্শিদাবাদ থেকে আমার পরিচিত এক ভদ্রলোক রানীর ছবি আর বায়োডাটা চেয়ে পাঠিয়েছেন।আর কলকাতায় রানীকে দেখানো যাবে কি না জানতে চেয়েছেন।  আমি জানিয়ে দিলাম এত গরমে সম্ভব নয়। মে মাস পড়তে না পড়তেই টেম্পারেচার ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেছে। এই  গরমে কাজ করা মুশকিল  হয়ে দাড়িয়েছে।  বিশেষ করে বাইরের কাজ। ভাবছি পেনশনটা চালু হলে বসার ঘরে একটা এসি লাগাব। বাইরের লোকজন এলে গরমে বসতে দিতে খারাপ লাগে। ভেতরের ঘরে সবাইকে নিয়ে গিয়ে বসানো যায় না। গরমে উনি আরও অসুস্ত হয়ে পড়ছেন। আজ তো শরীরটা বেশ খারাপ। যা খাচ্ছেন, বমি হয়ে যাচ্ছে। খেতে পারছেন না বলেই ওয়েট কমে যাচ্ছে। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে। গরম যে কবে কমবে জানিনা। কবে থেকে শুনছি ‘ফেনী(ঝড়)’ আসছে। কোথায়  ফেনী? ঝড়ের কোনও আভাস পাচ্ছি না।           
🍂
                                                                                   আজ নার্সিংহোম থেকে ফিরে কিছু না খেয়েও ওনার বমি হতে লাগল। ডঃ সুচন্দ দাসকে ফোন করতে, উনি ওষুধের নাম মেসেজ করে দিলেন। দুপুর দেড়টার সময় দাস মেডিক্যাল থেকে ওষুধ কিনে নিয়ে এসে ওনাকে খাওয়ালাম। বমি বন্ধ হল, কিন্তু খেতে পারছেন না। সুপ বানিয়ে দিলাম, ও আর এস দিলাম। রাতে সামান্য ভাত খেয়েছে। আর বমি হয়নি। সোমবার কলকাতা নিয়ে যাব চেকআপে।

     সাহবাজের সঙ্গে আজ কথা হল। ও বলছে, বিয়ে নিয়ে চিন্তা না করতে, ওটা ও সামলে নেবে। বলল, ‘আপনি আঙ্কেলের দিকে খেয়াল রাখুন’। এদিকে ওর  দাদার সেদিনের কথা আমারও ভাল লাগেনি। বুঝলাম এদের সঙ্গে আমাদের মানসিকতায় মিলবে না। পন দেওয়া ও নেওয়া দণ্ডনীয় অপরাধ। মায়ের কথা বাদ  দিলাম, কিন্তু একটা শিক্ষিত ছেলে যৌতুকের কথা মুখে আনে কি করে! যাইহোক, ওর বাবা বলেছেন, ‘ওরা যা বলে বলুক, আপনি শুনে যাবেন, বিয়েটা হবেই। ইদের পর আমাদের বাড়ি থেকে গিয়ে আশীর্বাদ করে আসবে। তারপর রেজিস্ট্রি হবে’।  

                 আজ অনেকদিন পর ছোটমাসির বাড়ি গেছলাম, হেঁটে গেলে ৫মিনিট লাগে। তবুও যাওয়া হয়ে ওঠেনা। কিছুটা সময় অন্যভাবে কাটিয়ে বাড়ি ফিরতেই আগের  চিন্তা পেয়ে বসল, ওনাকে নিয়ে চিন্তা তো আছেই, তার সঙ্গে যোগ হয়েছে রানীর বিয়ের চিন্তা। ওর মামাদের কথাবার্তা, আচরণ ঠিক লাগছে না। আসলে ওরা, বিশেষ করে বৌরা কেউ চাইনা রানীর বিয়েটা এখানে হোক। অদ্ভুত এদের মানসিকতা। একজনের অন্যায় আবদার তার মেয়ের মত, এমন কী সেই রঙের  ড্রেস রানীরা দুইবোন পরতে পারবে না। আর একজন চায় না তার স্বামীর থেকে বেশি শিক্ষিত ও সেই লেবেলের চাকরি করা ছেলের সঙ্গে রানীর বিয়ে হোক। তাদের মতে রাইস মিল, স’মিল আছে এমন অল্প শিক্ষিত পাত্রই রানীর জন্য  যথেষ্ট। এসব শুনে বাবলি আনেকদিন আগেই বলেছিল, ‘মা, ওদের রানীর বিয়ে  নিয়ে ভাবতে নিষেধ কর। আমরা দেখে নেব’। আমি এটুকুই জানি, ওর কপালে থাকলে কেউ আটকাতে পারবে না।

     বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙ্গার বিষয়ে আনন্দবাজার ও বিপ্লবী সব্যসাচী থেকে যে আমার প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয়েছিল, আজ তা দুটি সংবাদপত্রেই প্রকাশিত হয়েছে। সোশাল মিডিয়াতে অনেক লাইক ও কমেন্ট দেখলাম। এসবে কিছু হয় না। আমি ও আমার মতামত গুরুত্ব পেয়েছে, এটাই আসল কথা।

    সকালে চন্দ্রিমার সঙ্গে ওর স্বামী এসেছিল দেখা করতে। আমাকে আগেই ও বলেছিল। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, কী খেতে দেব রে? অসীম কী খেতে ভালবাসে? ও বলল, ঘুগনি মুড়ি দিয়ে দিও। আমি তো শুনে অবাক! বললাম, তোর কি মাথাটা আকেবারে গেছে? জামাইকে কেউ এসব খেতে দেয়? আবার প্রথমবার আসছে। আমি ময়দার খাস্তা পরোটা, ঘুগনি আর পায়েস করে রেখেছিমাম। খুব তৃপ্তি করে খেল এবং বলল, আজ আমার যাওয়ার দিন না হলে আরও খেতাম। ছেলেটিকে আমার ভালই লাগল, বেশ মিশুকে ও জলি।

    অনেক কষ্টের মাঝে কিছুটা অক্সিজেন পাওয়া গেল। জন্মেঞ্জয়দা আজ ফোনে জানালেন, খান সাহেবের একাউন্টে পেনশনের টাকা ঢুকেছে। উনি খুব খুশি,খুশি হওয়ার মতই খবর। উনি বার বার একটা কথায় বলতেন, পেনশনটা তোমার হাতে দিয়ে যেতে পারলে নিশ্চিন্ত হতাম। আমি খুশি ওনার চিকিৎসায় কিছুটা সুরাহা হবে। চন্দ্রিমা সেই খুশিতে তন্দুরি চিকেন আর রুমালি রুটি নিয়ে এসেছে। আজ নার্সিংহোমে এসে ডায়ালিসিস ইউনিটের সবাইকে মিষ্টি খেতে টাকা দিলাম। দেখা হতে দেবল দত্ত  আনন্দবাজারে আমার প্রতিক্রিয়ার জন্য প্রশংসা করলেন। মেদিনীপুর নিয়ে ধারাবাহিক লেখার কথা বললেন।

    সুহানাকে(ভাইঝি) আর রাখতে পারবনা বলাতে ওরা আমার ওপর খুব  অসন্তুষ্ট। সবাই নিজের সুবিধাটাই বুঝছে, আমার জায়গায় নিজেদের দাঁড় করিয়ে  দেখুক একবার। একা এরকম একজন রুগিকে নিয়ে কীভাবে আমার দিন কাটছে,  ভেবে দেখেছে কোনদিন? কোনদিন জিজ্ঞেস করেছে? আমার টাকা লাগবে কিনা? আমার কাছে রানী আছে, তারপরেও আর একজনকে রাখার কথা বলে কী করে? টাকা দিলেই যদি সব হয়ে যায়, তাহলে ছোট ভাইয়ের কাছে রাখছে না কেন? যাইহোক, সুহানা দ্বিতীয় বিভাগে পাশ করেছে, এখানেই চার্চস্কুলে ভর্তি হবে।
আজ ২০১৯ সালের  লোকসভা ভোটের ফল প্রকাসিত হয়েছে। তৃনমূলের আসন নড়িয়ে দিয়েছে বিজেপি। খুব খারাপ হল, বিশেষ করে আমাদের জন্য।  মেদিনীপুরেও বিজেপির দিলীপ ঘোষ জিতেছে। এই নিয়ে সোশ্যাল মিডিইয়াতে কয়েকজনের সঙ্গে তর্ক হয়ে গেল। এইসব মুখোশধারিরা আমার বন্ধু হতে পারে না। ব্লক করে দিয়েছি। যদিও জানি ‘ঠগ বাছতে গাঁ উজাড়’ হয়ে যাবে। রোজ  কত অঘটন ঘটে চলেছে, খারাপ লাগলেও কিছু করার নেই। সয়ে নেওয়া ছাড়া। আজ তানি বাড়ি গেল, রমজান চলছে। তাই কিছু ফল, গ্লুকনডি, আর শাড়ি পাঠালাম ওর মায়ের জন্য।

     সকালে ২টি কবিতা মেল করলাম ইয়াসিনকে নাব্যস্রোত পত্রিকার জন্য। গত  সংখ্যার খুব ভাল রিভিউ হয়েছে বলে বলল। একটা আর্টিকেল লিখব ভাবছি কবে থেকে, সময়ই করে উঠতে পারছি না। মনে ছিল না আজ হেল্পিং হ্যান্ড এর প্রতিষ্ঠা দিবস, সুদীপ ফোন করতে, মনে পড়ল। দুপুর ১টার সময় অল্প সময়ের জন্য গেলাম, বুড়ি ছোঁয়ার মত। আমার সময়ের যে বড্ড অভাব। এদিকে ওনাকে নিয়ে চিন্তা বেড়েই চলেছে। আজ ডায়ালিসিস চলা কালেই খুলে দিতে বলছিলেন।  শরীর খারাপ লাগছিল। বাড়িতে এসে কিছু খেতে পারলেন না। শুধু বমি করে গেলেন। বমির ওষুধ খাওয়ানোর পর সামান্য ভাত খেতে পেরেছেন। খুব কষ্ট পাচ্ছেন।আমি কিছুই করতে পারছি না।

     বৃষ্টি তো হচ্ছেই না, তার ওপর দেশের হাওয়াও বেশ গরম। বামফ্রন্ট তো  একেবারে মুছে গেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতার খামখেয়ালি সিদ্ধান্তের জন্য সব হারাতে বসেছেন। মুসলমান দের অবস্থা খুবই খারাপ, মোদী আরও শক্তি সঞ্চয় করে  দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রীর চেয়ার দখল করেছে।                                                                                                                                             ক্রমশ

Post a Comment

0 Comments