বিজ্ঞানের অন্তরালে বিজ্ঞানী — ৮৩
এগ্রিকালচারাল রেটুনিং
মেদিনীপুরের কৃষিবিজ্ঞানী ড. রামচন্দ্র মণ্ডল-এর বর্ণময় জীবনের উত্থান-পতনের রোমহর্ষক কাহিনী
উপপর্ব — ১৮
পূর্ণচন্দ্র ভূঞ্যা
সময়টা ১৯৯৬ সাল। খেজুরীর ইতিহাসে যুগপৎ এক স্মরণীয় অধ্যায়। প্রথমত, খেজুরীর উন্নতিকল্পে বিধায়ক নির্বাচিত হলেন প্রৌঢ় কৃষি বিজ্ঞানী রামচন্দ্র মণ্ডল। দ্বিতীয়ত, ওই বছর 'খেজুরী ইতিহাস সংরক্ষণ পর্ষদ' গঠিত হয়েছিল। পর্ষদের প্রধান উপদেষ্টা তথা আজীবন সদস্য হলেন রামচন্দ্র বাবু। এ হেন পর্ষদ তৈরির মূল লক্ষ্য ছিল খেজুরীর সমৃদ্ধ অতীত ইতিহাস স্মরণ, সংরক্ষণ ও পর্যালোচনা করা। কোন পথে সমিতির কার্যকারণ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে? কিংবা কী কী কার্যভার সমিতির সভ্যগণ দ্বারা পরিচালিত হবে, তার মার্গ দর্শন করাবেন কে? প্রিয় বৈজ্ঞানিক রামচন্দ্র মণ্ডল-এর ভাবাবেশে সমিতির কর্মসূচি গৃহিত হয়েছিল। খেজুরীর অতীতের ইতিহাস এত সমৃদ্ধ আর সম্ভ্রান্ত যে, কোন কোন ঐতিহাসিক ঘটনাবলী প্রাধান্যের নিরিখে সর্বপ্রথম পর্যালোচনা করা হবে আর কোনগুলি পরে আলোচনা হবে তা নির্ধারণ করা খুব মুশকিল। শেষমেশ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় খেজুরীর প্রথম ইতিহাসকার মহেন্দ্রনাথ করণ-এর 'খেজুরীর মসনদ-ই-আলা' ও প্রাচীন 'খেজুরী বন্দর' পুস্তিকা দুখানিকে পুনঃমুদ্রণ করা হবে। তবে ভিন্ন নামে। 'মহেন্দ্র করণের রচনা সংকলন' নাম দিয়ে পুস্তিকা প্রকাশ করাই ছিল সমিতির প্রথম কাজ। বইটি প্রকাশে রামচন্দ্র বাবু প্রেরণা যুগিয়েছিলেন। সেই থেকে ইতিহাস সংরক্ষণ সমিতির পথচলা শুরু।
অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলায় তখন স্বাধীনতা আন্দোলনের মশাল জ্বলছে। পিছিয়ে নেই জেলার পূর্ব প্রান্তের খেজুরী থানা। সেখানেও বিদ্রোহের আগুন জ্বলছিল পূর্ণমাত্রায়। এমনকি জেলার মধ্যে খেজুরীতেই সম্ভবত প্রথম স্বাধীন জাতীয় সরকার গঠন করা হয়েছিল খেজুরী থানা দখল করার মাধ্যমে। সেটা ছিল ১৯৪২ সালের ২৮শে সেপ্টেম্বর, সোমবার রাতের ঘটনা। খেজুরী ইতিহাস সংরক্ষণ সমিতির আপাতত দ্বিতীয় কাজ ছিল ইতিহাসের অন্ধকারে পড়ে থাকা, প্রচারের আড়ালে পড়ে থাকা খেজুরীর স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস জনসমক্ষে তুলে ধরা। সেই লক্ষ্যে 'খেজুরীতে স্বাধীনতা সংগ্রামী ও গুণীজন' নামে একখানা পুস্তিকা প্রকাশিত হয়। বইটির মুখবন্ধ রামচন্দ্র বাবুর লেখা। তিনি মুখবন্ধটি লিখেছিলেন দুটি পর্যায়ে। প্রথমত, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে মেদিনীপুর জেলার স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অবদান। দ্বিতীয়ত, স্বাধীনতা সংগ্রামে খেজুরীর ভূমিকা। শেষোক্ত পর্যায়ে রয়েছে ১৯৪২ সালের ২৮শে সেপ্টেম্বর রাত্রে স্বাধীন খেজুরী থানার জাতীয় সরকার গঠিত হওয়া পর্যন্ত এক সংক্ষিপ্ত রোমহর্ষক ইতিহাস।
খেজুরী ইতিহাস সংরক্ষণ সমিতি প্রত্যেক বছর গুণীজন সংবর্ধনা প্রদান করে। খেজুরীর চারজন গুণী মানুষকে প্রতি বছর সংবর্ধনা দেওয়ার চল সমিতির দীর্ঘ দিনের সিদ্ধান্ত। সেটা ছিল ২০১৩ সাল। সেবছর গুণীজন সংবর্ধনায় জ্বলজ্বল করছিল একটি নাম। খেজুরীর প্রাক্তন বিধায়ক ও কৃষি বিজ্ঞানী ড. রামচন্দ্র মণ্ডল। দিনটা ছিল ৮ই ডিসেম্বর। রবিবার। ছুটির দিন। গুণীজন সংবর্ধনায় সংবর্ধিত হলেন খেজুরীর কৃতী সন্তান ড. রামচন্দ্র মণ্ডল।
২০১৫ সাল নাগাদ জীব বৈচিত্র্য রক্ষার তাগিদ দেখা দিয়েছিল খেজুরীতে। এতদুদ্দেশ্যে সরকারি স্তরে উদ্যোগ গ্রহণ করা শুরু হয়। পশ্চিমবঙ্গ জীব বৈচিত্র্য পর্ষদের একটি প্রকল্প ছিল 'জন জীব বৈচিত্র্যের তথ্য সংগ্রহ'। এ হেন প্রকল্পের কাজ প্রথম শুরু হল খেজুরী ২ নং ব্লকে। লক্ষ্য খেজুরী জীব বৈচিত্র্য পরিচালন সমিতি গঠন। সমিতি গঠনের দায়িত্ব বর্তায় কতিপয় ব্যক্তির উপর। সরকারি স্তরে প্রশাসনিক ক্ষমতা বলে দায়িত্ব নিলেন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অসীম মণ্ডল, সম্পাদক তথা ব্লক কর্মাধ্যক্ষ শ্যামল মিশ্র। ক্ষেত্র-সহায়কের (Field Facilitator) ভূমিকায় সদস্য হিসেবে রইলেন অন্তরা সর্বোদয় সংঘের সভাপতি সুব্রত মাইতি, কৃষি বিজ্ঞানী রামচন্দ্র মণ্ডল, শ্যামল বেরা এবং আরও দুজন মহিলা সদস্যা। সমিতির কাজ ছিল গ্রামেগঞ্জে সমীক্ষা চালিয়ে তথ্যাদি সংগ্রহ করা এবং সংগৃহীত তথ্য সংবলিত নথি পর্ষদের দরবারে তুলে ধরা। এত সব তথ্য সংগ্রহে বিস্তর সমস্যা। সমস্যার গভীরে ঢুকতে সবাই নিমরাজি। সকল সদস্য, এমনকি সম্পাদক মশাইয়েরও গা ছাড়া ভাব। অগত্যা একান্ত প্রয়োজন বোধে ৫ নং অঞ্চলের নিজকসবা গ্রাম-পঞ্চায়েতের 'জন জীব বৈচিত্র্য নথি ২০১৫' (People's Bio-diversity Register) তৈরির যাবতীয় তথ্য সংগ্রহের পাহাড় প্রমাণ কাজ এসে পড়ল রামচন্দ্র বাবুর ঘাড়ে। মূলত তাঁর একক উদ্যোগে, যখন তাঁর বয়স পঁচাশি বছর, নিজকসবা পঞ্চায়েতের উনিশ গ্রামে তথ্য সংগ্রহের কাজ চলে। প্রতিটি গ্রামের অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে স্বাক্ষী রেখে মাস কয়েক ঘুরে ঘুরে হরেক রকমের তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন তিনি। তথ্য সংগ্রহের পর তথ্য যাচাইয়ের পালা। তাঁর একক দৃষ্টিভঙ্গির ফসল সংগৃহীত তথ্য বিন্যাস ও কালচার করে 'জন জীব বৈচিত্র্য নথি ২০১৫' তৈরি। এত কিছুর পরেও পাহাড় প্রমাণ বোঝা তাঁর উপর। এত খাটাখাটনি করে বিজ্ঞানীর তৈরি নথি কোনো কাজে লাগল না। অসুবিধা কোথায়? সমস্যা মূলত টেকনিক্যাল। পশ্চিমবঙ্গ জীব বৈচিত্র্য পর্ষদের কম্পিউটারাইজড যে-ফরম্যাট মেনে নথি তৈরি করতে হত, তা হয়নি। তাতেই এত বিপত্তি। অন্যান্য বিএমসি (BMC)-এর মতো সূচীপত্রে ভূপ্রকৃতির বৈশিষ্ট্য, কৃষি বৈচিত্র্য, ভেষজ উদ্ভিদ বৈচিত্র্য, বিভিন্ন প্রাণী বৈচিত্র্য, জন বৈচিত্র্য, জন জীব বৈচিত্র্য ইত্যাদি পয়েন্টগুলো আলাদা উল্লেখ না থাকায় বাতিল হয়ে যায় নথি। খেজুরী ১ নং ব্লকের জীব বৈচিত্র্য পরিচালন সমিতির সম্পাদক তখন ড. প্রবালকান্তি হাজরা। মূলত প্রবাল বাবুর পরামর্শে পুনরায় ৫ নং অঞ্চলের জীব বৈচিত্র্যের নথি সুনির্দিষ্ট ছকে তৈরি করা হল। অফিসে জমা পড়ল নথিখানি। এবার ফুল মার্কস। অসম্ভব সুন্দর হয়েছে নথি। সারা পশ্চিমবঙ্গের জীব বৈচিত্র্য পর্ষদের কর্মশালায় সেটির সচিত্র রূপটি ব্যাখ্যা করে উপস্থিত অফিসারদের চমকে দিয়েছিলেন তিনি। রামচন্দ্র বাবুর তৈরি নথিটি একটি মডেল নথি হিসেবে দারুণ প্রশংসিত হয়েছিল ২০১৫ সালে।
(২)
ড. রামচন্দ্র মণ্ডল আদ্যন্ত সৎ ভদ্র মানুষ। কোনও কিছু প্রাপ্তির আশায় না, তিনি কাজ ভালো বাসেন। তাই নতুন নতুন কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন নির্দ্বিধায়। যে কাজে একবার মনোনিবেশ করেন, তার শেষ না দেখে তাঁর নিস্তার নেই। প্রয়োজন বোধে তাঁর নিজের পকেটে টান পড়ে। অবলীলায় নিজের সঞ্চিত অর্থ ব্যয় করতে পিছপা হন না। নিজের আর্থিক প্রশ্রয়ের বিনিময়ে কার্য উদ্ধার করতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। এমনই তাঁর সংকল্প, জেদ। সুষ্ঠু কার্য সম্পাদন করা তাঁর জীবনের মোক্ষ। পিছুটানহীন নির্বিচারে অর্থ বিলানো এ হেন মানুষকেও কটাক্ষ শুনতে হয়। কটুক্তি হজম করতে হয়েছে।
🍂১৯৮০ সালের গোড়ার কথা। খেজুরীর বারাতলায় কুঞ্জপুর বাজারের সঙ্গমস্থলে গড়ে উঠেছিল একটি চ্যারিটেবল ট্রাস্ট। 'শ্রীরামকৃষ্ণ সেবাশ্রম'। সেবামূলক কাজ আর শ্রীরামকৃষ্ণের ভাবাদর্শ প্রচার ছিল মূল লক্ষ্য। মূলত সেবামূলক কাজের প্রতিষ্ঠান হিসাবে এলাকায় আশ্রমের খুব নামডাক। একবাক্যে সবাই চেনে, জানে ও মানে আশ্রমের নিয়ম-নীতি আর কর্মসূচি। কিন্তু, এ হেন সেবা প্রতিষ্ঠানটিও একটি ঘুঘুর বাসা। বেনিয়মের আতুঁরঘর। নিয়মের তোয়াক্কা নেই। অসৎ উপায়ে কাঠের পুতুলের মতো পরিচালিত হচ্ছে সেটি। নিয়মের ফাঁকফোকর গলে চলছে কাজে ফাঁকি। অনিয়মের বেড়াজাল যখন ধরা পড়ে ২০১২ সালে, তখন সেবাশ্রমের বত্রিশটি বসন্ত পার হয়ে গেছে। আর যিনি অনিয়মগুলি ও কাজে ফাঁকি ধরে ফেললেন, তিনি ড. রামচন্দ্র মণ্ডল। তিনি তখন শ্রীরামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের ভাবপ্রচার পরিষদের সভাপতি। তাঁর জহুরী চোখ ধরে ফেলল যাবতীয় ফাঁকি। কী সেই অনিয়ম? ১৯৮০ সাল থেকে ২০১২। আশ্রমের জন্মলগ্ন থেকে দীর্ঘ প্রায় বত্রিশ বছর যাবৎ আশ্রমের যাবতীয় কার্যকলাপের কোনো অ্যাকাউন্ট রেজিষ্ট্রার নেই। অর্থাৎ, জমা খরচের হিসাব সংবলিত কাগজপত্র বেমালুম অমিল। শুধু তাই নয়, আশ্রম সংলগ্ন বিবেকানন্দ বিদ্যামন্দির প্রাথমিক বিদ্যালয়েরও সুষ্ঠু পরিচালনার কোনো সুব্যবস্থা নেই। এখানে একটি চ্যারিটেবল ডিসপেনসারি রয়েছে। ডিসপেনসারিতে হোমিওপ্যাথি ডাক্তার অসিত খাটুয়ার একচেটিয়া আধিপত্য। ডিসপেনসারির ঔষধপত্র ও কাজকর্মেরও কোনো হিসাব-রেজিষ্ট্রার নেই।
এমন একটি মহৎ প্রতিষ্ঠানের কোনো সুস্পষ্ট হিসাবনিকাশ নেই কেন? প্রশ্ন তুলেছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের ভাবপ্রচার পরিষদের সভাপতি রামচন্দ্র বাবু। বিনিময়ে জুটল অসম্মান। শ্রীরামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের ভাবপ্রচার পরিষদের কাছে নবনিযুক্ত সম্পাদক-সহ কমিটির সভাপতির পদ থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত শুরু হয়। সে-যাত্রায় ভাবপ্রচার পরিষদের সদস্যরা এসে পরিস্থিতি সামাল দেয় এবং যুগাবতার স্বামী বিবেকানন্দের জন্ম সার্ধশততম বর্ষে স্মারক ভবন নির্মাণের জন্য তৈরি সঙ্ঘের পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব বর্তায় রামবাবুর উপর। ভাবপ্রচার পরিষদের সদস্যদের আশ্বাসবাণী পেয়ে আশ্রমের বিদ্যালয়ের পঠনপাঠন ও নানান সমস্যা একা হাতে মোকাবিলা করেছেন তিনি। সারাক্ষণ আশ্রমে থেকে কচিকাঁচাদের সামগ্রিক বিকাশের জন্য, ব্রতচারী গান নাচ ই-লার্নিং ইত্যাদির জন্য পৃথক ভাবে শিক্ষক শিক্ষিকা নিয়োগ করতে সচেষ্ট হয়েছেন। সারাবছর বিভিন্ন মণীষীদের পালনীয় দিনগুলি ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক শিক্ষিকাদের নিয়ে সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন করেছেন। শিক্ষক মশাইদের বেতন কীভাবে বৃদ্ধি করা যায়, দিনরাত তার হিসাব নিকাশ করেছেন। বিদ্যালয়ের সহকারী অনুমোদন সহ (Affiliation) যাতে আপার-প্রাইমারির অনুমোদন পাওয়া যায়, তার জন্য স্কুলের প্রধান শিক্ষক সেবাব্রত হাজরাকে সঙ্গে নিয়ে ডিআই (DI বা District Inspector) অফিস ও অন্যান্য কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন জানাতে সরকারি অফিসে হন্যে হয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। খেজুরী অঞ্চল অফিসে যোগাযোগ করে একশো দিনের কাজে আশ্রমের পুকুর সংষ্কার করেছেন। সেই পুকুরের কাটা মাটি দিয়ে স্কুলের মাঠ ভরাট করা হয়েছে। পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা সভাধিপতির অনুমোদন সাপেক্ষে বিদ্যালয় সংলগ্ন মাঠে একটা 'চিলড্রেন পার্ক' করার জন্য প্ল্যানিং-সহ আবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। খেজুরীর ব্লক সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক (BDO)-এর সঙ্গে যোগাযোগ করে শিশুদের পানীয় জলের জন্য স্কুল চত্বরে একটি নলকূপ বসানো হয়েছে। ক্লাসরুম সারানো হয়েছে। জানালা দরজা রঙ করা হয়েছে। ইত্যাদি।
আরও আছে। স্কুলের সামনে বাঁশের বেড়া দিতে হবে। বেড়ার ভেতরে ফুলের চারাগাছ লাগানো হবে। বিদ্যালয়ের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে। বেড়া দেওয়ার জন্য লেবার দরকার। প্রয়োজন অর্থ। দুটোরই চরম অভাব। আসলে অভাব সঠিক মানসিকতার। সবসময় অর্থের বিনিময়ে কাজ করার মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন। সুতরাং লেবার পাওয়া গেল না।অগত্যা নিজের হাতে বেড়া দিয়ে অনেক ফুলের গাছ লাগিয়েছেন তিনি। আবার, মন্দির সংলগ্ন ক্যাম্পাসে ঢুকতেই ভক্তদের ব্যবহারের জন্য পুরুষ-মহিলা আলাদা ইউরিন্যালের ব্যবস্থা করা হয়েছে। চ্যারিটেবল ডিসপ্যানসারিতে রুগীদের ডাক্তারী পরিষেবা প্রদান হেতু একটি আলাদা রুমে টেবিল চেয়ার বেঞ্চ ইত্যাদি ব্যবস্থা করা হয়েছে। হোমিওপ্যাথি ওষুধের খরচাপাতি তিনি নিজে জোগান দিলেন। ডাক্তারদের সাম্মানিক ভাতার জন্য ডাক্তার জি পি সরকারকে এনে মেডিক্যাল ক্যাম্প আয়োজন করা হয়। উক্ত ক্যাম্পটি তাঁরই সংস্থার লিপিবদ্ধ করে বিনামূল্যে ওষুধ আনার ব্যবস্থা করায় হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার অসিত খাটুয়া নিজের জেদ ধরে থাকলেন এবং নিজের একচেটিয়া অধিকার কায়েম রাখলেন।
অন্যদিকে, স্মারক ভবনটি নির্মাণের জন্য কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থের প্রয়োজন। বাড়ি বাড়ি টাকা কালেকশনে রামচন্দ্র বাবুর সঙ্গ দিলেন দু-এক জন সদস্য। তাঁদের মধ্যে হলুদবাড়ি হাইস্কুলের হেডমাস্টার কিরীটি ভূষণ মণ্ডল অন্যতম। এছাড়া ৫ নং অঞ্চলে টাকা কালেকশনে সহযোগী ছিলেন বিদ্যাপীঠ স্কুলের শিক্ষক ইন্দ্রজিৎ গিরি। রামচন্দ্র বাবুর প্রতি জনসাধারণের এমন বিশ্বাস জন্মেছিল যে রামবাবু কারও নিকট পৌঁছে হাত পাতলে তিনি না করতে পারতেন না। কিছু না কিছু সাহায্য অবশ্যই মিলত। শুধু টাকা পয়সা জোগাড় করেই তিনি ক্ষান্ত হননি। বিশাল তাঁর মন। প্রয়োজনে নিজের গাঁটের পয়সা খরচ করতে তিনি দ্বিধাবোধ করতেন না। সেজন্য ভবন নির্মাণের জন্য তাঁর নিজের পকেট থেকে অতিরিক্ত এক লক্ষ ছাপান্ন হাজার টাকা ব্যয় করেছেন তিনি। তারপর গড়ে উঠেছে যুগপুরুষ স্বামী বিবেকানন্দের নামাঙ্কীত সার্ধ-শতবর্ষ স্মারক ভ্রমণটি। এবার আরও গুরুতর সমস্যা। রামবাবুকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে সম্পাদক দিলীপ দাস স্কুল সংক্রান্ত আলোচনায় রাজনৈতিক নেতাদের ডেকে আনলেন। অহেতুক রাজনৈতিক অনুপ্রবেশ রামচন্দ্র বাবুর তীব্র অপছন্দ। ফলস্বরূপ আশ্রমের একগুচ্ছ কাজ অসমাপ্ত রেখে নীরবে রামবাবুকে চিরতরে সেবাশ্রম ছেড়ে চলে আসতে হয়েছিল। ফলে শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের উন্নতির লক্ষ্যে তাঁর অক্লান্ত চেষ্টায় ছেদ পড়ে গেল। (ক্রমশঃ)
তথ্য সূত্র :
• প্রণম্য বৈজ্ঞানিক ড. রামচন্দ্র মণ্ডল মহাশয়
• শ্রী সুদর্শন সেন বিশিষ্ট শিক্ষক ও আঞ্চলিক
ইতিহাস গবেষক
• 'মনীষী ড. রামচন্দ্র মণ্ডল' – সম্পাদনা শ্রী জয়দেব
মাইতি ও শ্রী সুব্রতকুমার মাঝি
🍁
বাড়িতে বসেই রেজি.ডাক মাধ্যমে জ্বলদর্চির বিশেষ সংখ্যাগুলো সংগ্রহ করতে পারেন। যোগাযোগ হোয়াটসঅ্যাপ - ৯৭৩২৫৩৪৪৮৪
0 Comments