যেতে যেতে পথে
রোশেনারা খান
পর্ব (৮২)
বড় বৌদি আজ ইদের বাজার করতে এসেছিল। এদিকে আসেনি, কোনদিনই আসেনা। অসুস্থ মানুষটার সঙ্গে দেখা করে গেলে তাঁর ভাল লাগে। ওরা সে টুকুও করে না। অথচ আমার কাছে ওদের চাওয়ার শেষ নেই। যাই হোক, আমাদের কোনও ইদ নেই, উৎসব নেই। ওই দিনগুলো ভাল লাগে না। আমার যা কাজ, ডায়ালিসিস করিয়ে নিয়ে এলাম। বমিটা হয়নি, তবে বাচ্চাদের মত ভুলভাল বকছেন।
গতকাল সন্ধ্যাবেলা আনন্দবাজার থেকে ফোন করে ইদ স্পেশাল খাবারের রেসিপি ও আরও নানা তথ্য নিয়েছিল, আজ জেলার পাতায় প্রকাশিত হয়েছে। অনেকেই ফোন করে হালিম আর জালি কাবাবের রেসিপি জানতে চাইছেন। আমার উৎসবের কোনও প্রস্তুতি নেই, স্বাভাবিক কাজকর্ম করে চলেছি। সাহাদের গহনার সো-রুমে গেছলাম, রানীর কিছু গহনা বানাতে দিয়েছিলাম, ওগুলোই নিয়ে এলাম। বেশি কিছু দিতে পারব না। যতটা সম্ভব সাজিয়ে দেব।
আনন্দবাজারের তাপস সেক্সপিয়রের ওপর লেখাটার বিষয়ে কিছু বলছেন না বলে আমি আজকাল এর প্রচেত গুপ্তকে ফোন করলাম। উনি শীর্ষকে লেখাটা মেল করতে বললেন। আমাকে কবিতার বই রিভিউ করার কথাও বলছিলেন। আমি শীর্ষকেই লেখাটা মেল করলাম। শীর্ষ বলল, এটা আমার বিষয় নয়, আপনি প্রচেতকেই পাঠান, ওনার ইমেল আইডি দিচ্ছি। প্রচেত বিকেলে ফোন করে জানাল, ও লেখা পেয়েছে। আরও বলল, লেখা ওনাকে মেল না করে ‘রবিবাসরের’ যে ইমেল আইডি আছে সেখানে মেল করতে।
আজ ইদ, রানী সুহানা বাড়ি চলে গেছে। আমি যথারীতি ওনাকে ডায়ালিসিসে নিয়ে গেছলাম। প্রচেতকে ইদের শুভেচ্ছা জানলাম, আমার লেখার বিষয়ে জানাতে ৭ থেকে ১০ দিন লাগবে। এদিকে তাপস এখনো কিছু জানায় নি। সন্ধ্যাবেলা কলেজমাঠে কুইজের অনুষ্ঠানে গেছলাম, ওখানেই প্রচেতের ফোন পেলাম। বললেন, লেখা মনোনীত হয়েছে। খুবই ভাল লেখা, সবারই পছন্দ হবে। কবে ছাপা হবে, এখন বলা যাবে না। সময়মত ফোন করে ছবি চেয়ে নেব। এটাই আমার ইদের উপহার। চন্দ্রিমা অবশ্য কিছু ভোলে না। বিকেলে রুমালি রুটি, তন্দুরি চিকেন, মিষ্টি ফুল ইত্যাদি দিয়ে গেছে।
আজ কিছু লেখা হল না। শীর্ষর সঙ্গে ফোনে অনেক কথা হল। বললেন, বাংলাদেশ ভাল লেখা, ভাল বই পেলে চুরি করে। আমি আমার অভিজ্ঞতা জানালাম। ওরা কিভাবে আমার বই প্রিন্ট করে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে। উনি বললেন, আপনার বই ওরা হয়ত জেরক্স করে বিক্রি করছে। প্রিন্ট করতে বেশি খরচ পড়বে। আপনি কিছুই করতে পারবেন না। এই বিষয় নিয়ে সমরেশ মজুমদার ও আরও অনেকে সেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেও কিছু করতে পারেননি। আরও অনেক ব্যক্তিগত কথাবার্তাও হল।
আজ সাহবাজের বাবা আমাকে ডেকেছিলেন, ওর স্ত্রী ও বড়ছেলের কথাবার্তা ভাল লাগেনি। ওদের চাহিদা পূরণ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। সম্ভব হলেও দিতাম না। ভবিষ্যতে ওদের চাহিদা হয়ত আরও বাড়বে। আমাদের মানসিকতার সঙ্গে ওদের মানসিকতা মিলবে না। আমি সাহজামালকে যা জানাবার জানিয়ে দিয়েছি। এ বাড়ি আমার ছেলের। বিক্রি করে একটা ফাণ্ড তৈরি করার ইচ্ছে আছে, ফান্ডের টাকা দুঃস্থ ছেলে মেয়েদের পড়াশোনায় সাহায্য করা হবে।
আজ ‘আপনিই সাংবাদিক’ বিভাগের জন্য একটা লেখা পাঠিয়ে ছিলাম। ওরা জানাল, লেখাটা আর একটু বাড়িয়ে পাঠাতে। শীর্ষকে একটা লেখা মেল করেছিলাম, লেখাটা যায় নি। তাই রাতে আবার মেল করলাম। এদিকে মাস্কুরার বোনের ভর্তির বিষয়ে উইমেন্স কলেজের প্রিন্সিপাল জয়শ্রী লাহার সঙ্গে কথা বললাম। উনি জানালেন ভূগোলে একটা সিটও খালি নেই।
আনন্দবাজারের জেলার পাতায় আজ ‘আপনিই সাংবাদিক’ বিভাগে আমার লেখা ‘সার ও কীটনাশকের কারণে খাদ্যে বিষ’ প্রকাশিত হয়েছে। গোপা ফোন করে ছিল। বলল, আমার সঙ্গে কথা বলতে চায়, যদি আমি একটুখানি সময় দিতে রাজি হই। ওকে মঙ্গলবার আসতে বলেছি।
NRS এর একজন জুনিয়র ডাক্তারকে মারার প্রতিবাদে দেশ জুড়ে আন্দোলন চলছে। নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি না দিলে ওরা কাজে যোগ দেবে না। মাসকুরা ফোন করে বলল, ‘আপনি কিছু লিখুন, মিডিয়া ভুলভাল খবর ছড়াচ্ছে’। কিন্তু সরকারের বিরুদ্ধে কোনও খবর ওরা ছাপাবে না। এটা আমি জানি। তবুও প্রচেতের সঙ্গে কথা বললাম। উনি বললেন, আমার বিভাগে এসব লেখা যায় না। তবে আবারও সেক্সপিয়রকে নিয়ে লেখাটির প্রশংসা করলেন। আমি বাধ্য হয়ে যা লেখার তা সোশ্যাল মিডিয়াতেই লিখলাম। সমর্থন করেছেন অনেক জন, কেউ লেখার প্রতিবাদ করেন নি।
ভোর ৫ টাতে আজ ডায়ালিসিস সুরু হওয়ার কথা ছিল, নার্সিংহোমে পৌঁছে দেখি গেট খোলেনি। কলিংবেল বাজাতে গেট খুলল। ডায়ালিসিস শুরু হল ১ ঘণ্টা দেরিতে। বাড়ি ফিরতেও দেরি হল। ওনার একটা ধারণা হয়ে গেছে ,ওনার শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, তাই অনেক সময় ফলস অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়।
কয়েকদিন ধরে লোকাল টিভি চ্যানেলে একটি টক-শোতে অংশগ্রহণ করার জন্য বলছিল, আজ গেছলাম। কলকাতার টিভি চ্যানেলের মত এদের উন্নত ব্যবস্থা নেই। আমার বেশ অসুবিধাই হচ্ছিল। কয়েক পুরুষ পূর্বের সম্পর্ক ধরে এক দম্পতিকে ঘরছাড়া, এমন কী গ্রাম ছাড়া করেছে গ্রামের লোক। এখন জমিজমা, সম্পত্তি ছাড়া করতে চাইছে। বিডিও, পুলিশ কারো কথা শুনছে না। অনেকটা খাপ পঞ্চায়েতের মত এদের ব্যাপার। বিয়ে বহুদিন আগেই হয়েছে। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই শিক্ষকতা করেন। আলোচনার বিষয় ছিল, এঁদের বিয়ের বৈধতা ও গ্রামবাসীর অনৈতিক আচরণ। গ্রামবাসীর বক্তব্য ওঁরা সম্পর্কে ভাইবোন, তাই এই বিয়ে অবৈধ। এক পরিবারের হলেও কয়েক পুরুষের পর আইনত এই বিয়েতে বাধা থাকে না। ধর্মের দিক দিয়ে দেখলে পুরানে এমন আনেক দেবতার নাম পাওয়া যায়, যারা নিজের বোনকে, এমন কি নিজের মেয়েকেও বিয়ে করেছেন।
🍂 বোনেদের ভাইয়েদের প্রতি সবসময় একটা আন্তরিক টান থাকে। ভাইয়েদের মধ্যে সেই টান খুব একটা দেখা যায় না। আমি অন্তত আমার (১জন বাদে) ভাইয়েদের মধ্যে দেখিনি। আজ বিশেষ প্রয়োজনে রানীকে নিয়ে কলকাতা চেকআপে গেছলাম। ডাক্তার সব শুনে ওষুধের ডোজ কমিয়ে দিলেন। বললেন, মানসিক সমস্যার জন্য যে সমস্ত মেডিসিন খাচ্ছেন, তার জন্য ওয়েট বাড়ছে ও অন্যান্য সমস্যা হচ্ছে।
সুহানা আজ হস্টেলে চলে যাবে। গতরাতে ফোন করে মেজদা জানিয়েছিল।
বাড়ি ফিরে শুনলাম দাদা বৌদি আমাদের বাড়ি আসেননি। খান সাহেবের সঙ্গে দেখা করার ভদ্রতা টুকুও প্রয়োজন বোধ করেননি। সিপাইবাজার থেকে টোটো পাঠিয়ে দিয়েছিল। তাতেই মালপত্র তুলে নিয়ে চলে গেছে সুহানা। ‘মুসলিম গার্লস হোস্টেল’ সিপাইবাজারে, আমাদের বাড়ি থেকে ৫/৭ মিনিটের হাঁটা পথ। আজ ওঁরা অসুস্থ মানুষটাকে একবার দেখতে আসাও উচিত মনে করেনি। নিজেদের অসময়গুলো ভুলে গেছে, নিজের লোকেরা যদি এতখানি বেইমান হয়, তাহলে লোককে কি বলব?
কলকাতার একটি সেচ্ছাসেবী সংগঠন এই বছর ‘মানবরত্ন’ সম্মানে ভূষিত করেছে। আজকাল এসব মনকে ছোঁয়না। এখন এসব টাকা দিয়েও কেনা যায়। চারিদিকে শুধু মিথ্যের জয় জয়কার। কেউ সহজ কথা সহজ করে বলে না। ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বলতেও পারিনা্, শুনতেও পারি না। তবুও সাবধানে পা ফেলে চলতে হচ্ছে।
আজ ওনার শরীরটা মোটেও ভাল নেই, কিছুই খেতে পারছে না। অনবরত বমি হয়ে যাচ্ছে। মনটা একে বারেই ভাল নেই। আমার সঙ্গেই কেন এমন হচ্ছে জানিনা। আমি আর সহ্য করতে পারছি না। উনি বার বার বলছেন, বাবলির সঙ্গে আর মনে হয় আমার দেখা হবে না। বাবলির সঙ্গে কথা বললাম, ওরা ১৫ আগস্ট সকালে দমদম পৌঁছাবে। আজ ‘আওয়াজ’এর মিটিংএ গেছলাম। সর্বভারতীয় এই সংগঠনটি গড়ে তোলা হয়েছে ধর্ম, ভাষা, শিক্ষা ইত্যাদি যে কোন দিক দিয়ে যারা সংখ্যালঘু, মূলত তাদের জন্য।
আমরা যে জমির ওপর বাড়ি বানিয়ে বাস করছি সেটা সম্ভবত ১৯৭৪ সালে কেনা হলেও রেকর্ড হয়েছিল না। এখানকার সমস্ত জমিই ৯৯ বছরের লিজ নেওয়া। ১১ জুলাই (২০১৯) তার হিয়ারিং আছে। আমাকেই যেতে হবে। চন্দ্রিমা সঙ্গে যাবে বলেছে। সমস্ত দলিলপত্র জেরক্স করে গুছিয়ে রাখলাম। আজ নার্গিসদি (নার্গিস সাত্তার) ফোন করেছিলেন, অনেকক্ষণ কথা হল। আমাকে বার বার ওনার বাড়ি যাওয়ার জন্য বলছেন। তনভির ৬ মাসের জন্য মালদ্বীপ গেছে কেন্দ্রিয় সরকারের নির্দেশে। আবার ওখানে থেকে যেতেও পারে। ওকেও ইয়াসিন ও আমার যুগ্ম সম্পাদনায় যে গ্রন্থ প্রকাশের কথা ভেবেছি, তা্র জন্য লেখা পাঠাতে বলেছি।
জারা স্কুল থেকে এস্কারসনে গেছে, কোনও যোগাযোগ করতে দিচ্ছে না। দীপের খুব মন খারাপ। মন খারাপ আমারও। বাবলির ’বি এম ডাব্লিউ’ নতুন গাড়ি এসেছে, ছবিতে দেখলাম। আমার শরীরটা ঠিক লাগছে না, ভীষণ ক্লান্ত লাগে আজকাল। ডাক্তার তো কোন মেডিসিন দিলেন না। হাঁচি হচ্ছে, জ্বর আসতে পারে। বেশ কয়েকদিন হল রানীরও জ্বর, এখনও সুস্থ হয়ে উঠতে পারেনি।
ক্রমশ
0 Comments