জ্বলদর্চি

স্পর্শ /শঙ্খজিৎ

স্পর্শ 

শঙ্খজিৎ 

বোধহয় জানা নেই তোমাদের বাড়িটা কোথায়! সম্ভবত আমার দেওয়া চাঁপাফুলের ডালটা বড় হয়েছে। এতগুলো বছর পর তা হওয়ারই কথা। তুমি কাঠগোলাপ ভালোবাসতে। চড়কের পর পুকুরপাড়ে সন্ন্যাসীদের হাতে ভাঙা ডালখানা জোগাড় করে টবে পুঁতে ছিলাম। একটু বড় হয়ে শেকড় ধরতেই গাছটা তোমার হাতে সঁপে নিশ্চিন্ত হয়েছিলাম। এতটা গভীর হয়নি প্রণয়। তার আগেই তুমি চলে গেলে অন্য মানুষকে চিনতে। আমাকে বলোনি কখনও নিরাসক্তির কথা। ভেবেছিলে আমার ভিতর প্রদাহ হবে। হয়নি। তুমি অন্যত্রগামী হলে কিঞ্চিৎ হাসিই পেয়েছিল। যাক,কাঠবেকারের সম্বলহীন দৈন্যতা থেকে মুক্তি পেলে! 

আমাকে যেতে হত বাবার ব্যবসা দেখতে।
তারপর সেখান থেকে পিসেমশাই এর হাত ধরে পোস্তা বাজারে সুদের ব্যবসা। একটা সময় পর এসব ছেড়ে নয়ডায় তথ্যপ্রযুক্তি কর্মচারী হয়ে কিছুদিন। কিছুদিন গুরুগ্রাম। এখন সব ছেড়েছুড়ে বাড়ি এসেছি হাতভর্তি টাকা নিয়ে। বন্ধু ল্যাণ্ড ডেভেলপার। তাকে হাত করে বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালের ব্যবসাটা মনেহচ্ছে ভালই জমে যাবে। অথচ এত এত বছর পর আমার স্মৃতিশক্তিতে জং ধরার পাশাপাশিই পাক ধরেছে অন্তর্বর্ত্তী যৌবনে। 
তোমার বাড়ির সামনে গোটা আটেক বার পাক খেলাম। চিনতে পারলাম না। চাঁপা গাছটা নেহাৎ নেই;তা বলে জানালার সামনের সেই পাঁচিলটার তো নিভে যাওয়ার কথা নয়! 

কি জানি! অন্ধকার নামতেই নানা রঙের আলো আমায় ঘিরে ধরে। আমি পুড়ে যাই। খুব পুড়ে যাই। রাস্তার সঙ্গে গাঁ ঘেঁষাঘেষি করে দাঁড়ানো অট্টালিকার ভিতর থেকে আলো আসতে থাকে। অসংখ্য সংসার কি আশ্চর্য নিয়মে একটার উপর আরেকটা বাসা বেঁধেছে। অথচ বাঁধনের অবশ্যম্ভাবী নিয়তি ছিন্নতা। 

বলরামের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। তুমি যাকে পড়াতে। আকার আয়তনে বড় হওয়া এই ছেলেটার মুখ আজও অবিকল। আমাকেও চিনতে অসুবিধা হয়নি তার। 

"...দিদির শববাহী শকটটা রাখা ছিল এখানেইই যে গাছটা মাথা তুলে দাঁড়িয়ে ছিল তখনও;ফ্ল্যাট হওয়ার সময় কাটা পড়বে পড়বে করছে তখন, কদিন বাদেই...তার থেকে একটা ফুল ঝরে পড়ল শকটের শরীরে। আর কিছু নেয়নি দিদি। নিজের বাপ দাদাদের শেষ দেখাটুকুও নয়..."
🍂

Post a Comment

0 Comments