জ্বলদর্চি

অজয়কুমার মুখোপাধ্যায় (মুখ্যমন্ত্রী - পশ্চিমবঙ্গ সরকার, স্বাধীনতা সংগ্রামী, তমলুক)/ ভাস্করব্রত পতি

মেদিনীপুরের মানুষ রতন পর্ব -- ৬৫
অজয়কুমার মুখোপাধ্যায় (মুখ্যমন্ত্রী - পশ্চিমবঙ্গ সরকার, স্বাধীনতা সংগ্রামী, তমলুক) 

ভাস্করব্রত পতি

"মেদিনীপুর জেলাতে তমলুক নাম
সেরা এক মহকুমা সংগ্রামের ধাম। 
ভারত ছাড়ো সংগ্রাম, অবদান তাঁর
ভুলিবার নহে তাহা, সেরা সে সবার। 
১৭ ই ডিসেম্বর ৪২ সালে
জাতীয় সরকার হল সংগ্রামের কালে। 
সমান্তরাল ছিল সে ব্রিটিশ শাসনে
শক্তি বলে ছিল সেরা যোগ্য সে আসনে। 
সরকার চলেছিল, দুবছর ধরে
বহু কীর্তি কথা তার কি অব বিস্তারে। 
...... 
অজয় মুখার্জী ছিল কলা ও কুশলী
প্রথমে অর্থের দায় নিয়েছিল তুলি। 
দ্বিতীয় সর্বাধিনায়ক ছিলেন যে তিনি
দেশজুড়ে জানে তারে, সে মহান গুণি।।
..... 
বিপ্লবী নামেতে এক, ছিল বুলেটিন
সপ্তাহে বাহির হতো, অন্তত দুদিন। 
আগ্রহে থাকিত সবে, কখন যে পাবে
গোপনে তাহার কথা, চুপি চুপি কবে।।"--

এভাবেই পটচিত্র গীতিতে পটুয়ারা তুলে ধরেছিলেন অজেয় পুরুষ অজয়কুমার মুখোপাধ্যায় এবং তাঁর জাতীয় সরকার সম্পর্কে। সেসময় ব্রিটিশ ভারতে উত্তর প্রদেশের বালিয়া, মহারাষ্ট্রের সাতারা এবং পশ্চিমবঙ্গের তমলুকে গঠিত হয়েছিল সমান্তরাল জাতীয় সরকার। এখানে সেই সরকার গঠনে অন্যতম কারিগর ছিলেন অজয়কুমার মুখোপাধ্যায়। মেদিনীপুরের মাটির সন্তান।মেদিনীপুরের মানুষ রতন। এহেন স্বাধীনতা সংগ্রামী পরবর্তীতে হয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। উল্লেখ্য, তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার ১৯৪২ এর ১৭ ই ডিসেম্বর থেকে ১৯৪৪ এর ৮ ই আগস্ট পর্যন্ত দীর্ঘস্থায়ী ছিল। যা ভারতের মধ্যে সর্বাধিক। 
আইন অমান্য আন্দোলনের মাধ্যমেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন অজয়কুমার মুখোপাধ্যায়। ১৯৩০ এর ১৫ ই এপ্রিল নিজের জন্মদিনের দিনই এজন্য তিনি গ্রেপ্তার হন। বিচারে ১ বছর ৩ মাস জেল এবং তিন'শ টাকা জরিমানা করা হয়। অনাদায়ে আরও ৩ মাস জেল। ১৯৪২ এর ১৭ ই ডিসেম্বর তমলুক মহকুমাতে গঠিত হল মহা ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার। এই সরকারের প্রথম সর্বাধিনায়ক ছিলেন সতীশ চন্দ্র সামন্ত এবং অর্থমন্ত্রী ছিলেন অজয়কুমার মুখোপাধ্যায়। আর সমর ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন সুশীল কুমার ধাড়া। একসময় সতীশ সামন্ত গ্রেফতার হলে দ্বিতীয় সর্বাধিনায়ক হন তিনিই (২৭/০৫/১৯৪৩ - ১৯/১০/১৯৪৩)। এই জাতীয় সরকারের মুখপত্র "বিপ্লবী" পত্রিকার সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করে গিয়েছেন যথার্থভাবে। 

১৯০১ এর ১৫ ই এপ্রিল তমলুক শহরে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা শরৎচন্দ্র মুখোপাধ্যায় এবং মা ছিলেন ইন্দুমতী দেবী। পড়াশোনা শুরু হ্যামিল্টন হাইস্কুলে। ১৯১৭ তে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষাতে পাস করে ভর্তি হন হুগলীর উত্তরপাড়া কলেজে। এরপর ১৯১৯ সালে ইন্টার মিডিয়েটে প্রথম বিভাগে পাস করে প্রেসিডেন্সি কলেজে উদ্ভিদবিদ্যা অনার্স নিয়ে ভর্তি হন। কিন্তু ঠিক দু বছরের মাথায় গান্ধীজীর ডাকে পড়াশোনা ছেড়ে অসহযোগ আন্দোলনে যুক্ত হন। নিজেকে দেশমাতৃকার সেবায় নিয়োজিত করেন তখন থেকেই। 
১৯২৪ এ হ্যামিল্টন হাইস্কুলে এক স্বদেশী মেলায় তাঁর সঙ্গে আলাপ পরিচয় হয় সতীশচন্দ্র সামন্তের। যা পরবর্তীতে ইতিহাস হয়ে লেখা রয়েছে। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের নামে 'দেশবন্ধু পল্লী সংস্কার সমিতি' প্রতিষ্ঠিত হয় কয়েকটি। নিমতৌড়িতে প্রতিষ্ঠিত জাতীয় বিদ্যালয় এরই অন্যতম। নেতৃত্বে ছিলেন অজয়কুমার। শুরু হয় পল্লী সংস্কারের কাজ। ধীরে ধীরে পরিচিত হতে থাকেন সেই সময়ের বিখ্যাত মানুষজনের সাথে। নিমতৌড়ি কেন্দ্রে যেসব কর্মসূচি গৃহীত হয়েছিল, সেগুলি হল -- নারীজাতির উন্নয়ন, বয়স্ক শিক্ষা, মাদক বর্জন, খাদির ব্যবহার, প্রাদেশিক ভাষা শিক্ষা, ছাত্র সংগঠন গড়ে তোলা, গ্রামীণ শিল্পের উন্নয়ন, গ্রামীণ স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, রাষ্ট্রভাষা শিক্ষা, সাম্প্রদায়িক ঐক্য রক্ষা, বুনিয়াদী শিক্ষা, অস্পৃশ্যতা বর্জন, কৃষক ও শ্রমিক সংগঠন গড়ে তোলা ইত্যাদি। স্বাধীনতা আন্দোলনে নিমতৌড়ি পল্লী সংস্কার কেন্দ্রের ভূমিকা উল্লেখ্যনীয়।

১৯৪২ এর ভারত ছাড়ো আন্দোলন (০৯/০৮/১৯৪২) শুরু হতেই ব্রিটিশ সরকার বহু নেতাকে গ্রেফতার করতে থাকে। অজয়কুমারের নামেও পরোয়ানা হয়। কিন্তু তিনি তা জানতে পেরে নিজেকে আত্মগোপন করে নেন। জেলের বাইরে থেকে এবং ব্রিটিশ পুলিশের চোখের আড়ালে থেকেই বৈপ্লবিক কাজকর্ম করার সুযোগ তিনি পেয়েছিলেন। ২৯ শে সেপ্টেম্বর জেলার সর্বত্র একই দিনে থানা, আদালত, নানা সরকারি অফিস দখলের ব্লু প্রিন্ট কষা হয়। যার মূল পরিকল্পনাদাতা ছিলেন অজয়কুমার মুখোপাধ্যায়। তমলুক মহকুমায় (তমলুক, মহিষাদল, সুতা হাটা) থানা দখলের নেতৃত্ব দেন তিনিই। সেদিন তমলুকে বহু স্বেচ্ছাসেবকের মৃত্যু হয় পুলিশের গুলিতে। তাঁরা হলেন মাতঙ্গিনী হাজরা রামেশ্বর বেরা, ভূষণ চন্দ্র জানা, চন্দ্রমোহন দিণ্ডা, লক্ষ্মীনারায়ণ দাস, বিষ্ণুপদ চক্রবর্তী, নিরঞ্জন জানা, বিপিনবিহারী মণ্ডল, জীবনকৃষ্ণ বেরা, নগেন্দ্রনাথ সামন্ত এবং নিরঞ্জন পারিয়াল। এই আক্রমণের তিনিই ছিলেন সেনাপতি। আর ব্রিটিশ পুলিশের এই হত্যালীলা আসলে তরান্বিত করে দেয় ভারতের স্বাধীনতা প্রাপ্তির দিনক্ষণ। ৪২ এর আন্দোলনের সময় তমলুক মহকুমায় গুলিতে শহীদ হয়েছিলেন ৪১ জন এবং আহত হয়েছিলেন ১৯৯ জন। অন্যান্য ভাবে আহত হয়েছিলেন ১৪২ জন এবং ধর্ষিতা হয়েছিলেন ৭৩ জন মহিলা। এরপর ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীনতা লাভ করে। শুরু হয় নতুন যুগের সূচনা। 
১৯৫২ সালে রাজ্য বিধানসভার প্রথম নির্বাচনে তমলুক কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী হয়ে জয়লাভ করেন। নিজের ভাই বিশ্বনাথ মুখার্জী কমিউনিস্ট পার্টির হয়ে তাঁর বিপক্ষে ছিলেন। ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের মন্ত্রীসভায় ১২ ই জুন সেচমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান অজয় কুমার মুখোপাধ্যায়। ১৯৫৭ তে আবারও বিশ্বনাথ মুখার্জীকে হারিয়ে দ্বিতীয় বারের জন্য সেচমন্ত্রী হন তিনি। ১৯৬২ সালের নির্বাচনেও জয়ী হন এবং ১২ ই মার্চ মন্ত্রীত্ব পান। কিন্তু ঐ বছরের ১ লা জুলাই মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের মৃত্যু হলে মুখ্যমন্ত্রী হন প্রফুল্লচন্দ্র সেন। ১৯৬৩ সালে কামরাজ পরিকল্পনায় তিনি মন্ত্রীসভা থেকে বাদ পড়েন। ১৯৬৪ র জুন মাসে মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্লচন্দ্র সেন এবং কংগ্রেস নেতৃত্ব অতুল্য ঘোষের উদ্যোগে প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির সভাপতি হন। কিন্তু ১৯৬৬ র ২০ শে জানুয়ারি তাঁকে সেই পদ থেকে অপসারিত করা হয় গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের কারনে। কলকাতায় ৫-৬ ই ফেব্রুয়ারি কংগ্রেস কর্মী সম্মেলন করে শুরু করলেন নতুন দল "বাংলা কংগ্রেস"। তার পরিপ্রেক্ষিতে ৭ ই ফেব্রুয়ারি তাঁর এ আই সি সি'র সদস্যপদ বাতিল করে দেওয়া হয়। ১৯৬৭ এর ১৯ শে ফেব্রুয়ারি চতুর্থ নির্বাচনের পর ULF (ইউনাইটেড লেফট ফ্রন্ট) এবং PULF (পিপলস ইউনাইটেড লেফট ফ্রন্ট) মিলিত ভাবে অজয় মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে মন্ত্রীসভা গঠন করে। মুখ্যমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হন তিনি। জ্যোতি বসু হন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু ২১ শে নভেম্বর ঐ সরকারকে বরখাস্ত করে রাজ্যপাল। ১৯৬৯ এর ৯ ই ফেব্রুয়ারি অন্তর্বর্তী নির্বাচন হয়। ২৫ শে ফেব্রুয়ারি যুক্তফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রীসভা গঠিত হয় অজয় মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে। তিনি হন মুখ্যমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী। জ্যোতি বসু হন উপ মুখ্যমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ১৯৭০ এর ১৬ ই মার্চ শরিকি দ্বন্দ্বের কারণে পদত্যাগ করলে ১৯ শে মার্চ রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হয়। ১৯৭১ এর ১০ ই মার্চ আবারও অন্তর্বর্তী নির্বাচন হলে পুনরায় মুখ্যমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হন অজয় মুখোপাধ্যায় (২রা এপ্রিল)। নব কংগ্রেস দল সমর্থন করে অজয় বাবুকে। এই গনতান্ত্রিক জোটে ছিল নব কংগ্রেস, বাংলা কংগ্রেস, এস এস পি, মুসলিম লীগ, পি এস পি, গোর্খা লীগ, আদি কংগ্রেস এবং ফরোয়ার্ড ব্লক। সিপিআই বাইরে থেকে সমর্থন জানায়। ঠিক দুমাস পরে ৬ ই জুন 'বাংলা কংগ্রেস' দুভাগে ভাগ হয়ে যায়। শুরু হয় অরাজক পরিবেশ। ২১ শে জুন তিনি পদত্যাগ করেন। আর ২৯ শে জুন থেকে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হয় পশ্চিমবঙ্গে। ১৯৭২ এ ষষ্ঠ সাধারণ নির্বাচনে তমলুক কেন্দ্র থেকে তিনি ফের জয়ী হন। আর কংগ্রেসের সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের নেতৃত্বে মন্ত্রীসভা গঠিত হয়। ১৯৭৭ এর ২৬ শে জানুয়ারি তাঁকে দেওয়া হয় 'পদ্মবিভূষণ' সম্মান। এর আগেই অবশ্য পেয়েছেন 'পদ্মশ্রী' পুরস্কার। ১৯৮৪ এর জানুয়ারি মাসে অসুস্থ হয় পিজি হাসপাতালের উডবার্ন ওয়ার্ডের ২২ নম্বর বেডে ভর্তি হন। ১৯৮৬ র ২৭ শে মে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত এই বেডটিই ছিল তাঁর বেঁচে থাকার ঠিকানা। 
১৯৪২ এর আগষ্ট আন্দোলনে অজয়কুমার মুখোপাধ্যায়ের ভূমিকা ছিল কিংবদন্তিপূর্ণ। মাতঙ্গিনী হাজরা যখন গুলিবিদ্ধ হন, তার ঠিক চব্বিশ ঘন্টা আগে অজয়কুমার মুখোপাধ্যায়কে তিনি বলেছিলেন, "গান্ধীজিকে কখনও দেখিনি। দাদাবাবু, তুমিই আমার মন্ত্রদাতা গুরু। তোমার কথা আমার কাছে বেদবাক্যের চেয়ে দামি।" বিপ্লবী আন্দোলনের সময় অজয় কুমার মুখোপাধ্যায়ের নাম গোপন রেখে ডাকা হত 'দাদাবাবু' নামে। আসলে ব্রিটিশ পুলিশকে ধোকা দেওয়ার জন্য এই পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছিল। আর তমলুক থানা দখল করে গুলিবিদ্ধ সেই স্বেচ্ছাসেবক মৃত্যুর লেলিহান শিখায় জ্বলতে জ্বলতে বলেছিলেন, "অজয়দাকে বলে দিও, থানা দখল করেছি!" 

অজয়কুমার মুখোপাধ্যায় ছিলেন বিপ্লবের স্ফুলিঙ্গ। তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্বে সেদিন ব্রিটিশ বিরোধী ঝড় কাঁপিয়ে দিয়েছিল মেদিনীপুরের মাটি। লড়িয়ে দিয়েছিলেন ব্রিটিশ শাসনের ভিত। হাজার হাজার মানুষ দেশের স্বাধীনতাকামী যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন অকুতোভয় চিত্তে। ১৯৪২ এর ২৯ শে সেপ্টেম্বর কি ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটেছিল তার বিবরণ দিতে গিয়ে স্বয়ং অজয়কুমার মুখোপাধ্যায় লিখেছেন --- ঐ ২৯শে সেপ্টেম্বর দশ হাজার লোকের আর একটি শোভাযাত্রা অন্য রাস্তা দিয়ে তমলুক সহর দখল করতে যাচ্ছিল, সহরে ঢুকে পড়লে গুলি চলে, অনেকে মারা যায় ৷ দশ বার বছরের একটি ধোপার ছেলেও মারা যায়। আমি গভীর রাতে ঐ ধোপার বাড়ী যাই। তারা অতি গরীব, গ্রামে জমি নেই বাড়ী করার। নদীর বাঁধের বাইরে চড়ার ওপর দুধারে দুটি চালা ফেলে দিয়ে কুঁড়ে করেছে। দেওয়াল নেই, হামাগুড়ি দিয়ে ঢুকতে বেরুতে হয়। ভেতরে খড় বিছিয়ে স্বামী স্ত্রী এবং ১০।১২ বছরের একমাত্র ছেলে শোয়। আমার নাম শুনে ধোপা হামাগুড়ি দিয়ে বেরিয়ে এল। পিছনে পিছনে স্ত্রী এসে একহাত ঘোমটা দিয়ে স্বামীর পিছনে দাঁড়াল। আমি সান্ত্বনায় ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। কাঁদতে কাঁদতে ধোপা দুচারটে কথা বলল, ধোপানী তাকে ঠেলে দিয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়াল ঘোমটাটা কপাল পর্যন্ত তুলে দিলে। কাঁদতে কাঁদতে বলল “দাদাবাবু, আমরা ছোটজাত৷ গ্লাসের গায়ে হাত দিলে বড় জাতরা সে জল আর খায় না। লোকের ময়লা সাফ করে সামান্য যা পাই তাতে তিন জনের পেট ভরে না। নিজেরা না খেয়ে ছেলেটাকে খাইয়ে বড় করেছি। ইস্কুলে পড়ছিল। একবাটি মুড়ি খেতে দিলুম বললে রেখে দাও ঘুড়ি উড়িয়ে এসে খাব। হেঁট হয়ে দেখ দাদাবাবু ঐ মুড়ির বাটি চকচক করছে। সে ছেলে আর ফিরল না— ঐ বাটির পাশে দুজনে বসে কাঁদছিলুম। সে নাকি তমলুক সহরে গুলিতে মারা গেছে। তার দেহটাও আমরা পাব না। সে চাঁদ মুখ আর কখনও দেখতে পাব না । মার বুকের ব্যাথা তোমাকে কি বোঝাব।” একটু চুপ করে গেল। তারপর গলাটা পরিষ্কার করে নিয়ে বললে— “দাদাবাবু, আমরা ছোট লোক লেখাপড়া জানি না। মনের মধ্যে কি হচ্ছে তোমাকে ভাষায় বোঝাতে পারছি না। তবে দাদাবাবু একটি কথা বলি— “তোমরা এই যুদ্ধ চালিয়ে যাও তা হলে আমি মা হয়েও ছেলের শোক ভুলব।”
কৃতজ্ঞতা -- জয়দীপ পণ্ডা
🍂


Post a Comment

0 Comments