জ্বলদর্চি

কালের অতল তলে কলোরাডো - ১২/ চিত্রা ভট্টাচার্য্য

কালের অতল তলে কলোরাডো -১২  
চিত্রা ভট্টাচার্য্য
 
                                                                                  ''এ জীবনে যত টুকু চেয়েছি ,মন বলে ,তার ও বেশী পেয়েছি ---পেয়েছি ,''
    পাহাড়ের ঢালু তটে কিছুটা সমতলে নিঃসঙ্গ এক পাথরের রোয়াকের ওপর পরিশ্রান্ত আমি একাকী বসে আছি। ফ্রুটা  মিউজিয়ামের স্বপ্ন ময় পরিবেশে কোটি কোটি বছর আগে হারিয়ে যাওয়া নির্বাক পৃথিবীর জীবাশ্ম হাড়ের স্তূপ প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীর কঙ্কাল ---সেই ঐতিহাসিক বিস্ময়ে সমৃদ্ধ হয়ে আমার মন ,আমার ভাবনা কে সুদূর অতীতে পাতালের অন্ধকার গহ্বরের দিকে অদৃশ্য আকর্ষণে টেনে  নিয়ে চলেছে। ব্রতীনের এডভেঞ্চারের দল অনেক টা পথ সামনের দিকে এগিয়ে গিয়েছে। বেলা শেষের ধূসর আকাশে সারাদিনের ক্লান্ত পাখির ডানায় কুলায়ে ফেরার ব্যাকুলতা। একটু পরেই এই পাহাড়ের পথে ও ঝুপ করে রাত্রির গাঢ় অন্ধকার নেমে আসবে । 

 গতকালের শেষ বিকেলের সূর্যাস্ত মনে পড়ছে ,আর্চেস পার্কের ফায়ারি ফার্নেস এর কাছে এমনি এক পাথুরে  চট্ট্যানের ওপর তন্ময় হয়ে এক ঐকান্তিক চাওয়া নিয়ে  শুধুই চোখ মেলে বসেছিলাম   ---কমলা রাঙা আকাশে অস্তগামী সূর্যের রক্তিম আভায় এ পাহাড় যেন অসময়ে লাল আবীরে নিজেকে রাঙিয়ে হোলি খেলায় মেতেছিল। বিদায়ী সূর্যের অস্ত রাগের শেষ আলোক রশ্মি পাহাড়ের শীর্ষ চূড়ায় রক্তাভ বেলে পাথরের সাথে মিশে চোখ ধাঁধানো উজ্জ্বল লাল -- যেন দাউ দাউ অগ্নি শিখা প্রচন্ড তড়িৎ গতিতে ছুটে চলেছিল পর্বত থেকে পর্বত শিখরে।সেই খাড়া বিশাল উঁচু লাল পাহাড়ি দেওয়াল গুলো প্রকৃতি তার সুনিপুন কারিগর। মানুষের সাহায্য ছাড়া এমন শিল্প নিজের হাতে স্বীয় খেয়ালে বানিয়েছে  -- ,অসীম বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যাই। অবাক লাগে, মাথার ওপর আকাশ নীলের নীচেএমন সবুজ ভরা বর্ণময় পৃথিবীর মাঝে মাইলের পর মাইল ব্যাপী  এমন টুকটুকে লাল বেলে পাথরের পাহাড় এলো কেমন করে ?
 বেলা শেষের পথে .এবারে ফিরতে হবে ভাবছি । দূর থেকে  রাঙা ধূলো উড়িয়ে  চার মূর্তি আমার দিকেই প্রায় হন্তদন্ত হয়ে দৌড়ে আসছে। ব্রতীন ফোন এগিয়ে দিয়ে বলে , 'গ্র্যান্ড পা 'র ফোন , তোমার সাথে কথা বলতে চায়। ও প্রান্ত থেকে ভেসে আসে মিষ্টার হ্যারির  দিলদার গলার আওয়াজ । শুদ্ধ বাংলায় বলেন  ''হে প্রিয় কন্যে,  তোমার ঐ দুষ্টু হার্মাদের দল কে নিয়ে আমার আস্তানায় একবার টি ঘুরে যাও। প্লীজ দেরী করো না ,যত শীঘ্র পারো  চলে এসো। ''  ইয়ম ভীষণ excited আমাদের কথ্য ভাষা না বুঝলে কি হবে ?,একরাশ খুশির হাসি ছড়িয়ে দিয়ে বলে হ্যারি গ্র্যান্ডপা ফোনে invite করেছেন জায়ন ন্যাশানাল পার্কে ওনার নতুন মোটেল Silver Inn  এর  inauguration party  তে  থাকার  জন্য। আমাদের যাওয়া চাই। পারভীন বলে ,অধীর আগ্রহে প্রতীক্ষা করছিলাম এই ফোন টির জন্য।  ইয়াম পারভীন কিশোরী বালিকার মত খুশিতে বায়না তোলে মোজাভে ,ইউটাহ তেই যখন আছি জায়ন ন্যাশানাল পার্কে ও যেতে হবে।   ! চল যাই ,ঘুরে আসি।   '  

মিষ্টার হ্যারি কে মুখের ওপর,--'' না ''--বলা যায় না। বেশ  মনে পড়ে ,  যখন ১৫ বছর আগে প্রথম ব্রতীন এই নির্বান্ধব বিশাল মহাদেশ আমেরিকায় পা দিয়ে প্রথম বন্ধু সিড ও গ্র্যান্ড পা হ্যারি দাদু কে পেয়েছিল নিজের করে। সেই থেকে তিরাশি বছরের যুবক হ্যারি সাহেব এদের সবার প্রিয় গ্র্যান্ড পা এবং আমাদের ও কখন পারিবারিক বন্ধু  হয়ে গিয়েছিল । দুবছর আগে ক্যালিফোর্নিয়াতে যখন এসেছিলাম ,ক্যাম্বেল শহরের সান্ধ্য আড্ডায় মিষ্টার হ্যারির সাথে চাক্ষুষ দেখা হয়েছিল। তার কাছে বিশাল এই মহাদেশের  চমকপ্ৰদ বিবরণ শুনে মুগ্ধ হয়ে ছিলাম। হ্যারি সাহেবের আন্তরিকতা অতুলনীয় হয়তো তিনি মনে প্রাণে ভারতীয় বলেই। জায়ন ন্যাশানাল পার্কে আমরা পৌঁছে অতিথি হবো  মিষ্টার হ্যারির মোটেল Silver Inn  এ।   কলোরাডো ভ্রমণে আসছি শুনেই তিনি আমাকে জায়ন ন্যাশানাল পার্ক অঞ্চলে নতুন মোটেলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের নিমন্ত্রণ জানিয়েছিল। ভেবেছিলাম সময় ম্যাচ করবে না। তাই যাওয়া হবেনা।   
🍂

অতনু বলে চল তাহলে জায়ন ন্যাশানাল পার্ক। ব্রতীনের কপালে সুগভীর চিন্তার ভাজ ।দক্ষিণ পশ্চিম ইউটাহ তে , স্প্রিংডেল শহরের কাছে জায়ন জাতীয় উদ্যান টি রয়েছে। কলোরাডো মালভুমি অঞ্চলে, গ্রেট বেসিন এবং মোজাভে মরুভুমি অঞ্চলের সংযোগ স্থলে। অনেক টা ঘুর পথে পড়বে জায়ন। ভাবছে  আমার পক্ষে সম্ভব নয়।  বিশেষ করে ছুটি  ও ফুরিয়ে গিয়েছে। '' অতনু বলে ''ও ডিয়ার ! চিন্তা নেই শরীর খারাপের জন্য আমি টীমের হয়ে অফিস কে মেল পাঠিয়েছিলাম এক্সট্রা দুদিনের ছুটি ও পেয়েছি। ''       

  এরা নিজেদের মধ্যে বেশ তর্ক শুরু করেছে। ভাবছি সবুজের প্রাণ ময় ছোঁয়ায় ভরপুর ওদের এত উদ্যম , এই দুরন্ত যৌবনের প্রবল ইচ্ছে কে বাঁধা দেবে কারসাধ্যি। অতনু বলে ,তা ছাড়া চল টস করি হেড পরলে জায়ন পার্ক যাওয়া হবে। টেল পরলে ঘরের পথে ফিরবো। আমি ভাবছি বেড়ানো নিয়ে এমন মজার টস এই প্রথম দেখলাম। এবং সবাই উদগ্রীব হয়ে তাকিয়ে দেখি হেড ই পড়েছে ,আনন্দে উল্লাসে ইয়ম ও পরভীনের হাত তালি দিয়ে নাচ শুরু হয়ে গিয়েছে। চল যাই ঘুরে আসি হ্যারি গ্র্যান্ড পা ' র কাছে জায়ন ন্যাশানাল পার্কে । 
অবশেষে  পাড়ি দিয়েছি জায়ন পার্কের দিকে এবং দুইপাশে গোলাপী পাহাড়ের  ঢালের মধ্য দিয়ে জনমানব হীন মরুভুমি অঞ্চল অন্ধকারে পার হয়ে চলেছি। ওয়ান ওয়ে পথ ,মাঝে মাঝে  ঝড়ের গতিতে গাড়ি গুলো ছুটে চলেছে। অতনু চিন্তিত মুখে ব্রতীন কে সতর্ক করে বলে এ পথে বেশ বন্য প্রাণীদের আড্ডা। এল্ক বা হরিণ যখন তখন ছুটে এসে দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে। আমাদের খুব সাবধানে ড্রাইভ করতে হবে। পারভীন গল্পের ছলে  জায়ন পার্কের ইতিহাস ভূগোল যা ওর মাথায় এল তার মনোগ্রাহী এক সুন্দর  বিবরণ দিয়ে চলেছে। 

ও বলে এই  জায়ন পার্কটির একটি  অসাধারণ বিশেষত্ব হলো  এখানে অজস্র নানা প্রজাতির উদ্ভিদ দেখতে পাওয়া যায়। প্রায় ২৮৯ প্রজাতির পাখি আছে শুনে  আমি বিশেষ পুলকিত বোধ করি।আমার কৈশোরের হবি ছিল দেশ বিদেশের পাখির ছবি সংগ্রহ করা যা এখোনো আমার নিজস্ব এক ভালো লাগার জগৎ। আমি বলি তা হলে তো ভারী মজা কত বিচিত্র পাখি দেখা যাবে। ব্রতীন স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে বলে শুধু পাখি নয় , জীব জগতের কথাই যদি বলিস ৭৫টি স্তন্যপায়ী প্রাণী আছে যা দের মধ্যে ১৯ প্রজাতির বাদুড় আছে। আর আছে ৩২ টি প্রজাতির সরীসৃপ প্রাণী। পারভীন বলে কারেক্ট ! তোর ও জানা আছে , কিন্তু অতনু  কে জিজ্ঞেস করলে  কোনো উত্তর পাবি না । অতনু বলে ,এই ট্রিপ টা আমার কাছে ভীষণ ইন্টারেষ্টিং তোর লেকচার শুনতে বেশ ভালো লাগছে বলে যা । আর এই পার্কের বাকী গল্প গুলো সব হ্যারি দাদুর কাছে  শুনবো  ইয়াম বলে জায়ন পার্কের পর্বত,গিরিখাত ,বাটস ,মেসাস ,মনোলিথ ,নদী কত প্রাকৃতিক খিলান গুলো বিস্ময় রয়েছে তার গল্প শুনেছি সে ও এক বিশ্বের অনুপম বিস্ময়। গহণ অন্ধকার পথ শুধু গাড়ির হেড লাইটের আলো ছাড়া আর কোথাও আলোর চিন্হ মাত্র নেই । অমাবস্যার অন্ধকারে ডুবে আছে বিশ্ব চরাচর। সৃষ্টি ছাড়া আকাশে নেই অজস্র তারার ভীড়। কালপুরুষ সপ্তর্ষি মন্ডলের সাথে পুষ‍্যা মঘা স্বাতি ফাল্গুনি আরো কতো জানা অজানা নামের তারারা যোগ দিয়ে এতো দিন দেখেছি ঘোর অন্ধকারে  মিছিল করে দলেদলে যোগ দিয়ে এসে মিটিমিটি জ্বলেই পথ দেখায়। আজ তার বালাই নেই। চাঁদের আলোয় ভেজা বন পাহাড় পথের সৌন্দর্য দেখে সময় কাটাবো যে তার ও উপায় নেই। শুধু ফ্রুটার ডাইনোসরের  মিউজিয়াম, জায়ন পার্ক আর হ্যারি দাদুর গল্প করে বেশ গভীর রাত প্রায় সাড়ে বারোটায় স্প্রিংডেল শহরের  সিলভার ইনের দরজায় পৌঁছে দেখি সিড গালভরা হাসি নিয়ে রিসেপশানে বসে অভ্যর্থনা জানালো। বললাম এত রাত সিড ,  এখোনো  জেগে আছিস  সিড বলে ,তোমরা আসছো আর আমি  welcome জানাবো  না ? তা হয় না কি ?  ভাবছি  সিড হ্যারি সাহেবের যোগ্য উত্তরসূরি। পথে চাইনিজ রেস্তোরাঁয় ডিনার সারা হয়েছিল বলে সে রাতে আর সময় নষ্ট না করে আমাদের জন্য নির্দ্ধারিত রুম হ্যারি গ্র্যান্ডপার ঘর সংলগ্ন ওল্ড গেস্ট হাউজের বিছানায় শুয়ে গা এলিয়ে দিলাম।    

গত রাতে স্প্রিংডেলে পৌঁছনোর ঠিক আগে এখানে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি এসেছিলো , ভাবছি বুঝি সারা রাতে
 ও এ বৃষ্টি থামবে না। কিন্তু চলার পথে কিছুক্ষণ পরেই দেখি  জলদ ভারী কালো মেঘেরা পাততাড়ি গুটিয়ে পাড়ি জমিয়েছে ভিনদেশে। আজ ভোরের আলোর কুসুম কুসুম রোদ্দুর কোনো বাঁধা বাঁধন না মেনে দুরদ্দাড়িয়ে হুড়মুড়িয়ে কাঁচের দরজার ওপাশ থেকে সোজা আমার বিছানায় হাজির হওয়াতে এমনি ঘুম ভেঙে গিয়েছিল। কিন্তু ঠিকমত ভোর হলো মিষ্টার হ্যারির হা--হা হাসির হৈ হৈ শব্দের অভ্যর্থনায়। তিনি প্রাতভ্রমণ সেরে  good morning জানাতে এসে অবশ্যই ডাইনিং হলে দেখা হবে বলে তার গ্র্যান্ড চিলড্রেন দের জড়িয়ে ধরে বিদায় নিলেন। বললেন ''বিকেলের পার্টিতে তোদের সব কটার একসাথে দেখা যেন পাই। ''

 সিলভার ইনের নিউ ক্যাম্পাস টি মিষ্টার হ্যারির সাথে ঘুরে এক চক্কর লাগিয়ে দেখে এলাম।  আশ্চর্য্য লাগে  ,এখানে ও লালচে কষা রংঙের বেলে পাথরে আবৃত পাহাড়ের শোভা চারদিকে। আমার বিস্মিত চোখের দিকে তাকিয়ে  তিনি বলেন , প্রায় ৩০কোটি বছর আগে কলোরাডো নদীর অববাহিকার এই জায়গা গুলো ডুবে ছিল সাগরের গভীরে জলের নীচে। এবং নিজের নিয়মে সাগর  সরে গেলে শুধু নোনা বালির স্তর  ফেলে রেখে যায়। কিন্তু লবণ আর বালি বুকে বয়ে নিয়ে সাগরের ঢেউয়ের  যাওয়া আসা তো ক্রমাগত  লেগেই থাকতো । মিষ্টার হ্যারি বললেন এমনি করে প্রায় ২৯ বারের মত  সমুদ্রের শুধু যাওয়া আসা স্রোতে ভাসার খেলা চলেছিল আর লবণের আস্তরণ হাজার  হাজার ফুট গভীর থেকে গভীরতর হয়েছিল। 

ইতিহাস বলে ১৫ কোটি বছর আগে শেষবারের মত সাগর এসেছিল এই অঞ্চলে । এরপর থেকে এইসব জায়গায় জমা হতে লাগলো কলোরাডো নদীর উদ্দাম চলার পথে বুকে বয়ে নিয়ে আসা পলি ও পাথর একসময়ে দেখা গেলো সম্পূর্ণ অঞ্চল টাই ঢাকা পরে গেলো বেলে পাথরের কঠিন আস্তরণের নীচে। কিন্তু পাথরের চেয়ে লবণের ঘনত্ব কম হওয়ায় লবণের স্তর জায়গা বিশেষে ধ্বসে পড়তে থাকে।  এ ছাড়া  ভৌগোলিক নানা কারণে  সৃষ্টি হয় টিলা উপত্যকা মালভুমির আর পাথরের ওপরের পাথরের স্তর। সময়ের সাথে  সৃষ্টি হলো এক  নতুন প্রাকৃতিক ভূমির তার ই ফলে ইউটা আরিজোনা মোয়াবে কলোরাডোর দিগন্ত বিস্তৃত এই  লালচে  বেলে পাথুরে পাহাড়ের দেশ  গুলো।মুগ্ধ হয়ে শুনে কিছুটা সময় বাক রুদ্ধ হয়ে থাকলাম।    
 
এখানে পাহাড়ের গায়ে সাজানো ছোট্টো ছোট্ট দোতলা হোটেল বাড়ি গুলো। তেমন ঠান্ডা মোটেই নেই ,তাপাঙ্ক প্রায় বারোর কাছে ভারী আরাম দায়ক। সিলভার ইনের সামনের লন টি নানা রকমের ক্যাকটাস দিয়ে সাজানো। অজস্র সুউচ্চ জুনিপার ও পাইনে চারদিক ঘেরা থাকলেও পাহাড়ি গাছ গাছালি গুলো কে পছন্দ সই  ট্রিমিং করে সুন্দর সাজানো।পান্না সবুজের ছোঁয়ায় মায়াময় , লাল পাহাড় উজ্জ্বল আকাশের নীল মেঘ আর সবুজ গাছ সব মিলিয়ে এক অপরূপ রংঙের বাহার। নানা রকম সিজিন ফুলের বাগান ,পত্র বিহীন চেরীর ডালে গুচ্ছের গোলাপী কুঁড়ির ঢল।আমি উল্লসিত হয়ে বলি এখানে পুরোদমে বসন্ত এসে গিয়েছে। হ্যারিগ্র্যান্ড পা'র আবার সেই গগন ফাটানো হাসি কন্যে,তুমি এসে গেছো বসন্ত ও এলো তোমার সাথে। আমি ও হাত ঝাঁকিয়ে বলি "thank you Grand pa  ,'' আহা ! কী আনন্দ আকাশে বাতাসে ''...।        
 ব্রেকফাষ্ট সারা হলে  চটপট রেডি হয়ে জায়ন পার্ক সফরে বেরোলাম। ঝর্ণা পাহাড় সরু সরু  খর স্রোতা নদী  ডিঙিয়ে রোদের হাসি গায়ে মেখে বসন্ত বাতাসে স্প্রিংডেল শহর থেকে পার্কে পৌঁছতে প্রায় ২০ মিনিট লাগলো।  জাওন ন্যাশানাল পার্কের পার্কিং লটে গাড়ি পার্ক করতে গিয়েছে ব্রতীন এখোনো তেমন ভীড় হয় নি। অতনু আর পারভীনের দায়িত্ব টিকিট কাটার । পার্কের গেটে রোড ম্যাপ রয়েছে। কোন পথ ধরে কেমন করে গেলে পর্বত,গিরিখাত বাটস মেসাস মনোলিথ নদী স্লট ক্যানিয়ন প্রাকৃতিক খিলান যা কিছু দেখতে চাই তার পথের নিশানা দেওয়া আছে। এই বিশাল বড়ো  ন্যাশানাল পার্ক টি পরিক্রমার   জন্য এখানে বিনামূল্যে শাটল বাসে ঘোরার সুবিধা  আছে। ইয়াম এক লম্বা চওড়া স্প্যানিশ গাইড সাহেব আলভারোর সাথে কন্ট্রাক্ট করেছে ,সে  বাসের সাথেই যুক্ত।  
 জনা ২০র মত ,আমরা শাটল বাসের যাত্রী সব এক জায়গায় জড়ো হয়েছি।  তিনি বললেন good morning ladies and gentle men  , welcome to Zion  national park ,,,,বাস চলতে শুরু করলো। তিনি ও ভাষণ শুরু করলেন। '' বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং জনসাধারণের প্রকৃতি সম্বন্ধে সচেতন করা ও আনন্দ  প্রদান করতেই এই পার্ক গুলোর যত্ন অবশ্যই বিশেষ প্রয়োজনে। এবং মার্কিন পর্যটন  বিভাগ এই পার্ক গুলোতে পর্যটকের আগমনে  বিশেষ তৎপর হয়েছে । এখন কাজ চলছে পার্কের মরুভূমি চরিত্র পরিবেশ ও প্রাকৃতিক নদী সংরক্ষণের প্রচেষ্টায় ।  এই পার্কের সর্ব নিম্ন বিন্দু হল কলপিটস ওয়াশে ৩,৬৬৬ ফুট বা  (১,১১৭মিটার ) এবং সর্বোচ্চ হর্স রাঞ্চ মাউন্টেন চূড়াটি ৮৭২৬ ফুট (২৬৬০মিটার ) ।  

এখানে দেখি কলোরাডো মালভূমির  প্রান্তে অসাধারণ ক্ষয়ের  কারণে গঠিত গভীর এবং উজ্জ্বল রঙের নাভাহো  বেলেপাথরের গিরিখাতের গোলকধাঁধা সহ চলছে  ভূতত্ত্ব সংরক্ষণ করা।   তিনি বললেন এই গিরিখাত অঞ্চলের ভূতত্ত্বের মধ্যে নয় টি গঠন আছে যা একসাথে ১৫০মিলিয়ন বছরের বেশীরভাগ মেসোজোয়িক বয়সের প্রমান দেয়। সেই সময়ে বিভিন্ন উষ্ণ প্রবাহে অগভীর সমুদ্র, স্রোত,  নদী নালা  এবং হ্রদ গুলো বিস্তীর্ণ মরুভূমি এবং তীরের কাছাকাছি শুষ্ক পরিবেশ এলাকাটিকে ঢেকে দেয়। কলোরাডো মালভূমির  সৃষ্টির সাথে যুক্ত উত্থান ১৩ মিলিয়ন বছর আগে শুরু হওয়া অঞ্চলটিকে প্রায় ১0,000 ফুট উপরে তুলেছে। 

দেখছি কত উঁচুতে পাহাড়ি রাস্তায় উৎসাহী ভ্রমণার্থী লাঠিতে ভর দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। ইয়ম বলে দেখ ওরা কেমন হাইকিং করতে চলেছে। মিষ্টার আলভারো ঝড়ের গতিতে  লেকচার দিয়ে চলেছেন।  তার সাথে পার্ক ঘুরে বেড়িয়ে দেখতে এসেছি  না ভূগোলের ক্লাস করছি বুঝতে পারছি না ।       

  ক্রমশঃ

Post a Comment

0 Comments