জ্বলদর্চি

'বিভা' – অন্য আকাশের তারা /পূর্ণচন্দ্র ভূঞ্যা

'বিভা' – অন্য আকাশের তারা

পূর্ণচন্দ্র ভূঞ্যা

NameExoWorlds :

(১)
খুব বেশি দিন আগের কথা নয়। ২০১৯ সালের ১০ জুলাই-এর ঘটনা। ওইদিন বিশ্বব্যাপী একটি প্রতিযোগিতা আহ্বান করা হয়। আহ্বান জানায় আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিদ্যা ইউনিয়ন (International Astronomical Union, সংক্ষেপে IAU)। কনটেস্টের বিষয়বস্তু ছিল বহির্জগত। এক্সো-ওয়ার্ল্ডস (ExoWorlds)। বহির্বিশ্বে নাম না-জানা অনেক গ্রহ তারা নিহারিকা ধূমকেতুর বাস। ওদের অধিকাংশেরই এখনও অব্দি সন্ধান মেলেনি। যদিও কতিপয়ের খোঁজ মিলেছে শক্তিশালী টেলিস্কোপ দিয়ে। গুটিকয়েক যে সকল ইন্টারস্টেলার বস্তুর খোঁজ মিলেছে, তাদের প্রত্যেকের একটা করে কোড-নেম দেওয়াই রীতি। যেমন, অত্যধিক জনপ্রিয় এক ধূমকেতুর সাংকেতিক নাম 1P/Halley। এটি আসলে হ্যালির ধূমকেতু নামে দারুণ জনপ্রিয়। আমাদের সবচেয়ে কাছের অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সির কোড নাম Messier 31 বা M31 কিংবা NGC 224। আকাশ গঙ্গা ছায়াপথে সূর্যের নিকটতম নক্ষত্র প্রক্সিমা সেন্টাউরি (Proxima Centauri)-এর ছদ্মনাম ALF Cen C অথবা V645 Centauri কিংবা GJ 551 ইত্যাদি। এমন উদ্ভট নামকরণের পশ্চাতে কি কোনো সায়েন্টিফিক যুক্তি আছে? না-কি মনগড়া পছন্দসই একখানা নাম বসালেই লেটা চুকে যায়? বিষয়টা অত সহজ নয়। ব্যাপারটার মধ্যে বেশ একখানা জমকালো ঘটনা থাকে। নাম মাহাত্ম্যের একগুচ্ছ মহিমা। নামকরণের বিস্তর প্রকারভেদ। সন তারিখ অবস্থান আবিষ্কারক ভাস্বরতার তারতম্য দেশ স্বনামধন্য বৈজ্ঞানিক — নামকরণের হাজার একটা ভিত্তি। কিন্তু তাতে আমজনতার মন ভরে কী? যত সহজে আমরা হ্যালির ধূমকেতুকে আপন করে নিয়েছি, যত সাবলীল ভাবে অ্যান্ড্রোমেডা গ্যালাক্সির নাম আমাদের স্মরণে আসে; তত সহজে কেন হ্যালির ধূমকেতু ব্যাতিত ন্যুনতম অন্য একটি ধূমকেতু নিহারিকা তারার নাম গোত্র পদবী স্মরণে আনতে পারি না আমরা? স্মরণে না আনতে পারার অবশ্যম্ভাবী পরিনতি — হ্যালির ধূমকেতুর খ্যাতির আড়ালে বাকি সব ধূমকেতুর ঢাকা পড়ে যাওয়া। ঢাকা পড়ে গেছে তাদের নাম গোত্র ঠিকানা আইডেন্টিটি মায় তাদের জনপ্রিয়তা পর্যন্ত। অথচ, প্রতিটি আন্তঃনক্ষত্রীয় বস্তুর আলাদা আলাদা খ্যাতি, বিশেষত্ব। তাহলে সেই খ্যাতি ধরে রাখার উপায় কী? কী ব্যবস্থা নিলে বহির্বিশ্ব সম্পর্কে আমজনতার কৌতুহল আরও বাড়বে? কোন টেকনিকে দূর আকাশের তারাগুলিও আমাদের বাড়ির কাছের বলে মনে হবে? যাতে বছরে নিদেনপক্ষে বার কয়েক দুচোখের দেখা দেখতে পাবো! গোপনে মন খুলে নিঃশব্দে দুদণ্ড কথা বলে নিঃসঙ্গ একাকিত্ব দূর করা যাবে! জব্বর একখান উপায় বের করল আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিদ্যা ইউনিয়ন। আচ্ছা ধরুন, সাধারণ পৃথ্বীবাসী মানুষ যদি এক একটা বহির্জাগতিক বস্তুর দেশভিত্তিক পৃথক পৃথক নামকরণ করে, নিজেদের পছন্দ মতো; তাহলে কেমন হয়? তাহলে কি সাধারণের মধ্যে তারা অনেক বেশি উপাদেয় হবে না! অবশ্যই হবে। আমজনতা নিজেদের সঙ্গে মহাকাশের তারাদের অনেক বেশি সংযুক্ত করতে পারবে। উত্তেজনায় ফুটবে বলেই ধারণা করা যায়। যেমন ভাবা, তেমন কাজ। তেড়েফুঁড়ে উঠে বসল জ্যোতির্বিদ্যা  ইউনিয়ন।
     
কারণ, আজ পর্যন্ত যত মহাজাগতিক বস্তু আবিষ্কার হয়েছে ছোট-বড়-মেজো টেলিস্কোপের সাহায্যে কিংবা খালি চোখে, তাদের সবার নামকরণের কপিরাইটের একমাত্র দাবিদার প্যারিসের আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিদ্যা ইউনিয়ন। এতদিন পর্যন্ত বহির্জগতের সব বস্তুর নামকরণ তারাই করে এসেছে। সেভাবেই উঠে আসে একগুচ্ছ নক্ষত্রের সাংকেতিক নাম। যেমন, হ্যালির ধূমকেতুর নাম '1P/Halley'। কিন্তু আপাত সামঞ্জস্যশূন্য কঠিন ছদ্মনামের আড়ালে ইন্টারস্টেলার বস্তুগুলোর জনপ্রিয়তা কমে বই বাড়ে না। এখনও শেষ পর্যায়ে নাম ঘোষণা করবে তারাই। শুধু নাম বাছাই থেকে ঘোষণা পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়ার একটু হেরফের করা হবে। তাই, মহাকাশ গবেষণা আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে এক অভিনব কর্মসূচি আমদানি করে IAU। নামকরণ প্রতিযোগিতায় প্রত্যেক দেশকে যুক্ত করা দরকার। তাহলে নামকরণের শেকড় গ্রোথিত থাকবে সারা বিশ্বের প্রতিটি দেশের মাটিতে। গর্বিত হবে দেশ। বাহবা দেবে মানুষ। জনপ্রিয় হবে মহাকাশ মিশন। সমৃদ্ধ হবে আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিদ্যা ইউনিয়ন।

এর আগে, ২০১৫ সালের গোড়ায় আন্তর্জাতিক সংগঠনটি সবার প্রথম বহির্জগতের ইন্টারস্টেলার বস্তুগুচ্ছের নামকরণ প্রতিযোগিতার ডাক দিয়েছিল বিশ্বব্যাপী। সেবার ঊনিশটি প্ল্যানেটরি সিস্টেমের একত্রিশটি বহির্জাগতিক গ্রহের নামকরণ করা হয়েছিল। ২০১৯ সালের কনটেস্ট, সেই অর্থে, নামকরণের দ্বিতীয় ঐতিহাসিক প্রয়াস।

প্রতিযোগিতা ঘোষণার আরও একটা মস্ত বড় কারণ রয়েছে। আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিদ্যা  ইউনিয়ন কিংবা International Astronomical Union (IAU) প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ২৮ জুলাই ১৯১৯। সোমবার। যাত্রার সে-ই শুরু। তারপর আর পিছন ফিরে তাকায়নি। সময়ের চাকা যত গড়িয়েছে, উত্তরোত্তর সংস্থার শ্রীবৃদ্ধি ঘটেছে অনেক বেশি। একের পর এক সাফল্যের পালক জুড়েছে IAU-এর মাথায়। প্রতিষ্ঠানের সুনাম, সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের কোণায় কোণায়। ২০১৯ সাল ছিল প্রতিষ্ঠানের শততমবর্ষ। ২৮শে জুলাই ছিল সেঞ্চুরি পূরণের সেই সন্ধিক্ষণ। একশো বছরের জার্নি স্মরণীয় করে রাখতে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছিল সংস্থাটি। এদের অন্যতম ছিল এই অভিনব কনটেস্ট। প্রতিযোগিতা জনপ্রিয় করতে চেষ্টার ত্রুটি রাখেনি সংস্থার কর্মকর্তারা। হরেক কর্মসূচির আয়োজন করে তারা। কর্মসূচির তেমনই এক অংশ ছিল, পৃথ্বী থেকে সন্ধান পাওয়া গেছে এমন শতাধিক আন্তঃনক্ষত্রমণ্ডলীয় বস্তুর আকর্ষণীয় সহজ বোধ্য নামকরণ, যা আমজনতার আকাশ দেখার স্বপ্ন বাড়িয়ে দেবে বহুগুণ। কর্মসূচি সফলভাবে রূপায়ণ করতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশগুলিতে নামকরণের প্রতিযোগিতার ডাক দেয় IAU। নির্দিষ্ট একটা দেশের ভাগে হয়তো একটি মাত্র নক্ষত্র এবং তার সংশ্লিষ্ট একটা গ্রহের নামকরণের প্রতিযোগিতার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কনটেস্টের শিরোনাম ধার্য্য হয়েছিল 'NameExoWorlds' (Name Exo Worlds অথবা বাইরের পৃথিবীর নামকরণ)।

ভারতে আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিদ্যা ইউনিয়নের প্রতিযোগিতার একটি শাখা সংগঠক অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি অব ইন্ডিয়া (Astronomical Society of India, সংক্ষেপে ASI)।  জনমানসে মহাকাশ বিজ্ঞান সচেতনতা বিষয়ে এ হেন সংস্থার একটি দপ্তর 'পাবলিক আউটরীচ অ্যান্ড এডুকেশন কমিটি' (Public Outreach and Education Committee of the Astronomical Society of India)। তারা ভারতে প্রতিযোগিতার মূল আহ্বায়ক ও তত্ত্বাবধায়ক। ভারতীয় জ্যোতির্বিদ্যা সংস্থা প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত দিনক্ষণ ঘোষণা করে দেয়। ঘোষণা করা হল কনটেস্ট। দিনটা ছিল বুধবার। ১০ জুলাই ২০১৯। সমস্যা বাঁধল, কারা নামকরণের সুযোগ পাবে? এবার কিশোর তরুণ তরুণীদের দিকে পাল্লা বেশ ভারী। ভারতীয় সংস্থাটির পক্ষ থেকে সংস্থার কো-অর্ডিনেটর স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছে এক অযাচিত সুযোগ হাজির করে। নক্ষত্রের নামকরণের অভাবনীয় সুযোগ। নামকরণ প্রতিযোগিতা। ভারতবর্ষ থেকে ASI যে নক্ষত্র এবং তার একমাত্র যোগ্য দোসর জ্যোতিষ্কের নামকরণ কনটেস্টের পাবলিক ভোটিং আহ্বান করে, তাদের কোড নাম ছিল এইচ.ডি. ৮৬০৮১ (HD 86081) আর এইচ.ডি. ৮৬০৮১ বি. (HD 86081b)। 
       
যে সকল পড়ুয়ার বয়স কম, দশ থেকে কুড়ি বছরের মধ্যে; এইচ.ডি. ৮৬০৮১ বি. (HD 86081b) গ্রহের নাম প্রস্তাব করবে তারা। উল্টোদিকে, এইচ.ডি. ৮৬০৮১ (HD 86081) নক্ষত্রের নাম মাহাত্ম্যের পরামর্শ দেবে আঠারো থেকে বাইশ বছর বয়সের কলেজ পড়ুয়ার দল। প্রতিযোগিতা শেষে বেছে নেওয়া হবে জনপ্রিয় দশটি নাম। কনটেস্ট থেকে বাছাই করা যে-নামগুলো উঠে আসবে, সেগুলো দেশের আপামর জনসাধারণের গোচরে আনবে স্বদেশীয় সংগঠনটি। তারপর ভোটিং মারফৎ দেশের জনগণের রায় জানা হবে। ভোটিংয়ের সময় সীমা পাক্কা একমাস; পয়লা অক্টোবর থেকে পয়লা নভেম্বর ২০১৯। ভোটিং থেকে যুক্তি সংগত যে-নামগুলো উঠে আসবে, অন্তিম সে-নাম তড়িঘড়ি পাঠানো হবে প্যারিসে। প্যারিসের আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিদ্যা ইউনিয়ন থেকে সংশ্লিষ্ট দেশের ভাগে থাকা নক্ষত্র ও তার যোগ্য দোসর গ্রহের জনপ্রিয় নাম ঘোষণা হবে ডিসেম্বর মাসে।

কিন্তু কে এই এইচ.ডি. ৮৬০৮১ নক্ষত্র আর কে এইচ.ডি. ৮৬০৮১ বি. প্ল্যানেট? কী বা ওদের পরিচয়? মহাশূন্যে দুজনের অবস্থান কোথায়? প্রথম কবে এদের দেখা মেলে? ইত্যাদি। ইত্যাদি।

একটি ক্ষুদ্র নিরক্ষীয় নক্ষত্রপূঞ্জের নাম সেক্সটান্স (Sextans)। সংক্ষেপে, সেক্স (Sex)। বাংলা তর্জমায় - 'ষষ্ঠাংশ মণ্ডল'। পৃথিবী থেকে ৩৪০ আলোকবর্ষ দূরের হলদে-সাদা তারামণ্ডল। সর্বসাকুল্যে গোটা পাঁচেক নক্ষত্র যাদের প্রত্যেককে ন্যূনতম একটি গ্রহ ঘিরে রয়েছে সেক্সটান্স-এ। নক্ষত্রপূঞ্জটির মহাকাশ-ছবি এঁকেছিলেন পোলিশ জ্যোতির্বিদ জোহানেস হেভেলিয়াস। সেই সপ্তদশ শতকে (১৬৮৭)। ভৌগোলিক বিষুবরেখার ওপর দক্ষিণ আকাশে প্রকট হয় সে। কবে মেলে তার দেখা? কীভাবে চাক্ষুষ করা যায় ওদের? খালি চোখে তাদের দেখা মেলা ভার। অপেক্ষাকৃত কম শক্তিশালী টেলিস্কোপ দিয়ে অতি সহজে এর দেখা মেলে এপ্রিল মাসে। পর্যবেক্ষণের উত্তম সময় রাত ন'টা। পৃথিবী সাপেক্ষে প্লাস আশি ডিগ্রি (+৮০°) অক্ষাংশ থেকে মাইনাস নব্বই ডিগ্রি (- ৯০°) অক্ষাংশের মধ্যে স্পষ্ট দৃশ্যমান হয় সেসময়। এর চারপাশ ঘিরে রেখেছে আরও চারখানা নক্ষত্র মণ্ডল — লিও, ক্রেটার, হাইড্রা আর ক্যানসার। মূলত লিও, ক্রেটার আর হাইড্রা তারামণ্ডলের মাঝে তুলনামূলক কম আলোকিত অঞ্চলের ভেতর এর ব্যপ্তি। এ হেন সেক্সটান্স তারামণ্ডলের অন্তর্গত একটি বামন নক্ষত্র (হোয়াইট ডোয়ার্ফ স্টার) এইচডি ৮৬০৮১ (HD 86081) এবং তার একমাত্র প্ল্যানেট পৃথিবীর নাম এইচডি ৮৬০৮১বি (HD 86081b)। সৌর পরিবার থেকে ৩৩৫.৬ আলোকবর্ষ দূরে তারাটির বাস। অর্থাৎ আলোকের বেগে (প্রতি সেকেন্ডে তিন লাখ কিলোমিটার) রওনা হলে ওই তারায় পৌঁছতে পৃথ্বীবাসী মানুষ কিংবা মহাকাশ-যানের সময় লাগবে তিন শতাধিক বছর। অথচ, ভৌগোলিক নিরক্ষরেখা থেকে এটি সহজে দৃশ্যমান। উজ্জ্বলতার মাত্রা ৮.৭৩। সূর্যের চেয়ে ১.৭৫ একক বেশি উজ্জ্বল। সাইজে সূর্যের চাইতে ১.২২ জ্যোতির্বিদ্যা-একক (AU) বড়ো আর ১.২৩ জ্যোতির্বিদ্যা-একক ভারী। হলদেটে সাদা রঙের তারাটি মূলত জি-টাইপ (G-type) নক্ষত্র। জি-টাইপ তারাগুলো হলদেটে বামন নক্ষত্র গোত্রের হয়। এদের পৃষ্ঠ দেশের তাপমাত্রার পাল্লা ৫০০০ – ৬০০০ কেলভিন। ২০০৫ সাল থেকে তারাটির প্রথম পর্যবেক্ষণ শুরু করে পণ্ডিতগণ। 

এক বছর পরের ঘটনা। ২০০৬ সালের ১৭ এপ্রিলে সন্ধান মেলে তারাটির একমাত্র গ্রহের– এইচডি ৮৬০৮১বি (HD 86081b)। এ হেন জ্যোতিষ্ক একটি গ্যাসীয় দৈত্য। বৃহস্পতি গ্রহের চেয়ে ১.৪৮ গুণ ভারী। ব্যাস বৃহস্পতির তুলনায় ১.২১ গুণ বেশি। ২.১৩৭৫ দিনে একবার এইচডি ৮৬০৮১ নক্ষত্রের চারপাশে সম্পূর্ণ আবর্তন করে সে। 

(২)
শেষমেশ এল সেই সন্ধিক্ষণ। ১৭ই ডিসেম্বর ২০১৯। মঙ্গলবার। সেদিন আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিদ্যা ইউনিয়নের দপ্তর থেকে ঘোষিত হল দুটি নাম —
"যদি তোমরা বিজ্ঞানে একজন ভারতীয় মহিলার অবদানকে সম্মান জানাতে চাও, তাহলে আকাশ পানে ঘুরিয়ে দাও নিজের বাইনোকুলারের লেন্স এবং খুঁজে দেখ একটি হলুদ রঙের তারা, যে কিনা সূর্যের চাইতেও বেশি গরম এবং আকারে আর বয়সেও জেষ্ঠ্য। মেদিনী থেকে ৩৪০ আলোকবর্ষ দূরের ওই নিহারিকার নাম রইল 'বিভা'।" 
         
বাংলা ভাষায় বিভা শব্দের মানে 'আলোক দীপ্তি' (Light Beam)। অন্যদিকে, তার সর্বক্ষণের ছায়াসঙ্গী জোতিষ্কের নাম 'সান্তামাসা'। সান্তামাসা একটি সংষ্কৃত শব্দ, যার অর্থ 'মেঘে ঢাকা'। মানুষের তীব্র কৌতূহল – কে দিল এমন সুন্দর নাম? 

নামের প্রস্তাব এসেছিল ১৭০০ জন পড়ুয়ার কাছ থেকে। এদের মধ্যে দুজন জিতে নেয় সবার মন। একজন কুড়ি বছর বয়সের কলেজ পড়ুয়া – অনন্য ভট্টাচার্য। সুরাট-এর সর্দার বল্লভভাই ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (Sardar Vallabhbhai National Institute of Technology)-এর ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের স্টুডেন্ট। 'বিভা' নক্ষত্রের নামকরণ তারই মস্তিষ্ক প্রসূত। অন্যজনের পরিচয় বিদ্যাসাগর দাউদ। বছর তেরোর বিস্ময় বালক। পুনে'র সিংঘাদ স্প্রিং ডেল পাবলিক স্কুল (Singhad Spring Dale Public School)-এর  ছাত্র। প্যারিসের আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিদ্যা ইউনিয়ন তার প্রস্তাবিত HD 86081b গ্রহের নতুন নাম রাখে 'সান্তামাসা'। 'মেঘে ঢাকা' প্ল্যানেট। সান্তামাসা একটি সংষ্কৃত শব্দ। এর অর্থ – মেঘে ঢাকা।
'টানা দুদিন সংষ্কৃত নামগুলোর ওপর থেকে চোখ ফেরায়নি সে। দীর্ঘ ৪৮ ঘন্টার ম্যারাথন চিন্তার শেষে খুঁজে পায় একখান জুতসই নাম 'সান্তামাসা'। এ হেন শব্দমালার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গ্রহটির বৈশিষ্ট্যগত দারুণ মিল' — ঘোষণার পরে বলেছিলেন ছেলেটির বাবা দিওয়ান দাউদ। নারহে অ্যাম্বিগাঁওয়ে পরিবারটির স্থায়ী বাস। খোলামেলা জায়গাটি যেন একফালি বহির্গ্রহ। পাশাপাশি লোকালয় থেকে বিচ্ছিন্ন। একটুকরো স্বর্গ।

খটকা লাগে, অন্য আকাশের এক তারার নাম কেন 'বিভা' রাখা হল? এ হেন নামকরণের তাৎপর্য কী? কে এই 'বিভা'? কী তাঁর পরিচয়? জোতির্বিজ্ঞানের এলিট শ্রেণীতে তাঁর অবদান কতখানি? (চলবে)
🍂

Post a Comment

1 Comments

  1. এমন একটি বিষয় নিয়ে মনোজ্ঞ আলোচনার জন্য লেখককে অভিনন্দন। আশা করছি পদার্থবিদ্যার এই অসামান্য প্রতিভার বিভা পাঠকের কাছে উন্মুক্ত হবে,সঙ্গে বিজ্ঞানের বাইরে তার প্রতিভার দ্যূতিও।

    ReplyDelete