আমার অনুভূতিরা
পর্ব ৫
সুবর্ণা নাগ
বলছো? বলো..
ভোর রাত্রে পালিয়ে বাঁচি,
লম্বা চুলে চালাই কাঁচি,
আমি যখন বড্ডো খারাপ
পাড়ার মোড়ে জমিয়ে নাচি।
তুমিও থেকো আমার দলে,
কান দিও না, কে কি বলে,
এতো কিছু নিয়ম বিধান
ভুলেই যাবো ভোলার ছলে।
কাঁদবো আমি মাঝ রাস্তায়,
রাতের পোশাক কিনি সস্তায়,
অভাব কিসের ওদের বলো?
ধ্যান ধারণা পচে বস্তায়।
মন্দ আমি, তুচ্ছ আমি
উঠতে গিয়ে আবার নামি,
সমাজটা কার বিচার করে?
এটাও জেনো আমার জমি।
কচু মাহাত্ম
জলে জঙ্গলে তাকে বেশ পাওয়া যায়,
গুজব আছে তারে শুধু বাঙালেই খায়।
এমনিতে হেথা হোথা ওঠে সে গজিয়ে,
নানা পদে রেখেছে যে বাঙালি মজিয়ে।
শুনে যদি বলো সবে বকবক যত্ত,
তবুও বর্ণিব আমি কচুর মাহাত্ম।
মান কচু বাটা তাতে সরিষার তৈল,
গরম ভাতের সাথে জিভে জল আইলো।
কচু বাটা কড়াইয়ে নাও যদি কষিয়ে,
দুপুরের রসনাটা হবে জেনো রসিয়ে।
কচুর শাকে মহামূল্য ইলিশের মাথা দিয়ে,
কিংবা রাঁধতে পারো ছোলাসেদ্ধ মিশিয়ে।
মিহি করে কুচিয়ে কচি কচু পাতা ,
চিংড়ি- সর্ষে ভাপা - এড়ায় দেখি কে তা?
কচুপাতা মুড়ে দেখো ভেটকির পাতুরিতে ,
চেটেপুটে থালা সাফ হবে এক তুড়িতে।
গাটি কচু দিয়ে হয় নিরামিষী তরকারি,
ওল কচু দিয়েও দেখি রান্নার জারিজুড়ি।
সর্ষে-পোস্ত বাটা দিয়ে রাঁধ কচুর লতি,
স্বাদ মুখে লেগে থাকে দিবা থেকে রাতি।
কুটকুট করে যদি কচু খেয়ে গলাটা,
দু ফোঁটা লেবুর রস জুড়াবেই জ্বালাটা।
তবুও সে যে ব্রাত্য আজও, সবাই করে নিচু,
কিছু না পেলেই বলে, পেলাম আমি কচু।
রাঁধতে জানলে বুনো কচুও আনে স্বাদ,
তবু রেসিপির বইতে কচু কেন বাদ?
অনুরাগের শরৎ
একলা বসে থাকলে
ভীষণ রাগ হয় তোর ওপর -
রাগ হয় হাত ঘড়িটার ওপর
রাগ হয় মেঘ গুলোকে দেখেও ।
থেমে থাকেনি কেন ওরা
আমার মতো?
আমার মতো থমকে যায়নি কেন ওদের পথ?
ওরা কি অপেক্ষা জানে না?
রাগ হয়।
রাগ হয়, যখন দেখি স্বপ্ন
গুলোও
তোর মুখের আদল নেয় ,
তোর স্বরেই বসে কথা,
তোর সুরেই যেন বায়না ধরে।
কবিতায় যখন তোর ছেলেমানুষি দেখতে পাই,
গানে শুনতে পাই তোর বেসুরো সুরগুলো,
রাগ হয়।
রাগ হয় তোর ওপর ,
যখন কেউ আমায় বলে
'তুই কি কেবল লাল রংটাই চিনেছিস !'
বলতে পারি না তাকে ,
এর জন্য দায়ী তুই-ই ।
হঠাৎ করেই সব রাগ জল
হয়ে যায়,
যখন দূর থেকে দেখি,
চায়ের দোকানের জোড়াতালি দেওয়া বেঞ্চে বসে
তুই আমার জন্য অপেক্ষা করছিস।
ঘনঘন ফোন দেখছিস,
পা নাচাচ্ছিস,
হাতে একটা নীল প্যাকেটের চকলেট রয়েছে।
দূর থেকে দেখি-
প্রেম আসে , রাগ নয়।
এই শরতেই তাই মনে আসে -
আগমনীতে ভাসানের সুর
স্বরলিপি সাতকাহনের ,
বিজয়াতেও আমি শুনি
বাদ্য বাজে আবাহনের।।
আমি চলে গেলে
আমি চলে গেলে,
আমার পুরোনো তোষকের নিচে খুঁজে পাবে,
সম্পর্কের ছেঁড়া দলিল বা
সেই মরচে ধরা চাবিটা
যার তালাটাই নিখোঁজ।
আমি চলে গেলে,
আমার পুরানো কাঠের আলমারির ঝুল পড়া পুতুলের পাশে,
খুঁজে পাবে আমার ছেলেবেলার সমস্ত দুষ্টু মিষ্টি ছাপ বা
এমন এক কবিতার খাতা-
যার শ্রোতা হারিয়ে গেছে ।
আমি চলে গেলে,
ধূপের ধোঁয়ায় নয়
তোমার অশালীন অশ্রাব্য চিৎকারে,
সাজিয়ে দিয়ো খই মোড়া পথ
বা চিতার আগুনের তাপে সেঁকে নিও,
রাত জাগা অনিচ্ছুক কামনার
রুটি গুলো।
জানি, আমি চলে গেলে-
দুপুরের পাতে আর রাতের গ্রাসে উঠবে স্বাদ বদলের গান,
ফুলের গন্ধকে ছাপিয়ে যাবে
রঙিন গ্লাস,বোতলের ঘরোয়া বৈঠক।
পরদিন সকালে
মিনুমাসি মেঝে সাফ করে
ডাস্টবিনে ফেলে আসবে
নিষিদ্ধ উল্লাসের চিহ্নগুলো।
তবু,
সেদিনও প্রবল হাসিটা হাসতে হাসতে চোখের কোনে জল আসবে হয়তো।
0 Comments