জ্বলদর্চি

আমিই শুরু আমিই শেষ / সুব্রত মাইতি


আমিই শুরু আমিই শেষ / সুব্রত মাইতি

   আমি নামক বোধ দিন দিন এক একটি এলাকাকে গ্রাস করছে। আশেপাশের মানুষজনদের কথাকে তুড়ি মেরে আমাকে প্রতিষ্ঠা করার যে বাসনা ও লালসা।সেখানে আমার আপনার অধিকাংশ বোধ মানসিক ক্লান্তি নিয়ে কোনক্রমে টিকে থাকা। মোটকথা এই অতি সহজ সরল মানুষগুলো প্রতিষ্ঠা চায় না চায় সামান্য মর্যাদা। শরীরের ইন্দ্রিয় গুলো সচল থাকায়, আশপাশের এই খেলা নামক ক্রীড়া নৈপূণ্যের চটকে অবসন্ন হচ্ছে সাধারণ বোধ।

  আমি আপনি নীরব আছেন। এখানেও প্রশ্ন?কেন নীরব থাকবেন আপনি? কেন আমির পায়েতেল মাখাতে আসছেন না। কেন তোষামোদ করছেন না। তাহলে ওই নীরব থাকা বোধটি কোন জটিল রসায়ন করছে, এই অলীক ভাবনাকে হাতিয়ার করে কোন কারণ ছাড়াই নীরব থাকা মানুষটির পায়ে পা তুলে পেছনে লাগার নানান কৌশল।ভাবতে অবাক লাগে আপনি বা আমি সাধারণ কিছু কাজকর্ম করবেন সেখানে উপস্থিত আমি। কিসের কাজ??কেন এই কাজ? কার অনুমতি? এই কাজ করার কী খুব দরকার ছিল? নানা প্রশ্নে আপনি বিদ্ধ।এইসব আমি সমাজসেবীদের জটিল রসায়নে আপনি ক্ষতবিক্ষত। 

🍂

    ভাবলে হাড় হিম হয়ে যায়। এই লাল চোখ আর ক্ষমতা প্রশাসনের না কারো ব্যক্তিগত। অদ্ভুত এই আমি গুলো ঘিরে রেখেছে সারা সমাজ। গতকাল পর্যন্ত যে মানুষটি আপনার সাথে ভালো-মন্দ সব কথা ভাগ করতো। সময়ের কোন যাদু বলে জামাটা সরিয়ে নতুন খেলায় মত্ত। কোন দ্বিধা নেই বিন্দুমাত্র ভাববার অবকাশ নেই সেও আমিত্বের অংশীদার। কত সহজেই দ্বিধাবিভক্ত জ্যোৎস্না আলো ও এক একটি বোধ। 

      আসলে শঙ্খের শব্দে আমিত্বের কিছু যায় আসে না।আমি তো আমার অহংকারে উল্লসিত। আমি আয়োজক, আমি বিচারক, আমি অধিনায়ক। আমার ধারে পাশে কে আছেন বা কারা আছেন এসবের আমি ধার ধারিনা। এ খেলার নাম অপমান, এ খেলার নাম ধ্বংস, এ খেলার নাম মৃত্যু। আমার প্রতিটি ঘোষনাই স্ব ঘোষণা এর বাইরে এক পা কিংবা এক ইঞ্চি এদিক ওদিক হবে না।  এর বাইরে বেরিয়েছেন তো ফেসেছেন।

     এই আমিকেই পাহারা দেয় কালো বেড়াল। আর এই বেড়ালদের পুষে রাখার দায়ভার নিয়ে বসে আছে সমাজ। জানিনা এ ঘোর কবে কাটবে! সত্যিই কি প্রয়োজন ছিল দূর্বা ঘাসের মত সবার বুক মাড়িয়ে চলার।ইতিহাস ও দর্শন কতটা অসহায় আমিত্বের দোলা চলে। 


Post a Comment

1 Comments

  1. "আমিই শুরু আমিই শেষ" সাহিত্যিক ও সমাজ সচেতক ,সুব্রত মাইতি -মহাশয়ের এই " আমিত্ব " বিষয়ে সুচিন্তিত যুক্তি নিষ্ঠুর মন্তব্য হৃদয় ছূঁয়ে গেল। 'কালো বেড়াল পাহারা দিচ্ছে' যে আমিত্ব কে, সেই আমিত্বের বেড়াজালে আটকে পড়ে সবাই নাভিশ্বাস প্রায়। এর থেকে মুক্তি কোথায়? দুর্বাঘাসে মাড়িয়ে যাওয়ার মতো নিষ্পেষণের প্রসঙ্গ টেনে এনে সুব্রত বাবু সমাজ ইতিহাসের প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন। অনেক না বলা কথা স্বল্প কথার আঁচড়েই ফুটিয়ে তুলেছেন এই " আমিত্ব " বিষয়ের সুড়সুড়ি কে। আমিত্ব বোধ থেকে বাঙালি র মুক্তি ঘটুক, এই কামনায় প্রাবন্ধিক সুব্রত বাবুকে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সুন্দর ভাবে আলোকপাত করার জন্য সাধুবাদ জানাই। ধন্যবাদান্তে🙏💕 ড. চঞ্চলকুমার মণ্ডল। সবং সজনীকান্ত মহাবিদ্যালয়। বাংলা বিভাগ। তাং(ইং) --১৫/০৯/২০২৩

    ReplyDelete